আমার একলা আকাশ-পর্ব ১৩ (অন্তিম পর্ব)

0
278

#আমার_একলা_আকাশ
#পর্ব_১৩ (অন্তিম পর্ব)
#মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া
___________
‘প্রাপ্তি,
তুই ঘন কুয়াশার মতো ছোট্টবেলা থেকেই আমায় আচ্ছন্ন করে রেখেছিস। তোর আশেপাশে থাকলে প্রসন্ন মনে হয় নিজেকে। তোকে ভালোবাসার বিশেষ কোনো কারণ নেই। আসলে তুই এমন একটা মেয়ে, যাকে কখনো ভালো না বেসে থাকা যায় না। তুই ভোরের উদীয়মান সূর্য থেকে শুরু করে অস্ত যাওয়া সূর্যের মতোই দৃশ্যমান সুন্দর। এই সুন্দরের মাঝেও আরও একটি সুন্দর জিনিস লুকিয়ে আছে। আর সেটি হচ্ছে তোর কোমল মন। ঐ কোমল মনে আমার জ্ঞানত হোক কিংবা অনিচ্ছায় হোক, অনেকবার কষ্ট পেয়েছিস। আর আজ, সজ্ঞানেই তোকে আমি কষ্ট দিয়ে ফেললাম। আমি আসলে বুঝতেই পারিনি, এমন কিছু হবে। বিশ্বাস কর, যদি একটাবারও বুঝতাম বাবা আমার কথা রাখবে না তাহলে হয়তো কখনোই তোকে আমার কথা বলতাম না। গতকাল রাতে নিজের সাথে যুদ্ধ করেও যখন কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলাম না তখন মধ্যরাতে বাবার হাতে-পায়ে ধরে কেঁদে তোকে ভিক্ষা চেয়েছি। জীবনে প্রথমবার আমি বাবার থেকে কিছু চেয়েছিলাম। আর প্রথমবারেই আমি হয়েছি নিরাশ। আমি নিঃসন্দেহে বলতে পারি, এটা যেমন প্রথম চাওয়া ছিল; আবার এটাই শেষ চাওয়া। জীবনের মূল্যবান মানুষটাকেই যখন পাব না তখন এই নস্যি পৃথিবীর আর কী-ই বা আমার চাওয়ার থাকতে পারে? তুই আমার দিনের শুরু, তুই-ই আমার দিনের শেষ। আমার এই জীবনে দ্বিতীয় কোনো প্রাপ্তির আগমন কখনোই ঘটবে না। আমি জানি, সারাজীবন তোর কাছে আমায় অপরাধী হয়ে থাকতে হবে। তা-ই ভালো হবে। তুই আমায় এখন থেকে ঘৃণাই করিস রক্তজবা। যত ঘৃণা করবি, ততই তুই ভালো থাকতে পারবি। একটু স্বার্থপর হয়ে নিস পারলে। এই পৃথিবীটা নিঃস্বার্থ মানুষদের জন্য ভীষণ কঠিন। তোকে আমার করে পাব না এই কথাটা তোর সামনে থেকে বলার সৎ সাহসটুকুও হারিয়ে ফেলেছি। তাই সারাদিনেও ফোন অন করিনি। বলা চলে এক প্রকার তোর থেকে পালিয়েই চলে যাচ্ছি। জানিনা আর কখনো আমাদের দেখা হবে কিনা। সব গুলিয়ে যাচ্ছে প্রাপ্তি। কত কথা লিখব বলে ভেবে রেখেছিলাম, সব গুলিয়ে গেল। বুকের ভেতরটায় ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। তোকে খুব মিস করব রে। ভালো থাকিস তুই, নিজের যত্ন করিস। আর হ্যাঁ, ক্ষমা করিস না আমায়। আমি ক্ষমার যোগ্য নই!
