চন্দ্ররঙা প্রেম -Part 2+3

0
404

#চন্দ্ররঙা_প্রেম
#পর্ব-২+৩
#আর্শিয়া_সেহের
বাস চলছে আপন‌ গতিতে। গাছপালা গুলো সব উল্টা দিকে দৌড়াচ্ছে। এই দৃশ্য রুমঝুমের খুব প্রিয়। বাসের মধ্যে সবাই চুপচাপ বসে থাকলেও চুপ করে নেই ওই পাঁচ সদস্যের বিচ্ছু বাহীনি। তাদের বকবকানি চলছে তো চলছেই। রুমঝুমের ইচ্ছে করলো ওদের কথা শোনার। তাই প্রকৃতি থেকে মুখ ফিরিয়ে ওদের কথা শোনায় মগ্ন হলো।
-“প্রান্ত ,একটা গান ধর না। জার্নি টা বোরিং লাগতেছে রে। ”
-” চল ফুট। রাত কয়টা বাজে সে খেয়াল আছে তোর ? বাসের লোক সব ঘুমাচ্ছে আর উনি আসছে গান শুনতে।”
প্রান্তর কথায় মুখ ভার করে বসলো সিন্থিয়া।
বিথী সেটা দেখে সিন্থিয়ার দিকে ফিরে বললো,
-“এটা কি গান শোনার সময় সিন্থু? এমন বাচ্চামি করিস না তো।”
ওদের এতো কথায় বিরক্ত হলো শান। ভরাট কন্ঠে বললো,
-“সবগুলো চুপ কর এবার। আর একটা কথাও বলবি তো বাস থেকে ফেলে দিবো। তোরা ভালো করেই জানিস ইন..”
শানকে শেষ করতে না দিয়ে বাকি চারজন একসাথে বলে উঠলো,
-“আমরা ভালো করেই জানি ‘ইনজামুল শাফায়াত শান’ রেগে গেলে যা ইচ্ছা করতে পারে।”
বলেই অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো চারজন। তাদের কথা শুনে রুমঝুমও মুচকি হাসলো।
রাত সাড়ে দশটার মতো বাজে। আকাশে আজও বড় একটা চাঁদ দেখা যাচ্ছে তবে সেটা গতকালকের চেয়ে কিছুটা ছোট। চাঁদের আলোতে বাইরের সবকিছুই আলোকিত হয়ে আছে।
রুমঝুম চুলগুলো হাতখোপা করে সিটে গা এলিয়ে বসে আছে। মুখটা জানালার দিকে হালকা কাত করে রেখেছে। এতে করে চাঁদের আলো সরাসরি রুমঝুমের মুখে এসে পড়েছে। চাঁদের আলোতে রুমঝুমকে অপরুপা লাগছে।
সিন্থিয়া বোরিং হয়ে সিট থেকে উঠে দাঁড়ালো। চঞ্চল প্রকৃতির সিন্থিয়া এভাবে চুপচাপ জার্নি করাটা একদমই মানতে পারছে না। সে সিট থেকে উঠে দাঁড়িয়ে পেছনে থাকা যাত্রীদের দেখছে। একটা বাচ্চার দিকে নজর পড়তেই দেখলো বাচ্চাটা ওর দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। সিন্থিয়া বাচ্চাটার দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ দিলো সাথে ফ্লাইং কিস ছুড়লো। বাচ্চাটা সাথে সাথে কান্না জুড়ে দিলো। বাচ্চাটার কান্নায় সিন্থিয়া ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। আজকালকার বাচ্চারা তো ফ্লার্ট করা পছন্দ করে তবে এটা ভিন্ন কেন? সিন্থিয়া অতশত না ভেবে অন্যদের দেখতে ব্যাস্ত হলো।
সবার দিকে চোখ বুলাতে বুলাতে সিন্থিয়ার চোখ আটকে গেলো নীল-সাদা জামা পড়া একটা মেয়ের দিকে। চাঁদের আলোতে হুরপরী মনে হচ্ছে। সিন্থিয়া মৃদু চিৎকার দিয়ে বললো,
-“সো কিউট গার্ল।”
বলেই পাশে থাকা শানকে ঠেলতে লাগলো মেয়েটাকে দেখার জন্য। শান বিরক্ত ভঙ্গিতে বললো,
-“চুপচাপ বস মেরি মা। মৃগী রোগ হইছে নাকি?এরকম ঠেলাঠেলি করস ক্যান?”
