সে -পর্ব 4

0
176

#সে
#পর্ব_৪
#মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া
____________________
পাশে পড়ে থাকা ছেলেটিকে দেখে না চমকে পারলাম না। এই হতচ্ছাড়াটা কে! আমি দ্রুত উঠে জামা,হাতের ময়লা ঝাড়তে লাগলাম। বেচারা এখনো ফ্লোরেই পড়ে রয়েছে। বেশ বুঝতে পারছি আমার চেয়েও অনেক গুণ বেশি ব্যথা এই লোক পেয়েছে।
‘আপা আপনি ব্যাথা পাইছেন?’ জিজ্ঞেস করল রাজ্জাক। এটা কোনো কথা হলো বলেন তো? পড়ে গেলে ব্যথা পাব না তো কী আরাম পাব? রাজ্জাকের ওপর মেজাজ চটে গেলেও নিজেকে স্বাভাবিক রাখলাম। হাত বাড়িয়ে দিলাম সেই ছেলেটির দিকে। ব্যথাতুর দৃষ্টিতে ছেলেটি একবার আমার মুখের দিকে তাকিয়ে হাত বাড়িয়ে দিল। আমি তাকে টেনে তুললাম। নিচে একটা চশমাও পড়ে থাকতে দেখলাম। সম্ভবত এই লোকেরই হবে। চশমাটি তুলে দিয়ে বললাম,’এটা কি আপনার?’
‘জি।’ মৃদু স্বরে বলল ছেলেটি।
চশমা পরার পর তাকে কেন জানি আমার কাছে খুব ইনোসেন্ট, ভদ্র আর সহজ-সরল মনে হলো। একটু বোকা বোকা’ও অবশ্য লাগছে। এই ছেলেকে দেখে মেয়েরা ক্রাশ খেতে পারে কিন্তু সবাই ভয় পাবে কেন? একে নিয়ে তো পারলে মেয়েরা আরও মজা লুটবে। রিশান যে আমায় ঢপ মেরেছে আমি নিশ্চিত। মনে সংশয় রাখতে চাইলাম না বিধায় রিশানকে প্রশ্ন করলাম,’এটাই তোমার ভাই?’
‘না। ভাইয়ার বন্ধু। অন্তু ভাইয়া।’
আমি অন্তুর দিকে তাকিয়ে বললাম,’আ’ম সরি। আসলে কীভাবে যেন পড়ে গেলাম বুঝতেই পারিনি। তার মধ্যে আবার আপনি এসে উদয় হয়েছিলেন।’
‘না, না সমস্যা নেই। ইট’স ওকে।’ চশমাটি ঠিক করে বলল অন্তু। আমি আর কথা না বাড়িয়ে রাজ্জাককে নিয়ে ফ্ল্যাটে চলে আসি। কোমরে বেশ খানিকটা ব্যথা পেয়েছি। আসার পথে রাজ্জাককে ভালো করে বুঝিয়ে বলেছি এই কথা যেন ভুলেও মায়ের কানে না যায়। নিজের ঘরে ফিরে চট করে জামা-কাপড় পাল্টে নিলাম আগে। নয়তো মায়ের চোখে ফাঁকি দেওয়া মুশকিল।
সন্ধ্যার দিক দিয়ে পরিবেশটা অনেকবেশি মোহনীয় লাগছিল। এই পরিবেশে হাঁটতে পারলে মন রিফ্রেশ হতে বাধ্য। রাজ্জাককে নিলাম না সাথে। একাই হাঁটতে বের হয়েছি। বেশিদূর যাব না। বাড়ির ভেতরেই ফাঁকা জায়গায় হাঁটব। গাছের পাতায় হাত বুলিয়ে বুলিয়ে হাঁটছিলাম তখন সামনে একটি মেয়ে এসে দাঁড়ায়। তার মুখটা ভীষণ হাসি হাসি। মিষ্টি করে হেসে আমায় বলল,’তুমি এই অ্যাপার্টমেন্টেে নতুন এসেছ তাই না?’
প্রত্যুত্তরে আমিও হেসে বললাম,’হ্যাঁ।’
‘জানি। তোমরা যেদিন এসেছ সেদিন ব্যলকোনি থেকে তোমাদের দেখেছিলাম। তোমার সাথে কথা বলার অনেকদিনের ইচ্ছে ছিল আমার। কিন্তু তোমার দেখাই তো পাওয়া যায় না।’
‘আসলে ক্লাশ, প্রাইভেট, কোচিং করে সময় তেমন পাওয়া যায় না।’
‘ও। কীসে পড়ো?’
