প্রনয়-পর্ব 26

0
804

#প্রনয়
#নুসরাত সুলতানা সেজুথি
পর্ব–২৬
সময় দুপুর বারোটা।সেঁজুতি বসে আছে ডেস্কে।টেবিলের ওপর পেপার ওয়েটের নীচে রাখা রেজিগনেশন লেটার। একটু পরপর ঘড়ি দেখছে সেঁজুতি।অফিসের দেয়ালে টাঙানো মস্ত ঘড়ির কাটা যেন নড়ছেনা আজ।নড়লেও তার মনঃপুত হচ্ছেনা। অফিস শুরু হয়েছে দু ঘন্টা আগে, অথচ রুদ্র আসেনি এখনও। ব্যাপারটা সেজুতিকে বড্ড ভাবাচ্ছে। যে লোক পারলে সূর্য ওঠার আগেই অফিসে এসে বসে থাকে তার আজ এত দেরী? ঠিক দশটায় রুদ্র অফিসে হাজির হয়।এই এক মাসে একটু উনিশ-বিশ দেখেনি সেঁজুতি। সেই পাংকচুয়্যাল লোকের আজ কী হলো?
ধৈর্য রাখতে পারলোনা সেঁজুতি। এই নিয়ে পঞ্চম বারের মতো রুদ্রর কেবিনে উঁকি দিলো।পরেরবার দিলো মেন গেটে।হতাশ হলো এবারও। এখনও আসেনি।অদ্ভূত তো!বস ই যদি না আসে তবে রেজিগনেশন লেটার বানিয়ে লাভ হলো কি?সেঁজুতি মন মরা হয়ে ডেস্কের দিকে ফিরে যাচ্ছিলো,তখন পেছন থেকে ডেকে ওঠে পিওন- বশীর।
“ম্যাডাম! আপনার কি কিছু দরকার?
সেঁজুতি মৃদূ হেসে মাথা নাঁড়ালো।কিছু দরকার নয়।বলল,
” আসলে দেখছিলাম স্যার এসেছেন কিনা!
“বস তো আজ আসবেন না ম্যাডাম।
সেঁজুতি ভ্রু কোঁচকালো,
” আসবেনা? কেনো?
বশির দুই ভ্রু উঁচিয়ে বললেন,
“সেকি, আপনি জানেন না?
” না তো।কি হয়েছে বশির ভাই?
” কি বলছেন ম্যাডাম?অফিসের সবাই জানে আর আপনি জানেন না?
সেঁজুতি এবার অধৈর্য কন্ঠে বলল,
“কি হয়েছে বলবেন তো!
বশির এক পা এগিয়ে এসে,ফিসফিস করে বললেন,
” কাল রাতে বস মদ খেয়ে গাড়ি চালাচ্ছিলেন।আর জানেন ই তো যা হয় আর কি?
এটুকু শুনতেই সেঁজুতির চেহারার রং পালটে যায়।
“ততাতারপর?
সেঁজুতি গলা কাঁপলো।বশির দুঃখী কন্ঠে বললেন,
“তারপর আর কি, গাড়ি নিয়ে সোজা খাঁদে।আমার তো শুনেই ভীষণ কষ্ট লেগেছে স্যারের জন্যে।
সেঁজুতি আর্তনাদ করে বলল,
” কি? কি বলছেন কি আপনি?
সেঁজুতির উদগ্রীবতায় আগ্রহ পেলেন বশির।বললেন,
” তবে আর বলছি কি ম্যাডাম!আমরাও তো বেশ ঘাঁবড়ে গিয়েছিলাম খবর টা শুনে।স্যার তো আর এমনি এমনি ড্রিংক করেন না।যখন ওনার মন খারাপ হয় তখন ই করেন।,কাল ও হয়তো তেমন কিছু হয়েছিলো আর তাই এখন এই অবস্থা,সত্যিই নিয়তি কি নিষ্ঠুর!
