সে -পর্ব 3

0
279

#সে
#পর্ব_৩
#মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া
___________________
রুদ্র আমার মনের কথা বুঝেছিল কী-না জানিনা তবে ঠিক ঠিক মেয়েটাকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দেয়। আমার ধারণা পাশে যদি কোনো নর্দমা থাকত তাহলে মেয়েটির জায়গা এখন সেই নর্দমাতেই হতো। রুদ্র রাগী রাগী গলায় মেয়েটিকে বলল,’তোর এই স্বভাব আমি বাদ দিতে বলেছি না? দেখলেই একদম বান্দরের মতো গলায় ঝুলে পড়িস। বিরক্তিকর! গায়ে পড়া স্বভাব আমার একদম ভাল্লাগে না শিরিন। নেক্সট টাইম তোর এমন ব্যবহার দেখলে থাপ্পড় দিয়ে দাঁত ফেলে দেবো।’
এই প্রথম রুদ্রের রাগ দেখে ভয় পাওয়ার বদলে আমার খুশি খুশি লাগছে। বেশ হয়েছে একদম! হতচ্ছাড়ি আরও ধর জড়িয়ে। রুদ্র ওর বাকি বন্ধুদের নিয়ে রেস্টুরেন্টের ভেতর চলে যায়। শিরিন মেয়েটি কাচুমুচু ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে রয়েছে। এত মানুষের সামনে এভাবে অপমান করবে রুদ্র এটা হয়তো একদম প্রত্যাশার বাহিরে ছিল মেয়েটির। সবাই চলে গেলেও একটি মেয়ে রয়ে গেছে। সে শিরিনের কাঁধে হাত রেখে বলল,’মন খারাপ করিস না। ভেতরে চল।’
‘রুদ্র সবসময় আমার সাথে এমন করে কেন?’ জিজ্ঞেস করল শিরিন। পাশের মেয়েটি বলল,’জানিসই তো রুদ্র কেমন। তবুও ওর সাথে আঠার মতো লাগতে যাস কেন?’
‘বিকজ আই লাভ হিম।’
‘তোর এই অতিরিক্ত বাড়াবাড়ির কারণে কবে জানি বন্ধুত্বটাই নষ্ট হয়ে যায়। এর আগে কতগুলারে ভালোবাসছিস? কতগুলা রিলেশনও করছিস। রুদ্র সব জানেও। তাছাড়া তোর প্রতি রুদ্রের রিলেশন করার মতো কোনো ইন্টেনশন নাই। এটা যত তাড়াতাড়ি বুঝবি ততই তোর জন্য ভালো।’
কথার শেষে শিরিনের মাথায় গাট্টা মেরে মেয়েটিও ভেতরে চলে গেল। বিরক্ত নিয়ে সঙ্গে গেল শিরিনও। এতক্ষণ আমি ফোন টেপার ভং ধরে দাঁড়িয়ে ছিলাম। নয়তো ওদের কথোপকথনগুলো তো আর শুনতে পারতাম না। এই শাঁকচুন্নি তাহলে রুদ্রের বান্ধবী। এমন খাইস্টা মাইয়া ওর মতো ছেলের বান্ধবী হয় কেমনে আমি তো সেটাই ভেবে পাচ্ছি না। থাক বাবা, আমার অত ভাবাভাবির কাজ নাই। এইটুকু তো শিওর হলাম যে, রুদ্র শিরিনকে পাত্তা দেয় না। দেওয়া উচিতও নয়। একদম নয়। হুহ!
রেস্টুরেন্টের ভেতরে গিয়ে দেখলাম আমার বান্ধবীগুলা খাবার খাচ্ছে। মানে বুঝলাম না। আমি আসার আগেই ওরা খাবার অর্ডার দিয়ে ফেলেছে? আমি এক সাইডে বসে জিজ্ঞেস করলাম,’আমি আসার আগেই তোরা খাবার অর্ডার দিয়ে ফেললি? আবার আমায় রেখেই খাচ্ছিস।’
লিমা খাওয়ার ফাঁকে একটু ব্রেক নিয়ে বলল,’তোর জন্য আর কতক্ষণ ওয়েট করে থাকব? ট্রিট দিবি বলে সকালে আমরা কেউ নাস্তা করিনি।’
‘বাহ্! বাহ্! আমি যদি না আসতাম? বিল কে দিতি?’
