হৃদয়ের সুখ আপনি – পর্ব 14

0
290

#হৃদয়ের_সুখ_আপনি
#পর্ব-১৪
#Nishi_khatun
এভাবে আমার দিন গুলো কেটে যাচ্ছিল। দেখতে দেখতে আমি স্কুল পাশ করে কলেজের স্টুডেন্ট হয়ে যায়। আমার কলেজে ভর্তি হবার সব ব্যবস্থা আহীদ করেছে।
কলেজে ওঠার পর থেকে আহীদ আর আমার সম্পর্কের সমীকরণ টা বদলে যায়। কেনো জানি না আহীদ আমার থেকে দূরে থাকতে শুরু করে। আমি কলেজে ভর্তি হবার কিছুদিন আগে আহীদ বাইক কিনেছে। কারণ আমাদের বাড়ি থেকে কলেজ বহুদূর। রোজ রোজ রিক্সা ভাড়া করেও সময়মত পৌঁছানো সম্ভব না। বাড়ি থেকে সময়ের অনেক আগেই বেড়িয়ে পড়তে হয়।
স্কুলে থাকাকালীন সময় সে আমার সাথে রাতের পর রাত কতোশত গল্প করেছে। আমি আমার জীবনের সব ঘটনা তার সাথে শেয়ার করেছি। কিন্তু সে আমার কাছে রহস্যের মতো ছিলো। তার জীবনের কোন কথায় সে আমার নিকটে প্রকাশ করত না। এমনকি তার সাথে আমার এতো সৌহার্দ্য পূর্ণ সম্পর্ক তবুও আমি এটাই জানতাম না সে কি নিয়ে লেখাপড়া করে।
তার ব্যাক্তিগত জীবন নিয়ে কোন প্রশ্ন করলে তার এক কথা তুমি বাচ্চা মেয়ে। আমার সম্পর্কে বেশি জানার দরকার নাই। আমার সম্পর্কে মনের মধ্যে বেশি কৌতূহল রাখবে না। নয়তো আমার আর তোমার সম্পর্কের সমীকরণ বদলে যাবে বুঝলে।
সে কিন্তু এখনো রোজ আমাকে কলেজে নামিয়ে দিয়ে আসে। আবার সম্ভব হলে আসার পথে নিয়ে আসে। যদি সে ব্যস্ত থাকে তাহলে আমাকে ফোন করে বলে দেয় একা বাড়িতে চলে যেতে।
কলেজে অন্যান্য মেয়েদের সাথে মেলামেশা করার পর তাদের ভালোবাসার গল্প শুনে এটা বুঝতে পারি আমার মনে আহীদের প্রতি যা আছে ওটা শুধু সম্মান নয়। সম্মানের থেকে বেশি কিছু। আমি তাকে নিজের থেকে বেশি বিশ্বাস করি। চোখ বন্ধ করে তার উপর ভরসা করতে পারি। সে যদি কখনো ইচ্ছা করতো আমার সাথে খারাপ কিছু করতেই পারতো। কিন্তু সে কখনোই এমন কিছু করে নাই। সব সময় আমার সাথে দূরত্ব রাখতে চেষ্টা করেছে। যেনো আমি কখনো তার প্রতি দুর্বল হয়ে নিজের আত্মসম্মান বিষর্জন দিয়ে দেই।
এভাবে বেশ কিছুদিন চলতে থাকে। সে আমাকে যতো বেশি ইগনোর করছিল আমি ততো বেশি তার প্রতি আসত্ত হয়ে পড়ছিলাম।
এভাবে আমার ইন্টারে দ্বিতীয় বর্ষ শুরু হয়। আমি এবার আমার অনুভূতি গুলোকে সঠিকভাবে বুঝতে পারি। আমি সত্যি তাকে ভালোবেসে ফেলেছি। এটা হয়তো বিপরীত লিঙ্গের প্রতি থাকা কৌতূহল থেকে সৃষ্টি।
আমি যখন নিজের অনুভূতি সম্পর্কে অবগত হলাম তখন আহীদ কে জানাতে চাইলাম। তা-ই একদিন কলেজের গেটে নামার পর আহীদ কে প্রশ্ন করি,
-“আচ্ছা আমার যদি কাউকে পছন্দ হয় অথবা তাকে ভালোবাসতে শুরু করি! তখন সেই ব্যক্তির কাছে কি আমার অনুভূতি প্রকাশ করা উচিৎ হবে?”