সিন্থিয়া চোখ গরম করে তাকিয়ে বললো‌,
-“ওই মেয়েটাকে একবার দেখ দোস্ত। আরে দেখ না। ওঠ।”
সিন্থিয়ার ঠেলাঠেলিতে শান আর বসে থাকতে পারলো‌ না। সে জানে যতক্ষণ সিন্থিয়া নিজের উদ্দেশ্য পূরণে সফল না হয় ততক্ষণ এরকম করতেই থাকে।
শান একপ্রকার বাধ্য হয়ে উঠে দাঁড়ালো সিন্থিয়ার পাশে। সিন্থিয়ার ইশারা মতো বিরক্তিসূচক চাহনিতে তাকালো সেদিকে। একবার তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে বুঝতে পারলো ওর একটা হার্টবিট মিস হয়েছে। আবার তাকালো সেদিকে। চাঁদের স্নিগ্ধ আলোতে ভেসে বেড়াচ্ছে একটা মায়াবী মুখ।এই প্রথম নিজের মা আর বোন ছাড়া কোনো মেয়েকে অতি আপন মনে হচ্ছে তার। শান রুমঝুমের দিকে তাকিয়ে পলক ফেলাটাও যেন ভুলে গেলো।
সিন্থিয়া পাশ থেকে বললো,
-“মেয়েটা সুন্দর না, বল?”
শান আনমনেই বললো,
-“চন্দ্রকন্যা দেখতে সুন্দরই হয়।”
সিন্থিয়া খিলখিল করে হেসে উঠলো।বললো,
-“আয় হায়! দি গ্রেট ইনজামুল শাফায়াত শানের কি লাভ এ্যাট ফার্স্ট সাইট হয়ে গেলো?”
সিন্থিয়ার কথায় ঘোর কাটলো শানের। কি থেকে কি বলে ফেললো ভেবে থতমত খেয়ে গেলো সে। তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে কপাল কুঁচকে আমতাআমতা করে উত্তর দিলো ,
-” লাভ না ছাই। ফালতু কথা বলিস না, সিন্থু। আর এখন আমাকে একদম জ্বালাবি না বলে দিচ্ছি।”
সিটে বসতে বসতে বললো শান। মুখে এসব বললেও মনের মধ্যে উথালপাথাল শুরু হয়ে গেছে ততক্ষনে। শানের নিজের উপরই রাগ হচ্ছে। কেন যে সিন্থিয়ার কথায় মেয়েটাকে দেখতে গেল। শান মনে মনে নিজেই নিজেকে বললো,
-“নো শান নো। এসব প্রেম পিরিতি কিচ্ছু না। একদম ওসব ভাববি না। ”
নিজ মনে নিজেকে কিছুক্ষণ শাসালো শান। তারপর চোখ বন্ধ করে সিটে হেলান দিলো।
কি যন্ত্রণা!মেয়েটার মুখ চোখের পাতায়ও ভেসে উঠছে। সিন্থিয়ার জন্যই এমন হচ্ছে ভেবে সাথে সাথে চোখ খুলে রাগী দৃষ্টিতে পাশে বসা সিন্থিয়ার দিকে তাকালো শান।
কিন্তু একি! সিন্থিয়া সিটে নেই। উঁকি ঝুঁকি মেরে দেখলো সিন্থিয়া তার চন্দ্রকন্যার পাশের সিটে গিয়ে বসেছে।
বাসে তিন চারজন না উঠায় সিটগুলো ফাঁকা থেকে গেছে। মেয়েটার পাশের সিটের লোকটাও আসেনি তাই সেই সিটটাও ফাঁকা পড়ে আছে।
বিথী, প্রান্ত আর তিহান ও তাকালো সিন্থিয়ার দিকে। কি সুন্দর গল্প শুরু করে দিয়েছে মেয়েটার সাথে। তিনজনই মেয়েটাকে একপলক দেখলো। তিহান শানের দিকে তাকিয়ে বললো,
-” মেয়েটা কি সিন্থুর পরিচিত?”
শান মুখ বাঁকিয়ে উত্তর দিলো,
-“আরে নাহ। মেয়েটাকে দেখে ক্রাশ খাইছে সে।”
শানের কথায় তিনজনই হো হো করে হেঁসে উঠলো।
..
-“হেই, আমি সিন্থিয়া। তোমাকে আমার দারুন লেগেছে। গল্প করবে আমার সাথে?”
রুমঝুম আগেই বুঝেছে মেয়েটা বেশ কথা বলতে জানে। অবশ্য রুমঝুমও খুব একটা শান্ত মেয়ে নয়। পরিস্থিতির চাপে এখন শান্ত হয়ে আছে সে।
রুমঝুম মুচকি হেঁসে বললো,
-“করবো না কেন? তুমি গল্প শুরু করো।”
কান খাঁড়া করে রাখায় রুমঝুমের কন্ঠস্বর শানের কান অবধি পৌঁছে গেলো।কি সুন্দর রিনরিনে কন্ঠে কথা বলছে মেয়েটা। তাতে তার কি? আজব তো। একটা মেয়ের কন্ঠ শুনে এতো খুশি হওয়ার তো কিছু নেই। শান নিজে নিজেকে ধমকিয়ে কালে ইয়ারফোন গুজে নিলো। শানের এসব কাজকর্ম প্রান্ত লক্ষ্য করলো। সে ভাবছে, ছেলেটার মাথার তার ছিড়লো কখন?
সিন্থিয়া রুমঝুমের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো,
-“আচ্ছা তোমার নাম কি?”
