#পঞ্চভূজ_তারা!
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পার্টঃ২৬+২৭
—–” বাহ!বাহ! আমি তোকে খুজতে খুজতে হয়রান ভাবলাম সাদুও তো ভাইয়ার সাথে রোমান্সে ব্যস্ত এখন দেখি আমার আরেক বান্দবিও রোমান্সে ব্যস্ত।নো প্রোবলেম কান্টিউ করো তোমরা নিবির ভাইয়া।আমরা চলে যাচ্ছি।”
নূরের কথাগুলো শুনে আলিশা নিবির থেকে সরে যেতে চাইলো।কিন্তু নিবির নাছোড়বান্দা আলিশাকে ঝাপটে ধরে দাড়িয়ে আছে।আফরান বলে,,
——” আরে ভাই কিছুতো লজ্জা কর।আমাদের সামনেও এরকম করা লাগে।”
নিবির আলিশাকে আরো একটু শক্ত করে ধরে বললো,
——” শুনিস নাই ওই গানটা ‘ জাব প্যায়ার কিয়া ডারনা ক্যায়া,প্যায়ার কিয়া কোয়ি চরি নেহি কি ছুপছুপকে আহে ভার না ক্যায়া ‘ তো ভালো যখন বাসি তো লুকিয়ে করার কি হলো? চুরি তো আর করি নি।”
—–” বাহ বাহ! বাহ বাহ! ক্যায়া বাত নিবির ক্যায়া বাত।” আফরানের আহেম কান্ডে আলিশা লজ্জায় লাল টমেটো হয়ে গেলো।নিবিরকে ফিসফিস করে বললো,
—–” হচ্ছেটা কি? সবার সামনে কি করছেন টা কি?”
নিবির একচোখ টিপ মেরে বললো,
—–” ইট্স কল্ড লাভ বেবি।”
—–” ছিহ! কিসব বেবি টেবি বলছেন আপনি? আই এম ম্যাচিউর্ড নাউ ওকে।সো ডোন্ট কল মি বেবি।”
—–” আচ্ছা তাহলে বেবি আম্মু ডাকবি!”
আলিশা নিবিরের বাহুতে একটা কিল দিয়ে বললো,
—–” অসভ্য! ”
এদিকে ওদের এভাবে দেখে আফরান নূরকে হেচকা টান মেরে নিজের বুকে এনে জড়িয়ে ধরে বললো,
—–” তাহলে আমি বাদ যাবো কেন? আমিও আমার বউয়ের সাথে রোমান্স করতে পারি।”
নূর চোখ রাঙিয়ে তাকালো আফরানের দিকে বললো।
—–” এতো নির্লজ্জ কেন আপনি? ছোট ভাইয়ের সামনে কিসব করছেন?”
—–” এক্সকিউজ মি কে ছোট হ্যা? আমি মাত্র ওর থেক ১ সপ্তাহের বড়।”
—–” তো কি হয়েছে বড় তো?”
নিবির দুষ্টু হেসে বললো,
—–” আরে ভাবি লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই।জাস্ট চিল! ”
নূর আফরানকে আর আলিশা নিবিরকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে ” অসভ্য ” বলে হনহনিয়ে চলে গেলো।আর এদিকে নিবির আর আফরান গলা ছেরে হাসতে লাগলো।
💕💕
—–” হ্যালো কোথায় আপনি?” আলিফা’র কথায় আরিফ মুচকি হেসে ফোনের অপাশ থেকে বললো,
—– ” কেন আমার সুইট পেটোটো কি আমাকে মিস করছে?”
আলিফা আদুরেভাবে বলে,,
—– ” হ্যা ভীষন! ”
—– ” ইসসস! এতো ভালোবাসা আমি কোথায় রাখবো?”
—– ” দূর আপনি ফাইযলামি করছেন? আমার মন খারাপ আপনি বুজেন না?”
—–” ফাইযলামি কেন করবো? আচ্ছা সেটা বাদ আগে বলো বাহিরে এসেছো চাদর গায়ে নেই কেন?”
