হাতটা রেখো বাড়িয়ে -Part 9+10

0
164

#হাতটা_রেখো_বাড়িয়ে
#পর্ব-৯+১০
Writer: ইশরাত জাহান সুপ্তি
ধারার এহেম আতঙ্কিত রূপ দেখে শুদ্ধ হেসে ফেললো। শুদ্ধকে জব্দ করতে গিয়ে যে ধারা নিজেই জব্দ হয়ে গিয়েছে বুঝতে পেরেই গোমড়ামুখে চলে যেতে নিল ধারা। পেছন থেকে ‘ধারা’ বলে ডেকে খপ করে তার হাত ধরে ফেলল শুদ্ধ। ধারা ফিরে তাকাতেই স্মিত হেসে শুদ্ধ বলল,
‘সরি!’
ধারা অবাক মুখে শুদ্ধ’র দিকে তাকিয়ে রইলো। শুদ্ধ বলতে লাগলো,
‘আই অ্যাম সরি ধারা! এতক্ষণের সবকিছুর জন্য।’
ধারা নরম হয়ে গেলো। ধারার হাত থেকে গামছাটা নিয়ে শুদ্ধ বলল,
‘আপনার মাথা মোছা হয়নি। চুল থেকে পানি পড়ছে। ধরতে গেলে এই নিয়ে তিনবার আপনার মাথা ভেজানো হয়ে গেলো। ঠান্ডা লেগে যেতে পারে। দিন, আমি আপনার মাথা মুছে দিচ্ছি।’
এই বলে শুদ্ধ’ই ধারার মাথা মুছে দিতে লাগলো। ধারার খানিক লজ্জা অনুভুত হলো তবুও কিছু বলতে পারলো না। কিছুক্ষণ পর কিছু বলতে গিয়েও শুদ্ধ থেমে গিয়ে বলল, ‘এক সেকেন্ড!’
তারপর ধারাকে কিছু বলতে না দিয়েই কোথায় যেন হাওয়া হয়ে গেলো। ক্ষণকাল পরে ফিরে এলো দু কাপ রং চা নিয়ে। ধারা তখন কাঠের বারান্দায় নিচে হেলান দিয়ে বসে আছে। শুদ্ধ তার পাশে বসে ধারার দিকে এক কাপ চা এগিয়ে দিয়ে বলল, ‘নিন, গরম গরম রং চা। যদিও এই পরিবেশে দুধ চা টাই হতো বেটার। কিন্তু বাসায় দুধ ছিল না।’
ধারা মৃদু হেসে চায়ের কাপ হাতে নিল। কাপে একবার চুমুক দিতে না দিতেই শুদ্ধ বলল,
‘আপনিও যে এতো ঝগড়ুটে হতে পারেন সেটা আজ দেখলাম।’
শুদ্ধ মনের সুখে চায়ের কাপে একের পর এর চুমুক দিচ্ছে। থেমে গেছে শুধু ধারা। লাজুক মুখে মাথা নিচু করে ধারা ভাবতে লাগলো, সত্যিই তো আজকের মতো এমনটা তো ধারা কখনোই করেনি! আজ হঠাৎ কি হয়ে গিয়েছিল তার? এই প্রথম নিজেকে কিছুটা খোলামেলা লাগলো ধারার। মনে হচ্ছে কোন একজন বিশেষ কারো কাছে তার নিজস্ব সব জড়তা, রাখ ঢাক কেটে গেছে। ধারার ভাবনায় ছেদ ঘটিয়ে শুদ্ধ বলে উঠলো,
‘আরে! খাচ্ছেন না কেন? চা তো ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।’
শুদ্ধ’র কথা শেষ হতে না হতেই আকাশে মৃদু আলোর ঝলক উঠে গর্জে উঠলো। শুদ্ধ সেদিকে তাকিয়ে আশাবাদী মুখে বলল,
‘বৃষ্টি টা নামলে ফসলের জন্য ভীষণ ভালো হতো। দোয়া করুন ধারা যাতে বৃষ্টি হয়।’
ধারা বলল, ‘আচ্ছা, আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞাসা করি?’
‘করুন।’
‘শহরে এতো বছর পড়ালেখা করে আপনি গ্রামে এসে এসব করছেন কেন?’
