প্রেম এসেছিলো নীরবে -Part 9+10

0
399

#প্রেম_এসেছিলো_নীরবে
(09+10+বোনাস )
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
গাড়িতে জানালার সাথে ঘেসে মুখ ফুলিয়ে বসে আছে প্রাহি।একটু আগেই অর্থ তাকে ধমক দিয়েছে।স্কুল ছুটির শেষে গেটের কাছেই দাঁড়িয়ে ছিলো প্রাহি।অর্থ সেই স্কুলের দারোয়ানকে বলে গিয়েছে স্কুল ছুটি হলেই যেন প্রাহিকে তার সাথে রাখে।অর্থ এসে ওকে নিতে আসবে।কিন্তু প্রাহি তা অমান্য করেছে।আসলে স্কুল ছুটি শেষে রাস্তার অপাশে ফুসকা দেখে প্রাহির খেতে মন চাইছিলো।প্রাহি যেতে নিলেই দারোয়ান ওকে মানা করে দেয়।অর্থ প্রাহিকে কোথাও যেতে মানা করে দিয়েছে।কিছুক্ষন পর অর্থ আসতেই প্রাহি অনেকটা সাহস জুগিয়ে মিনমিন করে অর্থকে ফুসকা খাওয়ার কথা বলতেই অর্থ ওকে না করে দেয়।আবারও একই কথা বলায় রামধমক দিয়ে প্রাহি টানতে টানতে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে বাড়ির দিকে রওনা দিলো।সেই থেকেই প্রাহি মুখ ফুলিয়ে ঠোঁট উলটে বসে আছে। অর্থ গম্ভীর স্বরেই বলে,
-” আজ স্কুলের প্রথম দিন কেমন গিয়েছে?”
প্রাহি কিছুই বললো না।চুপ করে বসে রইলো।অর্থ আবারও একই কথা জিজ্ঞেস করলেও প্রাহি কিছুই বলল না।এইবার অর্থ আবারও ধমকে বলে,
-” হোয়াট্স রোং উইথ ইউ?কিছু জিজ্ঞেস করলে আন্সার দিচ্ছো না কেন?”
প্রাহি এইবার অর্থ’র ধমক খেয়ে কেঁদেই দিলো।দুহাত দিয়ে বাচ্চাদের মতো করে চোখ মুচ্ছে আর কাঁদছে।অর্থ সাথে সাথে গাড়ি ব্রেক কষলো।বললো,
-” হোয়াট দ্যায়ায়া।কি সমস্যা এরকম কান্না করছো কেন?”
প্রাহি কাঁদতে কাঁদতেই বলে,
-” আপনি আমাকে ফুসকা খেতে দিননি। আবার কতোবার ধমন দিয়েছেন।আমি থাকবো না আপনার কাছে।”
প্রথমে প্রাহির কথাগুলো ভ্রু-কুচকে শুনলেও।শেষের কথাগুলো শুনে অর্থ রেগে গেলো।এক ঝটকায় নিজের আর প্রাহির সিটবেল্ট খুলে প্রাহির দুবাহু ধরে।দাতেদাত চিপে বলে,
-” কেন থাকবে না?একশোবার আমার সাথেই থাকবে।সারাজীবন থাকতে হবে।”
প্রাহি ভয়ে একদম বিড়াল ছানার মতো কাচুমাচু করে হয়ে আছে।ভীতু চোখে অর্থ’র দিকে তাকাচ্ছে। অর্থ চোখ বুজে নিজেকে শান্ত করলো।কন্ঠে নম্রতা এনে বলে,
-” ফুসকা খাবে তাই তো?”
প্রাহি অবাক হয়ে তাকালো একটু আগেও লোকটা কি রেগে ছিলো।আর এখন কি সুন্দর করে কথা বলছে।প্রাহি অবাক হয়েই মাথা নাড়ালো।অর্থ বললো,
-” ওকে ফাইন দেন।”
অর্থ আবারও গাড়ি স্টার্ট দিলো।কিছুক্ষন পর গাড়িটা থামতেই অর্থ গাড়ি থেকে নেমে প্রাহিকে গাড়ি থেকে নিচে নামালো।প্রাহি দেখে তারা একটা রেস্টুরেন্টে এসেছে।অর্থ প্রাহির হাত ধরেই রেস্টুরেন্টের ভীতরে নিয়ে গেলো।প্রাহি অবাক চোখে সবকিছু দেখছে।সে আগে কখনই রেস্টুরেন্টে এসেনি।আসবে কিভাবে?ও দুবেলা খেতে পারতো এটাই তো অনেক।অর্থ প্রাহিকে নিয়ে কোনার একটা টেবিলে বসলো।অর্থকে দেখেই ম্যানেজার দৌড়ে আসলো।বললো,
-” আসসালামু আলাইকুম স্যার।ভালো আছেন?”