বশির দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।সেঁজুতির মুখটা রক্তশূন্য দেখাচ্ছে।
” উনি ঠিক আছেন তো বশীর ভাই? বলুন না….
” এ যাত্রায় প্রানে বেঁচেছেন ঠিকই তবে পা দিয়ে আর দাঁড়াতে পারবেন কিনা সন্দেহ।
সেঁজুতি আঁতকে উঠলো,
‘কী বলছেন? উনি কোথায় এখন??
” সিটি হাসপাতালে। নাহলে ওনার বাসায়। আমি জানিনা ঠিক করে।তবে আর যাই বলুন ম্যাডাম এতে আমাদের তো লাভের লাভ কিছুই হলোনা। বস এক্সিডেন্ট করলো তাতে অন্তত কদিন অফিস টা বন্ধ রাখতে পারতো অথচ দেখুন আজ কেও কাজ করতে হচ্ছে।
বশিরের চোখে মুখে বিরক্তির ছাপ।সেঁজুতি অবাক না হয়ে পারলোনা।
” কি বলছেন এসব বশির ভাই?,একটা মানুষের এই অবস্থা আর আপনি এ গুলো ভাবছেন?ছি! ছি! কারো প্রানের থেকে আপনার কাছে ছুটি কাটানো টা বড় হয়ে গেলো?স্যারের এমন অবস্থায় আপনার খারাপ লাগছেনা?
বশিরের সোজাসাপটা উত্তর,
“খারাপ লেগে আর কি হবে?উনি সব সময় যা ধমকে ধামকে রাখেন আমাদের, তাতে ওনার কিছু হলে তো আমাদের ই ভালো।উনি আর অফিসে আসতে পারবেন না।আমরা সবাই অভ্র স্যারের আন্ডারে কাজ করবো। উনি আর যাই হোক ওমন রগচটা নন। আর এতে তো আপনারও ভালো ম্যাডাম,এতো কাজ কেউ করাবেনা আপনাকে দিয়ে।
সেঁজুতি ধমকে উঠলো,
” চুপ করুন।কি দিয়ে তৈরি আপনি? ছি!
বশির সাফাই গাইতে নিচ্ছিলেন,কিন্তু অতটা শোনার সময়, ইচ্ছে,কোনোটাই নেই সেঁজুতির।দুশ্চিন্তা -ভয় তার গলা চেঁপে ধরেছে।ভেতর থেকে একটাই প্রশ্ন আসছে ‘উনি ঠিক আছেন তো?
___
রিক্সার গতি পছন্দ হচ্ছেনা সেঁজুতির।হুইলচেয়ার চলছে যেন।এত আস্তে রিক্সা চলে?সেঁজুতি আগের মতোই তাড়া দিয়ে বলল,
“ভাই একটু তাড়াতাড়ি চালান না।
রিক্সায় ওঠা থেকে শুরু করে বারবার একী কথা বলছে সেঁজুতি। রিক্সাচালক বিরক্ত হলেন এবার। প্যাডেল ঘোরাতে ঘোরাতে বললেন,
“আফা এতো তাড়া দিলে হইবো? বারবার খালি এক কথা কইতাছেন।আমি কি প্লেন চালাইতাছি?দুই পা দিয়া আর কত জোড়ে চালামু কন?
