পঞ্চভুজ তারা – Part 33

0
280

#পঞ্চভূজ_তারা!
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পার্টঃ৩৩
মিমকে নিজের সাথে আবদ্ধ করে রেখেছে মেরাজ।
আর মিম মেরাজের দিকে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করছে।
মেরাজের সেদিকে কোন ধ্যন নেই।
সে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে মিমের দিক।
-” কি সমস্যা এইভাবে ধরে রেখেছেন কেন আমাকে?”
মিমের রাগীগলায় বলা কথা শুনে মেরাজ হালকা হাসলো।
বললো,
-” তুমি সজীবকে কেন বিয়ে করছো?”
-” আমার ইচ্ছা আমি যাকে মন চায় বিয়ে করবো আপনার কি তাতে?”
মেরাজ রাগী চোখে তাকালো।
-” আমার কি সমস্যা? হ্যা! এতোদিন আমার পিছনে ঘুরঘুর করে অন্য কাউকে কিভাবে বিয়ে করতে পারবে তুমি?”
-” সেটাই ছিলো আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভূল।তাই তো সেই ভূল শুধরে নিচ্ছি।”
-” আমাকে ভালোবাসো নাহ?”
মেরাজের কথায় মিম অন্য দিকে তাকালো।
মেরাজ আবারো প্রশ্ন করে,
-” কি হলো বলো?”
মিম তাচ্ছিল্য করে হাসলো।
-” আমি আপনাকে ভালোবাসলাম কি ভালোবাসলাম না তাতে কি আপনার কিছু যায় আসে?”
-” সোজাভাবে উত্তর দিতে পারো নাহ?”
-” নাহ পারি নাহ এখন আমাকে ছাড়ুন।”
-” ছাড়বো নাহ কি করবে তুমি?আমার প্রশ্নের উত্তর দেও আগে।”
মিম মেরাজের কথায় রেগে প্রচন্ড জোড়ে চিৎকার করে বলে,
-” কি বলবো হ্যা? কি বলবো? কেন এমন করছেন আপনি?আমাকে কি এক দ্বন্ড শান্তিতে থাকতে দিবেন নাহ আপনি?কি চাইছেন টা কি আপনি?কি করবো আমি? মরে যাবো?কি করলে আপনি খুশি হবেন?আপনি তো বলেছেন আপনার থেকে দূরে থাকতে তাই তো করছি।সজীবকে বিয়ে করে সারাজীবন এর জন্যে আপনার থেকে দূরে সরে যাচ্ছি।
আপনি সুখে থাকেন নাহ।জুঁইকে বিয়ে করে আপনিও হ্যাপি হয়ে নিন।”
মেরাজ কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না।সত্যি ও অনেক বড় একটা ভূল করে ফেলেছে।কিন্তু ও মিম কে ছাড়া থাকতে পারবে না।সেটা ও ভালোভাবেই বুজতে পেরেছিলো।কারন সজীবের সাথে মিমকে দেখে ওর প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছিলো।সয্য করতে পারছিলো না ও।
কিন্তু জুঁইকে অন্য ছেলের সাথে দেখলে কেন এরকম কষ্ট লাগতো না ওর?তবে কি জুঁইয়ের প্রতি ওর শুধু মোহ ছিলো।
আর মিমকে
ও ভালোবাসে।হ্যা ভালোবাসে সে মিমকে
তাই তো মিমকে অন্যকারো সাথে দেখে ওর সয্য হচ্ছিলো নাহ।
কথাগুলো ভাবতেই মিমকে নিজের সাথে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে।এতে মিম যেন আরো ক্ষেপে যায় মেরাজকে জোড়ে ধাক্কাতে লাগে।
কিন্তু মেরাজ নাছোড় বান্দা মিমকে ছাড়াবেই না।
ভালোবাসার মানুষটাকে কিভাবেই বা ছেড়ে দেবে।
