ভালবেসে রাখব কাছে – Part 23+24

0
303

#ভালবেসে রাখব কাছে
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ২৩+২৪
“আরে এভাবে টেনে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন,ছাড়ুন আমাকে।”
সাদাফ ভাই আমার হাত ধরে টেনে রাস্তা দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।আমি আমার হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করেই চলেছি কিন্তু উনি ছাড়ছেও না কিছু বলছেও না।কিছুক্ষণ পর উনি আমাকে একটা রেস্টুরেন্টে নিয়ে আসে।রেস্টুরেন্টে এসে দেখি নিলয় ভাইয়া বসে আছে,আমি ভ্রু কুঁচকে সাদাফ ভাইয়ার দিকে তাকাই।সেটা দেখে সাদাফ ভাই ইশারায় বলে বসো,আমিও বসে পড়ি।আমি এবার ভদ্রতার খাতিরে নিলয় ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করি।
“কেমন আছেন ভাইয়া?”
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো।তুমি কেমন আছো সাবিহা?”
“আলহামদুলিল্লাহ আমিও ভালো আছি।”
“নিলয় তুই গিয়ে ওর্ডার দিয়ে আয়।”
“কেন?ওয়েটার ত এখানেই আসবে ওর্ডার নিতে।উনি শুধু শুধু ওখানে কেন যাবে কষ্ট করে?”
“তুমি বড্ড বেশি কথা বলছো,চুপ করে বসো।”
নিলয় ভাইয়ার সামনে আমাকে এভাবে ধমক দিয়ে কথা বলাতে আমি গাল ফুলিয়ে চুপ করে বসে রই।সেটা দেখে নিলয় ভাইয়া আমাকে হাসানোর জন্য মুচকি হেঁসে বলে উঠে,,,
“সাবিহা একটা প্রশ্ন করি?”
আমি একবার সাদাফ ভাইয়ের দিকে তাকাই উনিও আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমি এবার নিলয় ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে হাসার চেষ্টা করে বলে উঠি,,,
“জি ভাইয়া বলুন না কী বলতে চান?”
“ওয়েটার নাম কেন রাখা হয়েছে জানো?”
এটা আবার কেমন প্রশ্ন!আমি ভাবনায় পড়ে যাই,সেটা দেখে সাদাফ ভাইয়া আর নিলয় ভাইয়া মুচকি মুচকি হাসছে।আমি এবার গাল ফুলিয়ে বলে উঠি,,,
“জানি না ত।”
নিলয় ভাইয়া হাসল সাথে বজ্জাত সাদাফ ভাইটাও হাসল।আমার রাগ লাগল,উওর জানা নাই থাকতে পারে তার জন্য এমন হাসা লাগে নাকি!”
“ওয়েটার ওয়েট করায় বলেই ওয়েটার বলা হয়।”(আমার এক বড় ভাইয়ের বলা সংজ্ঞা🤭)
আমি কিছু বুঝতে না পেরে বলে উঠলাম,,,
“মানেহ?”