আহীদ সোজাভাবে বলে,”কখনোই কোন ছেলের কাছে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে যাবে না। তোমার মনে যে অনুভূতি আছে তা সামনের ব্যক্তির মনে নাও থাকতে পারে। তুমি তার নিকট অনুভূতি প্রকাশ করা মাত্র তার হাতের পুতুল হয়ে যাবে। সে ইচ্ছা করলে তোমার অনুভূতি কে সম্মান করতে পারে আবার ইচ্ছা করলে অসম্মান করতে পারে। সেই ব্যক্তি যদি আমিও হই তবুও নিজের আবেগ কন্ট্রোল করবে। সামনের মানুষের যোগ্যতা আছে কি না তা আগে যাচাইবাছাই করবে। সে কি তোমার এই ছোট হৃয়দের সুখের খোঁজ হতে পারবে? সে কি তোমার হৃদয়ের অনুভূতি কে পবিত্রতা দান করতে পারবে? না কি তোমার অনুভূতি নিয়ে খেলা করবে। তা-ই কি দরকার নিজের আত্মসম্মান অন্যের নিকটে বিষর্জন দেওয়ার?”
সেদিন তার কথা শুনে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেছিলাম,” ধন্যবাদ আপনাকে।”
তারপর আবারো কিছুদিন মুখটা বন্ধ করে নিরবে তার সাথে পথ চলা শুরু করি। সে মাঝেমধ্যে আমাকে নিয়ে হুটহাট বেড়াতে চলে যেতো। তার এসব কান্ডে আমি খুব অবাক হয়ে যেতাম।
একদিন রাতে সে আমাকে ফোন দিয়ে বলে,”রিমশা কাল ভোরে ফজরের নামাজ পড়ে বাড়ির বাহিরের চলে আসবে তোমাকে নিয়ে কোথাও যাবার আছে। বলেই ফোনটা রেখে দিলো।”
আমি বাধ্য মেয়ের মতো তার কথা শুনে ভোরে বেড়িয়ে পড়ি। সে আমাকে নিয়ে শহর থেকে একটু দূরে চলে আসে। তার বাইকটা থামাতে আমি স্তব্ধ হয়ে ছিলাম কিছুটা সময়। কারণ একটা বাড়ির চারপাশে লাল কৃষ্ণচূড়া গাছ। লাল কৃষ্ণচূড়া ফুল পড়ে বাড়িটার সৌন্দর্য হাজার গুণ বেড়ে গেছে। ফুলের লাল পাপড়ি পড়ে সবটা ঢেকে রেখে লাল রঙে মাধুবী তে। আমি হারিয়ে গেছি এই ফুলের সৌন্দর্যে।
সে হুট করে আমার হাত ধরে আবারো ফিরিয়ে নিয়ে চলে আসে। এই লোকটা এমন কেনো? যখন যা ইচ্ছা তা-ই করে আমার সাথে ধুর ভালো লাগে না।
তার উপর নিজের রাগ প্রকাশ করতে পারি না। যদি পারতাম তাহলে তাকে ঠিক উগান্ডা পাঠিয়ে দিতা হুরররর।
এভাবে আমার কলেজ জীবনের সমাপ্তি ঘটে। এখন আমি একজন এডাল্ট মেয়ে। আঠারো বছর পূর্ণ হয়ছে আমার।
তবুও আমি আমার হৃদয়ের অপ্রকাশিত অনুভূতি তার নিকটে ব্যক্ত করতে পারি নাই। তাকে আজ পর্যন্ত এ কথা বোঝাতে পারি নাই আপনি আমার হৃদয়ের তৃপ্তি। এই অশান্ত মনের শান্তির পরশ।
এখন আমি অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী। আজকাল মামা-মামী আর আহীদের সাথে মেলামেশাটা খুব একটা পছন্দ করে না।
একদিক বিকালে আহীদ আমাকে বলে,”জানো রিমশা আমি আমার স্বপ্ন পূরণ করেছি। এখন আমি জব করছি। ইচ্ছা করলেই কারো সারাজীবনের দায়িত্ব নিতে পারি।”
তার মুখে এমন কথা শুনে বুকের মাঝে মোচড় দিয়ে ওঠে। আমি অশ্রুসিক্ত নয়নে তার দিকে দৃষ্টিপাত করে বলি,
-“আপনার বিয়েতে আমাকে দাওয়াত দিতে ভুলবেন না।”
আহীদ সেদিন প্রথম আমার মাথায় জোড়ে এটা টোকা দিয়ে বলে,”আসলে তুমি ছাগলের তিন নাম্বার বাচ্চা। এতো প্রতিবাদি, এতো আত্মসম্মান বোধ তোমার আর একজন পুরুষের মনের কথায় বুঝতে পারলে না? আরে বোকা এতবছর ধরে আমাকে দেখে এই চিনলে? তুমি ব্যতীত অন্য কোন মেয়ে আমার জীবনে আছে? গাধী নাম্বার ওয়ান! সে না কি তার স্বামী কে নিয়ে সারাজীবন সুখে থাকবে। এমন গাধী মার্কা মেয়েকে বিয়ে করতে চাওয়াটা বোকামি। ”
রিমশা চোখের অশ্রু মুছে বলে,”আপনি সত্যি আমাকে পছন্দ করেন? আমাকে আপনার জীবনসাথি করবেন?”
