অন্তরিন প্রণয় -Part 25+26

0
318

#অন্তরিন_প্রণয়
#পলি_আনান
#পর্ব 25+26
বিছানার উপর পড়ে থাকা নুপুরটার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সেহেরিশ।তার চোখে মুখে বিরক্তের আভাস।এই নুপুরটা দেখলেই মনের সূক্ষ্ণ কোন হতে কোথাও যেন বিরক্ত আছড়ে পড়ে।কিন্তু কেন?তার ব্যাখ্যা সেহেরিশ যানেনা।আলমারি থেকে প্রতিটা জামা ভাজে ভাজে বের করে ব্যাগে সাজিয়ে রাখছে সে।জানলা দিয়ে আসা হিমেল হাওয়া গায়ে কাটা তুলছে।এই বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলে আজ মুক্তি।হ্যা চিরতরে মুক্তি।আফীফের জন্য আজ তার একটুও খারাপ লাগছে না।একটুও না।জমতে থাকা অনুভূতিরা কি তবে বিদায় জানিয়েছে।
– আসবো সেহেরিশ?
কেইনের কথায় চমকে তাকায় সে।গলাটা ঝেরে কেশে কেইনকে আসতে ইশারা করে।
– তোর ব্যাগ গোছানো শেষ?
– হুম।এই বাড়িটার জন্য বড্ড কষ্ট হচ্ছে রে সেহেরিশ।মানুষ গুলো একদম ভালো।
– তো থেকে যা। আমরা বরং চলে যাই।
– তোকে ছেড়ে থাকতে পারবো না।
কেইনের কোমল কন্ঠ সেহেরিশ ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আবার নিজের কাজে মনযোগ দেয়।কেইন সেহেরিশের সামনে আরো কয়েক কদম এগিয়ে নরম সুরে বলে,
– তোকে একটা কথা বলি সেহেরিশ?একদম মন থেকে।
– হুম বল।তোর কন্ঠ এমন লাগছে কেন?
– না কিছু না।
– কি বলবি বল।
কেইন সেহেরিশ দু’হাতে নিজের মুঠোয় নিয়ে নেয় যার কারনে সেহেরিশ কিছুটা অপ্রস্তুয় হয়ে যায়।তবুও নিজেকে ধাতস্ত করে শান্ত দৃষ্টিতে তাকায়।
– যদি বলি তোকে ভালোবাসি তবে কি খুব বেশি অন্যায় হয়ে যায়?
– এটা আর নতুন কি তুই আমাকে ভালোবাসিস আমি তোকে।বন্ধু বন্ধুকে ভালোবাসতেই পারে।
– নো!
– মানে? না কেন?
– আমি তোকে সারাজীবনের জন্য পেতে চাই সেহেরিশ।উইল ইউ ম্যারি মি সেহেরিশ?
সেহেরিশ থমকে যায়।দু পা পিছিয়ে আলমারির সঙ্গে ঠেসে দাঁড়ায়। তার অনুভূতি থমকে গেছে।সব কিছু পাগল পাগল লাগছে।কেইন নিতান্তই তার বন্ধু এর বেশি আর দু-অক্ষরও সেহেরিশ ভাবতে পারেনা আর কেইন কি না তাকে স্ত্রী হিসেবে চাইছে।
– দেখ কেইন আমি তোকে ওই চোখে কোন দিন দেখিনি।তুই শুধুই আমার বন্ধু এর বেশি না।একটা কথা ভাব তোর সাথে আমার ধর্মের দিক দিয়ে যায় না।তুই খ্রিস্টান আমি মুসলিম।আর আমি তোকে…
– দেখ সেহেরিশ আমার ব্যাক্তিগত জীবনে কেউ নেই।আর ধর্ম তুই চাইলে আমি তোর জন্য মুসলমান হতে পারি।শুধু তুই একবার রাজি হয়ে যা।প্লিজ সেহেরিশ আই নিড ইউ।
সেহেরিশ চমকে যায়।তার শরীর কাটা দিয়ে উঠছে।কি বলছে এই ছেলেটা।যে করেই হোক কেইনকে বুঝাতে হবে।
– দেখ কেইন তুই আমার বন্ধু।আমি বন্ধু হিসেবে তোকে ভীষণ পছন্দ করি কিন্তু একজন স্বামী হিসেবে তোকে মেনে নিতে পারবো না।
– তবে কাকে পারবি আফীফ দেওয়ান কে?
– কেইন!
কেইনের শান্ত কন্ঠে ধমক দিয়ে উঠে সেহেরিশ।কখনো কেইনের মুখে এমন কথা শুনবে বলে আশা করেনি।তবে কেইন হঠাৎ এই প্রশ্ন কেন করলো?
– আফীফ দেওয়ানের কথা এখানে আসছে কেন কেইন?
– কেন তুই জানিস না?আজ সকালেই আফীফের দাদা তোকে এই বাড়ির বউ হিসেবে প্রস্তাব রেখেছে।কিন্তু আঙ্কেল বারন করেছেন।
– ক.কই আমি তো জানিনা।
– আঙ্কেল আজকেই ঢাকায় ব্যাক করতে চেয়েছে কিন্তু হঠাৎ তিনি অসুস্থ হওয়ায় কাল সকালে যাবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
– আমায় কেউ কিছু বলেনি।শুধু তৈরি থাকতে বলেছে কাল ঢাকায় ফিরবে।
– কেন যদি জানতি তবে বুঝি আফীফকে বিয়ে করতে…
কেইন কথা শেষ করার আগেই সেহেরিশ দ্রুত রুম থেকে বেরিয়ে যায়।বর্তমানে কেইনকে তার বড্ড তিক্ত লাগছে।
.