সেঁজুতি বুঝলো সে একটু বেশিই করে ফেলল।চিন্তায় অবস্থা খারাপ হলে যা হয়।নরম কন্ঠে বলল,
–স্যরি ভাই!আসলে আমার অনেক তাড়া আছে।
“তাড়া আছে তো রিক্সায় ক্যান উঠছেন আফা ?ট্যাক্সি কইরা যান।
‘এটা তো খারাপ বলেননি।থামান থামান, আর যেতে হবেনা।সাইড করে দাঁড় করান।
রিক্সা ভাড়া মিটিয়ে রাস্তার পাড়ে গিয়ে দাঁড়ালো সেজুতি। উদ্দেশ্য ট্যাক্সি নিয়ে হাসপাতালে যাওয়া। আর যাই হোক যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাকে যে পৌঁছাতেই হবে।
___
হাসপাতালে ঢুকে সেঁজুতি সোজা রিসেপশনে গেলো।বোজা কন্ঠে বলল,
“- এক্সিকিউজ মি! আমাকে প্লিজ একটু বলবেন মি: রুদ্র রওশন চৌধুরী কত নম্বর কেবিনে আছেন?
“ম্যাম একটু ওয়েট করুন,,আমি চেক করে জানাচ্ছি আপনাকে।
‘হ্যা একটু তাড়াতাড়ি প্লিজ।
মেয়েটি মনিটর থেকে চোখ তুলে বলল,
— ম্যাম কি নাম বললেন?
“রুদ্র রওশন চৌধুরী।
“স্যরি ম্যাম! এই নামে কেউ এডমিট হয়নি এখানে..
সেঁজুতি অবাক হয়ে বলল,
” কি বলছেন,,এটা সিটি হসপিটাল তো?
-“জ্বি।
‘প্লিজ একটু ভালো করে দেখে বলুন।
‘আমি ভালো করে দেখেই বলেছি ম্যাম!এ নামে কেউ এখানে এডমিট হয়নি।
সেঁজুতি আহত হলো।এত দৌড় ঝাপ করে এসে শুনলো রুদ্র নেই এখানে?তবে কোথায় উনি?ওনার কী খুব ক্ষতি হয়েছে?ভালো আছেন তো?সেঁজুতির হঠাৎ মাথায় এলো বশিরের একটা কথা।
“এক সেকেন্ড!বশির ভাইতো বললেন স্যার বাড়িতেও থাকতে পারে।এখানে যেহেতু নেই তবে নিশ্চয়ই বাড়িতে ট্রিটমেন্ট নিচ্ছেন উনি?
আমি বরং একবার ওনার বাড়িতে যাই।
সেঁজুতি হন্তদন্ত পায়ে ছুট লাগালো।রুদ্রর বাড়ি যেতে হবে এখন।বাড়ির ঠিকানা জানেনা।কখনও যায়ওনি।ট্যাক্সিতে উঠে ব্যাগ থেকে আইডি কার্ড বার করলো।অফিসের দ্বিতীয় দিন পেয়েছিলো এটা।কার্ডের পেছনে রুদ্রর সেল ফোন নম্বর দেয়া থাকে।সাথে ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসেবে অভ্রর ও।সেঁজুতি ব্যাস্ত হাতে অভ্রর নম্বরে ডায়াল করলো।অভ্র ধরলোনা।অনেকবার কল দিলেও না।এরপর গুগলে সার্চ করতেই পেয়ে গেলো।সেঁজুতির ঠোঁটে বিজয়ের হাসি ফুটলো এইটুকুতেই। যেন বিশ্ব জয় করেছে মাত্র।
____
রুদ্রর বাড়িটা দেখে সেঁজুতির দুই ঠোঁট আলাদা হয়ে এলো।এত্ত বড় বাড়ি!এতক্ষন যেই চিন্তা টা হচ্ছিলো,উদ্বীগ্নতা ছিলো সব যেন বাড়ির সামনে এসে আরো জেঁকে বসলো কাঁধে। নার্ভাসনেসে হাত পা কঁাপছে।খুব করে প্রার্থনা করছে রুদ্র সুস্থ থাকুক।ভালো থাকুক।সেঁজুতি ত্রস্ত পায়ে গেটের কাছে আসতেই দারোয়ানের নজর পরলো।বসে ছিলেন উনি।উঠে এসেই গেট খুলে দিলেন।
“আসুন ম্যাডাম। আসুন আসুন।
দারোয়ানের খাতির দেখে অবাক লাগলো সেজুতির।
এর আগে এ বাসার ত্রিসীমানায় ও তো সে আসেনি। যেখানে অচেনা ব্যাক্তি হিসেবে দারোয়ানের তাকে এক গাদা প্রশ্ন করা দরকার, সেখানে এমন যত্ন করে ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছে?