আলিফা চমকে উঠে এদিক ওদিক তাকালো তারপর বললো,,
—–” আপনি কিভাবে জানলেন আমি বাহিরে এসেছি? ”
পরপরেই সে টের পেলো কেউ একজন তাকে পিছন থেকে আদুরেভাবে জরিয়ে ধরেছে।
আরিফ আলিফার কানে হালকা ঠোঁট ছুইয়ে বললো,,
—–” আমার বউ যদি আমাকে মিস করে আমি বুজি না এসে পারি।”
আলিফা কিছু না বলে মুচকি হেসে পিছন ফিরে আরিফকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।
—–” তা আমি যে এতো কষ্ট করে বউয়ের মন ভালো করার জন্য রাত ১১ টা বাজে চোরের মতো তার কাছে আসলাম এর বিনিময়ে আমি কি পাবো?”
আলিফা এই কথার পরিপেক্ষিতে আরিফের পায়ের উপর ভর দিয়ে দাড়ালো তারপর দুহাতে আরিফের গলা পেচিয়ে ধরে আরিফের ঠোঁটে ঠোঁট ছুয়ে দিলো।আরিফ অবাক সে ভাবতেই পারিনি আলিফা নিজ থেকে তাকে ভালোবাসার স্পর্শ দেবে।অবাকের পর্যায় শেষে সে নিজেও প্রেয়সীর ভালোবাসায় নিজেকে মাতিয়ে তুললো।।
….
বিছানার উপর ঠোঁট ফুলিয়ে বসে আছে সাদুহ।কারন তাকে মনির বকেছে।তবে বকার বেশ কারন ও আছে কেন সে রাগ করে দরজা বন্ধ করে ছিলো।এভাবে সবাইকে টেন্সনে ফেলে কেন সে সবাইকে। আর এইজন্যে বকা দেওয়াই এখন সে ঠোঁট ফুলিয়ে বসে আছে। আর মনির সেই কখন ওকে বলেছে খাবার খেতে কিন্তু সাদু কিছু না বলে চুপ করে আছে।মনির এইবার নিজে খাবার মাখিয়ে সাদুর মুখের সামনে ধরলো।সাদু মুখ ঘুরিয়ে নিতে নিলেই মনির জোড়ে ধমকে বললো,,
—–” আর একবার যদি বলা লাগে খাবার খেতে তাহলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।”
—–” এই জোড়ে ধমক দেওয়ার কারনেই কিন্তু খাইনি আমি! ”
—–” বেশ করেছে মামুনি আমি হলে ঠাটিয়ে দুটো চর লাগাতাম!”
—–” আমি খাবো না সরুন আপনি।”
—–” উম্মিইই!!” মনিরের এরকম কঠিন করে ওর নাম ডাকায় কাদো কাদো হয়ে খাবার খেতে লাগলো সাদু মনিরের হাতে। খাবার শেষে মনির সাদুর মুখ ধুইয়ে দিয়ে প্লেট রেখে এসে সাদুকে নিজের সাথে জরিয়ে নিলো।সাদু মুখ ফুলিয়ে নিজেকে মনির থেকে ছাড়াবার চেষ্টা করছে।মনির আর একটু শক্ত করে জরিয়ে ধরে বললো,,
—–” পারবে তুমি আমার ভালোবাসার বন্ধন থেকে নিজেকে ছাড়াতে।আমি কখনো তোমাকে নিজের থেকে আলাদা হতেই দিবো নাহ।”
সাদু মনিরের বুকে মুখ লুকিয়েই বললো,,
—–” ছাড়ুন আমাকে আমি থাকবো না।আপনি আমাকে বকা কেন দিলেন?”
