ভালবেসে রাখব কাছে – Part 25+26

0
207

#ভালবেসে রাখব কাছে
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ২৫+২৬
সকাল ৬ টা বেজে ৪ মিনিট,,,বজ্জাত ফোনটা সক্কাল সক্কাল এক নাগাড়ে বেজেই চলেছে,হাজারও বিরক্তি নিয়ে চোখ ডলতে ডলতে ফোনটা ধরি।আর সাথে সাথে ওপর পাশ থেকে কেউ উত্তেজিত হয়ে বলে উঠে।
“সাবিহা মামনি তুই জলদি আমাদের বাড়িতে আয়,সাদাফের কী যেন হয়েছে?ঘুম থেকে উঠে কাঁদছে আর কী যেন বিড়বিড় করে চলেছে একনাগাড়ে।কী বলছে কিছুই বুঝতে পারছি না শুধু এতটুকু বুঝতে পেরেছি তোর নাম নিয়ে কিছু বলছে।মা না ভালো তাড়াতাড়ি আয় তুই।”
আন্টির কথাশুনে আমার চোখ থেকে ঘুম ছুটে গেলো,আর একরাশ চিন্তারা এসে ভর করল মস্তিষ্কে।কী হয়েছে সাদাফ ভাইয়ার?উনি এমনটা কেন করছে?নাহ এখানে বসে এসব ভাবলে চলবে না,আমাকে এক্ষুনি উনার বাড়িতে যেতে হবে।তাই শোয়া থেকে উঠে চুলগুলো হাত খোঁপা করে গাড়ির চাবি নিয়ে বেরিয়ে গেলাম রুম থেকে।বাগানে এসে দেখি বাবা গাছে পানি দিচ্ছে,বাবা আমাকে দেখে এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করে।
“সাবিহা তুই এত সকালে গাড়ির চাবি নিয়ে কই যাচ্ছিস?”
“বাবা সাদাফ ভাইয়ার কী যেন হয়েছে?আন্টি ফোন করে বলল আমাকে যেতে।”
“সে কী?কী হয়েছে সাদাফের?”
“সেটাই ত জানি না,এখন এত কথা বলতে পারব না বাবা আমাকে তাড়াতাড়ি যেতে হবে।আমি এখন আসি বাবা এসে সবটা বলব তোমাকে।”
“আরে দাঁড়া আমিও যাব।”
“বাবা তোমাকে যেতে হবে না,আমি আগে গিয়ে দেখি তারপর তুমি যেও।”
কথাটা বলেই গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম,খুব দ্রুত ড্রাইভ করছি আমি।মনটা কেমন অস্থির হয়ে আছে,যতক্ষণ না নিজের চোখে উনাকে দেখব ততক্ষণ শান্তি নেই।সাদাফ ভাইদের বাড়ির সামনে গাড়ি থামিয়ে ছুটে গেলাম বাড়ির ভিতরে।এসে দেখি আন্টি আর আংকেল চিন্তিত মুখে সাদাফ ভাইয়ার পাশে বসে আছে।কিন্তু সাদাফ ভাইয়ার কোন ভাবাবেগ নেই,উনি উনার মত একমনে কী যেন বিড়বিড় করে চলেছে।উনাকে এমন অবস্থায় দেখে বুকের মধ্যে কেমন যেন একটা ব্যাথা অনুভব হল।আমাকে আসতে দেখে আন্টি আমার কাছে ছুটে আসে আর আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়।
“মা রে আমার ছেলেটাকে ঠিক করে দে না,দেখ না আমার ছেলেটা কেমন যেন করছে?ডাক্তারকে ফোন দিচ্ছি কিন্তু এত সকালে ফোন তুলছে না।না পেরে তকে ফোন দিয়েছি,কারো সাথে কোন কথা বলছে না এভাবেই রয়েছে সেই তখন থেকে।তুই আমার ছেলেটাকে ঠিক করে দে না রে মা।”
“আন্টি আপনি শান্ত হন,সাদাফ ভাইয়ার কিছু হয় নি।আমি দেখছি,আপনি শান্ত হন একটু।”