‘তুই যে আসবি আমরা সেটা জানি। ফাজিল হলেও কথা দিয়ে কথা রাখিস তুই।’ বলল তিথি।
আমি উদাস হব নাকি ওদের চিবিয়ে খাব বুঝতে পারছিলাম না। আমার ভালো মানুষীর সুযোগ নিচ্ছে ওরা। এজন্য তথাকথিত একটা কথা আছে, ‘আজকাল ভালো মানুষের দাম নেই।’
মনের দুঃখে বড়ো শ্বাস নিয়ে ওয়েটারকে ডাকতে যাব তখন আমাদের অপজিটে এক টেবিল এগিয়ে বসা রুদ্র ও ওর বন্ধুদের দেখতে পেলাম। আমার এখান থেকে রুদ্রকে সরাসরি দেখা যাচ্ছে। কী সুন্দর হেসে হেসে কথা বলছে ছেলেটা! তিথি আমার দিকে এক পলক তাকিয়ে বলে,’ঐ সিটে আগে আমি বসা ছিলাম। দেখলাম ঐখান থেকে রুদ্র ভাইয়াকে দেখা যায়। তাই তোর জন্য ঐ সিট রেখে এখানে এসে বসেছি।’
তিথির এ কথায় আমি খুশি হয়ে গেলাম। ওর গাল ছুঁয়ে চুমু খেয়ে বললাম,’ওলে আমাল লাল গুড্ডু গুড্ডু বান্ধবী!’
‘হুস যা! ঢং করা লাগবে না আর। আমার জন্য আরেকটা বার্গার অর্ডার দে।’
‘দিচ্ছি।’
তিথির জন্য বার্গার অর্ডার দিয়ে আমি চুপি চুপি রুদ্রকে দেখছিলাম। লুকিয়ে কয়েকটা ছবিও তুলে নিয়েছি। এত্ত সুন্দর করে হাসে ছেলেটা!
আমি আসার আগেই অর্ধেক খাওয়া হয়ে গেছিল ওদের। বাকি অর্ধেকও শেষ। আমি ট্রিট দিলাম অথচ একটা কোল্ড ড্রিঙ্কস ছাড়া আমি আর কিছুই খাইনি। খাব কী করে? আমার পেট তো ভরে আছে খুশিতে। সব জায়গায় রুদ্রকে পাই। ওকে দেখলেই আমার খুশি খুশি লাগে। আর পেট ভরে যায়। কী অদ্ভুত কথা না?
তিথিরা ঢেকুর তুলে বলে,
‘নবনী বিলটা তাড়াতাড়ি দিয়ে বাড়ি চল। বৃষ্টি হবে মনে হচ্ছে।’
‘আরে রুদ্র তো এখনও আছে।’ নাকমুখ কুঁচকে বললাম আমি। লিমা আমার হাতে চিমটি কেটে বলল,’সে কখন যাবে তার কোনো ঠিক আছে? তার আশায় বসে থাকলে বৃষ্টির কবলে পড়তে হবে। থাকিস তো পাশাপাশি এপার্টমেন্টে। মন চাইবে চলে যাবি।’
‘ধুর!’
রুদ্রকে রেখে যেতে ইচ্ছে করছিল না। কিন্তু আর বেশিক্ষণ থাকাও যাবে না। তাড়াতাড়ি বাড়ি না ফিরলে বাড়িতে মা কুরুক্ষেত্র বাঁধিয়ে দেবে। আকাশের অবস্থাও ভালো না। একবার বৃষ্টি শুরু হলে কখন থামবে তারও কোনো নিশ্চয়ত্তা নেই। তাই রুদ্রকে রেখেই বিল দিয়ে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে এলাম।
.
