#প্রনয়
#নুসরাত সুলতানা সেজুথী
পর্ব-২০
সেঁজুতি রুদ্রর ওপর বিরক্ত।ক্রুদ্ধ,ক্ষুব্ধ।এতদিনের বিশেষন গুলোর সহিত আরো একটা বিশেষন যোগ করলো সেঁজুতি। “মুখোশধারী ভদ্রলোক”।মাঝে মাঝে এত ভালো ব্যাবহার করে মনে হয় সত্যিই ভালো উনি।সেকেন্ড যেতে না যেতেই আবার আসল ফর্মে ফিরে আসেন।সেই মেজাজ,সেই রাগ,সেই অহংকার।সেঁজুতি নিজে নিজেই আওড়ালো ‘ অসহ্য! অসহ্য! অসহ্য লোক একটা।কতবার বলল ব্যাথা পেয়েছে, হাটতে কষ্ট হবে।অথচ উনি একটু মায়াও দেখালেন না।এরকম দামী হোটেলে কত রকম ব্যাবস্থা থাকে, উনি চাইলে ঠিক পারতেন কোনো একটা ব্যাবস্থা করে দিতে।তা করবেন কেন? ওনার তো সব সময় মাথায় হাবিজাবি ঘোরে।কীভাবে মেয়ে নিয়ে থাকা যায় এসবে বেশি পটু।ঘুরেফিরে কোলে নেয়ার কথাতো ঠিকই বললেন।লুচু কোথাকার! সেঁজুতির হঠাৎ চা বাগানের কথাটা মনে পড়লো।সাথে সাথে গায়ের লোম দাঁড়িয়ে পরে।ওরকম নির্লজ্জ্বের মতো সে চেয়ে ছিলো রুদ্রকে দেখে ভাবতেই কেমন কেমন লাগছে।ছি! ভাগ্যিশ সঠিক সময়ে হর্ন বাজালেন ড্রাইভার।না হলে কি হতো?কিন্তু এখানে রুদ্রর দোষ পুরোপুরি নেই।দোষ তারই।সে কেন ওরকম হুশ হারিয়ে বেক্কলের মত দাঁড়িয়ে ছিলো? তাই জন্যেই না এত বড় একটা ব্যাপার চুপচাপ সয়ে গেলো।এ নিয়ে কথা তোলাতো দূর।সে যে এ নিয়ে প্রচন্ড অস্বস্তিতে আছে রুদ্রকে বুঝতে অব্দি দিচ্ছেনা।সেঁজুতি রুমে এসে বিছনায়ায় বসলো।রুদ্র আজকে তাকে চড় অব্দি মারলো।শেষে কীনা বসের হাতে চড়? এখানেও তার দোষ। আজ পুরো দিনটা দোষে দোষে দোষাময়।সেঁজুতি পিঠে হাত দিয়ে মুখ বিকৃত করলো ব্যাথায়।কোমরের কাছ থেকে উরু অব্দি ব্যাথা করছে ভীষণ।সেঁজুতির অসহায় লাগছে এখন।বিকেল তিনটায় আবার মিটিং রয়েছে।কী ভাবে কী করবে? আবার সেই সব রাগ গিয়ে অজ্ঞাত ছেলেটির ওপর জড়ো হলো।পাশাপাশি রুদ্রকেও একটু ভাগ দিলো। তখন দরজায় নক করলো কেউ।একটি মেয়েলী স্বর ভেসে এলো ‘ ম্যাডাম মে আই কাম ইন?
সেঁজুতি উত্তর পাঠালো ‘ আসুন।
হোটেলের নির্ধারিত ইউনিফর্ম পরা একটি মেয়ে রুমে ঢুকলো।মিষ্টি হেসে বলল ‘ হ্যালো ম্যাম আমি জেনিথ।
সেঁজুতিও হাসলো উত্তরে। মেয়েটির হাত ভর্তি ওষুধ পত্র।টেবিলের ওপর রেখে বলল
‘ ম্যাম আপনি তখন পরে ব্যাথা পেয়েছেন, তাই স্যার পাঠালেন। আপনার ব্যাথার জায়গায় ওষুধ লাগাতে।
সেঁজুতি ভ্রু কোঁচকালো ‘ রুদ্র স্যার?
‘ জী?
সেঁজুতির রাগ চট করে উবে গেলো।প্রচন্ড ভালো লাগলো।মেয়েটি বলল ‘ আমি লাগিয়ে দেব ম্যাডাম? যদি একটু কো অপারেশন করেন?
সেঁজুতি বিনাদ্বিধায় মাথা নাঁড়লো।উরুর দিকে সে পারবে।পিঠের টা মেয়েটাই লাগাক।
মেয়েটি মলম লাগিয়ে কিছুক্ষন ম্যাসাজ করে দেয়।ট্রেতে খাবার এনে ওষুধ খেয়ে নিতে বলে বেরিয়ে যায় রুম ছেড়ে।সেঁজুতি করলোও তাই তাই। তার মন ভালো হয়ে গিয়েছে।রুদ্র আরো একটা ভালো কাজ করেছে মিটিং ক্যান্সেল করে সকাল দশটায় দিয়েছে।সেঁজুতি আবার একী কথা আওড়ালো
‘ যতটা খারাপ ভাবি ততটা একদমই নয়।
______
“Ek pal ka jeena,phir to hain jaana
Tohfa kya leeke jaiyen, dil yehn batana
Khali haath ayee the hum
Khali haath jayeenge….