আন্টির থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে আমি সাদাফ ভাইয়ের দিকে এগিয়ে যাই।সাদাফ ভাইয়ের সামনে হাঁটু গেড়ে বসি আমি,আর কাঁপা কাঁপা হাতে সাদাফ ভাইয়ের গালে হাত রাখি।সাদাফ ভাইয়ের কোন ভাবাবেগ নেই,আমি এবার নরম স্বরে সাদাফ ভাইকে বলে উঠি।
“সাদাফ ভাই।”
সাদাফ ভাই এবার মুখ তুলে আমার দিকে তাকায়,আমাকে দেখার সাথেসাথে উনি আমার সামনে হাটু গেড়ে বসে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বলে উঠে।
“আমার সাবিহা ফিরে এসেছে,আমার সাবিহা আমার কাছে ফিরে এসেছে।কাব্য,লিজা আমার থেকে সাবিহাকে কেড়ে নিতে পারে নি।মা,বাবা দেখো সাবিহা আমার কাছে ফিরে এসেছে।এই সাবিহা আমাকে ছেড়ে কিন্তু একদম যাবে না।আমি মরে যাব তোমাকে ছেড়ে,প্লিজ যেও না আমাকে ছেড়ে।খুব ভালবাসি তোমাকে,প্লিজ আমাকে একা করে চলে যেও না।না না এভাবে বললে হবে না,চলো আমরা পালিয়ে যাই এখান থেকে।কাব্য আর লিজার থেকে অনেক দূরে চলে যাব তোমাকে নিয়ে।তবে আর অরা তোমার কোন ক্ষতি করতে পারবে না।আর আমার থেকে দূরে সরাতেও পারবে না।চলো আমার সাথে,সবার আড়ালে অনেক দূরে চলে যাব তোমাকে নিয়ে।তাড়াতাড়ি চলো,নয়ত কাব্য আর লিজা চলে আসবে।”
উনি কথাগুলো একনাগাড়ে বলে উঠে দাঁড়িয়ে আমার হাত ধরে বসা থেকে উঠায়।আর দরজার দিকে হাঁটা ধরে,আমি উনার আচরনে এতটাই অবাক যে উনাকে যে আটকাবো সেটাও মাথায় নেই।উনি আজও সেদিনের মত পাগলামি করছে যেদিন কাব্য ভাই আমাকে কিডন্যাপ করেছিল।আর আজও এমন করছে,কী হয়েছে উনার?কী সমস্যা হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছি না।সাদাফ ভাইয়ার বাবার কথায় হুস আসে আমার।
“সাদাফ তুই কী শুরু করেছিস?কোথায় নিয়ে যাচ্ছিস সাবিহাকে?দাড়া সাদাফ,কথা শোন আমার।”
সাদাফ ভাই কারো কথা না শুনেই হেটে চলেছে।কিন্তু আমি এবার দাঁড়িয়ে যাই আর সেটা দেখে সাদাফ ভাই পিছন ফিরে বলে উঠে,,,
“থামলে কেন?চলো তাড়াতাড়ি,নয়ত কাব্য আর লিজা চলে আসবে।”
“হ্যাঁ ভাইয়া আমরা যাব ত,কিন্তু যাওয়ার আগে একটা ছোট্ট কাজ করতে হবে।”
“কী কাজ করতে হবে তাড়াতাড়ি বলো,নয়ত অরা চলে আসবে।”
আমি এবার সাদাফ ভাইকে বিছানায় বসাতে বসাতে বলে উঠি।
“আচ্ছা আপনি একটু বসুন আমি আসছি।”
“না না,তুমি কোথাও যাবে না।তুমি গেলে যদি আর না আসো।না একদম কোথাও যাবে না তুমি আমাকে ছেড়ে।আমার পাশে বসো তুমি,আর কী করবে তাড়াতাড়ি করো নয়ত অরা চলে আসবে।”
