সে -পর্ব 8

0
149

#সে
#পর্ব_৮
#মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া
___________________
খসখসে সাদা পেজের ওপর কলম দ্বারা আঁকিবুঁকি করছিলাম। স্যার লেকচার দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সেদিকে আমার কোনো খেয়াল নেই। আমার দৃষ্টি খাতার দিকে এবং মন রুদ্রর কাছে। প্রায় সপ্তাহ্ হবে আমি স্কুলে আসা শুরু করেছি। মনের ভয়ও দূর হয়েছে। রুদ্র সঙ্গে ছিল যে! কিন্তু আজ আসার পথে বলল, সে এখন থেকে বিজি থাকবে। কাজের নাকি প্রচুর চাপ। তাই আমায় নিয়ে আসতে পারবে না। একটু মন খারাপ অবশ্য হয়েছিল কিন্তু পরক্ষণেই ভাবলাম আমার জন্য তো আর কাজকে উপেক্ষা করা যাবে না। তাই সুবোধ বালিকার মতো ঘাড় নাড়িয়ে বলেছিলাম ‘আচ্ছা।’
‘গালে হাত দিয়ে কী ভাবছিস? আর কীসব আঁকিবুঁকি করছিস?’ কনুই দিয়ে কোমরে গুঁতো মেরে বলল তিথি। আমি অস্ফুটস্বরে ‘উহ্’ শব্দ করে তিথির মতোই ফিসফিস করে বললাম,’তোর জামাইর মুন্ডু আঁকি।’
তিথি এবার ভালো করে খাতাটি লক্ষ্য করে বলল,’এটা তোর জামাইর মুন্ডু। ক্লাসে মনোযোগ দে।’
‘মনোযোগ পাচ্ছি না।’
‘কেন?’
‘রুদ্রর কথা মনে পড়ছে বারবার।’
‘তুই গেছিস রে নবনী! আমার মনে হয় না এবার তুই পরীক্ষায় পাশ করতে পারবি।’ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে কথাটি বলল। আমিও এবার তিথিকে কনুই দ্বারা গুঁতো মেরে বললাম,’আজগুবি কথা বলবি না। অলুক্ষণে কথাবার্তা!’
‘আমায় বকিস কেন? তোর হালচাল লক্ষ্য করেছিস তুই? এভাবে চললে যে ফেইল করবি তা আমি শিওর। শোন, আমি একটা কথা বলি। মনের কথা মনের মধ্যে লুকিয়ে রেখে গুমড়ে মরার চেয়ে তাকে গিয়ে বলে দে। হ্যাঁ বা না যেটাই বলুক। সত্যিটা তো জানতে পারবি।’
‘যদি রাগ করে কথা না বলে?’
‘না বললে নাই। দুনিয়াতে কি ছেলের অভাব আছে নাকি?’
আমি এবার তিথির মাথায় গাট্টা মেরে বললাম,’ছেলের অভাব নাই। কিন্তু রুদ্রর অভাব আছে। তোর আর কোনো সাজেশন আমার লাগবে না। পড়।’
তিথিকে বলে আমিও স্যারের লেকচারে মনোযোগ দিলাম। কিন্তু মনে মনে আরও একটা বিষয় ভাবছি, সত্যিই কি তাকে ভালোবাসার কথা বলে দেওয়া উচিত?
স্কুল ছুটির পর একদম কোচিং করে বাড়িতে ফিরছি। সাড়ে চারটায় ছুটি হয়েছে। রিকশায় বসে ভাবলাম রুদ্রকে একটা কল করি। কল করার চেয়ে বোধ হয় টেক্সট করাই ভালো হবে। ম্যাসেজে টেক্সট না করে আগে ফেসবুকে গেলাম। রুদ্র একটিভ। ম্যাসেজ লিখলাম,’কী করেন?’
তার ম্যাসেজের অপেক্ষায় বসে থাকতে থাকতে প্রায় বাড়ির সামনে এসে পড়েছি। তখন তার রিপ্লাই আসে। ‘কাজ করছি। তুমি?’
‘বাড়িতে ফিরছি।’ রিপ্লাই করলাম আমি। সঙ্গে সঙ্গেই সে রিপ্লাই দিল,’আচ্ছা সাবধানে যাও। ফ্রেশ হয়ে খেয়ে রেস্ট নাও।’
‘আচ্ছা। আপনি খেয়েছেন?’
