তোর প্রেমেতে অন্ধ হলাম -Part 11+12

0
233

#তোর_প্রেমেতে_অন্ধ_হলাম
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ১১+১২
সিয়া ঘামটি মেরে বসে ছিলো। সে তো অর্নীলের কথা দোলা কে বলে দিয়েছে। না জানি কি হয়। সিয়া তার মাথা তুলে সামনে তাকায়। দোলা তার চোখের চশমা টা ঠিক করে এক গম্ভীর মুখ করে বসে আছে।
সিয়া;; আব…মা
দোলা;; কবে থেকে তোরা দুজন একসাথে আছিস?
সিয়া;; বেশ কিছুদিন হলো।
দোলা;; আমাকে জানাস নি কেনো তুই?
সিয়া;; না মানে আমি ভেবেছি পরে জানানো যাবে তাই।
দোলা;; কাল রাতে অর্নীলের কাছে গিয়েছিলি তুই।
সিয়া অবাকই হয় দোলার কথায়।
দোলা;; বাইরের ক্যামেরাতে দেখা গিয়েছে সব।
সিয়া;; হুম।
দোলা;; দেখ আমি তোকে আগেও বলেছি আর এখনও বলছি আমি তেমন না যে নিজের মেয়ের পছন্দের বিরুদ্ধে যাবো। তোর নিজেরও পছন্দ-অপছন্দ আছে। আর আমি অর্নীল কে চিনি, ও ছেলে হিসেবে অনেক বেশিই ভালো।
সিয়া;; মা তু……
দোলা;; আমি বলবো না যে অর্নীল কে তুই ছেড়ে দে। বা দূরে থাক। তুই তোর ভালোবাসার মানুষের সাথেই থাক। আমি সবসময় তোর খুশিটা দেখেছি, তুই যাতে হ্যাপি থাকবি তা দেখেছি। আর তুই যদি অর্নীলের সাথে ভালো থাকিস বিশ্বাস কর সিয়া তোদের দুজনের থেকেও সবথেকে বেশি খুশি আমি হবো।
সিয়া;; আম্মু সরি।
দোলা;; ওমা কেনো রে? আমি কি তোকে বকেছি নাকি মেরেছি। কড়া কথাও তো বলি নি। আরে মেয়ে আমি আছি সবসময় তোর পাশে, তুই কি ভেবেছিলি আমি কশাই এর মতো বলবো যে “আমি বেঁচে থাকতে তোরা দুজন এক হতে পারবি না”
দোলার কথায় সিয়া আর দোলা বেশ জোরেই হেসে দেয়।
দোলা;; আচ্ছা অর্নীল কে একদিন বাসায় নিয়ে আয় না।
সিয়া;; এমনি ই কি কম আসে নাকি!
দোলা;; কি?
সিয়া;; না না কিছু না।
দোলা;; হুমমম, আচ্ছা থাক তুই আমার কাজ আছে।
সিয়া;; কি কাজ?
দোলা;; বিরিয়ানি রান্না করি!
সিয়া;; আরে আগে বলবা তো,, আচ্ছা।
দোলা রান্নাঘরে চলে যায় আর সিয়া তার রুমে। সিয়া রুমে এসেই আগে জোরে জোরে কয়েক দফা দম নেয়। দোলা যখন বলেছিলো কাউকে ভালোবাসিস কিনা। সিয়ার যেনো অন্তরাত্মা কেপে উঠেছিলো। কিন্তু এখন গিয়ে মনে শান্তি এসেছে। সিয়া অর্নীল কে ফোন করে। আর অর্নীল তখন রাগে লাল হয়ে অফিসে তার কেবিনে বসে ছিলো। কারণ হাত থেকে একটা ডিল ক্যান্সেল হয়ে গিয়েছে।
অর্নীল;; হ্যালো!
সিয়া;; অর্নীল, জানেন আজকে কি হয়েছে?
অর্নীল;; কি?
সিয়া;; আম্মু সব জেনে গিয়েছে!
অর্নীল;; আরো ভালো।
সিয়া;; ভালো মানে! মানে আমার মা জেনে গিয়েছে আপনার আর আমার ব্যাপার টা আপনার চিন্তা হচ্ছে না?
অর্নীল;; আরে আজব, চিন্তা হওয়ার কি আছে। হবু শাশুড়ি আমার আজ হোক কাল হোক জানবেই। যেটা পরে জানতো সেটা দুদিন আগে জেনে গিয়েছে। তাতে ক্ষতি কি?
সিয়া;; বাহহহহ,, এতো চিল মুড।
অর্নীল;; এটাই বলার জন্য ফোন করেছিলে?
সিয়া;; হ্যাঁ, আর কি।
অর্নীল;; হুমমম।
সিয়া;; আচ্ছা কিছু কি হয়েছে?
অর্নীল;; একটা ডিল ক্যান্সেল হয়ে গিয়েছে!
সিয়া;; আরে তো কি হয়েছে। আবার আসবে।
অর্নীল;; হুমম।
সিয়া;; এখন রাখি।
অর্নীল;; আমি বিয়ে করবো।
সিয়া;; কি?
অর্নীল;; হ্যাঁ, আর এখন তো কোন কথাই রইলো না। তোমার মা জেনে গেছে, সে রাজি, আমি & তুমি রাজি। ব্যাস আর কি লাগে।
সিয়া;; অর্নীল এ কেমন কথা, আপনারও ফ্যামিলি আছে। আপনার বাবা আ…….
অর্নীল;; উনি থাকা না থাকা সমান।
সিয়া;; অর্নীল প্লিজ, বাবা হয় উনি আপনার। এবার তো সবকিছু ঠিক করুন।
অর্নীল;; ঠিক? কি ঠিক করবো আমি। যেখানে কোন কিছুই আর আগের মতো হবেই না। সিয়া ওই লোকটার জন্য আমার মা মরে গেছে। মা সবসময় বলতো এইসব পলিটিক্স বাদ দাও, বাদ দাও। উনি দেন নি। আমার বাবার টাকার কখনোই কোন কমতি ছিলো না। উনি চাইলেই নিজের একটা বিজন্যাস স্টার্ট করতে পারতেন বাট উনি পাবলিসিটি, পাওয়ার এইসবের নিচে দমে গিয়েছিলেন। মারামারি, জেল-জরিমানা, এগুলো তার নিত্যদিনের অভ্যাস ছিলো। এমনকি ঠিক কতো শত বার মা আর আমার ওপর যে জানে মেরে ফেলার হুমকি এসেছে তার হিসেব নেই। কিন্তু হিসেব টা একদিন পাক্কা হয়ে গেলো। বাবা বাসায় ছিলো না, আমি ছিলাম স্কুলে, বাবার সাথে যাদের রেশারেশি ছিলো তারা এসে বিনাবাক্যে চাকু দিয়ে মা কে মেরে ফেলে। আমাদের বাসায় যে কাজ করে রামু কাকা। তুমি জানো ওই লোকটা আমার বাবার থেকেও বেশি আমার ক্লোজ। উনার হাতেই বেড়ে ওঠা আমার। রামু কাকা নিজের চোখে আমার মায়ের মরণ দেখেছে। সবকিছুর মূল আবার বাবা। উনি যদি এই সব ঝামেলা জড়িত কাজ ছেড়ে দিতেন তাহলে আমার মা আজ বেঁচে থাকতো। আমার সাথে থাকতো। বাবা আমাকে সময় দেয় নি, একা একা বেড়ে ওঠা আমার। বাড়ির কাজের লোকের হাতে মানুষ হয়েছি আমি। এখন এর জন্য আমার বাবার থেকে বেশি প্রিয় আমার সেই বাড়িতে কাজ করা লোকেরা। And you know what i don”t want to call him my Father….
