হাতটা রেখো বাড়িয়ে -Part 28+29

0
238

#হাতটা_রেখো_বাড়িয়ে
#পর্ব-28+29
Writer: ইশরাত জাহান সুপ্তি
শুদ্ধ সেদিন রাতটা সে বাড়িতে কাটিয়ে তার পরেরদিন সকালেই ধারাকে নিয়ে রূপনগর ফিরে এলো। আজিজ সাহেব সন্তুষ্ট মনেই মেয়ে আর মেয়ের জামাইয়ের বিদায় দিয়েছেন। বাড়ি ফিরতেই ধারার মন জুড়িয়ে গেলো। আজ কতদিন পর সে দেখতে পেলো সেই প্রিয় বাড়ির দৃশ্য। সবকিছু এখনও সেই মায়া ময়, স্নিগ্ধ। সেই ছোট্ট দোচালার ঘর। টিনের বারান্দা। বাড়ির সামনের হাস মুরগীর খোঁয়াড়। পাশ দিয়ে সারি বেঁধে লাগানো সুপারি গাছ। পুকুরের স্বচ্ছ টলমল জলে সাঁতরে বেড়াচ্ছে শুভ্র রাঁজহাসের দল। পাশের বাড়ি থেকে নাজমা ভাবির হাঁকডাক শোনা যাচ্ছে। ধারা চোখ বন্ধ করে প্রাণভরে সবটা শুষে নেয় যেন। খোদেজা আর চুমকি শুদ্ধ আর ধারাকে বাড়ির উঠোনে দেখেই একপ্রকার দৌঁড়ে ছুটে আসে তাদের দিকে। অনেকদিন পর মায়ের মতো শ্বাশুড়ি খোদেজার দেখা পেয়ে ধারা সর্বপ্রথম তাকে জড়িয়ে ধরে। খোদেজা ছলছল চোখে বলে,
‘এসেছো বউ! আমি রোজ তোমার লেইগা রাস্তার ধারে পথ চাইয়া থাকতাম। এই বুঝি কোনদিন মাহতাব তোমারে নিয়া আসে। কাল রাতে যহন শুদ্ধ ফোন দিয়া বলল তোমারে নিয়া আসার কথা, আমি কি যে খুশি হইছিলাম। তোমারে ছাড়া এই বাড়ি যে খালি খালি লাগে মা।’
ধারা আবেগ্লাপুত গলায় বলল,
‘হুম মা এসেছি। নিজের বাড়ি ছেড়ে বেশিদিন কি আর দূরে থাকা যায়!’
চুমকি ছটফট করে ধারার হাত ধরে বলল,
‘নতুন ভাবী, তোমাকে যে আমার কতো মনে পড়ছে এই কয় দিন জানো! তুমি না থাকলে একদমই এখন আর ভালো লাগে না। এভাবে আর কখনো বেশিদিন থাকবা না ঠিকাছে?’
ধারা হাসিমুখে মাথা দুলায়। শুদ্ধ একটু আদুরে গলায় বলে উঠে,
‘আম্মা, এখন কি তোমার বউ পাওয়ার খুশিতে এদিকেই দাঁড়ায় থাকবা? পা ব্যাথা হয়ে যাচ্ছে তো! তোমার ছেলের দিকেও একটু তাকাও।’
খোদেজা মজার ছলে মুখ ঘুরিয়ে বলল,
‘তোরে আর কি দেখমু? তোরে তো রোজই দেখি। আজকে বউ অনেকদিন পর আইছে এখন খালি বউরে দেখমু।’
শুদ্ধ মেকি অভিমানের গলায় বলল,
‘বাহ! ভালো। বউ পেয়ে ছেলের প্রতি এতো অবহেলা! আচ্ছা ঠিকাছে। আমিও কয়দিনের জন্য কোথাও থেকে আসি। তারপর যদি আমার কদর সবার হয়!’
খোদেজা বলল, ‘হইছে হইছে এখন আর ঢং করা লাগবো না। তোরা ভেতরে গিয়া বস। চুমকি ওগো লেইগা দুই গ্লাস শরবত বানায় দিস।’
রুমে এসেই ধপ করে বিছানায় শুয়ে পড়লো শুদ্ধ। ধারা এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখতে লাগলো। শুদ্ধ শুয়ে শুয়েই বলল,
‘যাওয়ার সময় তো বাবা তোমাকে এক কাপড়েই নিয়ে গেলো। আসার সময় এতো বড় স্যুটকেস আনলে কিভাবে? টানতে টানতে দফা রফা হয়ে গেছে আমার।’
ধারা বলল, ‘আরে! আমার কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস ছিল ওখানে। সে সব কিছুই একসাথে গুছিয়ে নিয়ে এসেছি।’
‘প্রয়োজনীয় জিনিস তাহলে আগে আনো নি কেন?’