ইতি
আদনান।’
চিঠিটা পড়তে পড়তে চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে প্রাপ্তির। আজ তিন মাস হয়েছে আদনান চট্টগ্রাম চলে গেছে। আর আসেনি। প্রাপ্তির সাথে তার কোনো যোগাযোগও নেই। তবে প্রতিদিন নিয়ম করে এই চিঠিটা প্রাপ্তি পড়ে। এতবার হাতের স্পর্শে কাগজ একদম নরম হয়ে গেছে। দু,এক জায়গায় একটু একটু করে ছিঁড়েও যাচ্ছে। তবুও প্রাপ্তি সর্বোচ্চ চেষ্টা করে চিঠিটি সযত্নে নিজের কাছে রাখার। আদনানের এইটুকু স্মৃতিই তার নিজের এবং কাছের মনে হয়। একরাশ অভিমান তো তার প্রতি আছেই; সেই সঙ্গে আছে পুরনো ভালোবাসাও।
শিশিরের সাথে প্রাপ্তির বিয়ে হয়নি। সুমনা প্রস্তাবটি প্রাপ্তিকে জানানোর সাথে সাথে সে নাকচ করে দিয়েছে। আদনান বিহীন এই জীবনে সে আর কাউকে ঠাই দিতে পারবে না। তবুও শিশির ছেলেটি হাল ছাড়েনি। সে তার বাবা-মাকে অন্যত্র মেয়ে দেখতে বারণ করে দিয়েছে। তার বিশ্বাস, প্রাপ্তি একসময় রাজি হবে। এখন পরিবারের এমন করুণ অবস্থার কথা ভেবেই হয়তো বিয়ে করতে চাচ্ছে না; এমনটাই শিশিরের ধারণা। কিছুদিন যাবৎ প্রাপ্তি অসুস্থ। প্রাইভেট পড়াতে যেতে পারছে না। এভাবে গ্যাপ দিলে প্রাইভেট আর থাকবে বলেও তো মনে হয় না। অসুস্থ অবস্থাতেই সে বেশ কয়েকবার প্রাইভেট পড়াতে যেতে চেয়েছিল, কিন্তু সুমনা বেগমের জন্য যেতে পারেনি।
চিঠিটি ভাঁজ করে সে বইয়ের মাঝে রেখে দিলো। খাটের সাথে আধশোয়া হয়ে চোখ বন্ধ করতেই আদনানের সমস্ত স্মৃতি হুড়মুড়িয়ে তার চোখের দৃশ্যপটে এসে উপস্থিত হতে লাগল। সেই সাথে রয়েছে বাঁধভাঙা কষ্ট! জীবনের সমীকরণগুলো বড্ড জটিল। চাইলেই সহজ পথ ধরা যায় না। সহজ পথে জীবন পতিত হতেও যেন বড্ড অনিহা রয়েছে। পুরনো স্মৃতিগুলো না চাইতেও তরতাজা হয়ে উঠেছে। আদনানের হাসি, দুষ্টুমি, ঝগড়া একে একে সবকিছু মনে পড়ছে। এসব মনে করে কখনো প্রাপ্তি হাসছে তো আবার কখনো কাঁদছে। কী নিদারুণ ভাগ্য তার!
‘প্রাপ্তি! কী করছিস? ঘুমিয়েছিস?’ কথাগুলো বলতে বলতে রুমে প্রবেশ করলেন সুমনা বেগম।
মায়ের গলা শুনে প্রাপ্তি সোজা হয়ে বসে। সুমনা বেগম বললেন,’দেখ কে এসেছে।’
মামি,শিশির আর তার মা সুমনা বেগমের পিছু পিছু রুমে ঢুকলেন। সুমনা বেগম তাদেরকে বসতে দিয়ে চলে গেলেন নাস্তা আনতে।
মামি প্রাপ্তির কপালে হাত রেখে জিজ্ঞেস করলেন,’কিরে এখন কেমন আছিস?’
প্রাপ্তি মলিন হেসে বলল,’ভালো।’
শিশির পলকহীন দৃষ্টিতে প্রাপ্তির রুক্ষ, মলিন মুখের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই প্রাপ্তির। সে শিশিরের মায়ের উদ্দেশ্যে বলল,
‘আন্টি ভালো আছেন?’
‘হ্যাঁ, মা। তোমার শরীর কেমন এখন?’
‘আলহামদুলিল্লাহ্‌, আগের চেয়ে ভালো।’
‘তোমার মামির কাছে শুনলাম কয়েকদিন ধরে নাকি তুমি খুব অসুস্থ। তাই ভাবলাম, যাই একটু দেখে আসি। ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করো তো?’
প্রাপ্তি মাথা নাড়িয়ে বলল,’জি।’
তারা মিনিট বিশেক বসে কথাবার্তা বলল। প্রাপ্তির একটুও ভালো লাগছিল না তাদের আলাপ-আলোচনা। অন্ধকার ছাড়া আলোর মাঝে থাকলেই যেন তার মাথা ব্যথা দ্বিগুণ বেড়ে যায়। শিশির ছেলেটি নিঃসন্দেহে ভদ্র; এটা অস্বীকার করার জো নেই। এতক্ষণ অব্দি এখানে থেকেও সে আগ বাড়িয়ে কোনো কথা বলেনি প্রাপ্তির সাথে। মামি যাওয়ার আগে দরজা বাহির থেকে লাগিয়ে গেলেন। এখন প্রাপ্তির কিছুটা ভালো লাগছে। সে বালিশে মাথা রেখে শুয়ে পড়ল। কাঁদতে কাঁদতেও আজকাল সে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। এই জীবনের শেষ কোথায় তা সে জানে না। সুখের মুখ দেখবে বলে এক বুক আশা নিয়ে অপেক্ষা করে আছে সে।
.