যাক।যা খুশি হোক।এই মুহুর্তে তার এসব নিয়ে ভাবার সময় নেই। আপাতত মাথায় রুদ্র কে নিয়ে যত ভাবনা। কি অবস্থা লোকটার জানার জন্যে ব্যাকুল হয়ে উঠছে মন।সেঁজুতি নম্র কন্ঠে শুধালো,
” স্যার আছেন..??
“স্যার তো নেই ম্যাডাম।
সেঁজুতি ভ্রু কোঁচকালো,
” নেই মানে? কোথায় গিয়েছেন?
” অফিসে।
সেঁজুতির চোখ কপালে উঠলো,
— অফিসে??না না আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে
উনি অফিস কি করে যেতে পারেন?ওনার তো কাল রাতে এক্সিডেন্ট হয়েছে। তাইনা?
দারোয়ান লোকটিও পালটা ভ্রু কোঁচকান
— কি বলছেন ম্যাডাম?স্যার এই কিছুক্ষন আগেই একেবারে তরতাজা অবস্থায় আমার সামনে দিয়ে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেলেন।আর আপনি বলছেন এক্সিডেন্ট হয়েছে।তাও কাল রাতে?
” হয়নি?
” না ম্যাডাম।স্যার তো যাওয়ার আগে বলে গেলেন আপনার কথা।তাই জন্যেই না আপনাকে আমি গেট খুলে দিলাম।
আমার কথা বিশ্বাস না হলে অফিসে গিয়ে দেখতে পারেন।
সেঁজুতির রাগে মাথার চুল ছিড়তে মন চাইলো।এক্সিডেন্ট হয়নি?রুদ্র অফিসে শুনে তার ভালো লেগেছে।কিন্তু পরমুহূর্তে এরকম একটা বিষয় নিয়ে মিথ্যে বলাতে রাগ গিয়ে পরলো বশিরের ওপর। যদি এক্সিডেন্ট নাই হয়ে থাকে তবে বশীর ভাই আমাকে মিথ্যে কেনো বললেন?আর রুদ্রই বা কী করে জানলেন যে আমি আসব এখানে?
এর উত্তর তো অফিসে গেলেই পাবো।
_____
রুদ্রর কেবিনের সামনে দাঁড়িয়ে সেঁজুতি।দরজায় নক করতেই উত্তর এলো,
” আসুন।
ভেতরে ঢুকলো সেঁজুতি। রুদ্র দিব্যি সুস্থভাবে বসে আছে চেয়ারে।আঙুলের ভাঁজে কলম নাঁড়িয়ে নাঁড়িয়ে ফাইল চেক করছে।রুদ্রকে দেখে গতকালের কথা মনে পড়লো।রুদ্রর অকপটে ভালোবাসি বলাটা।মুহুর্তেই অস্বস্তিতে আড়ষ্ট হয়ে এলো শরীর। রুদ্রকে ভালো না বাসা সত্ত্বেও ওকে ঠিকঠাক দেখে প্রান ফিরে পাওয়ার মতোন অনুভূতি হলো ।পরক্ষনে রাগ টাও মাথা চাঁড়া দিলো বশিরের ওপর। অনেকক্ষনেও সেঁজুতির কোনও সাড়া না পেয়ে রুদ্র নিজেই বলল,
“এসে থেকে দাঁড়িয়ে আছেন!
আমাকে দেখছেন?? তো বলুন কেমন লাগছে আমাকে?
