ভালবেসে রাখব কাছে – Part 27+28

0
425

#ভালবেসে রাখব কাছে
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ২৭+২৮
যখন জ্ঞান ফিরে তখন নিজেকে বউ সাজে সাদাফ ভাইয়ের রুমে আবিষ্কার করি।আমি হুরমুরিয়ে শোয়া থেকে উঠে বসি,আর সামনেই দেখতে পাই সাদাফ ভাই একটা চেয়ার নিয়ে বসে আছে।উনার দৃষ্টি আমাতেই আবদ্ধ,আমাকে উঠে বসতে দেখে উনি আমার কাছে এগিয়ে এসে পাশে বসে।
“এসবের মানে কী?আমি এখানে কেন?আর এই সাজেই বা কেন?”
“বউ সাজে না তোমাকে খুব হট লাগছে,ইস্ ইচ্ছে করছে বিয়ের আগেই বাসরটা সেরে ফেলি।”
“বাজে কথা না বলে যেটা জানতে চেয়েছি সেটা বলুন।”
“এখনও বুঝতে পারছো না সাবুপরি?”
“হেয়ালি না করে ভালোয় ভালোয় উওর দিন আমি এখানে আর এই সাজে কেন?”
“আজ ত আমাদের বিয়ে,আর বিয়ের দিন বউ ত বউ সাজেই থাকবে তাই না!”
“মানেহ?”
“এত মানে টানে বুঝাতে পারব না।এখন উঠো ত তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।”
“আবার কীসের সারপ্রাইজ?”
“চলো গেলেই দেখতে পাবে।”
“আমি যাব না আপনার সাথে।আর না আপনাকে বিয়ে করব আমি।আপনি ত আমাকে বিশ্বাসই করেন না ত আপনাকে বিয়ে করে লাভ নেই।”
“তুমি কী ভেবেছো তুমি না করলে আমি শুনব?মোটেও নয় আমি যখন বলেছি আজ আমাদের বিয়ে ত আজই আমাদের বিয়ে।”
কথাটা বলেই উনি আমাকে কোলে তুলে নেয়,আর বাড়ির বাইরে নিয়ে আসে আমাকে।আমি বাইরে এসে অবাকের চরম সীমানায়।বাগানটা খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে।আর সবচেয়ে অবাক করার বিষয় হল আমার পরিবার,সাদাফ ভাইয়ের পরিবার,মেঘ ভাইয়ার পরিবার আরো অনেকে এখানে উপস্থিত রয়েছে।তার মানে সবটা আগেই প্লান করা ছিল?আমাদের এভাবে আসতে দেখে সবাই হা করে তাকিয়ে আছে।আমিও লজ্জার মাথা খেয়ে সবার দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছি।আমাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে আমার বাবা কানে হাত দিয়ে সরি বলল।আমি কিছু না বলে মুখটা অন্য দিকে ঘুরিয়ে নেই।সাদাফ ভাই আমাকে সোফায় বসিয়ে আমার পাশে বসে।
“কী কেমন লাগল সারপ্রাইজ?”
আমি কিছু না বলে গাল ফুলিয়ে বসে আছি।উনি সেটা দেখে বাঁকা হেঁসে কানের কাছে গিয়ে আস্তে করে বলে উঠল।
“এখন চুপ করে থাকো সমস্যা নাই কিন্তু কবুল বলার সময় কবুলটা বলে দিও।”
আমি উনার কথায় পাত্তা না দিয়ে চুপ করে বসে আছি।তখন কেউ আমাকে জড়িয়ে ধরে আর আমি তাকিয়ে দেখি হিয়া আর অর পাশেই নিলয় ভাইয়া দাড়ানো।
“বইনরে বইন তুমি তলে তলে বিয়ে অবধি এগিয়ে গেছো আর আমি কিছুই জানলাম না?আজ সাদাফ ভাই বিয়ের দাওয়াত না করলে ত জানতেই পারতাম না।”
আমি হিয়াকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে বলে উঠলাম,,,
“তুমিও ত তলে তলে টেম্পু চালাইতাছো সেটা কী আমাকে বলছো?”
আমার কথা শুনে হিয়া ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়,আমতা আমতা করে বলে।
“ককী বলছিস এএসব?”