-“আশফিয়া জান্নাত রুমঝুম। ”
-“ওয়াও, দারুন নাম তো তোমার। আচ্ছা তুমি চট্টগ্রামে কোথায় যাচ্ছো?”
রুমঝুম কোনো উত্তর দিতে পারলো না। কি বলবে ও? মেয়েটা নিশ্চয়ই এরপর জিজ্ঞাসা করবে,ও কেন যাচ্ছে? বাড়ি থাকছে না কেন? এসবের কি উত্তর দেবে ও? আজ নিজেকে বড্ড অসহায় মনে হচ্ছে।

-“তোমার মেয়ে আমাদের নাক-কান কেটে পালিয়ে গেছে আর তুমি? ওকে খোঁজার কোনো চেষ্টাই করছো না? ওকে খুঁজে এনে হাত-পা কেটে ঘরে বসিয়ে না রাখা অবধি শান্তি হচ্ছে না আমার।”
-“তোমার দায়িত্বে রেখেই তো আমি ব্যাবসার কাজটা দেখতে মোংলা গিয়েছিলাম। তুমি তাড়াহুড়ো করে আমার অনুপস্থিতিতে ওকে জোড় করে বিয়ে দিতে গিয়েছিলে । তাও আবার ওইরকম একটা লোকের সাথে। এখানে ও পালিয়ে গিয়ে ভুল কি করেছে?”
রাগে ফুঁসে উঠলো তাহমিনা বেগম। চোখ গরম করে তাকিয়ে আছে রেজাউল তালুকদারের দিকে। মেয়ে পালানোর পর জরুরি তলব করে এনেছেন স্বামীকে। সে এসে পৌঁছেছে রাত দশটায়। এখন মেয়েকে খুঁজে শাস্তি দেবে তা না করে মেয়ের কাজে সায় দিচ্ছে।
তাহমিনার রাগকে আরো কয়েক ডিগ্রি বাড়াতেই যেন তার সামনে দেখা দিলো রুশান। রুশানকে দেখেই বাজখাঁই গলাই তাহমিনা বেগম বলে উঠলেন,
-“এই ছেলের জন্যই ওই মেয়ে পালাতে পেরেছে। আমি খুব ভালো করে জানি ওকে পালানোর জন্য এই হারামজাদা উষ্কানি দিয়েছে। ইচ্ছে করছে এটাকে ধরে…”
আর কিছু বলতে পারলেন না তাহমিনা বেগম।রুশান আগুনে কেরোসিন ঢালার মতন করে প্রশ্ন করলো,
-“কি ইচ্ছে করছে আম্মা?”
তাহমিনা তেড়ে যাচ্ছিলো রুশানের দিকে। রেজাউল সাহেব তাকে থামিয়ে দিলেন। শান্ত কন্ঠে বললেন,
-“এসব নিয়ে আর কোনো ঝামেলা করো না তাহু। আমি দেখছি ব্যাপারটা।”
তাহমিনা বেগম স্বামীর দিকে একপলক তাকিয়ে ফুঁসতে ফুঁসতে নিজের ঘরে চলে গেলেন।রুশানও নিজের রুমে চলে গেলো। রেজাউল সাহেব সোফায় বসে পড়লেন। মেয়েটার জন্মের পর থেকেই ওর সাথে অন্যায় করে চলছে তারা‌। এবার অন্তত মেয়েটাকে নিজের মতো বাঁচতে দেওয়া উচিত।
রেজাউল সাহেব ধীরগতিতে বাড়ি থেকে বের হলো। মাথার উপর বিস্তির্ণ আকাশ। আকাশের মাঝবরাবর উজ্জ্বল একটা তারা দেখা যাচ্ছে। সেদিকে তাকিয়ে অপরাধী কন্ঠে রেজাউল সাহেব বললো,
-“আমাকে ক্ষমা করে দিও, রেহনুমা। আমাদের মেয়েটাকে আমি সুস্থ, স্বাভাবিক, সুন্দর একটা জীবন দিতে পারিনি।”

বাস চট্টগ্রামে এসে পৌঁছালো প্রায় ভোরের দিকে। ভোরের আলো তখনও ফোঁটে নি। একে একে সবাই নেমে পড়েছে বাস থেকে।
বাস যেখানে থেমেছে সেখান থেকে কিছুটা দূরে গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছে শানের বাবার পাঠানো ড্রাইভার। শান‌ আগেভাগে নেমে সবার ব্যাগ নিয়ে গাড়িতে তুলছে। বাকিরাও‌ নেমে পড়েছে। শান ব্যাগ নেওয়ার ফাঁকে ফাঁকে আশেপাশে দেখছে তার চন্দ্রকন্যা নেমেছে কি না। কিন্তু নাহ,তার দেখা পাওয়া যাচ্ছে না।
বাস থেকে সবার শেষে সিন্থিয়া নামছিলো। নামার সময় দেখলো‌ ড্রাইভার কেমন লোলুপ দৃষ্টিতে বাসের পেছন দিকে তাকিয়ে আছে। সিন্থিয়া মাথা ঘুরিয়ে দেখলো রুমঝুম এখনো সিটে গা এলিয়ে ঘুমিয়ে আছে। মেয়েটা ওকে বলেছিলো সে দুইরাত ঘুমায়নি। তাই ওকে ঘুমাতে দিয়ে সিন্থিয়া উঠে এসেছিলো। সিন্থিয়া বাসের দরজায় দাঁড়িয়েই জোরে রুমঝুমের নাম ধরে ডেকে উঠলো।
ধড়পড়িয়ে উঠলো রুমঝুম। উঠে দেখলো পুরো বাস ফাঁকা। ড্রাইভার, কন্ট্রাকটর সবাই সিন্থিয়ার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। রুমঝুম সেদিকে তোয়াক্কা না করে বললো,
-“আমরা কি চলে এসেছি?”