এই ম্যাসেজের আর কোনো রিপ্লাই এলো না। বাড়ির সামনে চলে এসেছি আমি। ভাড়া মিটিয়ে ভেতরে চলে যাই। একটু পরপর চেক করি রিপ্লাই করেছে নাকি! না করেনি। সীনই করেনি। ব্যস্ত বোধ হয়। বাড়িতে গিয়ে গোসল করে হালকা কিছু খাবার খেয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম। ক্লান্ত লাগছে খুব। ঘুম ঘুমও পাচ্ছে কেমন। কিন্তু এখন ঘুমালে কখন যে ঘুম ভাঙবে তার কোনো ঠিক নেই। একটু পরই আবার স্যার প্রাইভেটে পড়াতে আসবে। বিছানায় কিছু্ক্ষণ গড়াগড়ি করাই ভালো। এর মাঝে আরেকবার ফোন চেকও করলাম। উঁহু! এবারও রিপ্লাই আসেনি। তাই কিছু্ক্ষণ কার্টুন দেখছিলাম।
ছয়টার মিনিট পাঁচেক আগে রুদ্র রিপ্লাই করে,’এইতো নাস্তা করব এখন। তুমি খেয়েছ?’
স্যার এখনই পড়াতে চলে আসবে। তাই বই গুছাচ্ছিলাম। তখনই টুং করে ফোনে একটা শব্দ হয়। রুদ্রর ম্যাসেজ দেখে বই রেখে রিপ্লাই করলাম,’হ্যাঁ। কী করছেন?’
‘এইতো বসে আছি। তুমি?’
‘আমিও। খুব ব্যস্ত থাকেন মনে হচ্ছে।’
‘বোঝোই তো কাজের কত চাপ! তবে এখন ফ্রি আছি।’
‘কতক্ষণ?’
‘ত্রিশ মিনিটের মতো।’
আমার প্রাইভেট পড়তে হয় এক ঘণ্টা। রুদ্র ফ্রি আছে ত্রিশ মিনিট। প্রাইভেট পড়লে ওর সঙ্গে কথা বলতে পারব না। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি আজ প্রাইভেট পড়ব না। এজন্য অবশ্য ছোট্ট একটা নাটকও করতে হবে আমায়। রুদ্রকে ম্যাসেজ দিলাম,’ওয়েট। লাইনে থাকেন।’
মায়ের রুমে গিয়ে বললাম, মাথা ব্যথা করছে। কেমন যেন বমি বমিও পাচ্ছে। মা তো রেগেমেগে অস্থির। বমি পাচ্ছে, পেট খারাপ হয়েছে তার কারণ হিসেবে সে ধরেই নিয়েছে আমি আজেবাজে খাবার খেয়েছি। আমি চুপচাপ মায়ের বকুনি খেলাম। কিছু্ক্ষণ বকে মা শান্তকণ্ঠে বললেন,’ঘরে গিয়ে ঘুমিয়ে থাক। আমি ওষুধ নিয়ে আসছি।’
‘ওষুধ খেয়েছি মা। বলছিলাম, এই অবস্থায় প্রাইভেট পড়ব আজ?’
‘না। আমি তোর স্যারকে কল দিয়ে বলে দিচ্ছি, আজ আসার দরকার নেই। তুই গিয়ে শুয়ে থাক।’
‘আচ্ছা মা।’
নাটক কাজে এসেছে। বাহ্! নবনী বাহ্! সিরিয়াল দেখে তোর মা, আর নাটক করিস তুই। জিও। নিজের প্রসংশায় আমি নিজেই পঞ্চমুখ। ঘরে এসে দরজা চাপিয়ে দিয়ে ফোন নিয়ে শুয়ে পড়লাম। অনলাইনে গিয়ে দেখলাম রুদ্রর টেক্সট,’আচ্ছা।’
আমি বললাম,’খাননি এখনও?’
‘খাচ্ছি।’
‘জানেন, আজকে না আপনাকে আমি অনেক মিস করেছি। বারবার চেক করেছি আপনি রিপ্লাই দেন নাকি।’
‘ওলে আমার পিচ্চিটা! অপেক্ষা করার দরকার নেই পিচ্চি। ফ্রি হলে আমিই ম্যাসেজ করব।’
‘কিন্তু আমি যে ম্যাসেজ না করে থাকতে পারি না।’
‘কেন?’
‘জানিনা। একটা কথা বলব?’