আমি উনার অবস্থা দেখে বুঝতে পারছি উনি খুব ভয় পেয়েছেন,যার জন্য উনি এমন আচরন করছে।তাই আন্টিকে ইশারায় বললাম কিছু খাবার আর ঘুমের ঔষধ নিয়ে আসতে।একটু ঘুমালেই উনি ঠিক হয়ে যাবে মনে হচ্ছে।আন্টি আমার কথামত ঔষধ আর খাবার নিয়ে আসে।আমিও উনাকে নানা ধরনের কথা বলে খাইয়ে দিয়ে ঔষধটা খাইয়ে দেই।খাওয়ার পর উনি আমার কোলে মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে যায়।সেটা দেখে আন্টি আর আংকেল কিছুটা নিশ্চিন্ত হন,আর তারা বেরিয়ে যায় ঘর থেকে।
সাদাফ ভাইয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি আমি আর ভেবে চলেছি উনি এমন কেন করছে?কোন খারাপ স্বপ্ন দেখে কী এমন পাগলামি করছে?কিন্তু স্বপ্ন দেখে কী কেউ এতটা পাগলামি করে?অন্য কোন ঘটনা নেই ত এসবের পিছনে।আর উনি বারবার কাব্য ভাই আর গরিলা মার্কা মহিলার কথা কেন বলল?তারা কী কিছু করেছে?উফফ মাথা পুরো হ্যাং হয়ে আছে,কিছু বুঝতে পারছি না আমি।না মাথায় এত চাপ দিয়ে লাভ নেই,আমার সমস্ত প্রশ্নের উওর সাদাফ ভাই ই দিতে পারবে।ত উনার ঘুম থেকে উঠার অপেক্ষা করি,তারপর সবই জানতে পারব।
___________________________________
দুপুর ২ টা ছুঁইছুঁই,সাদাফের ঘুম ভাঙ্গে আর চোখ খুলে নিজেকে কারো কোলে আবিষ্কার করে।সাদাফ তাড়াহুড়ো করে উঠে পড়ে,আর তাকিয়ে দেখে সাবিহা বেডে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে আছে।কিন্তু সাদাফ তাড়াহুড়ো করে উঠাতে সাবিহার ঘুমটা ভেঙ্গে যায়।
আমি ঘুম থেকে উঠে দেখি সাদাফ ভাইয়া জেগে গেছে সেটা দেখে মুচকি হেঁসে বলে উঠে,,,
“এখন ঠিক আছেন আপনি?”
সাদাফ ভাইয়া মাথা নাড়িয়ে বুঝায় সে ঠিক আছে।পরক্ষনেই আবার বলে উঠে,,,
“তুমি এখানে?আর তোমার কোলে,,,
” সকালে কী পাগলামি করেছেন মনে নেই আপনার?আচ্ছা এটা বলুন ত লিজা আপু আর কাব্য ভাই কী করেছে?যার কারনে সকালে এতটা পাগলামি করেছেন?”
আমার কথাশুনে সাদাফ ভাইয়ের মুখে ভয়ের ছাপ আবারও দেখা দেয়।উনাকে এমন ভয় পেতে দেখে এবার আমারও কেমন যেন একটা লাগছে।কী এমন হয়েছে যার জন্য উনি এভাবে এতটা ভয় পেয়ে রয়েছে?আমি উনার কাঁধে হাত রেখে বলে উঠি,,,”
“সাদাফ ভাইয়া কোন সমস্যা হয়েছে?”
সাদাফ ভাইয়া আমার দিকে টলমল চোখে তাকিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠে,,,
“আমি এখন তোমাকে কিছু বলতে পারব না সাবিহা,সময় হলে সব বলব তোমাকে।কিন্তু তুমি প্লিজ আমাকে ছেড়ে যেও না,আমি তোমাকে খুব ভালবাসি।তোমাকে ছেড়ে থাকতে পারব না আমি,প্লিজ কখনও ছেড়ে যেও না।”
উনার এমন অবস্থা দেখে আমি শুধু অবাকই হচ্ছি।কিছুই বুঝতে পারছি না কী হচ্ছে এসব?কী আছে এসবের পিছনে যার জন্য উনি এতটা পাগলামি করছে?