অর্থ ভ্রু-কুচকে বললো,
-” ওয়া আলাইকুমুস সালাম! আলহামদুলিল্লাহ ভালো।আপনি কেমন আছেন?আর ইসহাব কোথায়?”
-” জ্বি আমিও ভালো আছি।ইসহাব স্যার দোতলায় আছে।আমি এখনি ডেকে দিচ্ছি। আপনি ওর্ডার দিন।”
কথাগুলো বলেই একটা ওয়েটারকে অর্থদের অর্ডার নিতে বলে তিনি চলে গেলেন।ওয়েটার আসতেই অর্থ নিজের জন্যে একটা ব্লাক কফি আর প্রাহির জন্যে স্পেশালভাবে ফুসকা অর্ডার দিলো।ওয়েটার চলে যেতেই কিছুক্ষন পরেই হাসিমুখে ইসহাব আসলো।ইসহাবকে দেখেই অর্থ উঠে তার সাথে হাগ করে কুশলাদি বিনিময় করলো।প্রাহি অবাক চোখে সবকিছু দেখছে।একেতো সে এইসব রেস্টুরেন্টে প্রথম আসলো আবার সে স্কুল ড্রেস আবার দুই বেনী করে এখানে এসেছে।সবাই কতো স্টাইলিশভাবে এসেছে।প্রাহি আশেপাশে মেয়েদের দেখছে সবাইকে কতো সুন্দর লাগছে।একেকজন জিন্স,টি-শার্ট, লেগিন্স,টপ্স এসব পড়ে এসেছে।আর ও কিনা এসেছে একটা স্কুল ড্রেসে?সবাই কি বলবে?আর এখানে সবাই বড় বড়। ও মনে হয় একাই এখানে এতো পিচ্চি।প্রাহি এতো কিছু ভেবে ভেবে ঠোঁট উল্টে বসে রইলো।অর্থ’র দিকে চোখ যেতেই অর্থ হালকা আওয়াজে বলে,
-” ঠোঁট উল্টাবে না।এখন বলো কি সমস্যা?”
প্রাহি কাঁদো গলায় বলে,
-” সবাই এখানে কতো সুন্দরভাবে এসেছে আর কিনা স্কুল ড্রেস পরে এখানে চলে এসেছি।”
অর্থ ভ্রু-কুচকে বললো,
-” তো?হোয়ার ইজ দ্যা প্রোবলেম?”
প্রাহি মুখ ফুলিয়ে বসে রইলো।ইসহাব এতোক্ষনে মুখলো,
-” অর্থ এইটা কে?তোর কোন কাজিন বোন?”
অর্থ চোখ গরম করে ইসহাবের দিকে তাকালো রাগি গলায় বলে,
-” সাট-আপ।”
প্রাহি ভ্রু-কুচকালো অর্থ’র এইভাবে বলায়।সেতো এক হিসাবে অর্থ’র বোনই তো লাগে তাই না?এখানে এরকম করার কি হলো?প্রাহি আস্তে করে বললো,
-” আমি উনার বোনই হই।হেমন্ত ভাইয়ার খালাতো বোন আমি।তাহলে আমি উনার চাচাতো খালাতো বোন আর উনি আমার ভাইয়া।”
শেষের কথা বলেই প্রাহি মুচকি হাসলো।অর্থ ধরাম করে টেবিলে বারি দিলো।প্রাহি কেঁপে উঠলো ভয়ে।অর্থ রেগে গিয়ে বলে,
-” হোয়াট ডিড ইউ স্যে?আমি তোমার ভাইয়া?আমি তোমার কোন জন্মের ভাইয়া?হ্যা?ইডিয়ট কোথাকার?”
প্রাহি মাথা নিচু করে হাত কচলাতে লাগলো। সে অনেক ভয় পেয়েছে।ইসহাব অর্থ’র কাধে হাত দিয়ে বলে,
-” কুল ডাউন ইয়ার।রাগটা একটু কমা।দেখছিস না ও ভয় পাচ্ছে?”
