#হাতটা_রেখো_বাড়িয়ে
#পর্ব-7+8
Writer: ইশরাত জাহান সুপ্তি
এশা’র নামাজের পর খোদেজা তার রুমে শুদ্ধকে ডেকে পাঠালো। শুদ্ধ এসে বসতেই নিজের জমানো প্রশ্নের ঝুড়ি মেলে ধরলো খোদেজা।
বলল,
‘তখন মাগরেবের আযান দিয়ে ফেলছিল বলে তোরে আর ভালোমতো ধরি নাই। এবার বল, তোর মনে কি আছে? ধারা ওর বাবার ভয়ে বিয়ে করছে। ধরলাম তুই ভালো মানুষ এরজন্য মেয়েটারে এভাবেই মাইনা নিছোস। ওরে নিজের কাছেই রাখছোস। কিন্তু ও’র জন্য এতো কেন চিন্তা করতাছোস এখন? ও’র কিসে ভালো হইবো না হইবো তাতে তোর কি?’
শুদ্ধ মৃদু হেসে বলল,
‘আম্মা, কি শুরু করলে বলো তো!’
খোদেজা নাছোড়বান্দা। সবটা জেনেই ছাড়বে সে আজ। বলল,
‘না। তুই আমারে সরাসরিই এখন বলবি। এতদিন তোদের সম্পর্ক নিয়া অনেক দোটানায় কাটাইছি। আমি আর ওই খুতখুতে ভাব নিয়া থাকতে চাই না। এখন যা হইবো পরিষ্কার ভাবেই আমি জানতে চাই। তোর মনে কি চলতাছে তুই আমাকে সব বলবি।’
মেঝের দিকে দৃষ্টি সরিয়ে শুদ্ধ আনমনে একটু হাসলো। কিছুক্ষণ চোখের দৃষ্টি ওঠানামা করিয়ে স্পষ্ট স্বরেই বলল,
‘ধারা আমার স্ত্রী, আম্মা। আমি তো ওঁকে ভালোবাসবোই। এখানে নতুন করে হঠাৎ হুট করে ভালোবাসা না ভালোবাসার কিছু না। এতদিন, কখনো কোন মেয়ের দিকে আমি ফিরে তাকাইনি। পড়তে গিয়ে কত মেয়ের কত ভালোবাসার প্রস্তাব পেয়েও আমি ফিরিয়ে দিয়েছি। নিজের ভেতরকার ভালোবাসাটা শুধুমাত্র নিজের স্ত্রীর জন্যই বাঁচিয়ে রাখতে চেয়েছিলাম। কারণ এখানে শুধুমাত্র তারই অধিকার। সেই অধিকার আমি নষ্ট করতে চাইনি। বিয়ের সময় যেই মুহুর্তে আমি ধারাকে কবুল বলে নিজের স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করেছি ঠিক সেই মুহুর্তেই আমি আমার মনের জায়গাটা ধারাকে দিয়ে দিয়েছি। এখন এখানেই ও’র একরত্তি রাজত্ব। বিয়ের পর ধারার ভয়ের কারণে নিজের অনিচ্ছায় বিয়ের কথা শুনে প্রচন্ড রাগ হয়েছিল ঠিকই। কিন্তু পরে ভেবে দেখলাম ধারা যেহেতু এখন আমার স্ত্রী তাই শুধু ও’র গুণগুলোই না ও’র দূর্বলতাগুলোও এখন সব আমার। আর ধারা তো শুধু এই ব্যাপারেই না, সব ব্যাপারেই ও এমন। ও’র নিজের প্রতি কোন কনফিডেন্স নেই, নিজে থেকে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।, যে যা বলে শুধু তাই শুনে। এটা তো একটা সমস্যাই না? আর আমার স্ত্রীর সমস্যা গুলোও এখন আমার সমস্যাই। আর আমি আমার সমস্যাগুলোকে দূর করতে চাই। আমি চাই আমার স্ত্রী আমার সাথে সাথে চলুক। আমার পেছনে নয়। জীবনসঙ্গী তো একেই বলা হয় তাই না আম্মা?’
খোদেজার ভালো লাগলো ছেলের কথা শুনে। তবুও বলল, ‘তা না হয় বুঝলাম। কিন্তু মাহতাব, ধারা তো মন থেকে এই বিয়ে করে নাই। তোর কি হবে তাহলে বাবা? তোরও তো একটা সংসার দরকার। এভাবে কতদিন চলবে?’