Bass peyar ke do mitheey bol jhilmilayenge
Toh hass kyun ki duniya ko hain hasana
Aee mere dil tu gaye jaa
Ae aye aoe aye aaa….”
সেঁজুতি মনের সুখে গান গাইছে।এত সুখের গান বেসুরো লাগছে বড্ড।তাতে কী? তার মন ভালো,গান তো সে গাইবেই।রুদ্র দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে সেঁজুতির গান থামার।হাসিও পাচ্ছে ।কিন্তু সে পণ করেছে আর যেখানে সেখানে হাসবেনা।তার গাম্ভীর্য একটু একটু বিলুপ্ত হচ্ছে এই মেয়ের সঙ্গ দোষে।এরকম হলে অফিসের শ’য়ে শ’ য়ে লোককে টাইট দেয়া দুষ্কর হবে।মোটেও এরকম হু হা হাসি তার জন্যে উপযুক্ত নয়।ওদিকে সেঁজুতির থামার নাম নেই।সে গাইছে তো গাইছে।এমন বেসুরো গানে রুদ্র শেষ মেষ ধৈর্য হারালো।দরজা ভেজানো ছিলো। রুদ্র দরজা ঠেলে দিতেই হা করে খুলে গেলো।সেঁজুতি ব্যাগ থেকে জামাকাপড় বার করছিলো।আপাতত তিন কী চারদিন তারা এখানে।সব ব্যাগ থেকে নামিয়ে নামিয়ে আলমারিতে রাখছে। সাথে গান তো আছেই।রুদ্রকে কীভাবে খেয়াল করবে তাহলে? এই যে রুদ্র ভ্রু কুঁচকে পকেটে হাত ঢুকিয়ে তার দিকে চেয়ে আছে সেঁজুতির নজর তখনও পরেনি।রুদ্র অবশেষে মুখ খুলল,
” শুধু কি নেঁচে গেয়েই যাবেন?অফিসের কাজ ও করুন একটু?
রুদ্রর আওয়াজ পেতেই চট করে গান থেমে যায়।সেঁজুতি লজ্জ্বায় চোখ খিঁচে নিয়ে জ্বিভ কাটলো।পেছন ঘুরে তাকায়না।রুদ্র তার গলায় এমন বাজে গান শুনলো? মান সন্মান যা ছিলো সব শেষ।সমাপ্ত।রুদ্র বুঝলো সেঁজুতি লজ্জ্বা পেয়েছে।জ্বিভ দিয়ে ঠোঁট ভেজালো। ইদানীং মেয়েটা কী ভাবছে তাকে নিয়ে সে বুঝতে পারে।কখনও পারেনা।যেমন সকালের ওই বিষয়টা? তখন একটুও বোঝেনি সেঁজুতি এত দ্রুত স্বাভাবিক হতে পারবে।রুদ্র গলা ঝেঁড়ে বলল ‘ আমি কিন্তু দরজায় নক করেছি।আপনি শোনেননি।
সেঁজুতি কপাল কুঁচকে তাকালো।উনি একথা কেন বললেন? আমিতো কিছু বলিইনি।
রুদ্র দু কদম এগিয়ে এলো।একটা ফাইল এগিয়ে বলল,
“,এটা রাখুন।
” এটা কি?
“কালকের প্রেজেন্টেশন এর কপি।আমি সব লিখে দিয়েছি আপনি দেখে ভালো করে শিখে যাবেন।
” কিন্তু, আমি তো প্রেজেন্টেশন এর কপি বানিয়েই রেখেছি।
রুদ্রর সোজাসাপ্টা উত্তর,
” আপনার ওপর কোনও ভরসা নেই আমার,দেখা যাবে পুরোটাই ঘেটে দিয়েছেন
।তাই কোনও রিস্ক না নিয়ে নিজেই তৈরী করে দিলাম।
সেঁজুতির এতক্ষনের ভালো মুড টা যাস্ট ধুঁয়ে গেলো এক্ষুনি।চোখ ছোট করে বলল,
— আপনার মাথায় কি সব সময় আমাকে অপমান করার চিন্তাই থাকে?