‘কি জানি! হয়তো তখনও এই ঠিকানাই পারমানেন্ট সেটা খেয়ালে আসেনি।’
‘এখন মনে হয়?’
এই কথার উত্তরে ধারা কিছু বলল না। শুদ্ধ’র কাছে বিছানায় বসে আস্তে ধীরে বলল,
‘আমার এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না, সত্যিই সব কিছু ঠিক হয়ে গেছে। আমরা আবার একসাথে হতে পেরেছি। সব কেমন যেন স্বপ্ন স্বপ্ন লাগছে।’
শুদ্ধ শোয়া থেকে উঠে বসে বলল,
‘স্বপ্ন না ম্যাডাম, সত্যি। এই যে আপনার সামনে আমি বসে আছি। ভালো করে তাকিয়ে দেখুন।’
ধারা শুদ্ধ’র মজার মধ্যে না ঢুকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলল,
‘ভর্তি পরীক্ষাটা না দিয়ে তোমাকে আমি খুব আঘাত করেছি তাই না?’
শুদ্ধ সেই কথা উড়িয়ে দিয়ে বলল,
‘ধুর! তোমাকে আমি বলেছি না সেই কথা আমি কবেই ভুলে গেছি। তুমি এরপর অনেক কিছু করেছো। এতেই আমি অনেক সন্তুষ্ট। নিজে নিজে গিয়ে সাবজেক্ট চয়েজ দিয়ে ন্যাশনালে ভর্তি হয়েছো। আমার ভীষণ ভালো লেগেছে যে তুমি নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নিয়েছো। আর ধারা ন্যাশনাল বলে মন খারাপ করো না। শিক্ষার জন্য একটা ভালো প্রতিষ্ঠান গুরুত্বপূর্ণ, অপরিহার্য নয়। চেষ্টা আর পরিশ্রম যদি পরিপূর্ণ থাকে তাহলে তুমি ন্যাশনালে পরেও সেসব অর্জন করতে পারবে যেটা ইউনিভার্সিটি থেকে হয়। আর আমি তো বলেছি, সবকিছুতে সবসময় আমি তোমার পাশে আছি। তোমাকে আমি কোনকিছুতেই পিছিয়ে থাকতে দিবো না।’
ধারা শুদ্ধ’র হাতের উপর হাত রেখে বলল,
‘জানি। এটা আমি খুব ভালো করেই জানি। জানো, একটা সাধারণ মেয়ে সমাজের নিয়ম রীতি, মানুষের আলাদা দৃষ্টিভঙ্গির জন্য অনেকটা দূর্বল হয়েই থাকে। একটা মেয়েকে ছোট থেকেই তার স্বামীর উপর সব কিছু ছেড়ে দেওয়ার মতো করেই সবসময় বড় করা হয়। এমতাবস্থায় কোন মেয়ে যদি ভালো স্বামী পায় তাহলে এর থেকে সুন্দর তার জীবনে আর কিছু হয় না। একটা ভালো স্বামী একটা মেয়ের জন্য তার জীবনের শ্রেষ্ঠ উপহার। যে তাকে সবসময় সাপোর্ট করবে, তার স্বপ্নগুলোকে বাঁচিয়ে রাখবে, তার ইচ্ছা অনুভুতিকে গুরুত্ব দিবে। সর্বোপরি তার নিজস্ব সত্তাটার সাথে তাকে পরিচয় করিয়ে দেবে। ভালো মানুষ হতে পারলেও সবাই ভালো স্বামী হতে পারে না। কিন্তু তুমি পেরেছো। তুমি ভালো মানুষ আর ভালো স্বামী দুটোই। আজ যদি আমার ভাগ্যে আর সাধারণ পাঁচটা মেয়ের স্বামীর মতোই স্বামী পড়তো তাহলে তো বোঝাই যাচ্ছে আমার সাথে কি হতো? কিন্তু এমনটা হয়নি। আমি তোমার মতো স্বামী পেয়েছি। তুমি আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ উপহার।’
শুদ্ধ’র চোখে মুখে একটা প্রশান্তির ছাপ ফুটে উঠলো। সে মিষ্টি হাসির সাথে বলল,
‘জানো ধারা, আমার জীবনের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অর্জনের মতো এটাও অনেক বড় অর্জন। দুনিয়াশুদ্ধ মানুষের কাছে ভালো হয়েও কোন লাভ নেই যদি একটা পুরুষ তার স্ত্রীর কাছেই ভালো না হতে পারলো। হাদীসেও তো আছে, সেই পুরুষই উত্তম যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম। আজকে তুমি আমাকে আমার জীবনের সেই গুরুত্বপূর্ণ সার্টিফিকেট টা দিলে।’