একবার ভূল করেছে দ্বিতীয়বার আর ও ভূল করতে চায় নাহ।
-“প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দেও।আর রাগ করে থেকো নাহ।”
-” হাহ্ ক্ষমা তো তাকে করে যে ভূল করে।আপনি তো কোন ভূল করেননি!ভূল করেছি আমি আপনাকে ভালোবাসে।তার মুল্য এখন আমাকে হারে হারে দিতে হচ্ছে।আর রাগ? সেতো আপন মানুষদের উপর করে।
আপনি আদৌ আমার কিছু হোন?” কথাগুলো অভীমানে স্বরে বলে মিম।
মেরাজ ওর কথা শুনে বুজতে পারছে বড্ড ভূল করে ফেলেছে ও। এইবার রাগ ভাঙানো অনেক কঠিণ।
-” প্লিজ মিম আ’ম সরি আ’ম সরি।
আমি বুজতে পারিনি।সরি আমি আর কখনো তোমাকে কষ্ট দিবো নাহ।প্লিজ ডোন্ট ডু দিস টু মি।” চাপা আর্তনাদ মেরাজ এর স্বরে।
-” কেন কষ্ট দিবেন না।আর কষ্ট দিবেনই বা কিভাবে আমি তো থাকবোই নাহ!”
মিম এর এই কথায় মেরাজ রেগে ওকে আরো জোড়ে জড়িয়ে ধরে বলে,
-” সাট আপ ইউ ইডিয়ট! কোথায় যাবে তুমি কোথাও যাবে নাহ।”
-” আমাকে আস্তে ধরুন দম আটকে আসছে।”
-” নাহ ছাড়বো নাহ।”
-“কেন?”
-“কারন আ..আমি তো..তোমাকে ভালোবাসি।ইয়েস আই লাভ ইউ। এন্ড আই কান্ট লিভ উইথ-আউট ইউ।”
ব্যাস মিম এর যতো রাগ অভীমান গলে গেলো মেরাজের মুখে আই লাভ ইউ কথাটা শুনে।সারা শরীর জুড়ে ঠান্ডা শীতল বাতাস যেন ছুয়ে গেলো।
হৃদয়ের আকাশে ভালোবাসার প্রজাপ্রতিরা ডানা মেলে উড়তে লাগলো।
রঙিন স্বপ্নগুলো রংধনুর ন্যায় জেগে উঠলো।
মিম নিজের আবেগ ধরে রাখতে না পেরে হুহু করে কেঁদে উঠালো।
মেরাজ ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে আস্তে করে বলে,
-” হুসস! কান্না করো নাহ প্লিজ।তোমাকে আর কাঁদতে দেবো নাহ।আই প্রমিস প্লিজ ডোন্ট ক্রাই।”
মিম কাঁদতে কাঁদতেই বলে,
-” আপনি খুব খারাপ আমাকে এতো কষ্ট কেন দিলেন?সেই প্রথম থেকে আপনাকে ভালোবাসি।”
-” আমাকে মাফ করে দেও।”
– করবো নাহ।”
-কেন?”
-“দেখেন আপনি কতো জোড়ে থাপ্পর মেরেছিলেন। এখনো আপনার নখের আচঁড়ের দাগ আছে।” মিম নিজের গাল এগিয়ে দিয়ে বলে।
মেরাজ হুট করে মিমের গালে শব্দ করে চুমু খেয়ে বসে।
-” নাউজুবিল্লাহ্!!! আহহহহহহ্ আমি কিছু দেখিনি আমি কিছু দেখিনি।”
আকস্মিক কারো গলার আওয়াজ পেয়ে দেখে সাদু চোখে হাত দিয়ে আছে।
মিম তো পারেনাহ লজ্জায় মাটি ফাক করে ডুকে যেতে।
মিম মেরাজকে ‘অসভ্য’ বলে দৌড়ে চলে গেলো।
বাহিরে এসে দেখে সাদু ওর দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে।
কিছুক্ষন পর মেরাজ ও মাথা চুলকাতে চুলকাতে ওদের সামনে এলো।
ততোক্ষনে সবাই এসে হাজির।
সাদুকে এরকম করে তাকিয়ে থাকতে দেখে আলিশা ওকে খোচা মেরে বলে,
-” কিরে ফকিন্নি! কিচ্ছে?এমন করে তাকিয়ে আছিস কেন?”