সিয়া অর্নীলের সব কথাই শুনলো। বেশ খারাপ লাগছে তার এখন। সিয়া বুঝে নি যে অর্নীলের সাথে এমনটা হয়েছে। আর অর্নীল তাকে এর আগে কখনো এগুলো বলেই নি।
অর্নীল;; কিন্তু এখন আমি ঠিক আছি, কারণ এখন আমার কাছে তুমি আছো!
সিয়া;; আর,, আর আমি যদি কখনো চলে যাই তাহলে?
অর্নীল;; চলে যাওয়ার কথাই আসে না কারণ চলে যেতে আমি দিবোই না। এটাকে তুমি আমার জেদ বলো বা পাগলামি যা ইচ্ছে।
সিয়া;; হুমম।
অর্নীল;; হুমমম।
সিয়া;; আচ্ছা অর্নীল, আপনার অফিস টা যেনো কোথায়?
অর্নীল;; Macron Road, 22
সিয়া;; আচ্ছা।
অর্নীল;; কেনো?
সিয়া;; কিছু না রাখলাম।
অর্নীল;; আচ্ছা।
সিয়া ফোন কেটে দিয়ে আবার নিচে রান্নাঘরে চলে যায়। আর রান্নাঘরে যেতেই বিরিয়ানির গন্ধে যেনো সব জায়গা মৌ মৌ করতে লাগলো।
সিয়া;; আহাহাহাহা,, কি গন্ধ। আম্মু
দোলা;; হ্যাঁ
সিয়া;; বিরিয়ানি হলে আমাকে সুন্দর করে একটা বক্সে ভরে দাও।
দোলা;; কেনো?
সিয়া;; না মানে বাইরে যাবো।
দোলা;; সোজা কথা বলো না যে অর্নীলের কাছে যাবা।
সিয়া;; দুনিয়াতে এমন প্রথম মা হবে যে কিনা এমন একটা বিষয়ে এতো নরমাল থাকছে।
দোলা;; আমি তো তোর কাছে ট্রিট চাইতাম।
সিয়া;; কিহহহ, হায়রে।
দোলা;; আচ্ছা তুই বোস আমি প্যাক করে দিচ্ছি।
সিয়া;; আচ্ছা।
সিয়া গিয়ে সোফাতে বসে পরে। তখনই তার নানি নিচে আসে হাতে এক বক্স মেডিসিন নিয়ে।
শিউলি;; সিয়া!
সিয়া;; বুড়ি।
শিউলি;; এই দেখ তো আমার ঔষধ কোন গুলো। বের করে দে দেখি।
সিয়া;; দাও।
সিয়া মেডিসিন গুলো এক এক করে বের করে তার নানি কে খাইয়ে দেয়। তার বেশ সময় পর দোলা হাতে একটা বড়ো সড়ো বক্স আনে তাতে বিরিয়ানি ভরা ছিলো। সিয়া দেখে দাঁড়িয়ে পরে। সিয়ার হাতে বিরিয়ানি দিয়ে দিতে দোলা বলে ওঠে…..
দোলা;; সিয়া শোন না!
সিয়া;; বলো।
দোলা;; অর্নীল কে বলিস একদিন তার ফ্যামিলি কে নিয়ে আমাদের বাসায় আসতে। বা যাই হোক একদিন সবাই মিলে একটা ফ্যামিলি গেট-টুগেদার রাখলে কেমন হয়। অর্নীলের সাথে তুই কথা বলে দেখিস৷
সিয়া;; আচ্ছা।
এই বলেই সিয়া বের হয়ে পরলো। ওহহ সাথে স্কুটিও নিয়ে গিয়েছে। অর্নীল যেই রোড বললো সেখানে যেতে যেতেই প্রায় ৪০ মিনিট লেগে গিয়েছে। তার ওপর এই কড়া রোদ। সিয়ার কেনো যেনো এখন নিজেকে একটা ডেলিভারি বয় ওহ সরি ডেলিভারি গার্ল মনে হচ্ছে। নিজের হুলিয়া টাও তেমনই। ব্যাগ, মাথায় হ্যালমেট, হাতে খাবার। পুরো ডেলিভারি ওয়ালি। মেইন রোডে গিয়ে থেমেই সিয়ার নজর কারে একটা বড়ো সড়ো লিখা ACA (আবরার চৌধুরী অর্নীল) গ্রুপ। সিয়া বুঝে গেলো যে এটাই৷ সে স্কুটি টা পার্ক করে ভেতরে চলে গেলো। সিয়াকে কেউ আটকায় নি বা কেউ কিছু বলে নি কারণ সবাই তাকে চেনে। ইন ফ্যাক্ট একটা গার্ড এগিয়ে এসে সিয়াকে নিয়ে আসে। সিয়াকে নিয়ে অর্নীলের কেবিনে চলে যায়। অর্নীল তার কেবিনে কিছু লোকের সাথে কথা বলছিলো। অর্নীল কেবিনের বাইরে গার্ড কে দেখে ভেতরের লোকজন কে বাইরে যেতে বললো। তারা উঠে চলে আসে। তাদের যেতেই অর্নীল কড়া গলায় বলে……
গার্ড;; স্যার….
অর্নীল;; কি হয়েছে? সবকিছু ঠিক আছে তো? আর কে এসেছে?
তারপর গার্ড চলে যায়, আর সিয়া ভেতরে আসে। সিয়াকে দেখেই অর্নীল অবাক। উঠে যায়। সিয়া গিয়ে টেবিলের ওপর হাত থেকে বক্স টা রেখেই হাপাতে লাগে। অর্নীল কিছুই বুঝে না। টিস্যু নিয়ে গিয়ে সিয়ার গাল, কপাল মুছে দেয়।
অর্নীল;; তুমি এখানে?