শুদ্ধ ধারার হাতটা নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে বলল, ‘স্বামী স্ত্রীকে একে অপরের পরিপূরক বলা হয় কেন? কারণ তারা দুজন মিলে আসলে এক। তাদের দুজনের অর্ধেক অর্ধেক অংশ মিলেই একটা বেটার ভার্সন হয়। একটা পরিপূর্ণ অংশ। এখন যদি আমার একটা অংশ (স্ত্রী) পিছিয়ে থাকে তাহলে আমি কিভাবে সামনে আগাবো? আমাকে তো তাকে নিয়েই এগোতে হবে তাই না! একসাথে। হাতে হাত মিলিয়ে। আমরা দুজন মিলেই তো এখন এক। যখন আপনি পিছিয়ে যাবেন তখন আমি হাত বাড়াবো। আর যখন আমি পিছিয়ে যাবো তখন আপনি হাত বাড়াবেন।
তবেই না আমরা যেতে পারবো সামনে! হতে পারবো জীবনে সফল।’
ধারা আর কি বলবে ভেবে পায় না। শুধু একদৃষ্টিতে শুদ্ধ’র দিকে তাকিয়ে থাকে। সত্যিই তার চিন্তা ভাবনার কোন তুলনা হয় না। তার সব কথাই মুক্তোর মতো সুন্দর। কিছুক্ষণ এভাবেই নিশ্চুপে কাটার পর হঠাৎ শুদ্ধ ধারার কাঁধে হাত উঠিয়ে দিয়ে বলে,
‘আচ্ছা ধারা, তোমার মাথায় এই প্রেগন্যান্টের কথাটা বলার আইডিয়া কিভাবে এলো?’
ধারা উৎফুল্ল হয়ে বলতে নিলো,
‘ও… সেইটা? সেটা তো আমি দাদীর…..
ধারা আর বলতে পারলো না। শুদ্ধ নিজের মতো করে বলতে লাগলো, ‘এটা তো মিথ্যাই ছিল, না? আর এদিকে আমি তো ভেবেছিলাম….
ধারা সরু চোখে তাকিয়ে দ্রুত বলে উঠলো,
‘কি ভেবেছিলে?’
শুদ্ধ একটা ইনোসেন্ট ভাব নিয়ে বলল,
‘আমি ভেবেছিলাম আপনি না আবার আমার ঘুমন্ত আমিটার সুযোগ নিয়ে…..
ধারা শুদ্ধ’র হাতটা ও’র কাঁধ থেকে সরিয়ে তাকে ধাক্কা দিয়ে আবার বিছানায় ফেলে বলল,
‘তুমি ভীষণ পাজী।’
শুদ্ধ শোয়া থেকে উঠতে উঠতে বলল,
‘আচ্ছা! বউয়ের মন না পাওয়া পর্যন্ত তাকে ছুঁয়েও দেখলাম না। আর আমি এখন পাজী হয়ে গেলাম? এমন কঠিন পণ নেওয়া হাজবেন্ড আর কোথাও পাবে?
ধারা কিছু না বলে চলে যেতে লাগলে শুদ্ধ পেছন থেকে চেঁচিয়ে বলতে লাগলো,
‘তুমি তোমার পানিশমেন্ট কিন্তু এখনও পূরণ করলে না। সময় কিন্তু যাচ্ছে মানে দ্বিগুণ থেকে দ্বিগুণ হচ্ছে।’
ধারা সেদিন নিজ হাতে সব রান্না করলো। খোদেজাকে পাশেও ঘেঁষতে দিলো না। শুদ্ধ রইলো পাশে। একপ্রকার জোর করেই, সাহায্যের নাম করে। যতটুকু না সাহায্য করলো তার চাইতে বেশি জ্বালালো। একটা হাত পাখা নিয়ে জোরে জোরে বাতাস করতে লাগলো। মাটির চুলার রান্না। আগুনের তাপে ধারার মুখ এমনিতেই হয়েছিল রক্তিম। তার উপরে শুদ্ধ’র হাত পাখার বাতাসে তার বেঁধে রাখা চুলগুলো সামনে দিয়ে বারবার চোখের উপর এসে পড়ছিল। ধারা একবার গরম চোখে তাকায়। শুদ্ধ চুপ করে গিয়ে আবার পরক্ষণেই সেই একই কান্ড শুরু করে দেয়। কখনো আবার ধারার কেটে রাখা তরকারী লুকিয়ে রাখে। ধারা রাগ হয়, শুদ্ধ মজা পায়। ধারার রাগে টুমটুমে মুখটা দেখতে তার বেশ লাগে।
একসময় এভাবেই তাদের মিষ্টি খুনসুটি চলতে চলতে রান্না শেষ হয়। তারপর দুপুরে খাওয়াও। অনেকদিন পর সবাই একসাথে মাদুর বিছিয়ে খেতে বসে। অনেকদিন পর সেই পুরনো সুন্দর মুহুর্তগুলো কাটিয়ে ধারার চোখ আবারও অশ্রুসিক্ত হয়। জীবন সুন্দর। খুব সুন্দর।
__________________________________________
রাতের বেলা। শুদ্ধ রুমে এসে দেখে কেউ নেই। ধারাকে ফোন লাগায়। একটুপর ফোন রিসিভ করে ধারা ঘুমু ঘুমু গলায় বলে,
‘হ্যালো, আমি নিচে মা আর চুমকির সাথেই ঘুমিয়ে পড়েছি।’
শুদ্ধ দ্রুত বলে উঠে, ‘মানে কি?’
