প্রেম এসেছিলো নীরবে -Part 18+19

0
519

#প্রেম_এসেছিলো_নীরবে(18+19)
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
দুহাত গালে দিয়ে মাথা নিচু করে কাঁদছে প্রাহি।আর ওর সামনেই রাগি চোখে তাকিয়ে আছে অর্থ।রাগে ওর সারা শরীর রি রি করছে।মাথার রগগুলো থপথপ করছে।মাথাটা অতিরিক্ত বিগরে আছে ওর।হাতগুলো মুষ্টিবদ্ধ করে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রন করার চেষ্টা চালাচ্ছে।অনেক চেষ্টাও করে তা সফল হচ্ছে না।উলটো প্রাহিকে ফোঁপাতে দেখে রাগের মাত্রা দ্বিগুন হচ্ছে।অর্থ রাগ নিয়ন্ত্রন করতে না পারায় পাশের ফুলের টপটা সজোড়ে লাত্থি দিয়ে ফেলে দিলো।টপটা ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে গেলো।প্রাহির দিকে তেড়ে যেতে নিয়েও নিজেকে সামলে নিলো ও।একবার যেই ভুল করেছে আবারও একই ভুল করতে চায়না সে।প্রাহির সাথে বিচ্ছেদটা যে ওর সহ্য ক্ষমতার বাহিরে।অর্থ কি করবে হিতাহিত জ্ঞান না পেয়ে ছাদের কর্নারে রাখা চেয়ারে ধপ করে বসে পড়ে দু হাতে মাথা চেপে ধরলো।প্রাহি ভয়ে থরথর করে কাঁপছে।কি থেকে কি করবে ওর মাথায় আসছে না।ভোঁতা একটা যন্ত্রনা ওকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরেছে।অর্থ’র অস্থির আচড়ন ওকে আরো ভয়ে কাবু করে ফেলছে।হঠাৎ অর্থ চোখ তুলে তাকালো।প্রাহি আত্মা শুদ্ধ কেঁপে উঠলো।লোকটার চোখজোড়া ভয়ানক ভাবে লাল হয়ে আছে।অর্থ ঠান্ডা স্বরেই বললো,
-” কাম হিয়ার প্রাহি?”
প্রাহি আমতা আমতা করলো কিছু বলার জন্যে।তার আগেই অর্থ আবারও বলে,
-” এই সেইড কাম নিয়ার টু মি, ফাস্ট।”
প্রাহি কাঁপা শরীর নিয়ে এগিয়ে গেলো অর্থ’র দিকে।অর্থ’র কাছে যেতে ওর ভয় করছে প্রচন্ড। একটু আগে যা হলো তাতে মনে হয়েছিলো এই বুজি অর্থ ওকে ছাদ থেকে ফেলে দিবে।কিন্তু ওর দোষ কোথায় এখানে?