শুদ্ধ মৃদু হেসে বলল, ‘স্বপ্ন বুঝেন ধারা? স্বপ্ন! আমার একটা স্বপ্নই ছিল এটা। ইচ্ছে ছিল ব্যতিক্রম কিছু একটা করার। বাবা ছিল না। অনেক ছোট থেকেই আমাকে আমাদের জমিগুলো দেখাশোনার কাজে নামতে হয়েছে। অনেক কাছ থেকে কৃষকদের ফসলের প্রতি মায়া, টান, যত্নগুলো দেখেছি। মাঝে মাঝে ফসল নষ্টে তাদের আহাজারিও দেখেছি। কৃষক আর ফসলের মধ্যে একটা অন্যরকমই সম্পর্ক থাকে। ভালোবাসা, বিরহ এই সম্পর্কের মধ্যেও বিদ্যমান। ইচ্ছে ছিল তাদের নিয়ে কিছু করার। এই সম্পর্কটা অটুট থাকুক। আধুনিক জীবনের ছোঁয়ায় মানুষ কৃষি বিমুখী না হয়ে উঠুক। ফসলের উপর যদি পরিশ্রম দেওয়া যায় তাহলে খুব কমই নিরাশ হতে হয়। প্রয়োজন শুধু কিছু সঠিক পন্থা অবলম্বনের। যদি আধুনিক কিছু যন্ত্রপাতি আর ব্যবস্থার প্রয়োগ করা হয় তাহলে কৃষিক্ষেত্রে সাফল্য আসবেই। কিন্তু আমাদের দেশের কৃষকেরা বেশিরভাগই হয় মূর্খ। তারা অধিক উৎপাদনের উপায়, সারের সঠিক ব্যবহার, ফসল রক্ষা করা, যোগান দেওয়া এগুলো সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানেন না। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়ালেখা করে অনেক ছাত্রকেই দেখেছি সরকারি চাকুরীর পেছনে ছুটতে। আমি ভাবলাম এতদিন কৃষি নিয়ে এতো কিছু শিখলাম আমার জ্ঞানটাকে আমি কৃষির পেছনেই লাগাই। ঐ যে বললাম না, ব্যতিক্রম কিছু করার ইচ্ছা ছিল! যেমনটা ভেবে রেখেছে সেটাই যদি হয় তাহলে খারাপ হবে না।’
‘আচ্ছা, কৃষি উদ্যেক্তা ব্যাপারটা না আমি ঠিকমতো বুঝতে পারলাম না। আপনার কাজের ধরণটা কি?’
‘আমি কৃষি ব্যাংক থেকে একটা বড় অঙ্কের লোন নিয়ে বিশাল পরিমাণের জমি লিসে নিয়েছি। সেখানে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে মাল্টা, কমলা, লেবু, টমেটো, ড্রাগন ফল, বারোমাসি আমের চাষাবাদ করছি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ডিপ ইরিগেশনের ব্যবস্থা করে পানি সেচের ঝামেলা দূর করেছি। এতে আমার পানিও সাশ্রয় হচ্ছে। রাসায়নিক সার ব্যবহার না করে এক ধরণের জৈবসার নিজেরাই প্রস্তুত করে ফসলে ব্যবহার করি। এতে করে আমার খরচ কম, প্রোফিট বেশি হচ্ছে। এখন সামনে গ্রিন হাউজের মাধ্যমে চাষাবাদের ব্যবস্থা করতে চাইছি। এতে করে খুব অল্প জমিতেই আমি অধিক পরিমাণে ফসল উৎপাদন করতে পারবো। এতক্ষণ যেটা বললাম, এটা আসলে আমার ব্যকআপ। আমার মূল চেষ্টা আরেকদিকে। এই যে বললাম আমি জমি লিসে নিয়েছি। কিছুটা আমাদের নিজেদেরও আছে। এই জমিগুলোকে আমি দুইভাবে ভাগ করেছি। একভাগে এতক্ষণ যেগুলো বললাম সেগুলো হচ্ছে। আরেকভাগে ধান চাষ করবো। উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে একদম কম খরচে একধরনের নতুন প্রজাতির উচ্চ ফলনশীল ধান উদ্ভাবনের চেষ্টা করছি আমি। এই ধানটা উদ্ভাবনে যদি সাকসেস হই না আমার সব কষ্ট সার্থক। এই সব কাজের জন্য আমি বেশিরভাগ বেকার ছেলেদেরই ঠিক করেছি। তাদেরকে এসব শিখিয়ে কৃষির প্রতি উদ্বুদ্ধ করতে চাই। এতে করে আমাদের রূপনগরের বেকারত্বের সংখ্যাও হ্রাস পাবে। যেমনটা ভেবে রেখেছি তেমনটাই যদি করতে পারি তাহলে শুধু রূপনগরের না আমাদের দেশের কৃষকরাও ধান চাষে অনেক লাভবান হবেন।’
ধারা এতক্ষণ মনোযোগ দিয়ে সবটা শুনে বলল,
‘আপনি যেটা করতে চাইছেন তা হলে আসলেই খুব ভালো হবে। কিন্তু সফলতা প্রসঙ্গে ব্যাপারটা বোধহয় আসলেই একটু রিস্কি হয়ে যায়।’