‘আম্মা, আমি নিজেকে ধারার উপর জোর করে চাপিয়ে দিতে চাই না। আমি চাই এই ব্যাপারটা ও নিজ থেকে বুঝুক। ও নিজ থেকে আমার প্রতি ভালোবাসা অনুভব করুক। শুধু মাত্র ওর বাবা আমার সাথে বিয়ে দিয়ে দিয়েছে বলে, সমাজের নিয়ম অনুযায়ী আমার সাথে থাকতে হবে বলে থাকবে এমনটা চাই না। আমি চাই, ধারা সম্পূর্ণ মন থেকে আমার কাছে থাকতে চায় বলে ও থাকুক। আমাকে ভালোবেসে থাকুক। এটাই তো প্রকৃত সংসার হয়, তাই না আম্মা? আর এর জন্য যতদিন লাগবে লাগুক। আমি চেষ্টা চালিয়ে যাবো।’
খোদেজা প্রশান্তির সাথে ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো। মাথায় হাত বুলিয়ে মন খুলে দোয়া করলো। যাক! তার ছেলে আর বাকি সবার মতো হয়নি। ছেলেকে সে সঠিকভাবেই মানুষ করতে পেরেছে। গর্বে তার বুক ভরে উঠলো। সেখানে উপস্থিত আরেকজনও শুদ্ধ’র বলা সম্পূর্ণ কথা শুনলো। দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে এক মুহুর্তের জন্য বিস্ময়ে জমে গেলো যেন ধারা।
রাতে যখন শুদ্ধ ঘুমাতে নিজের রুমে এলো তখন বিছানার উপর নত মাথায় বসে বসে ধারা মৃদু স্বরে বলল,
‘দেখুন, আপনার শুধু শুধু এত কিছু করতে হবে না। আপনি যদি স্বামীর অধিকার চান তাহলে আমি দিতে রাজী আছি। আমার কোন আপত্তি নেই।’
কোন উত্তর না দিয়ে বালিশ টেনে পাশ ফিরে শুয়ে পড়ে শুদ্ধ মৃদু হাসলো।
__________________________________________
সকাল সকাল উঠোনে একটা মোড়া টেনে জমিরন বিবি রোদ পোহাতে বসেছেন। তার হাতে একটা মাঝারি সাইজের থালা। সেখানে দুধ নারকেলের মাঝ থেকে উঁকি দিচ্ছে ছোট ছোট সেমাই পিঠা। কাল রাতে বানানো হয়েছিল। এখন ঠান্ডা হয়ে জমে গিয়ে উপরে একধরনের ঘন সরের সৃষ্টি হয়েছে। জমিরন বিবি একটা চামচ দিয়ে নাড়া দিয়ে সরটা ভেঙে দিল। কিছুক্ষন এভাবেই নাড়াচাড়া করে এক চামচ মুখে দিয়েই তিনি খেঁকিয়ে উঠলেন রান্নাঘরে তরকারি কাটারত আসমাকে উদ্দেশ্য করে।
‘এইয়া কি বউ? পিডায় একটুখানিও মিডা দাও নাই। এয়া কি ছাই বানাইছো? এগুলা মুখে দেওয়ান যায়! নাকি আমি বুড়া মানুষ দেইখা আমারে না খাওয়ানির মতলব করছো! বুঝি বুঝি, আমি সবই বুঝি।’
আসমা বেগুন কাটা বাদ দিয়ে একবার উঁকি দিয়ে শ্বাশুড়ির দিকে তাকালেন। তার শ্বাশুড়ির ডায়াবেটিস আছে। মিষ্টি খাওয়া একেবারেই নিষেধ। বুড়ো মানুষ এটা বুঝতে চান না। শুধু মিষ্টি খাওয়ার ফরমায়েশ করেন। এজন্যই একটু মিষ্টি কম দিয়েই তার পিঠা বানায় আসমা। এখন এটা বুঝিয়ে বললেও তার শ্বাশুড়ি বুঝবে না। তাই ছোটখাট ভাবেই বললেন,
‘মনে ছিল না আম্মা। ভুলে কম হইয়া গেছে।’
‘হ! বিয়ার পর তোনই তো তোমার খালি ভুলই হয় তাই না! তোমার ভুলের লেইগাই তো তোমার বড় মাইয়াডা মরছিল মনে আছে? ছয় বছরের মাইয়াডা ডায়রিয়া হইয়া কেমনে ছটফট করতাছিলো। আর তুমি মূর্খের মতন ও’র মুখে পানি দেওয়ান যাইবো না জাইনাও পানি খাওয়াইলা। হেয়ার কতক্ষণ পরই তো মারা গেলো। আমি তো কই তোমার হেই পানি খাওয়ানোতেই তোমার মাইয়া মরছে।’
আসমার বুকের মধ্যে ছ্যাৎ মেরে উঠলো। মুহুর্তের মধ্যে তার বড় মেয়ের মুখটা ভেসে উঠলো চোখের সামনে। তার শ্বাশুড়ি আগেকার দিনের মানুষ। তখন ডায়রিয়া হলে পানিকে মনে করা হতো বিষ। রোগী পানির জন্য পাগল হয়ে গেলেও তাকে পানি খেতে দেওয়া হতো না। তার মেয়েটাকেও দেওয়া হয়নি। পানির জন্য কেমন পাগলের মতো ছটফট করতো মেয়েটা। অপরদিকে আজিজ সাহেবও বাড়িতে ছিলেন না। ব্যবসার কাজে শহরে আটকা পড়েছিলেন। আসমা একা একা আর কতদিকে সামলাবেন। ধারাও ছিল তখন একদম কোলের শিশু। মা হয়ে পানি খাওয়া