প্রেম এসেছিলো নীরবে -Part 5+6

0
357

#প্রেম_এসেছিলো_নীরবে (বোনাস পর্ব+5+6)
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
আঁধার কালো রাত পেরিয়ে সূর্য মামা জেগে উঠেছে তার দীপ্তমান আলো দ্বারা আলোকিত করেছে এই ধরনী।প্রাহি ফজরের নামাজ পরে তার মিষ্টি সুরে কোরআন শরিফ তিলাওয়াত করছে।এটা তার নিত্যদিনের অভ্যাস।আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিনের দরবারে সে সবার ভালোর জন্যে দো-আ করে।কেন যেন ওর ভালো লাগে।নিজের জন্যে দো-আ না চেয়ে অন্যের জন্যে প্রানভরে দো- আ চাইতে।প্রাহি ভাবে ও যেভাবে অন্যের জন্যে আল্লাহ্’র দরবারে দো-আ চাইছে।ঠিক তার মতোই অন্য কেউ হয়তো ওর জন্যেও দো-আ চাইছে আল্লাহ্’র কাছে।কোরঅান তিলাওয়াত শেষ হতেই প্রাহি নিজের বিছানা গুছিয়ে নিলো। তারপর নিজের চুলগুলো ভালোভাবে আঁচড়ে নিজে যাওয়ার জন্যে উদ্যত হলো।আজ প্রাহি সবার জন্যে সকালের জন্যে নাস্তা বানাবে এটা পন করেছে।রান্নাঘরে গিয়ে দেখে সেলিমা খালা মাত্র উঠেই রান্না ঘর ঝাড়ু দিচ্ছেন।প্রাহিকে দেখেই তিনি হাসলেন।সেলিমা খালা এই বাড়িতে কাজ করেন অনেক বছর হলো।প্রাহি তিনি ছোট থেকেই খুব স্নেহ করেন।আর প্রাহিও তাকে খুব ভালোবাসে।প্রাহিকে উদ্দেশ্য করে সেলিমা বললেন,
-” কিগো ছোট বুড়ি।তুই এতো সকালে এইহানে কি করোছ?”
প্রাহি মুচকি হেসে বললো,
-” আজ আমি সবার জন্যে নাস্তা বানাবো খালা।”
খালা অবাক হলেন প্রাহির কথা শুনে।তাই বললেন,
-” ধুর হো হতচ্ছারি।তোর শইল ভালা না আমারে বড় আফা আর ছোট আফায় কইছে।তুই এতো সকালে উঠছোস হেইয়ার লাইজ্ঞাই তোরে মারতে মন চাইতাছে।আবার তুই এহন আইছোস রান্দোন চড়াইতে।যা গিয়া বিশ্রাম নে গা।”
প্রাহি মুখ কালো করে বলে,
-” এমন করছো কেন খালা?আমি ঠিক আছি।মেডিসিন খেয়ে আমার শরীরটা অনেকটাই ভালো।আমার কিছু হবে না।তুমি শুধু বলো কে কি পছন্দ করে সকালে খেতে আমি তাই বানাবো।”
সেলিমা খালা তাও রাজি হলেন না।প্রাহি অনেক জোড়াজুড়ি করায় অবশেষে তিনি হার মানলেন।কারন মেয়েটা আর একটু হলে কেঁদে দিতো।
প্রাহি খুশি মনে একে একে সবার জন্যে নাস্তা বানাতে লাগলো।প্রথমে রুটি আর পরোটা বানালো।তারপর আলু,গাজর,পেপে,বাধা কপি,ফুলকপি,সিম দিয়ে ভাজি বানালো। তারপর খিচুরি চুলোয় বসিয়ে আরেক চুলায় নানা পদের ভর্তা করার সব কিছু তৈরি করে নিলো।ভর্তার জন্যে সব কিছু রেডি হতেই।শীলনোড়ায় একে একে সব ভর্তা করে নিলো।সব শেষে ডিম ভেজে।চুলোয় চায়ের পানি বসিয়ে রাখলো যাতে সবাই আসতেই দ্রুত সবাইকে চা দিতে পারে।এরপর একে একে সব রকম খাবার টেবিলে পরিবেশন করতে লাগলো।সেলিমা খালা কিছুই করেননি।কারন প্রাহি কিছু করতেই দেননি তাকে। প্রাহি যখন ডায়নিং টেবিল সাজাচ্ছে তখন নেমে আসলেন হেনা আর রায়হানা বেগম।তারা এসেই প্রাহিকে বললো,
-” কিরে মা তুই এতো সকালে?”
প্রাহি হালকা হেসে বলে,
-” ও কিছু বা বড় মামুনি আর খালামুনি। আমার সকালে উঠার অভ্যাস।তাই ভাবলাম সেলিমা খালা একটু সাহায্য করি।”
হেনা তাও হালকা শাষনের সুরে বললেন,
-” তোর না শরীর ভালো না?তাহলে তুই এতো সকালে কেন উঠেছিস?”
প্রাহি মুখশ্রীটা ইনোসেন্ট বানিয়ে এককানে হাত দিয়ে মাথাটা হালকা কাত করে বাচ্চাদের মতো করে বললো,
-” সরি খালামুনি!”