আমি বাদে বাকিদের বাড়ি অপজিটে। অর্থাৎ আমায় একাই এখন বাড়ি ফিরতে হবে। ওরা একটা সিএনজি নিয়ে চলে যায়। আর আমি রিকশায় উঠে বসি। ভাগ্য এত খারাপ হবে বুঝতে পারিনি। হঠাৎ ঝুমবৃষ্টি শুরু হয়ে যায়। বৃষ্টি আর বাতাসের তোড়ে উড়ে যাওয়ার মতো অবস্থা আমার। এমনিতেও যা ওজন আমার! সবাই বলে আমি নাকি বাতাসের আগে আগে চলি।
‘আপা! রিকশা তো চলে না। হাওয়া শ্যাষ।’
রিকশাওয়ালার কথা শুনে মনে হচ্ছে বিশাল আকাশ এখন আমায় মাথায় পড়ে ভেঙে খান খান হয়ে যাবে। আমি অসহায় ভঙ্গিতে বললাম,’মামা ট্রাই করে দেখেন আবার।’
‘টেরাই কইরা লাভ হইব না আপা। আমার ভাড়া লাগব না। আপনে তাড়াতাড়ি কইরা বাড়িতে যানগা।’
আমার অবস্থা এখন ‘চিৎকার করিয়া কাঁদিতে চাহিয়াও আমি করিতে পারিনি চিৎকার।’ বেচারা রিকশাওয়ালার-ই বা দোষ কী! ভাগ্যে ছিল এমন বিপদে পড়ব। পড়েছি। ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে বৃষ্টির মধ্যেই আমি হাঁটতে শুরু করি। বৃষ্টি শুরু হয়েছে বেশিক্ষণ হয়নি; অথচ এতেই প্রায় রাস্তা ডুবে যাওয়ার মতো অবস্থা। হাঁটতে হাঁটতে চায়ের টং দোকান যখন পাস করে গেলাম পেছন থেকে কতগুলো ছেলের উস্কানিমূলক কথা শুনতে পেলাম। ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখতে পেলাম চারজন ছেলেকে। বাজে বাজে কথা বলে যাচ্ছে আমায় শুনিয়ে শুনিয়ে। ভয়ের চেয়ে রাগ বেশি হচ্ছিল আমার। যদি পারতাম এখনই সবকয়টাকে পিটিয়ে মাটিতে পুঁতে দিতাম। একা পেয়ে যা নয় তাই বলে যাচ্ছে! আশেপাশে কোথাও যে দাঁড়াব তারও কোনো উপায় নেই। আর একটা রিকশা-ও চোখে পড়ল না।
একটা রিকশা অবশ্য এলো। কিন্তু ফাঁকা নয়। রিকশাটি আমার সামনেই থামল। আরও বেশি অবাক হলাম রুদ্রকে দেখে। সেদিনের সেই রণমূর্তির আবির্ভাব ওর চোখেমুখে। সঙ্গে আরেকজন ছেলে ছিল। দু’জন মিলে ঐ ছেলেগুলোর দিকে এগিয়ে গিয়ে দিল গালে থাপ্পড়। বাকি দুইটা ভয়েই দৌঁড়। রুদ্র একটার কলার চেপে ধরে বলল,’আবার এই এলাকায় মেয়েদের বিরক্ত করা শুরু করছিস?’
‘মাফ চাই ভাই। আর হইব না।’
আরেকটি থাপ্পড় দিয়ে তবেই রুদ্র ছেলেটিকে ছাড়ল। বিষয়টা আমার কাছে সিনেমাটকই লাগল। না, না মীরাক্কেল বলা যায়!
রুদ্র কাছে এসে জিজ্ঞেস করল,’বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে বাড়ি ফিরছ কেন? একটা রিকশা তো নিতে পারতে।’
‘নিয়েছিলাম। মাঝরাস্তায় চাকার হাওয়া ফুঁশ!’ মাথা নত করে বললাম আমি। তখন রুদ্রর হাসির শব্দ শুনতে পেলাম। হয়তো আমার শেষ কথাটি শুনেই হেসেছে। ওর হাসি দেখে আমিও মুচকি হাসলাম। রুদ্র হাসতে হাসতে বলল,’আচ্ছা যাও রিকশায় উঠো।’
খুশির উত্তেজনায় ইচ্ছে করছিল এখানেই নাচানাচি শুরু করি। রুদ্র আর আমি এক রিকশায়! ওর বন্ধুর দিকে তাকিয়ে অবশ্য একটুখানি খুশি কমে গেল। থাক ব্যাপার না। আমাদের মাঝে সে দুধভাত। আমি আগে আগে গিয়ে রিকশায় বসলাম। রুদ্রও এগিয়ে এসে রিকশাওয়াকে বলল,’মামা একদম বাড়ির সামনে নামিয়ে দিবেন।’
‘আইচ্ছা।’ বলল রিকশাওয়ালা।
রুদ্র এটা কী বলল? আমি যে খুশিতে মনে মনে নাচলাম এগুলো সব বৃথা গেল?
‘আপনারা যাবেন না?’ সাহস করে জিজ্ঞেস করে ফেললাম। রুদ্র বলল,
‘হ্যাঁ। আমরা হেঁটেই যেতে পারব। তুমি সাবধানে যাও।’
রিকশা চলা শুরু করে। এদিকে রাগে গজগজ করি আমি। বৃষ্টিও মনে হয় মাথার আগুন নেভাতে পারবে না। স্বগতোক্তি করে বলে ফেললাম,’ধ্যাত!’