মনির সাদুর কপালে একটা চুমু খেলো।তারপর সাদুর ঘাড়ে ভালোবাসার একটা উষ্ম স্পর্শ দিলো।সাদু কেপে উঠে নিজেকে আরো আড়াল করে নিলো মনিরের বাহুডোরে।মনির বলে,
—–” তুমি জানোনা আমি তোমায় কতো ভালোবাসি।যখন শুনেছি তুমি রাগ করে দরজা বন্ধ করে আছো কতোটা চিন্তায় পরে গিয়েছিলাম আমি।আমার বুজি কষ্ট হয় না তুমি এরকম করলে?”
সাদু বুজতে পারলো আসলেই সামান্য বিষয়ে এতোটা রিয়েক্ট করা ওর ঠিক হয় নি।সাদু একটা হাত মনিরের বাহু থেকে কোনরকম বের করে কান ধরে আস্তে করে বললো,,
—–” সরি! সাদু আর কখনো এরকম করবে না!”
মনির মুচকি হেসে সাদু কপালে আবারো চুমু খেলো।তারপর নিজে বিছানায় সুয়ে সাদুকে ওর বুকে টেনে নিয়ে মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললো,,
—–” ঘুমোও! অনেকরাত হয়েছে।”
সাদুও আর কিছু না বলে মনিরের বুকের মাজেই গুটিশুটি দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।মনির যখন টের পেলো সাদু ঘুমিয়ে গেছে। সে আরেকবার সাদু কপালে ঠোঁট ছুইয়ে দিয়ে,কম্বলটা সুন্দর করে গায়ে জরিয়ে দিয়ে রুমের লাইফ ওফ করে এ.সি টা হালকা পাওয়ারে ছেরে দিয়ে দরজা বন্ধ করে চলে গেলো।
——————–💞
দম মেরে বসে আছে সবাই।সবার চোখে জল চিকচিক করছে।আলিফা,মিম, সাদু’ মা হাউমাউ করে কান্না করছে। নূর আর আলিশাও কাদতে চাইছে ভীষনভাবে কাদতে চাইছে কিন্তু এখন যে এদের কান্না করলে চলবে না।আলিশাকে তো সামলাতে হবে নিবিরকে।আর নূরকে তো দু দুটো মানুষকে সামলাতে হবে এক তার ভালোবাসার মানুষটি দ্বিতীয় তার ভাই।ওর মাথায় খেলছে না কি থেকে কি হয়ে গেলো।সাদু’র মা কে মনিরের মা আর নূরের মা সান্তনা দিচ্ছে।আর সাদু’র বাবাকে তাদের বাবারা।এদিকে আলিফা’র বাবা মারাও এসেছে। মনির শক্ত হয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। কি থেকে কি হয়ে গেলো? কালকে রাতেও তো ও ওর উম্মি পাখিকে নিজ হাতে খাইয়ে দিয়েছিলো,বুকে জড়িয়ে নিয়ে ঘুম পারিয়েছিলো আর আজকেই কিনা ওর বুকটা খালি হয়ে গেলো।না মনির কিছুতেই মানতে পারছে না।বুকটা প্রচন্ড জ্বালাপোড়া করছে।কান্না করতে চাইছে ও প্রচুর কিন্তু কিন্তু কান্না করা যে ছেলেদের মানায় না।আল্লাহ্ কেন যে বার বার তার ভালোবাসার মানুষটির উপরেই এতো ঝড়তুফান দেন। কেন ওর উম্মিপাখিকে কেন এতো কিছু সয্য করতে হয়।।