“শীলার বিয়ের দিন চলো আমরা বিয়ে করে ফেলি।”
সাদাফ ভাইয়া আমাকে ছেড়ে আমার গালে হাত দিয়ে কপালের সাথে কপাল ঠেকিয়ে বলে উঠে কথাটা।উনার কথা শুনে চমকে উনার দিকে তাকাই,কী বলছে উনি এসব?আপুর বিয়ের দিন আমাদের বিয়ে মানে?কীভাবে কী?”
“মানেহ?”
“এত কিছু জানি না আমি,তুমি শুধু বলো আমাকে বিয়ে করবে আর সেটা এ সপ্তাহেই।আমি সারাক্ষণ তোমার আশেপাশে থাকতে চাই,যাতে কেউ তোমাকে আমার থেকে কেড়ে নিতে না পারে।প্লিজ সাবিহা আমাকে ফিরিয়ে দিও না,রাজি হয়ে যাও প্লিজ।”
“আপনার থেকে কে কেড়ে নিবে আমাকে সেটা ত বলুন।”
“আমি এখন কিছু বলতে পারব না সাবিহা,তুমি আমার কাছে কিছু জানতে চেও না দয়াকরে।শুধু তুমি বলো আমাকে বিয়ে করবে আর সেটা এ সপ্তাহেই।”
উনার কথাশুনে মাথায় আবার নতুন চিন্তা এসে ভর করল।
“সাবিহা কিছু ত বলো।”
“আমাকে একটু ভাবার সময় দিন।আমি আপনাকে পরে জানাচ্ছি।”
কথাটা বলেই উনার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে বেরিয়ে এলাম রুম থেকে।
অন্যদিকে সাদাফ বেডে বসে দুইহাত দিয়ে চুল আকড়ে ধরে আর কান্না জড়িত কন্ঠে বলে উঠে।
“তোমাকে হারাতে পারব না আমি,তোমাকে ছেড়ে থাকতে পারব না আমি।আমার থেকে তোমাকে কেড়ে নেয়ার ষড়যন্ত্র হচ্ছে।কেড়ে নিবে আমার থেকে তোমাকে,তোমার লাইফ রিক্স আছে সাবিহা।ছয় বছর আগে যেমনটা আমার থেকে তোমাকে কেড়ে নেয়ার ষড়যন্ত্র হয়েছিল ঠিক এখনও তাই করা হচ্ছে।কিন্তু আমি ত পারব না তোমাকে ছেড়ে থাকতে, আমার তোমাকে চাই সারাজীবনের জন্য।তোমাকে হারানোর ভয়ে পাগল হয়ে যাচ্ছি আমি।তোমাকে ছেড়ে বাঁচতে পারব না আমি,বাঁচতে পারব না।”
কথাটা বলেই সাদাফ কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে।
#চলবে,,,
(বিয়েটা কী দিয়ে দিব নাকি🤔)
#ভালবেসে রাখব কাছে
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ২৬
আর মাত্র তিনদিন পর আপুর বিয়ে,আর সাদাফ ভাইও পাগলামি করছে আপুর বিয়ের দিন বিয়ে করার জন্য।কিন্তু আমার মন সায় দিচ্ছে না,এখনই বিয়ে করতে চাইছি না আমি।উনি প্রতিনিয়ত আমাকে বিয়ের জন্য পেশার দিচ্ছে।উনি এত কথা বলে চলেছে কিন্তু আসল কথাই বলছে না।আমার লাইফ রিস্ক আছে মানে কী?কে আমার ক্ষতি করতে চায়?গরিলা মার্কা মহিলা নাকি কাব্য ভাই?মাথায় কিছু ধরছে না আমার।আমি যখন এসব ভাবনায় মগ্ন তখন কেউ আমার রুমে প্রবেশ করে।আমি তাকিয়ে দেখি কাব্য ভাই,উনাকে দেখেই রাগটা মাথা চারা দিয়ে উঠে।
“আপনার সাহস কী করে হল আমার রুমে আসার?বেরিয়ে যান আমার রুম থেকে,নয়ত খুব খারাপ হয়ে যাবে।”
“সাবিহা আমি তোর কোন ক্ষতি করব না,তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে।ত দয়াকরে আমার কথাটা ঠান্ডা মাথায় শোন।আমি কথাটা বলেই চলে যাব, প্লিজ আমার কথাটা শোন।”
“আমি আপনার কোন কথা শুনতে চাই না,চলে যান এখান থেকে।”
“দুই মিনিট শুধু দুই মিনিট সময় দে আমাকে।আমি আমার কথা শেষ করেই চলে যাব।প্লিজ দয়াকরে আমার কথাটা শোন।”
আমি কিছুক্ষণ ভেবে,বলে উঠলাম।
“বলুন কী বলতে চান?”