রুদ্রর নিরুদ্বেগ জবাব,
‘আমার মাথায় যে ঠিক কি ঘুরছে সেটা সময় হলে আপনাকে জানাব। আপাতত এটা পুরোপুরি শিখে রাখুন।কাল কে সব টা পার্ফেক্ট চাই আমার।
সেঁজুতি মনে মনে সহস্র ভেঙচি কাটলো। যা তা বলল।বকাবকি করলো।রুদ্র দরজা অব্দি গিয়ে ফিরে তাকালো।ঠান্ডা কন্ঠে বলল,
“আর হ্যা, গান গাইতে হলে স্লো ভয়েজে গাবেন।আপনার পাশের রুম টাই আমার।এন্ড আই নিড রেস্ট। এমন কাকের আওয়াজে নিজের ঘুম নষ্ট করতে চাইনা আমি।
রুদ্র চলে গেলো।সেঁজুতি স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো কিছুক্ষন।কথাটা শুনে মুখ হা করে ফেলেছিলো একদম।কিছু বলতেও পারলোনা রুদ্র চলে যাওয়ায়।দুঃখে, কষ্টে কাতর হয়ে ফাইল টাকে বিছানার ওপর ছুড়ে মারলো।ফোসফোস করে বলল,
“কি বলে গেলেন উনি?? কি বলে গেলেন টা কি?? আমি কাক? আমাকে কাক বললো?আমার আওয়াজ কাকের আওয়াজ?
সেঁজুতি এবার রুদ্রকে শোনানোর মিথ্যে চেষ্টায় দরজার দিকে মুখ বাড়িয়ে বলল,
‘আমি তো তাও ওই কাকের আওয়াজে গান গাইতে পারি।আপনি তো খালি অর্ডার করা ছাড়া কিছুই পারেন না।আমাকে ডিজগাস্টিং বলেন না?নিজেই সব চেয়ে বড় মাপের ডিজগাস্টিং। কে বলেছিলো পাশাপাশি রুম নিতে?এতো দূরে এসেও একটু শান্তি মতো থাকতে পারবনা জানলে ছাদের চিলেকোঠায় রুম নিতে বলতাম আমি।
অনেকক্ষন নিজের মতো বকবক করে ক্ষান্ত হলো সেঁজুতি। আড়মোড়া ভেঙে বলল,
‘বড্ড ক্লান্ত লাগছে!একটা জবরদস্ত ঘুম দরকার।এত্তো জার্নি,,তার ওপর আবার একটা চড় ও খেলাম!গালের চামড়া বোধ হয় ছিলে গিয়েছে আমার।কারো মারে এত ব্যাথা? সেঁজুতি গালে হাত ডলতে ডলতে ভাবল।
______
সেঁজুতি এক ঘুমে রাত পার করেছে।রাতে রুদ্র এতবার কল দিয়েছে,দরজায় নক করেছে খাওয়ার জন্যে বেচারী ঘুমের মধ্যে কিছুই টের পায়নি।সকালে ফোন দেখে চক্ষু চড়কগাছ। ফ্রেস না হয়েই দৌড়ে রুদ্রর রুমে যেতে গেলো।রুদ্র ও মাত্র বেরিয়েছে। আর ওমনি রুদ্রর সাথে ধাক্কা লেগে হুমড়ি খেয়ে পরলো।রুদ্র ধরাতে বেঁচে গেলো যদিও।সেঁজুতির ওই খেয়াল নেই। সে ব্যাতিব্যাস্ত হয়ে বলল ‘ স্যার আপনি কল দিয়েছিলেন? আমি একদম শুনতে পাইনি।স্যরি স্যার!
রুদ্র তখন অন্য কোথাও।নিজের মধ্যে নেই।সেঁজুতির ঘুমুঘুমু চেহারা,আর এলোমেলো চুল তলোয়ারের মতো খন্ড বিখন্ড করে দিচ্ছে তাকে।ঘুম থেকে উঠলে এত মায়াবী লাগে কাউকে?সেঁজুতি উত্তরের আশায় ড্যাবড্যাব করে চেয়ে ছিলো।ইদানিং রুদ্র চুপ মেরে যায় হঠাৎ। সেঁজুতির একদম ভালো লাগেনা।ঝড় আসার আগে প্রকৃতি যেমন শান্ত থাকে তার কাছেও রুদ্রর চুপ থাকা ওরকম লাগে।ভেতরে ভয় লাগে।যতই লোকটাকে তার অপছন্দ হোক, সে ভয় পায়।ওনার একটা ধমকে অন্তরাত্মা কেঁপে ওঠে।জন্মের পর থেকে যদি কারো ধমক শোনে তাহলে সেটা রুদ্রর।শুধুকী ধমক? এখন তো এই লিস্টে একটা থাপ্পড় ও যোগ হয়েছে।রুদ্র কিচ্ছু না বলে পাশ কাটিয়ে চলে গিয়েছে।তাও অনেকক্ষন।সেঁজুতি যখন ঠোঁট কামড়ে ভাবছিলো সে আর দাঁড়াতে পারেনি।এই মেয়ে তার দূর্বলতা।আর সেই দূর্বলতা সে পায়ে ঠেলে অস্বীকার করতে যত চায় তত যেন সাপের মত গলা পেঁচিয়ে ধরে।সেঁজুতির যখন খেয়াল পরলো রুদ্র চলে গেছে।সে বোঁকার মত দাঁড়িয়ে থাকলো তাও।রুদ্র রুমে ঢুকে রীতিমতো দরজা লাগিয়ে দিয়েছে মুখের ওপর।সেঁজুতি মুখ কালো করে রুমে ফিরে আসে।ভাবলো,হয়ত ফোন না ধরায় রুদ্র রেগে আছে।তাই এখন তার চটপট রেডি হতে হবে।কারন আজকের মিটিংয়ে দেরি করলেই রুদ্র তাকে সিলেটের পাহাড় থেকে নিঁচে ফেলে দেবে।ড্যাম শিওর।
দশটায় মিটিং। তাদের রওনা দেয়ার কথা নটায়।নটা বাজার আগেই নিজেকে একেবারে গুছিয়ে নিচে নামলো।সেঁজুতি।তার বসের টাইম সেন্স ভীষণ ভালো।এক কথায় পাংকচ্যুয়াল বয়।আর সেখানে তার পি এ হয়ে সে কীনা আস্ত একটা লেট লতীভ?ছি!
