আমার একলা আকাশ -Part 2

0
298

#আমার_একলা_আকাশ
#পর্ব_২
#মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া
___________________
রায়হান তার রাশভারী কণ্ঠে বলে উঠল,’পথ আটকালে কেন?’
আদনান হাসল। ভদ্রতাসূচক হাসি। সে বলল,’এখন তো প্রাপ্তির রুমে যাওয়া যাবে না।’
‘কারণটা কী জানতে পারি?’
‘ও এখন ঘুমাচ্ছে।’
‘সমস্যা নেই। আর্জেন্ট দরকার আমার।’
‘বললাম তো যাওয়া যাবে না এখন। তাছাড়া বাইরের মানুষ অসময়ে ওর রুমে এলাউ না।’
রায়হানের রাগ হলো ভীষণ। অপমানে শরীর রি রি করে উঠল। চোয়াল শক্ত করে ক্ষিপ্র কণ্ঠে বলল,’তাই নাকি? তাহলে তুমি কে? তুমিও তো বাইরের মানুষ।’
‘আমি বাইরের মানুষ?’
‘তা নয়তো কী? ওর ফ্যামিলি মেম্বার তো নও।’
‘তা নই। কিন্তু ছোটো থেকেই আমরা একে অপরকে চিনি, জানি। আমাদের আগে থেকেই আমাদের পরিবার পরিচিত। এসব জানো নিশ্চয়ই?’
‘আমি সবই জানি। প্রাপ্তির সাথে যে তুমি আমাকে সহ্য করতে পারো না এটাও জানি।’
‘এটা তোমার ভুল ধারণা। তোমাকে অসহ্য করার মতো কোনো কারণ নেই।’
‘এত কথা বলার সময় নেই। প্রাপ্তির সঙ্গে আমার কথা আছে জরুরী। সরে দাঁড়াও।’
‘বললাম তো পরে আসো।’
দুজনের চাপা তর্ক-বিতর্ক ঘর থেকেও টের পায় প্রাপ্তি। বাইরে এসে দুজনকে একসাথে দেখে; বিশেষ করে রায়হানকে এখানে দেখে সে চমকে যায়। অস্ফুটস্বরে মুখ থেকে বেরিয়ে আসে,
‘তুমি এখানে।’
‘কথা আছে তোমার সাথে।’ গম্ভীরকণ্ঠে বলল রায়হান।
প্রাপ্তি আড়দৃষ্টিতে একবার আদনানের দিকে তাকাল। ওর দৃষ্টি নত। প্রাপ্তি ধীরকণ্ঠে বলল,’ঠিক আছে। ছাদে চলো।’
প্রাপ্তির পিছু পিছু রায়হানও ছাদে যায়। যাওয়ার পূর্বে আদনানের দিকে বাঁকা দৃষ্টিতে তাকাতেও ভুলে না।
.
ছাদের কার্ণিশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে রয়েছে প্রাপ্তি। তার থেকে কিছুটা দূরে রায়হান দাঁড়িয়ে আছে। কিছু বলছে না দেখে প্রাপ্তি নিজেই জিজ্ঞেস করে,
‘এই সময়ে কেন এসেছেন? গায়ে হলুদ তো রাতে হবে।’
‘এসেছিলাম স্যরি বলতে। কিন্তু এসে যা দেখলাম, এরপর তো আর স্যরি বলার কোনো মানেই হয় না। এখন তো মনে হচ্ছে, যা বলেছিলাম রেস্টুরেন্টে একদম ঠিকই বলেছিলাম।’
ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যায় প্রাপ্তির। তবুও সে নিজেকে ঠান্ডা রাখার চেষ্টা করে। ফোঁস করে নিঃশ্বাস ত্যাগ করে বলে,
‘রেস্টুরেন্টে এসব আজেবাজে কথা বলা কম হয়ে গেছিল? এজন্য বাড়ি বয়ে এসেছ এসব বলতে?’