“কী বলছি তুই ভালো করেই বুঝতে পারছিস,তুই যে নিলয় ভাইয়ের সাথে রিলেশনে আছিস সেটা আমি জানি না ভেবেছিস?”
আমার কথা শুনে নিলয় ভাইয়ার কাশি উঠে যায়,উনি কাশতে কাশতে সেখান থেকে টুপ করে সরে যায়।আর হিয়া লজ্জা পেয়ে সেখান থেকে কেটে পড়ে।হিয়া ভাবতেও পারে নি আমি কথাটা বলে ফেলব।।আসলে নিলয় ভাইয়া হিয়াকে হসপিটালে সেদিন দেখে প্রেমে পড়ে যায়।আর হিয়াকে সেটা জানালে হিয়াও রাজি হয়ে যায়।কিন্তু আমাকে সেসব কিছুই জানায় নি,আমি অবশ্য গোপন সূত্রে কথাটা জেনেই ফেলেছি।
“দিলে ত দুজনকে ভাগিয়ে,বেচারি একটু আসছিল মজা করতে আর তুমি ওদের লজ্জা দিয়ে ভাগিয়ে দিলা।”
আমি কিছু না বলে চুপ করে আছি,যাই হয়ে যাক উনার সাথে আমি কথা বলছি না।উনি আমাকে তখন কতগুলো কথা শুনিয়ে দিলো সবটা না জেনে।আমার উওর না পেয়ে উনি একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে আমার বাবার কাছে গিয়ে কিছু একটা বলে।আর বাবা আমার কাছে এসে মাথায় হাত বুলিয়ে বলে উঠে।
“মামনিটা রাগ করেছে আমাদের উপর তাই না?”
“একদম কথা বলবে না আমার সাথে।আমাকে তাড়ানোর জন্য যদি এতই তাড়া তোমাদের,আমাকে বলতে আমি চুপচাপ চলে যেতাম।এসব করার কী খুব প্রয়োজন ছিল?”(অভিমানও স্বরে)
“হ্যাঁ রে মা প্রয়োজন ছিল,তুই হয়ত এখন বুঝবি না কিন্তু সময় হলে ঠিক বুঝবি যে আমরা ভুল কিছু করি নি।শুধু জেনে রাখ কোন বাবা মা চায় না তাদের সন্তানের ক্ষতি হোক।তেমনি আমরাও চাই না,ত আমাদের কথা ভেবে বিয়েটা করে নে মা।এতে তোরও ভালো,আমাদেরও ভালো।”
কথাটা বলে বাবা চলে যায়,আর আমি হিসেব মেলাতে ব্যাস্ত।সবাই কেমন রহস্য রেখে রেখে কথা বলছে আমার সাথে।কী এমন রহস্য লুকিয়ে আছে যেটা সবাই জানে শুধু আমি জানি না?আমি জানলে কী ক্ষতি হবে?কিছুই মাথায় আসছে না আমার।
“এই যে ভাবনা কুমারি এত ভেবে লাভ নেই সময় মত সবটা জেনে যাবেন।এখন ছোট্ট মাথায় এত চাপ দিয়ো না ত।”
সাদাফ ভাই পাশে বসতে বসতে কথাটা বলল।আমি উনার দিকে একবার তাকিয়ে মুখটা অন্য দিকে ফিরিয়ে আবারও ভাবনার জগতে পা বাড়াই।কিছুক্ষণ পর কাজির কথায় ধ্যান ভাঙ্গে আমার।কবুল বলার জন্য বলছে কিন্তু আমি শুনেও না শোনার ভান করে বসে আছি।তখন সাদাফ ভাই আমার কানের কাছে এসে বলে।
“কবুল বলে দাও সাবুপরি,নয়ত সবার সামনে চুমুতে ভরিয়ে দিব তোমাকে।”
আমি উনার কথাশুনে চোখ বড়বড় করে তাকাই উনার দিকে।উনি সেটা দেখে চোখ টিপ মারে,আমি আর কিছু না ভেবে কবুল বলে দেই।বেশ ভালো ভাবেই বিয়েটা সম্পন্ন হয় আমাদের।কিন্তু পুরো সময়টাতে কোথাও কাব্য ভাই কিংবা গরিলা মার্কা মহিলাকে দেখতে পাই নি।সবাই যখন আছে ওদেরও ত থাকার কথা কিন্তু নেই কেন?
