#ভালবেসে রাখব কাছে
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ২৯
সাদাফ ভাই একটা রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়।আমি বাইরে থেকে ধাক্কাচ্ছি কিন্তু খুলছে না।
“সাদাফ ভাই দরজাটা খুলুন,হাতটা দেখতে দিন আমাকে।”
উনার কোন সারা শব্দ নেই,আমি বারবার ডেকে চলেছি উনি কিছু বলছেও না দরজাও খুলছে না।
“দরজা খুলবেন না ত আপনি!ওকে ফাইন থাকুন আপনি এই বদ্ধ ঘরে।আমি চললাম আপনার বাড়ি ছেড়ে,থাকুন একা।আর বিরক্ত করতে আসব না।”
কথাটা বলেই আমি সেখান থেকে চলে এলাম।আমি শিয়োর উনি এবার দরজা খুলে বের হবে।তাই একটু নাটক করতে হল,নয়ত সারাদিনেও বের হত না।
অন্যদিকে সাদাফ এতক্ষণ সাবিহার কথা শুনেও দরজা খুলে নি।সে খুব রেগে আছে,কেন তার বউকে অন্য কেউ টাচ করবে?তার বউয়ের উপর শুধু তার অধিকার অন্য কেউ কোন অধিকারে তার বউকে টাচ করবে?আর যাই হোক এটা মেনে নেয়া যায় না।
কিছুক্ষণ পর যখন সাবিহার কোন সারা শব্দ পাওয়া যাচ্ছে না তখন সাদাফের সাবিহার বলা শেষ কথাটা মনে পড়ে।আর সাথে সাথে সাদাফ দৌড়ে দরজা খুলে বাইরে আসে।আসেপাশে তাকিয়ে দেখে কোথাও সাবিহা নেই।সাদাফ ছুটে তাদের রুমে গেলো কিন্তু সেখানেও সাবিহা নেই।সাদাফের বুকের ভিতরটা এবার মোচড় দিয়ে উঠল।সাবিহা কী সত্যি তাকে ছেড়ে চলে গেছে?সাবিহা চলে গেলে সাদাফ থাকবে কীভাবে?
এসব ভেবে সাদাফ আবারও পাগলের মত দৌড়ে বাড়ির বাইরে আসে।এসে দেখে সাবিহা পিছনে হাত দিয়ে ধীরে ধীরে হেঁটে চলেছে।এমন ভাবে হাঁটছে যেন পিঁপড়াদেরকেও হার মানাবে।সাদাফ একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে সাবিহার কাছে গিয়ে সাবিহাকে কোলে তুলে নেয়।
সাদাফ ভাই কোলে নেয়ার পর মুচকি হাসলাম।আমি জানতাম উনি আসবে,তাই কিছু না বলে আমি উনার গলা জড়িয়ে ধরে উনার দিকে তাকিয়ে রইলাম।কিন্তু উনি ভুলেও আমার দিকে তাকাচ্ছে না।জামাই আমার ক্ষ্যাপছে ভালো।
সাদাফ ভাই আমাকে ঘরে এনে খাটে বসিয়ে দিয়ে বের হতে নিলে আমি উনার হাত ধরে আঁটকে বসিয়ে দেই খাটে।আর আমি উঠে উনার সামনে কোমড়ে হাত দিয়ে দাঁড়াই।শাসনের স্বরে বলে উঠি,,,
“এখান থেকে এক পা নড়লে না একদম ভালো হবে না।চুপ করে বসে থাকবেন এখানে নয়ত সত্যি সত্যি চলে যাব।”
আমার কথার পরিবর্তে উনি দাঁতে দাত চেপে বলে উঠে।
“চলে যাওয়ার জন্য এক পা বাড়াও একদম জানে মেরে দেব।”
“রাগ করবে ঠিকই কিন্তু ভালবাসা একটুও কমবে না।আর না ছাড়তে পারবে আমাকে,না পারবে আমাকে ছেড়ে থাকতে।”
উনি কিছু বললেন না,চুপ করে বসে রইলেন।আমিও আর কিছু না বলে উনার সামনে হাঁটু গেঁড়ে বসি,আর উনার হাতটা হাতে নিয়ে দেখি অনেকটা ফুলে আছে।বরফ লাগাতে হবে,তাই আমি উঠে দাঁড়াই ফ্রিজ থেকে বরফ আনার জন্য।উনি তখন আমার হাতটা চেপে ধরে আমি সেটা দেখে উনার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেঁসে বলে উঠি।
“কিচেনে যাচ্ছি,এখনই এসে পড়ব।”
তারপর উনার থেকে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে চলে আসি বরফ নিতে।আর সাদাফ ভাই কাউকে ফোন করে।
“এক ঘন্টার মধ্যে কাব্যকে আমার চোখের সামনে দেখতে চাই।এক ঘন্টা মানে এক ঘন্টা,তার এক মিনিট বেশি হলে কী করব জানোই!”
