বরষায় ভেজা মন
রূবাইবা মেহউইশ
১.
আষাঢ়ের প্রথম সপ্তাহ ; হঠাৎই সোনালি বিকেলটা নীরদ ছাওয়া কালচে হয়ে গেছে। পরশ ভাই ল্যাপটপ আর বাইকের চাবি হাতে দোতলা থেকে নামার সময় চেঁচিয়ে ডাকলেন, ‘কলি! না ঘুমালে ছাঁদের কাপড়গুলো তুলে আন আম্মু বোধহয় ঘুমাচ্ছে।’
টিভির পর্দায় তাকিয়ে থেকে বিরক্তিতে কপাল কুঁচকালো কলি। মাত্রই মুভিটার রোমান্টিক সিন এসেছে এখনই কেন ডাকতে হবে তাকে! কিন্তু বাইরে যে ঝড়ো হাওয়া এখন না গেলে হয়তো বৃষ্টিতে ভিজবে কাপড়গুলো। মামীও আর সময় পেল না ঘুমানোর, হাহ্! মনে মনে এমন কথা বলেই সোফা ছেড়ে উঠলো কলি। দ্রুত পায়ে সিঁড়ি বেয়ে ছাঁদে উঠল। মেঘ ঘন হয়ে আঁধারে ঢেকেছে চারপাশ কিন্তু কই বৃষ্টি! পরশ ভাইটা না একটু বেশিই জ্বালায়। মনের বকবকানি আর থামে না কলির। রশি থেকে মামা, মামী, পিয়া, পিয়াল ভাই আর নিজের কাপড়গুলো তুলে নিচে চলে এলো সে। পরশ ভাইয়ের একটা শার্ট, এক জোড়া মোজা, একটা আন্ডারজয়্যার রয়ে গেল ছাঁদে। সেগুলো সে ভুল করেও আনবে না। তার সাধের মুভিটার রোমান্টিক সিনটা এতক্ষণে চলে গেছে নিশ্চয়ই! ষোলোর কন্যা কলি মনে বড় আবেগ প্রেম, ভালোবাসা। মুভি কিংবা গান অথবা কোন গল্প সব কিছুতেই সে রোমান্টিকতা খুঁজে বেড়ায় আজকাল। পরশ ভাইয়ের জন্য দেখা হলো না আসল জিনিস। মন খারাপ করে পিয়ার ঘরে গিয়ে বসে রইল কলি। মামীর ঘুম ভেঙে গেছে জানালার পাল্লার জোর আওয়াজে। পিয়া কোচিং শেষে বাড়ি ফিরবে সন্ধ্যায় পিয়ালের সাথে। বিশাল বড় বাড়িটাতে এই মুহূর্তে মামী আর কলি ছাড়া কেউ নেই।
‘বৃষ্টি নামবে বোধহয় কলি, চা খাবে?’
এলো চুলে খোঁপা করতে করতে মামী প্রশ্ন করলেন।
-হুম খাব
-সেমাই রাঁধি একটু চা আর সেমাই খেয়ো।
-আচ্ছা মামী একা বাড়িতে থাকতে তোমার মন খারাপ হয় না?
পরশের মা আঁচল টেনে পা বাড়ালেন রান্নাঘরের দিকে। কলির কথার জবাব তিনি ইচ্ছে করেই দেননি। কলিও মামীর পেছনে ছুট লাগালো। এসএসসি পরীক্ষা শেষ হতেই সে বায়না ধরে বাবার কাছে মামা বাড়ি আসার। ক্লাশ টেইন উঠতেই বান্ধবীদের অনেকেই প্রেমে জড়ালো। কেউ কেউ তো আপন চাচাতো, মামাতো, ফুপাতো ভাইদের প্রেমেই পড়ে গেল। কলিদের বংশে কোন চাচারই ছেলে নেই একমাত্র ফুপুর তিনটি ছেলে সেও কিনা বয়সে তার তিনগুণ বড়। সবাই এখন বিবাহিত এমনকি তাদের ছেলেমেয়েরা কলির সমবয়সীও আছে কেউ কেউ। অনেক ভেবে কলি ঠিক করলো মামাতো ভাই আছে চারটি তার মধ্যে দুজন আছে দেশেই পরশ ভাই, পিয়াল ভাই। মেজো মামা আর তার ছেলেরা থাকে বিদেশে তাই কলি ভেবে নিলো পিয়াল ভাইয়ের সাথেই করবে প্রেমটা। এক সপ্তাহ ধরে মামা বাড়ি এসে তাই ভেবে ভেবে অস্থির কি করবে কি করবে না। পিয়াল ভাই তো এক সপ্তাহে একদিনও তার সামনেই এলো না প্রেমটা তার হবে কি করে! এদিকে বিরক্তিকর পরশ ভাই সকাল, দুপুর, রাত আর ছুটির দিনের সারা বিকেল জ্বালিয়ে মারলো কাজ করিয়ে। কখনও ডাকবে কলি চা নিয়ে আয় তো কখনোবা, কলি পিয়ার সাথে নুডুলস রান্না কর। বড় হচ্ছিস কাজ তো কিছু শিখলি না এখনো বিয়ে দেবো কেমন করে? ক্যান রে ভাই কাজ ছাড়া কি বিয়ে হয় না! পরশ ভাইয়ের নামটা মনে এলেও চোখমুখ কুঁচকে আসে কলির। বুড়ো লোক বয়স তার আশি ছুঁই এখনো বিয়ে না করে বোনদের খাটায়। মামী যে কেন একে বিয়ে দেয় না এখনো! কলি যখন মনে মনে পরশ ভাইয়ের পিন্ডি চটকায় তখন মামী চা শেষে সেমাই রাঁধছেন। চুলায় দুধ জ্বাল বসিয়ে কলির দিকে তাকান এক পলক৷ গোলগাল মুখের আয়তাকার কপালখানি কুঁচকে আছে অনেকটা।
(বুঝতে পারছি না কি হচ্ছে আমার সাথে। না লিখলে কষ্ট হচ্ছে অথচ লিখতে গেলেই মনে হচ্ছে কি বিশ্রী কি বিশ্রী! গল্পের গ টাও হচ্ছে না৷ আমি কি রাইটিং ব্লকে আছি নিজেই জানি না🙂)