#আমার_একলা_আকাশ
#পর্ব_৪
#মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া
____________________
আকাশের রঙ আজ অদ্ভূত রকমের। কোথাও আকাশী রঙ তো আবার কোথাও সাদা মেঘের ভেলা। রোদের তাপ নেই একদম। মৃদু বাতাসে মনটা সতেজ লাগছে। আর নিজেকেও প্রাপ্তির আজ অনেক হালকা মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে কোনো বন্দি পাখি লোহার খাঁচা থেকে মুক্তি পেয়েছে। অবশ্য প্রাপ্তির বিষয়টাকেও এভাবেই সংজ্ঞায়িত করা যায়। এরকম বি’ষা’ক্ত সম্পর্ক আর খাঁচার মধ্যে তফাৎ-ই বা কী? রাযহানকে তার উপযুক্ত জবাবগুলো দিতে পেরে আরও বেশি স্বস্তিবোধ করছে সে। ওখান থেকে ফিরে এসে একা একাই সে কিছুক্ষণ ঘুরেছে। ফুসকা খেয়েছে, হাওয়াই মিঠাই খেয়েছে। ফুল বিক্রেতা পথশিশুদের সঙ্গে সময় কাটিয়েছে। সব মিলিয়ে দারুণ একটা সময় কাটিয়েছে আজ সে। যেখানে কোনো ধরাবাঁধা নিয়ম ছিল না। কোনো চাহিদা ছিল না। একা একাও ভালো থাকা যায়। একাই নিজে নিজেকে সময় দেওয়া যায়। শুধু এইটুকু বিশ্বাস রাখা উচিত, আমি নিজেকে ভালো রাখতে পারব।
বাড়ির পথে আদনানের সঙ্গে দেখা হয়ে যায়। সে হাত নাড়িয়ে রিকশাটি থামিয়ে লাফ দিয়ে উঠে পড়ে। রিকশাওয়ালার উদ্দেশ্যে বলে,
‘মামা, চলেন।’
প্রাপ্তি কিছুই বলল না। অন্য কোনো সময় হলে রাগ করত। বকত। না হলে গাল ফুলিয়ে বসে থাকত। কিন্তু আজ সে এসবের কিছুই করেনি। বরং হাসছে। আদনান একটু অবাকই হলো। জিজ্ঞেস করল,
‘অযথা হাসছিস কেন?’
‘এমনিই।’
‘এমনি কারণ ছাড়া কেউ হাসে? ভূতে আছড় করেছে?’
‘ধুর! সবসময়ই শুধু ফালতু কথা বলো। কোথায় গিয়েছিলে?’
‘মোড়ে গেছিলাম আড্ডা দিতে।’
‘চট্টগ্রাম কবে ফিরে যাচ্ছ?’
‘তোর এত তাড়া কীসের?’
‘আমার আবার কীসের তাড়া?’
‘কথায় তো মনে হচ্ছে, আমি গেলে তুই বেঁচে যাস।’
‘তুমি থাকলেই আমার কী, আর না থাকলেই বা আমার কী? আমি তো তোমার হূরপরীর কথা ভেবেই বললাম।’
‘ওর কথা কী ভাবলি?’
‘বেচারি একা চট্টগ্রামে তোমার অপেক্ষায় আছে। খারাপ লাগছে না?’
‘তোকে কে বলল আমার হূর চট্টগ্রাম থাকে?’
প্রাপ্তি ভ্রুঁ কুঁচকাল,’তাহলে কোথায় থাকে?’
‘আমার সাথেই থাকে। ওর কথা বাদ দে। তুই কোথা থেকে এলি?’
‘ঘুরতে গেছিলাম।’
‘রায়হানের সাথে?’
‘প্রথমে ওর সাথেই গেছিলাম। পরে একাই ঘুরেছি।’
‘কেন?’ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল আদনান।
প্রাপ্তি কোনো কিছু না লুকিয়েই সবটা আদনানকে বলে দেয়। আদনান দাঁত-মুখে খিঁচে বলে,’শালা জা’নো’য়া’র! জবাব তো একদম উচিত জবাব-ই দিয়েছিস। কিন্তু সাথে দু/চারটা কষে থা’প্প’ড় বসালি না কেন?’
‘দাঁতে যাকে মারা যায় তাকে হাতে মারার কী দরকার বলো?’