কথাটা বলেই ফোনটা রেখে দেয়।একটু পর সাবিহা এসে বরফ নিয়ে।সাবিহা বরফ লাগাতে লাগাতে বলে উঠে,,,
“ব্রেকফাস্ট কী নিচে গিয়ে করবেন নাকি এখানে নিয়ে আসব?”
সাদাফ ভাই কিছু বলল না,আমিও আর কিছু জিজ্ঞেস না করে নিচে চলে এলাম।আর একটা প্লেটে খাবার নিয়ে উপরে চলে এলাম।এসে দেখি উনি ফোনে কিছু একটা করছে।আমি খাটে খাবারটা রেখে উনার হাত থেকে ফোনটা নেই।
“খাবার নিয়ে এসেছি খেয়ে নিন,খাওয়া শেষ হলে ফোন হাতে পাবেন।”
উনি এবারও কিছু বললেন না।আমার দিকে এক পলক তাকিয়ে মুখটা অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিয়ে,চুপ করে বসে রইলেন।এরকম চুপ করে থাকলে কী ভালো লাগে?রাগ লাগছে খুব,ইচ্ছে করছে বেটাকে পিটিয়ে তক্তা বানিয়ে ফেলতে।কিন্তু এখন রাগ দেখালে চলবে না,দুজন একসাথে রেগে গেলে সমস্যা।তাই একজনকে ত চুপ করে থেকে ত আরেকজনের রাগ ভাঙ্গাতেই হবে।এভাবে নিজের মনকে বুঝিয়ে খাবারের প্লেটটা হাতে নিয়ে খাবার উনার মুখের সামনে ধরলাম।উনি একবার আমার দিকে তাকিয়ে চুপচাপ খেয়ে নিলেন।খেয়েই ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন,বেটায় একবারও বলল না তুমিও খাও।
খাবারের প্লেট নিচে রেখে ঘরে এসে দেখি টেবিলে খাবার বেড়ে রাখা কারো জন্য।আর তার পাশেই একটা চিরকুট।আমি কৌতুহল বশত সেখানে গিয়ে চিরকুটটা খুলি।আর সেটা পড়ে আমার ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠে।চিরকুটটাতে লেখা,,,
“প্লেটে যেন একটা খাবারও অবশিষ্ট না থাকে।”
আমি মুচকি হেঁসে খাবারটা খেয়ে নেই।আমার খাওয়া শেষ হওয়ার একটু পরেই উনি ঘরে আসে।ঘরে এসেই আলমারি খুলে শার্ট আর প্যান্ট নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।আমার দিকে একবার তাকালও না।
গতকাল বলেছিল বাবার অফিসে জয়েন করবে।তাই হয়ত এখন রেডি হতে গেলো অফিসে যাওয়ার জন্য।উনি ওয়াশরুম থেকে বেরোলে আমি উনার সামনে টাই নিয়ে দাঁড়াই।
“বাবার অফিসে যাবেন তাই না!প্রথম অফিসে যাবেন আজ।চলুন আজ আমি আপনাকে রেডি করিয়ে দিব।”