“মানে হল আমরা রেস্টুরেন্টে এসে কিছু ওর্ডার করলে ওয়েটার কিন্তু সেটা আমাদের ওয়েট করিয়েই দেয়।”
আমি নিলয় ভাইয়ার এমন কথায় হু হা করে হেঁসে উঠি,কী যুক্তি বাপরে বাপ।ওয়েটার ওয়েট করায় বলে নাকি নাম রাখা হয়েছে ওয়েটার।কথাটা ভেবেই আরেকদফা হাসিতে মেতে উঠলাম।তখন নিলয় ভাইয়া সাদাফ ভাইয়ার কানে বলে উঠল,,,
“নে ভাবির মুড ঠিক করে দিলাম,এবার তুই সামলা।আর সবসময় ধমক দিয়ে কিংবা রাগ দেখিয়ে কথা বলা বন্ধ কর।নয়ত তোর কপালে দুঃখ আছে,কারন সাবিহা অবলা নারী নয়।এখন আমি আছি বলে তকে কিছু বলল না নয়ত তোর মাথায় চুল থাকত কী না সন্দেহ আছে আমার।তাই সময় থাকতে থাকতে সাবধান হয়ে যা নয়ত কপালে দুঃখ আছে।”
নিলয় ভাইয়া কথাটা বলেই চলে যায়,আর সাদাফ ভাইয়া নিলয় ভাইয়ার কথাশুনে হাসল।কিন্তু কিছু বলল না,নিলয় ভাইয়া যাওয়ার পর সাদাফ ভাই আমার হাতটা উনার হাতের মুঠোয় নিয়ে বলে উঠে।
“সরি সাবিহা,গতকালকের ঘটনার জন্য।”
আমি হাতটা সরাতে চাইলাম কিন্তু উনি ছাড়লেন না।
“হাত ছাড়ুন আমার,এমন হুটহাট হাত ধরাধরি আমার একদম পছন্দ নয়।”
“সাবিহা আমি জানি তুমি রাগ করেছো কিন্তু বিশ্বাস করো আমি সে সময়টাই পাই নি লিজাকে সরানোর জন্য।তার আগেই তুমি চলে আসো।”
“কেন সরাতে কী চব্বিশ ঘণ্টা লাগত নাকি!”
“সাবিহা প্লিজ বাঁকা বাঁকা কথা বলো না,রাগটা কমিয়ে বুঝার চেষ্টা করো একটু।তখন লিজা আমার রুমে এসেই হঠাৎ করে আমাকে জড়িয়ে ধরে।আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই তুমি চলে আসো।”
“আচ্ছা মানলাম উনি আপনাকে হঠাৎ করে জড়িয়ে ধরেছে,আপনি সরানোর সময় পান নি।কিন্তু আপনার সামনে যে আমাকে এতগুলো কথা বলল তার জন্য ত আপনার কিছু বলার উচিত ছিল।তখন ত কিছু বলেননি,তখন ত মুখে গোল আলু ডুকিয়ে রাখছিলেন।”
“সাবিহা আমি মানছি আমি ভুল করেছি,কিন্তু এবারের মত মাফ করে দাও প্লিজ।সামনে থেকে এমন কিছুই হবে না,প্লিজ রাগ করে থেকো না।তুমি যে রাগ করে আমার সাথে কথা বলছো না এটা আমাকে খুব কষ্ট দিচ্ছে।প্লিজ এবারের মত মাফ করে দাও আমাকে,আর কখনও এমনটা হবে না।”
“করব তবে একটা শর্ত আছে।”
“তোমারও শর্ত আছে!”
“হ্যাঁ আছে,আপনার থেকেই এই শর্ত দেয়া নেয়া শেখা।এবার আপনার ট্রিকস আপনার উপরই ট্রায় করব।রাজি থাকলে বলুন নয়ত আমি আসি।”
“না না বলো কী শর্ত আছে?”
“আমার শর্ত হল গরিলা মার্কা মহিলার আশেপাশে যাতে আর না দেখি আপনাকে।যদি উনার ছায়া ও আপনার পাশে দেখি তবে উস্টা মাইরা উগান্ডা নিয়ে ফেলব আপনাকে।”
“পাগলি একটা(গাল টেনে),রাজি আমি।”
আমি একগাল হেঁসে উনারও গাল টেনে বলে উঠি,,,
“গুড বয়।”
“আমার গুলুমুলু বউটা,পুরাই কিউটের ডিব্বা,দয়ার সাগর বেগম রোকেয়া,ডাকাত বউ আম,,,
কথাটা বলেই উনি জিব কামড়ে ধরে।
” কী😒?”
“হে হে,কই কিছু না ত।”
“আমি ডাকাত?”
