#হাতটা_রেখো_বাড়িয়ে
#পর্ব-13+14
Writer: ইশরাত জাহান সুপ্তি
আজ রোদের তেজ বড়ই বেশি। আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকাও দুষ্কর। হাসুর মা ভেবেছিল ঘরে থাকা মসুরের ডালগুলো সব বের করে উঠোনে রোদ দিবে। কিন্তু সকাল থেকে বাড়ির যেই অবস্থা তার জন্য সব কিছুই যেন থেমে গেছে। তার ছেলে মনিরের বউ রোকসানা সকাল থেকেই কেঁদে যাচ্ছে। সে নাকি মনিরের ফোনে কোন মেয়ের সাথে মনিরের ঘনিষ্ঠ ছবি দেখেছে। মনিরকে এ নিয়ে কিছু জিজ্ঞেস করলে সে স্পষ্ট করে তো কিছু বলছেই না তার উপরে চেঁচামেচি, গালাগালি করে বাড়ি মাথায় তুলে ফেলছে। বাড়ির পরিবেশটাই যেন কেমন পাল্টে গেছে। হাসুর মা মনে মনে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। হাসুও বাড়িতে নেই। এই সমস্যার সে কি করবে কিছু ভেবে পাচ্ছে না। খোদেজা এসেছিল প্রতিবেশী হাসুর মার কাছে রান্নার জন্য কিছু সরিষা চাইতে। এসে দেখলো মনির বউয়ের সাথে কি নিয়ে যেন চেঁচামেচি করে বাইরে চলে গেলো। হাসুর মাও ঘরের সামনের খুঁটির সাথে উদাস মনে হেলান দিয়ে রয়েছে। মনিরের কথার ধরন দেখে খোদেজা ব্যাপারটা কিছুটা আঁচ করতে পারলো। তাই আর কিছু না ঘেঁটে চুপচাপ সেখান থেকে চলে এলো সে। নিজের দাওয়ায় এসে আকাশের দিকে তাকিয়ে বেলা বোঝার চেষ্টা করলো। তার ছেলে আর ছেলের বৌ গেছে শহরে। না জানি আসতে আসতে কতক্ষণ লাগে!
গ্রামের পথে আসতেই শুদ্ধ খেয়াল করলো সরকারি দপ্তর থেকে কিছু লোক এসে পাকা সড়কে কিছু ফিতা নিয়ে কি যেন মাপামাপি করছে। এই সড়কের পাশ দিয়ে চলে যাওয়া অঞ্চলে মাঝে আরেকটা রাস্তা পাকা করা হবে। তারই পরিকল্পনা চলছে। শুদ্ধ উপলব্ধি করলো রূপনগর আর তাদের আশেপাশের গ্রামগুলোতে উন্নয়নের ছোঁয়া খুব ভালো মতোই লেগেছে। গ্রামের মধ্যে পাকা রাস্তা ঘাট, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, স্কুল, কলেজ ইত্যাদি সবই আছে। গ্রামটি শহরের কাছ ঘেঁষে হওয়াতেই সব সুযোগ ভালো মতো পাচ্ছে তারা। এই তো বছর কয়েক আগেও তো শুদ্ধ যখন উচ্চ শিক্ষার জন্য গ্রাম ছেড়ে শহরে গিয়েছিল তখনও তো এই গ্রামের অবস্থা এতোটা ভালো ছিল না। রাস্তাঘাট ছিল কাঁচা। বর্ষাকালে বৃষ্টি এলে রাস্তা কর্দমাক্ত হয়ে হাঁটার মতো অবস্থাও থাকতো না। আজ সেখানে সবকিছু কতো সুন্দর! কিন্তু শুধু রাস্তাঘাট পাঁকা হলেই কি তাকে উন্নত বলা যায়? আসল উন্নতি তো তখন হবে যখন এই গ্রামের মানুষের চিন্তা চেতনার দুয়ার হবে বিস্তৃত, অজ্ঞতা মুক্ত ও কুসংস্কারহীন। সেই উন্নতি রূপনগরে কতটা হয়েছে তা ঠিক শুদ্ধ’র জানা নেই।
অটো থামিয়ে অটোচালক অন্যদের সাথে কথা বলে জানতে পারলো, এই রাস্তা দিয়ে যেতে হলে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে৷ শুদ্ধ ভীষণ বিরক্তবোধ করলো। এমনিতেই ধারাকে নিয়ে তার বন্ধুর কাছে দুই ঘন্টার মতো পড়িয়ে তারপর এসেছে। সাধারণত রোজ বিকেলেই শহরে ধারাকে নিয়ে বন্ধুর কাছে প্রাইভেট পড়াতে যায় শুদ্ধ। আজ তার বন্ধুর বিকেলে কিছু কাজ থাকায় সেই পড়া বিকেলে না পড়িয়ে সকালেই পড়িয়ে দিয়েছে। রূপনগর থেকে মূল শহর খুব বেশি দূরে নয়। অটোরিকশায় যেতে সময় লাগে চল্লিশ মিনিট। যদিও রোজ আসা যাওয়ার জন্য একটু সমস্যাই। তবুও তার বন্ধুকে রাজী করিয়ে যে দুই মাস তার কাছে ধারাকে একা পড়াতে পারছে তাই বেশি। অটোতে বসে থাকতে থাকতে গরমে ঘাম ছুটে যাচ্ছে শুদ্ধ ধারার। অটো থেকে একবার মাথা বের করে রাস্তার দিকে তাকিয়ে শুদ্ধ ধারাকে বলল,
‘চলুন ধারা নেমে যাই। এখানে কতক্ষণ বসে থাকতে হয় না হয়! দেরি হয়ে যাবে। এখান থেকে আমাদের বাড়ি গ্রামের ছোট পথে গেলে খুব বেশি দূরে নয়। তবে যাওয়ার সময় একটা ছোট সাঁকো পরে। আপনি সাঁকো দিয়ে যেতে ভয় পান না তো!’