‘নেক্সট টাইম বে’য়া’দ’বটার কথায় আবার গলে যাস না প্রাপ্তি।’
‘পাগল নাকি? এরপর আর যদি যোগাযোগ করার চেষ্টা করে তখন সত্যিই মার খাবে।’
আদনান হাসছে দেখে প্রাপ্তি জিজ্ঞেস করে,’হাসছ কেন?’
‘তোর রাগ আর সাহস দেখে। আমি তো তোকে সেই বাচ্চা-ই ভাবতাম। এখন দেখছি, নাহ্! তুই অনেক বড়ো হয়ে গেছিস।’
প্রাপ্তি কিছু বলল না। আদনান নিজেই বলল,’চা খাবি?’
‘বাড়িতেই তো এসে পড়লাম।’
‘সমস্যা নেই। রিকশা ঘুরিয়ে টং দোকানে যাই চল।’
প্রাপ্তি কয়েক সেকেন্ড ভেবে রাজি হয়ে যায়। রিকশা আবার উলটো পথে চলা শুরু করে।
.
ঘুরেফিরে রাতে বাড়ি ফেরার পরে সর্বপ্রথম সেতুর সঙ্গে প্রাপ্তির দেখা হয়। ভাবসাব দেখে মনে হচ্ছিল এতক্ষণ যাবৎ ওর জন্যই অপেক্ষা করছে। প্রাপ্তিকে দেখা মাত্রই চিলের মতো ছোঁ মেরে নিয়ে গেল রুমে। এতক্ষণ বাইরে থেকে প্রাপ্তি ক্লান্ত ছিল। তাই সে ক্লান্তস্বরেই বলল,
‘কী হয়েছে? এভাবে নিয়ে এলে কেন?’
‘রায়হানের সাথে তোর কী হয়েছে?’
রায়হানের নাম শোনামাত্রই প্রাপ্তির চোখ-মুখের ভাব পাল্টে যায়। ক্লান্তি সরে গিয়ে কাঠিন্য ভর করে। ব্যাগটা টেবিলের ওপর রেখে কাঠকাঠ কণ্ঠে বলে,
‘হঠাৎ ওর কথা জিজ্ঞেস করছ কেন?’
‘তুই নাকি ওর সাথে ব্রেকাপ করেছিস? নাম্বারও ব্ল্যাকলিস্টে ফেলেছিস?’
প্রাপ্তির মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। সে রাগে গমগম করে উঠে বলল,’ব্রেকাপ করেছি, ব্লক করেছি এসব তো ঠিকই বলেছে। কেন করেছি তা বলেনি কেন?’
‘এত রেগে যাচ্ছিস কেন? আমায় বলবি তো ক্লিয়ার করে কী হয়েছে।’
‘তোমার ফ্রেন্ড একটা খারাপ লোক। সে ইন্টিমেট হতে চেয়েছিল আমার সাথে।’
সেতু অবাক হয়ে অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। প্রাপ্তি রেগেই বলল,’আর কখনো ওর কথা আমাকে বলবে না। ওর নামটাও সহ্য হয় না এখন আর আমার।’
সেতু কিছুক্ষণ ঝিম মেরে দাঁড়িয়ে থেকে বলল,’ঠিক আছে। তুই ফ্রেশ হয়ে নে।’
রাতে আর প্রাপ্তি ডিনার করেনি। ফ্রেশ হয়ে ওমনি শুয়ে পড়েছে। আননোন নাম্বার থেকে কল আসায় তার তন্দ্রা ভাবটুকু কেটে যায়। কল রিসিভ করতেই রায়হানের কণ্ঠ শুনতে পায়। আর এক মুহূর্তও দেরি করেনি। সাথে সাথে নাম্বার ব্ল্যাকলিস্টে ফেলে দিয়েছে। এভাবে কতগুলো নাম্বার থেকে যে ট্রাই করেছে তার বোধ হয় হিসাবও নেই। বিরক্ত হয়ে ফোনই অফ করে রেখেছে প্রাপ্তি।
.
ভার্সিটিতে যাবে বলে পরেরদিন সকাল সকালই ঘুম থেকে উঠে যায়। শাওয়ার নিয়ে বের হয়ে তৃধা আর অঙ্কিতাকে দেখতে পায়। একটু অবাকই হয় আজ দুটোকে এখানে দেখে।
তোয়ালে দিয়ে চুল মুছতে মুছতে জিজ্ঞেস করে,’আজ কী মনে করে বাড়িতে এলি?’