প্রাহি রাত দুটো বাজে ছাদে এসে চন্দ্রবিলাশ করছিলো একা একা।ঘুম আসছিলো না ওর।শরীরটা কেমন যেন লাগছিলো।রুমের ভীতর থাকতে অসহ্য লাগছিলো।তাই ছাদে এসেছিলো একটু।ছাদে প্রচুর বাতাস।তাই প্রাহি যখন চাঁদ দেখছিলো তখন পাশের ছাদে কিছু অসভ্য ছেলেরা আড্ডা দিচ্ছিলো।মাতাল হওয়া ছেলেরা বাতাসে যখন প্রাহির ওড়না হালকা সরে গিয়েছিলো সেটা নিয়েই নিজেরা নিজেরা নানানভাবে বাজে কথা বলছিলো।কিন্তু প্রাহি তো নিজের মাজেই ছিলো না।সে তো চন্দ্রবিলাশ করতে ব্যস্ত।এদিকে অর্থ নিজের পুরনো বাড়ি থেকে ফিরে একবার প্রাহির রুমে যায় ওকে দেখার জন্যে।কিন্তু প্রাহিকে সেখানে পায়না।সারা বাড়ি খুজলো।হিয়াকেও জাগিয়ে জিজ্ঞেস করলো প্রাহি কোথায়।তখন জানতে পারলো প্রাহি নাকি ওর থেকে ছাদের চাবি নিয়ে গেছে।আর ছাদেই গিয়েছে ওর নাকি রুমে ভালো লাগছিলো না।হিয়া যেতে চেয়েছিলো কিন্তু প্রাহি মানা করে দিয়েছে।তাকে ঘুমোতে বলেছে।অর্থ তা শুনেই রাগে ফেটে যাচ্ছে।এতো রাত্রে মেয়েটা ছাদে গিয়েছে।আক্কেল জ্ঞান নেই।অর্থ দ্রুত পায়ে ছাদে গেলো।গিয়েই পাশের ছাদের ওই মাতাল ছেলেদের দু একটা বাজে কথা কানে আসে।অর্থ রেগে আনমনা হয়ে থাকা প্রাহির দিকে তাকায়।দেখে প্রাহির ওড়না সরে গিয়েছে।অর্থ গর্জন করে উঠে পাশের ছেলেদের এমন জোড়ে ধমক দেয় ওরা হুমড়ি খেয়ে ছাদ থেকে দৌড়।প্রাহিও ভয় পেয়ে যায়।কাঁপা গলায় কিছু বলতে নিলেই অর্থ দৌড়ে এসে।শরীরের সর্বশক্তি দিয়ে প্রাহির দু গাল শক্ত করে চেপে ধরে।থাপ্পড় দিতে গিয়েও নিজেকে সামলে নেয় ও।ছেলেগুলো কতোটা বাজে ইংগিত করছিলো।ভাবলেই সবকিছু ভেঙে গুরিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে।প্রাহিকে ছেড়ে উলটো দিকে ঘুরে রাগে ফোঁসফোঁস করতে থাকে ও।এরপর যা হওয়ার হলো।
—-
প্রাহি অর্থর সামনে গিয়ে দাড়াতেই অর্থ হেঁচকা টানে প্রাহিকে নিজের কোলে বসিয়ে দেয়। প্রাহির কোমড় দু হাতে জড়িয়ে ধরে প্রাহিকে নিজের বুকের মাজে ডুকিয়ে নেয়।এভাবে চেপে ধরায় প্রাহির দম বন্ধ হয়ে আসছে।তাও কোথাও যেন একটা ভালোলাগা কাজ করছে।অর্থ’র গরম নিঃশ্বাস ওর ঘাড়ে আছঁড়ে পরছে।অর্থ শীতল কন্ঠে বলে,
-” এতো রাতে ছাদে কেনো আসলে?”
প্রাহির আবার কান্না পেলো।ধরা গলায় বলে,
-” আ..আমার ঘুম আ..আসছিলো না।রু..রুমের ভীতর দম আটকে আ..আসছিলো।তাই একটু ছাদে এসেছিলাম।”
অর্থ লম্বা শ্বাস ফেলে নিজের রাগ সামলে নিলো।প্রাহির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,
-” তুমি জানো না আমি কতোটা ডেস্পারেট তোমার জন্যে।কেনো এতোটা খামখেয়ালিভাবে চলাফেরা করো তুমি।কেন এতোটা অগোছালো।চারদিকে কেন নজর দেওনা।বাতাসে তোমার গায়ের ওড়না সরে যাওয়ায় পাশের ছাদের মাতাল ছেলেরা কতোটা বাজে ইংগিত দিচ্ছিলো জানো।সামনে থাকলে এক একটার কলিজা টেনে ছিরে ফেলতাম আমি।”
প্রাহি ভয়ে আতকে উঠলো।অর্থ মুখে বাঁকা হাসি বজায় রেখে বলে,
-” নো প্রোবলেম।এই অর্থ’র কলিজাকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করেছে ওরা।এর ফলাফল হবে ভয়ানক ওদের জন্যে।যাতে পরবর্তীতে আর কোন মেয়েকে নিয়ে এইভাবে বাজে কথা না বলে।”
প্রাহির ভয়ে চোখে পানি চলে এসেছে।ও বললো,
-” প্ল..প্লিজ এমন কিছু করিয়েন না।প্লিইইজ।”
অর্থ রাগি কন্ঠে বলে,
-” তোমাকে তা নিয়ে ভাবতে হবে না।বেশি বুজলে ছাদ থেকে উড়িয়ে মারবো।”
প্রাহি অর্থ’র বুক থেকে মাথা উঠিয়ে চোখ পিটপিট করে তাকালো।তারপর বলে,
-” আমাকে ফেলে দিবেন আপনি?”