‘মানে কিছুই না। তুমি এতো রাত করে বাইরে ছিলে কেন? আমার একা একা ভয় লাগছিল তাই মার সাথে ঘুমিয়ে পড়েছি। আর এখনো মানে বুঝতে না পারলে পুকুর পাড়ে আসো।’
শুদ্ধ আর কিছু বলবে তার আগেই ধারা ফোন কেটে দিল। অগত্যা বিভ্রান্ত মুখেই শুদ্ধকে পুকুর পাড়ে যেতে হলো। গিয়ে দেখলো ধারা সেই বাঁশের মাচার উপর একটা আকাশী রঙের শাড়ি পড়ে পা উঠিয়ে বসে আছে। শুদ্ধ অবাক হয়ে কাছে গিয়ে বলল, ‘তুমি না বললে তুমি ঘুমিয়ে পড়েছো? এতো রাতের বেলা একা একা এখানে কি করছো? আমি তো প্রথমে দেখে কোন পেত্নী ভেবে বসেছিলাম।’
ধারা খুব ভালোভাবেই বুঝলো শুদ্ধ তাকে ক্ষেপাচ্ছে। তাই সেই ফাঁদে না পড়ে বলল,
‘পেত্নীই যখন ভেবেছিলে তাহলে আসলে কেন? পেত্নী যদি ঘাড় মটকে দিতো?’
শুদ্ধ ধারার পাশে বসতে বসতে বলল,
‘এতো সুন্দরী পেত্নী কাছ থেকে দেখার লোভ সামলাতে পারিনি। আজ হঠাৎ শাড়ি পড়লে যে!’
ধারা স্মিত হেসে বলল,
‘আলমারি গোছানোর সময় হঠাৎ সামনে এলো তাই আর লোভ সামলাতে পারিনি। পড়ে নিয়েছি। জানো, এই বাড়ির মধ্যে আমার সবচাইতে প্রিয় জায়গা কোনটা? এই পুকুর পাড়টা। রাতের বেলা এখানে বসতে যে আমার কি ভালো লাগে! আজকেও দেখো একদম গোল একটা চাঁদ উঠেছে আকাশে। কত সুন্দর!’
শুদ্ধ তাকিয়ে দেখলো, আসলেই সুন্দর। চাঁদের আলো ঠিকরে পড়ছে চারদিকে। পুকুরের পানি চিকচিক করছে সেই শুভ্রতার ছোঁয়ায়।
শুদ্ধ বলে উঠলো, ‘আজকে তোমার ঘুম পাচ্ছে না? এমনিতে তো সন্ধ্যা হতে না হতেই ঘুমের জন্য ব্যাকুল হয়ে থাকো।’
‘না পাচ্ছে না।’
‘পড়তে বসালেই পেতো।’
ধারা বিরক্তির সাথে শুদ্ধ’র দিকে তাকায়। সে কতো সুন্দর করে আজ সেজেছে। কিন্তু শুদ্ধ তাকে কেমন লাগছে সেটা তো একবারও বলছেই না। আরও উল্টো কথা বলছে। যখন দেখলো শুদ্ধ’র সেদিকে কোন হুঁশ ই নেই তখন নিজ থেকেই বলল, ‘আমি আজকে সম্পূর্ণ একা একা শাড়ি পড়েছি।’
শুদ্ধ আড়চোখে ধারার দিকে তাকালো। মেয়েটা আজকে খুব করে সেজেছে যেন। এবং এই মুহুর্তে শুদ্ধ’র মুখ থেকে কি শুনতে চাইছে সেটাও খুব করে বুঝলো সে। তবুও বলল না। প্রিয়সীকে আরেকটু ক্ষেপিয়ে দেওয়ার জন্যই বলল,
‘হুম বুঝতে পারছি। এজন্যই তো পেত্নী বলেছি।’
ধারা মুখ ভার করে অন্য দিকে তাকিয়ে রইলো। ধারা সত্যি সত্যি রাগ করেছে ভেবে শুদ্ধ তৎক্ষনাৎ কানে হাত দিয়ে আস্তে করে বলল,
‘সরি! তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে।’
ধারা নিজের হাসি সংযত করে গম্ভীর হয়ে বলল, ‘শুধু সরি বললেই সব মাফ হয়ে যায় নাকি?’