“হে হে(বোকার মত হেসেঁ)তুমি ডাকাত হতে যাবে কেন?ডাকাত ত আমি,আমি ডাকাত হয়ে তোমাকে কেন ডাকাত বলব!আমি একদমই তোমাকে ডাকাত বলি নি,আমি ত বলেছি আমার বউটা খুব ভালো,খুব,,,
” হয়েছে হয়েছে আর মূলাপাম মারতে হবে না,আপনি যে কী কী বলতে পারেন সেটা আমার অজানা নয়।নেহাত এটা রেস্টুরেন্ট নয়ত আপনার খবর আছিল।”
“খবরা খবর পরে নিবে এখন নাও খেয়ে নাও সবাই।”
টেবিলে খাবার রাখতে রাখতে নিলয় ভাইয়া কথাটা বলে উঠল।আমি সাদাফ ভাইয়ের দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে খাওয়া শুরু করলাম,তিনজনেই খেয়ে নিলাম।খাওয়ার পর নিলয় ভাইয়া আমাকে জিজ্ঞেস করে,,,
“সাবিহা এখন ত সবই ঠিক আছে,তোমার গলাও ত ঠিক হয়ে গেছে।এবার বলো ত সেদিন তোমার সাথে কী হয়েছিল?”
“আপুর বিয়েটা হোক তারপর এসব নিয়ে কথা বলব।এখন এসব নিয়ে কথা বললে ঝামেলা হবে আর আপুর বিয়ের আনন্দটাই মাটি হয়ে যাবে তাই এখন এসব বাদ দিন।আপুর বিয়ের পর সব বলব আমি,ততদিন আপনারা একটু অপেক্ষা করুন।
আর আমি এখন উঠি,আমাকে যেতে হবে।আপুর কিছু প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র মামুর বাড়িতে আছে সেগুলো আনতে যেতে হবে।”
মামুর বাড়িতে যেতে হবে কথাটা শুনেই তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে সাদাফ ভাই।
“তোমাকে যেতে হবে না,কাব্য সেখানে আছে।ত যাওয়ার দরকার নাই।”
“কাব্য যেখানে থাকবে তার ভয়ে কী আমি সেখানে যাব না নাকি!কাব্যর ভয়ে কী আমি ঘর বন্দি হয়ে বসে থাকব?”
“আমি সেটা বলি নি কিন্তু এখন সেখানে না যাওয়াই ভালো।কখন কী করে বসে ঠিক নেই তাই যেও না।”
“আমার যাওয়াটা প্রয়োজন,চাইলে আপনিও সাথে আসতে পারেন সমস্যা নাই।কিন্তু তারপরও আমার যেতে হবে।”
কথাটা বলেই আমি বেরিয়ে আসি রেস্টুরেন্ট থেকে।আমার পিছন পিছন সাদাফ ভাই আর নিলয় ভাইয়াও আসে।তারপর তিনজনে মিলেই চললাম মামুর বাড়িতে।
_____________________________________
মামুর বাড়িতে ঢুকেই মামিমাকে দেখতে পাই ড্রয়িং রুমে বসে টিভি দেখছে,আমি মামিমাকে দেখে দৌড়ে জড়িয়ে ধরি।
“কেমন আছো মামিমা?”
“আমার মা টা এসে গেছে না আমি একদম ভালো হয়ে গেছি।”
“কেমন আছেন আন্টি?” (সাদাফ ভাইয়া)
“আরে সাদাফ বাবা যে,আলহামদুলিল্লাহ বাবা ভালো আছি।তুমি কেমন আছো?”
“আমিও ভালো আছি।”
“তোমার সাথে কে?চিনলাম না ত,সেদিনও হসপিটালে দেখেছিলাম।”
“আমার ফ্রেন্ড নিলয়।”
“ওহহ,তুমি কেমন আছো বাবা?”
“আলহামদুলিল্লাহ আমিও ভালো আছি।”
“আচ্ছা মামিমা তোমরা কথা বলো আমি উপর থেকে আপুর লাগেজটা নিয়ে আসি।আর হিয়া স্কুল থেকে আসে নি?”