হেনা আর রায়হানা বেগম একে অপরের দিকে তাকিয়ে হেসে দিলেন।প্রাহিও হেসে দিলো।হাসতেই হাসতেই ওর নজর যায় সিড়ির দিকে। হেমন্ত,হিয়া,হিয়ান্ত সিকদার,হিয়াজ সিকদার আর অর্থ আসছে সিড়ি বেয়ে।অর্থকে দেখেই শুকনো ঢোক গিললো প্রাহি।কারন অর্থ প্রাহির দিকেই তাকিয়ে আছে তাও অদ্ভুত দৃষ্টিতে।অর্থ তাও প্রাহির দিকে তাকিয়ে আছে।নিচে নেমে আসতেই অর্থ গম্ভীর কন্ঠে বললো,
-” হিয়া যা দাদুকে নিয়ে আয়।”
হিয়া মাথা দুলিয়ে চলে গেলো নুরুল আমিন সিকদারকে আনতে।কিছুক্ষন পর ওরাও এসে পড়লো।তারপর সবাই একসাথে খাবার টেবিলে বসে পড়লো।যখন খাবারের ঢাকনাগুলো সরানো হলো সবাই খুশিতে গদগদ হয়ে গেলো। বিশেষ করে ভুনা খিচুরি এতো এতো পদের ভর্তা দেখে।হেমন্ত প্রায় চেচিয়েই বললো,
-” ওয়াও! ওয়াও! হুয়াট অা প্লেজেন্ট সার্প্রাইজ।এতো এতো ভর্তা তাও সাথে ভুনা খিচুরি।ইয়াম ইয়াম।আজ তো পেট পুরে খাবো আমি। সেলিমা খালা তোমাকে এত্তো এত্তোগুলো থ্যাংক ইউ।”
প্রাহি অনেক খুশি হলো হেমন্তকে এতোটা খুশি হতে দেখে।এদিকে সেলিমা খালা মুখটা কাচুমাচু করে বললো,
-” কিন্তু আইজকা তো আমি কিছুই রান্দি নাই।”
হিয়া ডিম ভাজি মুখে দিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
-” কে করেছে খালা?আম্মু নাকি ছোট মা।”
সেলিমা খালা প্রাহির দিকে তাকিয়ে বললেন,
-” প্রাহি রানছে আইজকা সব কিছু।”
সবাই খাওয়া থামিয়ে এইবার হা করে তাকালো প্রাহির দিকে।সবার এইভাবে তাকানো দেখে প্রাহির গলায় খাবার আটকে গেলো।বেচারির নাক মুখ লাল হয়ে গিয়েছে।আকস্মিক অর্থ দাঁড়িয়ে পড়লো তারপর একগ্লাস পানি নিয়ে প্রাহির অপারপাশ হতেই প্রাহির দিকে বাড়িয়ে দিলো। প্রাহি প্রথমে ভড়কে গিয়ে চোখ নামিয়ে কাশতে কাশতেই পানির গ্লাসটা একটানে শেষ করে ফেললো।
নুরুল আমিন জিজ্ঞেস করলেন,
-” দাদু তুই ঠিক আছিস?”
প্রাহি মাথা নাড়িয়ে বললো,
-” হ্যা দাদু।”
রায়হানা বেগম প্রাহির মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন,
-” আমার ছেলেটার না ভুনা খিচুরি নানান পদের ভর্তা দিয়ে খেতে অনেক ভালোবাসে।কিন্তু কি করবো বল বয়স হয়েছে এখন আর এইসব বাটাবাটি করতে পারিনা।তাই এগুলা রান্না করেও আর খাওয়ানো হয় না।আর মেয়েটা তো একেবারে অলসের উপর ডিগ্রি নিয়ে বসেছে।সে একটা ডিমই ভাজতে পারেনা।”
হিয়া ঠোঁট উলটে বললো,
-“মা।”
রায়হানা বেগম হালকা ধমকে বললেন,
-” কি মা হ্যা?শিখ কিছু হিয়ার থেকে।তোর থেকে কতো ছোট হয়েও সব পারে।”
প্রাহি এইবার তাচ্ছিল্য হেসে বলে,
-” আমিও এসব পারতাম না বড় মামুনি।তোমার মতো যদি আমার মাও বেচে থাকতেন তাহলে আমারও কোনদিন রান্না শিখা হতো না।কিন্তু মামির অত্যাচারে সেই আট বছর বয়স হতেই আস্তে আস্তে সব রান্না শিখে নিয়েছি আমি।তবে এটার জন্যে মামিকে ধন্যবাদ জানাবো আমি।আজ তিনি আমাকে রান্না শিখিয়েছেন বলেই আমি তোমাদের সবাইকে রান্না করে খাওয়াতে পারছি।”
সবার মনটা খারাপ হয়ে গেলো।কারো সারাশব্দ না পেয়ে প্রাহি চোখ তুলে তাকিয়ে দেখলো সবার মন খারাপ হয়ে গেছে।তাই প্রাহি নিজেকে ঠিক করে নিয়ে বললো,
-” আরে আমি কষ্ট করে রান্না করেছি সবাই তাড়াতাড়ি খেয়ে বলো কেমন হয়েছে।”
প্রাহিকে হাসিখুশি দেখে সবার মুখেও হাসি ফুটে উঠলো তারপর সবাই নাস্তা করতে লাগলো।সবার মুখে হাসি লেগে থাকলেও।একজন পুরোটা সময় গম্ভীর হয়ে বসেছিলো।প্রাহির কষ্টে জড়ানো প্রতিটা কথাই যেন তীরের মতো আঘাত করেছে অর্থের বুকে।প্রাহির প্রতিটা কষ্টে কেন তার হৃদয় ব্যাথিত হয় এটাই বুজতে পারছে না অর্থ।কাল সারাটা রাত ছটফট করেছে সে।নিজেকে পাগল পাগল লাগছে অর্থের।