সাদু চোখ বড় বড় করেই বলে,
-” দোস্ত মিম আর মেরাজ ভাই নাউজুবিল্লাহ করেছে।”
-” ওই ছেরি এগ্লা কি কছ?” নূর চোখ ছোট ছোট করে বলে।
-” নূর তোমার আর সাদু’র এই উট্ভব ল্যাংগুয়েজ বলা ওফ করো।”
নূর রাগি চোখে তাকালো।
-” আপনার কিচ্ছে?আপনি এমন করেন কেন?”
-” বিয়ের পর তোমাকে সোজা করবো।”
-” আপনাকে বিয়ে করবে কে?” মুখ ভেংচি কাটলো নূর।
-” তোমাকে আজ ছাড়ছি নাহ।কথায় কথায় মুখ ভেংচি মারো আর বার বার বলো আমায় বিয়ে করবে না।চলো আজ তোমাকে মুখ ভেংচি দেওয়া শিখিয়ে দেবো।” নূর কে টানতে টানতে নিয়ে যেতে যেতে বলে আফরান।
এদিকে নূর ছুটাছুটি করেও ছাড়া না পেয়ে।সবার উদ্দেশ্যে চিল্লিয়ে বলে,
-” আচ্ছা চাল তাহু দুয়াও ম্যে ইয়াদ রাখনা,🥺।”
এদিকে সবাই ওদের কান্ড দেখে হাসতে হাসতে শেষ।
-” আজ নূর শেষ।” মিমের কথায় সাদু বলে,
-” তুই কোথায় যাবি তুই নিজেও তো নাউজুবিল্লাহ্ করছিলি।”
-” সাদু এইসব কি ধরনের কথা বার্তা।ঠিক ঠাক ভাবে বলো।” মনিরের কথায় সাদু লাফিয়ে লাফিয়ে মনিরের কাঁছে গিয়ে ওর হাত ধরে বলতে লাগলো।”
-” জানেন আমি মিম আর মেরাজ..উম্মম্মম উম্মম্ম।”
সাদু কিছু বলার আগেই মিম সাদুর মুখ চেপে ধরলো।
তারপর জোড় পূর্বক হেসে বলে,
-” কিছু নাহ ভাইয়া ওর মাথায় সমস্যা সবাই জানে।
প্যারা নাই চিল।”
মিম সাদুকে ধরে রাখলো।
আর সাদুকে লাফাচ্ছে ছাড়া পাবার জন্যে।
-” ডিমের বাচ্চা ছাড় ওকে মেরে ফেলবি না-কি।” আলিফা বলে উঠে।
সাদু এক কামড় দিলো মিমের হাতে। মিম সাথে সাথে ওর মুখ ছেড়ে দিয়ে হাত ঝারতে ঝারতে বলে,
-” আগে রাক্ষসী এমনি বলতাম কিন্তু তুই সত্যি রাক্ষসী।”
-” হুহ্!” সাদু মুখ ভেংচি দিলো।
-” মুখ ভেংচি দেওয়া কি এদের বান্ধবিগতো অধিকার।”বিরবির করে বলে মনির।
এদিকে সাদুকে আলিফা জড়িয়ে ধরে মাখন মারছে,
-” বেবি আলুউউউ! ভাভুউউউউ আলাভুউউউউ!,😗!”