অর্থ ভ্রু-কুচকে বললো,
-” হ্যা কোন সন্দেহ?ফেলে দেখাবো তোমাকে?”
অর্থ দুহাতে প্রাহিকে জড়িয়ে নিয়ে কোলে তুলতে নিলেই প্রাহি চেচিঁয়ে উঠে।অর্থ বাঁকা হাসলো।তারপর শক্ত কন্ঠে বলে,
-” লিসেন প্রাহি।তোমাকে নিয়ে আমি সামান্যতম হেরফের সহ্য করতে পারি না।ইউ নো না আ’ম ম্যাডলি লাভ ইউথ ইউ।তোমার নিজেরও তোমার প্রতি কোন অধিকার নেই।এই তুমিটা পুরো আমার।বুজেছো?তাই নিজের সামান্যতম অবহেলা করলে তা তোমার জন্যে ভয়ানক হবে।আজ আমি নিজের রাগটাকে অনেক কষ্টে নিয়ন্ত্রনে এনেছি।কিন্তু বারবার এটা পারবো না।তখন না জানি আমি রাগের মাথায় তোমাকে মেরেই ফেলবো।”
প্রাহি অর্থ’র শেষের কথাটা শুনে অর্থকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।লোকটা মারাত্মক ভয়ানক।এ জোন মুসিবতের পাল্লায় পরলো আল্লাহ্।যদি সত্যি সত্যি কোন এক সময় প্রাহিকে মেরে দেয় লোকটা রাগের মাথায় তখন কি হবে প্রাহির?প্রাহির এতো এতো স্বপ্ন সব ভেস্তে যাবে।প্রাহি তো ডাক্তার হতে চায়।তার স্বপ্ন তো ধূলিসাৎ হয়ে যাবে।নাহ,এটা কিছুতেই হতে দেওয়া যাবে না।সে আর এমন কিছু করবে না যাতে অর্থ রেগে যায়।
অর্থ প্রাহিকে জড়িয়ে ধরে চোখ বুজে প্রাহির চুলের ঘ্রান নিচ্ছে।বিলিভ ইট অর নট- কাউকে ভালোবেসে জড়িয়ে ধরার রয়েছে অনেক উপকারিতা। এতে যেমন নিরাপদ অনুভূত হয়, একইসঙ্গে বাড়ে বিশ্বাস ও আস্থা। জড়িয়ে ধরলে বৃদ্ধি পায় মানসিক শান্তি; কমে অস্থিরতা। ভালোবাসার চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ হলো জড়িয়ে ধরা।
অর্থ চোখ বুজেই সুন্দর ও তার আকর্ষনীয় কন্ঠে একটা গানের দু লাইন গেয়ে উঠলো,
~♪`তোমার চোখে আকাশ আমার, চাঁদ উজাড় পূর্ণিমা
ভেতর থেকে বলছে হৃদয় তুমি আমার প্রিয়তমা।~`♪।
প্রাহি অবাক হয়ে হা করে তাকিয়ে আছে অর্থ’র মুখের দিকে।এই লোকটা এতো চমৎকার গান গায় । অথচ কে বলবে এই গম্ভীর লোকটার গানের গলা এতো সুন্দর।প্রাহি বলে,
-” এতো সুন্দর গান করেন আপনি?”