___________________________________
বাসর ঘরে বউ সাজে বসে অপেক্ষা করছি সাদাফ ভাইয়ার জন্য।রাত ১২ টা বাজতে চলল তার খবর নেই,মহাশয় আজ আসুক অনেক কাজ বাকি আছে।আজ যদি উনাকে আলুর বর্তা না বানাইছি তবে আমার নামও সাবিহা না।
বেশ অনেকক্ষণ পর সাদাফ রুমে আসে,সাবিহা সেটা ঘোমটার ভিতরে থেকেই আড়চোখে সাদাফের দিকে তাকায়।সাদাফকে দেখেই মনে হচ্ছে ভয় পেয়ে রুমে ডুকছে।অবশ্য ভয় পাওয়ারই কথা যার সাবিহার মত বউ আছে সে ভয় না পেয়ে যাবে কোথায়।তার উপর আবার তুলে এনে জোর করে বিয়ে করেছে।সাদাফের কপালে দুঃখ লিখা আছে বাসর রাতে।
সাদাফ ভাইকে দেখে আমি ধীরে ধীরে খাট থেকে নামি।আর লজ্জার পাওয়ার মত মুখ করে উনার সামনে দাঁড়াই আর উনার পায়ের সামনে হাঁটু গেঁড়ে বসি সালাম করার জন্য।উনি সেটা দেখে খুশি হয়ে যায় আর বলে উঠে।
“আরে আরে সালাম করতে হবে না,আমার দোয়া এমনি তোমার উপরে সবসময়,,,
আর কিছু বলতে পারল না তার আগেই সাদাফ ধপাস করে নিচে পড়ে যায়।আর সাবিহা খিলখিলিয়ে হেঁসে উঠে।আসলে সাবিহা সাদাফের পায়ে টান দিয়ে ফেলে দেয়।সাদাফ কোমড়ে হাত দিয়ে কাচুমাচু মুখ করে বলে উঠে,,,
” এই ছিল তোমার মনে?শেষমেষ বাসর রাতে নিজের একমাত্র জামাইকে সালাম করার নামে এভাবে ফেলে দিলে?আমার কোমড়টা ভেঙ্গে গেলো গো,কেউ আমারে উঠাও।”
আমি হাসতে হাসতেই সাদাফ ভাইয়ের দিকে হাত বাড়িয়ে দেই,উনি আমার দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে হাত না ধরেই উঠার চেষ্টা করে।তারপর আমি জোড় করেই উনাকে তুলে খাটে বসাই আর উনার পাশেই পা ঝুলিয়ে বসে পড়ি।
” কী ভেবেছিলেন অন্য সবার মত সুন্দর করে সালাম করব আপনাকে?তেমনটা ভাবলে ভুল,কারন সাবিহা মানেই নতুনত্ব।তাই নিউ স্টাইলে সালাম করলাম আপনাকে।”
কথাটা বলেই আবারও হেঁসে ফেললাম আমি,উনি এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমি হাসি থামিয়ে আবারও বলে উঠি,,,
“আমাকে বিয়ে করার খুব শখ ত আপনার তাই না?এবার সেই শখটা সুধে আসলে পূরন করব আমি।সারাজীবন জ্বালিয়ে মারব।”
“তুমি আমার কাছে সারাজীবন থাকলে আমি তোমার সবকিছু হাসিমুখে মেনে নিব,খুব ভালবাসি তোমাকে।”
“হুম জানি জানি কতটা ভালবাসেন আপনি।ভালবাসলে তখন ওভাবে রিয়েক্ট করে তুলে আনতেন না আমাকে।”
“সাবিহা আমি তোমাকে সত্যি খুব ভালবাসি,আর তোমাকে কাব্যর সাথে ওভাবে দেখে আমি রাগ করি নি।রাগ করেছি কাব্য তোমার হাত ধরেছিল বলে,আমি ছাড়া অন্য কোন পুরুষ তোমাকে ছুঁলে আমার শয্য হয় না।বুকের ভিতর আগুন জ্বলে তাই ওভাবে রিয়েক্ট করেছি।আর তুলে এনে বিয়ে করার কথা বললে বলব ওটা আগে থেকেই প্লান করা ছিল।এটার জন্য তুমি আমাকে যে শাস্তি দিবে আমি মাথা পেতে নিব কিন্তু আমাকে ছেড়ে যেও না।”
“শাস্তি ত অবশ্যই দিব তবে সেটা তখনকার বাজে আচরনের জন্য,তুলে এনে বিয়ে করার জন্য নয়।তুলে এনে বিয়ে করার জন্য আপনাকে এত্তগুলা থানকু।”
“মানে?”