“না আসে নি ত,এখনই এসে পড়বে।তুই যা লাগেজটা নিয়ে আয়।”
“আচ্ছা মামিমা।”
তারপর আমি উপরে চলে আসি,আর মামিমা সাদাফ ভাইয়াদের সাথে কথা বলছে।আমি ধীরে সুস্থে হেঁটে যাচ্ছি মেঘ ভাইয়ার রুমে।কিন্তু হঠাৎ করে কেউ আমাকে টেনে আনে একটা রুমে।আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই সামনে থাকা মানুষটা আমার হাতটা দেয়ালের সাথে চেপে ধরে।সবকিছু এত তাড়াতাড়ি হয়েছে যে আমি ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলি।
“চিৎকার করিস না সাবিহা,তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে।”
কাব্য ভাইয়ার কথাশুনে আমি চোখ খুলি,আর উনাকে দেখে রেগে যাই খুব।নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছি উনি ছাড়ছেই না।
“প্লিজ তুই শান্ত হ আমি তোর কোন ক্ষতি করব না।তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে।কথা শেষ হলেই ছেড়ে দিব,প্লিজ আমার কথাটা শোন।”
আমি তারপরও উনার কোন কথা কানে না নিয়ে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে চলেছি।উনি এবার আমার হাত ছেড়ে আমার গালে ঠাস করে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়।আমি রেগে উনার দিকে তাকাই,উনি সেটা দেখে বলে উঠে।
“ভালো করে বলছিলাম শুনছিলি না,তাই গায়ে হাত তুলতে হল।তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে,আমার কথাটা শোন প্লিজ।অনেক কিছু বলার আছে তকে,প্লিজ শান্ত হ।”
আমি উনাকে কিছু না বলে উনার গালে ঠাস করে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিয়ে রেগে হনহন করে রুম থেকে বেরিয়ে আসি।আর কাব্য গালে হাত দিয়ে চোখের পানি ফেলছে।
#চলবে,,,
(কেমন আছে গো আমার গল্পের পাঠক/পাঠিকাগন? দুইদিন খুব ব্যাস্ত ছিলাম তাই গল্প দিতে পারি নি।তার জন্য খুবই দুঃখিত আমি,গল্প দিতে পারি নি তার জন্য আমারও খুব খারাপ লাগছিল।কিন্তু ব্যাস্ত থাকার কারনে গল্প দেয়া হয়ে উঠে নি।কিন্তু আজ থেকে আবার রেগুলার গল্প দিব ইনশাআল্লাহ।
আমার গল্পের পাঠক/পাঠিকাগন কাব্যকে কেমন শাস্তি দিতে চায়?সবাই বলে যাও কাব্যকে কেমন শাস্তি দেয়া যায়🥰।যার শাস্তি দেয়ার টেকনিকটা আমার কাছে ভালো লাগবে সেটাই কাব্যর জন্য ঠিক করব😁।সবাই সবার মতামতটা জানিয়ে যাও পিলিজ🙃।)
#ভালবেসে রাখব কাছে
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ২৪
কাব্য ভাইয়ের রুম থেকে বেরিয়ে হনহনিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলাম।আমাকে এভাবে রেগে বেরোতে দেখে মামিমা,সাদাফ ভাইয়া পিছন থেকে অনেক ডাকল।আমি কারো কথা না শুনেই রেগে হেঁটে চলেছি।কাব্য পেয়েছেটা কী?শালার হাতির নাতিকে ভাই বলতেও লজ্জা লাগছে।যখন তখন হাত ধরে টানাটানি,গায়ে হাত তোলা,প্রতিশোধ নেয়ার জন্য কিডন্যাপ করা,ব্লা ব্লা।এতকিছু আর শয্য হইতাছে না,ইচ্ছে করতাছে খুন করে ফেলতে।এসব ভেবে রেগে হনহনিয়ে হেঁটে চলেছি,কিন্তু হঠাৎ করেই কেউ পিছন থেকে আমার হাত ধরে আটকে ফেলে।পিছনে তাকিয়ে দেখি সাদাফ ভাই,এমনিতেই মেজাজ গরম হয়ে আছে তার উপর আবার উনিও এসে সেই টানাটানি শুরু করছে।তাই এবার আর রাগটা কন্ট্রোল করতে পারলাম না।