আমার কথা শুনে কাব্য ভাইয়া খুশি হয়ে যায়।আর হাসিমুখেই বলে উঠে।
“থ্যাংকস ইয়ার,অবশেষে তোর সাথে কথা বলার সুযোগ পেলাম।এ কয়টা দিন খুব চেষ্টা করেছি তোর সাথে কথা বলার জন্য।কিন্তু প্রতিবারই তুই কিছু না কিছু করে আমাকে বলার সুযোগই দিস নি।”
“এসব বলার জন্য এখানে এসেছেন আপনি?”
“আরে না,আমি ত,,,,
” বেশি কথা না বলে কাজের কথা বলুন।”
“আসলে,আমি তোর কাছে ক্ষমা চাইতে এসেছি।এতদিন তোর সাথে অনেক অন্যায় করেছি তার জন্য আমি অনুতপ্ত।তোকে এতটাই কষ্ট দিয়েছি যে এখন আমি প্রতিনিয়ত শাস্তি পাচ্ছি।আমার পরিবার থেকেও নেই,যাকে ভালবেসেছিলাম সেও ধোঁকা দিলো আমাকে।আমাকে তুই ক্ষমা করে দে,নয়ত আমি মরেও শান্তি পাব না।”
কাব্য ভাইয়ের কথাশুনে আমি হু হা করে হেঁসে উঠলাম।কথাগুলো বলার সময় উনার চোখে পানি টলমল করছিল।আমার হাসির আওয়াজে চোখে জল নিয়েই তাকায় আমার দিকে।
“তুই হাসছিস?”
“ত কী করব?নাচব নাকি কাঁদব?আপনার এসব ফালতু নাটক দেখার সময় নেই আমার।আপনি আসতে পারেন।”
“আমি কোন নাটক করছি না সাবিহা।বিশ্বাস কর আমাকে আমি সত্যি অনুতপ্ত।দয়াকরে ক্ষমা করে দে আমাকে।”
“আমি এত দয়ালু নই যে আপনার মত অমানুষ, পাষানকে ক্ষমা করে দিয়ে সবকিছু ভুলে যাব!আপনি কী ভাবছেন আপনার করা এত অন্যায় শুধু ক্ষমা চাওয়াতেই সেটা ভুলে গিয়ে ক্ষমা করে দিব?এমনটা ভাবলে ভুল ভাবছেন আপনি।আমি আপনাকে কখনও ক্ষমা করব না, আমি আর একটা কথাও শুনতে চাই না আপনার মুখে।বেরিয়ে যান আমার রুম থেকে।”
আমার কথাশুনে কাব্য ভাই আমার দিকে এগিয়ে আসে আর আমার হাত তার মুঠোয় নিয়ে কান্না জড়িত কন্ঠে বলে উঠে।
“ক্ষমা করতে না পারিস,অন্তত আমাকে একটা সুযোগ দে ভালো হওয়ার।আমাকে পুলিশের হাতে তুলে দিস না,আমি জীবনটা গুছিয়ে নিতে চাই।”
উনি হাতটা বেশ ভালো করেই ধরেছে যার জন্য ছাড়াতে পারছি না।তারপরও হাত ছাড়াবার চেষ্টা চালাচ্ছি।
“হাত ছাড়ুন আমার,হাত ছেড়ে কথা বলুন।”(রেগে)
” না আমি ছাড়ব না,আগে তুই বল আমাকে একটা শেষ সুযোগ দিবি?”