নূর আফরানের পাশে বসলো।আফরানের চোখ দিয়ে পানি ঝরছে কিন্তু সে এই চোখের অস্রু কাউকে দেখাতে চায় না তাই তো সবার সামনে থেকে চলে এসে বোনের রুমে এসে নিরবে চোখের অস্রু ঝরাচ্ছে।নূরের নিজেকে সামলাতে পারছে না সেখানে আফরানকে কিভাবে সামলাবে।তবুও নিজেকে যথেষ্ট শক্ত রেখে আফরানের কাধে হাত রাখতেই আফরান নূরকে ঝাপটে ধরে বাচ্চাদের মতো ফুফিয়ে উঠলো।
—–” কেন নূর আমার পিকুই কেন? আমার বোনটাকেই কেন এতো কষ্ট সয্য করতে হয়।আমি মানতে পারছি না নূর। পিকু আমাদের কাছে নেই।আমার পিকুকে এনে দেও নূর। এনে দেও।কালকে রাতেও তো আমার বুকে মাথা রেখে আমার সাথে খিলখিল করে হেসে বাচ্চাদের মতো বায়না করছিলো টেডিবিয়ারের জন্য। ওকে বলো নূর ও আমার কাছে এসে পড়লে আমি ওকে অনেকগুলা টেডিবিয়ার কিনে দিবো। তবুও আমার পিকুকে আমার কাছে আসতে বলো নূর।”
নূর দুহাতে আফরানকে আকড়ে ধরলো ও কি বলে আফরান কে শান্তনা দিবে নিজেও কাদছে আফরানের সাথে।
নিবির আলিশা’র হাত দুটো আকড়ে ধরে তাতে কপাল ঠেকিয়ে কান্না জড়িতে গলায় বলছে,,
—–” আমি পারলাম না আলিশা।আমি ব্যর্থ ভাই।আমি কোনবারই পারলাম না নিজের বোনকে হেফাজত করতে।আমার বোনকে আমি রক্ষা করতে পারলাম না।আমার মরে যাওয়া উচিত আলিশা।”
নিবিরের মুখে মরার কথা শুনে আলিশা আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না। নিবিরকে জরিয়ে ধরে হাউমাউ করে কেদে বললো,,
—–” আল্লাহ ওয়াস্তে চুপ থাকুন। এগুলো বলিয়েন না প্লিজ।আমি এতো কষ্ট সয্য করার ক্ষমতা রাখি না।পারবো না সজ্য করতে।চুপ থাকুন।”
মিমকে সজীব সামলাচ্ছে।মেরাজ সেদিকেই তাকিয়ে কেন যেন ওর ভালো লাগছে না সজীবকে মিমের সাথে দেখে।তবুও পরিস্তিতি খারাপ দেখে ও চুপ করে রইলো।তবে ওর চোখে মুখে রাগ স্পষ্ট।
আলিফাকে আরিফ এটা সেটা বুজাচ্ছে।কিন্তু কিছুতেই সামলাতে পারছে না ওকে।আলিফা অনেক সেন্সেটিভ। কেদে কেটে অবস্থা খারাপ করে ফেলেছে আলিফা। আরিফ কি করবে দিশা পাচ্ছে না।কাকে সামলাবে ও। একদিকে ওর প্রানপ্রিয় তিন কলিজার বন্ধু আর একদিকে আলিফা।
সবাই ভাবছে সময়টা এতো বিষাক্ত কেন? এই সময়টা না আসলেও তো পারতো।দিব্বি তো ভালো ছিলো ওরা। তবে কেন সুখ পাখিরা বেশিদিন থাকে না ওদের নীড়ে।
চলবে,,,,
ভূলত্রুটি ক্ষমা করবেন।ঘটনমূলক মন্তব্য কামনা করছি।
#পঞ্চভূজ_তারা!