অন্ধকার মিশ্রিত রুমটায় বসে নেশায় বুদ আফীফ।হঠাৎ নিজের মনের বিরুদ্ধে নিজেই সিদ্ধান্ত নিলো সেহেরিশকে ভুলে যাবে।তার কাছে থাকলে সেহেরিশ সবসময় বিপদে আচ্ছন্ন থাকবে।কি দরকার এমন অনিশ্চিত জীবনের।আফীফ উঠে দাঁড়ায়।টাল সামলাতে না পেরে আবারো হেলে পড়ে যায়।ঠোঁটের কোনে হাসি ঝুলিয়ে আবারো উঠে দাঁড়ায়।দেয়ালের সামনে দাঁড়িয়ে সেহেরিশের ছবিতে চুমু খায়।
– ইসস কি ভুলটাই না করলাম আমি।আট বছর,আট বছর তোমাতে আচ্ছন্ন থেকে এখন সিদ্ধান্ত নিলাম তোমার আর আমার রাস্তা আলাদা।আমি এত শত ভুল করি কেন বলতে পারবে?ভুল দিয়েই আমাদের সম্পর্ক শুরু।প্রথমে ভুল করে তোমার কাকাতুয়াকে আঘাত করলাম এরপর এরপর আবার ভুল করে তোমাকে শাস্তি দেওয়ার পরিবর্তে তোমার মোহে পড়লাম।আবারো ভুল করে অন্যর উপর বিশ্বাস করে আমার আমানত তোমাকে ওই পারভিনের কাছে রেখে গেলাম।কিন্তু ওই কু*টা আমার আমানত খেয়ানত করেছে।আর ভুল নয় সম্পর্ক শেষ এখানেই সমাপ্তি।
আফীফ থামে তার চোখ থেকে অনবরত পানি ঝরছে।হঠাৎ দরজার করাঘাতে সৎবিৎ ফিরে তার।
– আব্বা তুই সকালে দরজা দিয়েছিস এখনো কেন বের হলি না।তুই চাইলে তোর দাদাজান তোর আব্বা ওই মেয়েকে এনে দেবে তুই বের হ আব্বা।আম্মাকে এমন কষ্ট দিস না।
সেঁজুতির কথায় কিঞ্চিৎ হাসে আফীফ।বিড়বিড় করে বলে,
– চাইলে তো আমিও জোর করে আটকা পারি।পুরো পরিবারটাকে বশ করতে পারি কিন্তু জোরাজোরি আমি চাই না।
আফীফ উঠে দাঁড়ায়।অন্ধকার বারান্দায় পা বাড়াতেই কাকাতুয়া পাখিটি ঝটপট উড়ে এসে তার কাঁধে বসে এক সুরে বলতে থাকে,
– রাজা তুমি ভালো নেই, রাজা তুমি ভালো নেই।
– না তোর রাজা ভালো নেই।ফুরপরী চলে যাচ্ছেরে তোর রাজা ভালো নেই।
– ফুলপরী তোমার,ফুলপরী তোমার।
– সেটা আমি আর তুই জানি বাকিরা তো জানে না।
আফীফেকের কথায় কাকাতুয়া পাখিটি কি বুঝলো কে জানে।ঝটপট বারান্দার গ্রিল দিয়ে উড়ে চলে যায় সেহেরিশের বারান্দায়।আফীফ সেদিকে তাকিয়ে গর্জে উঠে।
– তুই অন্তত আমাকে ধোকা দিস না।কোথায় যাচ্ছিস তুই?ফিরে আয়, ফিরে আয় বলছি।
আফীফের ফোন বেজে উঠে।একবার,দুইবার,তিনবার, ফোন বেজে বন্ধ হয়ে গেছে আফীফ ধরলো না।কে ফোন করেছে কে জানে?গুরুত্ব না দিয়ে বারান্দায় লেপ্টে বসে যায়।শীতের রাত কুয়াশায় বাড়ির গেটের লাইটগুলো ধৌয়াশা হয়ে আছে।হিমেল হাওয়ায় সারা শরীর কেঁপে উঠছে।আবারো ফোন বেজে উঠতে আফীফ দ্রুত রুমে যায়।মুনিফের নাম্বার দেখে রিসিভ করে,
– কি দরকার তোর এত কল করছিস কেন?
– তুই ছাইপাঁশ গিলেছিস আফীফ?তুই না ভালো ছেলে।
– ভালো হয়ে লাভ কি যদি নিজের চাওয়া পাওয়া অপূর্ণ থাকে।
– তাহলে খারাপ হয়ে যা।সবসময় বলতি আফীফ দেওয়ান নিজের স্বার্থ ঠিক রাখে তবে এখন এত নাটক করছিস কেন?তুই না সবসম বলতি সেহেরিশ তোর অন্তরিন প্রণয়।সে তোর বন্দি ভালোবাসা।ছোট থেকেই তোর কাছে বন্দিনি।তবে এখন ছেড়ে দিচ্ছিস কেন?
– আবার বন্দি করলে কি ভালোবাসা পাবো পাগলা?
আফীফ হাসতে থাকে।অন্যরকম হাসি।মুনিফ বিরক্ত হয়ে ফোন কেটে দেয়।
.