‘টেনে। আপনি?’
‘আমি ইন্টার প্রথম বর্ষে পড়ি। তোমার থেকে খুব একটা তো বড়ো নই। আমায় তুমি করে বলো।’
আমি হেসে ফেললাম। বললাম,’আচ্ছা।’
‘এই তোমার নামটাই তো জানা হলো না।’
‘নবনী। তোমার?’
‘রোজ।’
‘নামটা অনেক সুন্দর।’
‘তোমার নামও সুন্দর।’
দুজনে হেঁটে হেঁটে গল্প করছিলাম। মেয়েটা আমার চেয়েও বেশি মিশুক। কয়েক মিনিটের পরিচয়েই গড়গড় করে সব গল্প বলছে আমায়।
‘জানো আমার না তেমন কোনো ফ্রেন্ডও নেই। বেষ্টফ্রেন্ড আছে শুধু। কিন্তু ও সবসময় ব্যস্ত থাকে। সময় দেয় না একদম।’
‘বেষ্টফ্রেন্ড কেন সময় দেবে না?’
‘জানিনা গো।’
‘থাক মন খারাপ কোরো না আপু। এখন থেকে তোমার জন্য আমি আছি।’
‘সব ঠিক আছে। আপু বলে তো মাঝখানে একটা দেয়াল টেনে দিলে।’
‘তাহলে?’
‘আপু বলবে না।’
‘আচ্ছা বলব না।’
দুজনে খেলার মাঠের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। আর সামনে যেতে চাইল না রোজ। তাই জিজ্ঞেস করলাম,’ওদিকে যাবে না কেন?’
রোজ আমায় হাত দিয়ে একটা ছেলেকে দেখিয়ে বলল,’ঐযে সাদা শার্ট পরা একটা ছেলেকে দেখতে পাচ্ছ? ফুটবল খেলছে বাচ্চাদের সাথে। দেখেছ?’
আমি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছেলেটিকে দেখলাম। এটা সেই ছেলে যার সাথে আমি ধাক্কা খেয়ে পড়ে গিয়েছিলাম। যদিও আমি তার নাম জানতাম। কিন্তু রোজ তার পরিচয় দিয়ে বলল,’ঐ ছেলেটা আমাদের পাশের ফ্ল্যাটে থাকে। আমার রুম থেকে সরাসরি তার রুমের জানালা দিয়ে দেখা যায়।’
‘তোমায় পছন্দ করে?’
‘হ্যাঁ। অনেক বেশি।’
‘তুমি করো না?’
‘না।’
‘কিন্তু আমার মনে হচ্ছে তুমি তাকে পছন্দ করো। এমনকি ভালোও বাসো।’
‘এমন মনে হলো কেন?’
‘জানিনা। কিন্তু সত্যিটাই বলেছি তাই না?’
রোজ কিছু বলল না। কিন্তু ওর মুখ দেখেই আমি যা বোঝার বুঝে ফেলেছি। ওকে দাঁড় করিয়ে রেখে আমি মাঠে গিয়ে বললাম,’এই চাশমিস ভাইয়া আমায় খেলায় নিবেন?’
অন্তু দাঁড়িয়ে জোরে বলল,’আপনি পারবেন না।’
কত বড়ো সাহস! আমি নাকি পারব না। আমি জোর নিয়ে বললাম,’পারব আমি।’
এরপর পিচ্চিটার থেকে বল নিয়ে এমন জোরে কিক দিলাম যে উড়ে গিয়ে লাগল রুদ্রর গায়ে। কিন্তু আমি টার্গেট করে মেরেছিলাম অন্তুকে। কে জানত এই সময়ে সে এসে হাজির হবে! ভয়ে এদিকে আমার প্রাণ যায় যায় অবস্থা। অন্তু দৌঁড়ে যায় রুদ্রর কাছে। মাথা ডলতে ডলতে রুদ্র এগিয়ে এসে বলে,’কে মারল বল?’