অর্থ হাসলো।প্রাহি আবারও বলে,
-” আবার একটু গাইবেন?”
অর্থ মুচঁকি হেসে বলে,
-” আজ আর না।আবার অন্য একদিন গেয়ে শোনাবো।”
প্রাহি মুখ ফুলালো।তা দেখে অর্থ হাসলো।প্রাহিকে চমকে দিয়ে অর্থ প্রাহির কামিজের উপর দিয়েই ওর পেটে আলতো করে হাত রাখলো।তারপর ধীর কন্ঠে বলে,
-” পেটে ব্যাথা আছে আর?”
প্রাহি কি বলবে?অর্থ’র ছোঁয়ায় ওর ভীতর শুদ্ধ কাঁপছে।প্রাহি মাথা দুলিয়ে না জানালো।অর্থ আবার বলে,
-” খেয়েছিলে রাতে?”
প্রাহি আবার মাথা দুলালো।অর্থ দাঁত দিয়ে ঠোঁট চেপে ধরলো।তারপর হুট করে প্রাহিকে কোলে তুলে নিলো।বললো,
-” অনেক রাত হয়েছে এখন ঘুমাবে চলো।”
প্রাহিও আর কিছু বললো না।অর্থ’র বুকে মাথা ঠেকিয়ে চোখ বুজে রইলো।প্রিয় মানুষটার হৃদস্পন্দন গুনতে লাগলো।অদ্ভুত সুন্দর ধ্বনি এটা। শুনতেই মন চায় শুধু।
#চলবে_______
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন।কেমন হয়েছে জাবা
#প্রেম_এসেছিলো_নীরবে(১৯)
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
বেশ কয়েকদিন কেটে গেছে এরমাজে।আজ সবাই সেন্টমার্টিন যাওয়ার জন্যে সব গোছাচ্ছে।কিন্তু প্রাহি মুখ ফুলিয়ে বসে আছে।কারন কয়েকদিন যাবত সে ভালোভাবে এঞ্জয় করতে পারছে না।কারন একটাই অর্থ।অর্থ ওকে করাকরিভাবে জানিয়ে দিয়েছে।বিয়ের আগে যে কয়দিন আছে সেই কয়দিন ওকে ধুমসে পড়ালেখা করতে হবে।নাহলে ওকে ফেলেই বাকিরা চলে যাবে।অর্থ’র এই অত্যাচারের কারনে প্রাহি বেশ কিছুদিন যাবত পড়ালেখার মাজে বুত হয়ে ডুবে আছে।মন না চাইলেও জড়জবরদস্তি করে মনকে বুজিয়ে শুনিয়ে পড়ালেখায় মনোযোগ দিচ্ছে।একদিকে তো অর্থ খারাপ কিছু বলছে না।বিয়ের কারনে বেশ কয়েকদিন সে স্কুলে যাবে না।এতে সে পিছিয়ে যাবে।তাই আগে থেকেই পড়ালেখা করে এগিয়ে থাকা ভালো।এতে চিন্তা হবে না।
ঠোঁট দিয়ে কলম চেপে ধরে প্রাহি অনেকক্ষন যাবত উচ্চতরগনিত বইয়ের একটা অংক সল্ভ করার চেষ্টা করছে কিন্তু কিছুতেই সে পারছে না।মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে ওর।বেশ কয়েকবার গাইড ও ফলো করেছে তাও কিছু বুজতে পারছে না।অবশেষে না পেরে বিরক্ত হয়ে বই খাতা নিয়ে সে চললো হেমন্ত’র কাছে।হেমন্ত’র রুমের সামনে গিয়ে দুবার টোকা দিতেই হেমন্ত আসতে বললো ওকে।প্রাহি গিয়ে দেখে হেমন্ত’র প্যাকিং শেষ।সে আপাততো ছোট খাটো জিনিসগুলো গুছাচ্ছে।প্রাহিকে দেখে হাসলো হেমন্ত।বললো,
-” কিরে বোন?কিছু লাগবে?এমন করে মুখটা লটকিয়ে আছিস কেন?”