প্রাহির রান্না খেয়ে সবাই প্রসংশায় পঞ্চমুখ।কিন্তু যার জন্যে এই স্পেশাল খাবারটা তৈরি করলো প্রাহি।তার থেকেই কিছু শুনলো না ও।সেলিমা খালা থেকে শুনেছিলো অর্থের পছন্দের খাবারের কথা তারপরেই তো তার জন্যে এসব রান্না করলো।মুহূর্তেই মনটা খারাপ হয়ে গেলো প্রাহির।কিন্তু তাও সবার সামনে হাসি মুখে থাকলো।এইদিকে অর্থ প্রাহির দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষন তারপর সবাইকে বিদায় জানিয়ে সে অফিসের উদ্দেশ্যে চলে গেলো।একে একে হিয়ান্ত আর হিয়াজ ও চলে গেলেন।হিয়া চলে গেলো কলেজে।হেমন্ত যাবে পুলিশ স্টেশনে।বাকিরাও যার যার কাজে চলে গেলো।এদিকে প্রাহি অর্থের মুখ থেকে নিজের বানানো খাবারের প্রসংশা না শুনে মুখ কালো করে রাখলো। লোকটা তো একেবারে চেটেপুটে খেয়ে নিয়েছে সব।কিন্তু তাও কেন একটু সুনাম করলো না প্রাহি।ছোট্ট প্রাহি আর ছোট্ট মনে বিশাল আকারের একটা অভিমান জমালো অর্থকে নিয়ে।কিন্তু আদৌ তার অভিমান কি কখনো অর্থ বুজবে?কি জানি।
#চলবে,,,
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।ভুল হলে ধরিয়ে দিবেন।আপনাদের খুশির জন্যে দিয়ে দিলাম বোনাস পার্ট।এখন সুন্দর সুন্দর মন্তব্য না করলে কাল গল্প দিবো না।আমি রাগ করবো তাহলে#প্রেম_এসেছিলো_নীরবে (৫)
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
রুম অন্ধকার করে ফেইরি লাইট্সগুলো জ্বালিয়ে নিলো প্রাহি।অবশেষে আজ সারাদিন শেষে তার ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি ফুটলো।প্রাহি নিজ ঘর থেকে দৌড়ে গেলো হেমন্তের ঘরের দিকে।হেমন্ত আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের চুল ঠিক করছিলো।প্রাহি গিয়ে তাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে প্রায় একপ্রকার লাফাতে লাফাতে বললো,
-” ধন্যবাদ ভাইয়া।অনেক অনেক ধন্যবাদ।”
হেমন্ত হাসলো।পিছনে ফিরে বোনের মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে বলে,
-” আমার পিচ্চিটার মন খারাপ ছিলো সেটা কি আমি সহ্য কর‍তে পারি?তাই তো তার মুখে এই হাসিটুক দেখার জন্যে ছোট্ট একটা উপহার আনলাম।তাতে যে এই পিচ্চিটা এতো খুশি হবে ভাবতেই পারিনি।”
প্রাহি মুচকি হেসে বলে,
-” তুমি আমার বেস্ট ভাই।”
-” আচ্ছা?”
-” হুম।এখন আমি একটু রুমে যাই হুম।আরেকটু ভালোভাবে ফেইরি লাইট্সগুলো দিয়ে সাজিয়ে নেই।”
হেমন্ত হেসে সম্মত্তি দিলো।প্রাহি আবারও দৌড়ে নিজের রুমে গেলো।বাকি ফেইরি লাইট্সগুলো ভালোভাবে বিছানার চারপাশে লাগিয়ে ক্ষান্ত হলো। প্রাহি পিছনে না ফিরিই হালকা একটু পেছাতে লাগলো।কিন্তু হঠাৎ নিজের পিছনে কারো অস্তিত্ব অনুভব করলো।ভয় পেয়ে পেছনে ফিরতে নিলেই কারো গম্ভীর কন্ঠস্বর,
-” ডোন্ট মুভ!”
এই একটা বাক্যে প্রাহি জমে বরফ হয়ে গেলো।এটা তো অর্থের গলার আওয়াজ।কিন্তু অর্থ ওর রুমে কি করছে?কিন্তু এইবার অর্থ যা করলো এতে যেন প্রাহির নিঃশ্বাস আটকে গেলো।অর্থ প্রাহির পিঠের চুলগুলো হালকা হাতে সরিয়ে দিলো।কিন্তু ওর হাত প্রাহির শরীর স্পর্শ করেনি।তারপর প্রাহির কানের কাছে মুখ এগিয়ে নিলো।এতে অর্থের গরম নিঃশ্বাস প্রাহির কাধে আর কানে এসে বারি খাচ্ছে।এতে প্রাহি সারাশরীর ভূমিকম্পের মতো কেপে উঠলো।অর্থ তার শীতল কন্ঠে বলে,
-” সকালের খাবারের জন্যে এই উইল নট থ্যাংক ইউ।বাট ইট ইজ ফোর ইউ।”
সাথে সাথে অর্থ প্রাহির হাতটা ধরলো।এতে প্রাহির কাপা-কাপি আরেক দফা বেড়ে গেলো।অর্থ প্রাহির হাতে চিকন স্বর্নের একটা ব্রেসলেট পড়িয়ে দিলো।তারপর প্রাহির কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো,
-” ব্রিথ!”
আর এক সেকেন্ড দারালো না অর্থ।দ্রুত পায়ে সেই স্থান ত্যাগ করলো।এইদিকে প্রাহি যে নিঃশ্বাস নিতে ভুলে গিয়েছিলো প্রায় তা অর্থ ওকে নিঃশ্বাস না নিতে বললে ও তো নির্ঘাত মারা যেতো।লোকটা আর একটু হলে ওর জান কবজ করে নিয়ে যেতো।প্রাহি কাঁপতে কাঁপতে বিছানায় গিয়ে ধপাস করে সুয়ে পড়লো।কিছুতেই নিজেকে সামলাতে পারছে না প্রাহি।ও তো চাইছিলো অর্থ শুধু তার খাবারের প্রসংশা করুক।কিন্তু সে যে এমন ভয়ানক একটা কাজ করবে জানা ছিলো না প্রাহির।
…..
শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে অর্থ।ঝর্নার পানিগুলো তার শরীর বেয়ে বেয়ে পরছে।একটু আগে নিজের করা পাগলামিগুলো ভাবছে সে।এমনটা কিভাবে করলো ও?ও তো এমন ছিলো না।তাহলে কালের থেকে ওর কি হলো।মেয়েটা তো একটু খাবারই রান্না করেছে ওর জন্যে।একটা থ্যাংক্স বললেই তো হতো।বাট এতোকিছু করার কি হলো?কেন সেই ব্রেসলেটটা কিনতে গেলো সে।কেন সকালের অফিসে যাওয়ার আগে প্রাহির মলিন মুখটা দেখে ওর সারাটা দিন বিষাদময় কেটেছে।কেন ওই মেয়েটার মুখে এক চিলতে হাসি ফুটানোর জন্যে ওর জন্যে উপহার কিনে আনলো।জানা নেই কিছু অর্থের।শুধু এটুকু জানে সারাটাদিন পর মেয়েটার হাসি মুখটা দেখে ওর ভীষন ভালো লাগছে, ভীষন।সাওয়ার নেওয়া শেষে অর্থ বেরিয়ে আসলো।নিচ থেকে রায়হানা বেগম ডাকছেন সবাইকে খাবারের জন্যে।অর্থ নিজের পোষাক পড়ে নিচে চলে গেলো ডায়নিং এ।অর্থ গিয়ে নিজের চেয়ার টেনে বসে পড়লো।পুরো টেবিলে চোখ বুলিয়ে দেখলো সবাই এসেছে শুধু প্রাহি বাদে।অর্থের ভ্রু-কুচকে এলো।এই মেয়ে খেতে আসলো না কেন? হেমন্ত হালকা রাগি কন্ঠে হিয়া উদ্দেশ্য করে বললো,
-” ডিনারে সবাই আসেনি কেন হিয়া?”
হিয়া আমতা আমতা করে বললো,
-” ভা..ভাইয়া প্রাহির নাকি খেতে ইচ্ছে করছে না।”
অর্থ রাগি চোখে তাকিয়ে বললো,
-” ওর রুমে যা এন্ড টেল হার দ্যাট এক্ষুনি নিচে নামতে। এতো রঙ ঢঙ এই বাড়িতে চলবে না।”
হিয়াজ সিকদার বললেন,
-” অর্থ এটা কেমন ধরনের কথা?”
অর্থ এক চামচ বিরিয়ানি মুখে দিয়ে বললো,
-” নাথিং বাবা।”
হিয়া ভয়ে ভয়ে প্রাহির রুমের দিকে দৌড় দিলো।গিয়ে দেখলো প্রাহি উপুর হয়ে বালিশে মুখ গুজে সুয়ে আছে।হিয়া জলদি করে ডাকলো,
-” এই প্রাহি, প্রাহি। উঠ জলদি উঠ।”
প্রাহি হিয়ার এমন কন্ঠস্বর শুনে ধরফরিয়ে উঠে বসলো।বললো,
-” কি হয়েছে আপু?তুমি এমন করছো কেন?”
হিয়া হাপাতে হাপাতে বলে,
-” জলদি নিচে চল।যমরাজ ক্ষেপেছে।তুই এখন নিচে না গেলে টর্নেডো আসবে।”
প্রাহি বুজতে না পেরে বললো,
-” মানে কি বলছো আপু তুমি?”
হিয়া প্রাহির হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে যেতে বলে,
-” মানে বুজা লাগবে না।তুই এখন নিচে চল।”
হিয়া প্রাহিকে নিয়ে ডায়নিং টেবিলে এসে বসিয়ে দিলো।প্রাহি আড়চোখে অর্থের দিকে তাকিয়ে দেখলো অর্থ তার দিকেই রাগি চোখে তাকিয়ে আছে।প্রাহি ভয় পেয়ে তাড়াতাড়ি চোখ নামিয়ে নিলো।সবাই এবার খেতে শুরু করলো।প্রাহি কোনরকম খেয়ে আর খেতে পারছে না আর অর্থের ভয়ে উঠতেও পারছে না।প্লেটে খাবার নাড়াচাড়া করছে শুধু।আসলে ওর একদম খিদে নেই।খাবে কিভাবে? সন্ধ্যায় কতোগুলো ফুচকা খেলো হেমন্ত নিয়ে এসেছিলো ওর জন্যে।এইবার কি করবে প্রাহি।অর্থ খাওয়ার মাজে বার বার তাকাচ্ছে প্রাহির দিকে।প্রাহিকে অনেক্ষন যাবত খেতে না দেখে রাগে ফুসছে সে।এইবার না পেরে টেবিলে জোড়ে বারি দিয়ে রাগি কন্ঠে বলে,
-” এই মেয়ে এই,হুয়াট্স ইউর প্রোবলেম?খাচ্ছো না কেন তুমি হ্যা?”
প্রাহি এইবার এমন ভয় পেলো যে সাথে সাথে ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো।কাঁদতে কাঁদতেই বলে,
-” আ..আমি আর খে..খেতে পারছি না।”
অর্থ চিৎকার করে বলে,
-” কেন খাবে না?হ্যা?কি সমস্যা?”
প্রাহি এইবার জোড়েসোড়েই কেঁদে উঠলো।অর্থ ধমকে উঠে,
-” স্টপ ক্রায়িং ইউ স্টুপিট।”
রায়হানা বেগম এইবার চেচিয়ে উঠলেন,
-” কি হচ্ছে কি অর্থ এইভাবে চিৎকার চেচামেচি করে মেয়েটাকে ভয় দেখাচ্ছিস কেন?দেখছিস না খেতে পারছে না।তাহলে এইভাবে ধমকানোর মানে কি হ্যা?”
নুরুল আমিন ও অসন্তুষ্ট নাতির এমন কাজে।তিনি বলেন,
-” দাদু ভাই বাচ্চা মেয়ে ও।এইভাবে ধমকাচ্ছো কেন ওকে?না খেতে পারলে খাবে না।এইভাবে ওকে ভয় দেখাচ্ছো কেন?”