কেউ বলার আগেই আমি একটা গুলুমুলু মোটাসোটা বাচ্চা ছেলেকে দেখিয়ে বললাম,’এই পটলা মেরেছে।’
‘না, না রুদ্র দাদা। আমি মারিনি। মা কালীর দিব্যি করে বলছি।’ ভয়ে জড়সড় হয়ে রুদ্রকে কথাগুলি বলল বাচ্চাটি। এরপর আমার দিকে তাকিয়ে দাঁত-মুখ খিঁচে বলল,’এই দিদিভাই তুমি এত মিথ্যে বলো কেন? তুমি আমায় পটলাই বা বললে কেন? আমার নাম গণেশ।’
‘বাবা গণেশ! কে তোরে মুখ খুলতে বলেছে রে? দোষটা নিজের ঘাড়ে নিলে কী এমন ক্ষতি হতো? তুই ছোটো মানুষ। তোরে দুইটা থাপ্পড় দিলেও মানুষ কিছু বলবে না। কিন্তু আমি তো বড়ো। আমায় একটা থাপ্পড় দিলে মান-সম্মান কিছু থাকবে? কিচ্ছু থাকবে না। সব একদম ধুলোয় মিশে ধূলিসাৎ হয়ে যাবে।’ বিড়বিড় করে বললাম আমি।
রুদ্র এবার আমার কাছে এগিয়ে আসে। এখনই বোধ হয় দেবে গালে পাঁচ ইঞ্চির একটা থাপ্পড় বসিয়ে। কিন্তু সে আমায় এবং উপস্থিত সকলকে অবাক করে দিয়ে বলল,’পিচ্চি হলে কী হবে; পায়ে তো বিশাল জোর! ফুটবল কি নিয়মিত খেলো? না খেললে এটাকে সিরিয়াসভাবে নেওয়া উচিৎ। তাহলে অনেকদূর আগাতে পারবে।’
রুদ্র চলে যাওয়ার পরেও আমি অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। আমার সঙ্গে সঙ্গে বিস্ময় রয়েছে সকলের চোখেমুখে। কারণ ওর সম্পর্কে যা যা শুনেছি তার সারমর্ম হচ্ছে, সে খুব রাগী। বদমেজাজি স্বভাবের। অবশ্যই স্ট্রেইট ফরোয়ার্ড। ভুল পেলে কাউকে ছেড়ে কথা বলে না। সে যেই হোক না কেন! মুরুব্বি হলেও নয়। এজন্য অনেকেই রুদ্রকে অপছন্দ করে, বেয়াদব বলে তাতেও রুদ্রর কিছু যায় আসে না। সে তার নিজের জায়গায় স্থির এবং অটল। কিন্তু আজকের ঘটনার পর সে আমায় না মারলে একটা ঝাড়ি যে অন্তত দেবে এটা সবারই প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু না, সে তা করেনি। বরং কেয়ারিং দেখিয়েছে। আর এই সামান্য কথাটাই এবার ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র। মনে মনে কিন্তু আমিও পুলকিত ছিলাম। আনন্দ লাগত আমার। অনেক মেয়েই আমায় হিংসা করা শুরু করে। যাদের প্রায় অধিকাংশকে আমি চিনিই না। যখনই রুদ্রর সাথে আমার দেখা হতো মিষ্টি করে হেসে বলত,’কী খবর পিচ্চি?’
আহা! তার ঠোঁটের হাসি আর মুখনিঃসৃত ডাক ‘পিচ্চি’ যতবারই শুনতাম আবেগে ভাসতাম। ভীষণ আপন আপন লাগত তাকে। একদিন তাকে আমি বললাম,’অ্যাপার্টমেন্টে যে একটা গুজব ছড়িয়েছে আপনি জানেন?’
তার হাতে কিছু বিয়ের কার্ড ছিল। বাইরে বসে বসে কার্ডে নাম লিখছিল। ওপর তলার এক আপুর বিয়ের কার্ড। তাদের সঙ্গে রুদ্র এবং ওর পরিবারের খুব ভাব। তাই বিয়ের অধিকাংশ কাজের দায়িত্বই রুদ্রর ওপর পড়েছে। কার্ড বিলি করতে যাওয়ার সময়েই তার সঙ্গে আমার দেখা হয়ে যায়। কার্ডগুলোতে চোখ বুলিয়ে আমায় বলল,’কোন গুজব?’
‘আপনি কি সত্যিই জানেন না?’
‘শুনি তো কত কথাই। তুমি কোনটার কথা বলছ?’