-“হ্যাঁ,নেমে এসো।”
রুমঝুম ব্যাগ নিয়ে সিট থেকে বের হচ্ছিলো। তখন হেল্পার ছেলেটি সিন্থিয়াকে বললো, -“আপা,সরেন।আমি নামমু।”
সিন্থিয়ার সামনেই ছেলেটা দাঁড়ানো। অগত্যা সিন্থিয়াকে নিচে নেমে দাঁড়াতে হলো। সাথে সাথেই সাঁই সাঁই করে চলে গেলো বাসটি। বাসের ভেতর থেকে রিনরিনে চিকন কন্ঠে হালকা চিৎকার ভেসে এলো।
-“বাস থামান,বাস থামান।আমি নামবো।”
সিন্থিয়া কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না। সে মেয়েটাকে বাঁচাতে পারলো না। তখনই পেছন থেকে শানের কন্ঠ ভেসে এলো। সিন্থিয়া সঙ্গে সঙ্গে চিৎকার করে বলে উঠলো,
-“ওই বাসের মধ্যে রুমঝুম রয়েছে, শান। পশুগুলো ওকে নিয়ে গেছে রে। আমি বাঁচাতে পারিনি মেয়েটাকে।”
সিন্থিয়ার হঠাৎ চিৎকার করে বলা কথাগুলো শান প্রথমে বুঝতে পারলো না। শান‌ হতভম্বের মতো প্রশ্ন করলো,
-“কে রুমঝুম? কোন মেয়েটা? কে নিয়ে গেছে? কোথায় নিয়ে গেছে?”
সিন্থিয়া অতিরিক্ত উত্তেজিত হয়ে গেছে বিধায় কথা বলতে পারছে না। সে শুধু হাঁসফাঁস করছে আর আঙুল দিয়ে যেদিকে বাস গেছে সেদিকে ইশারা করছে । শান সিন্থিয়ার অবস্থা বুঝতে পেরে ওর কাছে এসে বললো,
-“রিল্যাক্স সিন্থু। ঠিক মতো বল‌ কি হয়েছে। ঠিক মতো না বললে আমি বুঝবো কিভাবে?”
সিন্থিয়া আচমকা কেঁদে দিলো। একটু সময়েই মেয়েটার প্রতি ভীষণ টান জন্মে গেছে ওর। মেয়েটার জন্য অতিরিক্ত ভয় পেয়েই এমন উত্তেজিত হয়ে পড়েছে। তবুও নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে বললো,
-“বাসে যে মেয়েটাকে দেখিয়েছিলাম না তোকে? ও.. ওই মেয়েটাই রুমঝুম। ওকে ওই বাসের ড্রাইভার, কন্ট্রাকটর মিলে কোথায় নিয়ে গেলো ওদিকে। আমি ওকে বাঁচাতে পারলাম না শান।”
কথাগুলো বলে আবারও ডুকরে কেঁদে উঠলো সিন্থিয়া।
সিন্থিয়ার কথা মস্তিষ্ক অবধি পৌঁছানো মাত্রই স্তব্ধ হয়ে গেলো শান। ওই মেয়েটা রুমঝুম মানে তার চন্দ্রকন্যার নাম রুমঝুম। মেয়েটা বাসের মধ্যে একা। মূহুর্তেই সতর্ক হয়ে উঠেলো শান। পাঁচ বন্ধুর মধ্যে বুদ্ধিতে শানই এগিয়ে। সে সবকিছুতে ভেঙে পড়ে না বরং মোকাবেলা করতে পছন্দ করে।শান কিছু একটা ভেবে বললো,
-“আই থিংক, আমি জানি ওরা মেয়েটাকে নিয়ে কোথায় যেতে পারে।”
সিন্থিয়ার হাত ধরে তড়িৎ গতিতে ছুটে গিয়ে গাড়িতে বসলো দুইজন। বাকিরাও হুড়মুড় করে ঢুকে পড়লো। ওরা তিনজন ঘটনার কিছুই বুঝতে পারছে না। সবটাই ওদের মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।
শান ড্রাইভারকে উদ্দেশ্য করে বললো,
-“চাচা আপনি বাড়ি যান। বাবাকে বলবেন আমার ফিরতে একটু দেরী হবে।”
বলেই হাওয়ায় বেগে গাড়ি চালানো শুরু করে দিলো শান।
বিথী প্রান্তকে বললো,
-“কি হচ্ছে রে? কিছু বুঝতেছিস?”