পুরো কাকভেজা হয়ে বাড়ি ফেরার দরুণ ইচ্ছেমতো মায়ের বকুনি খেলাম কতক্ষণ। ব্যাপার না। বকবে তিনি আদরও করবে তিনি। আমি জামা-কাপড় পাল্টে ড্রয়িংরুমে এসে বসলাম। বাবা আর রাজ্জাকও ড্রয়িংরুমেই বসে ছিল। মা এখন রান্নাঘরে। আমি শিওর সে আমার জন্য এখন গরম দুধ নিয়ে আসবে। এই খাদ্যটা অপছন্দ হওয়া সত্বেও শুধুমাত্র বকা খাওয়ার ভয়ে গিলতে হবে। দুধের গ্লাসটা আমার সামনে রেখে বলল,’কোনোরকম বাহানা না করে দুধটুখু খেয়ে নাপা-এক্সট্রা খেয়ে নিবি। তারপর একটা ঘুম দিবি।’
আমি কিছু বললাম না। বাবা বললেন,’তোকে যে নবরত্ন তেল আনতে বলেছিলাম। আনিসনি?’
‘না। মনে ছিল না।’
‘ভুল করে ফেললি রে। এখন তোর মায়ের মাথা ঠান্ডা করব কী করে বল তো?’
‘তুমি চুপ করে থাকো। সবসময় শুধু রসিকতা।’ ধমক দিয়ে বলল মা। বাবা ঠোঁটের ওপর আঙুল রেখে বলল,’এইযে আমি চুপ হলাম।’
দুধটুকু খেয়ে ওষুধ মুখে নিয়ে নিজের ঘরে চলে আসি। জানালা দিয়ে ওষুধটা ফেলে দিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লাম। আসলেই এখন প্রচুর ঘুম আসছে।
___________
ঘুম ভেঙেছে ঠিক তিনটায়। আকাশ এখনও থম মেরে রয়েছে। কিন্তু বৃষ্টি হচ্ছে না। ভাবলাম যাই গিয়ে একটু ছাদ থেকে হেঁটে আসি। ফ্রেশ হয়ে ঘর থেকে বের হয়ে দেখলাম রাজ্জাক চুপচাপ বসে আছে। আমি বললাম,’এই রাজ্জাক ছাদে যাবি?’
‘যামু।’
‘চল তাহলে।’
রাজ্জাককে নিয়ে ছাদে এসে দেখলাম পরিবেশটা অনেক বেশি সুন্দর। ছাদের একেক কোনায় পানি জমে রয়েছে। জুতা খুলে পানির ওপর পা রেখে হাঁটছিলাম। ভালো লাগছিল খুব। ছাদে অনেকগুলো।গাছ লাগানো রাখা। কারা লাগিয়েছে জানিনা। কিন্তু বৃষ্টির পানিতে ভিজে যাওয়া গাছগুলোকে অনেক বেশি সুন্দর লাগছে। গাছের পাতায় লেগে থাকা বৃষ্টির পানি ছুঁয়ে দিলাম আমি। পেছনে ঘুরে রাজ্জাককে ডাকতে গিয়ে দেখলাম আমাদের থেকে কিছুটা দূরে একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। এমনভাবে তাকিয়ে আছে যেন গিলে খেয়ে ফেলবে। ছেলেটা রাজ্জাকের বয়সীই হবে।
কোমরে হাত রেখে আমি জিজ্ঞেস করলাম,’কী পিচ্চি এভাবে তাকিয়ে আছ কেন?’
ছেলেটা আমার দিকে এগিয়ে এসে নিজের চুলের মাঝে হাত বুলিয়ে বলে,’মোটেও আমি কোনো পিচ্চি নই। তুমি যেই গাছের পাতা ধরলে ঐটা আমার গাছ।’
‘হ্যাঁ, তো?’
‘আমার গাছ কেউ ধরুক এইটা আমি পছন্দ করি না।’
এইটুকু ছেলের কথা শুনেছেন আপনারা? বাপ্রে বাপ! কী এটিটিউড! এই বয়সে আমরা মায়ের আঁচল ধরে ঘুরতাম। খেলনাপাতি খেলতাম। বড়োদের সঙ্গে কথা বলা তো দূরে থাক; ঠিকমতো চোখের দিকেও তাকাতাম না ভয়ে। ছেলেটি মুচকি হেসে বলে,’আমি রিশান। তোমার নাম কী?’