মৃদু হেসে কিছুক্ষণ আকাশের দিকে তাকিয়ে শুদ্ধ বলল, ‘আমি জানি সেটা। এতো বড় লোন, তারপর এতোগুলো প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যেতে হবে! তবে আমার নিজের উপর বিশ্বাস আছে। আমার মনে হয় আমি পারবো। বলতে পারেন প্রথম থেকেই আমার নিয়তই ছিল এই লাইনে আসার। একটা কৌতূহল কাজ করতো। একারণেই আমি অন্য কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্রাই না করে এডমিশনের সময় শুধু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ই বেছে নিয়েছিলাম। জানেন ধারা, তখন আমার শিক্ষক, বন্ধু থেকে শুরু করে অনেকেই অনেক ভাবে আমাকে পরামর্শ দিয়েছিল মেডিকেলে, বুয়েটে ট্রাই করার। বলতো, আমি ভালো ছাত্র ছিলাম চেষ্টা করলেই পারবো। তারপর যখন গ্রাজুয়েট হয়ে বেরোলাম তখনও সবাই বলেছে চাকুরীর জন্য ট্রাই করতে, এসবের কোন ভবিষ্যত নেই। আমি জানি মুখ ফুটে না বললেও আম্মাও আমার কাজটা নিয়ে খুব একটা প্রসন্ন নন। সবার মতো তিনিও আশা করেন আমি একটা সিকিউর বড় চাকরি করি। কিন্তু আমি আমার স্বপ্নটাকে উপেক্ষা করতে পারবো না। আমি সবসময় আমার ইচ্ছাশক্তিটাকেই প্রাধান্য দিয়ে এসেছি। কারণটা কি জানেন, আপনার যেটা স্বপ্ন, যেটা ইচ্ছা, সেই রাস্তায় গিয়ে যদি আপনি হেরেও যান তবুও মনে কোন আফসোস থাকবে না। আর যদি অন্যের কথা শুনে নিজের পছন্দের রাস্তা ত্যাগ করেন তাহলে সারাজীবন একটা আফসোসের সাথে কাটাতে হবে। সবসময় শুধু মনে হবে, হয়তো আমি আরেকটু চেষ্টা করলেই পারতাম! হয়তো আমি সফল হতাম! আমি কেন ছেড়ে দিলাম! আফসোস জিনিসটা খুব খারাপ ধারা। এটা মানুষের জীবনের সমস্ত আনন্দটাকে ধীরে ধীরে নিষ্ক্রিয় করে দেয়। আমি আমার নিজের ইচ্ছেটাকেই প্রাধান্য দিয়ে চলেছি। আমার পরিপূর্ণ চেষ্টা আমি করবো। তারপরও যদি অসফল হই। তাহলে খারাপ লাগবে, খুব কষ্ট হবে। কিন্তু আফসোস থাকবে না। কারণ আমি আমার মনেরটা শুনেছি। যেখানে আমার আনন্দ লাগে সেখানে আমি আমার হাত বাড়িয়ে দিয়েছি। এখন বাকিটা আল্লাহ ভরসা! আমার কোন আফসোস নেই।’
ধারা মুগ্ধ হয়ে শুদ্ধ’র সবটুকু কথা শ্রবণেন্দ্রিয় করে মিষ্টি করে হেসে বলল, ‘একটা কথা বলবো? আমার মনে হয়, আপনি পারবেন।’
শুদ্ধ হেসে ফেলে বলল, ‘ধন্যবাদ, এই অধমের উপর এতো বিশ্বাস রাখার জন্য। আমার কথা বাদ দিন। আপনার কথা বলুন। আপনি সামনে কি করবেন? কোথায় ভর্তি হবেন?’
নিজের পড়ালেখা বিষয়ক কথা উঠতেই ধারার মুখটা মলিন হয়ে যায়। শুদ্ধ’র তা দৃষ্টিগোচর হওয়ার আগেই হঠাৎ বৃষ্টি নেমে সেখানে লোডশেডিং হবার জন্য সেই আলাপটা সেখানেই থেমে যায়।
__________________________________________
শাহেদ এসেছে বাড়িতে। দেশে অভ্যন্তরীণ গোলযোগের কারণে ধারার বিয়েতে সে আসতে পারেনি। এখন অবস্থা কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় চলে এসেছে। শাহেদ এসেছে সকালে। চট্রগ্রাম থেকে গতকাল রওনা করেছিল। আসা পর থেকেই বাড়িতে একপ্রকার গমগমে অবস্থার সৃষ্টি করে ফেলেছে সে। তার মেজাজ অত্যন্ত খারাপ। প্রসঙ্গ ধারার বিয়ে। প্রকৃতপক্ষে ধারাকে শাহেদ অত্যন্ত ভালো জানে। ধারার নাম রাখা থেকে শুরু করে সাবজেক্ট চয়েজ পর্যন্ত সবকিছু শাহেদেরই করা। ধারার বিয়ে ভাইজান রাগ করে এরকম একটা ঘরে দিয়ে দিয়েছে এটা সে একদমই মানতে পারছে না। তার নিজস্ব রেপুটেশনেও ব্যাপারটা অত্যন্ত বাঁধছে। সে চতুর প্রকৃতির লোক। মানুষকে তার কথার আয়ত্তে এনে ফেলতে পারে। সে যদি সেসময় উপস্থিত থাকতো তাহলেও একটা কিছু করতে পারতো। কিন্তু তা তো আর সম্ভব হয়ে উঠতে পারেনি। বাড়ি এসেই কতক্ষণ জমিরন বিবির সাথে এ নিয়ে কথা কাটাকাটি করেছেন। আজিজ তালুকদার বাড়িতে ছিলেন না। কিছুক্ষণ আগেই ফিরে এসেছেন। বড় ভাইজানকে শাহেদ সম্মান করে। একারণেই তার সামনে হৈ চৈ না করে থম মেরে বসে আছে। আজিজ সাহেবের মুখের অবস্থাও খানিক গুরুগম্ভীর। শাহেদ আর থাকতে না পেরে বলল,
‘ভাইজান, আপনি এইটা কি কাজ করলেন? আমি এখনও ভাবতে পারছি না। ধারার বিয়েটা আপনি কিভাবে এমন করে দিতে পারলেন!’