রুদ্রর কথায় কৌতুক।
ফাইল রেখে চেয়ারে হেলান দিলো। ঠোঁটে মিটিমিটি হাসি।সেঁজুতি উত্তর দেয়না।রুদ্র ভ্রু বাঁকালো,
” কি হলো?? চুপ যে? ওহ আচ্ছা আচ্ছা!কথায় আছে মৌনতা সম্মতির লক্ষন।তার মানে আমি যেটা বললাম সেটাই ঠিক, আপনি আমাকেই দেখছিলেন?
সেঁজুতি মুখ খুলল এবার,শান্ত ভাবে বলল
” না।আমি আপনাকে কেমন লাগছে সেটা দেখতে আসিনি।এসেছি আমার কিছু প্রশ্নের উত্তর নিতে।
“মানে? আমি কি নোট বুক নাকি? যে সব প্রশ্নের উত্তর থাকবে?
“বাজে কথা রাখুন।আমার কথা শুনুন, কথাটা জরুরি।
রুদ্র টেবিলের ওপর ঝুঁকে এলো ‘তাই?আচ্ছা বলুন।
সেঁজুতি ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
“বশির ভাই আমাকে বলেছেন,আপনার এক্সিডেন্ট হয়েছে,আপনি সিটি হসপিটালে ভর্তি।
অথচ সেখানে গিয়ে জানতে পারলাম আপনি কেনো আপনার নামের কেউ- ই সেখানে নেই।তারপর আমি আপনার বাড়িতেও গিয়েছি। আপনার বাসায় গিয়ে দারোয়ানের থেকে শুনলাম আপনি নাকি অফিসে এসেছেন।এখন যে মানুষ টা পা দিয়ে দাড়াতে পারবেনা শুনলাম , সে কি করে অফিসে এলো? আর আমাকে এমন জঘন্য মিথ্যা কেনো বলা হলো? আপনিই বা কী করে জানলেন আমি আজই আপনার বাড়িতে যাব?
রুদ্র প্রশ্ন গুলো এড়িয়ে গেলো।পালটা প্রশ্ন করলো, “আমার এক্সিডেন্ট? কই?নাতো।
“সেটাতো আমিই দেখতে পাচ্ছি। আপনি একদম সুস্থ।তাহলে আমাকে মিথ্যে কেন বলেছেন উনি?
-” আমি সুস্থ আছি দেখে খুব খারাপ লাগছে আপনার? কথাটা সত্যি হলে বুঝি খুশি হতেন?
সেঁজুতি শক্ত কন্ঠে বলল “সেটা আপনার জানার দরকার নেই।বশীর ভাই কে ডাকুন…
“কেনো?
“কেনো মানে?ওনাকে জিজ্ঞেস করবেন না উনি এরকম একটা ফালতু মজা আমার সাথে কেনো করলেন?
রুদ্রর নিরুদ্বেগ ভাবমূর্তি,
“তার প্রয়োজন নেই।
সেঁজুতি অবাক কন্ঠে বলল ‘ কেন?
রুদ্র হাসলো।সূক্ষ্ণ হাসি।বলল
‘ আপনি অনেক বোঁকা।এতটুকু বিষয় বুঝতে পারছেন না?আমার অফিসে আমারই ব্যাপারে কেউ বানোয়াট,মিথ্যে কিছু বললে সেটা কী আমার কানে আসবেনা?বশিরের এত সাহস?
সেঁজুতি উদ্বেগ নিয়ে বলল,
” সেই জন্যেই তো বলছি ডাকুন ওনাকে।এরকম মজা করার কী মানে?
“মিস সেঁজুতি, এতোটা সাহস বশীরের নিজে থেকে আসবে বলে মনে হয় আপনার ?? নিশ্চয়ই এখানে আমার হাত আছে।কথাগুলো বশীর আপনাকে এমনি এমনি বলেনি,
আমার অর্ডারে বলেছে।
রুদ্র ভাবলেশহীন। যেন অতি সাধারন একটি বাক্য বলল।সেজুতির চোখ ভারী হয়ে এলো বিস্ময়ে।ফিচেল কন্ঠে বলল, ” কী?