“এই কী পেয়েছেন টা কী আপনি?যখন তখন এমন হাত ধরে টানাটানি করেন কেন?আপনাকে বলছি না এমন হাত ধরে টানাটানি করা আমার পছন্দ নয়।তারপরও একই কাজ কেন করছেন বারবার?মানছি আপনার সাথে আমার ছোট বেলা বিয়ে হয়েছে তাই বলে কী যা খুশি তাই করবেন?নিজের লিমিটে থাকুন,নয়ত ভালো হবে না।হাত ছাড়ুন আমার,আর একদম পিছন পিছন আসবেন না আমার।”
কথাটা বলেই রেগে হনহনিয়ে চলে এলাম,পিছন দিকে একবার ফিরেও তাকাই নি।পিছন ফিরলে হয়ত সাদাফ ভাইয়ের চোখের জলটা দেখতে পারতাম।
এইদিকে সাবিহার কথা শুনে সাদাফের চোখে জল চলে আসে।সে ত এসেছিল জানতে যে কাব্য কিছু করেছে কী না যার কারনে ওভাবে রেগে বেরিয়ে এসেছে।কিন্তু সাবিহা যে এতকিছু বলে ফেলবে সাদাফ ভাবতে পারে নি।সাবিহার কথায় সাদাফ খুব কষ্ট পেয়েছে,সাদাফ তার চোখের জল মুছে চলে আসে।
____________________________________
কাব্য ফ্লোরে বসে বেডে হেলান দিয়ে সিগারেট টানছে,আর নিজের করা সমস্ত খারাপ কাজগুলো মনে করছে।কাব্যর চোখ দিয়ে প্রতিনিয়ত পানি ঝড়ছে।
“ভালবাসায় অন্ধ হয়ে আমার আপন মানুষদেরকে কতই না কষ্ট দিয়েছি।হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে কত কষ্টই না দিলাম,বিশেষ করে সাবিহাকে।মেয়েটার সাথে কী কী না করেছি আমি,কিন্তু তারপরও মেয়েটা কেমন শক্ত রয়েছে।যাকে কষ্ট দিয়ে এতদিন পৈশাচিক আনন্দ পেতাম আজ তার কথা ভেবেই কষ্ট পাচ্ছি।কাউকে কষ্ট দিয়ে হয়ত সাময়িক সুখ পাওয়া যায়,কিন্তু সেটা ক্ষনস্থায়ী নয়।কাউকে কষ্ট দিলে তার থেকে শতগুণ কষ্ট পেতে হয় নিজেকে, কথাগুলো যে কতখানি সত্যি সেটা খুব ভালো করেই বুঝতে পারছি আমি।।তাই কাউকে কষ্ট না দেয়াই ভালো,তাতে আল্লাহ তায়ালা নারাজ হবেন না,আর আমার মত অবস্থাও কারো হবে না।
সাবিহা মেয়েটা খুব ভালো,নয়ত দুইজন ভালবাসার মানুষকে এক করার জন্য ওভাবে কিডন্যাপ করে বিয়ে দেয় নাকি?যেখানে আমার জন্য ভাইয়ের বিয়েটা ভাঙ্গল,আর আমি কিছুই করতে পারলাম না সেখানে সাবিহা ঠিকই তাদের বিয়েটা করিয়ে দিলো।সাবিহার সাহস আছে বলতে হবে,আগে ভীতু ছিল কিন্তু এখন অনেক সাহসী হয়েছে।কিন্তু এই সাহসের জন্য ত আমি মাফ চাওয়ার সুযোগটাই পাচ্ছি না,সামনে গেলেই ত ঠাস আর ঠুস করে মেরে দেয়।কিন্তু যেভাবেই হোক সাবিহার কাছে আমার ক্ষমা চাইতেই হবে।”
কথাগুলো ভেবে কাব্য হাতের সিগারেট ফেলে দিয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে নিশানকে ফোন লাগায়।নিশানের সাথে কাব্য সবটা মিটমাট করে নিয়েছে,কারন কাব্য নিশানকে কথা দিয়েছে সাবিহাকে আর কষ্ট দিবে না।
একবার রিং হতেই নিশান ফোন ধরে।
“দোস্ত কেমন আছিস?”
“ভালো আছি,তুই কেমন আছিস?”
“আর ভালো থাকা!” (মন খারাপ করে)
“কেন আবার কী করেছিস তুই?সাবিহাকে কিছু বলিস নি ত?”