সিয়া;; মা বাসায় বিরিয়ানি রান্না করেছে তো ভাবলাম যে আপনার জন্য নিয়ে যাই। তাই নিয়ে আসলাম।
সিয়ার কথায় অর্নীল তাকিয়ে থাকে।
সিয়া;; আরে কি এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো?
অর্নীল;; ডেল….
সিয়া;; আমাকে দেখতে ডেলিভারি গার্লের মতো লাগছে আমি জানি।
অর্নীল;; হাহাহাহা।
সিয়া;; এই একদম ভেটকাবেন না।
অর্নীল বসে পরে আর সিয়ার হাত ধরে নিয়ে নিজের কোলে বসিয়ে দেয়।
সিয়া;; কি করছেন এইসব!
অর্নীল;; শাশুড়ীর হাতের বিরিয়ানি এনেছো ভালো কথা কিন্তু খাইয়ে কে দিবে। আমি পারবো না। খাইয়ে দাও।
সিয়া;; আচ্ছা দিচ্ছি।
সিয়া অর্নীল কে মুখে তুলে খাইয়ে দিচ্ছে। আর অর্নীল খাচ্ছে।
অর্নীল;; আচ্ছা তুমি কি দিয়ে এখানে এসেছো?
সিয়া;; স্কুটি দিয়ে।
অর্নীল কিছুটা হেসে দেয়।
অর্নীল;; ওই যে তোমার খাটারা স্কুটি দিয়ে। একদিন যে আমার গাড়ির সামনে এসে পরলো ওইটা !
অর্নীলের কথায় সিয়া সরু দৃষ্টিতে তার দিকে তাকায়। আর অর্নীলেরও মনে হলো যে সে সবেমাত্রই কি বলেছে। অর্নীল কিছুটা গলা খাকাড়ি দেয়। তারপর আবার স্বাভাবিক হওয়ার ট্রাই করে। সিয়া এবার ইচ্ছে করেই বিরিয়ানির লোকমা তে একটা আস্তো মোটা কাচা মরিচ ঢুকিয়ে দেয়। যা অর্নীল দেখেই নি। সিয়া মিটিমিটি হেসে সেই লোকমা টা অর্নীলের মুখে পুড়ে দেয়। কয়েক কামড় দিয়েই অর্নীল ফট করে সিয়ার দিকে তাকায়। অর্নীলের খাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। তবুও খুব কষ্টে লোকমা টা গিলে ফেলে। সিয়া এবার জোরে হেসে দিয়েই অর্নীলের কাছ থেকে সরে আসে। মুখে হাত দিয়ে হাসছে। আর অর্নীল উঠে তার জেকেটের হাতা টা ফোল্ড করে ঢকঢক করে পানি খেয়ে দেয়। চোক আর নাকের ডগা টা লাল টকটকে হয়ে গিয়েছে। একদম ঝালে নাজেহাল অবস্থা। সিয়া জানে যে অর্নীল ঝাল তেমন একটা খায় না তাই ইচ্ছে করেই মরিচ দিয়েছে। অর্নীল তো ঝালে মরে মরে দশা আর এদিকে সিয়া মুখ টিপে হাসছে।
সিয়া;; ভালো হইছে, আমার স্কুটি নাকি খাটারা। নিজে ভালো ভাবে গাড়ি চালাতে পারে না আর বলে আমার স্কুটি খাটারা। ভালো হইছে।
সিয়া গিয়ে তার হাত টা ধুয়ে ফেলে। অর্নীলের কাছে আসতেই দেখে অর্নীলের ঝাল কমে নি আরো মনে হয় বেড়েছে। চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে গেছে।
অর্নীল বুঝে যে সিয়া ইচ্ছে করেই তাকে ঝাল খাইয়ে দিয়েছে। এবার অর্নীল আর না পেরে সিয়াকে এক টান দিয়ে নিজের সাথে লাগিয়ে নেয়। এক হাত সিয়ার কোমড়ে জরিয়ে ধরে আরেক হাত দিয়ে সিয়ার দুই হাত আবদ্ধ করে ফেলে। সিয়া কিছু বলতে যাবে তার আগেই অর্নীল সিয়ার দুই ঠোঁট আকড়ে ধরে। সিয়ার চোখ গুলো বড়ো বড়ো হয়ে যায়। সিয়া খিচে চোখ বন্ধ করে অর্নীল কে কিছুটা ধাক্কা দিতে থাকে। কিন্তু সেগুড়ে বালি। অর্নীল চোখ বন্ধ করে সিয়াতে মগ্ন।যেনো নিজের সবটা দিয়ে আকড়ে ধরে আছে। ঝাল কমানোর এটাই একমাত্র উপায় তার কাছে। তবে সিয়া বেশ ছুটোছুটি করছে। ছুটোছুটির এক পর্যায়ে এসে সিয়ার পেছনের চুল গুলো খুলে যায়, চুল গুলো সামনে এসে পরে। আর অর্নীল এবার সিয়ার কোমড় থেকে হাত সরিয়ে সিয়ার মাথার চুলের ভাজে হাত ঢুকিয়ে দেয়। এতে যেনো সিয়াকে আরো নিজের সাথে বেশি চেপে ধরলো। কয়েক মূহুর্ত পর অর্নীল নিজেই সিয়াকে ছেড়ে দেয়। অর্নীল এক ক্ষীন দম ছাড়ে। ঝাল গায়েব। তবে সিয়া কয়েক কদম পিছিয়ে গিয়ে বেশ হাপাতে লাগে। মাথা তুলে অর্নীলের দিকে তাকায়। অর্নীল সিয়ার দিকে আবার কয়েক কদম এগিয়ে গেলে সিয়া ভরকে গিয়ে পিছিয়ে আসে, অর্নীল হেসে দেয়। সিয়ার হাত ধরে টেনে নিয়ে নিজের মাথার সাথে সিয়ার মাথা ঠেকিয়ে দেয়।
অর্নীল;; সত্যি এখন আমার মন চাইছে আরেকটা মরিচ খেয়ে ফেলি।
সিয়া;; কি কেনো?
অর্নীল;; কেনো! তুমি জানো না। মরিচ খাই তারপর তোমাকে।
সিয়া;; ধুরু, আজাইরা কথা। আমি মরিচ খাওয়াতাম না যদি আগে জানতাম যে এমন কিছু হবে।
অর্নীল;; অতি চালাকের গলায় দড়ি।
সিয়াকে টেবিলের ডেস্কের ওপর বসিয়ে দিয়ে অর্নীল সিয়ার সামনে চেয়ারে বসে পরে। সিয়া বসে বসে নিজের পা দুলাচ্ছে। আর অর্নীল ল্যাপটপে কাজ করছিলো।
সিয়া;; আচ্ছা শুনুন।
অর্নীল;; বলো জান।
সিয়া;; আম্মু বলেছে যে একদিন আপনার ফ্যামিলি নিয়ে যেনো আপনি আমাদের বাসায় আসেন। মানে একটা ছোট্ট ফ্যামিলি ওকেশন।
অর্নীল;; আমি একা গেলে হবে!!