“মানে হল আমার স্বপ্ন ছিল আমার যে স্বামী হবে সে আমাকে তুলে এনে জোড় করে বিয়ে করবে।সাইকো টাইপের গল্প পড়তে পড়তে এই ইচ্ছেটা জাগে আমার।”
উনি আমার দিকে চোখ বড়বড় করে তাকায়,আমি উনার অবস্থা দেখে টুপ করে উনার গালে একটা চুমু দিয়ে দেই।উনি এবার অবাকের চরম পর্যায়ে,গালে হাত দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে অবাক চোখে।আমি এবার আমার কাজে নিজেই বোকা বনে যাই,কী করে ফেললাম এটা?লজ্জা সরম কই গেলো আমার,ছিঃ সাবিহা তুই কীভাবে পারলি এটা করতে?নিজেকে নিজে বকে চলেছি,তখন সাদাফ ভাইয়া আমাকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে কাঁধে মাথা রেখে শয়তানি হাসি হেঁসে বলে উঠে।
“আমার বউটা ত হেব্বি রোমান্টিক,তা বউ বাসরটা সেরেই ফেলি হুম!”
আমি উনাকে এক ঝটকায় নিজের থেকে ছাড়িয়ে উঠে দাঁড়াই।
“বাসর করার খুব শখ না আপনার,এবার করুন বাসর একা একা।তখন বাজে আচরন করার শাস্তি হল একা একা বাসর রাত পালন করা।আর সেটাই করুন,নয়ত দাঁত ভেঙ্গে ইঁদুর দের খাওয়াব।”
তারপর আমি মিটিমিটিয়ে হাসতে হাসতে একটা থ্রি পিছ নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যাই।অন্যদিকে সাদাফ গালে হাত দিয়ে বসে ভাবছে,,,
“কপাল করে একখানা বউ পাইছি,জল্লাদ বউ একটা।কেন যে তখন রাগ দেখিয়ে ওসব বলতে গেলাম!তখন ওভাবে না বললে হয়ত একা একা বাসর রাত পালন করতে হত না।ফিলিং দুঃখু দুঃখু,বাসর রাত বউ বীহিন পালন করিন।”
#চলবে,,,
(সবাই ত খুব চিন্তায় ছিলেন যে সাবিহাকে জোড় করে বিয়ে করাতে সাদাফকে ভুল বুঝবে সাবিহা।আমি কিন্তু এতটাও খারাপ না যে খালি বেচারা সাদাফকে কষ্টই দিব😐।
আর হ্যাঁ গল্পটা আর কয়েক পর্বেই ইতি টানব🥰।)
#ভালবেসে রাখব কাছে
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ২৮
আমি ওয়াশরুম থেকে চেন্জ করে বের হওয়ার সাথে সাথে সাদাফ ভাই আমাকে কোলে তুলে নেয়।পড়ে যাওয়ার ভয়ে সাদাফ ভাইয়ের গলা জড়িয়ে ধরি আমি।তখন সাদাফ ভাই হাসতে হাসতে বলে উঠে,,,
“সাবুপরি কী ভেবেছো তুমি,আমি একা একা বাসর রাত পালন করব হুম?”