‘হ্যালো মিস সেঁজুতি।
সেঁজুতি পেছন ফিরলো।কালকের ধাক্কা খাওয়া সেই ছেলেটি।হাসি হাসি মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে।
“আপনি?
” জ্বি। আমিও এখানেই উঠেছি।
“ও।
“কালকের জন্যে কী এখনও রেগে আছেন??
সেঁজুতি ফাইলটা বুকের সাথে চেপে দাঁড়ালো।ভ্রু গুটিয়ে বলল,
“যদি ইচ্ছাকৃত ধাক্কা দিয়ে থাকেন তাহলে রেগে আছি।
ছেলেটি মুচকি হাসলো।সেঁজুতির হাসিটা পরিচিত লাগলো। এমনিতেও ছেলেটির চেহারায় কাউকে মনে পড়ছে।
সেঁজুতি কে এভাবে চেয়ে থাকতে দেখে ছেলেটির হাসি আরো বাড়লো।হাত বাড়িয়ে বলল,
“আমি আবির…
সেঁজুতি কেমন চমকে বলল ‘ আবির?
ছেলেটি ভ্রু কোঁচকালো ‘ নাম শুনে অবাক হলেন যে?অনেক খারাপ নাম বুঝি?
সেঁজুতি হেসে ফেলল – না আসলে তা নয়। এই নাম টা আমার খুব পরিচিত একজনের।আপনার সাথে ওর চেহারাটাও মিলছে তাই…
” ভাবছেন সেই আমি কীনা?
” না। আপনি সে হওয়ার চান্স নেই।কারন সে আপাতত বিদেশ বিভূঁইয়ে।
ছেলেটি ছোট করে বলল,
‘ ওহ।পরপর প্রশ্ন করলো,
“আচ্ছা কাল কের লোকটা কে ছিলো?আপনার হাজবেন্ড তো মনে হলোনা।আপনি করে বলছিলেন দুজন দুজন কে।
” উনি আমার বস।আমি তার এসিস্ট্যান্ট।
‘ ওহ আই সি।অফিস্যিয়্যাল কাজে আসা?
‘ জ্বী।
“আমিও তাই।
‘আচ্ছা।
রুদ্র তখন লিফট থেকে বেরিয়েছে।গ্রাউন্ড ফ্লোরে এসে সেঁজুতি কে দেখলো।পাশেই গতকালকের ছেলেটি।দুজনের এত হাসিহাসি আলাপে রুদ্র থম ধরে দাঁড়িয়ে থাকলো। সেঁজুতি রুদ্রকে খেয়াল করেনি।আবির ও না।রুদ্রর যেন মেজাজ আরো বিগড়ালো এতে।গল্পে এত মজেছে যে আমাকে দেখছেইনা?রুদ্র দাঁত চেপে বিড়বিড় করলো,
“এক ধাক্কায় হাসি উপচে পরছে তাইনা?
গটগটিয়ে হেটে বাইরে বেরিয়ে এলো রুদ্র।
সেঁজুতি বারবার ঘড়ি দেখছে।নটা দশ বাজে অথচ উনি আসছেন না কেন?আবির দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই গল্পের ঝুড়ি খুলে বসেছে।সৌজন্যতায় সেঁজুতি চলে যেতেও পারছেনা।হঠাৎ
একজন স্টাফ এসে বললেন,
“ম্যাম আপনাকে স্যার ডাকছেন।
সেঁজুতিকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন উনি।সেঁজুতি ভাবলো রুদ্র রুমে ডেকেছে।বলল
” আচ্ছা যাচ্ছি।
সেঁজুতি লিফটের দিকে যেতে উনি থামিয়ে দিয়ে বললেন,
-“ম্যাম রুমে নয়।স্যার তো বাইরে।গাড়িতে।
সেঁজুতির চোখ আকাশ ছুঁলো ‘ কী? কখন গেলেন?