অর্থ ভ্রু-কুচকে তাকিয়ে রইলো।ইসহাব আরোকিছু কথা বলেই চলে গেলো।কিছুক্ষন পর ওয়েটার ফুসকা আর ব্লাক কফি নিয়ে আসতেই ওরা খাওয়া শুরু করে দিলো।প্রাহি তো মনের সুখে ফুসকা খাচ্ছে।আর মুখ দিয়ে ‘উম উম! ‘ শব্দ করছে।অর্থ নিজের ফোন বের করে প্রাহির আড়ালেই সেসব ভিডিও করে নিলো।খাওয়া দাওয়া শেষে ওরা গিয়ে আবারও গাড়িতে গিয়ে বসলো।তারপর সোজা বাড়িতে এসে পড়লো।অর্থ সোজা নিজের রুমে চলে গেলো।আর বাকিরা প্রাহির আজ স্কুলের প্রথম দিন কেমন গিয়েছে জিজ্ঞেস করলো।প্রাহিও সব বললো সবাইকে। তারপর ও নিজের রুমে চলে গেলো।স্কুল ড্রেস চেঞ্জ করে প্রাহি ওয়াশরুমে গিয়ে শাওয়ার নিয়ে বের হলো।সাদা ফতুয়া সাদা স্কার্ট পড়েছে প্রাহি আজ।এইগুলো কাল ও নিজের খাটের উপর পেয়েছিলো।আরো অনেক জামাকাপড় ছিলো।তবে এটা প্রাহির সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে।তাই আজ এটাই পরেছে।ড্রেসিংটেবিলের সামনে গিয়ে হাতে পায়ে লোশন আর মুখে ক্রিম লাগিয়ে বেলকনিতে চলে গেলো।মাথা দেখে তোয়ালে খুলে চুল ভালোভাবে ঝেড়ে নিয়ে সবচুল একসাইডে করে রাখলো।তোয়ালেটা সুন্দর মতো বেলকনিতে নেড়ে দিয়ে।ভীতরে রুমের ভীতরে যেতে নিলেই পাশের বেলকনিতে নজর যায় প্রাহির।সাথে সাথে চোখ বড়বড় হয়ে যায় ওর।অর্থ পুরো উদম গায়ে। আর ওর দিকেই তাকিয়ে আছে।সাথে সাথে চিৎকার করে চোখ বন্ধ করে রুমের ভীতরে চলে যেতে নিলেই অর্থ’র শীতল কন্ঠস্বরে থেমে গেলো।
-” দারাও যাচ্ছো কেন?”
প্রাহি উলটো দিকেই ঘুরেই জবাব দেয়,
-” এমনি।ভালো লাগছে না।আমি গেলাম।”
-“দারাও।আমার দিকে ঘুরো।ঘুরো বলছি।”
অর্থ’র ধমকে প্রাহি আস্তে আস্তে অর্থ’র দিকে ঘুরে তাকায় কিন্তু চোখের উপর থেকে হাত সরায়নি।অর্থ হালকা হাসলো।বললো,
-” হাত সরাও।সোজা আমার দিকে তাকাবে।”
প্রাহির যেন নিঃশ্বাস আটকে যাবে।জোড়েজোড়ে শ্বাস প্রশ্বাস নিয়ে বললো,
-” না প্লিজ।এমনটা করবো না।”
-” আচ্ছা,তাকিয়েই দেখো।”
প্রাহি হাত সরিয়ে অর্থের দিকে তাকালো না এইবার ঠিক আছে।লোকটা একটা কালো টি-শার্ট পড়েছে সাথে কালো টাউজার।মাত্রই মনে হয় গোসল করেছে সুন্দর লাগছে দেখতে।
অর্থ এইবার ঠোঁট কামড়ে ধরে বলে,
-” ড্রেসটাতে তোমাকে সুন্দর লাগছে।ওড়না ছাড়া তো একেবারে…!”
