প্রনয়-পর্ব 29

0
771

#প্রনয়
#নুসরাত সুলতানা সেঁজুতি
পর্ব–২৯
হারফি রেস্টুরেন্ট। কোনার দিকের একটা টেবিলে একে একে বসে আছে রুদ্র, আবির আর অন্য পাশে এরিকা।এইতো কিছুক্ষন আগেই বাংলাদেশে পৌঁছোলো মেয়েটা।মেয়েটাকে দেখে আসলেই বিদেশিনী লাগছেনা।পড়নে ভদ্র পোশাক।ব্লু জিন্স সাথে হাটু অব্দি কূর্তি।পিঠে ছড়ানো সোনালী চুল।একটু আধটু বাংলা বলতে পারে।কিন্তু বুঝতে পারে পুরোটাই।রুদ্র ব্লাক কফির মগে চুমুক দিলো,শান্ত ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করলো,
” এখন আপনি কি করতে চাইছেন আবির?
আবিরকে কেমন এলোমেলো দেখালো।চিন্তিত ছেলেটা!বলল,
“আমি জানিনা। আমার মাথায় কিছুই আসছেনা।,বিশ্বাস করুন, কাল রাতে বাবার মুখে বিয়ের কথা শুনলাম,মন চাইছিলো সত্যিটা বলে দেই।কিন্তু পারিনি।কেমন একটা সঙ্কোচ হচ্ছিলো।মডার্ন কান্ট্রিতে লাইফ স্পেন্ড করে এসেও মাইন্ড টাকে চেঞ্জ করতে পারছিনা।
রুদ্র হাসলো।এই হাসিতে স্পষ্ট ধিক্কার।বলল,
“কি অদ্ভূত তাইনা!এখন আপনার মাথায় পুরো পৃথিবীর চিন্তা ঘুরছে।এর একটা চিন্তাও যদি এরিকাকে ভালোবাসার আগে,বা বিয়ে করার আগে করতেন তাহলে হয়তো এইদিন দেখতে হতোনা।
আবিরের মুখ কালো হয়ে আসে।এরিকা মাথা নিঁচু করে কাটাকাটা ইংরেজিতে বলল,
“আমিই দ্বায়ী এসবের জন্যে।আমার জন্যে যত ভোগান্তি।
রুদ্র বলল,
“না। আমি আপনাকে বলিনি।এখানে আপনার কোনও দোষ নেই।
আবির নিজের চিন্তা ঝেড়ে এরিকাকে সান্ত্বনা দিলো,হাতের ওপর হাত রেখে বলল,
“এরিকা প্লিজ।তুমি এভাবে ভাবছো কেন?এত ভেবোনা।আমি ঠিক ম্যানেজ করে নেব।
এরিকা মাথা তুলল।অভিমানী কন্ঠে বলল,
‘এটা তুমি গত এক বছর ধরে বলে আসছো আবির।,তুমিতো আমাকে ঠিক করে তোমার সমস্যা গুলোও বলছোনা।
রুদ্র মাথা নেঁড়ে বলল,
“ও আই সি!মিস্টার আবির, আপনি তাহলে এখনও ওনাকে আসল কথা গুলোই জানান নি?
আবির মাথা নামিয়ে ছোট করে বলল,
‘না।
” না জানালে সমস্যার সমাধান হবে আপনার?
আবির অসহায় চোখে তাকালো,
– কি করবো? আপনিই বলুন।
এরিকার দিকে একবার তাকালো রুদ্র।মেয়েটি কাঁদছে।ফর্সা গাল ভিজে একাকার।রুদ্র যেন বুঝে নিলো এরিকার মনের অবস্থান।মনে হচ্ছে এরিকার থেকে আশানুরূপ উত্তর পাওয়া যাবে।রুদ্র ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলল,
” মিসেস এরিকা!আপনি তো আবিরকে ভালোবাসেন তাইনা?
এরিকা মাথা দোলায়।রুদ্র আবার বলল,
‘সারাজীবন আপনি আবিরের সাথেই থাকতে চান তো?
এরিকা ভ্রু কোঁচকায়, “ইউ হ্যাভ এনি ডাউট মিস্টার চাউডোরি?