‘আমার একটা কথাও মিথ্যে নয়।’
‘সমস্যা কী তোমার? কী চাও তুমি?’
‘আমার সমস্যা ঐ আদনানকে নিয়েই। কী সম্পর্ক তোমার ওর সাথে? এত কীসের অধিকার রয়েছে ওর তোমার প্রতি? ও যখন মন চায় তখনই তোমার রুমে যেতে পারবে আর আমার বেলায় পারমিশন লাগবে? তারচেয়েও বড়ো কথা, ও কে আমায় তোমার রুমে ঢুকতে বারণ করার?’
‘একটা সাধারণ বিষয়কে এভাবে জটিল কেন করছ? কী হয়েছে সেটা তো বলবে।’
‘তুমি আদনানকে আমাদের সম্পর্কের কথা কেন বলোনি?’
‘রায়হান, আমি কাউকেই এখনো আমাদের সম্পর্কের কথা বলিনি। আমার দিক থেকে শুধু সেতু আপুই জানে। বাড়ির অন্যরা জানলে সমস্যা হয়ে যাবে।’
‘অন্যদের জানানোর প্রয়োজন নেই। তুমি শুধু আদনানকে জানাও। ও না তোমার বন্ধু? নিশ্চয়ই তোমার ক্ষতি চাইবে না। বিষয়টাও হাইড রাখবে।’
‘আদনান আমার বন্ধু ঠিক আছে। কিন্তু আমাদের মাঝে অনেকটা ডিসট্যান্ট আছে এখন। তাছাড়া কথা নেই বার্তা নেই হুট করে আমি কীভাবে বলি এসব? সেতু আপুর বিয়ে উপলক্ষে দু’দিন ধরে বাড়ি এসেছে। তেমন করে আমাদের কথাও হয়নি।’
‘বাহানা তাই না? বাহানা দেখাও তুমি আমাকে।’
প্রাপ্তি বিরক্তিসূচক শব্দ করে বলে,’ওকে। ওকে ফাইন। আমি আদনানকে আমাদের সম্পর্কের কথা জানাব। হয়েছে? খুশি?’
‘কবে জানাবে?’
‘আপুর বিয়েটা হয়ে যাক?’
রায়হান কিছুক্ষণ ভেবে বলল,’ঠিক আছে।’
এরপর একটুখানি হেসে প্রাপ্তির কাছে এগিয়ে গেল। হাত ধরে বলল,’স্যরি বাবু। তোমাকে হার্ট করার জন্য সত্যিই স্যরি।’
‘ইট’স ওকে।’
রায়হান চুমু খাওয়ার জন্য এগিয়ে যেতেই প্রাপ্তি দু’কদম পিছিয়ে যায়। ভ্রুঁ কু্চকে বলে,’বাড়ি ভর্তি মেহমান। কে কখন ছাদে এসে পড়ে বলা যায় না।’
‘একটা চুমু খেতে দশ ঘণ্টা লাগে না।’
‘প্লিজ রায়হান!’
‘প্লিজ প্রাপ্তি! জাস্ট ওয়ান কিস প্লিজ!’
‘নো।’
‘সবসময় তুমি এমন করো। কী সমস্যা একটা চুমু খেলে? আমি কি তোমার দূরের কেউ। তোমারই তো বয়ফ্রেন্ড।’
‘বয়ফ্রেন্ড হলেই যখন, তখন চুমু খেতে হবে? আমার এসব ভালো লাগে না রায়হান। সো প্লিজ!’
রায়হান রেগে যায় এবার। ধমক দিয়ে বলে,’কবেই বা তোমার এসব ভালো লাগে? আমার কোনো কিছুই তো তোমার ভালো লাগে না।’
‘আবার শুরু করলে!’
‘কী শুরু করেছি আমি? কিছুই করিনি। তুমি করো। সবসময় নাটক করো আমার সাথে।’
‘তোমার যদি মনে হয় নাটক করি, তাহলে তা-ই করি। তাছাড়া এমন কেন করো তুমি? বিয়ের পর এসব করা যায় না?’