বলেই থেমে গেলো অর্থ।প্রাহি নিজের দিকে একবার তাকিয়ে লজ্জা পেয়ে ভো-দৌড়।বেচারি এমন লজ্জায় মনে হয় কখনো পড়েনি।অর্থ এইবার হু হা করে হেসে দিলো।সে মনে হয় মন খুলে এমনভাবে কখনো হাসেনি।পিচ্চিটা একেবারে ওকে পাগল বানিয়ে দিচ্ছে।এই সাদা ড্রেসটা ওর অনেক পছন্দ হয়েছিলো তাই তো কাল অফিস থেকে আসার সময় নিয়ে এসেছিলো।তবে ওর পিচ্চিটাকে যে এই ড্রেসটায় এতো সুন্দর লাগবে ভাবতে পারিনি ও।মেয়েটার প্রেমে একেবারে পাগল হয়ে যাচ্ছে।কবে যে পিচ্চিটা বড় হবে কে জানে?উফফ,অপেক্ষা আর ভালো লাগেনা অর্থ’র।মন চাইছে এখনি তুলে এনে মেয়েটাকে বুকের মাজে ডুকিয়ে রাখতে।অর্থ নিজের রুমে গিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো।নিজেকে একটু শান্ত করতে হবে ওর এখন।নাহলে ওত দ্বারা কোন ভুল হয়ে যাবে।
#চলবে____
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন।কেমন হয়েছে জানাবেন।#প্রেম_এসেছিলো_নীরবে (১০)
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
গালে হাত দিয়ে মাথা নিচু করে কাঁদছে প্রাহি।সামনেই অর্থ রক্তচক্ষু নিয়ে তাকিয়ে আছে ওর দিকে।ওদের সামনেই একটা ছেলে জ্ঞান হারিয়ে পরে আছে।ছেলেটাকেও থাপ্পর মেরেছে অর্থ।ছেলেটাকে চিনেনা প্রাহি আজকে দিয়ে দুদিন হলো ছেলেটা ওকে প্রেম নিবেদন করেছে।প্রাহি কাল না করে দেওয়া সত্ত্বেও ছেলেটা আজ আবার এসেছে।আর স্কুলের দারোয়ান সে কথা অর্থকে বলে দিয়েছে।তাই তো অর্থ প্রাহিকে নামিয়ে দিয়ে আর যায়নি।অপেক্ষায় ছিলো কখন ছেলেটা আসবে।স্কুল ছুটির পর প্রাহি বের হতেই ছেলেটা ওকে আবারও প্রোপোজ করে।প্রাহি বারবার মানা করে দেয়।কিন্তু ছেলেটা ওকে বলে যে ওর হাতের গোলাপটা যদি প্রাহি নেয় তাহলে ছেলেটা আর ওকে ডিস্টার্ব করবে না।প্রাহি ভেবেছে একটা ফুলই তো।ফুলটা নিলে যদি ছেলেটা ওকে আর ডিস্টার্ব না করে তাহলে তো অনেক ভালো।তাই তো ফুলটা নিয়েছিলো।আর তখন ছেলেটাকে এক চড়ে অজ্ঞান করে দিয়ে।উলটো ঘুরে আবারও প্রাহিকে রাম থাপ্পড় মারে অর্থ।
অর্থর পুরো মুখশ্রী লাল হয়ে আছে।চোখজোড়া ভয়ানক লাল।পারলে এক্ষুনি সে প্রাহিকে মেরে ফেলে।কিন্তু সেটাও পারছে না।এই মেয়েটার কিছু হলে ও নিজেও মরে যাবে।নিচে পড়ে থাকা ছেলেটাকে ওর অন্যান্য বন্ধুরা ধরাধরি করে নিয়ে গেলো।এদিকে প্রাহি লজ্জায়,ভয়ে, অভীমানে আর মাথাটাই তুললো না।এতোগুলো মানুষের সামনে অর্থ তাকে থাপ্পর মেরেছে।সবাই নিশ্চয়ই হাসছে।অর্থ ভীষন রেগে দাঁত কিরমিরিয়ে বললো,
-” চল,তোকে ছেলেদের থেকে গোলাপফুল নেওয়া ভালোভাবে শিখিয়ে দিবো।”
বলেই প্রাহির হাত ধরে হনহন করে হাটলে লাগলো।কিন্তু অর্থের এমন দানবিয়ভাবে হাটাচলার সাথে কি প্রাহি পেরে উঠে?প্রাহি উষ্ঠা খেয়ে প্রায় পরেই যেতে নিচ্ছিলো।অর্থ তাকে এক টানে কোলে তুলে নিয়ে হাটা দিলো গাড়ির দিকে।এদিকে অন্যরা চোখ বড়বড় করে ওদের দেখছে।