তার মানে এসবের পেছনে আপনি? মানে কি এগুলোর?
শেষ কথাটা চিৎকার করে বলল সেঁজুতি। রুদ্র কানে আঙুল গুঁজে বলল
” এতো চেচাচ্ছেন কেনো?ধীরে কথা বলুন না।,আপনার জন্যে যদি আমার কানের পর্দা ফেটে যায়, তখন?
সেঁজুতি আঙুল উঁচিয়ে বলল,
“একদম নাটক করবেন না আমার সাথে।বলুন কেনো করলেন এরকম?
রুদ্র চোখ পিটপিট করে বলল
‘কেনো আবার?ঐ যে! আপনার মতোই অামারও প্রশ্নের উত্তর জানা বাকী।
সেঁজুতি ধৈর্য হীন কন্ঠে বলল,
‘কিসের প্রশ্ন? কিসের উত্তর?
রুদ্র নিরেট কন্ঠে বলে,
” কাল আপনার বলা কথা গুলো সত্যি ছিলো নাকি মিথ্যে সেটা জানতে হবেনা?দেখুন,
গত কাল আপনাকে আমি নিজের মনের কথা জানিয়েছি।আর তার বিনিময়ে আপনার থেকে অপমানিত ও হয়েছি।কিন্তু আমার কেন জানিনা মনে হয়েছিলো ওগুলো আপনার মনের কথা ছিলোনা।কারণ আর যাই হোক কাউকে প্রত্যাক্ষান করতে গেলে কারো চোখে পানি থাকেনা। আর তাই সত্যিটা যাচাই করতেই আজকের এই নাটক।
কিন্তু কি বলুন তো? ধরা আপনি পরে গেছেন,সামান্য এক্সিডেন্টের কথা শুনে আপনার এতো ব্যাকুলতা এটাই প্রমান করে যে আপনিও আমাকে ভালোবাসেন।
আশ্চর্যকিত সেঁজুতি। এইসব নিয়ে কেউ মজা করে?
“আমার অবাক লাগছে আপনার চিন্তাধারা দেখে।
রুদ্র তুষ্ট কন্ঠে বলল,
-“থ্যাংক ইউ।
-সেঁজুতি আগুন চোখে তাকালো,
“চুপ করুন। আমার ভাবনার থেকেও খারাপ আপনি।শুধু খারাপ ই নন,রীতিমতো একটা অমানুষ।
কি বললেন যেন,আমি আপনাকে ভালোবাসি?? এটা মনে হয় আপনার? তাহলে তো বলবো আপনার ধারণা সম্পূর্ন ভুল। কারণ আপনাকে ভালোবাসি বলেই আমি এতো ছোটাছুটি করিনি।
আপনি ভুললেও আমি ভুলিনি যে আমরা বন্ধু হয়েছিলাম।সেদিন বন্ধুত্ব চাওয়া টা আপনার কথার কথা হলেও আমি মন থেকে আপনাকে বন্ধু বলে মেনে নিয়েছিলাম।আর তাছাড়াও একজন মানুষ আরেকজন মানুষের বিপদে উদগ্রীব হবে এটাই স্বাভাবিক। তাই এইসব চিন্তা ভাবনা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলুন।আর যাই হোক আপনার মতো চরিত্রহীন লোককে আমি অন্তত ভালোবাসবোনা।
এত এত খারাপ কথায়ও রুদ্রর হেলদোল এলোনা।উলটে মুচকি মুচকি হাসলো।সেঁজুতির গায়ে জ্বালা ধরে গেলো হাসি দেখে।আর এক মুহুর্ত দাড়ালোনা। বেরিয়ে গেলো কেবিন ছেড়ে।রুদ্র চেয়ার দুপাশে দুলিয়ে বলল
” বাসবেন বাসবেন।ভালো আপনি আমাকে ঠিকই বাসবেন।তবে কেনো জানিনা আপনার প্রত্যেক টা কাজে আপনার প্রতি আমার মুগ্ধতা বেড়েই যাচ্ছে।এই যে এতোগুলো কথা বলে গেলেন,এতে কিন্তু ভালোবাসা কমলোনা আমার। উল্টে বাড়লো।