.
লাঞ্চ টাইমে অঙ্কিতাকে কল করে আদনান। এই তিন মাসে সে সরাসরি প্রাপ্তির সঙ্গে যোগাযোগ না করলেও অঙ্কিতার থেকে সব খোঁজ-খবর নিত। এই বিষয়টা অবশ্য তার এবং অঙ্কিতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
অঙ্কিতা ফোন রিসিভ করে বলল,’জি ভাইয়া, বলেন।’
‘কেমন আছো?’
‘ভালো। আপনি?’
‘আছি আলহামদুলিল্লাহ্‌। প্রাপ্তির শরীর এখন কেমন? সুস্থ হয়নি?’
অঙ্কিতা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলল,’না। একটা কথা বলি ভাইয়া?’
‘হু।’
‘আপনি প্লিজ একটাবার প্রাপ্তির সঙ্গে কথা বলেন। ও অনেক বেশি ভেঙে পড়েছে। কী রকম অসহায়ের মতো করে আপনার প্রসঙ্গ উঠলে।’
আদনান কিয়ৎক্ষণ নিরব ভূমিকা পালন করে। তার বুক থেকে বেরিয়ে আসে ভারী দীর্ঘশ্বাস। কতটা কষ্ট সে যে বুকের মাঝে পুষে রেখেছে তা তো সে ব্যতীত আর কেউ জানেও না। অঙ্কিতাকেও সে বিন্দুমাত্র নিজের কষ্ট টের পেতে দিলো না। সে বলল,
‘শুধু শুধু পিছুটান রেখে লাভ কী হবে অঙ্কিতা? এখন তাও যতটা পরিস্থিতি ও সময়ের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে পেরেছে, আমার সাথে কথা হলে তখন আর পারবে না। আরও বেশি ভেঙে পড়বে তখন।’
একটুখানি থেমে সে ফের বলল,’শিশিরের সাথে কি বিয়ের ব্যাপারে আর এগিয়েছে কিছু?’
‘না। প্রাপ্তি রাজি হয়নি।’
‘তোমরা ও-কে বোঝাও। জীবনটাকে নতুন করে গুছিয়ে নিতে বলো। এখনো হাতে অনেক সময় আছে। শিশিরের সম্পর্কে তো সব শুনেছিই। বিয়ে করলে ভালো-ই থাকবে।’ বুকে পাথর রেখে-ই কথাগুলো বলল আদনান।
অঙ্কিতা বিমর্ষস্বরে বলল,’কীভাবে এসব কথা বলছেন ভাইয়া? আপনার কি একটুও কষ্ট হচ্ছে না?’
‘আমার কথা বাদ দাও। প্রাপ্তিকে বোঝাও প্লিজ! আর হ্যাঁ, পারলে ওর রিসেন্ট ছবি তুলে দিও।’
‘ঠিক আছে।’
‘রাখছি এখন। ভালো থেকো।’
ফোন রেখে চোখের কোণ থেকে অশ্রুগুলো মুছে নেয় আদনান।
__________
রাত প্রায় দেড়টা বাজে। বিছানায় এপাশ-ওপাশ করছে প্রাপ্তি। অসহ্য রকম যন্ত্রণা অনুভব করছে সে। অস্থিরতায় মন, শরীর সব বিষিয়ে যাচ্ছে। মাথার চুল দু’হাতে মুষ্টিবদ্ধ করে আঁকড়ে রেখেছে সে। মনে হচ্ছে কেউ যেন মাথার ভেতরে হাতুড়ি দিয়ে পেটাচ্ছে; এতটাই যন্ত্রণা হচ্ছে! কোনো কিছুতেই সে স্বস্তি পাচ্ছিল না। ব্যথায়, যন্ত্রণায় ‘মা’ বলে চিৎকার করে ওঠে প্রাপ্তি।
প্রাপ্তির কান্নাজড়িত আর্তনাদ শুনে পাশের রুম থেকে তড়িঘড়ি করে বেরিয়ে আসেন সুমনা বেগম এবং ফিরোজ ইসলাম। মেয়েকে বুকের মাঝে নিয়ে সুমনা বেগম অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করেন,
‘কী হয়েছে মা? কাঁদছিস কেন?’