সেহেরিশ ঘুমিয়ে আছে।কিছুক্ষণ আগে যখন চিন্তায় সব কিছু যখন উলট পালট লাগছিল তখন মারুফার কোলে মাথা রেখে সব চিন্তা দূর হয়ে যায় তার।মারুফা আলতো হাতে সেহেরিশের চুলে বিলি কেটে দেয়।সে ঘুমিয়ে গেলে তৎক্ষনাৎ মারুফা কম্বোল মুড়িয়ে দিয়ে নিজের রুমে চলে যায়।
দরজা ফাঁক করে নিঃশব্দ পায়ে রুমে ডুকলো কেউ।সেহেরিশের পাশে থেমে অপলক ভাবে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ।
– তুমি চলে যাও। চলে যাও তুমি।যেখানে আমি তোমায় পাবো না সেখানে তুমি থেকো না।আর আমি থাকতে দেবো না।যদি আমি তোমায় না পাই তবে কারো পাওয়ার অধিকার নেই।ভালো থাকো সেহেরিশ।আলবিদা!
অজ্ঞাত ব্যাক্তিটি আবারো নিঃশব্দ পায়ে বেরিয়ে যায়।তার চোখে মুখের খুশির ঝলক।
.
সকাল সকাল কারো কান্নার আওয়াজে ঘুম ভাঙ্গে সেহেরিশের।তার মাথার কাছে সেঁজুতিকে দেখে তড়াক করে উঠে বসে,
– আ..আন্টি আপনি?
– আমাকে তুমি বাচাঁও মা আমাকে তুমি বাঁচাও।আমার ছেলেটাকে আর প্রাণে মেরো না।
– আন্টি আপনি কি বলছেন এইসব।
– কাল সকালে দরজা বন্ধ করেছে আজ এখনো খোলে নি।
– এইসব কেন করছে আন্টি?
– তোমার জন্য।তোমার বাবাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন।এরপর সে রুমে ডুকে আবার বের হয় বাড়ির বাইরে গিয়ে কিসব ব্যাগে করে নিয়ে রুমে ঢোকে আর খোলেনি দরজা।
– আমি কি করতে পারি আন্টি?
সেহেরিশের গলা কাপছে।
– তুমি আফীফকে বাইরে আসতে বলো দেখবে সে বাইরে বের হবে।
– ঠিক আছে আন্টি আমি চেষ্টা করবো।
সেহেরিশ কথা শেষ করতেই হুড়মুড় করে রুমে ডুকেন ফাহমিদা।সেহেরিশকে উদ্দেশ্য করে তিনি শুধালেন,
– মামনি তৈরি হয়ে নাও।একঘন্টা পরেই আমাদের মাইক্রোবাস আসবে।
সেঁজুতির কান্নারত মুখটার দিকে তাকিয়ে ফাহমিদা এগিয়ে আসে।
– ভাবি আফীফ এসব করে কি হবে। আমারা তো আমাদের কথার খেলাপ করতে পারবো না।মেয়ের বিয়ে অন্যত্র ঠিক হয়ে গেছে।
– আপনাদের সমস্যাটাও আমি বুঝতে পারছি।তবে আপনাদের মেয়েকে আমরা কখনো ফেলবো না।
– হুম।
সেহেরিশ শূন্য হাতে আফীফের রুমের সামনে থেকে ফিরে আসে।বেশ কয়েকবার ডাকার ফলেও আফীফ দরজা খুলেনি।অন্যদিকে আহনাফ দেওয়ান সহ বাড়ির সকলের কান্নারত মুখটার দিকে তাকিয়ে সেহেরিশ নিজেকে বড্ড অসহায় ভাবছে।এই মূহুর্তে কেন যেন মনে হচ্ছে আফীফকে তার কাছে টেনে নেওয়া উচিত।এমন পরিবার এমন অন্ধ ভালোবাসা সে কখনো পাবেনা কিছুক্ষণেই উপলব্ধি করে যদি আফীফের কাছে নিজেকে একবার সমর্থন করে তবে পরিবার ছেড়ে নিজেকে অনেক দূরে থাকতে হবে।
সেহেরিশ নিজের পুরো রুমটাতে আরেকবার চোখ বুলিয়ে নেয়।ব্যাগপত্র নিয়ে মোবাইল হাতে নিয়ে রুম থেকে বের হতেই মোবাইলে মেসেজ টোন বেজে উঠে।আননোন নাম্বার থেকে মেসেজ দেখে সহসা ভ্রু যুগল কুচকে যায় তার।এতদিনের জানতে চাওয়া সত্যিটা তবে সেহেরিশের সামনে এসেছে।কিন্তু এখন কি করবে সে?
ব্যাগপত্র রেখে সেহেরিশ এক ছুটে তার বাবার কাছে যায়। তার শরীর কাপছে।নিজেকে বড্ড অসহায় লাগছে।
– পাপা পাপা প্লিজ আমি এখান থেকে যাবো না।
– যাবে না মানে কি?
– পাপা আমি আফীফকে বিয়ে করবো। প্লিজ পাপা।
– এসব কি কথা আমার সিদ্ধান্ত আমি নিয়ে নিয়েছি।তোমার কথায় সবটা হবে না।
– প্লিজ পাপা আই নিড আফীফ।
সেহেরিশের এমন কথায় বাড়ির সকলেই চমকে তাকায়।কেইনের চোখ মুখ লাল হয়ে আছে।তার বুকের ভেতরটায় কেমন উথাল-পাতাল ঝড় বয়ে যাচ্ছে।
– আমার কথা শুনো সেহেরিশ এই মূহুর্তে আমরা চলে যাবো তোমার ব্যাগপত্র নিয়ে আসো।
– আমি যাবো না পাপা আমি যাবো না।
সেহেরিশ এক ছুটে আবারো দোতলায় চলে যায়।তার পেছন পেছন বাড়ির সকলেই আসতে থাকে।আফীফের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে অনবরত করাঘাত করছে সেহেরিশ।
– প্লিজ আফীফ দরজা খুলুন।আমি ফিরে এসেছি আপনি প্লিজ দরজা খুলুন।
রুমের ভেতর থেকে আফীফের সেহেরিশের কথা গুলো শুনলেও পাত্তা দিলো না।সে ভেবেই নিয়েছে হয়তো তাকে বের করার জন্য সেহেরিশ এমনটা করছে।
– আফীফ আপনি শুনতে পারছেন না?সেহেরিশ ফিরে এসেছে সে খুব শীঘ্রই আপনার হয়ে যাবে প্লিজ বেরিয়ে আসুন।
– মিথ্যা কেন বলছো সেহেরিশ?আমার অনুভূতি নিয়ে তামাশা আমি সহ্য করবো না।
– কসম আফীফ আমি ফিরে এসেছি। আপনি দরজা খুলুন।আপনার ভালোবাসার কসম!