‘এইতো দশ মিনিট হবে।
সেঁজুতি মাথায় হাত দিলো
” ইয়া মাবূদ।
ওভাবেই ছুট লাগালো সেঁজুতি। তাড়াহুড়োয় আবিরের থেকে বিদেয় ও নেয়নি।সেঁজুতির দৌড়ে যাওয়া দেখে হাসলো আবির।
রুদ্র গাড়িতে বসে ফুঁসছে রাগে।এত হাসি কীসের?অচেনা অজানা ছেলের সঙ্গে দাঁতের দোকান খুলে বসেছেন উনি।কই, আমার সাথে কথা বলতে এলে তো এর ছিটেফোঁটাও থাকেনা।কাজের কথা ছাড়া একটা কথাও বলেন না আমার সাথে।ওই ছেলে কী আমার চেয়ে বেশি হ্যান্ডসাম? বেশী সুদর্শন?
রুদ্র ভিউ মিররে নিজেকে দেখলো।তাকে একটুও সুন্দর লাগছেনা মনে হচ্ছে।ছোট বেলা থেকে চেহারা নিয়ে শুনতে শুনতে কান পাঁকানো লোকটার আজ প্রথম বার নিজেকে অসুন্দর মনে হলো।সে যদি ড্যাশিং হতো,হ্যান্ডসাম হতো সেঁজুতি নিশ্চয়ই তাকাতো।তাইনা?
তখনি হন্তদন্ত পায়ে এসে গাড়ির দরজা খুলে বসে পরলো সেজুতি।হাপাতে হাপাতে বলল,
” স্যার আপনি কখন এলেন?আমিতো….
“আপনি তো ব্যস্ত ছিলেন তাইনা,,তাহলে কিভাবে দেখবেন?
রুদ্র ওকে থামিয়ে দাঁত চিবিয়ে বলল।
সেঁজুতি চোখ পিটপিট করে বলল,” না স্যার। ব্যস্ত কই ছিলাম?আমিতো গ্রাউন্ড ফ্লোরে দাঁড়িয়ে আপনার জন্যে অপেক্ষা করছিলাম।
রুদ্র ভ্রু বাঁকালো ‘ তাই? শুধুই অপেক্ষা করছিলেন?
সেঁজুতি মাথা দুলিয়ে বলল ‘ হ্যা। তখন ওই কালকের ছেলেটি মানে আবি…
‘ চুপ করুন।
রুদ্র ধমক দিতেই সেঁজুতি চুপ মেরে গেলো।সেঁজুতি ভাবছে কল না ধরায় রুদ্র এখনও রেগে আছে। নীঁচু কন্ঠে বলল
‘ স্যরি স্যার! আমি সত্যিই আপনার কল শুনতে পাইনি।আপনি এভাবে রেগে থাকলে আমার প্রেজেন্টেশন খুব খারাপ হবে।
সেঁজুতি অতী নরম সুরে বলাতে রুদ্রর রাগ পরে গেলো।একটু আকটু খুশিও হলো।সে রাগ করলে সেঁজুতির প্রেজেন্টেশন খারাপ হবে? কথাটা নিজের মতো সাজিয়ে ফুরফুরে মনে গাড়ি স্টার্ট দিলো।
_____
চার ঘন্টা পর অফিস থেকে বের হলো রুদ্র সেজুতি। সেজুথির মন ভালো।ভালো মানে অনেক ভালো।এই প্রথম বার সে প্রেজেন্টেশন দিলো আর তাতেই ডিল ফাইনাল হয়েছে।সবাই বেশ প্রশংসাও করেছে।সেঁজুতি একবার চোখ তুলে রুদ্রকে দেখলো।যা কিছু ক্রেডিট সব ই তো ওনার।
ওতো কিছুই করেনি।উনি লিখে দিয়েছেন বলেই শিখতে পারলো।এখন তার মনে হচ্ছে রুদ্র কপি নিজে থেকে করে দেয়ায় তার জন্যে ভালো হলো।,নাহলে সে যা লিখেছিলো প্রেজেন্টেশন দেবে বলে, ইয়া আল্লাহ! ওসব শুনলে আজ চাকরিই থাকতোনা।ডিল তো বহুদূরের ব্যাপার।রুদ্রর কপির সাথে তার কপির কোনো মিলই নেই।আকাশ পাতাল তফাৎ। হওয়ারই কথা।এই পদে চাকরি পেতে গ্রাজুয়েশন লাগে। আর সেখানে সে মাত্র সেকেন্ড সেমিস্টার। তাও পার করেনি।কত কিছুই ভালমতো জানেনা।তাও পরশুরাতে গুগল ঘেয়েঘুটে,নিজের মতো করে কোনো রকমে সাজিয়েছিলো।ভাগ্যিশ ওসব বলতে হয়নি।আল্লাহ বাঁচিয়েছেন।রুদ্র চুপচাপ। তার হেলদোল পৃথীবিতে নেই।সেঁজুতি জিজ্ঞেস করলো,
— কিছু হয়েছে স্যার?
রুদ্র ছোট করে বলল ‘ না।
“আমার পার্ফমেন্স ভালো হয়নি?