সাঁকো দিয়ে অনেকবার যাওয়া আসা হলেও ধারার সাঁকো তে একেবারেই যে ভয় লাগে না তা বলা যায় না। তবুও সেই কথাটা সে শুদ্ধকে বলল না। আবার না খোঁচারাজ কোন কথায় পরে এ নিয়ে খোঁচা দিয়ে বসেন! তাই শুদ্ধ’র কথায় হেসে মাথা দুলিয়ে সে সায় দিলো। অটো থেকে নেমে পড়ে গ্রামের শর্টকাট পথ ধরলো তারা। একেকজনের বাড়ির উপর দিয়ে যাওয়ার সময় সবাই তাদের কৌতূহলী দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে দেখতে লাগলো শুদ্ধ’র সাথে থাকা অচেনা সুন্দরী মেয়েটিকে। ধারার সংকোচ হতে লাগলো। অবশেষে সব বাড়ির সীমানা ছাড়িয়ে যখন তারা মরা খালের কাছে চলে এলো তখনই একটু স্বস্তি হলো ধারার। কিন্তু তা বেশিক্ষণ টিকলো না। সামনে চওড়া খাল। তার উপর দিয়ে সোজা চলে গেছে বাঁশের নড়বড়ে লম্বা সাঁকো। শুদ্ধই আগে চড়লো সাঁকো তে। তারপর ধারা। দুজন মানুষের কদম পড়তেই সাঁকো দুলতে শুরু করে দিলো। পায়ের নিচে শুধু একটাই বাঁশ। তাকেই আশ্রয় করে যেতে হবে ওপারে। ধরে ধরে হাঁটার জন্য পাশ দিয়ে উপরে আরেকটা বাঁশকে আড়াআড়ি ভাবে স্থাপন করা হয়েছে। সেটাই ভালো মতো হাত দিয়ে ধরে রেখে সাবধান সাঁকো পার হতে লাগলো তারা। সাঁকো টা কেমন যেন পিচ্ছিল হয়ে আছে। বোধহয় একটু আগেই কেউ ভেজা পায়ে পার হয়েছিল। ধারা খুব আস্তে আস্তে পার হতে লাগলো। বুকের মধ্যে হৃদস্পন্দন কিছুটা হলেও বেড়ে গেছে তার। যদিও খালে পানি একদম নেই বললেই চলে। পানির নিচ থেকে আঠালো মাটিও চোখে পড়ছে। খানিক শঙ্কিত মুখে সেদিকেই বারবার চোখ দিচ্ছিল ধারা। এখানে একবার কেউ যদি পড়ে একেবারে কাঁদায় নাস্তানাবুদ হয়েই উঠতে হবে তার। ভাবতে ভাবতেই পা পিছলে গেলো ধারার। সে নিজে পড়লো তো পড়লোই সাথে করে বাঁচার জন্য সামনের শুদ্ধ’র শার্ট খামছে ধরায় তাকেও নিয়ে পড়লো। ঝপ করে একপ্রকার বিকট শব্দ হলো খালের সেই কাঁদা পানিতে। খানিক নাকানিচুবানি খেয়ে দুজনেই সোজা হয়ে হাঁটু গেড়ে বসলো পানিতে। কাঁদায় মাখামাখি ইতিমধ্যেই হয়ে গেছে তারা। শুদ্ধ বলল,
‘এটা কি হলো ধারা?’
হাত দিয়ে চুলের কাঁদা পরিষ্কার করতে করতে ধারা বলল, ‘আমি কি জানি! আমি কি ইচ্ছে করে করেছি?’
‘আপনার সাঁকো তে সমস্যা হলে সেটা আমাকে আগে বলবেন না!’