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পার্টঃ২৭
অন্ধকার রুমে চেয়ারের সাথে হাত-পা বাধা অবস্থায় বসা সাদু।চিৎকার করেছে অনেক অবশেষে ক্লান্ত হয়ে চুপ করে আছে।তার এখনো খেয়াল আছে।সবাই সকালে ঘুরতে বেরিয়েছিলো।মেয়েরা সবাই ফুচকার জন্যে বাহানা করাতে তারা রাস্তার একপাশে দারায় ফুচকা খাওয়ার জন্যে।আর তখনি সাদু দেখে রাস্তার আরেকপাশে একটা বিরাল ছানা বরাবরের মতো ওর বিরালছানা অনেক পছন্দ তাই ছুটে যেতে নিচ্ছিলো সেদিকে। কিন্তু তার আগেই একটা কালো মাইক্রো থেকে কিছু লোক তাকে হ্যাচকা টানে গাড়ির ভীতরে নিয়ে আসে।তারপর মুখে কিছু একটা স্প্রে করে তারপর আর কিছু মনে নেই ওর।যখন চোখ খুলে তখন নিজকে এই অবস্থায় দেখে ঘাবড়ে যায়। অনেক চেচামেচি করে কিন্তু কোন সারা না পেয়ে এইভাবেই চুপ করে থাকে।
হঠাৎ কারো পায়ের আওয়াজ শুনে সেদিকে তাকায় সাদু কিন্তু অন্ধকারে কিছুই দেখা যাচ্ছে না।তারপরেও চোখ পিটপিট করে দেখার চেষ্টা করছে সাদু।হঠাৎ আলো জ্বলে উঠায় চোখ বন্ধ করে নেয় সাদু চোখে আলোর তীব্রতা সয্য করতে পারছে না কারন অনেক্ষন অন্ধকারে থাকায়।কিছু সময় পর চোখ পিট পিট করে সামনে তাকাতেই স্তব্ধ হয়ে যায় সাদু।তারপর রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বললো,
—–” আপনি? আপনার সাহস কি করে হলো আমাকে এইভাবে এখানে বেধেঁ রাখার?”
—–” ওহ বেবি তুমি তো এখনো আমার সাহস সম্পর্কে জানোই না।” বিচ্ছিরি হাসি দিয়ে বললো লোকটি।
সাদু চেঁচিয়ে উঠে বললো,,
—–” মনির জানলে আপনাকে টুকরো টুকরো করে ফেলবে।সাথে আমার ৪, ৪ টা ভাই তো আছে আর আমার ৪ টা বোন।”
—–” তারা কিছুই করতে পারবে না।তাদের সামনে দিয়েই কিডন্যাপ করলাম তখনি কিছু করতে পারলো না এখন করবে কি?যেখানে তুমি আমার কাছে।”
—–” সালা হনুমানের বাচ্চা সাহস থাকলে আমার হাতের বাঁধন খুলে দে।আমি একাই তোকে শেষ করবো।”
—–” তোমার এই রুপেই তো ঘায়েল হয়েছি।উফফ মারডালা তুনে জানেমান।”
সাদু রেগে ভয়ানক এক গালি দিলো,,
——” সালা লুইচ্চা, মা****, তোর মেইন্ট পয়েন্ট আমি লাত্থি দিয়ে উড়িয়ে দিবো।খবিশের বাচ্চা,একবার শুধু হাতের বাধন খুলে দে।”
—–” খুলবো বেবি।তাতো করতেই হবে আগে তুমি এই ডিভোর্স পেপারে সাইন করে দেও।তারপর আমি তোমাকে বিয়ে করবো।”
—–” বুইড়া ব্যাটা, আধ দামড়া,আমি কোনদিন ও সাইন করবো না।”
লোকটি তেড়ে এসে সাদু’র চুল মুঠি করে ধরলো।সাদু ব্যাথায় ককিয়ে উঠলো।
——” তোকে তো আমাকে বিয়ে করতেই হবে।”
——” মরে গেলেও করবো না।”
——” আমি এখন যাচ্ছি আধা-ঘন্টা সময় এর মধ্যে যেন আমি এসে দেখি তুমি সাইন করে দিয়েছো।”
—–” তুই সেই আশায় বসে বসে চিনাবাদাম খা।আমি কোনদিন করবো নাহ।”