‘একটা চুমু খাওয়ার জন্য এখন বিয়ে করতে হবে? তাহলে প্রেম কেন করো?’
‘তো তুমি কেন প্রেম করছ? এসব চাহিদার জন্য?’
‘প্রাপ্তি!’ ধমকে উঠল রায়হান।
প্রাপ্তি চাপাস্বরে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,’একদম ধমকাবে না আমাকে। আমি পাগল হয়ে তোমার পিছু পিছু রিলেশন করার জন্য ঘুরিনি।’
‘সুযোগের সদ্ব্যবহার করছ? আমি তোমাকে ভালোবাসি এটা তো আমার দুর্বলতা। আর এজন্যই তুমি যা ইচ্ছে করতে পারছ। যা খুশি বলতে পারছ। আমারই উচিত হয়নি তোমায় এত ভালোবাসা। কত বেটার বেটার, স্মার্ট, সুন্দরীরা মেয়েরা আমার জন্য পাগল। আর সেখানে আমি… মেজাজই খারাপ হয়ে যাচ্ছে এখন। আনস্মার্ট কোথাকার!’
রায়হান রাগ দেখিয়ে ছাদ থেকে নেমে যায়। প্রাপ্তি সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে। এই ট’ক্সি’স রিলেশনশিপটা এগিয়ে নিতে নিতে সে হাঁপিয়ে যাচ্ছে। মাত্র তিন মাসের রিলেশনশিপ দুজনের। এখনই এই অবস্থা। বিয়ের পর না জানি কী হবে!
_____________
আসাদ রহমান অফিস থেকে বাড়ি ফিরেছেন মাত্র। অফিস বাড়ির কাছে হওয়াতে লাঞ্চ সে বাসায় এসেই করে। রেহেনা রহমান ভাত বেড়ে দিয়ে পাশে বসে আছেন। ভাতের লোকমা মুখে তুলে আসাদ রহমান বললেন,
‘আদনান কোথায়? দেখছি না যে।’
‘ঐ বাড়িতে গেছে।’ জগ থেকে গ্লাসে পানি ঢালতে ঢালতে বললেন রেহেনা বেগম।
আসাদ রহমান একটু রাগীস্বরেই বললেন,’সেতু ওর কী হয়? ওর বিয়ের জন্য চট্টগ্রাম থেকে আসতে হলো? পড়াশোনা সব লাটে উঠিয়ে তবেই ছাড়বে দেখছি!’
‘এক সপ্তাহের ছুটি নিয়েই তো এসেছে। এই ক’দিনে পড়াশোনার খুব বেশি সমস্যা তো আর হবে না।’
‘মেনে নিলাম। কিন্তু চাকরী? কাজের সমস্যা হচ্ছে না? এমন করলে চাকরী থাকবে?’
‘তুমি এত উত্তেজিত কেন হচ্ছ? ঐ বাড়ির কাউকেই তুমি কেন সহ্য করতে পারো না, আমি বুঝি না।’
‘স্ট্যাটাস বলতেও তো একটা কথা আছে রেহেনা। তোমার বান্ধবী বলে এত মেলামেশা করা লাগবে ও বাড়ির লোকের সাথে?’
‘তুমি চুপচাপ খেয়ে ওঠো। খাওয়ার সময় এত কথা বলতে নেই।’
‘কথা শুনতে ইচ্ছে করছে না বললেই পারো। তবে যাই করো না কেন, ভেবে-চিন্তে। লিমিট রেখে।’
‘বাদ দেবে এসব কথা? আজকে ফিরবে কখন?’
‘প্রতিদিন যেই সময়ে ফিরি।’
‘ওরা দাওয়াত করেছে, যাবে না?’