সিয়া;; আরে আংকেল কেও নিয়ে আসবেন। দরকার হলে রামু কাকা কেও। একা কেনো আসবেন।
অর্নীল;; আচ্ছা।
সিয়া;; সত্যি? মানে এতো জলদি রাজি হয়ে গেলেন?
অর্নীল;; আচ্ছা তাহলে রাজি না হই। যাবো না যাও।
সিয়া;; এই না না থাক। ঠিক আছে।
অর্নীল;; হুমম।
সিয়া;; আচ্ছা অনেক সময় তো হলো এসেছি এখন আমি যাই।
অর্নীল;; ড্রাইভার কে বলে দিচ্ছি সে দিয়ে আসবে।
সিয়া;; না থাক, উনার আর কষ্ট করতে হবে না। আমি একাই যাচ্ছি।
অর্নীল;; পাকনামি কম করে যা বলছি তাই শুনো।
সিয়া;; তাহলে আমার স্কুটি!
অর্নীল;; সেটাও বাড়ি পৌছে যাবে। এখন চলো।
অর্নীল সিয়াকে নিয়ে বাইরে বের হয়ে পরে। সিয়া গাড়িতে উঠে পরে। অর্নীল কে বায় জানিয়ে এসে পরে। তবে সিয়া বাড়িতে যেতেই দেখে ভেতরে বেশ হৈচৈ। সিয়া কপাল কুচকে দ্রুত বাড়ির ভেতরে যায়। আর দেখে দোলা কান্না করছে, সিয়ার নানি অজ্ঞান। সিয়া দৌড়ে চলে যায়। নানির অতিরিক্ত প্রেসার বেড়ে গিয়েছে। আর এছাড়াও উনি অসুস্থ তাই অজ্ঞান হয়ে পরেছেন। সিয়া দ্রুত হস্পিটালে ফোন দেয়। এম্বুল্যান্স ছাড়া শিউলি বেগম কে নিয়ে যাওয়া সম্ভব না। তার বেশ সময় পর এম্বুল্যান্স আসে। দ্রুত সিয়া আর তার মা শিউলি বেগম কে হস্পিটালে নিয়ে যায়। সেখানে যেতেই একজন ডক্টর আসে ড. সায়ন মাহমুদ নামে। উনি সাধারণত সিনিয়র ডক্টর, তবে হস্পিটালে আর কোন ডক্টর না থাকায় তাকেই দেখতে হয়। শিউলি বেগম ভেতরে সিয়া আর তার মা বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। সিয়া দোলা অনেক বুঝিয়ে বসিয়ে রাখে। আর সিয়া পায়চারি করছে। কিছু সময় পর ড.সায়ন কেবিনের ভেতর থেকে বাইরে আসেন।
সায়ন;; উনার ফ্যামিলি মেম্বার কে?
সিয়া;; জ্বি আমি
দোলা;; মা ঠিক আছে তো?
সায়ন;; দেখুন উনি একদম ঠিক আছে। তেমন কোন সমস্যা নেই। তবে বয়সের চাপে এমন ছোট খাটো রোগ হবেই। আগের যে মেডিসিন গুলো ছিলো তা বাদ দিয়ে নতুন মেডিসিন দিচ্ছি আমি। উনাকে চিন্তা করতে মানা করবেন। কারণ চিন্তা করলে নার্ভের ওপর চাপ বাড়ে যার ফলে প্রেসারও বাড়ে। কফি, কোমলপানীয়, মাংস একটু কমিয়ে খেতে বলবেন।
দোলা;; জ্বি।
সায়ন এক নজর সিয়ার দিকে তাকিয়ে সেখান থেকে চলে আসে। আর সিয়া এদিকে অর্নীল কে ফোন করে সবকিছু বলে।




চলবে~~
#তোর_প্রেমেতে_অন্ধ_হলাম
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ১২
কয়েক ঘন্টা পরেই সিয়ার নানু কে বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি এখন সুস্থই আছে তবে আরো কিছুটা রেস্ট নিতে হবে। উনার যখন যা যা লাগছে তাই দিয়ে দিচ্ছে সিয়া আর দোলা। তাদের বাসায় যাবার বেশ সময় পর হঠাৎ করেই অর্নীল আসে। অর্নীল কে দেখে দোলা দ্রুত ভেতরে আসতে বলে। তবে সিয়া অবাক।
সিয়া;; আপনি?
অর্নীল;; হ্যাঁ, নানু কে দেখতে আসলাম।
দোলা;; অনেক ভালো কাজ করেছো বাবা। বসো বসো।
অর্নীল গিয়ে শিউলি বেগমের পাশে বসে পরে।
অর্নীল;; নানু, কেমন আছেন এখন?
শিউলি;; এখন ভালো আছি। তুমি কেমন আছো আগে তা বলো।
অর্নীল;; জ্বি আলহামদুলিল্লাহ।
সিয়া;; নানু, উঠো আগে মেডিসিন খাও।
অর্নীল;; আচ্ছা, তুমি আমাকে আগে ফোন করে কেনো জানাও নি?
সিয়া;; না মানে বলতাম কিন্তু ওই সময় আসলে কি থেকে কি করবো কিছুই বুঝে আসছিলো না। তাই দ্রুত চলে গিয়েছি।
শিউলি;; সমস্যা নেই, আমি এখন ঠিক আছি।
এভাবেই প্রায় অনেক সময় থেকে অর্নীল এসে পরে। সিয়া অর্নীল কে বাইরে পর্যন্ত এগিয়ে দিতে গিয়েছে। বাইরে এসে অর্নীল গাড়িতে হেলান দিয়ে দুই হাত ভাজ করে দাঁড়ায়। আর সিয়া তার সামনে। নিজের দুই আঙুলের ভাজে ওরনা প্যাচিয়ে যাচ্ছে। অর্নীল কিছুক্ষণ এক মনে সিয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে পরক্ষণেই আবার বলে ওঠে…..
অর্নীল;; বিয়ে করছি কবে আমরা?
সিয়া অর্নীলের দিকে কপাল কুচকে তাকায়।
অর্নীল;; কবে?
সিয়া;; এই আপনার কি মাথা খারাপ?
অর্নীল;; হ্যাঁ, তোমার দোষ। তুমি করে দিয়েছো।
সিয়া;; ধুর, এখানে নানু অসুস্থ আর আপনি বিয়ে বিয়ে করছেন। এই যান আমি করবো না বিয়ে। এতো তাড়াতাড়ি কেউ বিয়ে করে?