আহীদ -না আমাদের পাশের বিল্ডিং এর আন্টি কে করবো এবার খুশি?”
-কেউ কাউকে এভাবে প্রপোজ করে বুঝি?
আহীদ ধমকের সুরে বলে,”একদম চুপ বেয়াদব মেয়ে। আমি তোমাকে প্রেমে প্রস্তাব দিচ্ছি না। বিয়ে করতে চাইছি। রাজী থাকলে হ্যা বলো তোমার মামা-মামীর সাথে কথা বলতে হবে।কারণ এতোবছর ধরে নিজের অনুভূতি গুলোকে খুব কষ্টে চেপে রেখেছি আর সম্ভব না। সেই পিচ্চি একটা মেয়ে যাকে দেখে যে কেউ প্রেমে পড়তে বাধ্য হবে। তাকে এতোবছর ধরে আমি আমার আশেপাশে রেখেও প্রেম করি নাই। একটা পবিত্র সম্পর্কে জাড়ানো ইচ্ছায়। আমার এখন তোমাকে সারাজীবনের জন্য লাগবে বুঝলে পিচ্চি। তুমি ছাড়া আমার মত এই ছন্নছাড়া লোকের কপালে আর কেউ জুটবে না। আর না আমি কোনদিন তুমি ছাড়া অন্যকারো কথা কল্পনা করতে পারবো।”
রিমশা আহীদের প্রশ্নের উত্তর দিবে ঠিক সে সময় তার মুঠোফোনটা চিৎকার করে ওঠে।
স্কিনের উপর বাবা নামটা জ্বলজ্বল করছিল। দ্রুত কলটা রিসিভ করে কথা বলতে শুরু করে রিমশা।
ওপর প্রান্ত থেকে আব্বু দ্রুত গতিতে বলল-
,”আম্মুজান তোমাকে ছাড়া তোমার বড় ভাই বিয়ের পিঁড়িতে বসতে নারায। তা-ই কিছু ড্রেস গুছিয়ে নিও,কাল সকালে তোমাকে নিতে আসবো আমি।”
রিমশা বলে, “আমি যাবো? ”
রিমশা’র বাবা বলে,”হ্যা তুমি আসবে। তাছাড়া তোমার মামা-মামী বিয়ের আগের দিন আসবে। সো তুমি ভাইয়ের বিয়েতে আসার জন্য পিপারেশন নাও।”
বাবা ফোনের লাইনটা বিচ্ছেদ করতেই একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আমি আহীদের দিকে দৃষ্টিপাত করে বলি,”আমাকে কাল গ্রামের বাড়িতে যেতে হবে।”
আহীদ প্রশ্ন করে,”তুমি যাবে?”
-হ্যা যেতে হবে। কারণ বড় ভাইয়ের বিয়ে, সে আমাকে ছাড়া বিয়ের পিঁড়িতে বসবে না। আব্বু কাল আমাকে নিতে আসবে।
আহীদ বলে,”তাহলে তোমার বাবার সাথে কি কালকে কথা বলবো?”
রিমশা বলে,”নাহ! ভাইয়ার বিয়ের ঝামেলা মিটমাট হয়ে যাক।তারপর না হয় আপনি সবার সাথে কথা বলবেন। ”
-আচ্ছা সমস্যা নেই। তাহলে কয়দিনের জন্য আমার দৃষ্টির আড়ালে যাচ্ছ তুমি জানতে পারি?
-” ৪/৫ দিনের জন্য মনে হয়।”
আহীদ বলে,”তোমার বড় ভাইয়ের বিয়ের পর তুমি আমার বউ সাজার জন্য রেডি থাকবে সুন্দরি। বেশি প্রতিক্ষা করালে তোমার খবর আছে। বাবার বাড়ি থেকে তুলে এনে জোড় করে হলেও আমার বউ করবো তোমাকে। ”
রিমশা মুচকি হাসি দিয়ে বলে,”আমি যাচ্ছি ভালো কথা । তা-ই বলে এই কয়দিনের জন্য যদি অন্যকারো মায়াজালে জড়িয়ে পড়ো তাহলে তোমার খবর আছে। থানাতে মামলা করে জেলখানাতে বন্দী করে রাখবো তোমাকে। ”
আহীদ -পারবে আমাকে জেলখানাতে বন্দী করে রাখতে?
রিমশা অ্যাটিটিউড এর সাথে বলে,”দরকার হলে এই রিমশা সব কিছু করতে পারে। তবুও তোমাকে ছাড়তে রাজি নাই। আপনি সারাজীবনের জন্য আমার।”
*
*
পরেরদিন সকালে মামা-মামীর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাবার সাথে গ্রামের বাড়িতে পাড়ি দেয় রিমশা।
(ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ব্যস্ত আছি ফ্রি হলে রেগুলার দিব গল্পটা)



চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here