আজিজ সাহেব কিছু বললেন না। গম্ভীর হয়ে মুখটা সামনের দিকেই নিবদ্ধ করে রাখলেন। শাহেদ বলতে লাগলো,
‘ভাইজান, আপনি মানেন আর না মানেন, এই কাজটা কিন্তু আপনি একদমই ঠিক করেননি।’
‘আমি কি করবো! এতকিছু করলাম ও’র জন্য। আম্মায় এতো চিল্লাচিল্লি করার পরও কখনো ওরে দিয়ে একটা কাজ করতে দেইনি। যখন যা দরকার সব এনে দিয়েছি। শুধু বলছি, তুমি মন দিয়ে পড়াশোনা করো, একটা ভালো রেজাল্ট করো। কিন্তু শেষমেশ কি করলো? জয়নালের পোলা এ প্লাস পাইলো কিন্তু ও পাইলো না।’
বলতে বলতে আজিজ সাহেব থেমে গেলেন। তার কন্ঠে মেয়ের জন্য একরাশ অভিমান ঝরে পড়লো। শাহেদ বলল,
‘বুঝলাম ধারা এ প্লাস পায়নি, আপনার রাগ উঠেছে। রাগটা তো আমারও উঠেছিল। আরে! এখনকার দিনে এ প্লাস ছাড়া কোন দাম আছে নাকি! আমি নিজেও তো সব পরীক্ষায় সেরাটাই করেছি। কিন্তু তাই বলে আপনি মেয়েটার এভাবে বিয়ে দিয়ে দিবেন। আচ্ছা, বুঝলাম আপনার দিতে ইচ্ছা হয়েছে আপনি দিবেন। একটা ভালো ঘর দেখেই বিয়ে দিতেন। ভালো নাম ডাক আছে, অবস্থা আছে এমন দেখেই দিতেন। তা না! আপনি এই কার সাথে বিয়ে দিলেন বলেন তো! কি আছে ছেলেদের? আমাদের সাথে কি ওরা যায়? একটা ভালো ঘরে দিতেন, গ্রামে আমাদের মান সম্মানটাও আরো বাড়তো। ধারার ভবিষ্যৎটা নিয়েও তো একটু ভাববেন ভাইজান। দেখতে শুনতে সবদিক দিয়ে এই গ্রামের মধ্যে ধারার মতো আরেকটা মেয়ে কেউ খুঁজে পাবে? একটা ভালো পরিবারে বিয়ে দিলে আজকে সবকিছুই কতো সুন্দর হতে পারতো। আমি আরও কত কিছু ভেবে রেখেছিলাম যে আমি দেখে শুনে একটা বড় চাকরিজীবী ছেলের সাথে ধারার বিয়ে দেবো। আমার জন্যও তো একটু অপেক্ষা করতে পারতেন। আমাদের বাড়িতে আর কোন মেয়ে কি আর আছে! একটাই মেয়ে, তার বিয়েটাও কিনা আপনি ভাইজান এইভাবে দিয়ে দিলেন।’
আজিজ সাহেব আর কিছু বললেন না। চুপ করে থেকে শাহেদের কথা শুনতে লাগলেন। এই প্রথম তার মনে হল, কিছু না ভেবেই হুট করে ধারার সেখানে বিয়ে দেওয়া তার আসলেই উচিত হয়নি।
চলবে,
#হাতটা_রেখো_বাড়িয়ে
#পর্ব-১০
Writer: ইশরাত জাহান সুপ্তি
খোদেজা রান্নাঘরে বসে বটি দিয়ে তরকারি কুটছে। তার সামনেই জ্বলন্ত মাটির চুলা। সেখানে পাতিলে করে কাঁচা কলা সিদ্ধ হচ্ছে। তা দিয়েই আজকে দুপুরে খাবার জন্য ভর্তা করা হবে। ধারা আর শুদ্ধ’র আজকে দাওয়াত আছে, ধারার বাপের বাড়ি। ধারার ছোট চাচা বিয়েতে ছিলেন না। শুদ্ধকে দেখেননি। তিনি তার ভাতিজির জামাইকে দেখতে চান। সেই সুবাদেই আজ দাওয়াত দেওয়া হয়েছে তাদের। এই ফাঁকে পরিচয়ও হবে। এজন্যই আজ দুপুরে খাবারে ভারী আয়োজন রাখেননি খোদেজা। ছেলে, বৌ দুজনই চলে যাবেন। খাবে তো শুধু চুমকি আর সে। তাই ভাত, ভর্তা, বেগুন ভাজা আর একটু ডাল দিয়েই রান্নার পাটটা তাড়াতাড়ি চুকিয়ে ফেলার নিয়ত তার। কিন্তু তা হবে বলে মনে হচ্ছে না। পাশের বাড়ির মকবুল আর তার বৌ এসেছে খোদেজার কাছে। আজ সকালেই ছোটভাই আবুলের সাথে তার লেগেছে তুমুল ঝগড়া। সেই ঝগড়ার পুরো বর্ণনা আর এর পেছনে মূল দায়ী যে আবুলই তাই সাজিয়ে গুছিয়ে তারা শুনিয়ে যাচ্ছে খোদেজাকে। খোদেজা মনোযোগ দিয়েই ওদের দুজনের কথা শুনছে আর কাজ করছে। ধারা গেছে গোসলে। তাই শুদ্ধও গোসলখানার বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। দুপুরের দাওয়াতের জন্যই আজ সকাল সকাল গোসল করা ধারার। ধারা গোসলে ঢুকেছে অনেকক্ষণ হয়ে গেছে। শুদ্ধ দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে অধৈর্য হয়ে উঠে বলল,
‘ধারা, আর কতক্ষণ? তাড়াতাড়ি করুন। আমাদের আপনাদের বাড়িতেও তো যেতে হবে।’
ভেতর থেকে ধারা চেঁচিয়ে বলল,
‘এই তো হয়ে গেছে। আর একটু….!’