“ছাড়ুন আমাকে।”
“নাও ছেড়ে দিলাম।”
কথাটা বলেই সাদাফ ভাই আমাকে খাটে ধপাস করে ফেলে দেয়।আমি ভয়ে পেয়ে হালকা চিৎকার করে উঠি।সাদাফ ভাই এবার আমার কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে পড়ে।
“আরে করছেনটা কী?সরুন এখান থেকে।”
“বাসর রাত পালন করছি,আজ সারারাত দুজন গল্প করব এভাবেই।”
কথাটা বলে উনি আমার কোমড় জড়িয়ে ধরে,আমি শিউরে উঠি।পরক্ষণেই নিজেকে সামলিয়ে উনাকে সরানোর জন্য ব্যাস্ত হয়ে পড়ি।
“আমি সারারাত এভাবে বসে থাকতে পারব না,উঠুন বলছি।নয়ত ঘুসি দিয়ে নাক ফাটিয়ে ফেলব।”
“ঘুসি দেও আর লাথি দেও তারপরও উঠছি না আমি।এভাবেই বসে থাকবে বুঝেছো!”
“আমার ওত বুঝে কাজ নেই,আপনাকে উঠতে বলেছি উঠুন।আপনার মত হাতি আমার কোলে শুয়ে আছেন আর আমি মশা হয়ে সে ভার বহন করিতে পারিতেছিনা।অতএব জনাব আপনি আমার কোল থেকে উঠুন নয়ত খুব খারাপ হয়ে যাবে।”
“এমন কেন করো সাবুপরি?তুমি সবসময় আমার সাথে এমন কঠোর হয়ে কথা বলো।একটু নরম হতে পারো না আমার জন্য।আমারও ত ইচ্ছে করে আমার বউটা আমার সাথে সবসময় মিষ্টি স্বরে কথা বলবে।মিষ্টি করে ওগো,হেগো এভাবে বলে ডাকবে।কিন্তু তুমি ত সবসময় আমার সাথে রেগে কথা বলো,নয়ত ঠাস ঠুস লাগিয়ে দাও।”
সাদাফ ভাই কথাগুলো নরম গলায় বলেছে।আমার উপর করা উনার অভিযোগ গুলো একটাও মিথ্যা নয়।সত্যি আমি বড্ড বেশি কঠোর হই উনার প্রতি।
“আজ এমন একটা স্পেশাল দিনে তোমার কাছে একটা অনুরোধ করব,রাখবে?”
“এভাবে কেন বলছেন?আপনি বলুন না কী বলতে চান।”
“বলব তার আগে বলো রাখবে।”
“হুম রাখব বলুন।”
“একটাবার ভালবাসি বলবে!জানি তুমি আমাকে ভালবাসো না তারপরও একটা বার মিথ্যে করেই ভালবাসি বলো না সাবুপরি।”
আমি উনার কথাশুনে থমকে যাই।কী করব আমি?মিথ্যে করেই কী ভালবাসি বলা যায়?
“তোমার মুখ থেকে ভালবাসি কথাটা শুনতে বড্ড বেশি ইচ্ছে করছে সাবুপরি।প্লিজ একটাবার বলো,আর কখনও বলব না ভালবাসি বলো।শুধু আজ একটাবার বলো না।”
কী এক মুসিবতে পড়লাম আমি,ভালবাসি কথাটা বলা কী এতই সহজ?
কিছুক্ষন ধরে আমি এসবই ভাবছি যে বলব নাকি বলব না!একটা সময় সাদাফ ভাই আমাকে ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়।আর চুপচাপ ব্যালকনিতে চলে যায়,আমার চুপ থাকাটা উনাকে কষ্ট দিয়েছে।কিন্তু আমিই বা কী করব,হঠাৎ করেই মাথায় একটা কথা আসে আর আমার ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠে।আমি খাট থেকে নেমে ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়াই ঠিক উনার পিছনে।আর গিয়েই উনাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে আস্তে করে বলে উঠি,,,
“ভালবাসতে চাই আপনাকে।ভালবেসে আপনার কাছে-পাশে থাকতে চাই।রাখবেন কী আমায় ভালবেসে আপনার কাছে?”