প্রান্ত ঠোঁট উল্টে ডানে বায়ে মাথা নাড়িয়ে না বোঝালো অর্থাৎ সে কিছু বুঝতেছে না। তিহানের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করার আগেই সে জবাব দিলো,
-“আমিও কিছু জানিনা।”
অগত্যা বিথীর সিন্থিয়াকে প্রশ্ন করা লাগলো। সিন্থিয়া ওদেরকে শর্টকাটে সবটা বললো।
সাথে সাথেই প্রান্তের চোখ মুখ লাল হয়ে উঠলো। মনে পড়লো কিছু বিভৎস স্মৃতি। মুখ দিয়ে বিরবির করে উচ্চারণ করলো,
-“কুত্তার বাচ্চা গুলারে হাতের নাগালে পাইলে জ্যান্ত দাফন কইরা ফালাবো ।”
বিথীর কানে প্রান্তের বিরবির করে বলা কথা পুরোটাই পৌঁছেছে। মূহুর্তের মাঝে বিথীর মনটাও বিষাদে ঢেকে গেলো। এমন একটা ঘটনায় তো প্রান্তের জীবনটাও থমকে গিয়েছিলো। প্রানপ্রিয় ছোটবো….
বিথী আরো কিছু ভাবার আগেই ব্রেক কষলো শান। সামনেই সেই বাসটা দাঁড়ানো। পাঁচ জনই গাড়ি থেকে নেমে দ্রুত পা চালালো সেদিকে। বাসের দরজা খোলা। তিহান‌ গাড়ির মধ্যে উঁকি মেরে বললো,
-“ভেতরে কেউ নেই।”
সিন্থিয়া এবার আশেপাশে নজর দিলো। জায়গাটা জঙ্গল ধরনের। ভোরের আলো ফুটলেও এখানটা বেশ অন্ধকার।একজনকে মেরে ফেলে রেখে গেলেও কেউ টের পাবে না। আশেপাশে মানুষের অস্তিত্ব নেই বললেই চলে।
শান নিজের জায়গাতে অনড় দাঁড়িয়ে আছে। কোথায় খুঁজবে এখন‌ চন্দ্রকন্যাকে?
হঠাৎ প্রান্ত চেঁচিয়ে বললো,
-“শান‌, এদিকে আয়।”
শানের আগেই দৌড়ে গেলো‌ সিন্থিয়া। রুমঝুমের সাদা ওড়নাটা সেখানে ফেলানো। সিন্থিয়া সেটাকে হাতে তুলে নিলো। শান বললো,
-“ওরা এখানেই আছে। আশেপাশে খোঁজ। কুইক।”
শান খুব চেপে চেপে পা ফেলছে। ওর মনে হচ্ছে আশেপাশে কেউ আছে। হঠাৎ করেই ওর মনে হলো বাম সাইডের বাঁশঝাড়ের পেছন থেকে চাপা গোঙানির আওয়াজ আসছে। প্রায় বিশ হাত দূরে থাকা প্রান্তকে ইশারায় ডাকলো শান।
ড্রাইভার লোকটা রুমঝুমের পেটের উপর বসে মুখ চেপে ধরে রেখেছে। হেল্পার ছেলেটা রুমঝুমের দুইপা ধরে রেখেছে আর কন্ট্রাকটর দুই হাত ধরে রেখেছে। আর কিছুক্ষণ গেলে রুমঝুম শ্বাসরোধ হয়ে মারা যাবে এমন উপক্রম হয়েছে তার। ভয়ে রুমঝুমের অর্ধেক জীবন বেরিয়ে গেছে। দুচোখ দিয়ে পানি পড়ছে অনবরত।
আচমকাই দুপাশ থেকে প্রান্ত আর শান‌ এসে কন্ট্রাকটর আর হেল্পার ছেলেটির মাথায় মোটা লাঠি দিয়ে আঘাত করলো । দুজনেই রুমঝুমকে ছেড়ে দিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। ড্রাইভার ওদের দেখে ভয়ে রুমঝুমকে ছেড়ে পালাতে গেলে দুজনেই ধরে ফেললো তাকে। প্রান্ত ইচ্ছে মতো‌ গালি দিচ্ছে আর কিল ঘুষি মারছে ড্রাইভার বেটাকে।
-“শালা,মেয়ে দেখলেই পুরুষত্ব জেগে ওঠে? ঘরে বউ নেই তোর? নিজের মেয়ের বয়সী মেয়েদের পেছনে পরিস। তোদের মতো নরপশুর জন্য কত পরিবার অকালে মরে জানিস? জানবি না তো। জানবি কিভাবে? তাদের তো আত্মার মরন হয়। মরন হয় হাসি খুশি আর আনন্দের। এসবের মৃত্যু দেখা যায় না তো জানবি কিভাবে।”
প্রান্ত এসব বলছে আর নিজের শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে মারছে ড্রাইভারকে। ড্রাইভার লোকটা প্রান্তের মার খেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। তার আর বিন্দুমাত্র নড়ার শক্তি নেই।
ততক্ষণে তিহান,বিথী আর সিন্থিয়া অনেকগুলো দড়ি নিয়ে চলে এসেছে।সিন্থিয়া রুমঝুমকে দেখেই দৌড়ে গেলো ওর কাছে। সাদা ওড়নাটা‌ জড়িয়ে দিলো রুমঝুমের গায়ে। রুমঝুম চুপচাপ বসে আছে। ওর চোখের পলকও পড়ছে না। জীবনের এতো চড়াই উৎরাই বারবার ওকেই কেন পার হতে হচ্ছে?