শুদ্ধ মুখ ঝুলিয়ে বলল, ‘তাহলে আর কি করতে হবে?’
ধারা বলল, ‘উঠে দাঁড়াও। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এই জায়গাটুকুর মধ্যে আকাশের তারা গুনে আমাকে বলো। এটাই তোমার পানিশমেন্ট।’
শুদ্ধ করুন মুখে বলল, ‘সত্যি করতে হবে?’
‘হুম।’
কি আর করার শুদ্ধ বউয়ের রাগ ভাঙাতে পুকুরের পাশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে তারা গুনতে থাকে। ধারা ঠোঁট চেপে হেসে আস্তে আস্তে শুদ্ধ’র পেছনে গিয়ে দাঁড়ায়। কিছুক্ষণ হাত উঁচু করে তারা গোনার পর শুদ্ধ মাথা চুলকে ঈষৎ হেসে বলে, ‘এভাবে তারা গুনতে থাকলে তো আমার সারাজীবন এখানেই কেটে যাবে ধারা।’
শুদ্ধ হাসতেই তার গালে টোল পড়ে। ধারা দু পা উঁচু করে এক প্রকার লাফিয়েই শুদ্ধ’র গালে একটা চুমু দিয়ে উঠে। শুদ্ধ অবাক হয়ে তাকায়। ধারা বলে, ‘আমি আমার পানিশমেন্ট উহ্য রাখি না।’
কথাটা বলেই একটা রহস্যময়ী হাসি দিয়ে শুদ্ধ’র অবাকের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দিয়ে ধারা এক ধাক্কায় শুদ্ধকে পুকুরে ফেলে দিলো। তারপর নিজেও আস্তে আস্তে নেমে গেলো পুকুরে। শুদ্ধ’র হতভম্ব দৃষ্টিকে উপেক্ষা করে, বুকে প্রেমের জোয়ার ভাসিয়ে দিয়ে একদম তার কাছাকাছি চলে গিয়ে অধরে অধর ছোঁয়ালো। জোনাকিরা ঘুরে ঘুরে আলো ছড়ালো। ফুলেরা বাতাসে সুগন্ধী মিশিয়ে দিলো
আর নির্লজ্জ চাঁদও বেহায়া দৃষ্টিতে পড়তে লাগলো এক যুগলের ভালোবাসার গল্প।
চলবে,
#হাতটা_রেখো_বাড়িয়ে
#পর্ব-২৯
Writer: ইশরাত জাহান সুপ্তি
ভোরের সূর্যটা আকাশের বুকে নিজেকে স্পষ্ট রূপে প্রকাশ করতেই তার এক ছটাক আলো জানালা গলিয়ে ধারার মুখ বরাবর পড়লো। আলোর আবির্ভাবে সদ্য ভেঙে যাওয়া ঘুম থেকে চোখ পিটপিট করে তাকালো ধারা। কারো লোমশ বুকে নিজের মাথাটা আবিষ্কার হতেই ধারা মাথা উঁচু করে দেখে নিলো তাকে। শুদ্ধ চোখ বন্ধ করে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। সকালের নরম রোদে পরিস্ফুট হওয়া তার ঘুমন্ত মুখটি দেখতেই গতকাল রাতের কথা স্মরণে এনে লজ্জাবতী গাছটির মতো গুটিয়ে গেলো ধারা। ঠোঁটে লজ্জার হাসি ফুটে উঠতেই চোখ তুলে তাকাতেই পারলো না আর তার দিকে। শুদ্ধ’র ঘুম ভাঙার আগেই বিছানা ছেড়ে উঠে গেলো সে। দ্রুত পায়ে রুম ত্যাগ করে সেই সকাল আর শুদ্ধ’র সামনাসামনি হলো না। খোদেজা রান্নাঘরে বসে রুটির জন্য আটা মাখছিলো। ধারা গিয়ে সেই কাজে হাত লাগালো। বসে বসে গোল গোল রুটি বানাতে লাগলো সে। ঘুম ভাঙার পর থেকেই শুদ্ধ লক্ষ করলো ধারা তার সামনে আসছে না। আর এলেও কিছুক্ষণ পর পর হুটহাট চোখের সামনে থেকে উধাও হয়ে যাচ্ছে। তাকে খুঁজতে খুজতে শেষমেশ যখন রান্নাঘরে এসে দেখা মিললো তার, তখন শুদ্ধও একটা ব্রাশ হাতে নিয়ে দরজার সামনে বসে বসে দাঁত মাজতে লাগলো। আর আড়চোখে দেখতে লাগলো ধারাকে। ধারার গায়ে হালকা গোলাপি রঙের থ্রি পিছ। ছোট ছোট ফুল তোলা সুতি ওড়নাটা দিয়ে মাথায় ঘোমটা তুলে রুটি বানাচ্ছে সে। অর্ধ প্রকাশিত চেহারার যতটুকুই বা বের হওয়া তার সম্পুর্ণে লাজুকতার লাল আভা স্পষ্ট। খোদেজা ধারার পাশ থেকে শুদ্ধকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠল,
‘কিরে মাহতাব তুই দুয়ারে বইসা আছোস কি করতে? তাড়াতাড়ি কল থিকা মুখ ধুইয়া আয়।’
ধারা একবার আড়চোখে শুদ্ধ’র দিকে তাকায়। তার রুটি বানানো শেষ। তাই উঠে দাঁড়ায়। ঘরের ভেতর যে যাবে তার উপায় নেই। মানুষটা দরজার সামনেই বসা। খোদেজার কথার প্রতিউত্তরে শুদ্ধ ধারার দিকে তাকিয়ে বলে,
‘কলে যেতে ইচ্ছা করছে না আম্মা। আলসেমি লাগছে। কেউ যদি এক মগ পানি এনে দিতো!’