অর্নীল;; কেউ করে কিনা জানি না তবে আমরা করবো।
সিয়া;; অর্নীল! এখন এই কথা বলার সময়। নানু অসুস্থ।
অর্নীল;; শুনো আমার কাছে একটা প্ল্যান আছে।
সিয়া;; বলেন।
অর্নীল;; তোমার আমার বিয়ের সাথে সাথে না নানুআপু কেও আরেকটা বিয়ে করিয়ে দিবো। তাহলেই দেখবে নানুআপু একদম ফিট & ফাইন।
অর্নীলের কথায় সিয়া ফট করে মাথা তুলে তার দিকে তাকায়। চোখ গুলো পিট পিট করে তাকায়। অর্নীল হয়তো আজকে পাগল হয়ে গেছে এটাই ভাবছে সিয়া। তাই সিয়া সোজা অর্নীলের বেশ কাছে গিয়ে কপালে হাত রেখে দেয়।
সিয়া;; জ্বর এসেছে আপনার তাই না? শরীর খারাপ করছে বুঝতে পারছি আমি। আচ্ছা শুনুন আপনি বাড়িতে যান। আর রেস্ট নিবেন। দরকার হলে আমাকে ফোন করবেন।
সিয়ার কথা শুনে অর্নীল সিয়ার হাত টা কপাল থেকে সরিয়ে দেয়।
অর্নীল;; কি বলছো তুমি এইসব? আমার কোন শরীর টরীর খারাপ করে নি। ঠিক আছি আমি।
সিয়া;; তাহলে আপনার মাথা গেছে। মানে লাইক সিরিয়াসলি নানুর বিয়ে এই বুড়ো বয়সে। কে করবে?
অর্নীল;; আরেক বুড়া কে ধরে করিয়ে দিবো দুজনের বিয়ে।
সিয়া;; অর্নীল।
সিয়া গিয়ে অর্নীল কে দুই একটা ঘুষি দিয়েই দেয়। আর অর্নীল জোরেই হেসে দেয়। অবশেষে বিদায় নিয়ে এসে পরে।


রাতের দিকে দোলা রান্নাঘরে কাজ করছিলো আর সিয়া তার নানুর পাশে বসে আছে এই সময় সিয়ার চাচ্চু বিল্লাল আসে। সিয়া বিল্লাল কে দেখে এগিয়ে যায়।
সিয়া;; আরে চাচ্চু, তুমি?
বিল্লাল;; হ্যাঁ, তোর নানু নাকি অসুস্থ। ভাবি বলেছিলো আমাকে তাই আসলাম। আর আমাকে আগে কেনো ফোন করিস নি তোরা?
সিয়া;; না মানে তেমন মেজর কোন বিষয় না আর নানু এখন ঠিক আছে।
বিল্লাল;; যাক ভালো।
বিল্লাল গিয়ে শিউলি বেগমের সাথে কথা বলতে লাগে।
সিয়া;; মা, মা এই চাচ্চু এসেছে।
দোলা;; আসছি।
দোলা হলরুমে চলে যায়।
বিল্লাল;; ভাবি কেমন আছো?
দোলা;; এইতো আছি। তুমি কেমন আছো আর আদিবার শশুড় বাড়িতে সবাই ভালো তো?!
বিল্লাল;; হ্যাঁ সবাই বেশ ভালো আছে। আচ্ছা ভাবি শুনো এখানে আমি মূলত দুই কাজে এসেছি।
দোলা;; কি?
বিল্লাল;; আমি জানি খালামনি অসুস্থ এই সময় কথা টা বলা ঠিক হবে কিনা!
দোলা;; আরে ভাই কি যে বলো না। বলো তো তুমি কি বলবে জলদি বলো।
বিল্লাল;; না মানে আমি বলছি কি আসলে আদিবা রা সবাই এখন আমাদের বাড়িতে মানে ঘুড়তে এসেছে আর কি। তবুও না আমার বাড়ি টা কেমন ফাকা ফাক লাগছে তোমাদের ছাড়া। তাই বলছিলাম যে যদি তোমরা আমার সাথে যেতে।
দোলা;; ওহহ তো এই ব্যাপার। আমাদের নিতে এসেছো? আচ্ছা বুঝলাম। কিন্তু মা কে নিয়ে কীভাবে যাই? মা তো জার্নিও তেমন একটা করতে পারে না।
বিল্লাল;; হ্যাঁ এর জন্যই বললাম যে এখন তাহলে কি করবো!
শিউলি;; আরে শোন তুই আর সিয়া চলে যা আমি খেয়াল রাখতে পারবো নিজের। এখনো এতো টা বুড়ি হই নি আমি।
দোলা;; হ্যাঁ, আমার তো মাথা খারাপ হয়েছে যে তোমাকে এখানে একা রেখে আমি ওখানে যাবো। বিল্লাল শুনো তুমি এক কাজ করো। তুমি সিয়াকে নিয়ে চলে যাও আজ, আমরা পরে আসবো নি।
সিয়া তার মায়ের কথা শুনে তো “দিল ম্যা লাড্ডু ফুটা” টাইপ ফিলিং”স আসছে৷ আহা, বেড়াতে যাবে তাও চাচ্চুর বাসায়। এগুলো মনে মনে ভেবেই যেনো সিয়া নাগিন ড্যান্স দিচ্ছে। সিয়া ৩২ টা দাঁত বের করে ভেটকাচ্ছিলো তখনই হুট করে সে তার মায়ের দিকে তাকায় দেখে দোলা উল্টো তার দিকেই তাকিয়ে আছে। এতে যেনো সিয়া চুপসে যায়।
দোলা;; বিল্লাল তুমি সিয়া কে নিয়ে যাও আমরা কাল বা পরশু এসে পরবো। সিয়া মনে মনে নাচনাচি বাদ দিয়ে যা ব্যাগ প্যাক কর। আর দোহায় লাগে একটু শান্ত & ভদ্র হয়ে থাকিস।
বিল্লাল;; তুমি কি যে বলো না ভাবি। আমার আদিবার থেকে সিয়া অনেক ভালো।
সিয়া;; হিহিহিহিহি।
সিয়া ঢ্যাং ঢ্যাং করে ওপরে রুমে গিয়ে নিজের সব গুছিয়ে নেয়। তারপর নিজের চাচ্চুর সাথে গাড়িতে করে বের হয়ে পরে। গাড়িতে বিল্লাল আর সিয়া যাচ্ছে। দুজনের সে কি বকবকানি। সিয়া বলতে গেলে তার চাচুর কলিজা। বিল্লাল কখনো বলে নি যে তার এক মেয়ে। তার দুই মেয়ে এক আদিবা আর দুই সিয়া। তবে যেতে যেতে সিয়ার মনে পরে যে সে তো অর্নীল কে জানায় নি যে চাচ্চুর বাসায় যাচ্ছে। নয়তো কাল প্রথমে কলেজে যাবে সেখানে না পেলে বাসায় আসবে সেখানেও না পেলে পরে সিয়া কে বেগুন ভর্তা বানাবে। আর এখন তো সে চাচ্চুর সাথে বসে আছে ফোনও করতে পারবে না। তাই মেসেজ টাইপ করে…..