‘বললে কি হতো? সেই তো আপনি আবার আমাকে পরে এটা নিয়েও ঠাট্টা করতেন। তাই বলিনি।’
‘ঠাট্টার ভয়ে কাঁদায় মাখামাখি হওয়া আপনার বেশি উপযোগী মনে হলো? কি অদ্ভুত! আচ্ছা, আপনার কি কোন পড়ে যাওয়ার রোগ আছে? এই নিয়ে আপনি আমার সামনেই ঠিক কয়বার পড়লেন বলুন তো?’
চোখে ঠাট্টার ভাব ফুটিয়েই শুদ্ধ ধারার দিকে তাকিয়ে রইলো। ধারা মুখ ঘুরিয়ে বিড়বিড় করে বলল, ‘ঐ যে শুরু হয়ে গেল! খোঁচারাজ ইজ ব্যাক।’
ধারা তাড়াহুড়ো করে উঠার চেষ্টা করতেই আঠালো মাটির চুম্বকে আবার বসে পড়লো। সামনে আগানো তো দূর! এক পা তুলতে গেলে আরেক পা দেবে যায়। এ দেখি মহা সমস্যা!
খানিক এমন ভাবেই চেষ্টা মেষ্টা চালিয়ে ধারা ক্লান্ত হয়ে বসে পড়ে কাঁদো কাঁদো মুখে বলল,
‘এ মা! এ তো উঠাই যাচ্ছে না। এভাবে কি কাঁদার মধ্যেই আটকে থাকবো নাকি! এখন কি হবে?’
শুদ্ধ নির্বিকার গলায় বলল, ‘কি আর হবে? এখানেই একটা সংসার পেতে বসবো। দুই তিনটা বাচ্চা কাচ্চা পয়দা করবো। তারাও এই কাঁদার মধ্যেই মনের আনন্দে লুটোপুটি খেলবে। আমাদের কাঁদায় মাখানো সুন্দর লুটোপুটি সংসার। দারুণ হবে কিন্তু! কি, দারুণ না ধারা?’
ধারা কটমট করে শুদ্ধ’র দিকে তাকালো। নির্লিপ্ত ভাব নিয়ে বসে রইলো শুদ্ধ। ধারা আবারো এক দমক হুটোপুটি করে উঠার চেষ্টা করলে শুদ্ধ বলল, ‘এমন ভাবে উঠলে কোনদিনও উঠতে পারবেন না ধারা।’
এই বলে শুদ্ধ খুব আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়ালো। এক পা সাবধানে সামনে বাড়িয়ে আবার অনেকক্ষণ পর আরেক পা বাড়ালো। তারপর ধারার দিকে হাত বাড়িয়ে বলল,
‘এভাবে উঠুন।’
শুদ্ধ’র হাত ধরে ধারা এরপর সাবধানেই খাল থেকে উঠে এলো। এরপর রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় যেকজনই তাদের দুজনকে দেখলো মুখ হা করে তাকিয়ে রইলো। এমন ভরদুপুরে দুজন কাঁদায় মাখা মানব মানবীকে দেখলে যে কারোরই অবাক হবার কথা। বাড়ির কাছে আসলে খোদেজা ওদের দুজনকে দেখে ভূত দেখার মতই চমকে উঠলো। তারপর সব ঘটনা শুনে হাসতে হাসতে বলল,
‘আগে গোসল করে পরিষ্কার হয়ে নে তোরা। তারপর বাকিটা শুনবো। কি যে করিস না তোরা।’
চুলায় রান্না বসানো ছিল তার। তাই তাড়াতাড়িই সরতে হলো তাকে। খোদেজা রান্নাঘরে চলে গেলে শুদ্ধ ধারা চলে এলো পুকুর পাড়ে। সকালে শহরে যাবার আগে দুজনেই গোসল সেরে জামাকাপড় পুকুড় পাড়ে তারের উপর রোদে শুকাতে দিয়েছিল। গোসলে ঢোকার আগে তা সেখান থেকে নেবার জন্য দুজনে যখন একসাথেই হাত বাড়ালো তখন শুদ্ধ বলে উঠলো,
‘আপনি এখন জামাকাপড় নিচ্ছেন কেন? গোসলখানায় এখন আমি যাবে।’
‘ইশ! বললেই হলো। আমি আগে জামাকাপড় নিতে এসেছি তাই আমি যাবো।’
‘জ্বি না। আপনি আগে না। আমরা দুজনে একসাথেই নিয়েছি।’
‘তাহলে আপনি আগে যেতে চাচ্ছেন কেন?’