নিয়ে মেয়ের এই আকুতি আসমা দেখতে পারেনি। এক গ্লাস পানি নিয়ে মেয়ের মুখের সামনে দিতেই মেয়েটা চুম্বকের মতো আঁকড়ে ধরেছিল গ্লাসটা। যেন মরুভূমির বালি সহস্র বছর পর পানির দেখা পেয়েছে। এই দৃশ্য দেখেই ক্রোধে ফেটে পড়ে জমিরন। ছো মেরে নিয়ে যায় পানির গ্লাস। শুধু জমিরনই নন। আশেপাশের আরো অনেকেই ডায়রিয়া রোগীকে পানি খাওয়ানোর জন্য বকাবকি করেন আসমাকে। আসমাও আর এরপর মেয়েকে পানি খাওয়ানোর মতো দুঃসাহস করেননি। কোন ছেলে জন্ম না দিতে পেরে পরপর দুটা মেয়েকে জন্ম দেওয়ার জন্য এমনিতেও আসমাকে অপয়া নামে জানা যেত। এখন যুগ উন্নত হয়েছে। গ্রামে স্যালাইন এসেছে। এখন পানি জাতীয় খাবারই হয়েছে ডায়রিয়া রোগীদের পথ্য। কিন্তু জমিরন বিবি এসবে বিশ্বাস করেন না। তিনি আজও আসমার বড় মেয়ের মৃত্যুর দোষ আসমার ঘাড়েই তুলে দেন। আসমা লুকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন। শাড়ির আঁচল দিয়ে চোখের কোনের পানি মুছে তিনি আরেক পিরিচ পিঠা নিয়ে আজিজ তালুকদারের কাছে যান। আজিজ তালুকদার গেস্ট রুমে বসা ছিলেন। তার কাছে দুজন লোক এসেছে। আগামী বছর তার চেয়ারম্যানে দাঁড়ানোর ইচ্ছা। সব ঠিক থাকলে হয়ে যাবার সম্ভাবনাই বেশি। এখন থেকেই তার কাছে লোকের আসা যাওয়া শুরু হয়ে গেছে। আসমা পিঠা হাতে দরজার পাশেই দাঁড়িয়ে রইলেন। লোকগুলো চলে গেলে তারপর ভেতরে ঢুকলেন। হাতের পিঠার থালা আজিজ সাহেবের সামনে রেখে আস্তে করে বললেন,
‘বলছিলাম যে ধারার সাথে আপনার আর কথা হয়েছে?’
ধারার নাম শুনতেই আজিজ সাহেবের কপালে ভাঁজ পড়ে গেলো। গম্ভীর কণ্ঠে বললেন,
‘কথা বলার এতো কি আছে?’
‘না মানে…যদি একটু বলতেন। বিয়ের তো কতদিন হয়ে গেলো। এখনও তো তেমন কোন কথা ওর সাথে বলেননি।’
‘তোমার মেয়ে কোন গর্বের কাজ করে রাখেনি যে ক্ষণে ক্ষণে তার সাথে ফোন করে কথা বলতে হবে। যতটুকু প্রয়োজন তা কি আমি করছি না! কত আশা ছিল এই মেয়ে নিয়ে। কত কিছু করলাম, কতগুলো প্রাইভেট টিচার রাখলাম, কোচিংয়ে ভর্তি করালাম তবুও পরীক্ষায় এ প্লাসই আনতে পারলো না। ঐ জয়নালে কি ওর ছেলের জন্য এর থেকে বেশি করছিল তবুও তো ঠিকই ওর ছেলে এ প্লাস পেয়েছে।’
‘বলছিলাম যে যা হবার তা তো হয়েই গেছে। এখন এসব ভেবে আর লাভ কি? মাঝে মাঝে একটু ফোন করে কথা বললেই তো হয়!’
‘তোমার কথা বলতে ইচ্ছা করলে তুমি করো। আমাকে এসবের মধ্যে টেনো না।’
পিঠা না খেয়েই আজিজ সাহেব উঠে চলে গেলেন।
__________________________________________
চুমকি সবেই স্কুল থেকে ফিরেছে। ভাতের থালা হাতে নিয়েই সে বাইরে চলে এলো। তার মধ্যে আছে শুধু দুরন্তপনা। কোনদিকে দাঁড়িয়ে একটু স্থির হওয়া যেন তার স্বভাবে নেই। সে গ্রোগাসে ভাত গিলছে আর গভীর মনোযোগ নিয়ে শুদ্ধ’র কাজ দেখছে। শুদ্ধ’র পরনে সবুজ রঙের একটা শার্ট আর ব্লু জিন্স। উদ্দেশ্য ছিল তার বাইরে বেরোবারই। হঠাৎ পরিবর্তন করে হাতে একটা দা উঠিয়ে নিয়েছে। কতোগুলো বাঁশকে টুকরো টুকরো করে রাখছে পুকুর পাড়ে একটা মাচা বানাবে বলে। দক্ষিণ দিকের পুকুর। দাঁড়ালেই দক্ষিণা হাওয়ায় প্রাণ জুড়ে যায়। মাচা বানিয়ে বসার একটা ব্যবস্থা করলে খারাপ হবে না। শুদ্ধদের বাড়িতে দরজার বাইরেই ইট দিয়ে বাঁধানো বসার ব্যবস্থা করা। গ্রাম এলাকায় যেটাকে ‘ওডা’ বলে সনাক্ত করা হয়। খোদেজা সেখানেই বসে নকশি কাঁথা সেলাই করতে বসেছিল। একটু পর ধারাও এসে খোদেজার সামনে বসলো। চুমকির দিকে একবার তাকিয়ে মৃদু হেসে বলল,
‘চুমকি তুমি প্রথমে খাও তারপর বাইরে গিয়ে ঘুরো। এভাবে ঘুরে ঘুরে খেয়ে তো মজা পাবে না?’
