বরষায় ভেজা মন
রূবাইবা মেহউইশ
(শেষ)
বর্ষার জলে ভেজা তনুমন শীতল না হয়ে বড্ড তপ্ত হয়ে গেছে কলির। পেছনের মানুষটির উপস্থিতিতে বড় অসহায় এই তপ্ততা আজ। নিকষ কালো আঁধার চারপাশ ঢেকে দিয়েছে তবুও যেন ছাদের কার্নিশে এক খন্ড আলোর ঝলক। কলির মনে হলো ওই মানুষটির আগমনেই তার আশপাশ এতো দ্যুতিময়। হৃৎপিণ্ডের কাছে বাজ পড়ছে ক্ষণিক আগের মুহূর্ত মনে পড়তেই। মেজো মামী তখন ডেকে নিয়ে শাড়ি পরিয়েছে কলিকে। মা, আপু আর দুই মামীর মাঝে বসিয়ে টুকরো আলাপেই তখন জানা গেল কলির আর পিয়ালের অনেক আগেই নানার কথায় ঠিক হওয়া সম্পর্কটা না হওয়াই থেকে যাবে৷ পিয়াল ভাইয়ের প্রেমিকার কথা সবাই জেনে গেছে। কিন্তু….
এখানেই শেষ নয় ঘন্টাখানেক সময়েই আবার নতুন আরেক প্রস্তাবও এসে গেছে। মেজো মামা নাকি আগ বাড়িয়ে বলে দিয়েছেন, ‘আব্বা যা চেয়েছে তাই হবে৷ পুরোপুরি না হোক কিছুটা হবে। আব্বা চাইতো কোন এক ভাগ্নি এ বাড়ির বউ হবে তাহলে অবশ্যই হবে। কলির বিয়ে ঠিক তো হয়েছিলই সেটাই হবে। পিয়াল না হোক রায়ান আছে।’
কলির মা কিছু না বললেও তার বাবাকে ফোন করতেই তিনি আপত্তি তুলেছেন। ছেলেদের মতামত ছাড়া বিয়ে ঠিক করা মানে চরম পর্যায়ের ফাইজলামি করা। পিয়ালের সাথে ঠিক হলো এখন বলছে রায়ানের সাথে। দুদিন পর নিশ্চয়ই বলবে রায়ানেরও প্রেমিকা আছে! কলির বাবার এ কথা একেবারে মিথ্যে নয়। রায়ানেরও বিদেশী প্রেমিকা ছিল কিন্তু তা অতীত। বর্তমানে সে পিওর সিঙ্গেল তাই বাবা মায়ের পছন্দে কলিকেই বিয়ে করতে চায়। পিয়ার হলুদ অনুষ্ঠান মধ্য রাতের আগেই কলির বাগদানের অনুষ্ঠানে রূপ নিলো। পরশ যখন তার বাগদত্তাকে পৌঁছে দিয়ে নিজ বাড়িতে ফিরল তখন নিচ তলার অনুষ্ঠান সাঙ্গ করে সকলে দোতলার বসার ঘরে ভীর জমিয়েছে। সোফায় বসা কলি তার পাশেই মেজোমামা আর মামী। মামীর হাতে স্বর্ণের একটি চেইন যা মুহূর্তেই চলে গেল কলির গলায়। বড়রা সবাই সোফায় বসা বলেই হয়ত রায়ান বসার সুযোগটা পায়নি। সে দাঁড়িয়ে আছে চুপটি করে কলির পেছনে। সামনে থেকে অনেকেই তাদের সে অবস্থায় ছবি তুলছে।পিয়াও নিজের সাজসজ্জাসমেত সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে ঘাপটি মেরে। পরশ দরজা থেকেই দাঁড়িয়ে দেখলো কিছু সময় চলমান অবস্থা তারপর নিঃশব্দে চলে গেল নিজের ঘরে। ধীরে ধীরে কমে এলো ভীর, থমকে গেল আয়োজন। উপর,নিচ, বিছানা, মেঝে সবটা মিলিয়ে ঘুমানোর জায়গা দখলে ব্যস্ত সকলে কলি তখন নিস্তব্ধ পায়ে উঠে গেল ছাদে। আর তারপরই এই মানুষটি এসে দাঁড়িয়েছে পেছনে। বরষার অথৈ জল কলির গাল ছুঁয়ে বৃষ্টিতে মেশার আগেই কানে এলো পরশ ভাইয়ের গলা, ‘ভালো বাসলে প্রকাশ করতে হয়।’
যে মানুষটা সব জানে তার কাছে কেন মুখ খুলতে হবে! কলির মনে অভিমানের তিক্ত হাওয়া তাই পরশ ভাইয়ের কথা শুনে বেড়ে ঝড়ো হয়ে উঠল। সে পেছন ফিরে দেখতে চাইলো না মানুষটাকে। কিন্তু মানুষটা কহ তা মেনে নেবে? একদমই না৷ বিগত দু বছরে যেচে কিছু না বলা মানুষটা আজ হঠাৎই এক অদ্ভুত কন্ড করে বসলো। কলির কনুই চেপে ঘুরিয়ে দাঁড় করালো নিজের দিকে। আচমকা টানে কলি কিছুই বুঝে ওঠার আগে আরও এক অবাক কাজ করে বসলো পরশ ভাই৷ কলির গলায় মামীর পরানো চেইনটা এক ঝটকায় টেনে ছিঁড়ে ছুঁড়ে মারলো ছাদের এক পাশে। কলি কিছু বলতে মুখ খুলতেই তার খোলা চুল মুঠোয় নিয়ে কলির অধরে নিজের দখল জানান দিলো পরশ। কমে আসা বৃষ্টিটা কখন যে তীব্র হলো জানলো না কেউ। পরশের কঠিন ছোঁয়া কলির অধরে রিমঝিম ছন্দে দুটি বছরের জমে থাকা অন্তর্দ্বন্দ মিলেমিশে একাকার।
সমাপ্ত
(এ লেখাটা ভেবে চিন্তে সাজানো কোন গল্প নয়। প্রচণ্ডরকম রাইটিং ব্লকে থাকায় দু চারটে করে লাইন লিখে চেষ্টা করছিলাম লেখায় ফেরা যায় কিনা। কিন্তু না ঠিকঠাক লিখতে পারছি না একদমই৷ ভুলত্রুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন আশা করছি। ভালো থাকবেন সবাই দোয়ায় মনে রাখবেন।)