রুদ্র হাসলো।তার পদবীটা হয়ত একটু বেশিই কঠিন।প্রায় সব বিদেশী ক্লায়েন্ট গুলোই এমন বিকৃত করে ডাকে।
-” না।আমার কোনো সন্দেহ নেই।তবে কিছু প্রশ্ন আছে।করতে পারি?
‘বলুন।
রুদ্র সোজাসাপটা বলল,
“আমি শুনেছি আপনি খ্রিস্টান। আপনি কি জানেন একজন মুসলিম হয়ে বিধর্মী কাউকে ঘরের বউ হিসেবে মেনে নেয়া ঠিক কতোটা কঠিন কাজ?
এরিকা প্রশ্ন নিয়ে তাকালো।রুদ্র নিজেই বলল,
‘ আমি বলতে চাইছি আপনি যদি আবিরকে পেতে চান তবে সবার আগে আপনাকে মুসলিম হতে হবে। অন্যথায় আবিরের পরিবার আপনাকে মেনে নেবেন না।
এরিকা স্তব্ধ হয়ে আবিরের দিকে তাকালো।অবিশ্বাসের কন্ঠে শুধালো,
“ইজ ইট ট্রু আবির?
অপরাধীর মত মাথা নাড়লো আবির।এরিকা কিছু সময়ের জন্যে থম মেরে যায়।সময় নিয়ে বলে,
” এটাই তাহলে তোমার মূল সমস্যা ছিলো? তাইতো?
আবির নিশ্চুপ।রুদ্র বলল,
” মিসেস এরিকা, এই মুহুর্তে আবির কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন।ওর হয় আপনাকে বেছে নিতে হবে না হয় ওর পরিবারকে।কিন্তু আমার ধারনা আপনি নিশ্চয়ই চাইবেন না যে কোনও বাবা মা আপনার কারণে তাদের একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে ফেলুক?
এরিকা ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো। আবির হাসফাস করলো ওর কান্নায়।কিছু বলতে নিলে রুদ্র থামিয়ে দিয়ে বলল ‘ ওনাকে বলতে দিন আবির।
এরিকার জবাবে এলো অনেকক্ষন পর।কাঁদতে কাঁদতে বলল ‘ আমি চাইনা।
রুদ্র বলল ‘এখন সবটাই আপনার মর্জি এরিকা।আপনি যা চাইবেন তাই হবে।
এরিকা ভেজা কন্ঠে বলল
“আমি একটি চার্চে বড় হয়েছি।আমার নিজের বলতে আবির ছাড়া কেউ নেই।পরিবার বলতে আমার কাছে ওই চার্চটাই। তাই একটা পরিবার থেকে আলাদা হওয়ার দুঃখ আমি বুঝি।আমি আবিরকে পেতে সব করব।সব।
আবির,রুদ্র একিসাথে প্রশান্ত হাসলো।আবির এরিকাকে জড়িয়ে ধরলো একহাতে।এরিকা মুখ লোকালো আবিরের বুকে।প্রথমে দুটো কিল-ঘুষিও মেরেছে অভিমানে।কেন এই কথাগুলো আগে বলেনি ছেলেটা?আবির কৃতজ্ঞ চোখে রুদ্রর দিকে তাকালো।ইশারায় বোঝালো ‘ থ্যাংক্স।রুদ্র মুচকি হেসে উঠে দাঁড়ায়।ওদের দুজনকে একা ছাড়া উচিত। হাটতে হাটতে মানস্পটে সেঁজুতির মুখটা ভেসে ওঠে। মেয়েটা যে কবে তাকে বুঝবে?বুঝলে এভাবেই ভালোবাসবে কী?সেও কী বলবে,’ রুদ্র,আমি আপনার জন্যে সব করতে পারব?