প্রাপ্তি ছটফট করতে করতে কান্না করে বলে,’মাথায় খুব যন্ত্রণা হচ্ছে মা। সহ্য করতে পারছি না।’
সময় বিলম্ব না করে ঐ অবস্থাতেই মেয়েকে কোলে তুলে নেন ফিরোজ ইসলাম। টাকা-পয়সা নিয়ে তৎক্ষণাৎ তারা হাসপাতালে পৌঁছায়। বাইরের করিডোরে অপেক্ষা করেন তারা।
ডাক্তার কিছু টেস্ট করে প্রাপ্তির সিটিস্ক্যানও করে। রেজাল্ট সকালে জানাবে বলে জানিয়ে দেয় প্রাপ্তির বাবা-মাকে। আপাতত প্রাপ্তিকে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে।
খবর পেয়ে পরেরদিন সকালেই মামা-মামি, সেতু, অঙ্কিতা, তৃধা ও শিশির হাসপাতালে ছুটে আসে প্রাপ্তিকে দেখার জন্য। ডাক্তার সুমনা বেগম এবং ফিরোজ ইসলামকে নিজের চেম্বারে ডেকে এনেছেন। কয়েক সেকেণ্ড নিরব থেকে ডাক্তার বললেন,
‘প্রাপ্তির মাথা ব্যথা কি প্রায়-ই হতো?’
সুমনা বেগম বললেন,’ওরকম-ই বলা যায়। মাঝে মাঝে-ই তো বলত মাথা ব্যথা করছে। কেন ডাক্তার? সিরিয়াস কিছু হয়েছে?’
‘আপনাদের উচিত ছিল আরও আগেই ও-কে হাসপাতালে নিয়ে আসা।’
ডাক্তারের এমন কথা শুনে ফিরোজ ইসলাম এবং সুমনা বেগম দুজনেই ভীত হয়ে ওঠেন। ফিরোজ ইসলাম কাতর কণ্ঠে জানতে চান,
‘আমার মেয়ের কী হয়েছে?’
ডাক্তার ডেস্কের ওপর দু’হাত রেখে একটু সময় নিয়ে বলল,’দেখুন ভেঙে পড়বেন না। এই সময়টায় যদি আপনারা ভেঙে পড়েন, তাহলে আপনাদের মেয়েকে সামলানো আরও বেশি মুশকিল হয়ে পড়ে। ও-কে কোনো প্রকার স্ট্রেস নিতে দেওয়া যাবে না। রিল্যাক্সে রাখতে হবে। আর আমি এখন যা বলব, সেগুলো শুনেও রোগীর সামনে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাবেন না। স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করবেন।’
এরপর ডাক্তার রিপোর্ট এগিয়ে দিয়ে বলল,’প্রাপ্তির ব্রেইন টিউমার হয়েছে!’
সুমনা বেগম ও ফিরোজ ইসলাম বিস্ময় নিয়ে তাকায় ডাক্তারের দিকে। ডাক্তার বলে,’ওর ব্রেইন টিউমারের উপসর্গ আরও আগে থেকে-ই দেখা দিয়েছে। তীব্র মাথা ব্যথাও হয়েছে। কিন্তু রোগী কিংবা আপনারা কেউ-ই পাত্তা দেননি। তখন যদি একবারও আপনাদের একটু সন্দেহ হতো, ও-কে হাসপাতালে এনে টেস্ট করাতেন তাহলে কোমোথ্যারাপি, রেডিওথেরাপির মাধ্যমে ব্রেইন টিউমার নিরাময় করা যেত। কিন্তু এখন আর সেটা সম্ভব নয়। ব্রেইন টিউমার বড়ো হয়ে গেছে অনেক। এখন সরাসরি অপারেশন ছাড়া উপায় নেই।’
ফিরোজ ইসলাম শব্দ করে কেঁদে ফেলেন। ডাক্তারের হাত ধরে বলেন,’যা করার করেন ডাক্তার। কিন্তু আমার মেয়েটাকে বাঁচান প্লিজ! ওর কিছু হলে আমরা বাঁচতে পারব না।’
ডাক্তার তাকে শান্ত করার চেষ্টা করে বলল,’প্লিজ আপনারা ভেঙে পড়বেন না। এখন আপনাদের স্ট্রং থাকতে হবে। আমরা কয়েকদিনের মধ্যেই প্রাপ্তির অপারেশন করব। কিন্তু…’
শাড়ির আঁচলে মুখ গুঁজে কাঁদছিলেন সুমনা বেগম। ডাক্তারের দ্বিধান্বিত মুখটার দিকে একবার ক্রন্দনরত দৃষ্টিতে তাকালেন বাকি কথাটুকু শোনার জন্য।
ডাক্তার অসহায় দৃষ্টিতে দুজনের দিকে তাকিয়ে বললেন,’অপারেশন করলেও বাঁচার সম্ভাবনা একেবারে ক্ষীণ!’
প্রদীপশিখার মতো নিভু নিভু যেটুকু আলো এতক্ষণ দুজনে বুকের মাঝে আগলে নিয়েছিল, ডাক্তারের কথা শুনে মুহূর্তে-ই দমকা হাওয়ায় যেন দপ করে নিভে গেল। সুমনা বেগম হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন এবার।
.