খোদেজা ধারাকে বলে, ‘বউ, কলপাড়ে বালতিতে পানি চাবানোই আছে। তুমি একটু এক মগ পানি এনে মাহতাবরে দাও তো।’
ধারা খানিক কাঁচুমাচু করে পানি আনতে যায়। শুদ্ধ মনে মনে খুশি হয়। এবার ধারা কি করে তার সামনে না এসে থাকবে তাই দেখার। কলপাড়ে গিয়ে ধারা দেখে চুমকিও মুখ ধুতে এসেছে। তার ধোয়া প্রায় শেষ৷ ধারা তাই তার হাতেই এক মগ পানি শুদ্ধ’র কাছে পাঠিয়ে দিয়ে অপর পাশ দিয়ে ঘরে চলে যায়। খোদেজার বিছানায় কিছু জামাকাপড় এলোমেলো হয়ে পড়েছিল৷ তাই ভাঁজ করে ঠিকমতো আলনায় সাজিয়ে রাখতে থাকে ধারা। শুদ্ধ ততক্ষণে মুখ ধুয়ে এসে ধারার পেছন পেছন ঘুরতে থাকে। ধারা লজ্জায় জবুথবু হয়ে দেখেও না দেখার ভান করে নিজের কাজ করতে লাগলো। শুদ্ধ পেছন পেছন বলতে থাকে,
‘কালকে রাতে কি সত্যিই তোমার মাথায় পেত্নী চেঁপেছিল নাকি! আজকে তো দেখি আবারো সেই আগের মতো লাজুকলতা হয়ে গেছে আমার বউটা। আমার দিকে কি আজকে একটুও তাকাবে না?’
ধারা কোন উত্তর দিচ্ছে না দেখে তার আরক্তিম লাজুক মুখটার দিকে তাকিয়ে শুদ্ধ মুচকি হেসে বলল,
‘বুঝলাম না আমাকে দেখে এতো লজ্জা পাওয়ার কি আছে?’
শুদ্ধ ধারার পেছন পেছন হাঁটছিল। ধারা হঠাৎ পেছনে ঘুরে তাকানোয় ধাক্কা খেতে খেতেও বেঁচে গিয়ে শুদ্ধ দুই হাত উঁচু করে অদ্ভুত ভাঁবে ভ্রু উঁচিয়ে বলল, ‘ওপস!’
ধারা শাসনের সুরে বলল, ‘তোমার আজকে কাজ নেই। যাচ্ছো না কেন?’
শুদ্ধ বিছানার উপর বসতে বসতে মেকি আফসোসের ভঙ্গিতে বলল,
‘কি কপাল আমার! অন্যের বউরা মাঝেমধ্যে তার জামাইকে আরো কাজে যেতে বারণ করে। আর আমার বউ আমাকে ঠেলেঠুলে পাঠিয়ে দেয়।’
ধারা কোমরে এক হাত রেখে দাঁড়িয়ে শুদ্ধ’র অভিনয় দেখতে লাগলো। তখন চুমকি এলো গরম গরম রুটি আর আলু ভাজির বাটি নিয়ে। শুদ্ধ’র সামনে রাখার পর শুদ্ধ খেতে শুরু করে। চুমকি তবুও ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে। তাকে কিছুটা বিভ্রান্তকর দেখায়। মাথা চুলকে গভীর কোন ভাবনা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে আছে সে। শুদ্ধ রুটির টুকরো মুখে দিয়ে জিজ্ঞেস করে,
‘কিরে তোর আবার কি হলো?’
ধারাও একই প্রশ্ন করলো। বলল, ‘কি ভাবছো চুমকি?’