“আরে না সেসব কিছুই না,আসলে আজ সাবিহা আমাদের বাড়িতে এসেছিল।”
“ত কী হয়েছে?”
“ত আমি অর সাথে কথা বলার জন্য টেনে আমার রুমে নিয়ে আসি ক্ষমা চাওয়ার জন্য।কিন্তু সাবিহা আমার কোন কথাই শুনছিল না,তাই একটা থাপ্পড় মারি।ভেবেছিলাম ঠান্ডা হয়ে যাবে থাপ্পড় খেয়ে তারপর মাফ চাইব।কিন্তু উল্টা সাবিহা রেগে আমার গালে থাপ্পড় মেরে চলে যায়।”
“একদম ঠিক করছে।তুই কী মানুষ হবি না কাব্য?কথায় কথায় এত গায়ে হাত কেন তুলিস?আর ওভাবে টেনে এনে মাফ চাওয়ারই বা কী মানে?ভালো করে বলে সাবিহার সাথে কথা বলতে পারতি,মাফ চাইতে পারতি।কিন্তু তুই ত তুই ই,সবসময় তুই এমন গায়ে হাত তুলিস।আর সবার আগে নিজের রাগটাকে প্রাধান্য দিস বেশি,আর তোর মুখের আগে হাতটা বেশি চলে।তাই হাতটাও সামলা নয়ত এমন করলে সাবিহা তকে এই জন্মে মাফ করবে না উল্টা তরে বিনা নোটিসে অন্য গ্রহে পাঠাইয়া দিব,যেখানে কোন মানুষ থাকবে না থাকবে শুধু তোর মত এলিয়েন।”
“এখন কী করব?”
“কী করবি আবার!রাগ কমা,হাত পা কন্ট্রোল কর আর একটু মাথা খাটিয়ে কাজ করতে শিখ।”
“কিন্তু সাবিহা ত আমার সাথে কথা বলতেই চাইছে না।”
“তুই যে আচরন করিস তাতে কথা না বলাই স্বাভাবিক।দেখি আমি কোন ব্যাবস্থা করতে পারি কী না!”
“ঠিক আছে।”
কথাটা বলে নিশান ফোনটা রেখে দেয় আর কাব্য ভাবতে থাকে কীভাবে সাবিহার সাথে দেখা করে মাফ চাইবে।
____________________________________
বিকাল ৩টা বেজে ৫৬ মিনিট,রুমে পায়চারি করছি আর ভাবছি তখন সাদাফ ভাইয়ার সাথে রাগ দেখানোটা বারাবাড়ি করে ফেলছি।সাদাফ ভাইয়া নিশ্চয়ই খুব কষ্ট পেয়েছে,আমিও না রেগে গেলে কিছু মনে থাকে না।যে আচরন করেছি তার জন্য ক্ষমা চাইতেই হবে।নয়ত আমিও শান্তি পাব না আর ঐদিকে সাদাফ ভাইও কষ্ট পাবে।উনাকে বড্ড বেশি কষ্ট দিয়ে ফেলি আমি,নাহ উনাকে আর কষ্ট দিব না।কথাগুলো নিজ মনে বিড়বিড় করেই সাদাফ ভাইয়ের বাড়িতে যাওয়ার উদ্দেশ্য বেরিয়ে পড়লাম।ফোনও দিতে পারতাম কিন্তু ফোনে কথা বলাই একরকম আর সরাসরি কথা বলাই আরেক রকম।বাড়িতে যাওয়াই ভালো আমার মনে হয় তাই বাড়িতেই যাব।
সাদাফ ভাইয়ার বাড়িতে এসে আন্টির সাথে একটু কথা বলে সাদাফ ভাইয়ের রুমে চলে এলাম।উনি ত ঘরে নেই,তাই সারাবাড়ি খুঁজতে খুঁজতে ছাঁদে চলে এলাম।এসে দেখি উনি একটা দোলনায় বসে আছে,আমিও ধীরে ধীরে উনার পাশে গিয়ে বসি।উনি আমার উপস্থিতি টের পেয়েছে কিন্তু কথা বলছে না।খুব কষ্ট পেয়েছে আর খুব রাগ করে আছে দেখেই বুঝা যাচ্ছে,তাই আমি এবার একটা শুকনো ঢোক গিলে বলে উঠলাম।