খোদেজা বলল, ‘ও’র কি আর সেদিকে কোন হুঁশ আছে? শুধু শরীরই বড় হইতাছে। স্বভাব এখনও হাফ প্যান পড়া পোলাপানের মতো।’
চুমকি ঝটপট খেয়ে নিয়ে প্লেট ওডার উপর রেখে দিয়েই আবার বাইরে চলে গেলো। খোদেজা সেদিকে তাকিয়ে একটা ধমক লাগিয়ে নিজেই এটো প্লেটটা নিয়ে ভেতরে চলে গেলেন। চুমকি পুকুর পাড়ের কাছ থেকে ডেকে উঠলো,
‘নতুন ভাবী, এদিকে আসো।’
ধারা একটু ইতস্তত বোধ করলো। তবুও ধীর পায়ে সেদিকটায় গেলো সে। শুদ্ধ তাকে ভালোবাসে এটা জানার পর থেকেই তাকে দেখলে কেমন যেন অন্যরকম একটা অনুভূতি হয় তার। তার সামনে আসলেই আপনাআপনি একটা কাঁচুমাচু ভাব চলে আসে। গতকাল রাতে বৃষ্টি হয়েছিল। পুকুর পাড়ে এখনও কিছু কিছু জায়গা জুড়ে কাঁদা হয়ে আছে। ধারা গিয়ে চুমকির পাশে দাঁড়ালো। শুদ্ধ একপলক তার দিকে তাকিয়ে আবারও নিজের কাজে মন দিল। চুমকি বলল,
‘নতুন ভাবী জানো, আমি না ছোটবেলায় শুধু গাছের উপর চড়ে বসে থাকতাম। একবার নাকি গাছের ডালের উপরেই ঘুমিয়ে পড়ছিলাম।’
কথাটা বলে চুমকি নিজের মনেই খানিক হাসলো। ধারা বলল, ‘আমিও খুব ভালো গাছে উঠতে পারি।’
চুমকি পুলকিত হয়ে বলল, ‘সত্যি!’
ধারা কিছু বলতে যাবে তার আগেই শুনলো শুদ্ধ পাশ থেকে বলছে, ‘বিশ্বাস করলাম না।’
ধারা ভ্রু কুঁচকে বলল, ‘বিশ্বাস না করার কি আছে? সত্যি!’
শুদ্ধ নিজের কথায় অনড়। নিজের কাজে মগ্ন থেকেই সে বলল, ‘উহুম।’
‘আরে! আমি সত্যিই উঠতে পারি। আমি সত্যি বলছি।’
‘কি জানি!’
ধারা ঠোঁট ফুলিয়ে তাকিয়ে রইলো। কি মুশকিল! সে বলছে সে পারে তবুও কেন বিশ্বাস করছে না। শেষমেশ একটা মুখ ভেংচি দিয়ে চুমকির দিকে তাকিয়ে শুদ্ধকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলল,
‘বেশ! আমি এখনই গাছে উঠে দেখাচ্ছি আমি উঠতে পারি কি না! তারপর নিশ্চয়ই খোঁচামারা লোকেদের খোঁচা দিয়ে কথা বলা বন্ধ হবে।’
এই কথা বলে গায়ের ওড়নাটা শক্ত করে কোমড়ের সাথে বেঁধে ধারা গাছে উঠার প্রস্তুতি স্বরূপ গোড়ায় পা দিতেই খোদেজা দূর থেকে চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে আসতে লাগলো,
‘না না বউ থাক! এই বিকেল বেলা তোমার আর গাছে উঠা লাগবো না। এই সময়ডা ভালো না।মাহতাবের কথায় কান দিয়ো না তো!’
খোদেজার কথা শুনে ধারা ওড়না ঠিক করে নিজের পা গাছের থেকে সরিয়ে নিলো। ধারার গাছে উঠা বন্ধ হয়ে গেছে দেখে চুমকিও সেখান থেকে চলে গেল। শুদ্ধ বলল,
‘দেখেছেন, আমি জানতাম আপনি পারেন না। এর জন্যই আম্মার বাহানায় এখন ঠিকই সরে এলেন।’
‘জ্বি না। আপনি ভুল। বাহানার জন্য না। আমি মায়ের কথার সম্মান দিতে উঠিনি। আপনি যেহেতু এভাবে মানবেনই না। দাঁড়ান আমি এখনই উঠে দেখাচ্ছি।’
‘না না থাক! এতো জোর করে উঠতে হবে না। তারপর আবার গাছ থেকে পড়ে পা ভেঙে বসলে আপনার বাবা বলবে তার মেয়েকে আমরা আঘাত দিয়েছি। আপনি তো আবার বাবার কথায় উঠেন আর বসেন। বাবার কথায় মাথা হেলিয়ে পরে আপনিও সেটাই বলবেন।’
ধারার মুখ ভার হয়ে গেলো। খোদেজা বলে উঠলো, ‘এই মাহতাব তুই চুপ কর তো! নিজে এমন ভাব ধরোস যেন নিজে সব পারোস। সামান্য একটা লুঙ্গি পরতে পারে না তার আবার বড় বড় কথা!’