কিছুক্ষণ পর ধারা ব্লাউজ পেটিকোটের উপর একটা হলুদ শাড়ি কোনরকমে পেঁচিয়ে বের হয়ে এলো। ভেজা জামা কাপড়ের বালতি হাতে নিয়েই বললো, ‘হয়ে গেছে, চলুন।’
যাবার জন্য এক পা বাড়িয়েও দিল ধারা। কিছুক্ষণ ধারার দিকে তাকিয়ে থেকে শুদ্ধ দ্রুত বলে উঠলো, ‘এক মিনিট! দাঁড়ান।’
ধারা অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে বলল, ‘কি হলো?’
‘আপনার এই অবস্থা কেন? শাড়ি শুধু পেঁচিয়েই রেখেছেন, পড়েননি কেন? আপনি শাড়ি পরতে পারেন না?’
‘পারি তো। কিন্তু শাড়িটা দেখছেন না! একদম নতুন শাড়ি, এখনও ভাঁজও ভাঙা হয়নি। পরতে গেলে ফুলে থাকবে। কল পাড় একদম ভিজে আছে। এখানে কিভাবে পরবো? তাই এখন কোনমতে প্যাচ দিয়ে রেখেছি। রুমের ভেতর গিয়ে পরবো। চলুন।’
আবারও ধারাকে থামিয়ে শুদ্ধ বলল,
‘দাঁড়ান, দাঁড়ান। যাবেন না। রান্নাঘরের সামনে মকবুল ভাই আর তার বৌ দাঁড়িয়ে আছে।’
ধারা থেমে গিয়ে কিছুটা ভেবে বলল,
‘ও! কিন্তু এখন আর কি করবো? কলপাড়ও তো একদম ভেজা। কুচি ঠিক করে পরতে গেলেই শাড়ি পুরো ভিজে যাবে।’
‘আপনি এখানেই শাড়ি নিয়ে এসেছেন কেন? এখন গোসল করে একটা থ্রি পিছ পরতেন তারপর না হয় ভেতরে গিয়ে শাড়ি পরতেন।’
‘ঠিকই। কিন্তু তখন তো আর এতকিছু ভাবিনি। আর আমি কি জানতাম এখানে কোন লোক এসে পরবে। এখন কি করবো? আচ্ছা দাঁড়ান।’
এই বলে ধারা ভেতরে গিয়ে মাথা টাথা ঢেকে আরো ভালো মতো শাড়ি পেঁচিয়ে বের হয়ে বলল,
‘এইবার হয়েছে? এখন চলুন।’
‘কোথায় হয়েছে? আপনার সাইডে কোমড় বের হয়ে আছে?’
