হৃদয়ের সুখ আপনি – পর্ব 11

0
319

#হৃদয়ের_সুখ_আপনি
#পর্ব-১১
#Nishi_khatun
পরেরদিন সকালে রিমশা’র ঘুম ভাঙ্গে মুঠোফোনের রিংটোনের আওয়াজে। ঘুমঘুম চোখে বিছানাতে মুঠোফোন খোঁজা খুঁজি করে অবশেষে পেয়ে যায়। মুঠোফোন হাতে নিয়ে দেখে স্কিনের উপর ‘মা’ নামটা জ্বলজ্বল করছে। রিমশা দ্রুত ফোনটা রিসিভ করতে-ই ওপাশ থেকে তীব্র উৎকণ্ঠিত কন্ঠে বলা শব্দ গুলো ভেসে আসতে শুরু করে।
ওপর পাশ থেকে বলে,”রিমশা জানিস আমাদের গ্রামে কি হয়েছে?”
রিমশা ঘুমকাতুরে কন্ঠে বলে,”তুমি না বললে জানতে পাড়বো কি করে? আমি তো ভবিষ্যৎ দেখতে পারি না, যে সবটা জেনে বসে থাকবো।”
রিমশা’র মা বলে,”আমাদের গ্রামের শেষের দিকে এক ববয়স্ক মহিলা থাকত। কাল রাতে ঐ মহিলার ছেলেটাকে কে বা কারা যে এতোটা মারধোর করেছে কি বলবো। ছেলেটার না বাঁচার অবস্থা। সদর হসপিটালে নিয়ে গেছে হয়তো বাঁচবে না।
জানিস ছেলেটার মা কি পরিমাণ বিলাপ করে কাঁদছে। ”
এবার রিমশা বিরক্তিবোধ করে বলে,
-“ছেলে হসপিটালে তাতে এতো কাঁদার কি আছে?”
রিমশা’র মা বলে,
“আমার সন্তান যদি হসপিটালে থাকে তাহলে আমি তার দুঃখে দুঃখী হবো না?”
রিমশা বিরক্তিকর ভাবে বলল-,
“যে সন্তান তার মা কে সম্মান করে না। নিজের বয়স্ক মায়ের গায়ে হাত তুলতে বিবেকে বাঁধে না। মা কে তিনবেলা সময়মত খাবার দেয় না। ঐ রকম সন্তানের বেঁচে থাকার কোন অধিকার নেই। ঐ সব কুলাঙ্গার সন্তানদের মরে যাওয়া ভাল।”
রিমশা’র মা আশ্চর্য হয়ে বলে,
“এসব কথা তু-ই জানলি কি করে? আমি তোকে তো কিছুই বলি নাই?”
রিমশা বলে,”আমার জীবনে গল্পটা বদলে যাওয়ার আগে, আমাদের গ্রাম থেকে ঐ বুড়ি মা এখানে শ্বশুর আব্বার সাথে দেখা করতে এসেছিল। তখন দেখেছিলাম ঐ বুড়ি মা কে। তার ঠোঁটের কোণায় রক্তের শুকনো দাগ। চোখের এক কোণায় লাল হয়ে ফুলে আছে, সারা শরীরের লাঠির বারির চিহ্ন স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল। সেদিন উনি খুব কান্না করে। তাকে শান্তনা দিয়ে জানতে পারি তার সমস্যার কথা।”
উনার ভাষ্যমতে , ” আমি এক জনমদুখিনী। স্বামী মারা যাবার পর থেকে ছেলেটা আমার বদলে গেছে। বিয়ে করবে বললো বিয়ে দিয়েছি। বউ আর ছেলের একা থাকতে চাই। আমি তাদের সাথে থাকলে না কি সমস্যা। ছেলের বউ আমাকে পছন্দ করে না। আমি না কি অচল পয়সা। তারা আমার সাথে থাকতে পারবে না। আমার সাথে থাকলে মানসম্মান চলে যাবে।
আমি বুড়ি হয়ে গেছি, তাদের পরিবারের যোগ্য না। তারা আমাকে বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে বলে। কিন্তু আমি নিজের স্বামীর ঘর ছেড়ে কেন যাবো? এই স্বামীর ভিটামাটি আমার শেষ সম্বল। তারা আমার কাছ থেকে শেষ সম্বল কেরে নিতে চায়। আমি তাদের আমার বাড়িটা লিখে দিচ্ছি না দেখে,
আমার উপর জুলুম করতে শুরু করেছে।
আমার নিজের ছেলে আমাকে মারধোর করে।
ঠিকমতো তিনবেলা খাবার দেয় না। সারাদিন নানারকম গালিগালাজ করে। দেখো না আজকেও আমাকে মেরেছে।