__
ধানমন্ডি লেক।পাড়েই সিমেন্ট বাঁধানো ছোট ছোট বেঞ্চ।রুদ্র এই প্রথম এখানে এলো।কাজ,ব্যাস্ততা,ইচ্ছে কোনটাই অনুকূলে ছিলোনা।ঘুরতে যাওয়ার সময় কই?রুদ্র পায়ের ওপর পা তুলে বসে আছে।হাতে সিগারেটের আধপোঁড়া অংশ।চোখ লেকের সবুজ পানিতে অবিচল।
চারপাশ জুড়ে কপোত কপোতির ভীর।রুদ্র একবার ব্রিজের ওপারের মেন রাস্তার দিকে তাকালো।সেঁজুতির আসার কথা।দশমিনিট পার হলো অথচ এলোনা।এই মেয়েটা কি কোনো দিন শুধরাবে না?মেয়ে মানুষ মানেই দেরি।রুদ্র মনে মনে হাসছে।সেঁজুতি কে বলেছে
আর্জেন্ট মিটিং। এসে যখন বুঝবে মিটিং আসলে অজুহাত,নির্ঘাত রুদ্রকে ঠেলে পানিতে ফেলে দেব।হ্যা দেবেই।যা রাগ!
সেতুর পারে রিক্সা থামালো সেঁজুতি। ভাড়া মিটিয়ে
এপাশ ওপাশ দেখলো।এতো লোকের ভীড়ে রুদ্র কে খুঁজে পাওয়া কী সম্ভব?ব্যার্থ হয়ে রুদ্রর নাম্বারে ডায়াল করতে যাবে এর আগেই রুদ্র কল দিলো।
“স্যার! কোথায় আপনি?
ওপাশ থেকে উত্তর এলো,
‘সেতু পার হয়ে হাতের বাম দিকে এলেই পাবেন।
রুদ্র লাইন কেটে দিয়েছে।সেঁজুতি হাটা ধরলো।আজ রবিবার।অফিস বন্ধ।হঠাৎ এভাবে মিটিং পরার কারন সে জানেনা।তাও এরকম একটা লেকের পারে?অদ্ভূত না?
রুদ্র বসে বসে পা নাড়ছে।আশেপাশের যূগল দের প্রেম দেখে নিজেরও প্রেম প্রেম পাচ্ছে।গুনগুন করে গান গাইতে মন চাইছে।কিন্তু না! আজ প্রেমিক ভাব টা লুকোতে হবে।সেঁজুতি এসে পরবে এখনি।প্রেমিক ভাব আগেই দেখালে সিরিয়াস কথাগুলো বলা হবেনা।মেয়েটা এমনিতেই চেঁতে থাকে তার ওপর।তবে মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলো,যেদিন সেঁজুতি তাকে ভালোবাসবে,তাদের প্রথম ডেট এই পার্কেই হবে।আহামরি কিছু নেই।অথচ মনোমুগ্ধকর জায়গা। সেঁজুতি কে এখানে ডাকার কারন,কিছু কথা সামনাসামনি বলা।অফিসে কী সব বলা যায় নাকী?
রুদ্র নিঁচের দিক চেয়ে ভাবছিলো।হঠাৎ সেখানে এক জোড়া স্লিপার পরা পা দেখে বুঝলো কাঙখিত মানুষটি এসেছে।রুদ্র চোখ তুলে দেখলো।
হলুদ সালোয়ার কামিজ পড়নে সেঁজুতির।কাঁধে ব্যাগ।চুল গুলো বেনি করে এক পাশে এনে রাখা।মুখে কোনো প্রসাধনী নেই।বিকেলের রোদ টা যেমন স্নিগ্ধ, নরম- লালচে,সেঁজুতিকে ঠিক তেমন মনে হলো রুদ্রর।মেয়েটার সবকটা রুপ তার বুকে ঢেউ তুলতে যথেস্ট।সেঁজুতি ভ্রু কুঁচকে রেখেছে।রুদ্র নিজের পাশ ইশারা করে বলল ” বসুন।সেঁজুতি বসলোনা।উলটে প্রশ্ন ছুড়লো,
“এখানে মিটিং?কার সাথে?কাউকেই তো দেখছিনা।
রুদ্রর নিরুদ্বেগ উত্তর,
” মিথ্যে বলেছি।লেকের পাড়ে আদৌ মিটিং হয় নাকি?
সেঁজুতি অবাক হয়ে বলল,
‘ মানেটা কি এসবের?মিথ্যে বলে আমাকে এনেছেন?কেন?