“হাতটা ছাড়ুন আমার।”
“তুই ত আমাকে ভালবাসিস,ত ভালবাসার মানুষটাকে একটা শেষ সুযোগ কী দেয়া যায় না?তুই আমাকে এই শেষ সুযোগটা দিয়ে দেখ আমি আমার করা সব অন্যায় শুধরে নিব।জীবনটা নতুন করে সাঁজাব তোর সাথে।ভালবাসব তকে,ভালবেসে রাখব কাছে।প্লিজ একটা সুযোগ দে আমাকে।”
আমি কাব্য ভাইয়ের কথার পরিবর্তে কিছু বলব তার আগেই সাদাফ ভাই হাত তালি দিতে দিতে ঘরে প্রবেশ করে।আমি সেটা দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকাই উনার দিকে,আর কাব্য ভাই আমার হাতটা ছেড়ে সোজা হয়ে দাঁড়ায়।
“বাহ!বাহ!বাহ!ভালোই ত চলছে রোমান্টিক সিন।তা বন্ধ করলে কেন চালিয়ে যাও।”
“বাজে কথা কম বলুন।”
“তোমরা এখানে হাত ধরাধরি করে রোমান্টিক কথা বলছো,ভালবাসার কথা বলছো আর আমি কিছু বললেই বাজে কথা হয়ে গেলো!”
“পুরো কথা শুনে তারপর কথা বলুন,না জেনে কথা বলবেন না।”
“একদম চুপ,একটা কথাও বলবা না তুমি।এখন আমি খুব ভালো করেই বুঝতে পারছি তুমি কেন আমাকে বিয়ে করতে চাচ্ছো না।আমারই বুঝার উচিত ছিল যে মেয়ে কাব্য বলতে পাগল সে মেয়ে হঠাৎ আমাকে ভালবাসতে চাইবে কেন?তার পিছনে নিশ্চয়ই কোন কারন আছে নয়ত সে এত তাড়াতাড়ি একজনকে ভুলে গিয়ে আরেকজনকে ভালবাসতে চাইবে কেন?আমার অনুভূতি নিয়ে খেলছো তুমি।আমাকে ঝুলিয়ে রেখে আরেকজনের সাথে প্রেমালাপ করছো।আমি তোমাকে সেফ রাখার জন্য এতকিছু করছি আর তুমি কী না এসব করছো?নেহাত তোমাকে ছেড়ে থাকতে পারব না নয়ত তোমার মুখও দেখতে চাইতাম না আমি।কিন্তু সেটা ত পারব না তাই তোমাকে সারাজীবনের মত নিজের করে নিব আজ।যাতে আমি ছাড়া আর কারো হতে না পারো তুমি।”
কথাটা বলেই সাদাফ ভাই আমার হাত টেনে নিয়ে যাচ্ছে,কাব্য ভাই আটকাতে চাইছে কিন্তু উনি ছাড়ছে না।
“সাদাফ সাবিহাকে নিয়ে তুমি কোথায় যাচ্ছো?ছাড়ো সাবিহাকে।ফুপি,ফুপা দেখে যাও সাবিহাকে নিয়ে সাদাফ কোথায় যেন যাচ্ছে!”
