লাভ গেম -Part 4

0
260

#লাভ_গেম
#ফাবিহা_নওশীন
৪.
দুপুর বেলা। সূর্য ঠিক মাথার উপর। একটা প্যালেসের সামনে আদ্রিশের গাড়ি থামল। রুশা নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়াল। বাড়ির দরজার সামনে দাঁড়াতেই একটা বৃদ্ধ লোক এগিয়ে এলো। রুশা কৌতূহল নিয়ে ভেতরে তাকাল। মহিলা মানুষ বলতে কেউ নেই। আর এই লোকগুলোকে দেখে গার্ড মনে হচ্ছে। এরা পরিবারের কেউ হতে পারে বলে মনে হচ্ছে না।
আদ্রিশ বৃদ্ধ লোকটাকে দেখে বলল,
“চাচা, এই হচ্ছে তোমার বাড়ির বউ।”
রুশা ভদ্রতাসূচক হেসে পায়ে সালাম করতে গেল লোকটা দূরে সরে গেল।
“কি করছো মা? সালাম করছো কেন? আমি এ বাড়িতে কাজ করি।”
রুশা কৌতূহল নিয়ে তাকাল। কিছুই বুঝতে পারছে না।
“আদ্রিশ বাবা যখন খুব ছোট ছিল তখন থেকে আমি এ বাড়িতে কাজ করি। এতদিন ধরে আছি তাই আদ্রিশ বাবা আমাকে খুব মায়া করে। নিজের পরিবারের একজন ভাবে।”
রুশা এবার সব বুঝল। তারপর বলল,
“তাতে কি? আপনি তো বড়। সালাম করি।”
আদ্রিশ চাচাকে বলল,
“চাচা, ওকে রুমে নিয়ে যান।”
মিজান চাচা রুশাকে ঘরে নিয়ে গেল। রুশা
ঘরে গিয়ে চারদিকটা পর্যবেক্ষণ করল। বড় বেডের পাশে ওর আর আদ্রিশের পোর্টেট। পুরো ঘর, বেড ফুল দিয়ে সাজানো। রুশা গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল। লেহেঙ্গা, গয়না সব খুলে মেকাপ ধুয়ে ফেলল। লাগেজ থেকে একটা সুতি জামা বের করে পরে নিল। আদ্রিশের পরিবারের আর কেউ নেই, ওর বাবা-মা কোথায়? তারা কি এখানে থাকে না? নানান প্রশ্ন মাথায় ঘুরছে।
রুশা বিছানায় বসে পড়ল। দুহাত মাথায় দিয়ে
চোখ বন্ধ করে বসে রইল। আদ্রিশ এখনো ওর খোঁজ নিল না এটা কি করে হয়। রুশা রুমের দরজা খুলে ধীরে ধীরে বাইরে গিয়ে দাঁড়াল। দোতলার রেলিঙ ধরে নিচের দিকে তাকাল। লিভিং রুমে বসে কাগজে কি যেন লিখছে। সার্ভেন্টরা সবাই দাঁড়িয়ে আছে। সেজান আদ্রিশের হাত থেকে কাগজগুলো নিয়ে ওদের হাতে তুলে দিচ্ছে আর কি যেন বলছে কিন্তু এত দূর থেকে রুশা কিছুই শুনতে পেল না।
রুশা আদ্রিশের দিকে ভালো করে তাকাল। এতক্ষণ আদ্রিশকে খেয়াল করেনি। আদ্রিশের গায়ে এস কালার টি শার্ট আর একটা টাওজার। চুল বেয়ে টিপটিপ পানি পড়ছে। আদ্রিশ তো ঘরেই আসেনি তবে চেঞ্জ করল কখন? আর শাওয়ার নিল কখন?