প্রাপ্তি হাসপাতালের বিছানায় আধশোয়া হয়ে বসে আছে। হঠাৎ করে তার চেহারা যেন আগের তুলনায় আরও বেশি মলিন এবং রুক্ষ হয়ে গেছে। সে একটা জিনিস খেয়াল করেছে, যে-ই তার সাথে দেখা করতে আসে সে-ই প্রাপ্তিকে দেখে কেঁদে ফেলে। এর কারণ কী হাজারবার জিজ্ঞেস করেও উত্তর পায় না। মায়ের কথা নতুন করে আর কী বলব? সে তো কেঁদেকেটে চোখ-মুখ একদম ফুলিয়ে ফেলেছে। প্রাপ্তির হাত জড়িয়ে ধরেও সে হাউমাউ করে কান্না করে। বাবা-মায়ের কান্না তার সহ্য হয় না। ভীষণ কষ্ট হয়। সে নিজেও তখন কেঁদে ফেলে। ফিরোজ ইসলাম তখন কেঁদে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন,
‘কিচ্ছু হয়নি মা। তুই আবার সুস্থ হয়ে যাবি। শুধু ছোট্ট একটা অপারেশন করতে হবে।’
বিকেলের দিকে রুমানা বেগম এলেন প্রাপ্তিকে দেখতে। আশ্চর্য ব্যাপার প্রাপ্তিকে দেখার সঙ্গে সঙ্গে তিনিও কেঁদে ফেলেন। প্রাপ্তি আহতস্বরে বলে,
‘তোমরা সবাই আমায় দেখলে কাঁদো কেন? আমায় দেখতে কি ভীষণ ভয়ংকর লাগছে?’
রুমানা বেগম কাঁদতে কাঁদতে মাথা নাড়ায়। প্রাপ্তির মাথাটা বুকে জড়িয়ে বলেন,’না, মা। তুই পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর মেয়ে।’
প্রাপ্তি ধরে আসা কণ্ঠে বলে,’তোমরা সবাই আমায় দেখতে আসছ। কিন্তু আদনান কেন আসছে না? ও কি জানে না আমি অসুস্থ?’
রুমানা বেগম চুপ করে রইলেন। তিনি নিজে এখনো প্রাপ্তির ব্রেইন টিউমারের কথা জানায়নি আদনানকে। কী করে যে সবটা সে ছেলেকে বলবে এটাই বুঝতে পারছিলেন না। সেই সময়ে অঙ্কিতা কেবিনে ঢুকে। সে আদনানকে কল করে প্রাপ্তির অসুস্থতার কথা জানিয়েছে কিন্তু এটা বলেনি যে ওর ব্রেইন টিউমার হয়েছে। প্রাপ্তি হাসপাতালে ভর্তি এটা শুনেই আদনানের ঘুম, শান্তি সব হারাম হয়ে গেছে। সে নিজেকে আর সংবরণ করে রাখতে পারেনি। প্রাপ্তির সাথে কথা বলার জন্য উতলা হয়ে পড়েছে।
অঙ্কিতা রুমানা বেগমের দিকে তাকিয়ে কণ্ঠ খাদে নামিয়ে বলল,’আদনান ভাইয়া ফোন করেছে। প্রাপ্তির সাথে কথা বলবে।’
এ কথা শুনে প্রাপ্তি যতটা অবাক হয়েছে, তারচেয়ে অনেক বেশি খুশি হয়েছে। সে ফোন হাতে নেওয়ার পর রুমানা বেগম কেবিন থেকে বেরিয়ে গেলেন কথা বলার সুযোগ দিয়ে।
প্রাপ্তি অভিমানিকণ্ঠে বলে,’এতদিন পর কি আমার কথা মনে পড়েছে?’
‘তুই এত কেয়ারলেস কেন? নিজের একটুও যত্ন নিস না। এখন হাসপাতালে ভর্তি হতে হলো।’ ঝাঁঝাল কণ্ঠে বলল আদনান।
প্রাপ্তির হঠাৎ করে তীব্র মাথা ব্যথাটা আবার শুরু হয়। সে আর্তনাদ করে ওঠে। ওপাশ থেকে অস্থিরকণ্ঠে আদনান জানতে চায়,
‘প্রাপ্তি! কী হয়েছে? খুব কষ্ট হচ্ছে?’