—–
গাড়িতে একেবারে জানালার সাথে লেগে বসে আছে প্রাহি।গালে হাত দিয়ে এখনো ফুপাচ্ছে।পাশেই অর্থ চোখ বুজে সিটে হেলান দিয়ে বসে আছে।কিছুতেই সে নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে পারছে না।তার পিচ্চিটা অন্য একজনের হাত থেকে গোলাপ নিয়েছে দৃশ্যটা যতোবার ওর চোখের সামনে ভেসে উঠে ততোবার ওর মন চাচ্ছে সব কিছু ভেংগে গুরিয়ে দিতে।এদিকে প্রাহিকে এমনভাবে কাঁদতে দেখেও ওর রাগটা আরো তরতর করে বেড়ে যাচ্ছে। অর্থ এইবার সোজা হয়ে বসে প্রাহিকে একটানে নিজের কাছে নিয়ে আসলো।তারপর প্রাহিকে কিছু বুজার সুযোগ না দিয়েই প্রাহি স্কুল ড্রেসটা কাধ থেকে টান দিয়ে নামিয়ে দিয়ে প্রাহির কাধে একটা কামড় দিলো।ওতোটাও জোড়ে না।এদিকে প্রাহির যেন নিশ্বাস আটকে গিয়েছে।শীরদারা দিয়ে যেন একটা ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেলো।হাত পা অবশ হয়ে আসছে ওর।এটা কি করছে অর্থ ওর সাথে?নিজেকে কোনভাবেই সামলাতে পারছে না প্রাহি।অর্থ যখন ঠোঁটজোড়া আরো গভীরভাবে স্পর্শ করলো প্রাহি চোখ খিচে বন্ধ করে অর্থ’র কোট খামছে ধরলো।প্রাহি সহ্য ক্ষমতা শেষ হয়ে যাওয়ায় অর্থ’র বুকে নিজের মাথা এলিয়ে দিলো।প্রায় অনেকক্ষন পর অর্থ ঠোঁটজোড়া সরিয়ে স্কুল ড্রেস ঠিক করে দিলো প্রাহির।তারপর একহাত প্রাহির কোমড়ে আরেকহাত প্রাহির মাথার পিছনে দিয়ে প্রাহিকে নিয়ে জানালার সাথে হেলান দিয়ে আধশোয়া হলো।প্রাহি এখনো অর্থ’র কোট খামছে ধরে ঘনঘন শ্বাস নিচ্ছে।অর্থ প্রাহির কানের কাছে মুখ নিলো।এতে অর্থের নিশ্বাসগুলো প্রাহির কানে এসে বারি খাচ্ছে।প্রাহি আবারও কেপে উঠে আরেকটু সিটিয়ে গেলো অর্থের মাজে।অর্থ ফিসফিসিয়ে বলে,
-” অন্য ছেলের থেকে গোলাপটা নেওয়ার আগে একবারও বুক কাঁপলো না তোমার?আমার কথা একবারও মনে পরলো না?”
প্রাহি এইবার ফুফিয়ে কেঁদে উঠলো।অর্থের কোট খামছে ধরা হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে দুহাতে অর্থ’র গলা জড়িয়ে ধরলো।এতেই যেন অর্থ’র রাগ গলে গেলো।অর্থ আরেকটু শক্ত করে প্রাহিকে নিজের সাথে জড়িয়ে নিলো।প্রাহি কাঁদতে কাঁদতে বললো,
-” ওই ছেলেটা আমকে কাল প্রেম নিবেদন করেছিলো।আমি না করে দিয়েছি।আজও আবার এসেছে আমি আজও মানা করে দিয়েছি।কিন্তু সে কিছুতেই মানতে রাজি হচ্ছিলো না।বললো তার ওই ফুলটা গ্রহন করলে আর ডিস্টার্ব করবে না।আমিও ভাবলাম একটা ফুলই তো যদি নিয়ে নেই তাহলে আর আসবে না ছেলেটা। তাই তো হাতে নিয়েছিলাম তারপরেই তো আপনি এসে…..!”
আর বলতে না পেরে আবারও কান্না করতে লাগলো প্রাহি।অর্থ’র বুকে মুখ গুজে আছে ও।আর অর্থ প্রাহির মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। অর্থ’র বুকটা শীতলতায় ছেয়ে আছে।কারন তার প্রেয়সীযে এখন তার বুকে।অর্থ প্রাহির চুলে ঠোঁট ছোয়ালো।প্রাহির ভারি নিশ্বাস অর্থ’র বুকে বারি খাচ্ছে।অর্থ প্রাহির মাথাটা উঠিয়ে দেখে প্রাহি ঘুমিয়ে গিয়েছে।অর্থ এইবার সাবধানে উঠে বসলো।প্রাহিকে নিয়েই ড্রাইভিং এ বসলো।প্রাহির দু-পা ওর দুই কোমড়ে আড়-আড়িভাবে রেখে একহাতে প্রাহিকে আগলে রেখে আরেকহাতে ড্রাইভিং করতে লাগলো।