“” অর্নীল, আমি কাল কলেজ যাবো না৷ আমি আমার চাচ্চুর বাসায় আছি। তো আমাকে কাল না পেয়ে পাগলের মতো সোজা আবার আমার বাসায় চলে যাইয়েন না। আমি হয়তো এখানে কিছুদিন থাকবো।””
সিয়া মেসেজ সেন্ড করে দেয়। এভাবেই দেখতে দেখতে একটা সময় তারা বাসায় এসে পরে। বিলাল্লা গাড়ি থেকে নেমে সিয়ার সব ব্যাগ ভেতরে নিতে যেতে বলে। আর এদিকে সবাই বাড়ির বাগানের পাশে বসে আড্ডা দিচ্ছিলো সিয়া কে দেখেই আদিবা সব রেখে ছুটে আসে।
আদিবা;; সিয়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়া!
সিয়া;; হেই বিয়াইত্তা মাইয়া কেমন আছোস?
আদিবা;; আরে হারামি।
আদিবা গিয়ে সিয়া কে জড়িয়ে ধরে৷ সিয়া গিয়ে আদিবার শশুড় বাড়ির লোকদের সাথে কথা বলে। সিয়ার শাশুড়ী-শশুড় সবার সাথেই।
সিয়া;; দুলাভাই!
জাবেদ;; আজকে আমার সাথে ফোনও নাই, আমার ওয়ালেটও নাই। টাকাও নাই। আজকে কি নিয়ে আটকাবা শালিকা!?
জাবেদের কথা শুনে সবাই হেসে দেয়।
সিয়া;; ভাইয়া এইটা কোন কথা। শালিরা কি খালি টাকাই নেই দুলাভাই এর কাছ থেকে।
জাবেদ;; আরে মজা করছি। আচ্ছা বাইরে থেকে এসেছো এখন যাও ফ্রেশ হও। তারপর এখানে এসো বসে বসে আড্ডা দেই সবাই। আর হ্যাঁ তোমার বোন টাকে নিয়ে যাও প্লিজ। বিয়ের কয়েক মাস যেতে না যেতে আমার জীবন টা একদম তেজপাতা বানিয়ে ফেলেছে।
সিয়া;; হাহাহাহাহাহাহাহাহা।
আদিবা;; আজকে শুধু রুমে যাও তারপর আছে তোমার।
জাবেদ মেকি হাসে আদিবার কথায়।
সিয়া;; আচ্ছা চল তুই আমার সাথে রুমে চল।
সিয়া আদিবা কে নিয়ে এসে পরে। তবে হলরুমে আসতেই আবার আদিবার ডাক পরে যায়।
আদিবা;; এই রে আবার ডাকা ডাকি শুরু। এই সিয়ু বেবি শোন তুই রুমে যা আমি কয়েক মিনিট পরেই আসছি।
সিয়া;; আচ্ছা।
সিয়া এই বলেই নিজের রুমের দিকে পা বাড়ায়। সিয়া গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে যাচ্ছিলো তবে সিড়ি বেয়ে ওপরে ওঠতেই থমকে যায়। সিয়া বেশ অবাক হয়েই তাকিয়ে থাকে সামনে থাকা মানুষ টার দিকে। আজ দুপুরে যখন সে তার নানু কে নিয়ে হস্পিটালে যায় তখন যে সায়ন মাহমুদ নামে একজন ডক্টর ছিলো সে এখানে। অর্থাৎ যে শিউলি বেগমের চেকাপ করেছে আর কি। তবে এই এখানে কি করে? কোথা থেকে এলো? সিয়া তো আদিবার পুরো বিয়ের ফাংশনেই ছিলো একে তো দেখে নি কোথাও আর না ই আদিবার মুখে কখনো শুনেছে। মানে এই এখানে কি করে? সিয়া তাকিয়ে তাকিয়ে এগুলোই ভাবছিলো তখনই ফোন ঘাটতে ঘাটতে সায়ন আসে। সেও মাথা তুলে সামনে তাকায়। দেখে সিয়া। সিয়া চলে যেতে ধরলে সায়ন বলে ওঠে….
সায়ন;; Excuse me!
সিয়া;; জ্বি।
সায়ন;; আপনার নানু কে আজ…
সিয়া;; আপনিই চেকাপ করছেন।
সায়ন;; আপনি এখানে?
সিয়া;; এটা তো আমারও প্রশ্ন। আপনি এখানে?
সায়ন;; আরে আমার ভাইয়ের শশুড় বাড়ি এটা তো আমি আসবো না।
সিয়া;; ভাই মানে? কোন ভাই?
সায়ন;; জাবেদ আমার বড়ো ভাই হয়৷
সিয়া;; আর আদিবা আমার বড়ো বোন।
সায়ন;; ওহহ আচ্ছা আচ্ছা তো ভাবি আপনার বোন হয়।
সিয়া;; জ্বি। তবে আপনাকে তো আগে দেখি নি।
সায়ন;; আসলে আমি…..
আদিবা;; সিয়া!
সিয়া;; হুমম।
আদিবা;; ওহহ সায়ন। ও হচ্ছে আমার একমাত্র জানটুস মানে আমার বোন। আর সিয়া ও আমার দেবর।
সিয়া;; আগে তোমার এই গুনধর মার্কা দেবর কে তো কখনোই দেখি নি। (আদিবার কাছে গিয়ে ফিসফিস করে)
আদিবা;; আব…. আরে ও দেশের বাইরে ছিলো বুঝলি৷ মানে আমার বিয়েতেও আসতে পারে নি। তবে রেসিপশনে ছিলো। আর জেঠিমা তো তোকে নিয়ে চলেই গিয়েছিলো তাই আর কি তোদের দেখা হয় নি। আর হ্যাঁ সায়ন একজন ডক্টর। এতোদিন দেশের বাইরে ছিলো কিন্তু এখন দেশে৷
সিয়া;; তা আর বলতে। নানু কেও উনিই চেকাপ করেছেন।
আদিবা;; কি সত্যি?