— হয়েছে।
সেঁজুতি খুশি হয়ে বলল,
— আচ্ছা। তবে সব টাই আপনার জন্যে।আপনি কপি করে না দিলে…
রুদ্র দাঁড়িয়ে পরলো।ভ্রু কুঁচকে বলল,
” আমার একার কেন হবে?এটার ক্রেডিট পাশাপাশি আপনারও।লিখে দিলেই হলোনা।প্রেজেন্ট করতে পারাটাই বড় ব্যাপার।তাছাড়া আপনার উচ্চারন, বলার ভঙি ভালো ছিলো বলেই ওনারা ব্যাপারটা গুছিয়ে বুঝেছেন।
সেঁজুতি মিষ্টি করে হাসলো।রুদ্র সময় নিলো একটু।পরক্ষনেই চোখ সরু করে বলল,
— ছেলেটির সাথে কি বলছিলেন?
” কোন ছেলে স্যার?
“সকালে হোটেলের সেই ছেলেটা?
-“ওহ ওই উনি?তেমন কিছুনা, যাস্ট নাম ধাম জিজ্ঞেস করছিলেন।
” আর আপনিও বললেন?
“হ্যা…
“কেনো?
“নাম জিজ্ঞেস করলে বলতে হয়না?
“না হয়না।এটা ডিপেন্ড করে কে জিজ্ঞেস করছে তার ওপর? আমি জিজ্ঞেস করলে বলবেন।বাট ওই ছেলে গুলোর মত কেউ জিজ্ঞেস করলে নয়।
রুদ্র হনহনিয়ে হাটা ধরলো।সেঁজুতি কিছুই বোঝেনি।সব মাথার ওপর দিয়ে গিয়েছে।রুদ্র যেতে যেতে বলল
” চলুন।ইটস লাঞ্চ টাইম।
_____
রেস্টুরেন্টে বসে আরেক ঝামেলায় পরলো সেজুতি।,সব গুলো কন্টিনেন্টাল খাবার আইটেম অর্ডার করেছে রুদ্র।ইন্ডিয়ান ফিস কারী,ইন্ডিয়ান চাপলী কাবাবের সাথে গ্রীল্ড স্যামন উইথ গ্রীন পি ম্যাশ এন্ড স্ট্রবেরী কম্পোট।সেঁজুতি হাত কঁচলাচ্ছে বসে বসে।রুদ্র আরামসে খাচ্ছে।সেঁজুতি উশখুশ করছে।খিদে লেগেছে অথচ খেতে পারছেনা।
প্রথমত দুপুরে ভাত ছাড়া তার চলেনা।তাও একটু এডযাস্ট করা যেতো যদি অন্য খাবার হত।
মাটন তো সেজুথি খায় না,গা গুলোয়।সাথে স্ট্রবেরীর ঘ্রানেও একি অবস্থা। তাহলে কি করে খাবে সে?
তাই হাত গুটিয়ে বসে থেকে চুপচাপ রুদ্রর খাওয়া দেখছে।রুদ্র প্লেটে চামচ নাড়তে নাড়তে বলল,
— খাচ্ছেন না যে!
সেঁজুতি মাথা নিচু করে বলল “এমনি।
রুদ্র খাওয়া থামিয়ে তাকালো।
-” ভাত খাবেন?
-চোখ গুলো চকচক করে উঠলো সেজুতির।রুদ্র আবার জিজ্ঞেস করলো,
” ভাত খাবেন বা অন্য কিছু??
সেঁজুতি মাথা নেড়ে বলল ‘ ভাত।
“এটা এতক্ষনে বললেই পারতেন।এমনিতে তো প্রচুর বকবক করেন।তাহলে কাজের কথা বলার সময় এই অবস্থা হয় কেন?বসুন,আমি অর্ডার করছি।
রুদ্র অন্যদিকে তাকাতেই সেঁজুতি মুখ ব্যাঁকালো।
” খাওয়াবে ঠিকই কিন্তু কথা শোনাতে ছাড়বেনা।
সেঁজুতির এতক্ষন ধরে একটা কথা খুব জানতে ইচ্ছে করছিলো।রুদ্র চুপ করে খাচ্ছিলো বলে প্রশ্ন করেনি।রুদ্র যখন কথা বলল মাত্র, তাই সুযোগ বুঝে বলল,
“আচ্ছা, এখানে এসে সবাই সিলেটের ঐতিহ্যবাহী খাবার গুলো খায়।তাহলে আপনি এসব কেনো খাচ্ছেন.??
রুদ্রর নিরুৎসাহিত উত্তর,
“আই এ্যাম নট ইন্টারেস্টেড ইন ট্রেডিশনাল ফুড।
সেঁজুতি বিড়বিড় করে বলল,
” হ্যা হ্যা। কোনও কিছুতেই এর ইন্টারেস্ট নেই। শুধু মেয়ে ছাড়া।
সেঁজুতির সামনে এনে রাখা হলো এক প্লেট গরম ধোয়া ওঠা ভাত।মুরগীর মাংস,ইলিশ মাছ,চিংড়ি ভর্তা আর সালাদ।সেঁজুতির জ্বিভে পানি এসে গেলো খাবার দেখে।এক প্রকার ঝাপ দিলো প্লেটের ভেতর।
খাওয়া শেষে সিলেটের ঐতিহ্য অনুসারে পান দেয়া হলো ওদের।রুদ্র খেলোনা।সেঁজুতি অভিভূতের মতো পান চাঁবাচ্ছিলো।সাথে পানের বোটায় চুন লাগিয়ে একটু করে খাচ্ছে।ঠোঁট জ্বিভ, সব লাল টুকুটুকে।রুদ্রর বেশ ভালো লাগছে দেখতে।সেঁজুতি পিক ফেলতেই রুদ্রর ভালো লাগা শেষ। উলটে গা শিরশির করলো। ‘ ইয়াক! বলে মুখ ঘোরালো আরেকদিক।সেঁজুতি বোকা বনে গেলো।পানের পিক দেখে কেউ এমন করে?