—–” সেটা পরে দেখা যাবে।(চেঁচিয়ে ডাকলো) শিহাব,লিটু তোরা এখানে পাহারে দে।এই মেয়ে কে দিয়ে ভরসা নেই।”
লোকটির চিৎকারে শিহাব আর লিটু এসে হাজির হতেই সে সাদুকে ইশারা দিয়ে কাগজটা দেখিয়ে চলে গেলো।।
✴✴✴✴✴✴
—–” একদিন হয়ে গেলো পুরো কোথাও খোজ পেলাম না।” মনির দুহাতে মাথা চেপে ধরে করুন স্বরে কথাটা বললো।
—–” ভেংগে পরিস না মনির।ভূলে যাস না ও ও আমাদের বোনু সাদু।সে যেখানে আছে ভালো আছে। অস্থির হোস না ধৈর্য রাখ।” মনিরের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে কথাটা বললো আরিফ।তারপর আলিফার দিকে তাকালো।মেয়েটা কেঁদে কেটে চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলেছে।এখনো কাঁদছে, ওর সয্য হচ্ছে না আলিফার কান্না।আলিফার দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।
—–” এতো কেঁদো না মিম।সাদুকে পেয়ে যাবো।” কথাটা বলেই ব্যাথার্থ মুখে বললো মেরাজ।কেন যেন ওর মিমের কান্না সয্য হচ্ছে না।
—–” কি করে শান্ত হবো? আমার সাদুকে এনে দিন প্লিজ আমি আর কাঁদবো না।” বলে আবারো কান্নায় ভেংগে পড়লো মিম।
মেরাজ কাতর চোখে খানিক তাকিয়ে থাকে তারপর অন্য মনষ্ক্য হয়ে বলে,,
—-” তুমি কান্না করলে যে আমার বুকে ব্যাথা লাগে।”
মিম কান্না থামিয়ে অবাক চোখে তাকায় ওর দিক।মিমকে এভাবে তাকাতে দেখে মেরাজের খেয়াল আসে যে ও বলেছেটা কি? বুজতে পেরেই তড়িঘড়ি করে অন্যদিকে চলে যায়।আর মিম এখনো ড্যাবড্যাবিয়ে তাকিয়ে আছে।
রান্নাঘরে দাড়িয়ে সবার জন্যে চা বানাচ্ছে নূর।আজ সারাদিন কেউ কিছু খাইনি।তাই সে নিজেই গেলো চা বানাতে সবার জন্যে।এদিকে যে নিজে মাথা ব্যাথায় ছটফট করছে সেটা কাউকে বুজতে দিচ্ছে না।কিছুক্ষন পর পর দুহাতে মাথা চেপে ধরে ব্যাথা নিবারণের চেষ্টা চালাচ্ছে।
এদিকে আফরান নিজের মার জন্যে ডায়নিং টেবিলে পানি নিতে আসতেই চোখ পড়ে নূরের ওপর।নূরকে ব্যাথায় এইভাবে ছটফট করতে দেখে বুকটা ছ্যাত করে উঠে আফরানের।তড়িঘড়ি করে নিজের মাকে পানি খাইয়েই নূরের কাছে ছুটে আসে আফরানের।বোনের নিখোঁজ হওয়ার পর বোনের চিন্তায়ই সে বিভোর ছিলো।এদিকে যে নূর বেশি কান্না করলে যে ওর মাথা ব্যাথা করে সে কথা জেনেও ভূলে গিয়েছিলো আফরান।নূরের পাশে গিয়ে দাড়ায় আফরান।
নিজের পিছে কারো উপস্থিতি টের পায় নূর।তবে সে জানে এটা আফরান।তাই সে ঘাড় ঘুরিয়ে পিছে ফিরে তাকাতেই প্রচন্ড মাথার যন্ত্রনা সয্য করতে না পেরে প্রাই চাপা চিৎকার করে উঠে নূর।আফরান ওকে জলদি কোলে তুলে নিয়ে নিজের রুমের দিক ছুটলো আর সার্ভেন্ট কে চা বানাতে বলে গেলো।
সিরি দিয়ে উপরে উঠতে উঠতেই আফরান বলে,
—–” কেন নিজের প্রতি যত্ন নেও না।আমি তো পিকুকে খুজতে ব্যস্ত ছিলাম তাই খেয়াল করিনি।এতো কেয়ারলেস কেন তুমি?”