——
ড্রয়িংরুমে বসে কথা বলছিলো আরাফ,হিয়া আর হেমন্ত।আজ আরাফ এখানে প্রাহিকে দেখতে এসেছে।তারও একটু দেখতে ইচ্ছে করে ওর বন্ধুটা কেন ওই পিচ্চি মেয়েটার জন্যে এতো পাগল।ওদের আড্ডার মাজেই অর্থ প্রাহিকে কোলে নিয়ে ভীতরে ডুকলো।হিয়া ওদের দেখতে পেয়েই দাঁড়িয়ে গেলো।দ্রুত পায়ে ভাইয়ের কাছে এগিয়ে গেলো ও।হিয়াকে এইভাবে দাড়াতে দেখে ওরাও পিছনে ফিরে অর্থ আর ওর কোলে প্রাহিকে দেখতে পেলো।হিয়ে এটা ওটা জিজ্ঞেস করছে কিন্তু কোন কিছুরই জবাব দিলো না অর্থ। শুধু গম্ভীর স্বরে হিয়াকে বলে,
-” ফ্রিজ থেকে বরফ নিয়ে আয় যা।”
হিয়া ভ্রু-কুচকে একপলক ভাইকে দেখে নিয়ে রান্নাঘরের দিকে চলে গেলো।গিয়ে মা আর কাকিকেও সবটা বললো।তারাও রান্না রেখেই ড্রয়িংরুমে ছুটলো।হিয়া বরফ নিয়ে এসে অর্থ’র সামনে রাখতেই।অর্থ প্রাহিকে একসাইড থেকে জড়িয়ে ধরে প্রাহির মাথাটা ওর বুকে ঠেকালো।তারপর বাটি থেকে বরফ তুলে নিয়ে আস্তে আস্তে প্রাহির গালে ঘসতে লাগলো।হঠাৎ গালে ঠান্ডা কিছুর স্পর্শ পেতেই কেপে উঠে প্রাহি।কিন্তু কান্না করার ফলে ঘুমটা ওর বেশ গাঢ়ো হয়েছে তাই উঠলো না।অর্থ’র আরেকটু কাছে ঘেসে গেলো ও।এদিকে রায়হানা বেগম আর হেনা এসে এসব দেখতেই ভ্রু-কুচকালেন।রায়হানা বেগম প্রাহির গালে আঙ্গুলের ছাপ দেখে বুজতে বাকি রাখলেন না ছেলে তার প্রাহিকে থাপ্পড় মেরেছে।উনি হেনার দিকে তাকালেন দেখেন হেনা ভ্রু-কুচকে তাকিয়ে আছেন।রায়হানা বেগম এইবার হালকা রাগি আওয়াজে বলে,
-” তুমি প্রাহিকে মেরেছো?”
অর্থ’র সহজ সিকারোক্তি,
-” হ্যা!”
রায়হানা যেন এতে আরো রেগে গেলেন বললেন,
-” কেন মেরেছো?”
অর্থ প্রাহির গালে বরফ ডলা অবস্থায় সবার দিকে তাকালো।তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সবটা বললো সবাইকে।সব শুনে আরাফ আর হেমন্ত মুখ টিপে হাসতে লাগলো।ওদের হাসতে দেখে হিয়াও হেসে দিলো।ভাই তার পুরোই পাগল হয়ে গেছে।প্রাহিকে প্রোপোজ করেছে তাই জন্যে একসাথে দুটোকেই চড় থাপ্পড় দিয়ে অবস্থ খারাপ বানিয়ে দিয়েছে।এদিকে রায়হানা বেগম রাগী গলায় বলে,
-” তাই বলে তুমি প্রাহিকে থাপ্পড় মারবে?প্রাহির এখানে কি দোষ।”
অর্থ শক্ত কন্ঠে বলে,
-” ও ফুলটা কেন নিলো ওই ছেলের হাত থেকে?”
রায়হানা বেগম আবারও বললেন,
-” প্রাহি তো কারনটা বলেছে তাইনা?এটলিস্ট ওর থেকে জিজ্ঞেস তো করে নিবে?”
অর্থ দাঁত খিচিয়ে বললো,
-” বেশ করেছি থাপ্পড় মেরে।এরকম করলে আবার থাপড়াবো ওকে।”
রায়হানা বেগম আবার কিছু বলতে নিবেন।হেনা তাকে টেনে রান্না ঘরে নিয়ে আসলো।রায়হানা বেগম অবাক হয়ে বলে,
-” নিয়ে আসলি কেন?”