আপনারা একটু ছেলেটাকে বোঝান। আমি ওদের কোন সমস্যা করবো না। আমাকে শুধু বাড়ি থেকে যেন না তাড়িয়ে দেয়। ঘরের একটা কোণায় মুখ বুজে পড়ে থাকবো। তিনবেলা খেতে দিতে হবে না। ওরা আমাকে এক বেলা যেন পেট ভরে খাবার দেয়। আর এভাবে যেনো আমার গায়ে হাত না তোলে।
সেদিন আমি ঐ বুড়ি মা কে জড়িয়ে ধরে নিজেই কেঁদেছি। আমার পাশে পাথরের মতো স্থির হয়ে দাইয়ান দাঁড়িয়ে সব কথা শুনেছিল। এসমস্ত কথা শুনে দাইয়ান বুড়ি মা’র ছেলেকে ঠাণ্ডা মাথায় বুঝিয়ে বলে ছিল। সে যেনো তার মায়ের সাথে আর খারাপ ব্যবহার না করে। বৃদ্ধ মা তাকে কত কষ্ট সহ্য করে না বড় করেছে।
তবে দেখো তার ছেলে তবুও শুধরে যায় নি। সে তার মা’কে প্রতি দিন আঘাত করতো। ‘কথায় আছে, কয়লার ময়লা যায় না ধৌত করলে।’ যে সন্তান কুলাঙ্গার হয় তাকে শত নীতিকথা গুলিয়ে খাওয়ালেও তারা জাতে আসবে না।
হয়তো দাইয়ান বাড়িতে থাকলে নিজেই দায়িত্ব নিয়ে বুড়ি মা’র ছেলের বারোটা বাজিয়ে ছাড়ত।
তা-ই যে বা যারা ঐ ছেলেটাকে হসপিটালে পাঠিয়েছে তাদের ধন্যবাদ জানানোর দরকার। এবার যদি ঐ কুলাঙ্গার সন্তান মায়ের কষ্টটা বুঝতে পারে। আর মায়ের কদর করতে জানে।
রিমশা’র মা সবটা শুনে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে,
‘জানি না রে মা! আমাদের কয়েকটা গ্রামে কার নজর পড়েছে। কিছুদিন পর পর খুনের খবর নয়তো মারধোরের খবর।
সে যাই হোক তু-ই সাবধানে থাক রাখছি এখন।’
সকালে মায়ের সাথে কথা বলার পর ফ্রেশ হয়ে রিমশা রেহেনা বেগমের কাছে যায়।
রেহেনা বেগমের কাছে যেয়ে সে বলে,”আম্মা আমি একটু উনার সাথে দেখা করতে যেতে চাই। যদি আপনি অনুমিত দেন তাহলে যাবাে নয়ত যাবাে না।”
রেহেনা বেগম মুচকি হেসে বলে,” তোমার স্বামী কাছে যাবে তার জন্য আমার কাছ থেকে অনুমিত নেওয়ার কি আছে? যখন ইচ্ছা হবে দেখা করতে চলে যাবে।”
রিমশা আমতাআমতা করে বলে,”আম্মা এই কথাটা জেনো আর কেউ না জানে। আমি চাইনা অন্যদের জানাতে। ”
রেহেনা বেগম নিরবে সম্মতি জানাতে-ই রিমশা রেডি হয়ে বাড়ির বাহিরে বেড়িয়ে যায়।
রিমশা চলে যাবার পর ইফা জোড়ে জোড়ে চিৎকার করে বলে,
-“রিমশা’র পা অনেক লম্বা হয়ে গেছে। স্বামী কে জেলে বন্দী করে রেখে সে মনের সুখে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদের ছেলের যে মেয়ে এমন ক্ষতি করেছে তাকে কেউ তো কটু কথা বলছে না। উল্টা তাকে মাথায় তুলে নাচছে। তাদের যত বাহাদুরি আমার বেলায়। আমিও আর আপনাদের অনুমতির অপেক্ষা করবো না এই বলে দিলাম। আমার যা ইচ্ছা হবে তাই করবো।
সবাই কান পরিষ্কার করে জেনে রাখুন। ”
রাত বিরেতে যেমন শিয়াল একাই হাক-ডাক ছাড়ে ঠিক তেমন ভাবে দিনের বেলায় ইফার চিৎকার কেউ আমলে নিচ্ছে না।
ওর যা ইচ্ছা করুক তাতে অন্যদের কিছুই না।
*
*
এদিকে আজকেও রিমশা কে নিজের সামনে দেখে দাইয়ান অগ্নিদৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে থাকে।
রিমশা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে,” জানে কি হয়েছে?