হিয়াজ সিকদার বললো,
-” প্রাহি মা যাও তুমি তোমার রুমে চলে যাও।আর খাওয়া লাগবে না।একটু পর আমি রায়হানা কে দিয়ে তোমার জন্যে দুধ পাঠিয়ে দিবো।সেটা কিন্তু অবশ্যই খাবে।নাহলে তোমার বড়বাবা কিন্তু রাগ করবে।”
প্রাহি বাচ্চাদের মতো দুহাতে চোখের জল মুছে নিয়ে ঘাড় কাত করে সম্মতি জানালো।একপলক অর্থের দিকে তাকিয়ে তারপর দৌড়ে চলে গেলো।হিয়া আর হেমন্ত ভয়ে চুপসে আছে অর্থের এমন রাগ দেখে।তাই তারা ভয়ে ভয়ে জলদি জলদি খেতে লাগলো।অর্থ রাগে ফোসফোস করছে।সাহস কতো বড় মেয়েটার সবাই বললো আর ওমনি চলে গেলো।অর্থের কথার কোন দাম নেই।এর শাস্তি পেতে হবে ওকে।অর্থ ওকে খেতে বলেছে ও পুরোটা খাবার খেয়ে তারপর যাবে।কিন্তু মেয়েটা খেলো না।এটুকু পিচ্চি একটা মেয়ে।শরীরে মনে হয় এক কেজি গোস্তও হবে না।এমন চিকন শরীর নিয়ে চলবে কিভাবে ও?অর্থ সবার দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে নিজেও খাবার টেবিল হতে হনহন করে নিজের রুমে চলে গেলো।এদিকে সবাই হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো।
#চলবে,,,
ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।কেমন হয়েছে জানাবেন।
আপনাদের শর্তে জিতার আগেই আমি দিয়ে দিলাম।আমি আবার এতো খারাপ না।এখন আমার মন ভালো করার মতো সুন্দর সুন্দর কমেন্ট করবেন
#প্রেম_এসেছিলো_নীরবে(বোনাস পার্ট)
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
গভীর রাত, আনুমানি ১২ টা বাজে।টেবিল লাইট জ্বালিয়ে বই পড়ছিলো ইশি।হঠাৎ ওর ফোনে কল আসলো।ইশা নাম্বারটা দেখে ভ্রু কুচকালো। এটা আজ নতুন না প্রায় নয়-দশদিন যাবত ওর ফোনে এই নাম্বার থেকে কল আসছে।ও ফোন রিসিভ করলে লোকটা কিসব আবোলতাবোল বকে।এতো করে ও জিজ্ঞেস করে যে আপনি কে?কিন্তু লোকটা তার পরিচয়ই দেয় না।বিরক্তি নিয়ে ফোনটা রিসিভ করলো ইশি।ফোন রিসিভ না করলে লোকটা অনাবরত কল করতেই থাকে তাহলে।ইশি ফোন দিয়ে আস্তে করে বলে,
-” আস..আসসালামু আলাইকুম।”
ফোনের অপাশের ব্যাক্তি নরম সুরে বললো,
-“ওয়া আলাইকুমুস সালাম।কেমন আছো?”
ইশি শুকনো ঢোক গিললো।মেয়েটা প্রচন্ড ভীতু।কাপা কন্ঠে ইশি বলে,
-” ভা..ভালো।”
-” আমি কেমন আছেন জিজ্ঞেস করবে না?”
ইশির চোখে পানি চলে এসেছে।এই লোকটাকে ও অনেক ভয় পায়।অজানা কারনেই ভয় পায়।ধরা গলায় বললো,
-” আপ..আপনি কেমন আ..আছেন?”
ওপাশের ব্যাক্তিটি দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।ইশি যে আর একটু হলেই কেঁদে দিবে। তা সে ভালো করেই জানে।সে বললো,
-” তোমার সাথে কথা বলার সময় ভালো ছিলাম।কিন্তু এইযে তুমি কান্না করছো এটার জন্যে এখন আমি ভালো নেই।”
ইশি কান থেকে ফোন সরিয়ে অবাক হয়ে কিছুক্ষনের ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকলো।এই লোকটা কিভাবে বুজলো যে ও কান্না করছে?ইশি আবারও ফোনটা কানে লাগিয়ে বললো,
-” আ..আমি কান্না ক..করছি না তো!”
-” আমি সেটা তোমার থেকেও ভালো জানি। বাদ দেও এখন এতো রাত অব্দি আর পড়া লাগবে না।বই খাতা গুছিয়ে সুন্দর মতো বিছানার পাশে রাখা দুধ টুকু খেয়ে ঘুমিয়ে পরো।”
সাথে সাথে ফোনটা কেটে দিলো।ইশিও একটা লম্বা শ্বাস টেনে নিলো। এতোক্ষন যেন শ্বাস্টা গলায় এসে আটকে ছিলো।ইশি আর পড়লো না।লোকটার কথা মতো চুপচাপ দুধটুকু খেয়ে ঘুমিয়ে পরলো।
..