“সাদাফ ভাইয়া তখন রাগ দেখানোর জন্য সরি,আসলে তখন মেজাজ খুব খারাপ ছিল।আর আপনি ত জানেনই আমার রাগ উঠলে মাথা ঠিক থাকে না।তাই প্লিজ রাগ ক্ষমা করে দিন আমাকে।”
উনি কিছু না বলে দোলনা থেকে উঠে ছাদের কিনার ঘেসে দাঁড়ায়।আমিও উনার সামনে দাঁড়িয়ে কানে হাত দিয়ে ইনোসেন্ট ফেস করে বলে উঠি।
“সরি বলছি ত,প্লিজ ক্ষমা করে দিন।”
উনি এখনও কিছু বললেন না ঘুরে অন্যদিকে চলে গেলেন,সেটা দেখে আমার খুব রাগ লাগল।তাই আমি ছাদের উপরে একটা আম গাছে চড়লাম,আর কিছুটা চেঁচিয়ে বললাম।
“এই ফুলাইন্না,কথা বলবেন নাকি এখান থেকে ঝাপ দিয়ে শহীদ হয়ে যাব!”
উনি এবার পিছন ফিরে আমাকে গাছে দেখে ঘাবড়ে গেলেন,আর ছুটে গাছের নিচে দাঁড়ালেন আর রেগে বললেন।
“কী করছো এসব?নামো ওখান থেকে,পড়ে গেলে দাঁত আর দাঁতের জায়গায় থাকবে না।”
আমি গাছের ডালে হাত পা ছড়িয়ে ভালো করে বসি।আর একটা আম পেরে সেটাতে কামড় দিয়ে চিল মুডে উনার দিকে তাকিয়ে বলি।
“যাক বাবা মুখের কস্টেপ ত খুলল,,,উফফ এতক্ষণ ভালো করে বলছিলাম কিন্তু আপনি কথাই বলছিলেন না।আর এখন কী সুন্দর করে কথা বলছেন,এবার বলেন মাফ করে দিছি।”
“বেশি কথা বলবে না একদম,তাড়াতাড়ি নিচে নামো।”
“নামব না আগে বলুন,মাফ করে দিছি।”
“থাপ্পড় খেতে না চাইলে নিচে নামে এক্ষুনি।”
“আজিব ত!আমি বলি কী আর উনি বলে কী?”
“সাবিহহহহহহা,নামবে তুমি নাকি আমি উপরে আসব?আমি আসলে কিন্তু ভালো হবে না বলে দিচ্ছি।”
“এত রাগ করার কী আছে নামছি ত!”
কথাটা বলেই গাছ থেকে দুইটা আম পেড়ে নিচে নেমে পড়লাম,আর উনার সামনে দাঁড়িয়ে জামা আর হাত থেকে ময়লা ঝাড়তে ঝাড়তে বলে উঠলাম।
“এবার বলুন মাফ করে দিছেন,আপনি আমার উপর রেগে নেই।আর মাফ করে দিলে আপনাকে এত্তগুলা কিউট কিউট আম দিব।”
“এই মেয়েটা না পুরাই শয়তানের ডিব্বা,গাছে উঠে থ্রেট করে আমার গাছের আম দিয়ে আমার রাগ ভাঙ্গাতে চাইছে।কই একটু রোমান্টিক ভাবে রাগ ভাঙ্গাবে।তা না করে এভাবে থ্রেট করল,আল্লাহ আর কতকিছু দেখতে হবে আমাকে।”(মনে মনে)
“আমার গাছের আম দিয়ে আমার রাগ ভাঙ্গানো তাই না!”
“হি হি হি,,,গাছে কী নাম লেখা ছিল এটা আপনার গাছ?”
“তবে রে দুষ্টু দাঁড়াও দেখাচ্ছি মজা।”
কথাটা বলেই সাদাফ হেঁসে সাবিহাকে তাড়া করে আর সাবিহাও হেঁসে দৌড় লাগায়।
#চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here