সিন্থিয়া রুমঝুমের ভাবান্তর না দেখে ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। রুমঝুম তবুও কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালো না।
প্রান্ত শান্ত কন্ঠে সিন্থিয়া আর বিথীকে উদ্দেশ্য করে বললো,
-“মেয়েটাকে নিয়ে যা এখান‌ থেকে। তিনজনই গাড়িতে বস গিয়ে। আমরা আসছি।”
বিথী আর সিন্থিয়া বিনা বাক্যব্যয়ে রুমঝুমকে উঠিয়ে নিয়ে গাড়ির দিকে চলে গেলো। শান শান্ত দৃষ্টিতে দেখছে রুমঝুমের হেঁটে যাওয়া। অতিরিক্ত ভয়ে মেয়েটা চুপসে গেছে। কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে না ওর মধ্যে।
ওরা তিনজন চোখের আড়াল হতেই প্রান্ত আবার লাথি মারলো ড্রাইভারের মুখ বরাবর।এরপর তিনজনের সমস্ত শরীরের জামাকাপড় খুলে ফেললো। তিনজনের প্যান্ট দিয়ে তিনজনের মুখ বেঁধে দিলো। ওদের দিকে তাকাতেও ঘৃনা লাগছে তিহান‌ আর শানের। তবে প্রান্তের জন্য এগুলো করতেই হচ্ছে। প্রান্ত ওদের উচিত শাস্তি না দিয়ে এখান থেকে চুল পরিমানও নড়বে না।
কন্ট্রাকটর এর দেহটা টেনে নেওয়ার সময় শানের চোখ পড়লো একটা দুলের দিকে। এখানেই রুমঝুম পড়ে ছিলো। শান দুলটা তুলে নিলো। মূহুর্তেই শরীরের রক্ত টগবগ করে ফুটে উঠলো। আজ ওরা খুঁজে না পেলে‌ কি হতো তার চন্দ্রকন্যার। শান সজোরে লাথি মারলো কন্ট্রাকটর লোকটিকে। লোকটা কিছুটা কঁকিয়ে উঠে আবারো চুপ হয়ে গেলো।
ওই লোক তিনটিকে একটা মোটা গাছের সাথে বিবস্ত্র করে মোটা দড়ি দিয়ে বেঁধে ফেললো প্রান্ত,তিহান আর শান। তিনজনেরই মুখ আর‌ পা ও বাঁধা। তাদের মোবাইল সহ যাবতীয় সবকিছু ইট দিয়ে থেতলে মাটিতে পুঁতে ফেললো । সমস্ত‌ কাজ শেষে তিনজনের গায়েই থুতু ছিটিয়ে দিলো তিহান। কি জঘন্য লোক এরা। ছিঃ।
চলে যেতে যেতে প্রান্ত বললো,
-“যদি‌ কেউ বাঁচাতে আসে তো বাঁচিস নাহলে এখানেই পঁচে মরিস অমানুষ গুলা।”
তিনজনই অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো তাদের যাওয়ার দিকে।এই জঙ্গলে ওদের তিনজনকে বাঁচাতে কেউই আসবে না সেটা তারা জানে। তবে কি তাদের পাপের মাসুল গোনার সময় হয়ে গেছে? পাপের ঘড়া বোধহয় পূর্ণ হয়েছে এবার।
শান আর তিহান গাড়িতে উঠে বসলো। প্রান্ত গিয়ে বসলো বাসের ড্রাইভিং সিটে।
রুমঝুমকে জড়িয়ে ধরে বসে আছে সিন্থিয়া আর বিথী । শান একনজর সেদিকে তাকালো। ভয়ে মেয়েটার চোখমুখে শুকিয়ে আছে।
শান‌ গাড়ি হাইওয়েতে নিয়ে গেলো। পেছনে প্রান্ত বাস চালিয়ে আসছে। সকাল সাড়ে আটটা বেজে গেছে ইতিমধ্যে। হাইওয়ে বেশ নির্জন আছে এখনো । প্রান্ত সুযোগ বুঝে গাড়িটাকে একটা গাছের সাথে সংঘর্ষ করিয়ে দিলো যাতে সবাই বুঝতে পারে যে গাড়ির বেহাল দশার জন্য ড্রাইভার সহ বাকি দুজন পালিয়েছে। গাড়ির সামনের কাঁচও ভেঙে দিলো।
সবকিছু প্লান অনুযায়ী সুন্দর মতো গুছিয়ে টুপ করে গাড়িতে গিয়ে বসলো। শান আর তিহান হেঁসে উঠলো ওকে দেখে।
সিন্থিয়া বললো,
-“এখন কোথায় যাবো আমরা?”