‘বলো।’
‘আমি আপনাকে ভালোবাসি।’ টাইপ করেও ব্যাক স্পেসে এসে সব মুছে লিখলাম,’আপনি আমার বন্ধু হবেন?’
‘হওয়া যেতে পারে। কিন্তু আমি তো তোমার চেয়ে বয়সে বড়ো।’
‘তাতে কী? খুব যে বড়ো তাও তো নন। অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়েন। কাজ করেন বলে নিজেকে আবার খুব বড়ো ভাবেন নাকি?’
‘আরে পাগলী না। বাবার বিজনেস বলেই তো কাজ করি। আচ্ছা যাও, আজ থেকে আমরা ফ্রেন্ড ঠিকাছে?’
‘হুম।’
এরপর চলতে থাকে আমাদের ননস্টপ কথা বলা। যতক্ষণ রুদ্র ফ্রি ছিল ততক্ষণই আমাদের কথা হয়েছে। এরপর আবার অপেক্ষার প্রহর শুরু হয়। কখন রুদ্র ফ্রি হবে আর কখন কথা হবে।
রুদ্রকে আমি ফ্রি খুব কমই পেতাম। তার কাজের অনেক চাপ। প্রথম প্রথম অনেক ঘ্যানঘ্যান করতাম। লুকিয়ে লুকিয়ে কাঁদতামও। পরে নিজেই নিজেকে বুঝালাম, সবসময় বাচ্চামো করলে কি হয়? একটা মানুষের ব্যস্ততা থাকতেই পারে। আমারও উচিত তাকে বোঝা। তাই পাগলামি কমিয়ে দিলাম। হুটহাট পাগলামী মাথাচাড়া দিয়ে উঠলে তখন অতিরিক্ত রাগারাগিও করতাম। কিন্তু রুদ্র হাসিমুখে কথা বলতো। আমায় বোঝাতো। তার ব্যস্ততার সাথে আমি নিজেকে মানিয়ে নিচ্ছিলাম।
.
.
আজ শুক্রবার। আমার স্কুল, কোচিং, প্রাইভেট সবই বন্ধ। কিন্তু রুদ্রর কোনো বন্ধ নেই। কারণ তার তো নিজের বিজনেস। মানে বাবার বিজনেস আর তার বিজনেস তো একই কথা। তো সে চাইলেই তো পারে ছুটি নিতে? ঘরের দরজা চাপিয়ে দিয়ে বারান্দায় গিয়ে রুদ্রকে ফোন নিলাম। ফোন রিসিভ করার পর সালাম দিয়ে বললাম,’শুভ সকাল। ভালো আছেন?’
‘শুভ সকাল। আলহামদুলিল্লাহ্‌, তুমি?’
‘আলহামদুলিল্লাহ্‌ ভালো। কী করেন?’
‘এইতো কাজে আসলাম।’
‘ব্যস্ত নাকি?’
‘তেমন না। তুমি বলো।’
‘সকালে নাস্তা করেছেন?’
‘না। তুমি?’
‘হ্যাঁ। যেদিনই সকালে জিজ্ঞেস করি খেয়েছেন নাকি, ঐদিনই বলেন ‘না। সকালে খান না কেন?’
‘এমনি।’
সবসময় তার ছোটো ছোটো উত্তর। ম্যাসেঞ্জারে আমি রচনা লিখে পাঠালেও তার উত্তর আসে সারাংশর মতো দুই লাইনে। কখনো কখনো আবার এক লাইনে বা ২/৩টা শব্দে। ফোনে কথা বলার সময়ও তার একই সমস্যা। অথচ বিষয়টা শুরুর দিকে এমন ছিল না। আমি বললাম,
‘আজ তো শুক্রবার। চলেন কোথাও থেকে আমরা সবাই মিলে ঘুরে আসি।’
‘সরি নবনী। আজ তো আরও বেশি ব্যস্ত থাকতে হবে। আজ পারব না। অন্যদিন ঘুরতে যাব।’
‘প্রতিদিনই তো এই কথা বলেন। আপনার সাথে দেখাও তো হয় না অনেকদিন।’
‘আচ্ছা আজ বারান্দায় দাঁড়িও। বাড়ি যাওয়ার সময় দেখা করব।’
‘এমন দেখা করার কোনো দরকার নাই।’ একটু রাগ দেখিয়েই বললাম আমি। ছোটো বাচ্চাদের যেভাবে বোঝায় রুদ্রও ঠিক সেভাবে নরমসুরে বলল,’রাগ করে না প্লিজ! আমায় একটু বোঝার চেষ্টা করো। নিজের বিজনেস যদি নিজে না দেখি তাহলে কে দেখবে বলো?’