‘সময় নেই আমার। তোমার ছেলে তো দাওয়াত খাবে বলে কাজকর্ম সব ফেলে রেখে চলে এসেছে। এখন শুধু তুমিই বাকি। তোমরা মা-ছেলে গেলেই হবে।’
রেহেনা বেগম আর কথা বাড়ান না। তার স্বামীকে সে ভালো করেই চেনে। সারাটা জীবন শুধু টাকা টাকা করেই গেছে। টাকা, সম্পত্তি, স্ট্যাটাস এসবই সব তার কাছে। আন্তরিকতার মানসিকতা একদম নেই লোকটার মাঝে। এজন্য মাঝে মাঝে রেহেনা বেগমের ভীষণ আফসোস হয় নিজের জন্য। শুধু মাত্র তার স্বামীর কারণে কত জায়গায় তাকে অপদস্থ হতে হয়েছে! কলেজের লাইফ থেকে প্রাপ্তির মায়ের সাথে তার বন্ধুত্ব হয়। সেই থেকে দুজনে বেষ্টফ্রেন্ড। কতশত স্বপ্ন, ইচ্ছে ছিল দুজনের। ভার্সিটি লাইফ শেষ করে বিয়েটা একসাথে করলেও বাদবাকি কোনো স্বপ্নই পূরণ হয়নি। স্বামীর মর্জিমতো চলতে গিয়ে অনেক ইচ্ছে তাকে বিসর্জন দিতে হয়েছে। প্রাপ্তির মা সুমনা বেগমের ইচ্ছের জন্যই পাশাপাশি বাড়ি করা সম্ভব হয়েছে। আসাদ রহমান এই বাড়িটা করার পরই প্রাপ্তির বাবা ফিরোজ ইসলাম স্ত্রীর আবদারে এখানে দুই তলার একটা ফ্ল্যাট তৈরি করেন। নিচ তলায় অবশ্য সুমনা বেগমের ভাই তার পরিবারসহ থাকে। সেই সুবাদেই সেতুর বিয়েতেও আদনান এবং রেহেনা বেগম এত আনন্দিত।
আসাদ রহমান খেয়ে চলে যাওয়ার পর হাতের কাজকর্ম সেরে রেহেনা বেগম ওই বাড়িতে চলে যান। হাতে হাতে কাজ করেন তিনিও। সন্ধ্যায় গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হয়। আদনান ও তার বন্ধুরা মিলেই অনুষ্ঠান একদম শুরুতেই মাতিয়ে তোলে। সেতু সেজেগুজে স্টেজে বসে আছে। পাশে তার বন্ধু-বান্ধবও রয়েছে। সেতু অবশ্য রায়হানের আসার অপেক্ষা করছিল। প্রাপ্তির মুখেই সে রায়হানের আচরণ সম্পর্কে শুনেছে। তার আদরের বোনের সাথে এহেন আচরণ তার একদম সহ্য হয়নি। তাই তার বিশেষ দিনেও সে অধির আগ্রহে রায়হানের জন্য বসে আছে, এর একটা বিহিত করবে বলে। অপেক্ষার প্রহর শেষ করে রায়হান এলো হাসিমুখে। সেতু উঠে গিয়ে রায়হানকে টেনে এক সাইডে নিয়ে গেল।
‘আরে, আরে করছিস কী? পালাবি নাকি আমায় নিয়ে?’ মজা করে বলল রায়হান।
সেতু দাঁতে দাঁত পিষে বলল,’প্রাপ্তিকে কী বলেছিস তুই?’
প্রাপ্তির কথা শুনে হাসি মিলিয়ে যায় রায়হানের। সেও গম্ভীর হয়ে বলে,’আদনানের সাথে ও’কে আমার একদম সহ্য হয় না দোস্ত। তাছাড়া প্রাপ্তি একটু বেশিই ক্ষ্যাত! এই যুগেও এসে কেউ এমন করে? একটু জড়িয়ে ধরতে চাইলে, চুমু খেতে চাইলেও তার আপত্তি। ভালো লাগে না। মানে এসব কী? রিলেশন করলে কি এসব হয় না?’