উনি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে আমাকে টেনে উনার সামনে দাঁড় করিয়ে আমার নাকে উনার নাক ঘসে মুচকি হেসে বলে।
“ভালবেসে রাখব কাছে,
থাকব তোমার পাশে।
বাসব অনেক ভালো,
সারাজীবন ধরে।”
(কবিতা লেখার ট্রায় করছি কিন্তু হয় নাই🤧)
উনার কথাশুনে আমার ঠোঁটের কোনের হাসিটা চওড়া হয়।উনি এবার আমাকে বুকে আগলে নেয় শক্ত করে।
______________________________________
সকাল বেলা ঘুম ভাঙ্গে চেঁচামেচির আওয়াজে,ঘুম থেকে উঠে দেখি সাদাফ ভাই পাশে নেই।হয়ত নিচে গেছে,আমিও গায়ে উর্নাটা জড়িয়ে নিচে নামি।আর নিচে নেমেই সকাল সকাল মাথাটা গরম হয়ে যায়।গরিলা মার্কা মহিলা আর কাব্য ভাই সকালে পুলিশ নিয়ে হাজির আমাদের বাড়িতে।গরিলা মার্কা মহিলা আর কাব্য ভাইকে দেখেই মাথা গরম হয়ে যায় আমার।কিন্তু এখানে কী হচ্ছে সেটা ঠিক ঠাহর করতে পারছি না।সাদাফ ভাই আর উনার বাবা এক পাশে কার সাথে যেন ফোনে কথা বলছে।আর এক পাশে সাদাফ ভাইয়ের মা দাঁড়িয়ে আছে।আমি ধীর পায়ে শ্বাশুড়ি আম্মুর পাশে গিয়ে দাঁড়াই।
“আম্মু এই দুই শয়তান এখানে কেন?”
আমার কথা শুনে আম্মু চোখ দুইটা বড়বড় করে তাকায় আমার দিকে।আমি সেটা দেখে আবারও বলে উঠি,,,
“আম্মু এখন এমন রিয়েকশন না দিয়ে কাহিনী কী সেটা বলো।”
আমার কথা শেষ হওয়ার পরই আম্মু আমাকে টেনে একপাশে নিয়ে দাঁড় করায় আর ফিসফিসিয়ে বলে উঠে।
“আরে এই দুইজনকে নাকি সাদাফ কাল কিডন্যাপ করেছে তাই পুলিশ নিয়ে এসেছে বাড়িতে।”
আম্মুর কথাশুনে আমার চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম।দুজনকে কিডন্যাপ করেছে মানে?কাল তবে এর জন্য এই দুই শয়তানকে চোখে পড়ে নি।কিন্তু সাদাফ ভাই ওদের কিডন্যাপ কেন করল?আমার ভাবনার মাঝেই কাব্য ভাই আমার কাছে এসে আমার গালে হাত দিয়ে বলে।
“সাবিহা তুই ঠিক আছিস?এই বদমাইশটা তোর কোন ক্ষতি করে নি ত?তকে আর কিছু করতে পারবে না এই বদমাইশটা।আমি এসে পড়েছি এবার তকে এখান থেকে নিয়ে যাব।চল আমার সাথে,এখানে আর এক মুহুর্তও না।”
কথাটা বলে কাব্য ভাই আমার হাত ধরে টান দেয়।তখন সাদাফ ভাই আমার পাশে এসে অন্য হাত ধরে হেঁচকা টান দিয়ে উনার বুকে ফেলে।আর এক হাত দিয়ে আমার কোমড় জড়িয়ে ধরে উনার সাথে মিশিয়ে নেয়।আর রাগমিশ্রিত স্বরে বলে উঠে,,,
“তোর সাহস হল কী করে আমার বাড়িতে এসে আমারই বিয়ে করা বউকে টাচ করার?”
সাদাফের কথা শুনে কাব্য অবাক হয়ে যায়।বউ মানে কী বলছে এসব সাদাফ?
“বউ মানেহ?”
“বউ মানে সাবিহা আমার বিয়ে করা বউ।”
“সাদাফ তুই বিয়ে করেছিস?আর এই মেয়েটাকে!তুই কী জানিস না আমি তকে কতটা ভালবাসি?তারপরও তুই এই মেয়েটাকে কীভাবে বিয়ে করলি?”