‘কারণ দোষটা আপনার। আপনি আমাকে টেনে না ধরলে তো আর আমি খালে পড়তাম না।’
‘আচ্ছা! আর আপনি যদি ঐ শর্টকাটে না আসতে চাইতেন তাহলে আমরা কেউই খালে পরতাম না। তাই মূল দোষটা আপনার।’
‘বললেই হলো! আমি তো আপনাকে আগে জিজ্ঞাসা করেই নিয়েছিলাম সাঁকোর ব্যাপারে। কিন্তু আপনিই তখন হিরো সাজার জন্য…ওপস! সরি, হিরোইন সাজার জন্য কিছু বলেননি আর আমাদেরকে খালে পড়তে হয়েছিল।’
যুক্তিতে হেরে যাবার মুখোমুখি হতেই ধারা কথা ঘুরিয়ে বলল,
‘তাতে কি হয়েছে? এমনিতে তো কত বড় বড় কথা বলেন। লেডিস ফার্স্ট, এটা জানেন না? তাই আমিই আগে যাবো।’
পাশের টলমলে পুকুরের পানির দিকে তাকিয়ে একটা রহস্যময়ী হাসি ঠোঁটে চেঁপে শুদ্ধ ধারাকে জিজ্ঞেস করলো, ‘ধারা, আপনি সাঁতার পারেন?’
নিজের ঠাঁট বজায় রেখেই ধারা দ্রুত জবাব দিল,
‘হ্যাঁ।’
‘সিরিয়াসলি?’
‘হ্যাঁ।’
‘শিওর তো?
বারবার একই প্রশ্ন করায় ধারা কপট বিরক্তের স্বরে বলল,
‘আরে হ্যাঁ বাবা হ্যাঁ! এখন এইটাও কি আপনাকে করে দেখাতে হবে?’
শুদ্ধ নির্লিপ্ত স্বরে বলল,
‘তাহলে তো মন্দ হয় না।’
কথার সারমর্ম বোধগম্য না হতেই এক সেকেন্ডের মধ্যেই ধারাকে বিস্ময়ের চরম পর্যায়ে পৌছে দিয়ে শুদ্ধ এক ধাক্কায় পুকুরে ফেলে দিল তাকে। তারপর নিজেও ঝাঁপ দিয়ে পুকুরে পানিতে গিয়ে পড়লো।
চলবে,
#হাতটা_রেখো_বাড়িয়ে
#পর্ব-১৪
Writer: ইশরাত জাহান সুপ্তি
পুকুরের স্বচ্ছ টলমলে পানি থেকে মাথা তুলে নিজেকে ধাতস্থ করে ধারা হতভম্ব গলায় বলল,
‘এটা কি হলো?’
মাথার ভেজা চুলগুলোকে হাত দিয়ে পেছনের দিকে ঠেলে দিয়ে নির্বিকার গলায় শুদ্ধ বলল,
‘আপনাকে পানিতে ফেলে দিলাম।’
‘কেন?’
‘এভাবে আগে-পরে যাওয়া নিয়ে ধাক্কাধাক্কি না করে একটা সঠিক সমাধানেই যাওয়া ভালো নয় কি? কাঁদায় মাখামাখি যেহেতু দুজনে একসাথে হয়েছি, কাঁদা থেকে ছাড়াছাড়িও তো দুজনের একসাথেই হওয়া উচিত, তাই না?
‘এটা কোন কথা! কিভাবে করতে পারলেন আপনি এটা?’
‘আপনি আরেকবার উঠে পাড়ে গিয়ে দাঁড়ান। আমি আবার ধাক্কা দিয়ে দেখাচ্ছি কিভাবে করলাম। বুঝতে পারছি, ধাক্কাটা দেওয়া নিশ্চয়ই খুব সুন্দর হয়েছে। একারণেই আপনি আরেকবার চাইছেন। নো প্রবলেম! স্পেশালি আপনার জন্য, শুধু আপনার জন্য আমি আরেকবার আমার ধাক্কা দেওয়ার স্টাইলটা আপনাকে দেখাতেই পারি।’
ধারা রাগে গজগজ হয়ে একদৃষ্টিতে শুদ্ধ’র দিকে তাকিয়ে রইলো। দুজনের মধ্যকার দূরত্ব মাত্র এক হাত। শুদ্ধ নিজেকে পানির উপর ভাসিয়ে দিয়ে স্বাভাবিক কণ্ঠে বলল,
‘এভাবে তাকিয়ে আছেন যে! প্রেমে টেমে পড়ে গেলেন না তো আবার?’
ধারা মুখ ঘুরিয়ে একটা ভাব নিয়ে বলল,
‘কোনদিনও না। আমার সিদ্ধান্ত পাকা করাই আছে।’
শুদ্ধ হেসে বলল, ‘আহারে! আপনার জন্য আমার সত্যিই বড় আফসোস হয়। জীবনের প্রথম একটা সিদ্ধান্ত নিলেন সেটাও নাকি ঠিকমত রাখতে পারবেন না।’
‘কেন? রাখতে পারবো না কেন?’