প্রাপ্তি কাঁদতে কাঁদতে বলে,’আমার খুব কষ্ট হচ্ছে আদনান। আমি মনে হয় আর বাঁচব না। ওরা কেউ আমায় কেন কিছু বলে না? আমাকে তোমার কাছে নিয়ে যাও প্লিজ! এখানে আমার একটুও ভালো লাগে না।’
এইটুকু কথা বলতে বলতে ফোনটা সে বেডের ওপর ফেলে চুল মুষ্টিবদ্ধ করে ধরে। অঙ্কিতা এগিয়ে গিয়ে প্রাপ্তিকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে সুমনা বেগমকে ডাকতে থাকে।
সময় আর বিলম্ব না করে ঐ সময়েই আদনান চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আসার জন্য রওনা হয়। তার আসতে আসতে বেশ রাত হয়ে যায়। প্রাপ্তি তখন ঘুমিয়ে ছিল। আদনান পাশে বসে শোয়া থেকে উঠিয়ে ও-কে বুকে জড়িয়ে নেয়। নিঃশব্দে কাঁদতে শুরু করে প্রাপ্তির অবস্থা দেখে। ঘুম ভেঙে যায় প্রাপ্তির। মানুষটাকে চিনতে কষ্ট হয় না। কতদিন পর সেই চেনা পরিচিত ঘ্রাণটা পেল।
প্রাপ্তি আদনাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল,’আমি তো ম’রি’নি এখনও। কাঁদছ কেন তুমি?’
আদনান এবার আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। বুকের সাথে মিশিয়ে বলে,’চুপ! একদম এসব কথা বলবি না। তোর কিছু হবে না।’
রাতে বেশিক্ষণ আর কথা হয় না প্রাপ্তির সাথে। ডাক্তার ঘুমাতে বলে গেছে। কাল-ই ওর অপারেশন হবে জানায়। অপারেশনের কথা শুনে আদনান বেশ অবাক হয়। ডাক্তার চলে যাওয়ার পর ফিরোজ ইসলামের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করে,
‘অপারেশন মানে? কীসের অপারেশন হবে?’
ফিরোজ ইসলাম কান্নায় ভেঙে পড়েন। সুমনা বেগম ও রুমানা বেগম দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে। রাত হওয়াতে অঙ্কিতা, তৃধা এখানে নেই। মামা-মামিও কেঁদে চলেছে। কেউ-ই তার প্রশ্নের উত্তর দিতে পারছে না কান্নার জন্য। সে ডাক্তারের কাছে যাবে নাকি সেতুকে একবার কল করবে বুঝতে পারছে না। ঐ সময়ে পাশ থেকে শিশির বলে,
‘প্রাপ্তির ব্রেইন টিউমার হয়েছে।’
আদনান সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে তাকায় শিশিরের দিকে। দেখে মনে হচ্ছে সেও কেঁদেছে। চিন্তিত ও প্রয়োজনের তুলনায় বেশিই রোগা দেখাচ্ছিল ছেলেটিকে।
‘আপনি কে? আর ওর ব্রেইন টিউমার হয়েছে আপনাকে কে বলল?’
শিশির নিজের পরিচয় দিয়ে সবটা খুলে বলে আদনানকে। আদনান নিঃশব্দে বসে পড়ে। মনে হচ্ছে সবকিছু সে ঝাপসা দেখছে। কিছুতেই সে মানতে পারছে না, প্রাপ্তির সাথে এমনটা হয়েছে বা হতে পারে! সে অস্থির হয়ে পড়ে। বিশ্বাস হচ্ছিল না শিশিরের বলা কথাগুলো। সে তার মায়ের কাছে গিয়ে কেঁদে জানতে চায়, কথাগুলো সত্যি কিনা। রুমানা বেগমের কথা বলার ভাষা নেই। তিনি ছেলেকে জড়িয়ে ধরলেন। আদনান যা বোঝার বুঝে গিয়েছে। মনে হচ্ছিল এটা একটা দুঃস্বপ্ন এবং ঘুমটা এখন-ই ভেঙে যাবে। তবে এমন কিছু-ই হয়নি। বাস্তবতাকে উপেক্ষাকে করার ক্ষমতা দুনিয়ায় কার মধ্যে রয়েছে? আর বাস্তবতা সবসময় কঠিন, অপছন্দনীয় ও তিক্ত-ই হয়।
পরেরদিন সকালে সবাই প্রাপ্তির সাথে স্বাভাবিক আচরণ করার চেষ্টা করে। হেসে কথা বলে। প্রাপ্তি তার বাবা-মাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে,
‘সবসময় তোমরা এভাবে হাসতে পারো না? তোমরা কাঁদলে আমার ভীষণ কষ্ট হয়। আর কাঁদবে না বুঝেছ?’
সবার শেষে দেখা করতে আসে আদনান। নির্দিষ্ট একটা দূরত্ব রেখে সে দাঁড়িয়ে রয়েছে। সারা রাত ঘুমাতে পারেনি। কেঁদেকেটে রাত জেগে চোখ ফুলে লাল হয়ে গেছে। প্রাপ্তি পলকহীন দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলে,
‘রাতে ঘুমাওনি?’
আদনান প্রাণপণে চেষ্টা করছে নিজেকে স্বাভাবিক রাখার, প্রাপ্তির সামনে কান্না না করার। কিন্তু সে পারছে না। নিজেকে, চোখের পানিকে কিছুতেই সে সংবরণ করে রাখতে পারছে না। প্রাপ্তি আহ্লাদিত হয়ে বলে,
‘একটু জড়িয়ে ধরবা?’