প্রাহি মুখ ফুলিয়ে জবাব দেয়,
-” কি আর করবো?তোমার খারুস ভাই আমাকে গাদা গাদা পড়া দিয়ে তা দিয়ে চাপা মেরে চ্যাপ্টা বানিয়ে দিচ্ছে।সেইগুলো থেকেই নিজেকে উদ্ধার করার চেষ্টা করছি।”
হেমন্ত প্রাহির এমন বাচ্চামো কথায় হু হা করে হেসে দিলো।হেমন্তকে হাসতে দেখে প্রাহি বিরক্ত হয়ে বলে,
-” ডোন্ট লাফ ভাইয়া।এখন আমাকে এই অংকটা বুজিয়ে দেও তো।এটা আমি কিছুতেই বুজতে পারছি না।”
হেমন্ত মুচঁকি হেসে বলে,
-” আয় এখানে বুজিয়ে দিচ্ছি।”
প্রাহি গিয়ে বই খাতা নিয়ে টেবিলে বসে পড়লো।হেমন্ত ওকে সুন্দরভাবে সবটা বুজিয়ে দিলো।প্রাহি খুশি হয়ে বলে,
-” বাহ! তুমি তো অনেক সুন্দর করে অংকটা সল্ভ করে দিলে ভাইয়া।”
হেমন্ত ভাব নিয়ে বলে,
-” এমনি এমনি তো আর বিদেশ থেকে ইঞ্জিয়ারিং কমপ্লিট করে আসিনি।”
তারপর প্রাহির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,
-” এখন আর যাস না নিজের রুমে।এখানে থাক।আমি তোকে আরো কয়েকটা ম্যাথ বুজিয়ে দিবো নেহ। আপাততো এইগুলা প্রেকটিস কর।”
-” আচ্ছা!”
হেমন্ত রুমের ভীতরে নানান কাজ করার ফাকে ফাকে প্রাহিকেও পড়া বুজিয়ে দিচ্ছে।প্রাহিও বেশ মনোযোগ সহকারে পড়ছে।এইভাবে চললো বেশ কিছুক্ষন।এইবার হেমন্ত প্রাহির কোন সায়াশব্দ না পেয়ে তাকিয়ে দেখে প্রাহি টেবিলে মাথা রেখেই ঘুমিয়ে পরেছে।হেমন্ত হাসলো।এগিয়ে গিয়ে চুমু খেলো প্রাহির চুলে।বোনটা তার জীবনে অনেক সংগ্রাম করেছে।অবশেষে কঠোর পরিশ্রমে সে তার কলিজার টুকরো বোনটাকে খুজে পেয়েছে।হিয়া আর প্রাহি ওর চাঁদের টুকরো দুটো।হেমন্ত ওর বোন দুটোকে অনেক ভালোবাসে।ও চায় পৃথিবীর সমস্ত সুখ যেন ওর বোন দুটো পায়।এই দোয়াই করে ও।বোন দুটোকে পার্ফেক্ট মানুষদের হাতে তুলে দিতে পেরে নিজের জীবনটাকে ধন্য মনে করে সে।ওর আর কোন চিন্তা নেই। সেই মানুষ দুটোকে হেমন্ত চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করে।কারন তারাও ওর ভাই।নিজের ভাইদের কিভাবে অবিশ্বাস করবে যে,তারা ওর বোনদের কষ্ট দিবে।এর মাজে রুমের দরজা খোলার আওয়াজ পাওয়া গেলো।হেমন্ত তাকিয়ে দেখে অর্থ এসেছে।অর্থ এসেই টেবিলের উপর ঘুমিয়ে পড়া প্রাহিকে দেখেই ভ্রু-কুচকে বলে,
-” মহারানি এখানে এসে ঘুমাচ্ছে।আর এদিকে আমি উনাকে খুজে খুজে হয়রান।কি যে হবে ওর।”
হেমন্ত হেসে দিয়ে বলে,