“আমি কাকে বিয়ে করব না করব সেটা কী তুই বলে দিবি?আর এই মেয়েটা এই মেয়েটা করছিস কেন?অর একটা সুন্দর নাম আছে নাম ধরে ডাকবি নয়ত ভাবি বলবি।”
আমি অবাক চোখে সবার কথা শুনে যাচ্ছি।কাব্য ভাইকে নতুন রূপে দেখছি,তার সাথে গরিলা মার্কা মহিলার প্রেম প্রেম পাগলামি।আর সবার উপরে আছে আমার একমাত্র হাসবেন্ড যে কী না আজ পুরো ফাটিয়ে দিচ্ছে।আমি আজ কিছু বলব না শুধু নিরব দর্শকের মত সবটা দেখব।ইস্ পপকর্ন হলে জমত ভালো,কিন্তু আমি ত ফ্রেশই হই নি ঘুম থেকে উঠে।দেৎ ভাল্লাগে না,আমার এমন বোকা বোকা ভাবনার মাঝেই কাব্য ভাই আমার দিকে এগিয়ে এসে কিছু বলতে নিলে সাদাফ ভাই হাত দিয়ে থামিয়ে দেয়।
“যেখানে আছিস সেখানেই থাক একদম আমার বউয়ের কাছে আসার চেষ্টা করবি না।”
“সাদাফ সাবিহাকে ছাড়,সাবিহা তকে বিয়ে করতে পারে না।সাবিহা ত আমাকে ভালবাসে,সাবিহা এমনটা করতে পারে না।তুই নিশ্চয়ই সাবিহাকে জোড় করে বিয়ে করেছিস?অফিসার আপনি কিছু বলছেন না কেন?দেখতে পারছেন না একটা মেয়েকে কীভাবে জোড় করে আটকে রেখেছে!কিছু করুন আপনারা,আর সাবিহাকে মুক্ত করুন অর থেকে।”
“এই চুপ,একদম চুপ সাবিহা তকে ভালবাসত কিন্তু এখন আর বাসে না।আর অফিসার কী বলবে?আমি আমার বউকেই বিয়ে করেছি,দুজনের মতেই বিয়েটা হয়েছে।তুই এসবে নাক গলাচ্ছিস কেন?ভালো চাস ত চুপচাপ তুই আর লিজা চলে যা এখান থেকে।নয়ত যে পুলিশ নিয়ে তরা এসেছিস সে পুলিশের হাতেই তদের ধরিয়ে দিব।তরা নিশ্চয়ই এমন কোন কাজ করিস নি যে পুলিশ তদের কোলে বসিয়ে আদর করবে?তাই চুপচাপ এখান থেকে যা নয়ত তদের আসল রূপটা ওদের সামনে আনতে বাধ্য হব।”
তারপরও কাব্য ভাই আর লিজা আগের জায়গাতেই দাঁড়িয়ে আছে।সেটা দেখে সাদাফ ভাই আমার হাত ধরে সিড়ি বেয়ে উঠতে উঠতে অফিসারদের বলে।
“ওদের যে আমি কিডন্যাপ করেছি তার কোন পাকাপোক্ত প্রমান আপনাদের কাছে নেই।তাই এই দুই জনকে নিয়ে এখান থেকে চলে যান।নয়ত আমিও আইন একটুআকটু জানি।”
কথাটা বলেই সাদাফ ভাই আমাকে নিয়ে রুমে চলে আসে।রুমে এসে দরজা বন্ধ করে কোমড়ে হাত দিয়ে আমার সামনে দাঁড়ায়।আমি সেটা দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকালে উনি ধমকে বলে উঠে,,,
“তোমাকে যে কাব্য স্পর্শ করল তারপরও তুমি কাব্যকে কিছু বললে না কেন?আমি চাই না আমি ব্যাতীত অন্য কোন পুরুষ তোমায় স্পর্শ করুক।তারপরও কেন তোমাকে কাব্য স্পর্শ করল?আর তুমি কেন কিছু বললে না?”
আমি উনার প্রশ্নের কোন উওর না দিয়ে চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছি,উনি সেটা দেখে রেগে দেয়ালে একটা ঘুসি দেয়।আমি আৎকে উঠি,আর উনার হাত ধরতে গেলে উনি আরো রেগে যায়।
“একদম ছুবি না আমাকে।তুই ঐ কাব্যকে নিয়ে পড়ে থাক।”
কথাটা বলেই উনি রেগে রুম থেকে চলে যায়,আর আমিও উনার পিছন পিছন ছুটি।হাতটা হয়ত থেতলে গেছে ঔষধ না লাগালে সমস্যা হবে।
#চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here