আফীফ হুড়মুড় করে উঠে বসে। কেন যেন সেহেরিশের কথা এই মূহুর্তে মোটেও মিথ্যা মনে হচ্ছে না তার।
সহসা খুরশীদ আনওয়ার মেয়ের উপর ক্ষিপ্ত হোন।সেহেরিশের হাত টেনে নিয়ে যেতে চাইলে সেহেরিশ আফীফের উদ্দেশ্য আবারো ডেকে উঠে কিন্তু তখনো আফীফ দরজা খুলেনি।
– পাপা প্লিজ আমি এই প্রথম বার তোমার আবদাদ করছি তোমার কাছে আফীফকে আমি বিয়ে করতে চাই
– তোর বিয়ে ঠিক হয়ে আছে।
– মিথ্যা কেন বলছো তুমি?
হুট করেই দরজা খোলার শব্দে সবাই চমকে তাকায়।সবার চোখের পলকে আফীফ সেহেরিশকে এক টানে রুমে নিয়ে শব্দ করে দরজা বন্ধ করে দেয়।দরজার বাইরে থেকে খুরশীদ আনওয়ার সহ বাকিরা আহাম্মক বনে তাকিয়ে আছে।
আফীফ সেহেরিশকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে।এতটাই দৃঢ় ভাবে দুহাতের বেষ্টনীতে আকড়ে আছে সেহেরিশ এক বিন্দু পরিমানেও নড়তে পারছে না বরং তা নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।
– আফীফ কি করছেন আপনি?আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে।
– আসুক এতক্ষণ যে আমার প্রাণ আটকে ছিল তোর মাঝে তখন কই ছিলি?
– এই যে আমি ফিরে এসেছি এবার ছাড়ুন।
– ছেড়ে যাবি কখনো?
– না এবার ছাড়ুন।
– সত্যি?
– সত্যি!
আফীফ সেহেরিশকে ছেড়ে দেয়।সেহেরিশ আফীফের বুকে মাথা রেখে জোরে জোরে শ্বাস নিতে থাকে।এলোমেলো চুল গুলো কানের পেছনে গুজে সেহেরিশ ঘুরে তাকাতেই বাকরুদ্ধ হয়ে যায়।
পুরো দেয়াল জুড়ে একটি মেয়ের ছবি।তার আশে পাশে ডায়রীর ছেড়া কাগজ লাগানো।ভালোভাবে দৃষ্টি রাখতেই বুঝতে পারে এগুলো তার ছবি।হঠাৎ ঘাড়ের কাছে তপ্ত শ্বাস অনুভব করতেই শিউরে উঠে সে।আফীফ তার ঘাড়ে মাথা রেখে দুহাত আকড়ে ধরে।সেহেরিশ অবাক কন্ঠে বলে,
– এ..এসব কি?
– কোন সব?
– দেয়ালে?
– আমার ছোট্ট তাকিয়ার ছবি।আমার ছদ্মবেশী সেহেরিশের ছবি আমার প্রাণপ্রিয় ফুলপরীর ছবি।
– এত ছবি?
– ভালোবেসে আগলে রেখেছি এই ছবি গুলো। আমার তোমাকে কাছে পাওয়া, সময় অসময় তোমাকে দেখেতে চাওয়া তৃষ্ণা মিটিয়েছে এই ছবিগুলো।ডায়রির হাজারটা পাতায় জড়িয়ে আছে তুমি নামক শব্দেরা।
– আর কি কি করেছেন আমার অবর্তমানে?
– তোমায় নিয়ে লেখা আমার অগনিত শব্দ ভান্ডারের ডায়রি’টি তোমার কাছে অমূল্যবান হলেও আমার কাছে তা চির মূল্যবান। সেই ডায়রির এক একটি পাতা যদি তুমি মনযোগ দিয়ে পড়তে তবে আমাকে আর সেই ডাইরির স্মৃতি নিয়ে দিন কাটাতে হতো না।
আফীফের কথায় সেহেরিশ কি বুঝলো কে যানে।সে শুধু শব্দ করে দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো।
#চলবে….
❌কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ❌
#অন্তরিন_প্রণয়
#পলি_আনান
#পর্ব_২৬
আহনাফ দেওয়ানের মুখোমুখি গম্ভীর মুখে বসে আছেন খুরশীদ আনওয়ার।সকাল-বিকেল পেরিয়ে রাত শুরু হলো কিন্তু এখনো সেহেরিশের দেখা মিলেনি।সবাই নাওয়াখাওয়া ছেড়ে এখনো আগের সাজে বসে আছে।খুরশীদ আনওয়ারের মুখের দিকে তাকিয়ে ক্রমশ কয়েকটি ঢোক গিললেন ফাহমিদা।আজ সেহেরিশের সাথে দেখা হলে নির্ঘাত রণক্ষেত্র তৈরি হবে।
– দয়া করে এত রেগে থাকবেন না।আমরা আপনার মেয়েকে তো জলে ভাসিয়ে দেবো না।সে যেহেতু আফীফের স্ত্রী আশা করি বুঝতেই পারছেন পরিবার, সমাজে সে ঠিক কতটুকু মর্যাদা, ভালোবাসা পাবে।এই কয়েকদিনে আমাদের আফীফের সম্পর্কে খুব ভালোই জেনেছেন আশা করি।
আহনাফ দেওয়ানের কথায় আড় চোখে তাকায়
খুরশীদ আনওয়া।
– আপনাদের ছেলে নিতান্তই একজন সুদর্শন যুবক।সব দিক দিয়েই পার্ফেক্ট।তবে তার জন্য আমার মেয়ে একদম পার্ফেক্ট নয়।সে আরো ভালো মেয়ে ডিজার্ভ করে।
– যেখানে আফীফ নিজে সেহেরিশকে পছন্দ করেছে সেখানে এর থেকে ভালো আর কি হতে পারে?