‘তোর বাড়িতে আসার আগে এপপয়েন্টমেন্ট নিয়ে রাখতে হবে নাকি?’ ভেংচি কেটে জিজ্ঞেস করে তৃধা।
প্রাপ্তি মুখ টিপে হাসে। ‘কোনো কারণ ছাড়া তোরা বাড়িতে আসিসনি। ঝটপট বলে ফেল এখন উদ্দেশ্য কী?’
অঙ্কিতা বিছানায় শুয়ে পড়ল। ভাবলেশহীনভাবে বলল,’তোর বয়ফ্রেন্ড গতকাল রাতে ফোন করেছিল।’
‘বয়ফ্রেন্ড মানে? রায়হান?’
তৃধা বলল,’এমনভাবে বলছিস মনে হচ্ছে রায়হান ভাইয়া ছাড়াও তোর আরো পাঁচ, ছয়টা বয়ফ্রেন্ড আছে।’
তোয়ালে রেখে মুখে ফেস-পাউডার মাখতে মাখতে প্রাপ্তি উত্তর দিলো,’ওর সাথে এখন আর আমার কোনো সম্পর্ক নেই।’
ভূত দেখার মতো চমকে যায় অঙ্কিতা আর তৃধা। কত বাঁধা-বিপত্তি, কাঠখড় পুড়িয়ে তবেই না রায়হান প্রাপ্তির মন পেয়েছিল। এ কথা তো বন্ধুমহলের সকলেই জানে। সেখানে ব্রেকাপ হয়েছে শুনে বিস্ময়েরও যে অন্ত থাকবে না এটাই তো স্বাভাবিক।
বিস্মিতকণ্ঠেই অঙ্কিতা বলল,’সেকি! কিন্তু কেন?’
প্রাপ্তি সব ঘটনা খুলে বলল দুই বান্ধবীকে। তৃধা রেগেমেগে বলল,’এভাবে ছেড়ে দিয়েছিস কেন শা’লাকে? দুইটা দুইটা করে মোট চারটা থা’প্পড় ঐ অ’স’ভ্যটাকে দেওয়া উচিত ছিল।’
‘ওর সামনে আর দাঁড়িয়েই থাকতে পারছিলাম না তৃধু। ঘেন্না লাগছিল ভীষণ।’
‘ব্যাটা ই’ত’র তো আমাকে এসব কিছুই বলেনি। ফোন দিয়ে কান্নাকাটি করে বলছে, তোর সাথে ঝগড়া হয়েছে। তাই নাকি কথা বলিস না, ব্লক করে রেখেছি। আমি আর তৃধা যেন তোকে বোঝাই। হাতে-পায়ে ধরাটা খালি বাকি ছিল রে ভাই! সকালেই যেন তোর কাছে আসি হ্যানত্যান।’ এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে থামল অঙ্কিতা।
প্রাপ্তি বিরক্ত হয়ে বলল,’বাদ দে এখন ওর কথা। আর কখনো ফোন বা ম্যাসেজ দিলে ব্লক দিয়ে দিস।’
তৃধা বলল,’ব্লক তো দেবোই। তার আগে ডিটারজেন্ট দিয়ে ওয়াশ করবো ই’ত’রটাকে।’
‘ঠিক আছে। এসব পরে হবে। আমি কিন্তু খেয়ে আসিনি। নাস্তা এখানেই করব।’ বলল অঙ্কিতা।
‘তোরা ডাইনিং-এ গিয়ে বোস। আমি আসছি।’
অঙ্কিতা আর তৃধা প্রাপ্তির রুম থেকে বের হতেই ড্রয়িংরুমে আদনানের সাথে দেখা হয়ে যায়। আদনানের চোখ-মুখ দেখে মনে হচ্ছে ভীষণ রেগে আছে। কিন্তু ওদেরকে দেখেই আবার হাসল। হাসতে হাসতেই বলল,
‘আরে আরে সকাল হতে না হতেই সুন্দরীদের সঙ্গে দেখা। কেমন আছো তোমরা?’
অঙ্কিতা আর তৃধাও হাসল। বলল,’ভালো আছি ভাইয়া। আপনি ভালো আছেন?’
‘আর ভালো থাকা! ঐ পেত্নীটা কোথায়? ফোন অফ কেন ওর?’