রুদ্র উঠে দাঁড়ালো।পকেটে হাত গুঁজে বলল,
“মানে এটাই যে আপনি বড্ড বোঁকা! বললাম মিটিং আর চলে এলেন?এসব জায়গায় অফিসের মিটিং হয়? অবশ্য হয়,তবে কিসের মিটিং সেটা চারপাশে তাকালেই দেখতে পাবেন….
রুদ্রর কথায় কৌতুক।সেঁজুতির মেজাজ খারাপ লাগছে।
” আপনি আমার সাথে মজা করছেন?
‘করছি।আপনার সাথে মজা করা বারন,এরকম লেখা কোথাও পড়িনি আমি।
সেঁজুতি মেকি শান্ত কন্ঠে বলল,
‘ তা আমাকে ডাকার কারন?
“আপনার সাথে আমার কিছু কথা আছে।
সেঁজুতি ভ্রু নাঁচালো,
“কি এমন কথা? যার জন্যে এখানে ডাকতে হবে? অফিসে বলা যেতোনা?
রুদ্র গম্ভীর কন্ঠে বলল,
‘না। যেতোনা বলেই এখানে অাসা।আর অবশ্যই দরকার ছাড়া আমি আপনাকে ডাকবনা।
রুদ্রর গম্ভীর কন্ঠ শুনে সিরিয়াস কিছু হয়েছে মনে হলো সেঁজুতির। ভ্রুয়ের ভাঁজ টানটান করে বলল ‘বলুন।
রুদ্র জ্বিভ দিয়ে ঠোঁট ভেজালো,
“আবিরের সাথে আপনার বিয়ের কথা চলছে।আপনি জানেন?
সেঁজুতি চমকে উঠলো।কিছুক্ষন হা করে তাকিয়ে থাকলো।পরক্ষনে রুদ্রকে ধরা না দিতে স্বাভাবিক করলো চেহারা।
“হ্যা জানি।
রুদ্র নিশব্দে হাসলো।সেঁজুতি যে জানতোনা সে ওর মুখ দেখেই বুঝেছে।ডান ভ্রু নাঁচিয়ে বলল,
” তাই?আপনি জানেন?
সেঁজুতি কেন যেন রুদ্র চোখে চোখ মেলাতে পারলোনা।অন্যদিক ফিরে বলল,
“যেহেতু আমার বিয়ের কথা চলছে, আমি জানবো সেটাই তো স্বাভাবিক।
“এ নিয়ে আপনার কিছু বলার নেই?
” কি বলার থাকবে?
“আপনি কি এই বিয়েতে রাজি?
সেঁজুতি কাটকাট জবাব দিলো,
” রাজি না হওয়ার ও তো কিছু নেই। আবির সব দিক থেকেই ভালো ছেলে।আই মিন সব দিক থেকে..
শেষের কথাটা রুদ্রর দিকে গাঢ় দৃষ্টিতে চেয়ে বলল সেঁজুতি। মানে বুঝে মাথা নিচু করে মুচকি হাসলো রুদ্র।সব দিকের সাথে সাথে চরিত্রের দিক থেকেও আবির পার্ফেক্ট। এটাই বোঝালো মেয়েটা।
পরক্ষনে উদাস হলো রুদ্রর চেহারা।আবির রাজি হবেনা,কিন্তু সেঁজুতি? ওতো রাজি।ওতো জানেওনা আবির বিবাহিত।আজ আবির না হোক,কাল অন্য কোনো ছেলের সাথে বিয়ে ঠিক করলে?সেঁজুতি তখনও রাজি হবে?হবে নাই বা কেন!তার জীবনে কোনো পিছুটান আছে? নেই।রুদ্র অসহায় চোখে তাকালো।সেঁজুতির ভেতরটা অজান্তেই মোচড় দিলো এমন চাউনিতে।রুদ্র আকুতি নিয়ে বলল
” আমাকে ভালোবাসা যায়না সেঁজুতি?
সেঁজুতি দৃষ্টি সরিয়ে নেয়।রুদ্রর চোখে তাকানো যায়না আজকাল।ঢোক গিলে মুখ শক্ত করে জবাব দেয়,
” না।
রুদ্রর বুক হুহু করে কেঁদে ওঠে।
“শুধু এই একটা অন্যায়ের জন্যে?