‘কীভাবে বলব বুঝতেছি না।’
‘তবে থাক। আমি অনেক ব্যস্ত পিচ্চি। পরে কথা হবে।’
মন খারাপ হয়ে গেল আমার। তবুও তার ব্যস্ততাকে তো আর উপেক্ষা করার জো নেই। জোরপূর্বক হেসে বললাম,’আচ্ছা।’
সে দু’কদম এগিয়ে আবার ফিরে তাকিয়ে বলল,’প্রাইভেটে যাচ্ছ নাকি কোচিং-এ? তোমার স্কুলের সামনে দিয়েই যাব। গেলে সাথে আসতে পারো।’
আজ প্রাইভেট নেই আমার। কোচিং করে মাত্রই ফিরেছি। কাঁধে ব্যাগ দেখেই রুদ্র প্রশ্নটি করেছে। রুদ্রর সাথে যাওয়ার লোভ সামলাতে পারলাম না। তাই বললাম,’হ্যাঁ চলুন।’
মেইন গেটের কাছে গিয়ে রুদ্র একটা রিকশা নেয়। আমায় আগে উঠতে বলে তারপর সে ওঠে। এই প্রথম আমরা একসাথে রিকশায় পাশাপাশি বসেছি। আমার যে কতটা খুশি লাগছে তা আমি আপনাদের বলে বুঝাতে পারব না। ওর পারফিউমের ঘ্রাণ আমায় মাতাল করে তুলছে। ওহ, আর একটা কথা তো বলতেই ভুলে গেছি। রুদ্র নীল কালারের একটা পাঞ্জাবি পরেছে। যেটা রুদ্রর গায়ে অনেকবেশি মানিয়েছে।
‘ওড়না সামলিয়ে নিও নবনী। রিকশার চাকায় যেন না লাগে!’
রুদ্রর কথায় আমার ঘোর কাটে। ওড়নাটা কোলের ওপর গুছিয়ে রেখে আড়চোখে আরেকবার তাকে দেখে নিলাম। ওর এই ছোট্ট কেয়ারিং’টাই ওর প্রতি ভালোবাসা, ভালোলাগার টান আমায় বাড়িয়ে দিয়েছে। রুদ্র তখন বলল,’হ্যাঁ তখন যেন কোন গুজবের কথা বলছিলে?’
‘ঐতো অ্যাপার্টমেন্টের সবাই ভাবছে আপনার সাথে আমার সম্পর্ক আছে। এজন্য অনেক মেয়ে আমায় হিংসা’ও করে।’
রুদ্র শব্দ করে হেসে বলে,’পাগলের সুখ মনে মনে।’
‘একথা বললেন কেন?’
‘ওদের কথা বললাম। আচ্ছা একটা কথা বলো তো, সত্যটা তো আমরা জানি? আমরা তো জানি যে আমাদের মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই।’
‘হুম।’
‘তুমি ওদের কথায় মন খারাপ কোরো না। ওদের কথা গায়েও মাখবে না। মানুষের কথায় তো আর সত্যিটা বদলে যাবে না।’
এই ছেলেকে আমি কী করে বোঝাই; ওদের কথায় আমার মন খারাপ হয় না। বরং আমি খুশি হই। আর সম্পর্ক নেই তো কী হয়েছে? হতে কতক্ষণ? স্কুলের সামনের প্রায় এসে পড়েছি। সত্যিটা না বললে এখন রিকশা থেকে নামিয়ে দেবে বিধায় ভয় নিয়ে বললাম,’একটা সত্যি কথা বলি?’
‘বলো।’
‘আমার না মন ভীষণ খারাপ! তাই মিথ্যে বলে আপনার সাথে এসেছি। আপনার সঙ্গে কথা বললে আমার মন ভালো হয়ে যায়। আমার প্রাইভেট, কোচিং কোনোটাই এখন নেই।’
রুদ্র কয়েক সেকেণ্ড চুপ করে থেকে কী যেন ভাবল। তারপর বলল,’আচ্ছা সমস্যা নেই।’
রুদ্রর সম্পর্কে যা শুনেছিলাম তার সবকিছুই এখন আমার মিথ্যে মনে হচ্ছে এই মানুষটা তো কখনো আমার সাথে রুড বিহেভ করে না। বাকিদের সাথেও করতে দেখিনি। তবে সেদিন ডেয়ার পূরণ করতে গিয়ে ঐ ছেলেটাকে মারতে দেখে বুঝেছি যে সে ভীষণ রাগী। এছাড়া আর কিছু নয়। আমি তার সঙ্গে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ইনভাইটেশন কার্ড বিলি করলাম। একবিন্দু পরিমাণ বিরক্তও আমার লাগেনি। তার সাথে সময় কাটাতে পেরে ভীষণ ভালো লাগছিল। বাড়িতে মায়ের ফোনে ম্যাসেজ করে জানিয়ে দিয়েছি আসতে একটু লেট হবে। তিথিকেও ম্যাসেজ করে বলে দিয়েছি মা ফোন করলে যেন সেভাবেই কথা বলে। কার্ড বিলি করা শেষ হলে রুদ্র জিজ্ঞেস করে,’চা খাবে নাকি আইসক্রিম?’