ধারা লজ্জা পেয়ে চমকে উঠে তাড়াতাড়ি সেখানে তাকিয়ে শাড়ি টেনে ঢেকে নিল। শুদ্ধ বলল,
‘আপনি একটা কাজ করুন। গোসলখানার ভেতরে যান। শাড়ি পরে তারপর বাইরে আসুন। দেরি হলে হোক।’
‘আপনাকে তো বললামই, কলপাড় পুরো ভেজা। আমি একা একা এখানে কিভাবে শাড়ি পরবো? এভাবেই চলুন। এখন তো ভালোমতো ঠিক করেছিই। তারা তো রান্নাঘরে দাঁড়ানো। আমি তাড়াতাড়ি ওটার সামনে দিয়ে চলে যাবো। সমস্যা নেই।’
শুদ্ধ বাচ্চাদের মতো জেদ ধরে বলল,
‘আপনার সমস্যা না থাকলেও আমার সমস্যা আছে। আমি কাউকে এভাবে আমার বৌকে দেখতে দেবো না।’
এই বলে শুদ্ধ ধারার হাত টেনে গোসলখানার ভেতরে নিয়ে এলো। ধারা হতবাক। এতক্ষণ ভেবেছিল শুদ্ধ হয়তো ধারা অন্যদের সামনে লজ্জা পাবে ভেবে বলছে। আর এখন এটা কি শুনলো! আর কিভাবেই না দ্বিধাহীন লোকটা লজ্জাশুন্য কণ্ঠে কতই না অনায়াসে আমার বৌ বলে দিলো। মুহুর্ত গড়াতেই একদম লজ্জাবতী গাছটির ন্যায়ই গুটিয়ে গেলো ধারা। বুকের মধ্যকার অপ্রতিরোধ্য ধুকপুক ধ্বনি বৃদ্ধি পেলো কয়েকগুণ। শুদ্ধ বলল,
‘দেখুন, হিরোদের মতো আমি শাড়ি পরাতে পারি না। কোনদিন দেখিওনি কিভাবে পরে। আমি শাড়িটা ধরে রাখছি। আপনি আপনার মতো পরুন। কোন হেল্প লাগলে আমি চেষ্টা করবো।’
ধারা ধীরে ধীরে শাড়ি পরতে লাগলো। শুদ্ধ শাড়ি পানি থেকে ভেজানো থেকে বাঁচিয়ে রেখে যতটুকু সম্ভব ধরে রাখলো। বিপত্তিটা বাঁধলো কুচি ঠিক করতে গিয়ে। কুচি ঠিক করতে গিয়ে শুদ্ধ ঠিক করার থেকে বেশি আরো গুলিয়ে ফেললো। দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে অতিষ্ট হয়ে উঠলো ধারা। শুদ্ধকে যতোই বলল ‘আপনি ছেড়ে দিন, হবে না। আমিই দেখছি।’ শুদ্ধ ততই নাছোড়বান্দা। এর শেষ সে দেখেই ছাড়বে। এতো এতো কঠিন কাজ সে করেছে। শাড়ি পরানো এমন কি জিনিস যে সে পারবে না! আজকে শাড়ি পরানো সে শিখেই ছাড়বে। ধারার মনে হলো, আজকে বোধহয় ও দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই ঘুমিয়ে পরবে। শুদ্ধ তখন একদম সিরিয়াস মুডে। তার সমস্ত ধ্যান শাড়ির কুচির দিকে। মনে হচ্ছে কোন জটিল যুদ্ধ পরিচালনার কাজে আছে সে। শাড়ির একপ্রান্ত শুদ্ধ’র হাত ফসকে ভেজা জায়গায় পরতে নিলে ধারা অনুযোগের স্বরে বলে উঠলো,
‘কি করছেন কি? এভাবে কেউ শাড়ি ধরে! এজন্যই বলছিলাম, আগে ভেতরে গিয়ে নেই।’
তখন বাইরে দিয়ে পাশের বাড়ির নাজমা কলপাড়ে আসছিল। ভেতর থেকে হঠাৎ এই কথাটা তার কানে আসলো। এই কথার মানে নাজমা কি বুঝলো কে জানে! মুখে আঁচল চাপা দিয়ে হঠাৎ জোরে জোরে হেসে উঠলো সে। শুদ্ধ ধারা দুজনেই চমকে উঠলো। নাজমা বলতে লাগলো, ‘এইবার বুঝলাম মাহতাব ভাই। ভেতরে ভেতরে তাইলে এই চলে! এই কারণেই আমাদের কাউরে ভেতরে ঢুকতে দেন না।’
ধারার গাল লজ্জায় লালবর্ণ ধারণ করলো। শুদ্ধ কি করবে না করবে বুঝতে না পেরে মাথা চুলকে একটা ফিচেল হাসি দিয়ে বলল, ‘ভাবী, আপনি যেমনটা ভাবছেন তেমন কিছু না।’
নাজমা দুষ্টমির ন্যায় বলে উঠলো, ‘আমি আবার কখন বললাম আমি কিছু ভাবতাছি? চোরের মনে পুলিশ পুলিশ।’
নাজমা অট্টহাসিতে ফেটে পরলো। শুদ্ধ ধারা বিব্রত হয়ে একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করতে লাগলো। নাজমা বলল,
‘চালায় যান দেবরজি, চালায় যান। আমরা ভাবী মানুষ কি আর দেবরের সোহাগের সময় বাধা হইতে পারি! আমি চললুম।’
নাজমা চলে গেলে শুদ্ধ, ধারা দুইজনই একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। তারপর বাকিটুকু ঝটপট করে ফেলে অবশেষে শাড়ি পরা সম্পন্ন হলো ধারার। সব শেষ হতেই ধারা বলল,
‘এইবার হয়েছে? এখন যাবো?’
শুদ্ধ হুম বলতে গিয়েও থেমে গিয়ে বলল, ‘এক সেকেন্ড!’ তারপর ধারার আঁচলটা টেনে দু হাত দিয়ে মাথায় একটা ঘোমটা পরিয়ে হেসে বলল, ‘এইবার একদম পার্ফেক্ট!’