কি আর করার?? আনফরচুনেটলি রুদ্র রওশন প্রেমে যখন পরেই গেছে,তখন আপনাকেও তার প্রেমে পরতে বাধ্য করবে সে।আর সেটা শুধু সময়ের অপেক্ষা।
___
কিছুক্ষন বাদে আবারো কেবিনে এলো সেজুতি।,একেবারে নক ছাড়া।হাতে তার পূর্বপ্রস্তুত সেই রেজিগনেশন লেটার । সেজুতি কিছু বলবে এর আগে ফাইলের দিকে চোখ রেখে হাতটা বাড়িয়ে দিলো রুদ্র।
” দিন।
রুদ্রর হাত বাড়ানোর মানে বুঝতে পেরেই কাগজ টা পেছনে লুকিয়ে ফেললো সেজুতি।
” কি দেবো?
“রিজাইন দিতে এসেছেন তো? দিন।
“হ্যা দেবোই তো।এতো কিছুর পরে এখানে কাজ করবো ভাবলেন কি করে?
রুদ্র তাকালো,ভ্রু নাঁচিয়ে বলল,
তা কোথায় কাজ করবেন? আবিরের অফিসে?
” সেটা আপনার ভাবতে হবেনা।দরকার পরলে কোত্থাও কাজ করবোনা। তাও অন্তত এখানে আর নয়।
রুদ্র ছোট করে বলল
“ওহ, তা ডান হাতে পেপার্স এনেছেন অন্য হাত খালি কেন?
সেঁজুতি বুঝলোনা,
“মানে?
“মানে হিসেব মতো ওইহাতে পাঁচ কোটি টাকা থাকার কথা।অন্তত ডিল তো তাই বলে।
রুদ্রর কথার ইঙ্গিত বুঝলো সেঁজুতি। মুহুর্তেই মুখটা কালো হয়ে এলো।সেতো এখানে কনট্রাকটেড।গতকাল থেকে
এতো কিছুর চাপে ব্যাপারটা বেমালুম ভুলে বসেছে।বেরিয়েই গেছিলো মাথা থেকে। তাহলে এখন উপায়?? চাকরি ছাড়তে হলে তো তাকে জরিমানা দিতে হবে। কিন্তু সেটাতো অসম্ভব। অতগুলো টাকা!
তাহলে কি এখানেই থেকে যেতে হবে?কিন্তু সেটাওতো সম্ভব নয়। এখনও তিন মাস হয়নি চাকরীর আর সেখানে তিন বছর? সেঁজুতির ধ্যান ভাঙলো রুদ্রর আওয়াজে,
” কি ভাবছেন?ভুলে গিয়েছিলেন তাইতো?কোনও ব্যাপার নয়,আমি মনে করিয়ে দিলাম।
এবার থেকে যতোবার রিজাইন দিতে আসবেন নাহয় ততবারই মনে করিয়ে দেবো।
সেঁজুতি নিশ্চুপ। চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়ালো রুদ্র।সেজুতির মুখোমুখি দাড়িয়ে বলল
‘কি বলুন তো মিস সেঁজুতি! আপনি আসলে ভয় পাচ্ছেন।আপনি ভাবছেন , এখানে থাকতে থাকতে মানে আট ঘন্টা আমার চোখের সামনে থাকলে আপনি আমাকে ভালোবেসে ফেলবেন।
আর তাই আপনি পালাতে চাইছেন।
সেঁজুতি মৃদূ তেঁতে বলল,
“ভুল ধারণা আপনার।আপনার চোখের সামনে ৮ ঘন্টা কেন ২৪ ঘন্টা থাকলেও আপনাকে ভালো আমি বাসবোনা।নিজের ওপর এতটুকু বিশ্বাস আমার আছে।
রুদ্র ঘাঁড় কাঁত করে বলল
“তাহলে রিজাইন কেনো দিচ্ছেন?বিশ্বাসে মরিচা ধরেছে?