চুমকি ধারার দিকে তাকিয়ে উদ্গ্রীব স্বরে বলল,
‘আচ্ছা নতুন ভাবী, তোমার কখনও এমন হইছে যে তোমার মনে হচ্ছে তুমি স্বপ্ন দেখতাছো কিন্তু আসলে এতোটাই বাস্তব বলে মনে হয় যে ঐটারে স্বপ্ন বলে মনে হয় না। কিন্তু আসলে স্বপ্নই।’
শুদ্ধ খেতে খেতে বলে, ‘পাগলের মতো কি বলতাছোস এগুলা?’
চুমকি জোর গলায় বলে, ‘না ভাই সত্যি। এমনটাই লাগতাছে আমার। দেখো, কালকে রাতে আমার এমন লাগলো মনে হইলো যে রাতের বেলা ঘুম ভাইঙ্গা দেখলাম তুমি নতুন ভাবিরে কোলে কইরা বাইরে থেকে নিয়া আসতাছো। এখন বলো এটা কি সম্ভব? এতো রাতে তোমরা এমন করবা কেন?
মনে তো হয় স্বপ্নই দেখছি। কিন্তু এতো আবার স্পষ্ট লাগতাছে….
চুমকির কথা শুনে শুদ্ধ’র বিষম উঠে যায়। ধারা বিছানার খুঁটির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। সেও পুরো সোজা হয়ে যায়। চুমকি হন্তদন্ত হয়ে বলে, ‘আরে আরে মাহতাব ভাই পানি খাও, পানি খাও!’
শুদ্ধ নিজেকে ধাতস্থ করে বলে, ‘তুই আসলেই একটা বেকুব চুমকি। কোথায় কি বলতে হয় না কিচ্ছু বুঝিস না। ঐটা স্বপ্নই ছিল। এখন যা!’
চুমকিকে আবার বিভ্রান্ত দেখায়। বিভ্রান্ত মনেই সে চলে যায়। চুমকি যেতেই শব্দ করে হেসে উঠে শুদ্ধ। ধারা শাসনের চোখে শুদ্ধ’র দিকে তাকালে শুদ্ধ হাসি থামিয়ে ইনোসেন্ট ভাব নিয়ে বলে,
‘আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছো কেন? আমার কি দোষ? আমি কি এবার তোমাকে পানিতে ফেলেছিলাম? তুমি ফেলছো। তুমিই তো আমাকে পুকুরে ধাক্কা দিয়ে কিস…..
শুদ্ধকে কথা সম্পূর্ণ করতে না দিয়ে তার সামনের অর্ধেক রুটিটা দ্রুত তুলে ধারা সম্পূর্ণ শুদ্ধ’র মুখে পুরে দেয় বেলাজ ছেলেটার কথা বলার রাস্তা আটকায়। আর নিজেকে লাজুকতার অথৈ অম্বরে ডুবে যাওয়া থেকে বাঁচিয়ে চলে যায়।
__________________________________________
দুদিন বাদেই আসবে হেমন্ত। কার্তিকের অবস্থা এখন যাই যাই। মাঠ জুড়ে শুধু সোনালী ধানের ঝিলিক। পাকা ধানের সৌন্দর্যে ভরে আছে বাংলার প্রকৃতি। শালিকের উড়ন্ত পাখার সাথে ভেসে আসা খোলা হাওয়ায় দুরন্ত ধানের শিখা নজর কাড়ে। আশেপাশের কিছু ক্ষেতে ধান কাটা শুরুও হয়ে গেছে। কাটা ধান সারি সারি ভাবে বিছিয়ে রাখা। ক্ষেতে আসার পর ধারা কিছুক্ষণ ধানক্ষেতের আলের উপর দাঁড়িয়ে সেই সৌন্দর্যে চোখ মেলে তাকায়। তার পরনে একটা সাধারণ সুতি থ্রি পিছ। হাতে খাবারের স্টিলের টিফিন বাক্স। সে যাচ্ছে শুদ্ধ’র কাছে। শুদ্ধ আজকাল বড্ড বেশি ব্যস্ত থাকে। সারাদিনটা এই ক্ষেতে খামারেই কেটে যায় তার। কখনো কখনো দুপুরে বাড়িতে গিয়ে খাবারের অবকাশও হয় না। মাঝে মাঝে খোদেজা খাবার নিয়ে আসে। আজ ধারা এসেছে। শুদ্ধ’র জন্য নিজ হাতে খাবার নিয়ে আসার তার বহুদিনের শখ। ক্ষেত পেরিয়ে শুদ্ধ’র কাছে পৌঁছে ধারা দেখে শুদ্ধ কিছু লোককে সার হাতে নিয়ে কি যেন বুঝিয়ে দিচ্ছে। লোকগুলো চলে গেলে ধারা পেছন থেকে গিয়ে শুদ্ধ’র কানের কাছো ‘ভো’ করে উচ্চ শব্দ করলো। শুদ্ধ চমকালো না। পেছনে ফিরে ভ্রু উঁচিয়ে ইশারা করলো। ধারা হতাশ গলায় বলল,
‘ভয় পেলে না কেন?’
