খেলাঘর_৭

0
245

#খেলাঘর_৭

কায়নাত এতটুকু বুঝে গেছে প্রহর সব কিছুতেই চমৎকার, তার কোনো কিছুতেই ভুল ধরা যায় না।এই যেমন সে সুন্দর করে কথা বলে,ঠিক সময় ঘুম থেকে হতে, বেশি রাত হবার আগেই বাড়ি ফিরে আসে, বাড়ির সবার সাথেই হেসে কথা বলে খুব সুন্দর করে কর্তব্য করে,ঘর এলোমেলো করে না।আর সবচেয়ে সুন্দর করে যা করে তা হচ্ছে অভিনয়! একজন মানুষ এর ভেতর বাইরে এত আলাদা তা কায়নাত কল্পনাও করতে পারে নি।বিয়ের আগে পরে প্রহরের আচারণে কোনো মিল কায়নাত খুজে পায় না,বিয়ের প্রথম কদিন কায়নাত বুঝে উঠে নি এখন খুব বোঝে প্রহর সবটা করেছে একটা ঘোরের মধ্যে, খুব প্রিয় কারো সাথে অভিমান করে, এখন হয়তো মান অভিমান শেষ হয়েছে তার ঘোর কেটেছে।কায়নাতের এখানে খুব দম বন্ধ লাগে ওর বিশাল ঘরের বিরাট জানালা খুলেও ও প্রাণ ভরে শ্বাস নিতে পারে না।

সদ্য মেয়র আহসান চৌধুরীর বাড়িতে ইদানীং বিরাট লোক সমাগম সব সময়ই কেউ যাচ্ছেন আসছেন,বাড়িতে অন্যরকম এক উৎসব উৎসব ভাব,আজ সকালের দিকে লোক কিছুটা কম যাও বা এসেছেন তিনি নিচতলার ড্রয়িং রুমে অপেক্ষা করছে,দোতলায় তাদের আসা নিষেধ। তবে তিনি বর্তমানে রাজনীতির চেয়ে চিন্তিত তার বাড়ির পরিবেশ নিয়ে, তার স্ত্রী রাহেলা চৌধুরী কিছুতেই লিলি কে মানতে পারছে না,ছেলে এবং ছেলের বউয়ের সামনে তিনি কিছু বলছেন না কিন্তু এই নয় দশদিনে তার ব্যাবহারে সেটা বুঝতে কারো বাকি নেই।
তার বিরাট আক্ষেপ রাজপুত্রের মত দেখতে তার ছেলে আর তার বউয়ের গায়ের রঙ কিনা চাপা!তিনি গটগট করে ঘরে ঢুকে ধাপ করে বিছানায় বসলেন, আহসান চৌধুরী আড়চোখে চেয়ে না দেখার ভান করে নিজের কাজ করতে লাগলেন,রেহেনা চৌধুরী খেপে গিয়ে বললেন,
—আচ্ছা তুমিইই বলো ওই মেয়েটার সাথে কোনো ভাবে আমার সাহেব কে মানায় তুমি বলো তো,
স্বামীর কাছে সাড়া না পেয়ে রেহেনা দমে গেলেন না, বরং একটু গলার জোর বাড়িয়ে বললেন,
—বাদশা না হয় তোমার গায়ের রঙ পেয়েছে কিন্তু সাহেব! সাহেব তো অবিকল আমার মতো দেখতে কি তার এটিটিউড! তার বুদ্ধি! তার স্বভাব কি শান্ত!আর এই মেয়ে! এর সাথে আমার ছেলেকে মানায়? বউ মানুষের গায়ের রঙ হবে টকটকে তা না এ তো উপন্যাসের নায়িকা উজ্জ্বল শ্যামলা!আত্মীয় স্বজন কে আমি কি মুখ দেখাবো!এর তো ভদ্রতার কোনো বালাই নেই! দিব্যি সারা বাড়ি ঘুরে বেরাচ্ছে! তুই যে পালিয়ে বিয়ে করেছিস কোথায় একটু মাথাটা নিচু করে থাকবি তা না!সে তো দম্ভতার সাথে বাড়িময় ঘুরছে! আবার নাকি শুনলাম আজ সে ভার্সিটি ও যাবে!কি অভদ্র মেয়ে ভাবো এক বার জিজ্ঞেস পর্যন্ত করার প্রয়োজন মনে করলো না!
এবার আহসান চৌধুরী বললেন,
—লিলি ভার্সিটি যাবে কার সাথে?
—তা আমি কি করে জানবো,
রান্না ঘরে মহানন্দে রুটি বানাতে বানাতে লিলি তার শাশুড়ির সব কথাই শুনছে,ডাইনিং রুমে সাহেব আর বাদশা নাস্তার জন্যে এসে বসেছে বাদশা, তার মায়ের কথা অনেক্ষণ ধরেই শুনতে পাচ্ছিলো এখন আর সহ্য করা যাচ্ছে না সে উঠে দাড়িয়েছে ,লিলি কাজের মেয়েটাকে বললো সব খাবার টেবিলে দিয়ে দিতে,বাদশা কে দাড়িয়ে যেতে দেখে বলল,
—কি ব্যাপার দাদাভাই দাড়িয়ে গেলে কেন?
—আমি একটু মায়ের ঘর থেকে আসছি,
—আরে তুমি বসো আমি দুজনকেই ডেকে আনছি দ্রুত খেয়ে নাও আমার কিন্তু আজ এত সময় নেই তোমার জন্যে দেরি করে চা করে দেওয়ার আজ থেকে আমি ভার্সিটি যাচ্ছি।
বলেই লিলি তার শ্বশুর শ্বাশুড়ির রুমের দিকে গেলো,বাদশা চুপচাপ বসে পড়লো,মেয়েটা অদ্ভুত মায়াবতী ওর কথা অগ্রাহ্য করা যায়ই না।
সাহেব চুপচাপ বসে রইলো ও এখনো লিলি কে বুঝতে পারে না। ও ভাবতো মেয়েটা হয়তো শান্ত কঠিন কিন্তু না এই নয় দশ দিনে সে তার চঞ্চলতা দিয়ে বাড়ি মাতিয়ে ফেলেছে তার সবচেয়ে বেশি সখ্যতা হয়েছে আহসান চৌধুরীর সাথে সাহেব ভাবে তার যে বাবা আগে রাতে ১২ টার আগে খাবার সময় পেতেন না এখন তিনি ঠিক ৯ টার সময় টেবিলে এসে বসেন। তাছাড়া উপায়ও নেই তিনি না আসা পর্যন্ত লিলি জেগে থাকে, বাদশাও তাই মাঝে দুদিন বাদশা দেরী করেছিলো লিলিকে অপেক্ষা করতে দেখে তার খুব শিক্ষা হয়েছে।এখন সাহেবদের বাড়ির সবাই খাবার সময়টা একসাথে বসে।তবে সাহেবের সামনে লিলির কোনো চঞ্চলতা নেই সাহেবের সাথে তার কোনো কথা আগায় না।মাঝে মাঝে সাহেব অবাক হয়ে ভাবে মেয়েটা অদ্ভুত! সেদিন হুট করে তাকে ফোন দিয়ে জানায় শরিফুল ইসলাম তাকে কোথায় আটকে রেখেছে সেখান থেকে ওকে নিয়ে বের হয়ে শহরের দিকে এলেই লিলি বলল,
—আমি আমার বাবাকে একটা উচিত শিক্ষা দিতে চাই আপনি আমাকে সাহায্য করবেন
—আমি কেন সাহায্য করবো?
—কারণ এতে আপনার বাবার লাভ আছে
সাহেব সেদিন কিছুক্ষণ ভেবে বলেছিলো
—কি সাহায্য?
—আমাকে বিয়ে করবেন, কথা দিচ্ছি কোনো বন্ধনে আপনি আবদ্ধ হবেন না দু বছর পর আমার বিবিএ শেষ হলে আমি এমবিএ করতে বাইরে চলে যাবো আপনি মুক্তি পাবেন আমি শুধু এই কদিন আমার বাবাকে একটা মানসিক কষ্ট দিতে চাই।
কখনো না ঘাবড়ানো সাহেব সেদিন খুব ভড়কে গেছিলো, লিলি কঠিন কণ্ঠে বলেছিলো,
—আপনি সিদ্ধান্ত নিন আমি আছি।