উনার গলায় টাইটা বাঁধতে গেলে উনি আমার হাত ধরে আটকে দেয়।আমি ভ্রু কুঁচকে তাকালে উনি আমার হাত থেকে টাইটা নিয়ে সরে দাঁড়ায়।যার অর্থ সে পড়বে না,কিন্তু আমিও ছাড়ার পাত্রী নই।আমি আরেকটা টাই নিয়ে উনার সামনে দাঁড়াতেই উনি আবারও একই কাজ করে।আমি গাল ফুলিয়ে আবারও আরেকটা টাই নিতে গেলে উনি পিছন থেকে দুইটা টাই এক করে সেটা দিয়ে আমাকে আটকে টান দেয়।আমি উনার বুকের উপর গিয়ে পড়ি,আমার পিঠ উনার বুকের উপর।আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই উনি আমাকে টাই দিয়ে শক্ত করে বেঁধে দিয়ে চলে যায়।কিছুক্ষণ পর সবটা বুঝতে পেরে ছোটার জন্য ছটফট শুরু করি।
“আরে ঐ ফুলাইন্না,আমারে বাঁধলেন কেন?খুলে দিয়ে যান আমাকে।”
চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে এসব বলছি আর ছোটার চেষ্টা করছি।কিন্তু ছুটতে পারছি না,বজ্জাতটা এমন ভাবে বেঁধেছে যে খুলতেই পারছি না।
______________________________________
কাব্যর হাত,পা বাঁধা অবস্থায় মাটিতে পড়ে আছে।আর তার সামনেই সাদাফ রক্তচক্ষু নিক্ষেপ করে তাকিয়ে আছে।
“তকে কাল ছেড়ে দিয়ে খুব বড় ভুল করেছিরে।তকে ছেড়ে দেয়া একদমই উচিত হয় নি আমার।তকে না ছাড়লে হয়ত সকালের ঘটনা গুলো ঘটতই না।কিন্তু এখন এসব ভেবে কী লাভ?যা হওয়ার তা ত হয়েই গেছে।”
“তুই চাচ্ছিস টা কী?কেন আমার সাথে এমন করছিস?কেন সাবিহাকে আর আমাকে আটকে রেখেছিস?ছেড়ে দে আমাকে আমি সাবিহাকে নিয়ে অনেক দূরে চলে যাব।সাবিহার ভালবাসা আমি এতদিনে বুঝতে পেরেছি।এখন তুই আর আমাদের আলাদা করিস না প্লিজ।সাবিহাকে আমার কাছে ফিরিয়ে দে।”
কাব্য কথা শেষ করতেই সাদাফ কাব্যর পেটে একটা লাথি মেরে দেয়।
“আমার সামনে বসে আমারই বউকে নিয়ে চলে যাওয়ার কথা বলছিস তুই?তোকে বাঁচিয়ে রাখা যাবে না।তুই বেঁচে থাকলে যখন তখন ঝামেলা করতে পারিস আমাদের মাঝে।যেটা আমি একদমই চাই না,তাই আজ এই মুহুর্তে তকে আমি পৃথিবীর বুক থেকে বিদায় দিব।”
সাদাফের কথাশুনে কাব্য রীতিমতো ঘামতে শুরু করেছে।সাদাফ বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় আর হাতে একটা রড নেয়।যখনই সাদাফ রডটা দিয়ে কাব্যকে আঘাত করবে তখন কেউ পিছন থেকে আটকায়।সাদাফ রেগে পিছনে তাকায়,আর যা দেখে তা দেখার জন্য সাদাফ একটুও প্রস্তত ছিল না।সাদাফের চোখে এবার রাগের পরিবর্তে ভয় ফুটে উঠে।সাদাফের মুখ থেকে আপনা-আপনি বেরিয়ে আসে,,,
“সাবিহা!”
#চলবে,,,