‘শুদ্ধ সারাক্ষণ কোন মেয়ের চোখের সামনে থাকবে আর তার প্রেমে সে পড়বে না এমনটা তো কখনো হয়েছে বলে মনে হয় না। বলা তো যায় না, হয়তো ইতিমধ্যেই আপনি আমার প্রেমে পড়ে গেছেন।’
ধারা ভাব নিয়ে বুকে আড়াআড়ি ভাবে দু হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে বলল, ‘ভুল ধারণা আপনার।’
ধারার কথা শেষ হতে না হতেই শুদ্ধ হঠাৎ বলে উঠলো,
‘আরে ধারা! আপনার পেছনে তো একটা সাপ।’
ধারা ‘ও মাগো!’ বলে লাফিয়ে উঠে শুদ্ধ’র একদম কাছে ঘেঁষে দাঁড়ালো। সেই কান্ড দেখে শব্দ করে হেসে উঠলো শুদ্ধ। দুপুরের সোনা রাঙা রোদের ঝিলিকে তার টোল পড়া গালের হাসি ধারার মনে এক সুভাসিত মাতাল হাওয়ার পরশ বুলিয়ে গেলো। শুদ্ধ বলল,
‘আপনার ভীতু অভ্যাসটা বোধহয় কখনোই যাবে না তাই না ধারা? নাকি এটাও জানেন না, মানুষ যেমন সাপকে ভয় পায় তেমন সাপও মানুষকে ভয় পাও। এমন পুকুরের মাঝখানে ঝাঁপিয়ে পড়া মানুষের কাছ দিয়ে সাপ কখনো এসে বসে থাকবে না।’
ধারা মুখ ফুলিয়ে বলল, ‘জানি আমি।’
‘জানেন যদি তাহলে এমন করে আমার বুকে লাফিয়ে আসলেন কেন? নাকি চোখের সামনে এমন একটা হ্যান্ডসাম ছেলেকে দেখে হুঁশ থাকে না! আমার তো সন্দেহ হচ্ছে, সাপের ভয় পাওয়া একটা বাহানাই না ছিল! আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে আমাকে জড়িয়ে ধরতে চাওয়া।’
রাগে দুঃখে ধারা পারলে তখন নিজের চুল নিজে ছিড়ে। সাথে শুদ্ধরটাও। সে এক ঝাটকায় শুদ্ধর থেকে সরে যেতে চাইলো। কিন্তু বাঁধ সাধলো তার অবাধ্য চুল। শুদ্ধ’র শার্টের বোতামের সাথে এমনভাবে পেঁচিয়ে গেছে যে ধারাকে আবারো টান খেয়ে শুদ্ধ’র কাছেই থাকতে হলো তাকে। শুদ্ধ সেখানে তাকিয়ে অবাক হওয়ার ভাণ ধরে বলল,
‘কোন ফাঁকে আবার এটাও করে রেখেছেন! হায় আল্লাহ! আরও কত কি যে দেখবো!’
‘আপনি কি একটু চুপ থাকবেন! আমাকে আমার চুলটা ছাড়াতে দিন। নয়তো আমি কিন্তু আপনার বোতাম সহই ছিঁড়ে নিয়ে যাবো!’
‘কি দিন চলে এলো ভাই! একা একটা ছেলেকে দেখে মেয়েরা কিভাবে থ্রেট দেয়।’
ধারা অতি দ্রুত বোতাম থেকে নিজের চুল ছাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগলো। এতক্ষণ চোখের সামনে নিজের বউয়ের রাগে গজগজ মূর্তিরূপ শুদ্ধ বেশ ভালোই উপভোগ করছিলো। ধারার এমন রূপ খুব কমই দেখা যায়। এমনিতে তো মেয়েটা এতোটাই শান্ত যে, যে যাই বলুক কারো সাথে তাকে কখনো রাগ করতেও দেখা যায় না। তাই এমন সুযোগ যখনই শুদ্ধ’র হাতে আসে তার সঠিক ব্যবহার না করে শুদ্ধ ছাড়ে না। তাড়াহুড়োয় ধারা ঠিকমতো চুল ছাড়াতে পারলো না। বরং আরও পেঁচিয়ে যেতে লাগলো। চুলে টান পড়ে ব্যাথা হতে লাগলো তার। তা দেখে শুদ্ধ ধারাকে থামিয়ে দিল। ধারার মাথাটা দু হাত দিয়ে আস্তে করে সোজা রেখে নিজে ছাড়িয়ে দিতে লাগলো তার চুল৷ খুব সাবধানে। যাতে এতটুকুও ব্যাথা না পায় ধারা। অপলক সেই যত্নবান শুদ্ধ’র দিকে তাকিয়ে রইলো ধারা। এমনিতে তো মানুষটা কতো ভালো। ধারার কত টা খেয়াল রাখে। শুধু মাঝেমধ্যেই ওমন হুটহাট শয়তানীটা চেঁপে বসে। ধারাকে শুধু রাগিয়ে দেয়। কিন্তু সত্যিই কি ধারার রাগ হয়? নাকি মিছে রাগের আশ্রয়ে অন্তরের কোন এক গোপন কোণে মনে মনে এই মুহুর্তগুলোর জন্যই অপেক্ষা করে থাকে তার অবচেতন মন।