‘হুম।’
‘এখনও রাগ করে আছো?’
‘রাগ নেই আমার।’
‘কথা শুনেই তো বুঝি। আচ্ছা যাও আগামী সপ্তাহের মধ্যেই ফ্রি হয়ে সবাই একসাথে ঘুরতে যাব।’
‘সত্যি তো?’
‘হ্যাঁ।’
আমি এবারও রুদ্রর কথা মেনে নিলাম। তবে শর্ত দিলাম প্রতিদিন একবার হলেও আমার সাথে দেখা করতে হবে। রুদ্র রাজিও হয়। কয়েকদিন ধরে বারান্দা থেকেই দুজনের দেখা হয়।
__________________
শুক্রবার থেকে দেখতে দেখতে আজ বুধবার চলে এসেছে। রুদ্রর ফ্রি সময় এখনও আসেনি। এত পড়ার চাপের মধ্যেও ওকে নিয়ে আমার দুঃশ্চিন্তার শেষ নেই। মাঝে মাঝে মনে হয়, আমি নিজেই বোধ হয় বেশি ভাবি। আজ আপনাদের সাথে আমি কিছু কথা শেয়ার করি শুনুন।
একটা মানুষ ব্যস্ত থাকতেই পারে। তাই বলে কি সারাদিন, সারাক্ষণই সে ব্যস্ত থাকে? দিনের বেলায় আমিও বিজি। বিকেল পর্যন্ত স্কুলেই থাকা হয়। সন্ধ্যার দিকে প্রাইভেট। এরপর ক্লাসের পড়া, কোচিং, প্রাইভেটের পড়া সব আমায় রাতেই কমপ্লিট করতে হয়। সব কমপ্লিট করতে গিয়ে দেখা যায় রাত এগারোটা বেজে যায়। খেয়ে শুতে শুতে সাড়ে এগারোটা বেজে যায়। রুদ্র বাড়ি ফিরে নয়টায়। বাড়িতে আসতে সময় লাগে দশ মিনিটের মতো। ফ্রেশ হয়ে খাওয়া, রেস্ট সব মিলিয়ে না হয় দশটাই বাজে। তারপর নিজের কিছু কাজ থাকলে সেটা না হয় এগারোটা অব্দিই করে। এরপর আর কীসের ব্যস্ততা থাকতে পারে? দু’একটা ম্যাসেজের রিপ্লাই সাথে সাথে দিলেও বেশিরভাগ ম্যাসেজের রিপ্লাই-ই ৫/৬ মিনিট পরপর। কখনো কখনো এমনও হয় যে, অপেক্ষা করতে করতে আমি ঘুমিয়ে পড়ি। ঘুম ভাঙে একেবারে সকালে। মোবাইল হাতে নিলে দেখা যায়, যা জিজ্ঞেস করেছি শুধু সেটারই উত্তর। বাড়তি কোনো ম্যাসেজ নেই। বিশ্বাস করুন অনেক কষ্ট হয়। খারাপ লাগে। সে কেন আমার অনুভূতিগুলো বোঝে না?
রুদ্রর জন্য অনেক মেয়েই পাগল। সে তাদের সঙ্গে কথা না বললেও কিংবা তাদের সঙ্গে যতটুকু কথা বলে তার চেয়ে একটু বেশি সময়ই আমায় দেয়। আমি জানিও এটা। কিন্তু তবুও ওর এমন অবহেলা আমি সহ্য করতে পারি না। রাতে এখন দুই, একটার বেশি কথা হয় না। আমি নিজেই বিরক্ত করা কমিয়ে দিয়েছি। কী করেন, খেয়েছেন ব্যস এইটুকুই। আমি এই দুইটা প্রশ্ন না করলেও সে করে। এরপর আর কোনো কথা নেই। আমি অপেক্ষা করি ম্যাসেজের। নিজে থেকে ম্যাসেজ করতে গিয়েও অনেক সময় করি না। অন্যদিকে সে ফ্রি-ফায়ার, পাবজি আর ইউটিউব নিয়ে ব্যস্ত। আমার জন্য তার সময়ই নেই!