-“কোথায় মানে? আমার বাড়িতে।”
শান সোজাসাপ্টা জবাব দিলো।
বিথী বললো,
-” কিন্তু আংকেল আন্টিকে কি বলবি যদি রুমঝুমের কথা জিজ্ঞাসা করে? মেয়েটাকে তো এখন‌ একা একা ছেড়ে দেওয়া যাবে না।”
সিন্থিয়া বললো,
-“আমার ফ্লাটে চল। ওখানে সমস্যা হবে না।”
শান মাথা নাড়িয়ে সিন্থিয়ার ফ্ল্যাটের দিকে গাড়ি চালানো শুরু করলো।
পঁয়ত্রিশ মিনিটের মধ্যে ওরা সিন্থিয়ার ফ্লাটে চলে এলো। সিন্থিয়া শান,তিহান‌ আর প্রান্তকে সোফায় বসতে দিয়ে বিথীর সাহায্য নিয়ে রুমঝুমকে বেডরুমে নিয়ে গেলো। আসার সময় প্রান্ত রুমঝুমের ব্যাগটা বাস থেকে নিয়ে এসেছিলো। বিথী রুমঝুমকে ওখান থেকে একটা জামা বের করে দিয়ে বললো ,
-“ওয়াশরুম থেকে চেন্জ করে আসো।”
রুমঝুম প্রায় পনেরো মিনিট সময় নিয়ে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এলো। বিছানায় সিন্থিয়া বসে আছে পাউরুটি,কলা আর দুধ নিয়ে। একটা বাটিতে আপেলও কাঁটা আছে। রুমঝুম দৌড়ে গিয়ে মেঝেতে বসে সিন্থিয়ার কোলে মাথা রেখে কান্না করে দিলো। কাঁদতে কাঁদতে বললো,
-” আজ তুমি আমার অনেক বড় উপকার করলে সিন্থিয়া আপু। তুমি না থাকলে আজ আমার সাথে কি কি হতো আমি কল্পনাও করতে পারছি না।আমি তোমার‌ কাছে আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবো আপু।”
সিন্থিয়া রুমঝুমকে টেনে তুললো। দুহাত দিয়ে চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বললো,
-“পাগলী মেয়ে। আপু ডাকছো আবার কৃতজ্ঞ থাকবা বলছো? ”
রুমঝুম মাথা নিচু করে ফেললো। সিন্থিয়া ওর দিকে খাবারের ট্রে টা এগিয়ে দিয়ে বললো ,
-“এগুলো সব শেষ করো। এর চেয়ে বেশি কিছু আমার বাড়িতে নেই।”
খাবার দেখে রুমঝুমের পেটের মধ্যে মোচড় দিয়ে উঠলো। কাল বিকেল থেকেই না খাওয়া সে। চুপচাপ খেয়ে নিলো সবটা। খাওয়া শেষ করতেই মেঘার কল এলো ফোনে। রুমঝুম রিসিভ করতেই মেঘা বললো,
-“কোথায় তুই? দশ মিনিট যাবৎ খুঁজেই যাচ্ছি।”
-“আরেকটু অপেক্ষা কর প্লিজ। আমি আসছি। এসে সবটা বলবো।”
-” আচ্ছা ঠিক আছে।”
রুমঝুম কল কেটে সিন্থিয়াকে বললো,
-“এখান থেকে বাসস্ট্যান্ড কতদূরে, আপু?
-“এই ধরো, আঠারো-বিশ মিনিটের রাস্তা।কেন?”
-“আমার বান্ধবী ওখানে অপেক্ষা করছে আমার জন্য। আমাকে যেতে হবে।”
সিন্থিয়ার মুখটা মলিন হয়ে উঠলো। মেয়েটাকে ছাড়তে ইচ্ছে করছে না। যদি আবার কোনো বিপদ হয়? সিন্থিয়া বেশ সিরিয়াস হয়ে বললো,
-“রুমঝুম,চলার পথে খুব শক্ত হতে হয় । একটুতে দূর্বল হলে চলবে না। সবসময় বিপরীত দিকে যে থাকবে তার সাথে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চালিয়ে যেতে হয়। বুঝেছো?”