উঁহু আপনি তো জানেন না। আমি বলছি কি হয়েছে।”
দাইয়ান বলে,”তোমার নাটক করার দরকার নেই।
আমি কিছুই জানতে চাই না। তুমি যাও এখান থেকে।”
রিমশা মুখ ভেঙ্গচি কেটে বলে,”আপনার শোনার ইচ্ছা না থাকলেও আমি তো বলতে ইচ্ছুক। এখানে আসার কিছুদিন আগে এক বুড়ি মা আমাদের বাড়িতে বিচার চাইতে এসেছিল। যার ছেলেকে আপনি তোতাপাখির মতো সুন্দর করে বুঝিয়েছিলেন জেনো সে তার মা’কে কষ্ট না দেয়।
কাল রাতে কে বা কারা সেই বুড়ি মা’র ছেলেটাকে কি মা’র টাই না মেরেছে। বেচার হসপিটালে ভর্তি হয়তো নাও বাঁচতে পারে।”
দাইয়ান হচকিত হয়ে বলে,”তোহহহহহ আমি কি করবো?
কে মারা গেলো বা বেঁচে থাকলো এসব জেনে শুনে আমার কাজ নেই।”
রিমশা -জানি তো আপনার কাজ নেই! তবুও আমি জানাতে আসলাম। আপনি বাড়িতে নেই এসব খবর তো জানতে পারবেন না। আশেপাশের সব তথ্য সম্পর্কে আপনাকে অবগত করাটা আমার কর্তব্য বুঝলেন। দেখুন না আপনি নেই তবুও আপনার অবর্তমানে আমি ঠিকি আপনার দায়িত্ব পালন করছি।”
দাইয়ান গম্ভীর সুরে বলে,”তোমাকে আমার পরিবারের বা আমার কোন দায়িত্ব পালনে দায়িত্ব আমি দেইনি। অযথা আগ বাড়িয়ে দায়িত্ব পালনের কোন দরকার নেই।”
রিমশা -আরে ধুর! আপনি কেন বলবেন? বিয়েরপর স্বামীর সব দায়িত্বে স্ত্রীর ভাগ থাকে। তা-ই আমি নিজে থেকে আপনার সব কাজের দায়িত্ব নিয়েছি।
দাইয়ান রিমশা অনেকটা সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলে,
-“এই তোমাকে না আমি জীবনের সব থেকে বড় কষ্টটা উপহার দিলাম? সতীন এনেছি তোমার জন্য। তুমি তবুও কেনো দূরে যাচ্ছ না বলবে?”
রিমশা’র তাচ্ছিল্যের সাথে বলে,”সারাজীবন আপনার সাথে থাকার জন্য ওয়াদা করেছি । তাহলে মাঝপথে কি করে আপনাকে ছেড়ে দেই বলেন? এখানো একসাথে দু জনের মরা বাকি আছে। আর ঐ সতীন দু দিনের জঞ্জাল। ”
দাইয়ান -রিমশা তুমি জীবনটা যেমন ভাবছো এটা কিন্তু
মোটেই এমন নয়। তুমি জানো না আমার সাথে জড়ানোর পরিণাম কি ভয়াবহ হতে পারে। আমি চাইনা তুমি কোনদিন এই ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হও। প্লিজ এখনো সময় আছে, আমার জীবন আর আমার পরিবারের কাছ থেকে চলে যাও।”
রিমশা -সব কিছু ছেড়ে যাবার জন্য তো আমি আপনার জীবনে আসি নাই। তাহলে যাবার কথা কেনো আসছে? আর যদি চলে যাওয়ার হতো তাহলে বিয়েরদিন কখনো আপনার সাথে আসতাম না।
দাইয়ান জানে রিমশা ঘাড়-ত্যাড়া! একে বোঝানোর ক্ষমতা আর দাইয়ানের নাই। তা-ই এখন নিজেকে পরাজিত ভেবে শান্তনা দিচ্ছে।
রিমশা বলে,”এখুনি নিজেকে পরাজিত ভাবার দরকার কি? সামনে হয়তো আপনার সময় আসতে পারে বলা যায় না।
তবে হ্যা ঐ সময়ের আগে আমি ইফার থেকে আপনাকে আলাদা করে দিব এই বলে দিলাম।”
রিমশা প্রস্থান করতেই দাইয়ান বলে,
“কোন ভুল ক্ষণে যে এই লবঙ্গলতিকার সাথে দেখা হয়েছিল আল্লাহ ভালো জানে। আল্লাহ এই পাগলের হাত থেকে তোমার নিরিহ বান্দাকে বাঁচাও। আমি যতো ওর ভালো করতে চাইছি ততোই মেয়েটা কষ্ট পাচ্ছে। জানি না আমাদের এই সম্পর্কের পরিণাম কি হবে।”
(মন্তব্য করতে হবে না। দোয়া করবেন সুস্থ ভাবে যেনো গল্পটা লিখতে পারি।)



চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here