আলিফা চোখ ছোট ছোট করে বলে,
-” নিশ্চয়ই কোন আকাম করেছিস তাই আমার সাথে এতো খাতির।”
-” সর ফকিন্নি তুই আমার সাপোর্ট নিয়েছিলি তাই তো এতো আদর করছিলাম।”
-” ওহ আচ্ছা তাহলে আয় আর একটু আদর দে।”
-” আমাকে কেউ ভালুপাসে নাহ🥺।”আলিশা কাঁদো কাঁদো হয়ে বলে।
-” আয় তোকেও আদর দেই।ভাভুউউউউউ আলাভুউউ।😗।”সাদু টুকুস মরে একটা চুমু দিয়ে দিলো আলিশার গালে।
তারপর আবার বলে,
-” জানিস মিম কি করেছে?”
-“কি করেছে?” আলিফা বলে।
-” নাউজুবিল্লাহ করেছে।”
-” এইবার সত্যি কইতাছি তুই যদি আর একবার এই কথা বলছ তাইলে তোরে আমি এখনি এই মূহুর্তে৷ আমার জুতা দিয়ে বাইরাইয়া মুখের নকশা বদলায় দিমু।” রেগে বলে আলিশা।
মেরাজ কাদো কাদো হয়ে মনির কে বলে,
-” দোস্ত তোর বউ আমার মান সম্মান ডুবাবে!”
-“কেন আবার কি আকাম করেছিস?”
-” ওই আরকি মিমের সাথে সব সেটিংস হয়ে গিয়েছে।তাই সেদিন মিমের গালে থাপ্পর মেরেছি ওইখানে আবেগের ঠ্যালায় চুমু দিয়ে দিয়েছিলাম তোর বউ তা ঢোল পিটিয়ে সবাইকে বলে বেড়াচ্ছে।”
-” তো দরজা আটকাস নি কেন?”
-” মনে ছিলো নাহ।”
-” হ্যা তা মনে থাকবে কেন?চুমু খাওয়ার কথা মনে থাকবে।”
-” এখন তুই শুরু করে দিস নাহ।”
এদিকে সাদু বলছে,
-” মিম এতো খারাপ আমি আগে জানতাম নাহ।আমাদের না জানিয়ে এসব করে বেড়াচ্ছে তোরা বিশ্বাস ওই করবি নাহ।”
-” তুই বলবি কি করেছে?আমার মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে সাদ্দুনি।” রাগে চোখ মুখ লাল করে বলে আলিফা।
-” নাউজুবিল্লাহ কাজ করেছে🐸।”
-“সাদ্দুনির বাচ্চা তোকে আমরা খেয়ে ফেলবো।”রাগে চিৎকার করে বলে আলিফা আর আলিশা।
-“ভাগ সাদু ভাগ নাহলে এই দুই ডাইনিবতোকে কাচা গিলে খাবে।”
সাদু দৌড়ে গিয়ে মনিরের পিছে লুকালো।
মনির এই সুযোগে ওকে খপ করে ধরে বলে,
-” আসো তোমাকে নাউজুবিল্লাহ কাজ কাকে বলে দেখাচ্ছি চলো।”
-” নাহহহহহহ আমি যাবো নাহহহহ। প্লিজ আমাকে বাচাও কেউ।”
-” তোমাকে কেউ বাচাবে নাহ।”
-” শয়তান ব্যেটা তুই আমার দেহ পাবি কিন্তু মন পাবি নাহ।ছাড় বলছি।”
মনির চোখ ছোট ছোট করে তাকালো ওর দিক।
সাদু কি বলেছে বুজতে পেরে জিভ কাটলো।
মনির ওকে আবারো টানতে টানতে নিয়ে যেতে যেতে বলে,
-” চলো আজ তোমাকে বাংলা সিনেমার ডায়লগ বলা ভালো মতো শিখিয়ে দেবো।”
সাদু শত চেষ্টা করেও নিজেকে ছাডাতে না পেরে নূরের ডায়লগ ওই সবাইকে বলে,
-” আচ্ছা চাল তা ডুয়াও ম্যে ইয়াদ রাখনা।”
সবার হাসতে হাসতে অবস্থা খারাপ।
মনির ও মুখ টিপে টিপে হাসছে।
চলবে,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here