সায়ন;; হ্যাঁ ভাবি, উনার নানু কে আজই আমি দেখেছি।
আদিবা;; ওহহ তাহলে তোমাদের আগেই দেখা হি
য়ে গিয়েছে।
সিয়া;; আমি তো দেখে অবাকই হয়ে গিয়েছিলাম।
আদিবা;; হুম বুঝলাম। আচ্ছা যাই হোক সিয়া তুই রুমে চল। আর সায়ন ভাই তুমি নিচে যাও৷ সেখানে জাবেদ আর বাকিরা সবাই বসে আছে।
সায়ন;; আচ্ছা৷
সায়ন নিচে চলে যায় আর সিয়া আদিবার সাথে রুমে চলে যায়। রুমে গিয়েই সিয়া আগে বুক ভরে দম নেয়। ফ্রিজ থেকে পানি বের করে ঢকঢক করে খেয়ে নেয়। আর আদিবা সিয়ার ব্যাগ গুছিয়ে দিচ্ছে।
সিয়া;; ভাই রে ভাই, এত্তো গরম। পুরাই আলু সিদ্ধ হয়ে গেলাম।
আদিবা;; তার ওপর এতো মোটা একটা জামা পরেছিস। হালকা ফুলকা সিম্পলের মাঝে কিছু পর৷
সিয়া;; ব্যাগ থেকে দে।
সিয়া চেঞ্জ করে এসে বসে পরে।
আদিবা;; তো বল এবার দিন কাল কেমন যাচ্ছে তোর?
সিয়া;; তুই বল তোর বিবাহিত জিন্দেগী কেমন চলছে। আমি তো আমিই সবসময় একই রকম।
আদিবা;; বেশ ভালোই। তবে হুট করেই জাবেদের সাথে ঝগড়া লেগে যায়। কিন্তু কিছুক্ষন পর এসে সে নিজেই সরি বলে দেয়। আর মা-বাবাও বেশ ভালো। ননদ আছে সে বাইরে বাইরেই বেশি থাকে। আর সায়ন তো সবে এলো। মোট কথা আলহামদুলিল্লাহ ভালো।
সিয়া;; যাক ভালো থাকলেই ভালো।
আদিবা;; এবার তুই বল।
সিয়া;; এটা নে (পানির বোতল এগিয়ে দিয়ে)
আদিবা;; এটা?
সিয়া;; আমার খবর শুনে ঝটকা খেতে পারো সোনা।
আদিবা;; তাত্তাড়ি ক ছেরি।
সিয়া;; হাহাহাহা,, আমি মানে আমি আরে মানে আমি আর অর্নীল একসাথে আছি।
আদিবা;; হেহেহেহেহে.. হেহেহেহ হাহাহাহাহা।
সিয়া;; জ্বিনে ধরলো নাকি তরে, হাসোস কেনো?
আদিবা;; আমার সন্দেহ আগে থেকেই তোদের দুইজনের ওপর ছিলো। মানে কিছু না কিছু তো একটা আছেই। দেখ আমার ধারণা ঠিক হয়েছে।
সিয়া;; আম্মুও জানে।
এবার আদিবার হাসি থেমে গেলো। সে সত্যি সত্যি এবার পানি খেয়ে নেয়।
আদিবা;; মানে??
সিয়া;; মানে আম্মু জানে আর কি।
আদিবা;; জেঠিমা কিছু বলে নি তোকে?
সিয়া;; না কি বলবে। মানে আম্মু সবই জানে। আর অর্নীল তো আর লোফার কোন ছেলে না তাই কি আর বলবে। আর তুই জানিস যে আম্মু আমার ঠিক কতোটা ক্লোজ।
আদিবা;; বুঝালাম। তোর মতো একটা মা যদি আমারও থাকতো।
সিয়া;; তো কার মা। আমদের দুজনেরই তো। ৫০-৫০।
আদিবা;; 😆,, হুমম আচ্ছা তো বিয়ের পিড়িয়ে কবে বসছিস।
সিয়া;; তুইও শুরু করলি।
আদিবা;; কেনো?
সিয়া;; অর্নীল বিয়ের জন্য না প্রায় মরে যাচ্ছে এমন অবস্থা। জানিস আজকে 😆, আজকে বলে যে তুমি আর আমি বিয়ে করবো। তার সাথে সাথে নানু কেও আরেকটা বিয়ে করিয়ে দিবো।
আদিবা;; কি? হাহাহাহাহাহাহাহাহাহা।
সিয়া;; আমি এসেছি ফোন করে বলি নি ওকে। মানে সুযোগ ই পাই নি। তবে টেক্সট করে দিয়েছি। অনেকক্ষন তো হলো এখনো রিপ্লাই দিলো না।
আদিবা;; হয়তো ব্যাস্ত, কাজের চাপ। পরে দিবে। বা তুই রাতে ফোন দিস।
সিয়া;; হুমমম, আচ্ছা চল নিচে যাই।
আদিবা;; আগে কিছু খেয়ে নে তারপর যা।
সিয়া;; আরে এখন খাবো না। একেবারে রাতের খাবার খাবো। এখন চল।
আদিবা;; আচ্ছা।
আদিবা আর সিয়া নিচে চলে যায়। সবাই বসে বসে আড্ডা দিচ্ছে। এর মাঝে একটা সার্ভেন্ট এসে চা দিয়ে যায়। সিয়ার পাশেই সায়ন বসে। সিয়া এক নজর তার দিকে তাকিয়ে আবার গল্প করাতে মন দেয়। আদিবার শাশুড়ী সিয়াকে তার মা আর নানুর কথা জিজ্ঞেস করলে বলে তারা পরে আসবে। আর এদিকে ওপরে রুমে সিয়ার ফোন বাজতে বাজতে শেয়, আর অবশ্যই ফোন অর্নীলের। অবশেষে প্রায় বেশ সময় সবাই মিলে গল্প গুজব করার পরে যে যার‍ যার রুমে চলে আসে। তবে সিয়া তার রুমে এসে ফোনে তাকাতেই তার আক্কেলগুড়ুম। অর্নীলের ১৭ বার ফোন। সিয়া কাপা কাপা হাতে অর্নীল কে ফোন করে। আর সাথে সাথে রিসিভ।
সিয়া;; হ হ হ্য হ্যালো।
অর্নীল;; বাইরে বের হ।
সিয়া;; কি?
অর্নীল;; তোকে বলছি বাইরে বের হবি৷ তুই বাইরে বের হ।
সিয়া;; সরি ☹️। আমি সবার সাথে নিচে ছিলাম তো তাই আর কি ফোন ধরতে পারি নি। সরি তো।
অর্নীল;; সিয়া, বাইরে বের হবা নাকি আমি বাড়িতে ঢুকবো।
সিয়া;; আমি চাচ্চুর বাসায়।
অর্নীল;; মাথা মোটা আমি তোর চাচ্চুর বাসার নিচেই দাঁড়িয়ে আছি।
সিয়া;; কিহহহ? আপনি এখানে কীভাবে?