রুশা দ্রুত ঘরে গেল। বড় আলমারিটা খুলল। এক পাশে ছেলেদের জামাকাপড় আরেক পাশে মেয়েদের জামাকাপড়। অন্য আরেকটা আলমারি খুলল। সেখানেও ছেলেদের ও মেয়েদের জুতা। ঘরের সব জায়গায় ছেলে ও মেয়েদের ব্যবহার্য জিনিসপত্র। তবে সব নতুন। এর আগে কেউ ব্যবহার করেনি। এটা তো তাহলে আদ্রিশের ঘরই। কিন্তু ও চেঞ্জ করে গেল কখন? রুশা আর মাথা ঘামাল না। গাড়ির শব্দ পেল। রুশা বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ায়। আদ্রিশ তাড়াহুড়ো করে কোথাও যাছে। ওর সাথে সেজান। ওর গাড়ির আগে পেছনে আরো কতগুলো গাড়ি। মনে হচ্ছে কোনো দেশের প্রেসিডেন্ট। রুশা ভেবে পাচ্ছে না উনার সাথে এত গার্ড কেন? সব সময় এত গার্ড নিয়ে কেন ঘুরেন? কিসের এত ভয়? উনার কি তাহলে অনেক শত্রু? হতেও পারে যেমন মানুষ।
আদ্রিশ নেই তাই রুশা সাহস করে নিচে গেল। এদিক সেদিক দেখছে। এত বড় বাড়ি, সব গুলিয়ে ফেলছে। বিভিন্ন জায়গায় সিসি ক্যামেরা লাগানো। মিজান চাচা ওকে খেতে ডাকল। রুশার প্রচন্ড ক্ষুধা লেগেছে। সকাল থেকে কিছু খায়নি। রুশা খেতে খেতে জিজ্ঞেস করল,
“এই বাড়িতে আর কেউ নেই?”
“আদ্রিশ বাবার হটাৎ করে একটা কাজ পরে গেছে। তাই বাইরে গেছে৷ আর কিছুক্ষণ আগে সব কাজের লোকদের বিদায় করে দিয়েছে।”
“কেন?”
“এর আগে তো এ বাড়িতে কোন মেয়ে মানুষ ছিল না। এখন তুমি এসে পড়েছো। পুরুষ মানুষের মাঝে যদি অস্বস্তিতে থাকো, তাই ওদের বিদায় করে দিয়েছে। আগামীকাল নতুন সার্ভেন্ট আসবে। সব মহিলা। এখন থেকে প্রয়োজন ছাড়া এ বাড়িতে পুরুষ মানুষ ঢুকা নিষেধ। আমি আর সেজান ছাড়া কারো অনুমতি নেই ঢোকার।”
রুশার মাথায় অন্য একটা প্রশ্ন ঘুরছে। জিজ্ঞেস করবে না করবে না করেও কৌতূহল বশত জিজ্ঞেস করল,
“আদ্রিশের বাবা-মা?”
মিজান চাচা চমকে গেল,
“তুমি মা জানো না?”
“জি না।”
“ওরা কেউই বেঁচে নেই। আদ্রিশের বাবা আদনান স্যার অনেক বড় ব্যবসায়ী ছিলেন। কোনো এক কারণে সে আত্মহত্যা করেছেন। আর মেডাম আরো আগে মারা গেছেন। আদ্রিশ বাবাকে আমিই বড় করেছি।”
রুশার একটু খারাপ লাগছে।
“আত্মীয় স্বজন?”
“আছে। সবাই ওর সম্পত্তির দিকে চেয়ে আছে। তাই আদ্রিশ বাবা কাউকে পাত্তা দেয়না। নিজের মতো থাকে। ছেলেটা অনেক কষ্ট নিয়ে একা একা বড় হয়েছে। ওকে দেখো তুমি, কখনো যেন কষ্ট না পায়।”
রুশা আলতো হাসল। তারপর খেতে খেতে গভীর ভাবনায় ডুব দিল।
**
সন্ধ্যা বেলায় রুশা কাউচে বসে বসে কথার সাথে কথা বলছে। আশ্রমের বাচ্চাদের খোঁজ নিচ্ছে। সবার ভীষণ মন খারাপ। কথা ওর জন্য চিন্তা করছে।।
“আপু, তুমি ঠিক আছো তো? তোমার জন্য চিন্তা হচ্ছে।”
“আমি ঠিক আছি। আমার জন্য চিন্তা করো না। আশ্রমের দায়িত্ব কিন্তু তোমার। আমি কিন্তু তোমার উপর সব দায়িত্ব দিয়ে এসেছি।”
“আপ্রাণ চেষ্টা করব। ওরা তো আমারই আপনজন। তুমি আর ওরা ছাড়া আমার কে আছে? তুমি চিন্তা করো না। নিজের খেয়াল রেখো।”
রুশার ঘরের দরজায় টোকা পড়ল।
“আচ্ছা, কথা রাখছি।”
রুশা কল কেটে ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করল,
“কে?”