– একটা কথা বলুন তো,বাংলাদেশের কথাই ধরলাম একজন ছেলে একজন মেয়ে দুজন দুজনকে পছন্দ করেই বিয়ে করে।হয় কখনো বাবা মায়ের অসম্মতি বা কখনো তাদের সম্মতিতে।কিন্তু তাদের মাঝে কি বিচ্ছেদ হয় না?একজন আরেকজন কে ভালোলাগলো,ভালোবাসলো বলেই যে বিয়ে করতে হবে এমনটা না।কে কার জন্য কতটা পার্ফেক্ট তা আগে নির্নয় করা জরুরি।
তাই আবারো বলছি আফীফের আমার মেয়েকে ভালোলাগলো বলেই এইসব পাগলামি করবে আর আমি আমার মেয়েকে হাসতে হাসতে তার হাতে তুলে দেবো তা কিন্তু নয়।আমি আমার।মেয়ের জন্য যোগ্য পাত্রের সন্ধ্যান করবো।আফীফ যে আমার মেয়েকে ছেড়ে দেবেনা বা মানসিক শান্তিতে রাখবে তার নিশ্চয়তা কি?
খুরশীদ আনওয়ার থামে।এতক্ষণ আমান কিছুটা দূরে সামীর সঙ্গে অন্য সোফায় বসে রুবিক্স কিউব সমাধান করায় ব্যস্ত ছিল।কিন্তু খুরশীদ আনওয়ারের কথা কানে আসতেই তার ভেতরে চাপা রাগের সঞ্চার হয়। কাউকে কিছু প্রকাশ করতে না দিয়ে।হাতের রুবিক্স কিউবটি নাড়াতে নাড়াতে খুরশীদ আনওয়ারের মুখোমুখি সোফায় বসে পড়ে।শান্ত,তুখোড় কন্ঠে বলে,
– আঙ্কেল বললেন না বিয়ের পর আফীফ ভাই সেহেরিশ আপুকে যে ছেড়ে দেবে না তার নিশ্চয়তা কি?আমি বলে রাখছি একটা সময় আসবে আফীফ ভাই ছাড়তে চাইবে না কিন্তু আপনারা তাদের বিচ্ছেদ ঘটানোর জন্য উঠে পড়ে লাগবেন।এটা আফীফ দেওয়ান একবার বিয়েটা হোক তার পর দেখবেন।অবশ্য ৮০% কাজ এখন ভাইয়ের কমপ্লিট হয়ে গেছে।
– এই ছেলে কি বলছো এইসব তুমি?
– না ভয় পাবেন না।আগে কথাটা শুনুন,এতদিন ভাইয়া সেহেরিশ আপুর অসম্মতিতে কিছু বলতেও পারেনি করতেও পারেনি তবে এখন সেহেরিশ আপুর মুখ থেকে একবার যখন সম্মতি পাওয়া গেছে এবার আপু পরবর্তীতে চাইলে আফীফ ভাইয়ের কাছ থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পারবে না।
আমানের কথা শুনে বিস্তার হাসি হাসে আহনাফ দেওয়ান।
.
গাল ফুলিয়ে জড়োসড়ো হয়ে শুয়ে আছে সেহেরিশ।আফীফের কান্ডে সে এবার বড্ড বিরক্ত।তার সম্মতিতে এই ছেলে যা শুরু করেছে বিয়ে হলে তো তাকে আস্ত রাখবে না।সেই সকালে সেহেরিশকে জড়িয়ে ধরে বেশ অনেক্ষণ নিঃশব্দে কাঁদে।সেহেরিশের গলায় মুখ ডুবিয়ে কান্নার ফলে তার গলার সমস্ত অংশ ভিজে আছে।এখনো কেমন ভেজা ভেজা ভাব অনুভব করছে সে।সকাল পেরিয়ে রাত হয়ে গেছে। এই বিস্তার সময়ে আফীফের মুখ থেকে টুকটাক কিছু কথা বের হলেও বেশির ভাগ সময় সে চুপ করেছিল।সে শুধু তার সেহেরিশকে অনুভব করছিল।
– এবার কি আপনি আমায় ছাড়বেন?
– না।
– আমি এবার উঠবো প্লিজ সরুন।
– প্লিজ সেহেরিশ যেওনা।তোমাকে কাছে পাওয়ার তীব্র নেশাটা আজ তবে কিঞ্চিৎ পরিমান ঘুচেছে।
– না সরুন।কিসব করছেন আপনি।
– কি করেছি?একটু জড়িয়ে ধরেছি,জানো তোমার গায়ের গন্ধটা আমার বেশ ভালোলাগে।একদম মোহনীয়।তুমি যখন ছোট বেলায় ঘুমিয়ে থাকতে তোমার পাশে থেকে আমি ঘ্রাণ নিতাম।
– সরুন আপনি, এটা আমার পাফিউমের ঘ্রাণ।
– বোকা মেয়ে।তুমি কি জানো তোমার শরীর ঘ্রাণ আর পারফিউমের ঘ্রাণ দুটো মিলে এলকোহল তৈরি হয়।নেশা,নেশা মস্তবড় নেশা লেগে যায়!