‘ রিজাইন দিচ্ছিনা আমি।
রুদ্র হাসলো,
” সে আপনি চাইলেও রিজাইন দিতে পারবেন না।পাঁচ কোটি টাকা তো আর হেটে হেটে আসবেনা আপনার কাছে।
পরমুহূর্তে ভাবার নাটক করে বলল,
“ওয়েট ওয়েট!! আমিতো ভুলেই গিয়েছিলাম যে এখন আপনার পাশে আবির আছে।ওনার থেকেই নিতে পারবেন তো। পাঁচ কোটি কেনো আপনি চাইলে উনি আপনাকে পুরো পঁচিশ কোটি দিয়ে দিবেন আমার যা ধারণা। শত হলেও উনি আপনার বন্ধু।অন্য কেউ দিলে সেটা দয়া,বন্ধু দিলে অন্যকিছু, তাও যদি বন্ধু হয় আবির।
শেষ কথাগুলো দাঁত চিবিয়ে বলল রুদ্র।সেঁজুতি হিঁসহিঁস করে উঠলো।কঠিন কিছু বলতেও পারলোনা।রাগ ঝাড়তে রেজিগনেশন লেটার টা টুকরো টুকরো করে ছিড়ে ফেললো সেজুতি।সাধ্য থাকলে রুদ্র কেও এমন টুকরো টুকরো করতো।
” উহু !! আর যাই ভাবুন না কেনো অন্তত এটা ভাব্বেন না।আমার মত এমন সুঠামদেহী লোক এর এই অবস্থা করা আপনার সাধ্য নয়।
রুদ্রর কথায় থতমত খেলো সেঁজুতি।মনের কথা উনি কী করে বুঝলেন?তুঁতলে বলল
-“আ..আআমি ককি তাই বলেছি?
রুদ্র গভীর দৃষ্টিতে তাকালো,
“আমাকে সব কথা বলে দিতে হয়না।আপনার বেলায় তো আরো না।
সেঁজুতির গায়ের পশম দাঁড়িয়ে গেলো রুদ্রর হিম কন্ঠে।ঢোক গিলল। রুদ্র হঠাৎই সিরিয়াস হয়ে বলল,
এবার কাজে যান।আপনি আমার ফিয়ন্সি বলে কাজ কম দেয়া যাবে তবে একেবারে কাজ থেকে ছাড় দিতে পারবোনা।
সেঁজুতি অবাক কন্ঠে বলল,
-‘ফিয়ন্সি?? আমি?? আপনার??
রুদ্রর নিরুদ্বেগ জবাব
“এনি ডাউট?? দুদিন বাদে যদি আমাদের বিয়ে হয় তবে এখন তো আপনি আমার ফিয়ন্সিই হলেন তাইনা?
সেঁজুতি ফুঁসে উঠলো,
‘ ফালতু কথা রাখুন।জেগে জেগে স্বপ্ন দেখছেন?কোনও ব্যাপার নয়, দেখতে থাকুন।স্বপ্ন আপনার স্বপ্নই থেকে যাবে।
রুদ্র দৃঢ় কন্ঠে বলল,
“সেটা তো সময়ই বলবে হবু মিসেস রুদ্র রওশন চৌধুরী। স্বপ্ন জেগে দেখি বা ঘুমিয়ে,আপনি আমার আর আমার ই।এটা একদিন আপনি নিজেই বলবেন।
চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here