আদনান ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকানোর চেষ্টা করে। একটু একটু করে প্রাপ্তির দিকে এগিয়ে যায়। কাছে যেতেই ঝাঁপিয়ে জড়িয়ে ধরে প্রাপ্তি। প্রসন্ন কণ্ঠে বলে,
‘শান্তি!’
প্রাপ্তির মাথায় হাত রাখে আদনান। নিঃশব্দে কাঁদতে কাঁদতে মাথায় চুমু খায়। প্রাপ্তি বলে,
‘বাবা-মায়ের পর তুমি তৃতীয় ব্যক্তি যাকে জড়িয়ে ধরলে আমি অনেক শান্তি পাই। কেন এমন হয় বলো তো?’
আদনান কিছু বলল না। প্রাপ্তি মাথা তুলে মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,’এই বোকা! কাঁদো কেন তুমি?’
আদনান এবার শব্দ করেই কেঁদে ফেলে। প্রাপ্তিও কাঁদে। ক্রন্দনরত স্বরে বলে,’আমরা এক না হতে পারি, আগের মতো বন্ধু হয়ে তো থাকতেই পারি আদনান। তুমি কেন আমার সাথে এতদিন কথা বলোনি? যোগাযোগ রাখোনি? জানো আমার কত কষ্ট হয়েছিল! প্লিজ আর এরকম কোরো না! বিয়ে না হোক, আমরা এক না হই কিচ্ছু যায় আসে না এতে। তুমি শুধু আগের মতো-ই আমার বন্ধু হয়ে থেকো। আমার সাথে একটু কথা বোলো। এটাই তোমার কাছে আমার অনুরোধ। রাখবে তো? বলো রাখবে?’
হাতের পিঠে চোখ মুছে আদনান মাথা নাড়ায়। প্রাপ্তি বায়না করে বলে,’মাথা ঝাঁকালে হবে না। প্রমিস করো। বলো প্রমিস।’
‘প্রমিস!’
নার্স এসে তখন জানায় প্রাপ্তিকে ও.টি-তে নিয়ে যেতে হবে এখন। আদনান সরে দাঁড়ায়। প্রাপ্তি যেতে যেতে আদনানের দিকে তাকিয়ে বলে,
‘মনে থাকে যেন কথাগুলো। তুমি কিন্তু আমায় কথা দিয়েছ। আমায় না জানিয়ে আবার চলে যেও না কিন্তু। অপারেশন থিয়েটার থেকে বেরিয়ে যেন তোমায় দেখতে পাই। আমার জন্য অপেক্ষা কোরো।’
আদনান ঘোলা দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। তার চোখের সামনে ও.টি’র দরজা বন্ধ হয়। সঙ্গে অজানা ভয়ে বুকটা মোচর দিয়ে ওঠে। সবাই বাইরে দাঁড়িয়ে আল্লাহকে ডাকছিল আর অপেক্ষা করছিল। অপেক্ষার প্রহরও শেষ হয়। সবাই এক বুক আশা নিয়ে তাকিয়ে থাকে ও.টি-র দরজার দিকে। ডাক্তার বিরসমুখে বেরিয়ে আসে। অসহায়ের মতো সবার দিকে তাকিয়ে বলে,
‘শী ইজ নো মোর!’