ধারা কৌতূহলী হয়ে বলল, ‘লুঙ্গি!’
‘হ্যাঁ লুঙ্গি! ছোটবেলায় মুসলমানির পর যখন লুঙ্গি পরতে হইতো মাহতাবে লুঙ্গি সামলাইতেই পারতো না। একবার হইলো কি ও’র চাচী, মামীদের সামনে ও’র লুঙ্গি খুইলা পইরা গেলো। সবাই মিলে এতোই ক্ষ্যাপাইছে যে আমার ছেলেটা এর পর থিকা লুঙ্গি পরতেই ভয় পায়! সামলাইতে পারে না।’
শুদ্ধ অসহায়ের মতো মায়ের দিকে তাকিয়ে করুণ মুখে বলল, ‘মা!’
খোদেজা পাত্তা না দিয়ে বলল, ‘কি হয়েছে! আমি কোন মিথ্যা কথা বললাম?’
কথাটা বলে খোদেজা নিজের কাজে চলে গেলো। ধারা খেয়াল করলো আসলেই তো এতদিন হয়ে গেলো গ্রামের ছেলে হওয়া সত্ত্বেও শুদ্ধকে তো আজ অব্দি কখনো লুঙ্গি পড়তে দেখা যায়নি! এমনকি ক্ষেতে যাওয়ার সময়ও সে পুরনো ট্রাউজার পড়ে যায়। শেষমেশ কিনা এতো স্ট্রং ছেলের লুঙ্গি ভীতি! কথাটা ভাবতেই ধারা অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো। হাসতে হাসতে তার চোখে পানি চলে আসার উপক্রম। শুদ্ধ ঠোঁটে মৃদু রসাত্মক হাসি ফুটিয়ে সেদিকে তাকিয়ে রইল। কিছুক্ষণ হাসতে হাসতে ক্লান্ত হয়ে পড়ে ধারা হাসির মাঝেই বলল,
‘উফ! আমি আমার হাসি থামাতেই পারছি না।’
শুদ্ধ ফট করে বলে বসলো,
‘একটা কাজ করুন, আপনার বাবাকে একটা ফোন করুন। জিজ্ঞাসা করুন, কিভাবে হাসি থামাতে হয়। বাবা বললে হয়তো পারবেন।’
ফস করে ধারার হাসি থেমে গেলো। রাগে গা পিত্তি জ্বলে গেলো তার। মুখ ফুলিয়ে বলল,
‘আপনার সমস্যাটা কি বলুন তো! খোঁচা মেরে কথা না বললে কি আপনার ভালো লাগে না। সবসময় শুধু আমার পেছনে লেগে থাকেন! আচ্ছা যান ঠিকাছে, আপনি সবসময় বলেন না যে আমি নিজ থেকে কিছু করতে পারি না, কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারি না! এখন আমি একটা সিদ্ধান্ত নিলাম, আপনার মতো খোঁচারাজের প্রেমে আমি জীবনেও পড়বো না। পড়বো না মানে পড়বো না।’
কথাটা বলে দ্রুত পেছনে ফিরে হনহন করে হাঁটতে গিয়েই কাঁদায় পা পিছলে পড়ে গেলো ধারা। মুহুর্তের মধ্যেই শুদ্ধ শব্দ করে হেসে উঠে কাঁদা পানিতে মাখামাখি হয়ে বসে থাকা ধারার সামনে এসে ঝুঁকে বলল,
‘এটা কি হলো ধারা? পড়বো না পড়বো না বলতে বলতেই পড়ে গেলেন!’