ফোন বাজছে। সরি দীপান্বিতার গানের সুর। গানটা আমার এবং রুদ্রর অনেক বেশি ফেভারিট। তাই ফোনের রিংটোন দিয়ে রেখেছি। আজ স্কুল বন্ধ থাকায় সকাল থেকেই বাড়িতে আছি। ফোন করেছে লিমা। ফোন রিসিভ করে বললাম,’হ্যাঁ, দোস্ত বল। কী অবস্থা?’
ওপাশ থেকে লিমা খুশিতে গদগদ হয়ে বলে,’আমার অবস্থা রাখ! এখন আমি তোরে যেই খবর দেবো তোর অবস্থা খুশিতে চাঙ্গা হয়ে যাবে।’
আমি হেসে ফেললাম। বললাম,’মানে? কী খবর শুনি?’
‘আমাদের বাড়ির সামনে যেই রেষ্টুরেন্ট আছে না?’
‘হু। তো তুই কি এখন ট্রিট দিবি?’
‘আগে আমার কথা শোন ছেম্রি। আমি এখন রেস্টুরেন্টেই আছি। রুদ্র ভাইয়া সঙ্গে আরও কয়েকজন এই রেস্টুরেন্ট আসছে। তুইও এসে পড়। আমি তিথিরেও কল দিতাছি।’
‘এক মিনিট, এক মিনিট! রুদ্র রেস্টুরেন্টে মানে? তুই শিওর?’
‘আজব! আমি তোরে মিথ্যা বলব কেন? বিশ্বাস না হইলে অনলাইনে আইসা ভিডিও কল দে। দেখাইতাছি।’
‘তোকে দেখছে?’
‘না, খেয়াল করে নাই। দোস্ত, আজকে মনে হয় ভাইয়া সেইরকম খুশি। সবার সাথে যেইভাবে হাসাহাসি করতাছে বোঝাই যাচ্ছে মনটা আজ ফ্রেশ। এই সুযোগ, আজকেই মনের কথা জানিয়ে দে। এক্সেপ্ট করার সম্ভাবনা কিন্তু অনেক।’
‘তুই থাক। আমি আসছি।’
ফোনের লাইন কেটে দিয়ে থম মেরে বসে আছি আমি। বুঝতে পারছি না লিমা মিথ্যা বলে মজা করছে নাকি সত্যি বলছে। আবার একটা বিষয়ও আমায় ভাবাচ্ছে, ঐ ঘটনার পর আর যাই হোক ওরা অন্তত মজা করে আমায় বাড়ি থেকে বের করবে না। তার মানে সত্যিই বলেছে। অথচ মিনিট বিশেক আগেও রুদ্রর সঙ্গে আমার টেক্সটে কথা হয়েছে। ফোন দিয়েছিলাম। ধরেনি। টেক্সটে লিখেছে,’ব্যস্ত আছি নবনী। তুমি টেক্সট করো।’
সে রিপ্লাইও দিচ্ছিল ৭/৮ মিনিট পরপর। ব্যস্ত আছে বলে আমিও আর কথা বাড়াইনি। যেই মানুষ এতটাই ব্যস্ত ছিল কিছু্ক্ষণ আগেও সেই মানুষটা এখন এত ফ্রি? আমার হাত-পা কেমন জানি কাঁপছে। আমার বারবার মনে হচ্ছে…
আচ্ছা থাক, আগে আমি বরং গিয়েই দেখি।
ঘর থেকে আদিব মানে রাজ্জাককে ডাকলাম।
‘কী হইছে আপু?’ জিজ্ঞেস করল আদিব।
‘কিছু হয়নি। যা একটা ভালো শার্ট নয়তো গেঞ্জি পরে আয়। আমরা বাইরে খেতে যাব।’
‘আচ্ছা।’ বলেই আদিব দৌঁড়ে মায়ের কাছে চলে গেল। আমিও জামা-কাপড় পাল্টে আকাশী আর সাদা রঙের একটা থ্রি-পিস পরলাম। মুখটা ধুয়ে পনি-টেইল করে চুল বেঁধে নিলাম। আদিব ততক্ষণে চলে এসেছে। পার্স আর আদিবকে নিয়ে মাকে বলে বের হলাম। আজ আমিও দেখব রুদ্রকে। সামনে থেকে দেখব তার ব্যস্ততার আড়ালে হাসিটা। শুনব আজ তার সত্যিটা!
চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here