__________________________________________
দুপুরের খাবার শেষে খোদেজা একটা কাঁথা নিয়ে সেলাই করতে বসলো। শুদ্ধ ধারাও তখন সবেই খেয়ে উঠেছে। এখনও রুমে যাওয়া হয়নি তাদের। তখন সদর দরজা ঠেলে ভেতরে আসে তার আরেক প্রতিবেশী আমেনার মা আর নাইওর আসা তার মেয়ে। এসে খোদেজার পাশে বসে কথায় কথায় সকল পাড়া প্রতিবেশীর দৈনিক বিবাদের ফিরিস্তি খুলে দেয়। পাশের বাসার মনির আর রোকসানার কথায় আসতেই তার গলার স্বর খাদে নেমে যায়। তারা সবটা জানে না। বাড়ির পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করে নিজ মনেই কিছু মনগড়া কারণ ধরে নিয়েছে তারা। তারই সূত্রে ইনিয়ে বিনিয়ে সে খোদেজাকে বলতে লাগলো,
‘বুঝছো খোদেজা, মাইনষের ব্যাপার স্যাপার আমি না একদমই বুঝতে পারি না। আমরাও সোয়ামীর ঘর কইরা আসতাছি। কই আমরা তো কোনদিন এমন করি নাই। মনির একটু কি না কি রাগারাগি করছে হের লেইগা দিনভর মনিরের বউ কান্নাকাটি লাগায় দিছে। আসলে দোষটা মনিরেরও আছে। এরাই প্রথমে লাই দিয়া বউগো মাথায় উঠায় রাখে। পরে আর শাসন করতে পারে না। দেখো না, ঐ বাড়ির আবুলের কান্ডকারখানা। ও’র বউয়ের প্রথম বাচ্চা হইলো মতোন কি করলো? বউয়ের বাচ্চা হইছে দেইখা সে যায় কলস নিয়া পানি আনতে, আবার কিনা উঠান ঝাড়ু দেয়। কি জানি বাপু, এমন মাইগ্যা স্বভাব আমাগো ঘরের ব্যাডা গো ভিতরে নাই। কি কস আমেনা?’
মায়ের তাল পেয়ে মেয়েও মুখ বেঁকিয়ে বলতে লাগলো, ‘হ গো মা৷ এইসব আমাগো ভিতরে নাই। আমার ভাইরে দেখছেন খোদেজা চাচী? সে তো এক গ্লাস পানিও ঢাইলা খাইতে পারে না। আবার নাকি এগুলা করবো? আজ পর্যন্ত রান্না ঘরের সীমানাতে পারাও দিয়া দেখে নাই। বাইরে থিকা আইসা শার্ট খুইলা সেখানেই রাইখা দিবো। আজ পর্যন্তও ধুইয়া দেখছে কি না সন্দেহ। কিছু বললে বলবে সে কি ‘মাইগ্যা’ নাকি যে মেয়েদের কাজ করবে। তার আবার তেজ আছে।’
কথা শেষ করে আমেনা আর তার মা দুজনেই তৃপ্তির সাথে হাসলো। তাদের ছেলে আর ভাই যে ভবিষ্যতে বউ পাগল হবে না এতেই তাদের প্রশান্তি। শুদ্ধ এতক্ষণ সবটাই শুনছিল। তাদের হাসির দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে স্মিত হেসে বলল,
‘আমেনা আপা, আপনার মায়ের কথা বাদই দিলাম। তিনি আগেকার দিনের মানুষ। কিন্তু আপনি নাকি এসএসসি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছিলেন? স্কুলে তো আমাদের মানুষের লিঙ্গভেদ পড়িয়েছিল, কাজেরও লিঙ্গভেদ আছে কি না কখনো পড়িয়েছিল কি? আপা, বেয়াদবী নিবেন না। আপনি যা বললেন আমি তার সাথে ঠিক একমত হতে পারলাম না। আপা শুনুন, মানুষের মধ্যে জেন্ডার আছে। কাজের কোন জেন্ডার থাকে না। যেটা থাকে সেটা হলো ক্ষমতা। আসল কথা হলো কে কি করতে পারে, কার কতোটুকু ক্ষমতা আছে। আর কোন কাজ করতে না পারা কখনোই কোন গর্বের বিষয় হতে পারে না। আপনার ভাই কোন গর্বের কাজ করছে না আপা। তাকে এখনই সময় থাকতে উচিত দুই গালে দুইটা ঠাস করে চটকানা দেওয়া। আর বলা, নিজেদের কাজ নিজে করায় কোন মাইগ্যা স্বভাব হতে পারে না। তাহলে যদি একটু সঠিক পথে আসে।’