শুদ্ধ মৃদু হেসে বলল, ‘ভয় পাবো কেন? তোমার কণ্ঠ কি আমি চিনি না!’
ধারা মুখ ভার করে ঘুরিয়ে বলল, ‘একটু অবাকও তো হলে না! এই যে আমি আসলাম তোমার জন্য খাবার নিয়ে।’
শুদ্ধ ধারার হাত ধরে কাছে টেনে বলল, ‘আমার বউ আমার জন্য খাবার নিয়ে এসেছে তাতে অবাক হবো কেন? অন্য কারো বউ যদি নিয়ে আসতো তাহলে অবাক হতাম।’
ধারা শুদ্ধ’র হাতে হালকা বারি দিতেই শুদ্ধ হেসে ফেললো। ধারা শুদ্ধ’র হাত টেনে ছায়া দেখে একটা গাছের নিচে বসলো। টিফিন বক্স খুলতে খুলতে ধারা বলল, ‘অনেকগুলো পদ নিয়ে এসেছি। কোনটা দিয়ে আগে খাবে?’
‘তুমি খাইয়ে দাও। যা দিবে তাই খাবো।’
কথাটা বলেই শুদ্ধ চোখ বন্ধ করে হা করলো। ধারা ঠোঁট চেঁপে একটু হেসে টিফিন বক্স থেকে একটা কাঁচা মরিচ বের করলো। শুদ্ধ’র মুখে দিতেই কামড় দেওয়ার পর শুদ্ধ হকচকিয়ে চোখ মেলে তাকালো। ধারা মুখে হাত দিয়ে অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো। শুদ্ধ সরু চোখে তাকিয়ে বলল,
‘আচ্ছা! আমিও দেখাচ্ছি মজা।’
ধারা হুটোপুটি করে উঠে দাঁড়িয়ে শুদ্ধ’র হাত থেকে বাঁচতে সামনে দৌঁড় লাগালো। পেছনে ছুটলো শুদ্ধও। ধানের আল ধরে হাসতে হাসতে এলোপাথাড়ি দৌঁড়াতে লাগলো তারা। একসময় ধারার নাগাল পেয়ে যায় শুদ্ধ। খপ করে ধারার হাত ধরে ফেলে তাকে কোলে তুলে নেয়। ধারা ছোটার জন্য খানিক ছটফট করে আশেপাশে তাকিয়ে দেখে এই মুহুর্তে মাঠে কেউ না থাকলেও দূরে একটা বুড়ো দাদুকে চোখে পড়ছে। বুড়ো দাদুটি ওদের দিকে তাকিয়ে আবার মিটিমিটি হাসছেও। ধারা লজ্জা পেয়ে বলল, ‘প্লিজ আমাকে নামাও। ঐ বুড়ো দাদুটা দেখছে।
শুদ্ধ বলল, ‘দেখলে দেখুক। তখন এমন করলে কেন? এখন কেমন লাগে?
শুদ্ধ সহজে নামাবে না বুঝে ধারা লজ্জায় দু হাত দিয়ে মুখ ঢেকে নিলো। শুদ্ধ মুচকি হেসে ধারাকে কোলে নিয়েই একটা ঘূর্ণন দিলো।
খাওয়া শেষে শুদ্ধ বোতলের পানি দিয়ে হাত ধুয়ে নেয়। বাতাসের আবির্ভাব থাকলেও রোদের তাপ ভালোই। সামনে ধূ ধূ করা খোলা প্রান্তর। তাতে ফলানো সোনা রঙা পাকা ধান। ওরা দুজন গাছের ছায়ার নিচে সবুজ ঘাসের উপর বসা থাকলেও সূর্যের বিকিরিত রশ্মির উত্তাপ থেকে মুক্তি নেই। শুদ্ধ’র কপাল থেকে দর দর করে ঘাম ঝরতে থাকে। সকাল থেকে অনেকটা খাটনি গেছে তার। ধারা তার ওড়না দিয়ে শুদ্ধ’র মুখের ঘাম মুছে দেয়। মিষ্টি করে হাসে শুদ্ধ। ধারা জিজ্ঞেস করে,
‘আচ্ছা, তুমি যা চাইছিলে তেমনটা কি এখন হয়েছে?’
শুদ্ধ সামনের ধানের ক্ষেতে দৃষ্টি মেলে ধরে বলে,
‘উহুম! এখনও হয়নি। তবে হবে। সামনের বছর এই ক্ষেতে সোনা ফলবে ধারা।’
শুদ্ধ’র চোখে স্বপ্ন চিকচিক করে উঠে। তার প্রতিফলন ফুটে ধারার মধ্যেও।
চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here