সেহেরিশ আফীফের ঘোর লাগা কন্ঠে ভ্রু কুচকে তাকায়।এই ছেলেকে বিয়ে করলে যে তার মৃত্যু হবে তা খুব ভালো করেই বুঝতে পেরেছে সেহেরিশ।প্রতিহিংসা,বিদ্বেষ, রুষ্টতা থেকে নয় বরং আফীফের ভালোবাসায় মৃত্যু হবে তার।
– মি.ঘ্রাণ বিজ্ঞানী আপনি দয়া করে উঠবেন প্লিজ আমি বাইরে যাবো।সেই সকালে আমায় বন্দি করেছেন আর এখন রাত হতে চললো।
– হুহ।
আফীফ উঠে বসে সেহেরিশ নিজেও উঠে চুল গুলো ঝাকিয়ে বিছানা থেকে নেমে যায়।আফীফের সম্মুখে দাঁড়িয়ে ড্রেসিং টেবিলের আয়নার দিকে তাকিয়ে বিরস সুরে বলে,
– ধরুন এবার আমি আপনাকে ছেড়ে চলে গেলাম তবে কি হবে?
সেহেরিশের কথা শেষ করতে দেরি হলো কিন্তু তার উপর দিয়ে সুনামি বয়ে যেতে দেরি হলো না।সেহেরিশ পিট পিট করে চোখ খুলে তার অবস্থান বোঝার চেষ্টা করছে।হঠাৎ আক্রমণে ঘাড়ের ব্যথায় এদিক থেকে সেদিক তাকাতে বড্ড কষ্ট হচ্ছে তার।সে বিছানায় শুয়ে আছে আফীফ তার উপরে শুয়ে, তার দিকে তাকিয়ে আছে ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে।তার তপ্ত শ্বাস আছড়ে পড়ছে সেহেরিশের চোখে মুখে।সেহেরিশ ঢোক গিলে।আফীফ তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
– কি বলেছো?আমাকে ছেড়ে যাবে?
– হুহ!মানে এমনি বলছিলাম।
সেহেরিশের কথা শেষ হতেই আফীফ তার গলায় মুখ ডোবায়।হঠাৎ সেহেরিশ অনুভব করে তার গলার চামড়া ভেদ করে যেন রক্ত শোষণ করতে চাইছে আফীফ।কিছুক্ষণের মধ্যেই তীব্র ব্যাথায় সেহেরিশ কেঁপে উঠেতেই আফীফ তার মুখ চেপে ধরে।বেশ কিছুক্ষণ পর আফীফ সেহেরিশকে ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়।আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আঙুল দিয়ে চুল গুলো এমন ভাবে ঠিক করছে যেন একটু আগে কিচ্ছু হয় নি।সেহেরিশ হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে আফীফের দিকে।সেহেরিশ গলায় হাত দিতেই লাফিয়ে উঠে,
– ইয়াক!ছিহহ গলায় লালা লাগিয়ে দিয়েছেন কেন?
– ছেড়ে যাবে বললে কেন?
– তাই বলে…আহ আমার গলায় ব্যাথা করছে।
আফীফ সেহেরিশকে টেনে আয়নার সামনে দাড় করায়।
– দেখো আমার ভালোবাসার সিলমোহর লাগিয়ে দিলাম।
– আল্লাহ আপনি এটা কি করলেন।বা..বাইট!
– উহুহ, বাইট বলছো কেন লাভ বাইট বলো।
– এটা কি করা খুব জরুরি ছিল?
সেহেরিশের ঝাঝালো কন্ঠ।আফীফ তার গলায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে,
– আর বলবে ছেড়ে যাবে?সিলমোহর দিয়ে দিলাম আমার।এবার সারাজীবন এই দাগ থেকে যাবে।ক্রমশ কালো হতে থাকবে যেখানে যাও এই দাগ নিয়ে যাবে।
সেহেরিশ প্রত্যুত্তর করলো না।তার চোখের কোনে জল চিকচিক করছে।আফীফ বুঝতে পেরে মলম এনে সেহেরিশকে বসিয়ে তার কামড়ের জায়গায় মলম লাগিয়ে দিতে থাকে।
– শুনো সেহেরিশ তুমি ৭০% আমার হয়ে গেছো।এতদিন তোমার সম্মতি হীন আমি কিছু করতে পারিনি।হাত-পা গুটিয়ে বসে ছিলাম।এবার তুমি ছেড়ে যেতে চাও আর কেউ তোমাকে নিয়ে যেতে চায় যাই করুক এর ফল বেশি ভালো হবে না।আমি ফ্রেশ হতে যাচ্ছি তার আগে রুম থেকে বের হবে না।দুজনে একসাথে বের হব।তোমার পাপা নিশ্চই ক্ষেপে আছে তোমাকে দেখলেই হাত চালাতে দেরি করবেন না।তাই আমাকে ছাড়া বাইরে বের হবে না।
সেহেরিশ মাথা নেড়ে সায় দেয়।আফীফ ক্লজেট থেকে জামা নিয়ে দ্রুত ওয়াশরুমের উদ্দেশ্য পা বাড়ায়।
আফীফ চলে যাওয়ার পর সেহেরিশ আফীফের রুমটা খুটিয়ে দেখছে দেয়ালের ছবি গুলোর দিকে তাকিয়ে সে বেশ অবাক হয় কেননা প্রতিটা ছবি সেহেরিশের অজান্তে তোলা।
সেহেরিশের ঠোঁটের কোনে কিঞ্চিৎ হাসির রেখা মিলে যায়।কোন স্পাই তার পেছেন আছে কে জানে।
কিছুটা এগিয়ে এসে সেহেরিশ দেয়ালে থাকা একটি ডায়রির ছেড়া পাতা পড়তে থাকে।
” আমার অনুভূতি মিথ্যা নয়!তাকিয়ার মনে জমে থাকা ঘৃণা একদিন ভালোবাসায় রূপান্তরিত হবে আমি শুধু সেই দিনের অপেক্ষায়….