আমেনা আর তার মায়ের মুখ থমথমে হয়ে উঠলো। শুদ্ধকে বলার মতো কোন যুৎসই জবাব তারা খুঁজে পেলো না। ধারা শুধু মুখ হা করে শুদ্ধ’র কথা শুনতে লাগলো। কি করে এতো বড়দের সামনে কত সুন্দর ভাবে শুদ্ধ তার নিজের ধারণা রেখে দিলো! ঠিক তখনই বাইরে থেকে ভীষণ হট্টগোলের আওয়াজ এলো। সবাই বাইরে বেড়িয়ে এসে দেখলো হাসুদের বাড়িতে ভীষণ ঝামেলা হচ্ছে। রোকসানা বাবার বাড়ি যাবার জন্য ব্যাগ পত্র গুছিয়ে ফেলেছে। মনির তাকে আটকাবে তো দূর উল্টো আরও এই হুমকি দিচ্ছে যে রোকসানা যদি আজ এই বাড়ি ছেড়ে চলে যায় তাহলে আর কোনদিনও ফেরত আসতে পারবে না। সিদ্ধান্ত তার। এই নিয়ে ভীষণ চেঁচামেচি হচ্ছে। শুদ্ধ মনিরকে আটকাতে গেলো। রোকসানা খুব চেঁচামেচি করছে। অপরদিকে মনিরও থামছে না। মনিরকে শুদ্ধ শান্ত করে নিয়ে গেলো সেখান থেকে। তার সাথে কথা বলে যা বুঝতে পারলো মনিরের কয়েকমাস আগে একটা মেয়ের সাথে সম্পর্ক গড়ে উঠে। যদিও এখন বর্তমানে নেই। মনির সেসব ছেড়ে দিয়েছে। তবুও কিভাবে যেন ঐ ছবিটা রয়ে গিয়েছিল ফোনে। তাই দেখে ফেলেছে রোকসানা। সে এ নিয়ে রোকসানাকে কোন কৈফিয়ত দিতে রাজী না বলেই তাকে কিছু বোঝাচ্ছে না। মেয়ে মানুষ কেন এতো ঔদ্ধত্য হবে?
সবটা শুনে মাথা দুলিয়ে আফসোসের সাথে শুদ্ধ বলল, ‘তুমি কি এটা কোন ঠিক কাজ করেছো মনির ভাই? কিভাবে পারলে ভাবীকে এতো বড় ধোঁকা দিতে! দোষটা আগে হোক পরে হোক, এখন থাকুক আর নাই বা থাকুক অন্যায় তো তুমি করেছোই। আর এ নিয়ে তুমি ভাবীর কাছে মাফ না চেয়ে উল্টো তার সাথেই গালাগালি করছো?’
মনির বলল, ‘আরে এগুলা তো আগে করছি। এখন তো বাদ দিয়া দিছি। তাইলে এখন ওয় এমন শুরু করছে কেন? ওরে আমার সব কিছু কইতে হইবো? শুনো মাহতাব, মাইয়া মাইনষের বেশি বুঝোন ভালো না।’
শুদ্ধ স্মিত হেসে বলল, ‘আজকে এই কাজটা যদি তুমি না করে ভাবী করতো তাহলে কি তুমি তাকে ছেড়ে কথা বলতে মনির ভাই? একই বিষয় ছেলে আর মেয়ের ক্ষেত্রে আলাদা হয়ে যাবে কেন বলতে পারো? ভাবীর চেঁচামেচিকে তোমার বাড়াবাড়ি মনে হচ্ছে? এর পেছনের যন্ত্রণাটাকে কি তুমি উপলব্ধি করতে পারছো না? আচ্ছা মনির ভাই, তোমার মনে আছে? একবার যে তুমি তোমার দোকানে অনেক বড় লস খেলে। তোমাদের ফসলও সেবার বেশি হলো না। একপ্রকার অভাবেই ডুবে গিয়েছিলে তোমরা। তখনও কি ভাবী তোমাকে ছেড়ে চলে যেতে চেয়েছিল? নাকি তখনই ছেড়ে গিয়েছিল যখন তুমি একবার অনেক অসুস্থ হয়ে গেলে? ছেড়ে যায়নি তাই তো! কিন্তু আজ একটা মেয়ের সাথে তোমার ছবি দেখে রোকসানা ভাবী তার বাপের বাড়ি চলে যেতে চাইলো। তবুও কি তুমি কিছু বুঝতে পারছো না মনির ভাই? সব কষ্ট সহ্য করতে পারলেও ভাবী এই কষ্টটা সহ্য করতে পারছে না। বুঝতে পারছো এটা মেয়েদের কাছে কতো ভয়ানক কষ্টের ব্যাপার! বিয়ের পর একটা মেয়ে তো তার স্বামীর উপর বিশ্বাস করেই তার আপন সব কিছু ছেড়ে আসে। বিনিময়ে চায় একটু ভরসা, বিশ্বস্ততা। আমরা কি সেই বিশ্বস্ততা টা তাদেরকে দিতে পারি না? যেই মেয়ে আমাদের জন্য তার সবকিছু ছেড়ে দিল আমরা কি তার জন্য শুধু এতটুকু ছাড়তে পারি না? পারি না একটু অন্য মেয়েদের দিকে না নজর দিয়ে থাকতে? নিজেদের একটু সামলে রাখতে কি পারি না বলো? মনির ভাই, তোমার না একটা ছোট মেয়ে আছে? বিয়ে হওয়ার পর তার সাথে কখনোও কল্পনাতেও এরকম হওয়া তুমি মানতে পারবে?’