‘এখন সবার রুচি বা ইচ্ছে তো এক রকম নয় রায়হান। প্রাপ্তি একটু অন্য মাইন্ডের মেয়ে। এটা কিন্তু তুই আগে থেকেই জানতি। জানতি না?’
‘জানতাম।’
‘তাহলে সব জেনেও এখন তুই ওর সাথে এমন আচরণ কেন করছিস? ও’কে আজেবাজে কথা বলার কোনো রাইট নেই তোর। বয়ফ্রেন্ড হয়েছিস বলে কি যা খুশি তাই বলবি?’
‘তুই এত হাইপার হচ্ছিস কেন দোস্ত?’
‘আলবৎ হব। আফটারঅল, তোদের সম্পর্কটা তো আমার মাধ্যমেই হয়েছে। তুই যদি ওর সাথে যা তা আচরণ করিস আমি ছোটো হয়ে যাব না ওর কাছে? আমি ও’কে বুঝিয়েছিলাম বলেই তো ও তোর সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছে।’
‘আচ্ছা আমি স্যরি। ভুল হয়ে গেছে আমার।’
‘আমাকে কেন স্যরি বলছিস? প্রাপ্তি আসলে ও’কে সুন্দর করে স্যরি বলবি।’
‘ওকে, ওকে। কোথায় এখন প্রাপ্তি?’
সেতু আশেপাশে তাকিয়ে বলল,’জানিনা তো! পার্লার থেকে এসে আর দেখিনি।’
.
.
আদনান ব্যস্ত পায়ে সুমনা বেগমের কাছে যায়। সুমনা বেগমও তখন ভীষণ ব্যস্ত। আদনান এসেছে প্রাপ্তির খোঁজ করতে। সুমনা বেগম জানেন না জানালেন। এত বেশি ব্যস্ত সব নিয়ে যে, ছেলে-মেয়ে কে কোথায় আছে সেই খবরও তার কাছে নেই।
আদনান প্রাপ্তির রুমে গিয়েছিল। সেখানে অন্যান্য মেহমানরা রয়েছে। ছাদেও প্রাপ্তিকে পাওয়া যায়নি। অবশেষে পাওয়া গেছে সেতুর রুমে। শুয়ে আছে চোখ বন্ধ করে। আদনান কোমরে দু’হাত রেখে বলে,
‘ওরে নবাব নন্দিনী! সেজেগুজে পটের বিবি হয়ে শুয়ে আছিস যে এখানে? চল, চল গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে।’
প্রাপ্তি উঠল না। শুয়েই রইল। বলল,’ভীষণ মাথা ব্যথা করছে। যেতে পারব না।’
‘ফাউল কথা বলবি না প্রাপ্তি। সেতুর গায়ে হলুদ আর তুই যাবি না?’
‘বললাম তো মাথা ব্যথা করছে।’
‘ওষুধ খেয়েছিস?’
‘না।’
‘ওষুধ না খেলে মাথা ব্যথা সারবে কী করে? তুই শুয়ে থাক। আমি ওষুধ নিয়ে আসছি।’
প্রাপ্তির কিছু বলার পূর্বেই আদনান চলে যায়। মিনিট দুয়েক পরেই প্রাপ্তিকে খুঁজতে খুঁজতে এই রুমে রায়হানও চলে আসে। পাশে বসে বলে,
‘শুয়ে আছ কেন? যাবে না?’