আমিতো ওসব কবেই__রুদ্রর কথা সম্পূর্ন করতে দিলোনা সেঁজুতি।বলল
” আপনি শুধু চরিত্রহীনই নন। তার পাশাপাশি আপনি একটা খুনিও।
রুদ্রর কন্ঠ রোধ হয়ে এলো। কার কথা বলছে সেঁজুতি? ও এসব জানলোই বা কী করে!অস্পষ্ট আওয়াজে বলল, ” মানে?
সেঁজুতি তাচ্ছিল্য হাসলো ‘ অভিনয়ে আপনি অনেক কাঁচা রুদ্র।এই যে আপনার মুখের চিন্তার ছাপ টা? আমি এখান থেকেই স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি।
বুঝেও না বোঝার ভান করছেন আপনি। নেহাল উদ্দীন এর মার্ডার কে করিয়েছে মি:রুদ্র রওশন চৌধুরী? অস্বীকার করতে পারবেন?আপনি মারেন নি ওনাকে?
রুদ্র অবিনত,
‘মেরেছি।
সেঁজুতি বিস্মিত না হয়ে পারলোনা।
“এটা বলতে আপনার একটুও বাঁধলো না?
রুদ্র মুখের ওপর বলল ‘ না।
সেঁজুতি ক্ষেপে গেলো।
‘বাঁধবে কি করে,আপনি তো একটা নির্লজ্জ্ব!
শব্দ করে হেসে উঠলো রুদ্র।হাসতে হাসতেই বলল,
” অনেস্টলি একটা কথা বলি?সেদিন যদি নেহালের হাতে আপনার রেপ হতো, আজ এই নির্লজ্জ কথাটা আপনি শুনতেন। সমাজের কাছে।
সেঁজুতি মাথা নামিয়ে নিলো।রুদ্র দৃঢ় কন্ঠে বলল
“নেহাল কে আমি মেরেছি।আর এটা স্বীকার করতে আমার বিন্দুমাত্র দ্বিধা নেই। কারণ ও আপনার দিকে হাত বাড়িয়েছে।আপনাকে অসন্মান করেতে চেয়েছে। আর তাই ওর প্রাপ্য শাস্তি একমাত্র মৃত্যু
। যা আমি নিজ হাতে দিয়েছি।
সেঁজুতি মৃদূ কন্ঠে বলল,
” সে ও যাই করুক,মানুষ খুন করা পাপ।
রুদ্র দুই ভ্রু উঁচিয়ে বলল
“ও আচ্ছা?আর কাউকে ধর্ষন করতে চাওয়া বুঝি পূন্যের কাজ ? ধর্ষিতা হলে আজ এই কথা গুলো বলতে পারতেন?পারতেন না।তখন নিজেই ওর শাস্তির জন্যে থানার দোরগোড়ায় মাথা ঠুকে বেড়াতেন।
সেঁজুতি নিরুত্ত্যর।রুদ্রর একটা কথাও মিথ্যে নয়।নেহাল মরে যাওয়ায় ভেতর ভেতর একটা শান্তি পেয়েছে সেদিন।হত্যাকারীর প্রতি খুশিও ছিলো।তাহলে যখন জানলো সেই খুনি রুদ্র স্বয়ং,কেন এত খারাপ লাগছে?রুদ্রতো কেউ নয় তার!নাকী সেই বুঝতে পারছেনা,রুদ্র কতটা জুড়ে গেছে।সেঁজুতির ঘোর কাটলো রুদ্রর কথায়,
” আপনি কিভাবে জানলেন এসব?
“থানার ওসি মিঃ মাহবুল আলম,
যিনি আমার স্টেটমেন্ট নিয়েছিলেন,উনি বলেছেন।
রুদ্র অবিশ্বাস্য কন্ঠে বলল
” ও গড,তাই নাকী?কিন্তু তাহলে তো এতক্ষন আমার জেলে থাকার কথা ছিলো!আমি বাইরে কী করে?