সুয়ে সুয়ে নিজের ফোনে ইশির পিক দেখছে হেমন্ত।এতোক্ষন ইশির সাথে হেমন্তই কথা বলছিলো।মেয়েটা এতোটা নরম মনের কেন ভেবে পায়না হেমন্ত।তাইতো প্রোপোজ করতে ভয় পায় সে।যদি ইশি আর কোনদিন ওর সামনে না আসে?তাহলে কিভাবে থাকবে ও?নাহ! কোনদিন পারবে না এইভাবে থাকতে হেমন্ত।শুধু পরিক্ষাটা শেষ হওয়ার আশায় আছে হেমন্ত।ইশির পরিক্ষা শেষ হলেই ইশির বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাবে সে।আপাততো বাগদান করে রাখবে।পরে অর্থের বিয়ে হলেই ও বিয়ে করে নিবে ইশিকে।ভাবনা শেষে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো হেমন্ত।তারপর ঘুমোতে চলে গেলো।
——
ব্যালকনির ইজি চেয়ারে বসে কফি পান করছে অর্থ।আজ হেমন্তের সাথে কথা হয়েছে ওর।প্রাহির মা, বাবা’র কেসটা রি-ওপেন করার কথা বলছে ছেলেটা।তবে এটা তো একটা এক্সিডেন্ট সেটা পুলিশরা বলেছিলো।তাহলে কি সেই কেস আবারও রিওপেন করবে পুলিশ?কাল একবার হেমন্তকে নিয়ে যাবে সে পুলিশ স্টেশন।দেখা যাক কি করা যায়।আর প্রাহির সেফটির জন্যেও নতুন গার্ড্স রাখতে হবে।প্রাহিকে এখানকার নতুন স্কুলে ভর্তি করিয়ে এসেছে আজ অর্থ।হিয়াজ সিকদারই তাকে এই কথা বলেছে।নিউ টেন এ পড়ে এইবার প্রাহি।তাই গাজিপুর থেকে পুরোপুরিভাবে ট্রান্সফার করে ওকে এখানকার একটা ভালো স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিয়ে এসেছে।পরশুদিন থেকে ক্লাস করতে যাবে সে।
কফি শেষে অর্থ দুহাতে মাথা চেপে ধরলো।এই পিচ্চি মেয়েটাকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে অর্থ পাগল হয়ে যাচ্ছো।তাও যেন ভাবনার শেষ নেই।তবুও অর্থের প্রাহিকে ভাবতে ভালোলাগে।হৃদয়ে প্রশান্তি অনুভব করে সে।এটা কেমন অনুভূতি?মাত্র দুটো দিনে একি করলো মেয়েটা তার সাথে?চোখ বন্ধ করলেই মেয়েটার স্নিগ্ধ মুখশ্রীটা ভেসে উঠে।কাজ করতে পারে না সে ঠিকঠাক। ঘুম আসে না তার এই মেয়েটার জন্যে।মেয়েটা কাছে না থাকলে একটা গুমোট অনুভূতি তাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে রাখে।কেন এমন হচ্ছে?নাহ, অর্থ কাল ওর বেষ্টফ্রেন্ডের সাথেও একবার দেখা করবে।ছেলেটার কাছে অর্থের সমস্ত অস্থিরতার কারন খুজে পায় সে।অর্থের সব রকম খারাপ পরিস্থিতিতে ওর এই বন্ধুটাই ওর সঙ্গ দেয়।তাই তো চোখ বুজে নিজের কলিজার বোনটাকে এমন একজন বন্ধুর কাছে সপে দিয়েছে সে।হিয়াকে ওর সাথে বিয়ে দিলে অর্থের কোন চিন্তাই থাকবে না।কারন ও জানে হিয়াকে ঠিক ওর মতো করেই সেই ছেলেটা আগলে রাখবে।
অর্থ আকাশের দিকে তাকালো।অর্ধচন্দ্র উঠেছে আজ।সুন্দর লাগছে দেখতে।অসংখ্য তারার মেলা আকাশে।অর্থ পন করে নিলো আজ চন্দ্রবিলাশ করেই একটা নির্ঘুম রাত কাটিয়ে দিবে সে।
#চলবে,,,,,
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।বোনাস পার্ট চেয়েছিলেন।দিয়ে দিলাম।বাট এর থেকে বড় দেওয়া আজ সম্ভব না।
#প্রেম_এসেছিলো_নীরবে(৬)
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
~`তোমাকে খুজে পাই ওই নীল আকাশে
পাইযে খুজে ওই মিষ্টি বাতাসে(২)
♪তোমায় ভালোবাসি, আমি ভালোবাসি
পেতে চাই আরো কাছে, আরো কাছে।
♪খুজে খুজে দুচোখ বুজে পাই তোমায় আরো কাছে,,
একি ডোরে বাধা দুজন, থাকবো সারা জনম ধরে। `~