একটা বাক্য। ব্যস একটা বাক্যই অপেক্ষারত প্রতিটা মানুষের বুকে জিইয়ে রাখা প্রদীপের আলো নিভিয়ে দিয়েছে। সেখানেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন সুমনা বেগম। ওয়ার্ড বয় সাদা চাদরে প্রাপ্তির মুখ ঢেকে বাইরে নিয়ে এসেছে। আদনানের চারপাশের সবকিছু ঘুরছে। ঝাপসা হয়ে আসছে। সে অনেকগুলো মানুষের চিৎকার করা আর্তনাদ আর কান্নার শব্দ শুনতে পায়। স্পষ্টভাবে কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই সেখানেই ফ্লোরে লুটিয়ে পড়ে সে।
______
পরিশিষ্টঃ
প্রাপ্তির মৃত্যুর সময় একটু একটু করে বেড়ে এক বছরে এসে ঠেকেছে। সুমনা বেগম, ফিরোজ ইসলাম মেয়েকে হারিয়ে জীবন্ত লা’শে’র মতো বেঁচে আছেন। তাদের যে বেঁচে থাকার আর কোনো অবলম্বন নেই। আদনান প্রতিদিন নিয়ম করে আসে এই বাসায়। প্রাপ্তির রুম দেখলেই তার বুক খাঁখাঁ করে। তবুও সে আসে। অদৃশ্য এক টানে। প্রাপ্তির কথা সে রেখেছে। প্রাপ্তিকে রেখে চলে যায়নি। এরপর থেকে সে ঢাকায়-ই রয়ে গেছে। প্রাপ্তির কবরটা দেওয়া হয়েছে তাদের বাড়ির পেছনে। আদনান তখন এক প্রকার পাগলের ন্যায় আচরণ করছিল যার দরুণ প্রাপ্তিকে সে দূরে রাখতে চাচ্ছিল না। তাই বাধ্য হয়েই প্রাপ্তিকে ওদের বাড়ির পেছনে কবর দেওয়া হয়েছে। আদনান প্রাপ্তির সব কথা-ই রেখেছে। সে প্রতিদিন প্রাপ্তির কবর জিয়ারত করে সময় নিয়ে বসে কথা বলে। তবে সে একাই কথা বলে। প্রাপ্তি বলে না। এতে অবশ্য আদনানের রাগ হয় না। ছন্নছাড়া এই জীবনে যে প্রাপ্তির কবরের পাশে বসে নিজে নিজে হলেও একটু কথা বলতে পারে এটাই তো অনেক।
এতক্ষণ আদনান প্রাপ্তির কবরের কাছে-ই বসে ছিল। সন্ধ্যার আযান শুনে চোখ-মুখ মুছে মসজিদে চলে গেছে নামাজ পড়ার জন্য। নামাজ আদায় করে বাড়িতে ফিরতেই বাবার ডাক পড়ে। সে প্রচণ্ড অনিহা নিয়ে বাবা-মায়ের রুমে যায়।
আদনানকে দেখে আসাদ রহমান বললেন,’বসো।’
আদনান পাশের চেয়ারে বসল। তিনি ছেলেকে কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে বললেন,’নিজের কী হাল বানিয়েছ!’
আদনান কিছু-ই বলল না। পূর্বের মতো মাথা নত করে-ই বসে রইল।
‘তোমার বর্তমান অবস্থা তো দেখছি পাগলের মতো। এভাবে বেশিদিন চললে তো সত্যি সত্যি-ই পাগল হয়ে যাবে। আমি আর তোমার মা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তোমায় বিয়ে করাব। দেখো তো এখান থেকে কোনো মেয়েকে ভালো লাগে কিনা।’ বলে কয়েকটা ছবি আদনানের দিকে এগিয়ে দিলেন আসাদ রহমান।
আদনান বাবার হাত ধরে ছবিগুলো ফিরিয়ে দিয়ে বলল,’
‘আমি বিয়ে করব না।’
ছেলের এমন সিদ্ধান্তের কথা শুনে আসাদ রহমানের মাথা গরম হয়ে যায়। তিনি চিবিয়ে চিবিয়ে বলেন,’সমস্যা কী? এভাবে পাগলের মতো ঘুরবে? এখন তো আর প্রাপ্তিও বেঁচে নেই।’
‘যখন আমার প্রাপ্তিকে প্রয়োজন ছিল, আমি ও-কে বিয়ে করতে চেয়েছিলাম; তখন তো তুমি রাজি হওনি।’
‘না হয়ে তো তোমার-ই ভালো হয়েছে। ক’দিন-ই বা একসাথে থাকতে পারতে? দেখলে তো কয়দিন যেতে না যেতে-ই ব্রেইন টিউমার ধরা পড়ল। শুকরিয়া আদায় করো যে, ভাগ্যিস আমি তখন রাজি হইনি।’
‘আমরা যে ক’টা দিন একসাথে থাকতাম ভালো থাকতাম। সুখে থাকতাম। ঐ ক’টা দিনের স্মৃতি নিয়ে হলেও হয়তো এখন আমি একটু ভালো থাকতে পারতাম।’
‘তুমি তাহলে বিয়ে করবে না?’
আদনান চলে যেতে যেতে বলে,’না।’
আবার পেছনে ফিরে আসাদ রহমানের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে,’প্রাপ্তি ম’রে’নি আব্বু। প্রাপ্তি এখনও আমার হৃদয়ে বেঁচে আছে। আমি এখনও চোখ বন্ধ করলে ওর মুখটা দেখতে পাই। সারাজীবন আমি ও-কে’ই ভালোবেসে যাব। আমার আর কাউকে চাই না।’
এরপর সে ছাদে চলে যায়। রাতের বেলা আকাশে অনেক তারার মাঝে সুন্দর একটা রূপালি চাঁদ। সে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে আকাশের দিকে। ভারী নিঃশ্বাস বুকচিরে বেরিয়ে আসে। চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ে নোনাজল। আকাশপানে তাকিয়ে অস্ফুটস্বরে বলে,
‘এভাবে একলা করে কেন চলে গেলি প্রাপ্তি?’
(সমাপ্তি)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here