রুদ্রর ইয়ার্কিতে সেঁজুতির মেজাজ আবার বিগড়ে আসে।চেঁতে বলল,
“বোকা সাজছেন? আমি জানি আপনি কত ধুরন্দর লোক!আপনার বিরুদ্ধে কোনো প্রমান আপনি রাখেননি। তাই এখনও বাইরের খোলা হাওয়া খেতে পারছেন।
রুদ্র অবাক হওয়ার ভান করে বলল,
” লাইক সিরিয়াসলি? আপনার এটা মনে হয়? ভেরী ফানি।
আমি এখনও বাইরের হাওয়া খাচ্ছি কারণ আমার পকেটে টাকা আছে।ওরা যদি সব ইনফরমেশন পেয়েও যায় তবুও আমাকে গ্রেফতার করতে আসবেনা।বর্তমান আঈন ব্যাবস্থা কতটুকু জানেন আপনি? টাকার কাছে আজকাল সব কিছুই নত। শুধু মাত্র ভালোবাসাটাই পাচ্ছিনা।
শেষ কথাটায় রুদ্রর গলা বুজে এলো।উত্তরে সেঁজুতি মুখের ওপর বলল,
“আর পাবেন ও না।
রুদ্র গভীর দৃষ্টিতে চেয়ে বলল,
“একবার ভালোবেসেই দেখুন না আমাকে।কোনও দিন ঠকবেন না।কথা দিচ্ছি।
সেঁজুতির ইচ্ছে হলো রুদ্রকে বিশ্বাস করতে।পরমুহূর্তে সেই হোটেল,অত মেয়ে,আর রুদ্রর নারীসঙ্গের কথা মনে পড়তেই কঠিন কন্ঠে বলল,
“আপনার কথা দেয়ার প্রয়োজন নেই।বিয়েতে আসবেন।অবশ্য দাওয়াত করে যাব।
রুদ্র হতাশ হলো আরেকবার।ঠিক কী করলে সেঁজুতি মানবে?কেউ যদি বলে দিতো! তাই করতো ও।রুদ্র ভেজা কন্ঠে পিছু ডাকলো সেঁজুতির।সেঁজুতি দাঁড়িয়ে যায়,ফিরে চায়না।রুদ্র বলল ‘ ভালোবাসি।
সেঁজুতির পা কেঁপে ওঠে।এগোতে চায়না।টেনে,হিচড়ে শাসিয়ে নিয়ে চলল ওদের।
রুদ্র নিষ্পলক চোখে দেখলো যতক্ষন সেঁজুতি রিক্সা নিয়ে অদৃশ্য না হলো ততক্ষন।
রিক্সা চলছে।ব্যাস্ত রাস্তা।ফুরফুরে হাওয়াগুলো আজ মন ছুঁতে পারছেনা সেঁজুতির।ঘন মেঘ জমেছে মুখে।কেন যেন কান্না পাচ্ছে।পেছন ফিরে কারো মলিন মুখটা দেখার ইচ্ছে জাগলেও সাহসে কূলোলোনা।অজান্তেই সেঁজুতির চোখ ভিজে উঠলো। রুদ্রর কালো মুখ,অসহায় কন্ঠ কানে বাজছে যতবার বুক ফেঁটে কান্না আসছে। সেঁজুতি নিজেই অবাক হচ্ছে এতে।কেন এমন হচ্ছে? সে কী তবে রুদ্রকে ভালোবেসে ফেলল?সারাক্ষন রুদ্রর ভালোবাসি বলাটা তার হৃদয় ছুঁতে পারলো?সেঁজুতি বড্ড অভিমানি কন্ঠে বিড়বিড় করলো,
“আবিরের সাথে আমার বিয়ে?এটা তুমি ঠিক করলেনা বাবা!ঠিক করলেনা।
রুদ্র বেঞ্চের ওপর বসে পরলো আবার।হঠাৎই বাঁকা হাসি ফুটলো ওষ্ঠে।
“কোথায় আর যাবেন সেঁজুতি? টার্ন ব্যাক তো আমার কাছেই নিতে হবে। আবিরের সাথে বিয়েটা যে আপনার হচ্ছেনা,তার ফুল সেট আপ আমি করেই এসেছি। এবার শুধু দেখার অপেক্ষা আপনি ঠিক কতদূর এগোতে পারেন!অভিনেত্রী আপনি বড্ড খারাপ।আমার মতোন।
চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here