‘মাথা ব্যথা।’
‘কিছু হবে না, তুমি চলো।’
‘অনেক বেশিই মাথা ব্যথা রায়হান।’
‘আমার ওপর রাগ করে আছো তাই না? এজন্যই যাবে না? আচ্ছা আমি স্যরি। এই দেখো, কান ধরেছি। আর কখনো তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করব না।’
প্রাপ্তি দায়সারাভাবে বলল,’ইট’স অল রাইট।’
‘তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে।’ বলে প্রাপ্তিকে জড়িয়ে ধরে রায়হান। শাড়ি পরায় পেটের কিছুটা অংশ উন্মুক্ত ছিল। রায়হান সেই উন্মুক্ত জায়গাটুকু ছুঁতেই লাফিয়ে ওঠে প্রাপ্তি। সটান থা’প্পড় বসায় রায়হানের গালে। মৃদু চিৎকার করে বলে,
‘চলে যাও এখান থেকে।’
রায়হান কয়েক সেকেন্ড চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে প্রাপ্তির দিকে এগিয়ে যায়। রাগে তার মাথায় আগুন জ্বলছে। সে প্রাপ্তির দু’গাল চেপে ধরে বলে,’টাচ করলেই তোমার যত সমস্যা হয়ে যায় তাই না? তখন আর আমাকে ভালো লাগে না।’
‘আমার ব্যথা লাগছে রায়হান।’
মাথা ব্যথায় এমনিতেই কাহিল ছিল প্রাপ্তি। এখন আবার রায়হানের শারীরিক, মানসিক দু’আচরণই তাকে ভীষণ কষ্ট দিচ্ছে।
রায়হান আরো শক্ত করে গাল চেপে ধরে বলল,’লাগুক। আদর করতে যখন দিবাই না; তখন ব্যথাই নাও।’
‘রায়হান! প্লিজ যাও। দেখে এসে যাবে।’
রায়হান ঝাড়া দিয়ে প্রাপ্তির গাল ছেড়ে দেয়। যাওয়ার পূর্বে বলে যায়,’তোমার মতো গার্লফ্রেন্ড আমার প্রয়োজন নেই। চাইলে হাজারটা গার্লফ্রেন্ড আমি এমনিতেই বানাতে পারি।’
প্রাপ্তি কাঁদে। মাথার যন্ত্রণাটা এবার যেন আরো বেশি বাড়ছে। অসহ্য লাগছে এখন সবকিছু তার। আদনান ওষুধ আর পানির বোতল নিয়ে এসেছে। সেগুলো টেবিলের ওপর রেখে বলল,’খেয়ে একটু রেস্ট কর।মাথা ব্যথা কমে যাবে। এরপর অনুষ্ঠানে আসিস।’
চলে যাওয়ার সময় প্রাপ্তির ফোঁপানোর শব্দ কানে আসে। দাঁড়িয়ে পড়ে সে। ব্যস্ত হয়ে এগিয়ে যায়। হাঁটুতে মুখ গুঁজে কাঁদছিল প্রাপ্তি। আদনান ওর মাথায় আলতো করে হাত রেখে বলল,
‘প্রাপ্তি? এই প্রাপ্তি কাঁদছিস কেন তুই? মাথা ব্যথা বেশি হচ্ছে?’
প্রাপ্তি নিরবে শুধু কাঁদছিলই। আদনান এবার জোরপূর্বক প্রাপ্তির মুখটা ওপরে তুলে ধরে। লাল হয়ে যাওয়া গাল দেখে চমকে যায়। আঙুলের দাগ স্পষ্ট হয়ে আছে গালে। নখের দাগও রয়েছে। আদনানের রাগে হুঁশ হারানোর উপক্রম প্রাপ্তির এই অবস্থা দেখে।
সে দাঁতমুখ খিঁচে বলে,’আমি যাওয়ার পর রুমে কে এসেছিল প্রাপ্তি? আর কী হয়েছিল?’
প্রাপ্তি কথা বলতে পারছে না। কাঁদতে কাঁদতে তার হেঁচকি উঠে গেছে। আচমকাই সে মুখভর্তি বমি করা শুরু করে। রাগ হারিয়ে আদনান এবার প্রাপ্তিকে নিয়ে অস্থির হয়ে পড়ে।
চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here