পরক্ষনে নূরের মুখের দিক তাকালো।দেখে চোখ মুখ কুচকে ওর গেঞ্জি খামছে ধরে আছে নূর।আফরান আর কথা না বাড়িয়ে নূরকে বিছানায় সুইয়ে দিয়ে মেডিসিন খাইয়ে দিলো।তারপর মাথায় হাত বুলাতে লাগলো।একপর্যায়ে নূর ঘুমিয়ে গেলে।ওর মাথায় চুমু খেয়ে বেরিয়ে যায় আফরান।
নিবির সারা জায়গায় খুজতে খুজতে পাগল হয়ে গেছে। তাও বোনকে না পেয়ে পাগল প্রায় হয়ে গিয়েছে।বাগানে দোলনায় বসে আছে অসহায়ত্ব তার মুখে স্পষ্ট।আলিশা আলগোছে নিবির এর পাশে গিয়ে বসে।তারপর নিবিরের হাতের উপর হাত রাখে।নিবির করুন চোখে ওর দিকে তাকাতেই ইশারায় নিজের কোলে মাথা রেখে শুতে বলে আলিশা। নিবির কোন কথা না বলেই আলিশার কোলে মাথা দিয়ে সুয়ে পড়ে। আলিশার চোখে পানি টলমল করছে।নিবিরের মাথায় হাত বুলাতে লাগলো সে।নিবির ক্রোন্দন স্বরে বললো,
—-” আর কোথায় খুজবো আলিশা?কোন জায়গা বাধঁ রাখিনি আমি! আমার বোনটা কোথায় আছে?ঠিক আছে কি না আছে?কিছু জানিনা আমি?কি করবো আমি?”
—–” আপনি প্লিজ এভাবে ভেংগে পড়বেন না।আমাদের সাদু ও মনে রাখবেন।এতো সহজে ওকে কেউ কিছু করতে পারবে না কেউ।আমরা আরো খুজবো ওকে। সবাই মিলে খুজবো।এখন আপনি চলুন কিছু খেয়ে নিবেন।সবাইকেও খাওয়ানো লাগবে। কেও সকাল থেকে কিছু খাই নি।”
—–” আমি খাবো….”
নিবিরকে থামিয়ে আলিশা আবারো বলে,,
—–” আমি জানি আপনি বলবেন খাবেন না বাট সেটা হবে না।না খেলে শক্তি আসবে কোত্থেকে? সাদুকে খুজতে হবে তো।এখন যদি আপনি দূর্বল হয়ে পড়েন তো সাদুকে খুজবেন কিভাবে?প্লিজ উঠুন আর সবাইকে খেতে বলুন প্লিজ।”
নিবির আলিশা’র কথাটায় যুক্তি খুজে পেলো।সে যদি দূর্বল হয়ে পড়ে তাহলে বোনটাকে রক্ষা করবে কিভাবে?না ওকে ঠিক থাকতে হবে। এইসব ভেবেই উঠে দাড়ায় নিবির।তারপর আলিশার হাত ধরে বাড়ির ভীতরে চলে যায়।
তীব্র ব্যাথীত হৃদয় নিয়েও সবাই আহার গ্রহন করে।তবে মনিরকে কেউ কিছু খাওয়াতে সক্ষম হয় না।কারন তার আগেই যে সে তার প্রিয়তমার খোঁজ নিতে বের হয়ে গিয়েছে।আফরান কোনরকম তার বাবা মাকে খাইয়ে দিয়ে তারপর সবার জোড়াজোড়িতে অল্প খেয়ে সেও মনিরের সাথে চলে গেলো।একে একে সব ছেলেরাই চললো আবারো সাদুর খোঁজে।
এদিকে মেয়েরা শুধু পথ চেয়ে রইলো তাদের প্রান প্রিয় বন্ধুর ফেরার আশায়।তারাও খুজতে যেতে চেয়েছিলো।কিন্তু রাত হয়ে এসেছে প্রাই তাই ছেলেরা ওদের মানা করে দেয়।এইজন্যে বাড়িতেই রয়ে যায় তারা।
চলবে,,,,