সকাল সকালে বর্ষার এই সিক্ত শ্রাবন ধারায় নিজেকে প্রকৃতির মাজে বিলিয়ে দিয়ে তার মিষ্টি কন্ঠে প্রেমের গান গেয়ে চলেছে প্রাহি।কেন যেন তার আজ ভালো লাগছে।কাল রাত থেকেই তো বৃষ্টি শুরু হয়েছিলো।কাল রাত থেকেই মনটা শুধু যেন কেমন করছিলো বৃষ্টির ফোটাগুলো নিজের গায়ে মাখিয়ে শরীরটাকে সিক্ত করার জন্যে।তাই তো সকাল হতেই ছুটে এসেছে সে। গার্ডেনের বাম দিকে বিশাল বড় একটা আম গাছ, সেই গাছের সাথে সুন্দর করে দড়ি দিয়ে দোলকা বানিয়ে টানিয়ে রাখা হয়েছে।প্রাহি দোলনায় দোল খাচ্ছে আর মনের সুখে গান গাচ্ছে।আজ কতোদিন পর বৃষ্টির ছোয়া পেলো ও।মামির কাছে থাকতে পারতো না সে ভিজতে।কারন যদি বৃষ্টিতে ভিজে ওর শরীর খারাপ করে তাহলে ঘরের কাজ কে করবে?ওই লোকগুলো এতো এতো অত্যাচার করেছে ওর উপর।তাও কেন যেন ওই লোকগুলোর জন্যে মায়া হয় প্রাহির।মনটা যে মেয়েটার বড্ড নরম।হঠাৎ জোরো হাওয়ায় একটা জবাফুল তার কোলে এসে পরলো। জবাফুল গাছটা ঠিক আমটার সাথে ঘেসে লাগানো।প্রাহি ফুলটা হাতে নিয়ে সুন্দর করে কানের পিছে গুজে দিলো।তারপর চুলগুলো আলতো হাতে একসাইডে নিয়ে রাখলো।জামাটার বড় গলা হওয়ায় পিঠ অনেকখানি দৃশ্যমান সেখানে বাতাসের ঝাপ্টা এসে লাগাতে চোখ বন্ধ করে কেঁপে উঠে প্রাহি।চোখ খুলে অন্যপাশে তাকাতেই দেখতে পায় একজোড়া তৃষ্ণার্ত চোখ। যা তার দিকেই তাকিয়ে আছে।অর্থের এমন চাহনী সহ্য হচ্ছে না প্রাহির।লোকটা ভয়ংকরভাবে তাকায়।প্রাহির হৃদয় শুদ্ধ ভেবে উঠে লোকটার চাহনী দেখলে।এইযে এখনো কিভাবে যেন তাকিয়ে আছে।ওই চোখের দিকে প্রাহির তাকাতে ইচ্ছে করে।মোহময় ওই চোখজোড়ার ভাষা ওর পড়তে ইচ্ছে করে।কিন্তু তা যে ওর পক্ষে সম্ভব না।লোকটার মারাত্মক চাহনী দেখেই মনে হয় এই বুজি সে প্রাহিকে পুরোপুরি গ্রাস করে নিলো।প্রাহি আঁড়চোখে তাকালো আবারও অর্থের ব্যালকনির দিকে।লোকটা এখনো তাকিয়ে আছে ওর দিকে।ক্ষনে ক্ষনে কফির মগে এমনভাবে ঠোঁট ছোয়াচ্ছে।মনে হচ্ছে, মনে হচ্ছে।ইসস,আর ভাবলো না প্রাহি। ওর ছোট্ট মাথায় কিসব উলটাপালটা চিন্তাভাবনা আসে।নিজের গালেই নিজের কষিয়ে চড় মারতে ইচ্ছে করছে।লজ্জায় গাল দুটো লাল হয়ে উঠেছে।হঠাৎ অর্থের আওয়াজে ভুমিকম্পের মতো কেঁপে উঠে প্রাহি,
-” এই সকাল বেলা এইভাবে বৃষ্টির ভিজতে এসেছো কেন?শরীর যে অসুস্থ্য হবে সেটা জানো না?জ্বর আসলে তোমার রুমের ব্যালকনি থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিবো।”
এমন থ্রেড শুনে প্রাহি আর নিজের মধ্যে নেই।পারলে এখানেই কাঁপতে কাঁপতে মরে যায়।প্রাহি তাড়াতাড়ি এউ জায়গা থেকে চলে যেতে নিলেই অর্থের রাগি আওয়াজ,
-” ডিড আই টেল ইউ টু গো?”
প্রাহি যেন এইবার কেঁদেই দিবো।কাঁদো কাঁদো গলায় বলে,
-” আ..আমার ঠা..ঠান্ডা লা..লাগছে।”
অর্থ দাঁতেদাঁত চিপে বলে,
-” এত্তোখন লাগছিলো না?যেই আমি এসেছি আর বলছো ঠান্ডা লাগছে।”
প্রাহি ঠোঁট ভেঙে কান্না আসছে।অর্থ এইবার চেঁচিয়ে উঠলো,
-” স্টপ,ডোন্ট লেট আ ড্রোপ অফ ওয়াটার ফল ফ্রোম ইউর আইছ।আদারওয়াইছ,আজ এই আম গাছের সাথেই সারাদিন বেধে রাখবো তোমাকে।”
প্রাহি এইবার মাথা নিচু করে নিজের কান্না সংবরন করার চেষ্টা করছে।অর্থ চোখ বন্ধ করে নিজের রাগ কমানোর চেষ্টা করলো।তারপর দাতেদাত চেপে বলে,
-” জাস্ট লিভ ইমিডিয়েটলি।”
প্রাহি আর একমুহূর্তও অপেক্ষা করলো না।দ্রুত পায়ে বাড়ির দিকে ছুটলো।ও এখন নিজের রুমে গিয়ে একটা হট সাওয়ার নিবে।তারপর কম্বল মুরু দিয়ে শুয়ে থাকবে।সে আর ওই ভয়ানক লোকটার সামনে পরতে চায়না।লোকটা আস্ত বজ্জাত।তাকে দেখকেই খালি ধমকাধমকি করে।কেন করে?কি করেছে সে তার?তার কোন বারা ভাতে সে মই দিয়েছে।উফফ! এখন একটু ঘুমাক সে।মাত্র সারে সাতটা বাজে।আরো একঘন্টা ঘুমানো যাবে।এই বাড়ির সবাই ন’টা বাজে লাঞ্চ করে।প্রাহি তারা একটা লম্বা গোসল দিয়ে কম্বল মুরি দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।