দুপুরে খাওয়ার পাঠ চুকলো।গাড়িতে বসার আগে সেঁজুতি বলল,
“আমি একটু আসছি।বাবাকে একটা ফোন করবো…
রুদ্র কিছু বললনা।সেঁজুতি কথা শেষ করে এসে গাড়িতে বসলো।রুদ্র তখন থমথমে গলায় বলল,
“আপনি আপনার বাবাকে খুব ভালোবাসেন তাইনা?
সেঁজুতি প্রথমে অবাক হলো হঠাৎ এমন প্রশ্নে।পরে হেসে বলল,
“ভীষন! শুধু আমি কেন? পৃথিবীর সব সন্তান তার বাবা মাকে ভালোবাসে।তাইনা?
তাইনা বলে সেঁজুতি রুদ্রর দিক তাকালো।রুদ্র মাথা নিচু করে আছে।ভেতরটা কাঁদছে খুব,
” ভালোবাসার আগেই যে সব তছনছ হয়ে গেলো।
” কি ভাবছেন?
রুদ্র সামনে ফিরে বলল
“কিছুনা।
“এখন আমরা কোথায় যাবো.??
“আপাতত হোটেলে।
_____
সারা রাস্তায় রুদ্র চুপ ছিলো।সেঁজুতি কে তোহা ফোন করে জানিয়েছে পরীক্ষার রুটিন বেরিয়েছে।সেঁজুতি জানালো সিলেট থেকে ফিরেই ভার্সিটি যাবে ও।চাকরীর কথা বলে, নিজের অবস্থার কথা জানিয়ে স্যারদের থেকে একটু সহযোগিতা পেয়েছে সেঁজুতি। ক্লাস মিস করার ফলে পরীক্ষায় বসতে না দেয়ার ব্যাপারে ওনারা ছাড় দিয়েছেন।সেঁজুতি ভালো ছাত্রী।সাথে বাবার অবস্থা জেনেই ওনার এই বিশেষ সুযোগ টুকু দিয়েছেন ওকে।তোহার সাথে কথা বলতে বলতেই হোটেলে এসে পৌছালো ওরা।রুদ্রর মন তখন বিষন্ন।গাড়ি থেকে নেমে হাটা ধরলো সেজুতি।রুদ্র গাড়ি নিয়ে এগোলো পার্কিং লটে।সেঁজুতি ভেতরে ঢুকতে যেতেই সামনে এসে দাড়ালো আবির।হেসে বলল,
“এসে গেছেন??
আবির হঠাৎ সামনে আসায় সেঁজুতি চমকেছে।বিদ্যুৎ বেগে নিজেকে সামলে মৃদূ হাসলো,
” আপনি কি আজ আর ওপরে যাননি? তখনও গ্রাউন্ড ফ্লোরে এখনও তাই।
আবির স্পষ্ট বলল,
“আপনার জন্যেই অপেক্ষা করছিলাম।
সেঁজুতি ভ্রু বাঁকালো,মুখের হাসিটা নেই।
” আমার জন্যে?
আবির থেমে থেমে বলল,
” আসলে এখানে একা এসেছি তো!সময় টা বোরিং যাচ্ছে,আপনার সাথে পরিচয় হলো ভাবলাম আপনার সাথেই গল্প করে কাটাবো।
আপনার কোনও অসুবিধে নেইতো?
সেজুথি কিছু বলার আগেই পাশ থেকে রুদ্র বলে ওঠে ‘ অবশ্যই আছে।
রুদ্র সেঁজুতির পাশে এসে আবির বরাবর দাঁড়ালো।গম্ভীর কন্ঠে বলল,
” এখানে উনি কাজ করতে এসেছেন।কারো সাথে খোশগল্প করতে নয়।
আবির নাক ফোলালো।মেজাজ দেখিয়ে বলল,
“কথাটা তো আমি আপনাকে বলিনি। তবে আপনি কেনো ওনার হয়ে কথা বলছেন?
‘কারন আমি ওনার,বস…
বস কথাটা রুদ্র সময় নিয়ে বলল।আবির কাট গলায় বলে,
“হ্যা, বস তো কাজের সময় ওনাকে পেলেই হলো।আপনার কাজ পার্ফেক্ট হওয়াটাই দরকার আপনার। তারপর উনি কার সাথে মিশবেন বা কথা বলবেন,,সেটা কি আপনি দেখতে আসবেন নাকি?