“আমরা মেম পার্লার থেকে এসেছি।”
রুশার যেন প্রাণ ফিরে এল। ও ভেবেছিল আদ্রিশ এসেছে। কিন্তু হটাৎ পার্লার থেকে ওরা কেন এসেছে?
রুশা ওদের আসার জন্য বলল,
“জি, আসুন।”
কতগুলো মেয়ে শপিং ব্যাগ হাতে নিয়ে হাসি হাসি মুখ করে ওর দিকে তাকাল।
“আপনারা কেন এসেছেন?”
“আমাদেরকে বলা হয়েছে আপনাকে রেডি করে দিতে।”
“কেন?”
“সেটা তো আমরা জানি না। আমাদেরকে বলা হয়েছে আপনাকে রেডি করে দিতে।”
রুশা মনে মনে ভয় পাচ্ছে। সাজাবে বাসর রাতের জন্য না তো? ভাবতেই রুশার গলা শুকিয়ে আসছে। এ পর্যন্ত ঠিক ছিল কিন্তু বাসর!
ওরা রুশাকে গাঢ় সবুজ রঙের শাড়ি পরিয়ে দিল। সাথে লাইট মেকাপ, চুলে বেলি ফুলের মালা, হাতে চুড়ি, সিম্পল গয়না। রুশা সাজ শেষ করে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আদ্রিশ বাড়িতে চলে এসেছে। রুশা ভাবছে কি করে আদ্রিশের হাত থেকে নিজেকে বাঁচাবে। কিছু বলতে গেলে বাজপাখি না ওকে গলা টিপে মেরে দেয়। এসব ভাবতে ভাবতে দরজা খোলার শব্দে রুশা কেঁপে উঠে। পেছনের দিকে ঘুরে দরজার দিকে তাকাল। ঘরে আদ্রিশ এসেছে। রুশা ঢোক গিলে চোখ নামিয়ে নিল। আদ্রিশ কিছুক্ষণ ওকে মুগ্ধ হয়ে দেখল। তারপর ধীরে ধীরে পা ফেলে ওর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আর রুশা ধীরে ধীরে পিছিয়ে যাচ্ছে। আদ্রিশ ওকে পেছাতে দেখে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকাল। সে দৃষ্টিতে রুশা ভয় পেয়ে গেল।
আদ্রিশ ওর হাত ধরে চোখ মুখ শক্ত করে বলল,
“এভাবে পিছিয়ে যাচ্ছো কেন? আমি বাঘ না ভাল্লুক? আমি তোমার হাসব্যান্ড। আর আজকে আমাদের বাসর রাত।”
রুশা থরথর করে কাঁপছে। ওর ঠোঁট জোড়াও কাঁপছে। যা বলতে চাইছে পারছে না। আদ্রিশ ওর চুল থেকে বেলীফুলের মালাটা খুলে ঘ্রাণ নিয়ে নিচে ফেলে দিল। রুশা ফেলে দেওয়া মালাটার দিকে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে আছে। আদ্রিশ ওর চুলের খোঁপা খুলে চুলগুলো ছেড়ে দিল। চুলগুলো পিঠ ছেয়ে গেল। রুশার দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আদ্রিশ ওর গলায় ঠোঁট ছোয়ায়। রুশা শ্বাস নিতে পারছে না। ঘন ঘন ঢোক গিলছে। তারপর হটাৎ ছিটকে সরে গেল।
আদ্রিশ বিস্ময় নিয়ে ওর দিকে তাকাল।
“আমাকে ছুবেন না প্লিজ। আমাকে ছুবেন না।”
আদ্রিশ ভ্রু কুঁচকে চেয়ে বলল,
“সমস্যা কি? কেন ছুতে পারব না?”