-” আরে নাহ ভাইয়া।মাত্রই ঘুমিয়েছে।এতোক্ষন আমার কাছেই পড়ছিলো।হাইয়ার ম্যাথ এর কিছু ম্যাথ বুজতে পারছিলো না তাই জন্যেই আমার কাছে এসেছিলো।”
অর্থ চিন্তিত হয়ে বললো,
-” খেয়েও ঘুমোলো না।এখন কি আর ঘুম থেকে উঠবে ও।”
হেমন্ত প্রাহির বই খাতা গুছিয়ে দিতে দিতে বলে,
-” থাক ভাইয়া আর জাগিও না।ঘুমাক।”
অর্থ ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো ঘুমন্ত প্রাহির দিকে।কিছুক্ষন থম মেরে তাকিয়ে রইলো ঘুমন্ত প্রাহির মুখশ্রীর দিকে।এরপর হুট করে হেমন্তকে জড়িয়ে ধরলো নিজের সাথে। হেমন্ত অবাক হয়ে গেলো।হঠাৎ কি হলো অর্থ।হেমন্ত অবাক কন্ঠেই বলে,
-” কি হলো ভাই তোমার হঠাৎ?এভ্রিথিং অলরাইট নাহ?”
অর্থ ধীর কন্ঠে বলে,
-” তুই যদি প্রাহিকে আমার জীবনে এনে যে আমার জীবনটা কতোটা রঙিন করে তুলেছিস তা তোকে বলে বুজাতে পারবো না।আমি তোর কাছে চিরকৃতজ্ঞ ভাই।এই ঋন আমি জীবন দিয়েও শোধ করতে পারবো না।প্রাহি যে আমার কাছে কি তা আমি ভাষায় কাউকে প্রকাশ করে বলতে পারবো না।এই পিচ্চিটা আমার একটুখানি চোখের আড়াল হলে আমার শ্বাস আটকে যায়।তুই আমাকে আমার জীবনের কিভাবে হাসিখুশি বাচেঁ তা শিখিয়ে দিয়েছিস।প্রাহিকে আমার জীবনে এনে।থ্যাংক ইউ ভাই।”
হেমন্ত নিজেকে অর্থ’র কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিলো।হালকা হেসে বলে,
-” হিয়া যেমন আমার বোন।প্রাহিও আমার বোন। ওরা দুজন আমার এক একটা কলিজা ভাই।আর আমার বোনদের ক্ষতি হোক এমন কিছু আমি কখনই চাইবো না।তাই তো চোখ বুজে আমার বোন দুটোকে তোমাকে আর আরাফ ভাইয়াকে দিয়ে দিলাম।কারন আমি জানি তোমরা দুজন নিজের জীবনকে বাজি রেখে হলেও প্রাহি আর হিয়াকে নিজের সবটা দিয়ে আগলে রাখবে।ভাই হিসেবে আমার আর কি চাই ভাইয়া।আমার একটাই চাওয়া শুধু আমার বোন দুটো যেন সারাজীবন হাসিখুশি থাকে।”
অর্থ বললো,
-” হিয়া আমার আপন বোন হয়েও আমার থেকে বেশি তুই ওকে খেয়াল রেখেছিস।আমি ওর আপন ভাই হয়েও সেটুকু করতে পারিনি।তুই আমাকে সবদিক থেকে ঋনি করে দিচ্ছিস রে ভাই।”
হেমন্ত হালকা রাগ দেখিয়ে বলে,
-” এটা কেমন ভাই।আর মায়ের গর্ভ থেকে জন্ম হয়নি বলে আমি কি আপন ভাই না তোমাদের?
চাচাতো ভাই বলেই কি আমাকে দেখো তোমরা?আমি তো তোমাদের আমার আপন ভাই বোন মানি।”
অর্থ হালকা হেসে বলে,
-” আরে আমি সেটা বলিনি।কেন উলটা টানছিস?আমি জানি তুই শুধু শুধু এগুলো অভিনয় করছিস!”