শুদ্ধ মুখের হাসি নিয়ে তাকিয়ে রইলো ধারার দিকে। ধারা তখন একটা হলুদ পরী। কাঁচা হলুদ আবরণে মুড়িয়ে থেকে, প্রভাত স্নানের স্নিগ্ধ সুভাস মুখরিত মুখমন্ডলে সকালের সোনালী রোদের লুটোপুটি খেলা তার ফর্সা মসৃণ ত্বকটিকে হলুদাভ করে তুলেছে। এই অনিন্দ্য হলুদ সুন্দরীটি তখন নিজ জ্ঞাত শুন্য। সামনের পুরুষটির গালের টোল পরা হাসিই যে তার ধ্যান কেড়ে রেখেছে।
__________________________________________
শুদ্ধ ধারার মধুপুর গ্রামে পৌছাতে পৌছাতে দুপুর বারোটা বেজে গেলো। জামাই মেয়েকে একসাথে দেখে প্রসন্ন মুখে এগিয়ে গেলো আসমা। একে একে সবাইকে ডেকে নিয়ে আসলো সেখানে। শুদ্ধ শ্বশুর, শ্বাশুড়িকে সালাম করার পর পরিচিত হলো শাহেদের সাথে। আসমা ওদের দুজনকে ভেতরে বসিয়ে চলে গেলেন খাবারের আয়োজনে। শাহেদ গভীর মনোযোগের সাথে তার সামনে বসা ছাব্বিশ কি সাতাশ বছরের যুবকটিকে নিরীক্ষণ করতে লাগলো। না! জামাই হিসেবে দেখতে শুনতে খারাপ না। এখন মেয়ে যেহেতু দিয়েই ফেলেছে তাই আর কি করার! ধারা বলল,
‘ছোট চাচা, কাকী আর তামিম ভালো আছে? তাদেরকেও নিয়ে আসলেন না কেন?’
‘আরে ধারা, আমি কি আর বেশি দিনের ছুটি এনেছি। তামিম কত ছোট না! আড়াই বছরের ছেলেকে নিয়ে কি আর এতো জার্নি করা যায়! আবার যখন বেশি দিনের ছুটিতে আসবো তখন নিয়ে আসবো। একসময় যাস আমাদের ওখানে বেড়াতে। তুই আর শু…শু কি যেন নাম!’
শুদ্ধ স্পষ্ট স্বরে বলল, ‘শুদ্ধ।’
‘কি?’
শুদ্ধ আবারও বলল, ‘শুদ্ধ।’
‘ঐ…যাস শুদ্ধকে নিয়ে বেড়াতে চট্টগ্রামে।’
ধারা মাথা দুলিয়ে বলল, ‘আচ্ছা।’
শাহেদ বলল, ‘আমি শুদ্ধকে নিয়ে একটু হাঁটতে হাঁটতে কথা বলি। তুই থাক এখানে। আর শোন, ফ্যান বন্ধ করে দে। ঠান্ডা ঠান্ডা লাগছে। তোরও ঠান্ডা লাগবে।’
শাহেদের কথা অনুযায়ী ধারা উঠে ফ্যান বন্ধ করে দিলো। অথচ ধারার নাক মুখে ঘাম জমে আছে। তারা এই মাত্রই বাইরে থেকে এসেছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে তার গরম লাগছে। তবুও ধারা কিছু বলল না। শুদ্ধ খানিক অবাক হলো।
শাহেদ শুদ্ধকে নিয়ে বসার ঘরে সোফায় গিয়ে বসল। এবার শুদ্ধকে সরাসরি বলল, ‘আচ্ছা শুদ্ধ, তুমি কি কাজ করো? বাড়ির কেউ তো দেখলাম তোমার কাজের ব্যাপারে ঠিকমতো গুছিয়ে বলতেই পারছে না।’
শুদ্ধ ও’র সমস্ত কাজের ধরণটা, কি করতে চায় সবটা শাহেদকে বুঝিয়ে বলতে লাগলো। কিন্তু সবটা একদম মাথার উপর দিয়ে গেলো শাহেদের। এতে করে লাভটা কি সে বুঝতে পারলো না। শুদ্ধ তবুও ধৈর্য্যের সাথে শাহেদকে বোঝাতে লাগলো। শাহেদ বারবারই বারবারই শুদ্ধকে কথার মাঝে থামিয়ে বলতে লাগলো, ‘এসব বাদ দাও। তুমি নাকি খুব মেধাবী ছাত্র ছিলে! রেজাল্ট অনেক ভালো! একটা কাজ করো বিসিএসে ট্রাই করো। একটা ভালো সরকারি চাকরি একবার পেয়ে গেলে তোমার আর ধারার দুজনেরই লাইফ সেট হয়ে যাবে। বিসিএসের জন্যই প্রিপারেশন নাও।’
শাহেদের সাথে শুদ্ধ একমত হলো না। সুস্পষ্ট এবং তার বলিষ্ঠ ব্যক্তিত্বের সাথে সে নিজের অভিমতটাই প্রকাশ করতে লাগলো। প্রচন্ড বিরক্ত বোধ করলো শাহেদ। শুদ্ধ’র কোন কথাই না বুঝে শেষমেশ একটা কথাই তার বোধগম্য হলো, ছেলে তো দেখি বেয়াদব! বড়দের পরামর্শ শোনে না।