‘নবনী।’
‘ওয়াও! অনেক সুন্দর নাম তো। আমাদের ক্লাসে একটা মেয়ে আছে। ব্যাপক সুন্দরী। ওর নাম হলো অবনী। তোমার নামের সঙ্গে কিন্তু মিল আছে।’
এই ছেলের কথাবার্তার স্টাইল শুনে মনে চাচ্ছিল ঠাস করে গালে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেই। বেয়াদব ছেলে! মনে মনে বকলেও মুখে কিছু বললাম না। ছেলেটা গুলুমুলু আছে। গাল দুইটা চটকায় দিতে মনে চাচ্ছে। আমি হেসে বললাম,’এই বয়সে এত যে ঢং তোমার বাড়ির কেউ কিছু বলে না?’
‘কী বলবে? কারো সাহস আছে নাকি আমায় কিছু বলার?’
‘ও বাবা! রংবাজ নাকি তুমি?’
‘আমি না। তবে আমার ভাইয়া। সবাই ভাইয়াকে অনেক ভয় পায়। তুমি কি আমার ভাইয়াকে চেনো?’
‘জি না। আমি কী করে চিনব? আমরা এই বাসায় নতুন এসেছি।’
‘ও। সমস্যা নাই চিনে যাবা। এই এপার্টমেন্টের সবাই আমার ভাইয়াকে চিনে। বিশেষ করে সুন্দরী মেয়েরা। আমার ভাইয়া কিন্তু কাউকে পাত্তা দেয় না।’
‘ও তাই? শুনো তোমার ভাইয়াকে এক কিকে দূরে ফেলে দেবে এমন একজনকে আমি চিনি।’
‘ছিঃ! এমন কথা মুখেও এনো না। আমার ভাইয়া একবার শুনলে তোমার খবর আছে।’
‘হুস! নবনী কাউকে ভয় পায় না।’
‘আচ্ছা বেশ! যার কথা বলছ সে তোমার কে হয়?’
পড়লাম তো এবার বিপাকে! আমি তো বলছিলাম রুদ্রর কথা। এখন কী করে বলি সে আমার কী হয়? এখন যদি বানিয়ে কোনো কথা বলি আর সেটা যদি রুদ্রর কানে যায় তাহলে থাপ্রিয়ে আমার গাল লাল করে ফেলবে শিওর। তাই মিথ্যে অজুহাত দেখিয়ে বললাম,’এই রে! কত সময় পার হয়ে গেল। যাই এখন। পরে তার সঙ্গে তোমার দেখা করিয়ে দেবো।’
এরপর রাজ্জাককে নিয়ে হাঁটা ধরলাম। সিঁড়িঘরের সিঁড়ি দিয়ে নামার সময়ে আচমকা প্লাজুতে পাড়া লেগে যায়। টাল সামলাতে না পেরে আমিও একদম উপুর হয়ে পড়ি। তখন কোন বেচারা যে উপরে আসছিল আমি জানিনা। ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলেছিলাম। কিন্তু আমার সঙ্গে সঙ্গে কষ্ট পোহাতে হলো সেই বেচারাকেও! একদম সিঁড়ি দিয়ে গড়িয়ে গড়িয়ে নিচে ফ্লোরে এসে ঠেকলাম। বিশ্বাস করেন, যেই ব্যক্তি একবার সিঁড়ি থেকে গড়িয়ে নিচে পড়েছে সেই ব্যক্তি কখনো মুভিতে এই সীন দেখলে সেটাকে রোমান্টিক সীন বলবে না। ভাববেন না যে নায়ক-নায়িকার মতো একসাথে গড়িয়ে পড়েছি। শুধু এতটুকুই বুঝতে পেরেছি আমার জন্য আরেকজনকেও পড়তে হয়েছে। হাড়-হাড্ডি বোধ হয় সব এক হয়ে গেল আমার! সিঁড়ি দিয়ে দপাদপ কারোর নামার শব্দ পেলাম। হয়তো সেটা রাজ্জাক হবে। আর একটু দূর থেকে রিশানের কণ্ঠ শুনলাম,’ভাইয়া রে!’
ওর ভাইয়াটা কে এটা দেখার জন্যই সকল ব্যথা ভুলে গিয়ে চোখ মেলে তাকালাম… এই ছেলে আবার কে!
চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here