৬ জুলাই ২০১৮
সেহেরিশ চমকায়।কত আগের লেখা আফীফের অনুভূতি গুলো।পাশে রাখা আরেকটি কাগজের লেখা সেহেরিশ পড়তে থাকে।
” আমি একা হাতে সপ্নের ঘর বুনি, একা হাতে সপ্ন সাজাই। কিন্তু যার জন্য আমার এই আয়োজন সে আমার ধরা ছোঁয়ার বাইরে!তবুও আমি তার অপেক্ষায়…..
২১ অক্টোবর ২০১৭
সেহেরিশ থমকে যায়।অনুভূতি গুলো দোটায়নায় খেলছে।দু’চোখ বার বার ঝাপসা হয়ে আসছে।একটা মানুষ তাকে আড়ালে এতটা ভালোবাসে কিন্তু সে কি পালিয়ে বাঁচার পায়তারা করছিল।ইসস ভালোবাসা সত্যি সুন্দর যদি অপর পক্ষের মানুষটি নিটোল ভাবে ভালোবাসে।
– আমার এই লেখা তুমি টানা চারদিন পড়লেও শেষ করতে পারবে না।আর অনুভূতি গুলো সম্পূর্ণ অনুভব করতে কখনো পারবেনা।
আফীফের কথায় তড়াক করে পেছনে ঘুরে তাকায় সেহেরিশ।মাথা নুইয়ে কিছুটা ঘুরে দাঁড়ায়।আফীফের গায়ে ব্লাক জ্যাকেট চুল গুলো ভেজা চোখে মুখে শুভ্রতার ভাব সেহেরিশ আবার দৃষ্টি সরিয়ে নেয়।
– কাল সারাদিন সারারাত সিগারেট, মদ গিলেছি শুধু তাই গোসল করে নিলাম।শশুড় আব্বা গায়ে যদি সিগারেটের গন্ধ পায় তবে তো আবার বলবেন জামাই গাঞ্জা খোর।
– হাহ।আমার খিদে পেয়েছে।সেই সকালে একটু খানি স্যান্ডউইচ খেয়েছি।
– এত আদর দিলাম পেট ভরলো না?তুমি তো মহা খাদক সেহেরিশ।বাই দা ওয়ে এতক্ষণ তো আদর পেয়েছো এবার দেখো কি ঝড়টা যায় তোমার উপর।
– সেটাই ভাবছি আমি।
– চলো অলরেডি রাত নয়টা বেজে গেছে।
আফীফ সেহেরিশ একসঙ্গে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।সেহেরিশ আফীফের আগে আগে হাটতে গেলেই পেছন থেকে ডেকে উঠে আফীফ।
– সেহেরিশ।
– হ্যা বলো।
– আমার পাশে আসো।
সেহেরিশ আফীফের পাশে দাড়াতেই আফীফ সেহেরিশের হাতের মুঠোয় তার হাত আঁকড়ে ধরে।
– সব সময় আমার পাশেপাশে থাকবে খবরদার আগে কিংবা পিছনে নয়।
সেহেরিশ পলকহীন ভাবে তাকিয়ে আছে আফীফের দিকে।এই মানুষটার ভালোবাসা বড্ড অদ্ভুত!
.
থাপড়ের শব্দে সবাই একসঙ্গে চমকে তাকায় খুরশীদ আনওয়ারের দিকে।হ্যা চড়টা সেহেরিশের গালেই পড়েছে।
– প…পাপা
– চুপ!পাপা ডাকবি না তুই আমায়।আদর করে করে তোকে বেয়াদব করে তুলেছি তাই আজ বাবা মায়ের সিদ্ধান্তের উপরে তুই কথা বলিস।
খুরশীদ আনওয়ার আবার হাত তুলতেই
আফীফ সেহেরিশ হাত টেনে দু-কদম পিছিয়ে আনে।সেহেরিশ কাদঁছে, নিরবতা ভেঙ্গে তার হেঁচকির শব্দ চারিদিকে ধ্বনি তুলছে।আফীফের বাবা মাসুম এগিয়ে এসে সেহেরিশের মাথায় হাত বুলিয়ে অনুনয় সুরে বলে,
– থাক কান্না করিস না।ভাইজান রেগে ছিল তাই চড় দিয়ে ফেলেছে।
– এই মেয়েকে খুন করে ফেলবো আমি এত সাহস কোথায় পেলো সে, আমার উপরে কথা বলে।
খুরশীদের কথা কেঁপে উঠে সেহেরিশ।আবারো তিনি তেড়ে আসতে নিলেই ঢাল হয়ে দাঁড়ায় আফীফ।
– আঙ্কেল একবার মারার জন্য সাহস করেছেন কিচ্ছু বলিনি দ্বিতীয় বার আর করবেন না প্লিজ।
– মেয়ে আমার তাকে আমি মারবো কাটবো নদীতে ভাসিয়ে দেবো সেটা কী আমি তোমায় জিজ্ঞেস করবো?