শাহেদ আর শুদ্ধ’র কথার আসর ভাঙলো আসমার ডাকে। টেবিলে খাবার সাজানো হয়েছে। ছেলেদের আগে খেতে দেওয়া হয়েছে। রাতুল গিয়ে বসলো ঠিক শুদ্ধ’র পাশে। এই অল্পদিনের আলাপেই দুলাভাইকে ভারী পছন্দ হয়েছে তার। প্রথম দিনেই তো কি সুন্দর রাতুল আর তার এক ক্লাসমেটের নিত্যদিনের ঝগড়ার কি সুন্দর সমাধান বলে দিয়েছেন তার দুলাভাই। সমাধানটা খুব সুন্দর কাজেও লেগেছে। সেদিন থেকেই শুদ্ধ তার পছন্দের। শুদ্ধ’র বলা সব কথাই রাতুলের কাছে কোন বিজ্ঞানীর থেকে কম লাগে না। আসমা ধারাকেও বলল তাদের সাথেই খেতে বসে যেতে। ধারা গড়িমসি করছিল। বলল পরেই খাবে। আজিজ সাহেব এতক্ষণ চুপ করেই ছিলেন। আস্তে করে তিনি পাশ থেকে বললেন,
‘বসতে বলছে যখন বসো।’
ধারা ঝট করে বাবার দিকে তাকালো। তার বাবা আজ কতদিন পর তার সাথে কথা বলল। মনটাই ভালো হয়ে গেলো ধারার। সে তাড়াতাড়ি শুদ্ধ’র পাশের চেয়ারটা টেনে বসে পড়লো। খাবার দাবারের একটা হুলস্থূল কান্ড ঘটিয়ে রেখেছে আসমা। কি নেই টেবিলে! বেগুন ভাজা থেকে শুরু করে চিংরি মাছ ভুনা, ইলিশ মাছ ভাজা, রুই মাছের কালিয়া, মুরগির রোস্ট, গরুর ঝাল মাংস, পায়েস, পোলাও আরো কত কি! আসমা ব্যস্ত হয়ে পড়ল শুদ্ধকে আপ্যায়নে। শ্বাশুড়ির মন রক্ষার্থে শুদ্ধও খুব বেশি আপত্তি করলো না। ধারার চিংড়ি মাছ পছন্দ। প্রথমেই সে হাত বাড়ালো চিংড়ির বাটির দিকে। ধারার বাবা বলল, ‘এটা ঝাল বেশি হয়েছে। খেয়ো না। ইলিশ মাছ নাও।’
ধারা আর নিলো না। ইলিশ মাছ ভাজাই নিলো। শুদ্ধ খেয়াল করলো ঝাল অতো বেশিও না যে খাওয়া যায় না। আর তাছাড়া সবাই তো খাচ্ছে। আরো কয়েকবার ধারার কিছু বিষয় শুদ্ধকে অবাক করলো। দেখতে দেখতে একে একে সবার খাওয়াই শেষ হয়ে এলো। এখন শুধু টেবিলে আছে ধারা, শুদ্ধ আর শাহেদ। শুদ্ধ’র প্লেটে আসমা খাবারের পাহাড় বানিয়ে তুলেছিল বলেই শুদ্ধ পিছিয়ে গেছে। শাহেদ পায়েস খাচ্ছে। ধারার খাওয়াও মোটামুটি শেষ। খাওয়া শেষে ধারা যখন পায়েস নেওয়ার জন্য চামচ দিয়ে নিজের প্লেটের দিকে অগ্রসর হলো তখনই শাহেদ বলল, ‘ধারা, নিস না পায়েস। মিষ্টি বেশি হয়ে গেছে। তোর টেস্ট নষ্ট হয়ে যেতে পারে। একটা কাজ কর হাত ধুয়ে আয়। তারপর দই খা।’
শুদ্ধ একবার ধারাকে কথায় কথায় বলতে শুনেছিল মিষ্টি জাতীয় খাবার তার বেশি পছন্দ। শাহেদ বলায় নিজের প্লেটের দিকে বাড়িয়ে নেয়া পায়েসের চামচও ধারা রেখে দিল। সে একবার নিজের থেকে টেস্ট করেও তো দেখতে পারতো এতটুকু মিষ্টি সে খেতে পারে কিনা! শুদ্ধ হতবাক হয়ে রইলো। শাহেদ চলে যাওয়ার পরই শুদ্ধ ডাকলো, ‘ধারা!’
ধারা পাশ ফিরে বলল, ‘হুম?’
‘আপনি কোথায়?’
শুদ্ধ’র হঠাৎ এমন প্রশ্নের মানে বুঝতে না পেরে ধারা বিভ্রান্ত স্বরে বলল, ‘এই যে।’
শুদ্ধ আফসোসের সহিত বলল, ‘আপনাকে আমি দেখতে পাচ্ছি না।’
চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here