অর্থের বুক কাঁপছে এখনো।মেয়েটাকে ভেজা শরীরে কি যে আবেদনময়ী লাগছিলো বলে বুজানো যাবে না।দোলানায় দোল খেয়ে প্রাহি যখন খিলখিল করে হাসছিলো।সেই হাসির ঝংকার তার বুকের বা পাশে একটা সূক্ষ্ম মিষ্টি ব্যাথা অনুভব করছিলো।লাল জবা ফুলটা ও যখন কানের পিঠে গুজে দিয়ে সবগুলো চুল একপাশে এনে রেখেছিলো।ভয়ংকর সুন্দর লাগছিলো প্রাহিকে।ওঠে ফর্সা খোলা পিঠে নিজের ঠোঁটের আবেশে সিক্ত করে দিতে ইচ্ছে করছিলো।ঠান্ডায় লাল হয়ে যাওয়া ঠোঁটগুলো চুম্বকের ন্যায় টানছিলো তাকে।নিজেকে প্রাহির জন্যে পুরো উন্মাদ লাগছিলো।কিভাবে যে নিজেকে সে সামলিয়েছে একমাত্র সে নিজেই জানে।তবে কি সেই এই পিচ্চি মেয়েটার প্রেমে পরেছে?সত্যিই তা হয়।তাহলে এই ভয়ানক সর্বানাষা অনুভূতিতো তাকে তিলে তিলে মেরে ফেলবে।আর এই পিচ্চি মেয়েটাই কি আদৌ বুজতে পারবে কিছু তার জন্যে?সে বুজবে অর্থের এই নিষিদ্ধ অনুভূতি?নাহ! অর্থ’র আগে ওর বন্ধু আরাফের সাথে কথা বলতে হবে।একমাত্র সেই পারবে অর্থ’র সকল প্রশ্নের উত্তর দিতে।সাথে সাথে সে কল লাগালো আরাফের নাম্বারে।ফোন রিসিভ হতেই দুজন সালাম বিনিময় করে ভালোমন্দ জিজ্ঞেস করলো।তারপর আস্তে আস্তে অর্থ নিজের সকল অনুভূতি, সকল প্রশ্নগুলো বললো আরাফ কে।সবটা শুনে আরাফ বিষ্মিত,থমকিতো।এটা কি শুনছে সে?যে বন্ধু একের পর এক মেয়ে নিয়ে টাইমপাস করেছে।টেম্পোরারি রিলেশন করেছে।কখনো কোন মেয়ের প্রতি তার কোনরূপ কোন অনুভূতিই ছিলো না।আজ সেই বন্ধুই না-কি ষোলো বছরের একটা ছোট্ট পিচ্চির মায়ায় পড়েছে।কিন্তু কিভাবে? আরাফ একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।মানুষ আল্লাহ্ তায়ালার সৃষ্টি।সে তার বান্দাদের সাথে যখন যা মন চায় তাই কর‍তে পারে।আরাফ বললো,
-” দেখ অর্থ যেমনই হোক তুই প্রাহিকে ভালোবেসে ফেলেছিস।ঠিক যেমনটা আমি ভালোবাসি তোর বোনকে।তোর বোনটাও তো কম না আমার থেকে নয় বছরের ছোট। ”
অর্থ গম্ভীর স্বরে বললো,
-” কিন্তু ও আমার থেকে বারো বছরের ছোট।কান্ট ইউ ইমাজিন?”
-” আরে চিল ইয়ার।কতো মানুষ আছে পৃথিবীতে যারা কাপলরা প্রায় টুয়িন্টি ইয়ার্স এর ছোট বড়।”
অর্থ হতাশ নিশ্বাস ত্যাগ করে বলে,
-” আম জাস্ট গোয়িং টু বি ম্যাড ইয়ার।”
-” ডোন্ট প্যানিক।এব্রিথিং গোনা বি অলরাইট।”
-“হুম ওকে বাই।”
-” বাই টেক কেয়ার।”
অর্থ নানারকম চিন্তা ভাবনা করতে করতে নিচে নেমে আসলো।আজ আর অফিসে যাবে না।এমনিতেই বৃষ্টি আবার তার চিন্তায় চিন্তায় অস্থির লাগছে।নিচে নামতেই দেখলো সবাই এসেছে শুধু হিয়া আর প্রাহি বাদে।অর্থ ভ্রু-কুচকে বসে পড়লো সোফায়।কিছুক্ষন বাদেই প্রাহি আর হিয়াকে নিচে নামতে দেখলো।প্রাহিকে দেখতেই যেন ওর সকল প্রকার অস্থিরতা যেন নিমিষেই বিলীন হয়ে গেলো।প্রাহি এসেই ডায়নিং টেবিলের চেয়ারে বসে পরলো।তারপর টেবিলে মাথা ঠেকিয়ে রাখলো।মাথাটা ব্যাথায় ছিড়ে যাচ্ছে।হঠাৎ অনেকদিন পর বৃষ্টিতে গোসল করাতেই বোধহয় এমন লাগছে।শরীরটাও ম্যাজ ম্যাজ করছে।হিয়াও চিন্তিত হয়ে কিছুক্ষন পর পর এটা ওটা জিজ্ঞেস করছে।কিন্তু মেয়েটা বারবার বলছে যে ও ঠিক আছে।রায়হানা বেগম সবাইকে খেতে ডাক দিলেই সবাই গিয়ে ডায়নিং এ গিয়ে বসে।প্রাহিকে এইভাবে ঝিমুতে দেখে তিনি জ্ঞিজ্ঞেস করেন,
-” প্রাহি মামুনি তুমি ঠিক আছো?”
প্রাহি জোড়পূর্বক হাসলো। বললো,
-” হু! ঠিক আছি! আসলে রাতে ঘুম হয়নি ভালোভাবে তাই হয়তো।সমস্যা নেই আমি নাস্তা করে গিয়ে আবার একটু ঘুমাবো।”
অর্থ শুধু গম্ভীর হয়ে বসে আছে।আর কিছুক্ষন পর পর প্রাহির দিকে তাকাচ্ছে।প্রাহি বেশি কিছু খেলো না একটা স্যান্ডউইচ এর অর্ধেক খেলো।আর হেনা’র জোড়াজুড়িতে দুধটুকু খেয়ে নিলো।তারপর সবাইকে বললো সে ঘুমাবে তাই উঠে চলে যাওয়া ধরলো নিজের রুমের দিকে।দু তিন কদম বারাতেই মাথা ঘুরে উঠলো কেমন।অর্থ ও খাওয়া থামিয়ে দিয়েছে সেই কখন। প্রাহি সিড়ি বেয়ে উপরে উঠলে নিলে আবারও মাথা ঘুরে উঠলো তার।এইবার আর নিজেকে সামলাতে পারলো না সে।মাথা ঘুরে পরে যেতে নিলেই একজোড়া হাত শক্তপোক্ত ভাবে জড়িয়ে ধরলো।জ্ঞান হারিয়ে ফেললো প্রাহি।অর্থ আর এক সেকেন্ড দেরি না করে দ্রুত প্রাহিকে কোলে করে নিয়ে তার রুমের দিকে ছুটলো।
#চলবে_______

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here