চলবে,
#হাতটা_রেখো_বাড়িয়ে
#পর্ব-৮
Writer: ইশরাত জাহান সুপ্তি
লাল রঙের একটা গামছা দিয়ে ধারা দ্রুতগতিতে মাথা মুছে চলেছে। একটু আগেই সে গোসল সেড়েছে। এই অবেলায় সন্ধ্যা পানে গোসলে অবশ্যই শরীর ঠান্ডা হয়ে যাবার কথা। কিন্তু তার ক্ষেত্রে হয়েছে বিপরীত। তার মাথা প্রচন্ড গরম। মেজাজ সপ্তম ডিগ্রীতে চড়ে আছে। খোঁচারাজের উপর রাগ তো তার আছেই, তার সাথে সাথে আছে নিজের উপরেও। কত সুন্দর করে খোঁচারাজের খোঁচার উত্তরে ভাব নিয়ে একটা কথা বলেছিল আর শেষে কিনা কি হলো! পা পিছলে পড়ে গিয়ে কাঁদায় মাখামাখি হলো। আর তারপর উনার গা জ্বালা হাসি তো ফ্রিতে কপালে জুটেছেই। মান ইজ্জত আজ ঐ পুকুর পাড়ের কাঁদার সাথেই লুটোপুটি খেলো। ধুর! দাঁত কিড়মিড় করে মাথা মুছতে মুছতে ধারা বিড়বিড় করতে লাগলো, ‘কি মনে করে সে নিজেকে! সবসময় শুধু আমার পেছনে পড়ে থাকা! আর এতো চালাক! প্রত্যেকটা কথা যেন মাথার মধ্যে সাজিয়ে রাখে৷ সেদিন রাতে শোবার কথা নিয়ে করলো? যে ‘আপনার যদি মনে হয় আমার পাশে ঘুমালে আপনার নিজের উপর কন্ট্রোল থাকবে না তাহলে আপনি আলাদা ঘুমাতে পারেন!’ এখন এরকম একটা কথা বলার পর কেউ কিভাবে আলাদা ঘুমাতে পারে? আর যদি আমি ঘুমাতাম তাহলে ব্যাপারটা কি দাঁড়াতো? তাকে দেখলে আমার নিজের উপর কন্ট্রোল থাকে না! হুহ! নেহাৎ হাসলে একটু সুন্দর লাগে…আচ্ছা ঠিকাছে একটু না অনেকটাই সুন্দর লাগে। তাতে কি হয়েছে? সে কি সবার মাথা কিনে নিয়েছে?’
এভাবেই কখনো নিজের রাগ ঝেড়ে, শুদ্ধ’র বলা কথা নকল করে, আবার নিজের মনেই কথার কাটাকাটি করে বারন্দায় দাঁড়িয়ে ধারা একমনে মাথা মুছতে মুছতে বিড়বিড় করতে লাগলো। রুমের ভেতরে বুকে দু হাত গুঁজে দরজার সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ধারার রাগে গজগজ করার এই সুন্দর দৃশ্যটি উপভোগ করতে লাগলো শুদ্ধ। তার মুখে মিটিমিটি হাসি বিরাজমান। ধারা খুব শান্ত শিষ্ট, লাজুক প্রকৃতির মেয়ে। কথা বার্তাও বলে যেন নিজের ভেতরটা আড়ালে রেখে। খুব কম। আজ যেন নিজের ভেতরটা সম্পূর্ণ মেলে ধরেছে সে। যেটা মনে আছে সরাসরি প্রকাশ করছে। রাগ দেখাচ্ছে, অভিমান করছে, ঝগড়ার সুরে কথা বলছে। শুদ্ধ’র দেখে ভালো লাগলো। ভীষণ ভালো লাগলো। মুখের কাছে হাত নিয়ে একটু খুকখুক করে কেশে ধারার ধ্যান কেড়ে নিল শুদ্ধ। কটমট করে শুদ্ধ’র দিকে তাকিয়ে ধারা গামছাটা বারান্দার রশির উপর রেখে দিয়েই ভেতরে চলে এলো। শুদ্ধকে পাশ কাটিয়ে বাইরে চলে আসতেই তার মাথায় আসলো একটা বুদ্ধি। খোঁচারাজের লুঙ্গি ভীতির সুযোগ নিয়ে যদি তাকে একটু জব্দ করা যায় তাহলে তো ব্যাপারটা মন্দ হয় না। যেই ভাবা সেই কাজ! কিছুক্ষণ পরই আবার রুমে গিয়ে ধারা দেখলো শুদ্ধ নেই। এক মিনিট সময়ও নষ্ট না করে শুদ্ধ’র সব কয়টা জিন্স, ট্রাউজার নিয়ে একটা পানি ভরা বালতিতে চুবিয়ে রাখলো ধারা। কাঁথা সেলাইয়ের জন্য খোদেজা পাশের বাড়ির থেকে যে আধো পুরনো লুঙ্গি এনে রেখেছিল। তারই একটা রেখে দিল সামনে। কাজ শেষ হতেই নিজের বুদ্ধিতে পুলকিত হয়ে উঠলো ধারা। প্রসন্ন মুখে ভাবতে লাগলো, ‘ব্যাস! খোঁচারাজ, আজকে এই ধারা তোমাকে দেখাবে কয়টা ধানে কয়টা চাল হয়। সবসময় শুধু আমাকে জব্দ করা! আজকে তোমার পালা। সব কাজ শেষ। এখন শুধু তোমার পরনের প্যান্টটাই ভিজিয়ে দেওয়ার পালা!’