‘জানিনা তো! ঘরেই আছে এখন।’
‘বের হবে না?’
‘হ্যাঁ।’
‘তাহলে ও নিজেই আসুক। আমি ততক্ষণে তোমাদের সাথে গল্প করি। খেয়ে এসেছ নাকি খাবে?’
‘খাইনি।’ বলল তৃধা।
‘গুড। আমিও খাইনি। চলো একসাথে খাওয়া যাক।’
ডাইনিংরুমে তিনজনে একসাথে বসে। আদনান সুমনা বেগমকে ডেকে নাস্তা দিতে বলে। বাড়ির আর সবাই এখনো ঘুমে। প্রাপ্তির বাবা তো আরো আগেই অফিসে চলে গেছে। সুমনা বেগম ওদেরকে নাস্তা দিয়ে পাশেই বসলেন।
আদনান খাওয়ার পূর্বে জিজ্ঞেস করল,’তুমি খেয়েছ আন্টি?’
‘আমি এত সকালে খাই নাকি? দশটার পরে খাব।’ হাই তুলতে তুলতে বললেন তিনি।
‘তাহলে অযথা এখানে কেন বসে আছো? বারবার হাই তুলছ, মানে এখনো তোমার ঘুম হয়নি।’ এরপর সে হাত ঘড়িতে সময় দেখে ফের বলল,
‘সাড়ে আটটা বাজে মাত্র। যাও গিয়ে ঘুমাও।’
‘আরে তোদের কিছু লাগলে এগিয়ে দেবে কে?’
‘আমরাই নিতে পারব। তুমি গিয়ে রেস্ট করো তো যাও।’
সুমনা বেগম হেসে বললেন,’পাগল ছেলে!’
তিনি চলে যাওয়ার পর আদনান ফিসফিস করে বলে,’কেন পাঠিয়ে দিয়েছি জানো?’
অঙ্কিতা বিরসমুখে বলল,’ফ্লার্ট যে করবেন না এতটুকু শিওর! কেন পাঠালেন তা জানিনা।’
‘তা ঠিক আছে। কিন্তু তোমার মুখ বেলুনের মতো চুপসে আছে কেন?’
অঙ্কিতা অসহায়ভাবে তাকিয়ে থাকে। মনে মনে আদনানকে সে ভীষণ পছন্দ করে। কিন্তু ভাগ্য এতই করুণ যে, পছন্দ করার কথাটিও সে কখনো আদনানকে জানাতে পারবে না। বলবেই বা কী করে? ধর্ম যে আলাদা! এছাড়া আদনান কখনোই ওদেরকে সেভাবে ট্রিট করেনি। সেখানে সে যদি পছন্দের কথা বলে তাহলে ঠাস করে থা’প্পড় দিতেও দু’বার ভাববে না।
গোপনে দীর্ঘশ্বাস নিয়ে অঙ্কিতা বলল,’আপনি বুঝবেন না আদনান ভাই।’
‘আচ্ছা বাদ দাও। আমরা টপিকে আসি।’
এর মাঝে প্রাপ্তিও রেডি হয়ে চলে বসে। চেয়ার টেনে বসতে বসতে আদনানের উদ্দেশ্যে বলে,’আজ সকাল সকাল এই বাড়িতে? তোমাকেও ফোন করেছিল নাকি?’
আদনান ভ্রুঁ কুঁচকে জানতে চাইল,’আমায় ফোন করবে মানে? কে ফোন করবে?’
‘রায়হান। তৃধা আর অঙ্কিতাকে ফোন করেছিল বলেই তো আজ সকাল সকাল বাড়িতে চলে এসেছে। তুমিও এসেছ দেখছি। তাই জিজ্ঞেস করলাম।’
‘মাথা খারাপ! ও আমাকে ফোন দিলে হাত-পা ভেঙে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে আসব।’
ওরা তিনজনে আসল। পরোটার টুকরা মুখে তুলে আদনান বলল,’এজন্যই কি রাতে ফোন অফ ছিল তোর?’
‘হুম।’
‘যাক,বেঁচে গেলি। আমি এসেছিলাম তোকে দুইটা চ’ট’কা’না দিতে।’
‘আজব! কেন?’