সাদাফ ভাই কোন দিকে পাত্তা না দিয়ে আমাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।আমি ছাড়াতে চাইলে উনি আমাকে কোলে তুলে নেয়।
“ভুল করছেন আপনি,ছাড়ুন আমাকে।”
উনি কোন কথা না বলে হেঁটেই চলেছে।উনি আমাকে গাড়িতে বসিয়ে আমার গলার উর্না দিয়ে হাত বেঁধে দেয়,আর উনার রুমাল দিয়ে মুখ বেঁধে দেয়।পিছন থেকে আপু আর কাব্য ভাই ছুটে আসছে আটকাতে।আর বাবা বুকে হাত গুজে দাঁড়িয়ে থেকে সবটা দেখছে,পাশেই মা দাঁড়িয়ে আছে।তাদের ভাব এমন যেন কিছুই হচ্ছে না।
অনেকক্ষণ পর সাদাফ ভাইয়া একটা কাজি অফিসের সামনে গাড়ি থামায়।সেটা দেখে আমার চোখ বড়বড় হয়ে যায়,আমি উনার দিকে তাকিয়ে মাথা ঝাঁকিয়ে বুঝাচ্ছি এমনটা না করতে।কিন্তু উনি কোন কথা কানে না নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে আমার হাতের বাঁধন খুলে উর্নাটা গায়ে দিয়ে আবারও কোলে তুলে নেয়।আমি উনাকে কিল,ঘুসি দিয়েই চলেছি ছাড়ানোর জন্য কিন্তু উনি ছাড়ছেই না।সাদাফ ভাই আমাকে ভিতরে নিয়ে এসে একটা চেয়ারে বসিয়ে দু’পাশে হাত দিয়ে বলে উঠে।
“একদম ছটফট করবে না,চুপচাপ বিয়েটা করে নিবা।”
উনার কথাশুনে এবার ঠাস করে উনার গালে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেই।
“একবার বাল্যবিবাহ করে কী তোর শখ মিটে নি,আবার বাল্যবিবাহ করতে তুলে নিয়ে এসেছিস।”
কথাটা বলেই উনাকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে উঠে দাঁড়ালাম বাইরে আসার জন্য।কিন্তু উনি এবার আমার হাত ধরে আটকে দেয়,আর টান দিয়ে উনার বুকের উপর ফেলে,জড়িয়ে ধরে শক্ত করে।আমি ছোটার জন্য ছটফট করলে উনি আমার গাড়ে কিছু একটা করে।আমি গাড়ে হাত দিয়ে উনার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে ডলে পড়ি উনার বুকে।উনি সেটা দেখে আমাকে বুকে আগলে নিয়ে কপালে একটা চুমু একে দেয়।আর আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে উঠে,,,
“জানতাম তুমি এখন বিয়ে করতে কখনও রাজি হবে না।তাই আজ বাড়ি থেকে প্রস্তুতি নিয়েই বেরিয়েছি। তুমি আজ বিয়েতে রাজি না হলে তুলে নিয়ে বিয়ে করব এমনটা ভেবেই এসেছিলাম।কিন্তু এসেই কাব্যর সাথে তোমাকে ওভাবে দেখি,আর তাতে করে মেজাজ আরো বিগড়ে যায়।আর কাব্যর বলা কথাগুলো শুনে তোমাকে হারানোর ভয়টা আবারও ঝেকে বসে মাথায়।তাই আজ যেভাবেই হোক তোমাকে নিজের করেই নিব।তুমি আমার আর আমার কাছেই থাকবে।হোক সেটা ভুল রাস্তার,কিন্তু আমি তোমার জীবন নিয়ে আর কোন রিস্ক নিতে পারব না।আর না পারব তোমাকে হারাতে।আর তখন রাগ দেখিয়ে অনেক কথা বলে ফেলেছি,তার জন্য হয়ত তুমি আমার উপর খুব রাগ করে আছো।কিন্তু আপাতত আমার কিছু করার নেই,এখন আমার একটাই কাজ তোমাকে নিজের করে নেয়া।”
কথাগুলো বলে সাদাফ সাবিহার কানের লতিতে আরেকটা চুমু দিয়ে কোলে তুলে নেয়।আর একটা চেয়ারে বসে সাবিহাকে নিজের বুকে আগলে নেয়।ফোনটা হাতে নিয়ে কাউকে ফোন লাগায় আর সাবিহার দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,,,
“তিন ঘন্টার জন্য নিশ্চিন্ত তার মধ্যে সব রেডি চাই।”
কথাটা বলেই সাদাফ ফোনটা পকেটে রেখে দেয়।আর সাবিহার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেঁসে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে ধরে।
#চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here