রুমঝুম কিছু না বুঝলেও মাথা নাড়ালো মানে সে বুঝেছে। সিন্থিয়া মুচকি হেঁসে ওকে নিয়ে ড্রয়িং রুমে এলো। শান আড়চোখে তাকালো রুমঝুমের দিকে। ধূসর রঙের একটা থ্রিপিস পড়েছে রুমঝুম। বেশ স্নিগ্ধ আর সতেজ লাগছে দেখতে এখন।
শানের ঘোর কাটলো সিন্থিয়ার কথায়।
-“ওর বান্ধবী বাসস্ট্যান্ডে অপেক্ষা করছে,শান। ওকে একটু ওখানে নামিয়ে দিয়ে আয়।”
শান মনে মনে বেশ খূশি হলেও‌ প্রকাশ করলো না। মুখে বিরক্তি ভাব এনে বললো,
-“ঠিক আছে, বের হতে বল।”
বলেই হনহন করে বেরিয়ে গেলো। রুমঝুমের কেন জানি এই ব্যাপারটা খারাপ লাগলো। লোকটা এমন‌ কেন?
রুমঝুম ইতস্তত করে সবার দিকে তাকালো।সবাই তার দিকেই তাকিয়ে আছে। রুমঝুম চোখ নামিয়ে নিয়ে বললো,
-“আপনারা আমার অনেক বড় উপকার করেছেন। আপনাদের সবাইকে অনেক ধন্যবাদ। আমি সত্যিই আপনাদের কাছে চির কৃতজ্ঞ থাকব।”
তিহান‌ বলে উঠলো,
-“ধন্যবাদ না ট্রিট চাই।”
তিহানের কথায় হেঁসে উঠলো সবাই। রুমঝুম সবার থেকে বিদায় নিয়ে ব্যাগ উঠিয়ে বের হতে গিয়ে বাঁধলো আরেক বিপত্তি। ব্যাগের কোনায় পা বেঁধে উপুড় হয়ে পড়ে যেতে লাগলো। তবে পড়ার আগেই প্রান্ত এসে ধরে ফেললো। প্রান্ত ধরায় রুমঝুমের অস্বস্তি লাগা শুরু হলো। প্রান্ত সেটা বুঝতে পেরে রুমঝুমকে সোজা দাঁড় করিয়ে দিয়ে বললো,
-” খারাপ কিছু মনে করো না । তোমার মধ্যে নিজের ছোটবোনকে দেখেছি আমি। তুমি আমার ছোটবোনের মতো। তোমাকে বাজে উদ্দেশ্যে ধরিনি আমি বোন। শুধুমাত্র পড়ে যাচ্ছিলে বলে..”
রুমঝুমের মুখে হাঁসি ফুটে উঠলো। হেঁসেই বললো,
-“ইটস্ ওকে ভাইয়া। ধন্যবাদ আপনাকে। আসি তাহলে আমি।”
-“হুম,সাবধানে যেয়ো।”
রুমঝুম সবার দিকে একনজর তাকিয়ে বেরিয়ে গেলো ফ্ল্যাট থেকে। সিন্থিয়া রুমঝুমের যাওয়ার পথে তাকিয়ে বললো,
-“আল্লাহ, মেয়েটার সহায় হোন।”
————————————
-“দেখুন শাশুড়ি আম্মা, ঝুম কে আমার সাথে বিয়ে দেওয়ার কথা বলে অনেক কিছু হাতিয়েছেন আমার থেকে ।অথচ বিয়ের দিন মেয়ে নাই হয়ে গেছে। আপনি বলেছেন ওকে খুঁজে এনে দেবেন আর এখন বলছেন ও কোথায় আছে জানেন না? নাটক করার জায়গা পাচ্ছেন না আপনি?”
আরমান আহমেদের মৃদু চিৎকার করে বলা কথায় হালকা কেঁপে উঠলো তাহমিনা বেগম। তবে সেটা প্রকাশ করলেন না। গলায় যথেষ্ট তেজ ঢেলে বললেন,
-“আমি তোমাকে আগেই বলেছিলাম ওই মেয়ে সুবিধার না। তুমি বলেছিলে ও পালাতে পারবে না। তুমি নাকি ওর পালানোর রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছো। তাহলে এখন আমাকে এসব শুনাচ্ছো কেন?”
-“রাস্তা বন্ধ করেছিলাম তো। তবে আমি ঘুনাক্ষরেও বুঝতে পারিনি যে ও‌ দেয়াল টপকে পালাতে পারে।”
-“আমি তো‌ তোমাকে বলেই দিয়েছি ওই মেয়ে এখন‌ তোমার। ওকে খুঁজে এনে যা খুশি করো তুমি। আমরা কেউ দেখতেও যাবো না।”
আরমান ঈষৎ হাসলো। ফিসফিসিয়ে বললো,
-“এই কথাটা মাথায় থাকে যেন। আপনি আসবেন না আমি জানি তবে আপনার হাজবেন্ড আর ছেলেকে আটকানোর দায়িত্বটাও কিন্তু আমার। মনে রাখবেন, রুমঝুমকে আমার কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন আপনি।”
তাহমিনা বেগম শুকনো ঢোক গিললো। টাকার জন্য সে রুমঝুমকে বিক্রি করেছে এটা কেউ জানেনা। সবাই জানে বড়লোক ছেলে দেখে রুমঝুমকে জোড় করে বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। সত্যিটা সবাই জানলে তার কি হবে সেটা ভেবেই ঘাম ছুটে গেলো তার।
চলবে……….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here