মনির এতক্ষণ চুপ করে অপরাধীদের মতো শুদ্ধ’র বলা প্রতিটা কথা শুনছিল। বয়সে ছোট একটা ছেলের থেকে এসব শোনা তার জন্য ভীষণ লজ্জিত একটা ব্যাপার। সত্যি বলতে নিজের কাজের জন্য অনুতপ্ত বোধ তার আগেও হচ্ছিল। কিন্তু নিজের নকল পুরুষত্ব বোধের গায়ে লাগছিল বলেই নিজের দোষের রাগ রোকসানার উপরেই ঝেড়ে দিচ্ছিল। মূলত রোকসানাকে বাপের বাড়ি যাওয়া থেকে আটকাবার জন্যই এরকম হুমকি দিয়েছিল সে। তবুও মুখ ফুটে মাফ চাইতে পারেনি।
শুদ্ধ’র শেষের কথাটায় হঠাৎ মনিরের বুক কেঁপে উঠলো। সে ঝট করে কম্পিত দৃষ্টিতে তাকালো শুদ্ধ’র দিকে। শুদ্ধ স্মিত হেসে বলল, ‘কি, নিজের মেয়ের বেলায় খারাপ লাগলো তো শুনতে? ভাবীও তো তেমনই একজনের মেয়ে মনির ভাই। মেয়ের জন্য ভালোবাসা সব বাবারই এক। তুমি যখন অন্যের মেয়েকে ভালো রাখতে পারবে ঠিক তখনই নিজের মেয়েকেও অন্যের কাছে ভালো থাকার আশা করতে পারবে। পরকীয়া খুবই জঘন্য একটা ব্যাপার। কোন ব্যাখা দিয়েই তুমি এটাকে জাস্টিফাই করতে পারবে না। যেটা অন্যায় সেটা অন্যায়ই। তুমি অনেক বড় একটা ভুল করেছো। ভাবী যদি তোমাকে আর কখনো মাফ নাও করে তবুও আমি তাকে কোন দোষ দিতে পারবো না। আঘাতটা যখন বিশ্বাসের উপর এসে হয় তখন বাদবাকি সবকিছুই ঠুনকো হয়ে যায়। ভাবীর কাছে গিয়ে মাফ চাও মনির ভাই। যতটুকু দিয়ে মাফ চাওয়া যায় সবটুকু দিয়েই। সে তোমার বউ। তাকে ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখো। ভয় পাইয়ে নয়।’
মনির অনুতপ্ত মুখে সেখান থেকে উঠে চলে গেলো। উঠোনে দাঁড়িয়ে চেঁচামেচি করা রোকসানার হাত ধরে তাকে ভেতরে নিয়ে দরজা বন্ধ করে হঠাৎ কেঁদে ফেললো। কান্নার শব্দটা বাইরে থেকেও শোনা গেলো। রোকসানাও যে ঠান্ডা হয়ে গেছে ভিতরের নিরবতা তাই প্রকাশ করলো। একটা প্রশান্তির হাসি নিয়ে পকেটে দু হাত গুঁজে সেখানেই দাঁড়িয়ে রইলো শুদ্ধ। ধারা এতক্ষণ অবাক, মুগ্ধ, স্থবির সব অনুভূতি একসাথে নিয়েই তাদের পাশে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শুদ্ধ’র কথা শুনছিলো। মনির চলে যাওয়ার পরই ধারা শুদ্ধকে এই প্রথম নাম ধরে ডেকে একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বলল,
‘শুদ্ধ, আপনি সত্যিই শুদ্ধ।’
চলবে,