অর্নীল;; ২ ঘন্টার রাস্তা ৫০ মিনিটে এসেছি। উড়ে উড়ে। এখন তুমি নিচে নামো।
সিয়া;; আমি, আমি আসছি।
এই বলেই এক দৌড়ে সিয়া নিচে চলে যায়। আদিবা দেখেছে তাকে। সিয়া শুধু বলেছে যে আমি আসছি এই বলেই দৌড়৷ বাইরে গিয়ে দেখে অর্নীল গাড়ির ভেতরে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে রাগে লাল হয়ে আছে।
সিয়া অর্নীলের কাছে যেতেই অর্নীল স্বশব্দে গাড়ি থেকে নেমে পরে। সিয়া ভয়ে জমে ছিলো আর অর্নীল সিয়ার কাছে গিয়েই হাত ধরে দেয় এক টান। সিয়া অর্নীলের কাছে এসে পরে। চোখ খিচে বন্ধ করে রেখেছে। সে ভেবেছিলো হয়তো অর্নীল তাকে মারবে বা অনেক অনেক বকা দিবে। কিন্তু সিয়ার ভাবনায় এক বালতি পানি ঢেলে দিয়ে অর্নীল সোজা সিয়াকে জড়িয়ে ধরে। একদম আষ্ঠেপৃষ্ঠে।
অর্নীল;; জানি দুপুরের দিকেই দেখা হয়েছে আমাদের। কিন্তু আমার ভালো লাগে না তোমাকে ছাড়া। আর তারওপর ফোন ধরো নি। এত্তো গুলো ফোন দিলাম৷ তুমি জানো আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারি না কিন্তু তবুও এমন করো।
সিয়া;; অর্নীল আমার দম আটকে আসছে।
অর্নীল তার হাতের বাধন টা একটু আলগা করে দেয়। এতো টাই শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছিলো যে সিয়াকে। অর্নীল এবার ছেড়েই দেয় সিয়াকে।
সিয়া;; সরি আর এমন হবে না,, সত্যি সরি।
অর্নীল;; আরে বাবা হয়েছে৷ ঠিক আছে বাদ দাও। আর এখান থেকে কবে যাবে বাড়ি?
সিয়া;; চাচ্চুর সাথে বেশ ঘন্টা খানিক আগেই এসেছি। কাল হয়তো মা আর নানুও আসবে। কিছু দিন থেকে তারপর যাবো।
অর্নীল;; হুমম আর হ্যাঁ আমি এখানে একবার করে হলেও আসবো। শুধু পাঁচ মিনিটের জন্য। শুধু একটা বার তোমাকে দেখার জন্য। তারপরেই চলে যাবো।
সিয়া;; অর্নীল প্লিজ এভাবে বলবেন না। খারাপ লাগে তো। আর আমি তো উড়ে যাচ্ছি না। আরে মাত্র কিছুদিনের জন্য এখানে এসেছি। আপনার সাথে কথা হবে, দেখাও তো হবেই। আর আমাদের বাড়িতে থাকলেও তো এভাবেই দেখা করতাম তাই না।
অর্নীল;; কখনোই না। তুমি আমার সাথে ঘুরতে অর্ধেক বেলাই থাকতে।
সিয়া;; হাহাহা। আচ্ছা এবার হয়েছে তো এবার আপনি যান। রাতও অনেক হয়ে গেছে।
অর্নীল;; তোমাকে নিয়ে যাই আমার সাথে করে??
সিয়া হো হো করে হেসে দেয়।
সিয়া;; অর্নীল যান গাড়িতে উঠুন। যান যান, দ্রুত।
অর্নীল;; হুমমম যাচ্ছি।
অর্নীল সিয়ার কপালে একটা চুমু একে দেয়। তারপর গাড়িতে ওঠে চলে যায়।
সিয়াও ভেতরে চলে যায়।
আদিবা;; কিরে দেখা হলো?
সিয়া;; আর বলিস না। পুরাই পাগল।
আদিবা;; আহা প্রেম।
সিয়া;; আহা, আর তুমি যেমন কিছুই করো নাই। চাপা কম মার। তোর লাভ লেটার আমি নিজে লিখে দিয়েছি।
আদিবা;; খুব উপকার হইছে 🙂।
সিয়া;; জামাই এর কাছে যা, এখানে কি করস।
আদিবা;; আসলে তোকে বলতে এসেছি যে কাল আমরা শপিং এ যাচ্ছি।
সিয়া;; কেনো আবার কার বিয়ে?
আদিবা;; আরে ধুরু কারো বিয়ে না। এমনি মানে কাল ঘুরবো আর কি সাথে কিছু কেনা কাটা। তুই, আমি আর তোর দুলাভাই সাথে রুমানা (আদিবার ফ্রেন্ড)
সিয়া;; ওহহ আচ্ছা।
আদিবা;; এখন শুয়ে পর। আমি যাই।
সিয়া;; হুমমম।
আদিবার চলে যেতেই সিয়া অর্নীলের কাছে ফোন দেয়। অর্নীল ড্রাইভ করছিলো কানে এয়ার পড ছিলো তা দিয়েই কথা বলতে থাকে।
সিয়া;; অর্নীল!
অর্নীল;; হ্যাঁ জান বলো।
সিয়া;; কোথায় আপনি?
অর্নীল;; এইতো যাচ্ছি। আর এক ঘন্টা লাগবে।
সিয়া;; ওহহ আচ্ছা। ওহ হো আমি তো ভুলেই গিয়েছি।
অর্নীল;; কি?
সিয়া;; যখন থেকে এখানে এসেছি তখন থেকে আম্মু কে ফোন করে নি। নানু কেমন আছে জানা উচিত ছিলো। একটা বারও ফোন দিলাম না।
অর্নীল;; আরে চিন্তা করো না। আমি ফোন দিয়েছিলাম শাশুড়ী আম্মুর কাছে। তারা ঠিক আছে।
সিয়া;; ওহহ আচ্ছা যাক বাঁচলাম। আচ্ছা শুনুন তাহলে আমি রাখি। আমার না ঘুম পাচ্ছে। আর আপনি বাড়ি যান। অফিস বা বাইরে বাইরে ঘুইড়েন না আবার।
অর্নীল;; হ্যাঁ আর তুমি যাও ঘুমাও। কুম্ভকর্ণ একটা।
সিয়া;; এই কি বললেন?
অর্নীল;; আমার লক্ষী টা, ঘুমাও।
সিয়া;; হাহ, ঢং।
এই বলেই সিয়া ফোন কেটে দেয়। আর এলোমেলো হয়ে ঘুমিয়ে পরে।




চলবে~~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here