– আমি জানি মেয়ে আপনার।তবে মারার কারনটা আমাকে নিয়ে।তাই আমাকে কথা বলতেই হবে।
– তোমাদের আমায় আগেই সন্দেহ হয়েছিল এতটা আদর সোহাগ মোটেও এমনি এমনি করনি।আমার নির্বোধ মেয়েটার মাথা চাবিয়ে খেয়েছো।
– সরি আঙ্কেল বিষয়টি একটু ভদ্র ভাবে করতে চেয়েছিলাম কিন্তু আপনারাই আমার ভদ্রতাটা কেড়ে নিলেন।ভালোয় ভালোয় রাজি হয়ে গেলে কি খুব ক্ষতি হয়ে যেত?
– এত কৈফিয়ত আমি তোমায় দিতে পারবো না। এই মেয়ের যদি এই বাড়িতে থাকার সখ হয় তবে থাকুক সে আমরা চলে যাবো।এই সবাই চলো।
খুরশীদ বড় ব্যাগটি হাতে তুলে নিতেই সেহেরিশ ছুটে যায় তার বাবার দিকে।কিন্তু আফীফকে পেরিয়ে যেতেই সেহেরিশ হাতে টান অনুভব করে।আফীফ তার কবজি শক্ত করে ধরে আছে।সেহেরিশ কান্নার ঘোরে ইশারা করে আফীফকে হাত ছাড়তে কিন্তু আফীফ মাথা দুই পাশে নাড়িয়ে না বোধক ইশারা করে।সেহেরিশকে টেনে তার কাছে এনে কানের সামনে ফিসফিস করে বলে,
– বলেছি না সামনেও না পিছনেও না একদম পাশাপাশি থাকবে। আর এই নিয়ম সারাজীবনের জন্য।
সেহেরিশ আর কিছু বলতে পারলো না কান্নায় তার শরীর কাঁপছে।
– আমার মেয়েটাকে বশ করে ফেলেছো দেখছি।
– আঙ্কেল এখনো অনেক কিছু দেখার বাকি।
– ভালোয় ভালোয় বলছি আমার মেয়েটাকে ছেড়ে দাও আমি কিন্তু আইনের আশ্রয় নিতে বাধ্য হবো।
– আইন?আইন শেখাচ্ছেন আমায়?আপনি যে কেন এই বাড়িতে মেয়েকে বিয়ে দিতে চাইছেন না তা আমি জানি আমার সাথে এইসব টালবাহানা করবেন না।আর আপনার মেয়েকে শুধুমাত্র আপনাদের অসম্মতিতে আমি ছেড়ে দেবো এত সহজ নাকি?আট থেকে নয় বছর তাকে নজরে রেখেছি, একটু একটু করে আমি নিজেকে সামলে রেখেছি আর সামনে পেয়ে ছেড়ে দেবো এত সহজ নয়।এই বাড়ির চৌকাঠ পার হওয়ার আগেই আক্রমণ আপনাদের উপর হতো আমি সিওর।অন্তত আমার স্বার্থ, আমার ভালো থাকার জন্য হলেও আমার দাদাজান আপনাদের এত সহযে এই বাড়ি থেকে বের হতে দিতেন না।
আফীফ থামে।চোখ বন্ধ করে শ্বাস ছেড়ে মাথা ঘুরিয়ে দেয়াল ঘড়িটার দিকে তাকায়।রাত নয়টা পয়ত্রিশ।আফীফ তার দাদাজানের দিকে তাকিয়ে গমগম সুরে বলে,
– দাদাজান কাজে লেগে যাও।কাল থেকে বিয়ের সব আয়োজন শুরু।এই রাতেই শহর থেকে ওয়েডিং প্লেনার দের আনার ব্যবস্থা কর।আমি কোন ক্রুটি দেখতে চাই না।এটা জমিদার আহনাফ দেওয়ানের নাতি আফীফ দেওয়ানের বিয়ে।আশা করি বুঝতেই পারছো?
– তুই কোন চিন্তা করিস না।আমি এখনি সবাইকে নিয়ে ব্যবস্থা করছি।
কেইন এতক্ষন নিরব দর্শক হয়ে সবটা দেখছিল।তার ভেতরটা মুষড়ে যাচ্ছে।শুষ্কো ঠোঁটটা কামড়ে ধরে কান্না থামানোর ব্যবস্থা করে।কিন্তু তবুও চোখে পানি চলে আসছে তাই সবার মাঝ থেকে নিজেকে দ্রুত আড়াল করে নেয়।
.
সেহেরিশ হেচঁকি তুলে কাদছে তার সামনে আফীফ এক থালা ভাত নিয়ে বসে আছে।বাম হাতে সেহেরিশের চোখের পানি মুছে আশ্বাস সুরে বলে,
– কান্না করছো কেন তুমি?একদম কাদবেনা।দেখো চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে কালকের মেকাপ সুন্দর হবে না কিন্তু।
– পাপা আমার উপর অভিশাপ দেবে আমি জানি।
– তুমি বুঝিয়ে বলবে সেহেরিশ।দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে।আঙ্কেলের সাথে আমি কথা বলবো।
– না আমি পাপার সামনে যাবো না আমায় মেরেই ফেলবে।
– বোকা মেয়ে।তোমার অনেক সুবিধা হলো জানো তুমি?বিয়ের পর আঙ্কেল বকা দিলে ছুটে চলে আসবে আমার কাছে।বুকে মাথা রেখে ইচ্ছে কাঁদবে।আর আমার যখন ভীষণ রাগ লাগবে তখন হয়তো নিজের অজান্তে বকে দিবো তখন ছুটে যাবে তোমার বাবা মায়ের বুকে।
আফীফের এমন কথায় ফিক করে হেসে দেয় সেহেরিশ।
#চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here