রাত গাঢ় হতে লাগলো। আর ধারা রইলো সুযোগের অপেক্ষায়। কখন শুদ্ধ’র পরনের ট্রাউজারটা ভিজিয়ে দিতে পারবে! অন্যদিকে ব্যস্ত থেকেও সদা দৃষ্টি মেলে ধরে রাখলো শুদ্ধ’র দিকেই। কিন্তু আফসোস এমন কোন সুযোগই ধারার কাছে এলো না। পাশের বাড়ির আবুল যখন শুদ্ধ’র সাথে আলাপের জন্য সামনের বারান্দায় বসে ছিল। তখন তাদের দুজনকে শরবত দেওয়ার বাহানাতেও ধারা একটা গ্লাস ইচ্ছে করে শুদ্ধ’র হাঁটুর উপর ফেলতে চাইলো। কিন্তু হলো না। পায়ে হোচট খেয়ে সেই গ্লাস ভুলে পড়লো আবুলের উপর। প্লান তো ভন্ডুল হলোই। তারউপর নিজের কাজের জন্য লজ্জিত হয়ে ধারা দ্রুত বারবার আবুলকে সরি বলে একপ্রকার দৌঁড়েই সেখান থেকে চলে এলো। তারপর যখন রাতের খাবার সময়ও সবাই একসাথে খেতে বসলো, তখনও শুদ্ধকে পানির জগ দেবার বাহানা করে ধারা জগটা কাত করে শুদ্ধ’র পা বরাবর ফেলে দিল। সঠিক সময়ে পা সরিয়ে নেওয়ায় সেবারও বেঁচে গেল শুদ্ধ। জগ সহ ই মেঝেতে পড়ে গেল ধারা। পানি পড়ে মেঝে তলিয়ে গেলো। ধারা এবারও অসফল। উপস্থিত সবাই বিস্মিত। আজ বারবার ধারার হাত থেকে এমন পানি পড়ছে কেন? খোদেজা উদ্বিগ্ন মুখে বলল,
‘বৌ, তোমার শরীরটা কি খারাপ লাগতাছে? মাথা ঘুরায়?’
ধারা লজ্জিত মুখে বলল, ‘না মা, আমি ঠিক আছি। ঐ একটু হাত ফসকে যাচ্ছে বারবার!’
এই বলে একটা ন্যাকড়া নিয়ে ধারা মেঝে মুছতে লাগলো। চুমকি খেতে খেতে বলল,
‘ভাবী, তোমার হাতে কি তেল ভরানো?’
শুদ্ধ হেসে বলল, ‘তোর ভাবীর মনে হয় তখন কাঁদায় পড়ে গিয়ে চোখে সমস্যা হয়ে গেছে চুমকি? মাথাতেও হতে পারে। সেটা হলে আবার একটু চিন্তার বিষয়ই।’
ধারা সরু চোখে শুদ্ধ’র দিকে তাকালো। যতবারই প্লান ভন্ডুল হোক ধারা হার মানবে না। এই খোঁচারাজকে আজকে একটা শিক্ষা তো ধারা দিয়েই ছাড়বে। মনে মনে আবারও কিছু একটা ভাবলো সে। এবার আর ধারা তার প্লানে বিফল হবে না। এবার করেছে একদম মোক্ষম প্লান। শুদ্ধ না ফেঁসে পারবেই না। প্রতি রাতে ঘুমানোর আগে শুদ্ধ একবার দরজার সামনে রেখে দেওয়া বালতির পানি দিয়ে হাত মুখ ধোয়। সেই সুবিধা মতোই ধারা ওডা’র উপরের বাঁশের সাথে ফিক্সড করে একটা পানি ভর্তি মগ রেখে দিয়েছে। তার হাতলের দড়ি বেঁধে সেট করেছে সিঁড়ির কাছে। অন্ধকারে এর মধ্যে পা বেজে একটু নাড়া লাগলেই মগ উপর হয়ে সব পানি পড়বে সোজা শুদ্ধ’র মাথার উপর। তারপর নিশ্চয়ই খোঁচারাজকে পরনের ট্রাউজারটা পাল্টে আর কোন প্যান্ট খুঁজে না পেয়ে শেষমেশ লুঙ্গিই পড়তে হবে! তার চেহারাটা তারপর হবে একদম দেখার মতো! কল্পনায় ভাবতেই নিজের মনে লাফিয়ে উঠলো ধারা। এইবার কিছুতেই ফেইল হওয়া যাবে না। রাতে ঘুমানোর সময় হলে ধারা বারবার শুদ্ধকে তাগাদা দিতে লাগলো বাইরে গিয়ে হাত মুখ ধোবার জন্য। শুদ্ধ যতই বলে একটু পরে যাবে, ধারা যেন ততোই নাছোড়বান্দা। শুদ্ধ’র খানিক খটকা লাগলো। তবুও তা পাত্তা না দিয়ে সে গিয়ে ভালো মতোই হাত মুখ ধুয়ে আসলো। ফিরে আসতেই ধারা চোখ কপালে তুলে ফট করে জিজ্ঞেস করে ফেললো,
‘একি! আপনি এমন শুকনো কেন?’
শুদ্ধ বুঝতে না পেরে বলল, ‘কোথায় শুকনো? আমার মুখ তো ভেজাই। এই যে!’
এই বলে সে ধারার দিকে আঙ্গুল দিয়ে এক ফোঁটা পানি ছুঁড়ে মারলো। ধারা সেদিকে খেয়াল না করে তৎপর হয়ে বলল, ‘আপনার শরীর তো শুকনো!’