হেনা হাসি মুখেই বলে,
-” অর্থকে কেন বকছো শুধু শুধু?প্রাহিকে ভালোবাসে তাই তো মেরেছে।অন্য ছেলেকে প্রাহির কাছে দেখে জেলাস হয়েই এটা করেছে।আর কিছু বলো না ভাবি।”
রায়হানা বেগম শুধু অবাক হয়ে হেনাকে দেখে গেলেন।এদিকে অর্থকে এইভাবে দেখে হেমন্ত,আরাফ, হিয়া হাসছে আবার ছোট্ট প্রাহির জন্যে খারাপও লাগছে।অর্থ এইবার সবার দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে থেকে প্রাহিকে কোলে নিয়ে উপরে চলে গেলো।প্রাহিকে বিছানায় সুইয়ে দিয়ে কম্পল গায়ে দিয়ে দিলো।প্রাহির গালে হাত বুলিয়ে ফিসফিস করে বলে,
-” তুমি শুধু আমার আর কারো নও।”
প্রাহির কপালে চুমু খেয়ে অর্থ চলে গেলো নিজের রুমে।
#চলবে______
ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।কেমন হয়েছে জানাবেন।
#প্রেম_এসেছিলো_নীরবে(বোনাস পর্ব)
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
(বিঃদ্রঃটা পড়বেন)
হিয়াজ সিকদার বেজায় রেগে আছেন অর্থ’র উপরে।তার ছেলে যে এমন কিছু করবে সে ভাবতে পারেনি।রাগি চোখে অর্থকে উদ্দেশ্যে করে বললো,
-” কেন এমনটা করলে?এটা খুব জরুরি ছিলো?আমরা সবাই জানি যে তুমি আহিকে ভালোবাসো। তাই বলে কি প্রাহির সাথে যা মন চায় তাই করবে?তোমাকে এই শিক্ষা দিয়েছি আমরা?নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রন করতে শিখো অর্থ।তোমাকে যদি আমি কখনো আর কোনদিন প্রাহির গায়ে হাত তুলতে দেখি আমি প্রাহিকে অনেক দূরে পাঠিয়ে দিবো বলে দিলাম।তুমি প্রাহিকে আর কোনদিন আর প্রাহিকে পাবে না।”
রায়হানা বেগমও রেগে আছেন বেজায়।তিনি বললেন,
-” ভালোবাসা আগলে রাখতে শিখো।রাগ সবকিছু ধ্বংশ করে দেয়।রাগের মাথায় এমন কিছু করোনা যাতে তোমার প্রিয় মানুষগুলো কষ্ট পায়।তোমার এই অতিরিক্ত রাগের কারনেই আমি তোমাকে মাত্র ১১ বছর বয়সে তোমার মামাদের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম।সেখানে গিয়ে চিকিৎসাও করিয়েছি তোমার।এই অতিরিক্ত রাগের জন্যে।চিকিৎসার কারনে অনেকক্ষানি রাগ কমে এসেছে।আমাদের সাথে রাগ দেখাতে না।কিন্তু বুজলাম না প্রাহি আসার পর থেকে তোমার রাগের মাত্রাটা বেরে গেছে অনেক।এমন হলে আমি তোমাকে আবারও তোমার মামা মামির কাছে পাঠিয়ে দিবো।আবার তোমাকে চিকিৎসা নিতে হবে এই রাগ কমানোর জন্যে।”
অর্থ মাথা নিচু করে আছে।সে বুজতে পারছে আজ সত্যিই প্রাহির গায়ে হাত তোলা ওর উচিত হয়নি।কিন্তু সে নিজের রাগটা নিয়ন্ত্রন করতে পারিনি।তবে প্রাহির জন্যে তার ভালোবাসাটা মিথ্যে না।নাহ,তাকে আবারও ডাক্তারের সর্নাপন্ন হতে হবে।আবারও মেডিসিন খেতে হবে।প্রাহির জন্যে হলেও ওকে বদলাতে হবে।ওর রাগের মাত্রা কমাতে হবে।অর্থ সবার দিকে একপলক তাকিয়ে উপরে নিজের রুমে চলে গেলো।হেমন্ত, আরাফ আর হিয়াও বুজতে পারছে।যেটা স্বাভাবিক বিষয়ভেবে হেসে উড়িয়ে দিয়েছিলো।সেটা আসলেই স্বাভাবিক না।প্রাহিকে মারাটা অর্থ’র একদম ঠিক হয়নি।তাই তারাও মাথা নিচু করে বসে আছে।হেনা কিছুই বলছেন না।কারন তিনি জানেন সকালে রায়হানা বেগমকে চুপ করালেও তিনি যে হিয়াজ সিকদারকে সব বলে দিবেন তা তিনি খুব ভালো জানেন।