হেমন্ত হেসে দিলো।হাসাহাসির মাজেই দুই ভাইয়ের নজর যায় দরজার দিকে দেখে হিয়া মুখ ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।হেমন্ত আর অর্থ একে অপরের দিকে তাকিয়ে হেসে দিলো।হিয়া বাচ্চাদের মতো করে বলে,
-” বাহ! আমি বিয়ের আগেই পর হয়ে গেলাম।এখনি আমাকে এতোটা অবহেলা।”
হেমন্ত দুষ্টুমি করে বলে,
-” তুই তো আগে থেকেই আমাদের কিছু লাগিস না।তোকে তো টুকিয়ে এনেছে বড় মা।তাই না ভাইয়া।”
হিয়া ‘ ভাইয়া!’ বলে ভ্যা ভ্যা করে ন্যাকাকান্না করে দিলো।বলে,
-” এএ এএ এএ আমাকে কেউ ভালোবাসে না।আমি এখুনি আব্বু আর ছোটবাবাকে বিচার দিবো।”
অর্থ আর হেমন্ত এইবার জোড়ে হেসে দিলো।দুই ভাই হাত বাড়িয়ে দিতেই হিয়া চওড়া একটা হাসি দিয়ে দৌড়ে গিয়ে ওর ভাইদের জড়িয়ে ধরলো।
হেমন্ত হিয়ার চুল টেনে দিয়ে বলে,
-” এতো নাটক কোথায় থেকে শিখেছিস হ্যা?নটাংকি কোথাকার।”
হিয়া নিজের চুল ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,
-” তুই চুপ থাক।নাহলে তোকে এখন কামড়ে দিবো।”
হেমন্ত বললো,
-” দেখেছো ভাইয়া।কি রাক্ষসী এটা।আরাফ ভাইয়ার কপালে দুঃখ আছে বহুত এই রাক্ষসীকে বিয়ে করে।”
-” উফ! বড় ভাইয়া এটাকে কিছু বলবা?”
অর্থ মিথ্যে রাগ দেখিয়ে বলে,
-” হেমন্ত মার খাবি।আমার বোনটাকে রাগাচ্ছিস কেন?”
এতো হাসাহাসির মাজে প্রাহির ঘুম ভেঙে গিয়েছে।ঘুম থেকে জেগেই প্রাহি দেখে ভাইবোনের মধুর খুনশুটিগুলো। চোখ জোড়া ছলছল করছে প্রাহির।আজ ওর বাবা মা বেচেঁ থাকলে ওরও তো এমন একটা পরিবার হতো।
এদিকে অর্থ,হেমন্ত আর হিয়ার কথা বলতে বলতে প্রাহির দিক চোখ যায়।প্রাহিকে ঘুম থেকে জেগে উঠতে দেখে ভ্রু-কুচকে ফেলে অর্থ।এই মেয়ে আবার কখন উঠলো।হেমন্ত বলে,
-“কিরে ফকিন্নি। তুই কখন উঠলি?”
প্রাহি জোড়পূর্বক হাসলো।নিজের কষ্টগুলো ও কাউকে দেখাতে চায়না।তাই বাচ্চাদের মতো করে বলে,
-” যখন তোমরা গলায় গলায় ভাব নিয়ে একে-অপরের সাথে ঝুলছিলে।আর এইদিকে আমি তো হেলাফেলা হচ্ছিলাম।”
সবাই হেসে দিলো।অর্থও ঠোঁট টিপে হাসছে।তারপর সে আলতো করে একটা হাত বাড়িয়ে দিলো প্রাহির দিকে।প্রাহিও লাজুক হেসে সে হাতে হাত রাখলো।
তারপর চারজন একটা টাইট হাগ করলো।আর ওদের মন ভরে দেখছেন, হেনা,হিয়ান্ত,রায়হানা আর হিয়াজ।ছেলেমেয়েদের এইভাবে দেখে তাদের প্রানটা যেন জুরিয়ে গেলো।
#চলবে______

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here