‘আমি কি গোসল করতে গিয়েছি যে সব ভেজা থাকবে! শরীর তো শুকনো থাকবেই।’
এই বলে শুদ্ধ চলে গেলো। বিরক্তিতে ধারা সেখানেই দাঁড়িয়ে রইলো। কিছুই বুঝতে পারলো না। এইবারের প্লানটাও কিভাবে কাজ করলো না! সে নিজে গিয়ে একবার সেই জায়গায় দাঁড়ালো। পা দিয়ে দড়িটা খোঁচা দিতে লাগলো। দেখলো দড়িটা অনেক টাইট হয়ে আছে। নড়ছে না। বোধহয় ভালো মতো দড়িটা সেট করতে পারেনি। আরো কিছুক্ষণ দড়িটা নিয়ে টানাটানি করার পর শেষমেশ বিরক্ত হয়ে ধারা পা দিয়ে দড়িটা একবার জোরেই টান দিল। আর সাথে সাথে পানি ভর্তি মগের সব পানি তার মাথার উপর পড়লো। মুখ হা হয়ে গিয়ে ধারা নিজের ভেজা শরীর নিয়ে সটান হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। আর তারপরই কানে ভেসে এলো শুদ্ধ’র কান ফাঁটানো হাসির আওয়াজ। হাসতে হাসতে শুদ্ধ পেছন থেকে বেড়িয়ে এলো। সে মূলত সন্দেহ বশতই ধারার পেছন পেছন এসেছিল ধারা এমন অদ্ভুত আচরণ করছে কেন বোঝার জন্য। কিন্তু এসে যে এমন একটা দৃশ্য দেখবে তা স্বপ্নেও ভাবে নি। হাসতে হাসতে শুদ্ধ বলল,
‘আপনি আমাকে ভেজাবার জন্য এসব কিছু করেছেন! কিন্তু কেন?’
ধারা কিছু না বলে গটগটিয়ে ভেতরে চলে গেলো। আজকে সন্ধ্যার পর এই নিয়ে তার দু বার জামা পাল্টানো হলো। আর যার জন্য এসব করেছে তার হলো না কিছুই। আবারও গামছা নিয়ে ধারা মাথা মুছতে লাগলো। মুখে তার আমাবস্যার অন্ধকার। শুদ্ধ রুমে এসে খেয়াল করলো তার একটা প্যান্টও আলমারিতে নেই। নিচে বাথরুমে গিয়ে দেখলো সব একটা বালতিতে ভেজানো। তারপর আবার রুমে এসে খেয়াল করলো বিছানার উপর একটা লুঙ্গি রাখা। দুইয়ে দুইয়ে চার মিলিয়ে শুদ্ধ’র বিচক্ষণ মস্তিষ্ক এবার ধারার উদ্দেশ্য ধরতে পারলো। আবারও এক দমক হেসে উঠে শুদ্ধ বলল,
‘সিরিয়াসলি আপনি আমাকে লুঙ্গি পরানোর জন্য এতক্ষণ এতো কিছু করেছেন? আই কান্ট বিলিভ!
শেষমেশ কি হলো সেই আপনার নিজের উপরেই পানি পড়ে গেলো।’
ধারা ছোট ছোট চোখ করে শুদ্ধ’র দিকে তাকালো। শুদ্ধ সঙ্গে সঙ্গে হাসি থামিয়ে বলল,
‘আচ্ছা ঠিকাছে, আপনার যেহেতু আমাকে লুঙ্গি পরানোর এতোই ইচ্ছা তাহলে আমি এমনিই পরছি। আপনাকে এর জন্য এতো কিছু করতে হবে না।’
ধারা উচ্ছ্বাসিত হয়ে বলে উঠলো, ‘সত্যি!’
‘হুম।’
ধারা হাসিমুখে বিছানা থেকে লুঙ্গিটা তুলে শুদ্ধ’র দিকে বাড়িয়ে ধরলো। শুদ্ধ লুঙ্গিটা হাতে নিয়ে নিল। ধারা আবারও বলল, ‘আপনি কি সত্যিই পরবেন?’
শুদ্ধ নিজের হাসি চেঁপে রেখে বলল,
‘হ্যাঁ, সমস্যা কি? ভয় তো পাই অন্যদের সামনে থাকলে। আপনার সামনে আমার লুঙ্গি খুলে যাওয়া নিয়ে কিসের ভয়! আপনি তো আমার বউ ই। আপনার কাছে আর লজ্জা পাওয়ার কি আছে? আপনার যদি কোন সমস্যা না থাকে তাহলে আমারও কোন সমস্যা নেই।’
ধারার মুখের হাসি সব এক নিমিষেই গায়েব হয়ে গেলো। কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে থেকে, শুদ্ধ যখনই লুঙ্গি পরার জন্য প্রস্তুত হতে নিলো ঠিক তখনই একটা ‘না’ বলে চিৎকার দিয়ে ধারা দ্রুত চোখ বন্ধ করে পেছনে ঘুরে বলল,
‘প্লিজ! লুঙ্গি পরবেন না।’
চলবে,