‘গরমের মধ্যে চা খাব না এখন। আইসক্রিম খাওয়া যেতে পারে।’
রুদ্র দোকান থেকে একটা আইসক্রিম আর পানির বোতল নিয়ে আসে। আইসক্রিমটা আমার হাতে দিয়ে আশেপাশে তাকিয়ে একটা রিকশা ডাকে। আমরা দুজন রিকশায় উঠে বসি। রিকশা চলছে মন্থর গতিতে। বিন্দু বিন্দু বাতাসে রুদ্রর ঘামে লেপ্টে থাকা চুল কপালে এসে পড়ছে। সেই মুহূর্তে আমার ভীষণ ইচ্ছে করছিল ওর চুলগুলোতে হাত বুলিয়ে দিতে। পানির বোতলটা আমার হাতে দিয়ে সিগারেট ধরাল। আশ্চর্য! সে যে সিগারেট এনেছে আমি দেখিইনি। আমি নাকমুখ কুঁচকে ফেললাম। নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করলাম। কারণ সিগারেটের গন্ধ আমি একদম সহ্য করতে পারি না। বিরক্ত লাগে। বাবা’ও খায়। কত চেষ্টা করেছি সিগারেট ছাড়ানোর জন্য! কিন্তু পারিনি। আর এখন কী-না রুদ্রও!
রুদ্র সিগারেটে টান দিয়ে অন্যপাশে রাখল। ধোঁয়াও উড়াল অন্যপাশে। যথাসম্ভব চেষ্টা করছে যেন আমার দিকে সিগারেটের ধোঁয়া না আসে। আমি আইসক্রিম হাতে বসে রয়েছি। গলে গলে জামার ওপর পড়ছে। তখন রুদ্র বলে,’খাচ্ছ না কেন? গলে যাচ্ছে তো।’
‘আপনি সিগারেট ফেলেন। আমার বমি পাচ্ছে।’
সঙ্গে সঙ্গে সিগারেট ফেলে দিল রুদ্র। পানি দিয়ে কুলকুচি করে বলল,’এখন ঠিক আছো?’
‘হুম।’ ছোটো করেই বললাম আমি।
এরপর নিরবতা কাটিয়ে বললাম,’সিগারেট কেন খান?’
‘সবসময় খাই না। মাঝে মাঝে খাই। এখন একটু খেতে ইচ্ছে হলো।’
‘আমার সামনেই ইচ্ছে হলো?’
‘তুমি কি আমার ওপর রেগে গেছ? রাগ করলে বলতে পারো। সমস্যা মিটিয়ে নেওয়া ভালো।’
‘এমন কিছু না। সিগারেট আমার পছন্দ না।’
‘স্বাভাবিক। অধিকাংশ মেয়েই সিগারেট পছন্দ করে না।’
‘তাহলে আপনি আমার সামনে কেন খেলেন?’
‘আমার সম্পর্কে তো প্রায় অনেক কিছুই শুনেছ। স্বচক্ষেও দেখা উচিৎ আমি কেমন!’
একথার পিঠে আমি আর কিছু বলতে পারলাম না। চুপ করে রইলাম। সূর্যে ডুবে গিয়ে অন্ধকার এখন রাজত্ব করছে। মাঝে মাঝে চাঁদটাও বড়াই করে চলেছে দখল নেওয়ার জন্য। কিন্তু দুষ্টু মেঘের জন্য পেরে উঠছে না। মেঘ চাঁদকে আড়াল করে রেখেছে। আমি সেদিকেই তাকিয়ে ছিলাম। হঠাৎ করে রুদ্র বিষণ্ণ গলায় বলল,’জানো নবনী কেন জানি আমি কখনোই কারো প্রিয় হয়ে উঠতে পারিনি। একান্ত প্রিয় মানুষ হতে পারিনি কারো। সবাই আমায় অপশন হিসেবেই ব্যবহার করে এসেছে। কেন জানি সবার জীবনে আমি অপশোনাল হিসেবেই থেকে যাই!’
রুদ্রর কথাগুলো আকাশে থাকা মেঘের আড়ালে চাঁদটির বিষণ্ণের চেয়েও আরও বেশি বিষণ্ণ শোনাল। আমি বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না কথাগুলো যে রুদ্রই বলেছে। এই মানুষটারও কি কোনো দুঃখ থাকতে পারে?
চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here