তাই তো সকালে আর কোন ঝামেলা করেননি।কারন সকালে তিনি যদি কিছু বলতেন তাহলে এটা ঠিক হতো না।কারন অর্থ’র বাবা মা আছেন।তারা অর্থ’র শাষন করতে পারবেন।তিনি আগ বারিয়ে কিছু বলা ঠিক হবে না।যদি দেখতো হিয়াজ বা রায়হানা কিছু না বলতেন তাহলে তিনি কিছু বলতেন।কিন্তু তিনি জানেন হিয়াজ আর রায়হানা কখনো ছেলেমেয়ের অন্যায় মেনে নেন না।অর্থকে বুজানোর দায়িত্ব আগে ওর বাবা আর মার তারপর তাদের।নুরুল আমিন সিকদার হিয়াজ সিকদারকে শান্ত করলেন।বললেন তিনি নাতিকে বুজিয়ে বলবেন যাতে এরকম যেন আর না করে।তবে মনে মনে তিনিও একটু রেগেছেন অর্থ’র উপর।হিয়ান্ত সিকদার ভাইয়ের সাথে কথা বলছেন আর তাকে বুজাচ্ছেন সবটা।
——-
বেডে মাথা নিচু করে বসে আছে প্রাহি।ওর চোখ দিয়ে অস্রুকনা গড়িয়ে পরছে।জীবনটা এতো কঠিন কেন ওর জন্যে?সবার সামনে হাসি খুশি আর বাচ্চামো করে মেতে থাকলেও।ওর ভীতরটা তো আর কেউ জানেনা তাই না?সে হাসিখুশি থাকে কারন ও চায়না ওর মন খারাপ দেখে বাকিরা কষ্ট পাক।ও এই কারনে হাসি খুশি দুষ্টুমি করে কারন ওকে খুশি দেখে যেন বাকিরাও খুশি থাকে।কিন্তু আজ আর পারছেনা নিজেকে ধরে রাখতে।এতোদিনের কষ্টগুলো যেন বাধ ভাঙ্গা জোয়ার হয়ে বেরিয়ে আসতে চাইছে।নিজের সাথে লড়াই করতে করতে ও ক্লান্ত।আজ বিনা কারনে সে শাস্তি পেয়েছে।কেন পেলো?কি দোষ ওর?সে তো আর ইচ্ছে করে যায়নি ছেলেটার কাছে তাই না?এতোদিন লোকটার সবকিছু সে মেনে নিয়েছে।কারন বাড়িটা তাদের।তারা ওকে এতো সুন্দর ভাবে থাকতে, খেতে,পড়তে দিচ্ছে এটাই তো অনেক।তাই কিছু বলতো না।কিন্তু আজ লোকটা থাপ্পড় মেরেছে আবার বিনা অনুমতিতে ওকে স্পর্শও করেছে।তবে প্রাহিকে নিজেকে নিজেই অনেকগুলো থাপ্পড় মেরেছে।কারন তখন কেন লোকটাকে থামাতে পারিনি ও।কেন লোকটার বুকে মাথা রেখে কেঁদেছে।মনে হয়েছে ওই লোকটার বক্ষস্থল ওর কাছে দুনিয়ার সবথেকে নিরাপদ স্থান।কেন পারেনি দূরে ঠেলে দিতে?কেন?নিজেরই নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছে করছে প্রাহির।লোকটার সামনে সে আর কখনো যাবে না প্রাহিকে।যাবে না।এগোরটা বছর যাবত তিলে তিলে শেষ হয়েছে সে।ওর মতো বয়সে মেয়েরা রাজকন্যা হয়ে থাকতো আর সে থেকেছে কাজের মেয়ে হয়ে।তবুও মিথ্যে হাসি ঠোঁটে ঝুলিয়ে এই বাড়ির প্রতিটা লোকের সামনে থেকেছে।বাচ্চামো করে বুজিয়েছে সে এখানে এসে ভালো আছে।কিন্তু তার ভীতরের শূন্যতাটা কেউ অনুভব কর‍তে পারেনি কেউ না।রাতের অন্ধকারে হাজারো অস্রুকনা দিয়ে সে যখন বালিশ ভিজিয়ে কাঁদে সেটাও যেন কেউ না বুজে তাই হাসতে থাকে সে।ঠিক একদিন এমন করে মিথ্যে হাসি হাসতে হাসতে একদিন সে এই পৃথিবীটাও ত্যাগ করবে।কিন্তু তার যে এখনি মরে যেতে ইচ্ছে করে।বাঁচতে ইচ্ছে করেনা।অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে বাঁচাটা যেন গলায় কাটার মতো বিধে থাকে ওর।পারছে না সে আর এই মিথ্যে অভিনয় করতে।ক্লান্ত অনেক ক্লান্ত ও।সে চিরনিদ্রায় যেতে চায়। কিন্তু আদৌ কি তা সম্ভব?
#চলবে___

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here