‘জরুরী কাজে ফোন দিয়েছিলাম রাতে অনেকবার। ফোন অফ ছিল, তাই মেজাজও খারাপ হয়ে গেছিল।’
‘আজাইরা রাগ শুধু।’
‘তুই চুপ থাক। আমি তৃধা আর অঙ্কিতাকে একটা গল্প শোনাব।’
তৃধা, অঙ্কিতা দুজনই দুজনের দিকে মুখ চাওয়া-চাওয়ি করে সমস্বরে বলে উঠল,’গল্প?’
‘হ্যাঁ। হূরপরীর গল্প। আমার একটা হূরপরী আছে।’
প্রাপ্তি চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়ল। টিস্যু দিয়ে হাত মুছতে মুছতে বলল,’আমি যাচ্ছি। তোদের যদি ওর গল্প শুনতে মনে চায় তাহলে শুনতে পারিস।’
‘আরে! আমরা পরে একা যাব নাকি?’
প্রাপ্তি উত্তর না দিয়েই হাঁটা শুরু করে। এই হূরপরীর গল্প শুনতে শুনতে বিরক্ত সে। বাধ্য হয়ে তৃধা আর অঙ্কিতাও উঠে পড়ে। যাওয়ার আগে বলে যায়, অন্যদিন এসে হূরপরীর গল্পটা শুনে যাবে। আদনান তখন কিছু না বললেও ওরা চলে যাওয়ার পর মুচকি মুচকি হাসে।
সে আরামসে খাওয়া-দাওয়া শেষ করে ড্রয়িংরুমে বসে টিভি দেখে। আপাতত তার কোনো কাজ নেই। এগারোটা নাগাদ বের হয়ে বন্ধুদের সাথে বাইরে আড্ডা দিতে যাবে। সুমনা বেগম ঘুম থেকে উঠে আদনানকে ড্রয়িংরুমেই পায়।
‘আয় নাস্তা করে যা।’ বললেন তিনি।
‘উঁহু! পেট ভরে খেয়েছি। আর জায়গা নেই। তুমি খাও।’
‘তোর মা একা একা বাড়িতে কী করে?’
‘আব্বু অফিসে যায়নি আজ। তাই আসতে পারেনি।’
‘ওহহ।’
তিনি প্লেটে পরোটা, ডিম ভাজা আর আলু ভাজি নিয়ে এসে আদনানের পাশে বসলেন। হাসতে হাসতে বলেন,
‘টম এন্ড জেরী দেখতেছিস!’
‘হুম। ভালো লাগে। ছোটোবেলার কথা মনে পড়ে যায়। আমি আর প্রাপ্তি তো আগে এরকমই ছিলাম।’
সুমনা বেগম কিছু বলার পূর্বেই বাড়ির কলিংবেল বেজে ওঠে। আদনান নিজেই উঠে যায় দরজা খুলতে এবং রীতিমতো সে অবাকও হয়। দরজা খুলে রায়হান ও মধ্য বয়স্ক দম্পতিকে দেখতে পায়। রায়হান বেশ ভদ্রভাবেই জিজ্ঞেস করে,
‘বাড়িতে কেউ নেই?’
আদনান কোনো উত্তর না দিয়ে দরজা থেকে সরে দাঁড়াল। রায়হান এসেছে ওর বাবা-মাকে নিয়ে। ওরা ভেতরে ঢোকার পর আদনান দরজা লাগিয়ে দিয়ে পিছু পিছু আসে। সুমনা বেগম রায়হানকে দেখে উঠে আসেন। হাসিমুখেই বলেন,
‘আরে বাবা তুমি! এসো এসো, বসো।’
‘ব্যস্ত হবেন না আন্টি। আপনি খাওয়া শেষ করুন।’ বলল রায়হান।
‘তোমরা আগে বসো তো।’
সবাই বসার পর তিনি জিজ্ঞেস করলেন,’উনারা কারা? তোমার বাবা-মা?’
‘জি, আন্টি।’
‘একটু বসো। আমি আসছি।’
সুমনা বেগমের সঙ্গে সঙ্গে আদনানও কিচেনে চলে যায়। রায়হানকে একদম সহ্য হচ্ছে না তার। ড্রয়িংরুম ফাঁকা হতেই রায়হান ওর বাবা-মাকে ফিসফিস করে বলে,
‘যেভাবেই হোক বিয়েতে ওদের রাজি করাবে প্লিজ! আমার প্রাপ্তিকে লাগবেই।’
চলবে…