রুদ্রর চোয়াল শক্ত হয়ে আসছে।
“আমি কি করবো না করবো তার হিসেব আপনি নেবেন না নিশ্চয়ই?আর কাল -ই তো ওনাকে দেখলেন এর মধ্যেই গল্প করার জন্যে ডাকছেন?,বেশ এডভান্স দেখছি আপনি!
‘ আমি আমার সার্টিফিকেট আপনার থেকে নেবোনা।অফিসের বস বসের মতোই বিহেভ করুন।
রুদ্র ভ্রু নাঁচালো।হাত মুঠো হলো।
‘তো এখন আপনি আমাকে বিহেভিয়ার শেখাচ্ছেন?
আবির মুখের ওপর বলল
“হ্যা শেখাচ্ছি…
সেঁজুতি এতক্ষন ভ্যাবলাকান্তের মত দাঁড়িয়ে ছিলো।বলদ বনে গেছিলো কিছু সময়ের জন্যে।দুজনের তর্ক যখন মাত্রা ছাড়াচ্ছে তখনি চেঁচিয়ে, বিরক্তি নিয়ে বলল,
” চুপ করুন, চুপ করুন।কি করছেন আপনারা?ঝগড়া করছেন বাচ্চাদের মতো?এখানে কী বিতর্ক প্রতিযোগিতা হচ্ছে?
সেঁজুতি এরপর আবিরের উদ্দেশ্যে শান্ত কন্ঠে বলল,
“মি:আবির!আমি আসলে গল্প, আড্ডা এসবে অভ্যস্ত নই।আর এখানে সত্যিই আমি কাজের জন্যে এসেছি। সো এটাই এখন আমার একমাত্র মোটিভেশন।আপনি প্লিজ কিছু মনে করবেন না।
রুদ্রর দিকে একবার তাকালো সেজুতি।সে সানগ্লাশ পরে ঠিক কোন দিকে তাকিয়ে তা ঠাওড় করতে পারলোনা।আর কথা না বাড়িয়ে লিফটে উঠে গেলো।
সেঁজুতি আঁড়াল হতেই রুদ্রর ঠোঁটে সূক্ষ্ণ হাসি ফুটলো।বিদ্রুপ করে বলল,
“দেখলেন তো মি:আবির? পি এ কিন্তু শেষ মেষ তার বসের মানে আমার কথার বাইরে যায়নি।
আর হ্যা আপনি কি যেনো বললেন বসকে বসের মতো বিহেভ করতে,,,??
আমি তো সেজুতির নামে মাত্র বস,,,ভেতরে তো অন্য কিছু।
আবিরের মুখটা চুপসে ছিলো এত সময়। রুদ্রর শেষ কথায় কপাল কুঁচকে বলল,
“অন্য কিছু মানে?
রুদ্র চোখের চশমা একটু ঠেলে দিয়ে গমগমে কন্ঠে বলল,
” সেটা আপনাকে বলার প্রয়োজন বোধ করছিনা।
রুদ্র চলে যেতেই দু আঙুলে নিজের কপাল ঘষতে শুরু করলো আবির।
“এই বস কে তার ঠিক লাগছেনা,,,,,ভেতরে অন্য কিছু দিয়ে কি বোঝালো এই লোকটা??
কি থাকতে পারে এদের মধ্যে??
#প্রনয়?? সেজুতি আর রুদ্রর #প্রনয়…??
________
ফোনের রিংটোনের শব্দে তাড়াহুড়ো করে ওয়াশরুম থেকে বের হলো সেঁজুতি। ফোন তুলতে যাওয়ার আগেই লাইন কেটে গেলো।রুদ্রর কল।সেঁজুতি ব্যাক করার আগে আবার দরজায় নক করার শব্দ।সেঁজুতি উপায়ন্তর না পেয়ে দরজা খুলতে এগোলো।রুদ্র পকেটে হাত দিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে ছিলো।পড়নে চেক শার্ট আর ব্লাক ডেনিম প্যান্ট।দরজা খোলার আওয়াজে তাকাতেই সদ্যস্নাত সেজুতিকে দেখে গলা শুকিয়ে এলো।এরকম প্রত্যেকবারই হচ্ছে।অফিসেও তার এমনহয়েছে।এই মেয়েকি তাকে মারার প্ল্যান করছে ইদানীং। রুদ্র ঢোক গিলে মুখ ফিরিয়ে বলল,
“ফোন রেখে কই ছিলেন??
“শাওয়ার নিচ্ছিলাম স্যার।
“রেডি হয়ে নিচে আসুন,ফাস্ট।
আর এক মুহুর্ত না দাঁড়িয়ে প্রস্থান নিলো রুদ্র। ঠোঁট উলটে কিছু না বুঝতে পারার ভঙ্গিমা করলো সেঁজুতি। আরতো কোনো মিটিং নেই।কাজ ও নেই এখন।সন্ধ্যে হয়ে এসছে।উনি আমাকে নিয়ে কোথায় যাবেন তাহলে?
চলবে….