“দেখুন জোর করে আমার কাছে আসবেন না। আমাকে জোর করে কি পাবেন? কিছুই হাসিল হবে না। জোর করার মধ্যে কোনো পুরুষত্ব নেই। যদি পারেন আমার ভালোবাসা, আমার সম্মতি আদায় করুন। তখন বুঝব আদ্রিশ আফসানের কি ক্ষমতা।”
আদ্রিশ ওকে ছেড়ে দিয়ে কিছু একটা ভাবল। তারপর রুশার দিকে তাকাল। রুশা ওর দিকে আগ্রহ নিয়ে চেয়ে আছে। ওকে বোঝার চেষ্টা করছে।
আদ্রিশ ঘর থেকে বের হয়ে গেল। রুশা হাফ ছেড়ে বাঁচল। মেঝেতে বসে পড়ল।
“বেঁচে গেছি। আদ্রিশের হাত থেকে নিজেকে বাঁচিয়েছি।”
রুশা দরজা খুলে একবার বাইরের দিকে দেখল। আদ্রিশকে আশেপাশে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। রুশা ঘরে গিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মুখের মেকাপ মুছে ফেলছে। কিছুক্ষণ বসে থেকে বিছানায় শুয়ে পড়ল। ও শোয়ার দশ মিনিট পরে আদ্রিশ ঘরে এলো। ওর চোখ মুখ ভয়ংকর লাগছে। রক্ত বর্ণ মুখটা দেখে রুশা উঠে বসে পড়ল। আদ্রিশ ওর দিকে না চেয়ে এক পাশে শুয়ে পড়ল। তারপর লাইট অফ করে দিল। রুশা কিছুক্ষণ বসে থেকে শুয়ে পড়ল।
****
ভোর বেলায় আদ্রিশ ধীরে ধীরে পা ফেলে চোরের মতো ঘর থেকে বের হচ্ছে। রুশার সকাল ঘুম ভেঙে যায় আদ্রিশের মোবাইলের রিংটোন শুনে। আদ্রিশকে এভাবে যেতে রুশার সন্দেহ হলো। ও কৌতূহল নিয়ে পেছনে পেছনে গেল। আদ্রিশ গার্ডেনের গেস্ট হাউজে ঢুকল। রুশা ভেতরে ঢুকতে ভয় পাচ্ছে। একবার ফিরে যেতে চাইলো। তারপর ভেতরে ঢুকল। গেস্ট হাউজে অনেকগুলো ঘর। রুশা একটা ঘরের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। একটা লোক বাঁধা অবস্থায় পড়ে আছে। গতকাল দুপুরে ওর খোঁজেই গিয়েছিল। ও জাফরের লোকদের সাথে মিলে আদ্রিশকে ধোঁকা দিয়েছে। রুশা গিয়ে দেখল আদ্রিশ একটা লোককে ছুরি দিয়ে সারা শরীরে আঁচড় দিচ্ছে। লোকটার মুখ বাঁধা। লোকটা গোঙ্গানি দিচ্ছে। রুশা ভয়ে আঁতকে উঠে। তারপর নিজের মুখ চেপে ধরে। দৌড়ে পালাতে গিয়ে উস্টা খেয়ে পড়ে গেল। পড়ে যাওয়ার শব্দে আদ্রিশের কান খাড়া হয়ে এলো। চোখ বন্ধ করে মুখ দিয়ে বাতাস বের করে হাতের ছুরি ফেলে ঘর থেকে বাইরে আসে। কিন্তু কাউকে দেখতে পাচ্ছে না। চারদিক তন্নতন্ন করে খোঁজছে। কাউকে না পেয়ে কপালের রগ ফোলে উঠে।
চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here