আয়না কখনো ভাবে নি আবরারের দেওয়া চাবি টা তার কখনো কাজে লাগবে, বিয়ের পরদিন আবরার সকালে চলে আসার আগেই তার ফ্লাটের একটা চাবি আয়না কে দিয়ে এসেছিলো, আয়না শক্ত হয়ে বারান্দায় বসে ছিলো, আবরার তার সামনের টেবিলে চাবি রেখে বলেছিলো
—আমি জানি তুমি কোনোদিন যাবে না, তবুও এই চাবিটা তোমার কাছে থাকুক, আমি তোমার জন্যে অপেক্ষা করব কিন্তু আমি কখনো চাই না তুমি আমার জন্যে আমার দরজায় গিয়ে অপেক্ষা করো।
আয়না ফ্লাটের দরজায় গিয়ে দাড়ালো সে আজ অফিস থেকে ছুটি নিয়ে এসেছে, দরজা খুলে তার মাথা চক্কর দিয়ে উঠলো,আয়না নিজে খুব পরিপাটি থাকতে পছন্দ করে তার ঘরের বিছানার চাদরও এক ইঞ্চি এদিক ওদিক হয় না, সে জানতো আবরারও বেশ গোছানো এটলিস্ট বেশ ভূষণ এ তো তাই মনে হতো কিন্তু এখন মনে হচ্ছে এটা কোনো সুস্থ মানুষের বাড়ি হতে পারে না, আয়না একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো তারপর বাড়িঘর গোছাতে লাগলো।

চলবে…..
সামিয়া খান মায়া

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here