#এক_জোড়া_নুপুর (১৫) [সমাপ্তি পাতা]
“পৃথিবীর সবথেকে সুন্দর অনুভূতির নাম ভালোবাসা। তবে কখনো কখনো সেই ভালোবাসাকে জ্বা লিয়ে পু ড়ি য়ে শেষ করে দিতে হয়।”
“কেন হয়?”
“বাঁচাতে।”
“বাঁচানোর জন্য আবার শেষ কেন করতে হয়? তোমার কথা আমি বুঝতে পারছি না।”
ওয়াইন এর গ্লাস নিয়ে চমৎকার করে হাসল শাহান। তার অনুভূতিরা এখন হারিয়ে গেছে। ব্যক্তিগত জীবনে অনেকটা পিছিয়ে গেছে সে। চোখের নিমিষেই পেরিয়ে গেল চারটে বছর। এই চার বছরের যন্ত্রণা ওকে শেষ করে দিচ্ছে। সামনে বসে থাকা সুন্দরী মেয়েটির নাম এলিনা। ওরা বিজনেস পার্টনার। মেয়েটি মধ্য প্রাচ্য’র দেশ ইরানের বংশোদ্ভূত। তার চোখের রঙ কিছুটা ঘোলাটে। যেই চোখে এখন একরাশ সম বিস্ময়। শাহান চোখ সরিয়ে নিল।
“তুমি কি খুব কষ্টে আছ?”
“কাজ গুলো শেষ করো এলিনা।”
“শাহান,তুমি খুব বোকা।”
“কেন?”
“নিজেকে কষ্ট দেওয়া মানুষগুলো তো বোকাই হয় তাই না?”
চুপসে গেল শাহান। ওর থেকে পুনরায় উত্তর না পেয়ে কাজে মনোযোগী হলো এলিনা। আসলেই সে বোকা। বুক থেকে বের হয় দীর্ঘশ্বাস। সমস্ত কাজ শেষ করে শাহানের নিকট এল এলিনা।
“কাল আসবে তো?”
“চেষ্টা করব।”
এলিনা চলে যেতেই শাহান বসে পড়ল। মাথাটায় অসম্ভব রকমের যন্ত্রণা হচ্ছে। খানিক বাদে দরজায় নক পড়ল।
“ভাইয়া আসব?”
“আয়।”
“তোর কফি।”
“দে। মা ঘুমিয়ে পড়েছে?”
“হুম। শরীরটা বিশেষ ভালো নেই। তারউপর তোমার বিয়ে নিয়েও চিন্তা করে।”
“খাবার খেয়েছিস?”
“হুম।”
“এলিনার বিয়েতে আমি যাব না। মা ও যেতে পারবে না। তুই মিস করিস না। কেমন?”
“কেন যাবে না?”
“এমনি ভালো লাগছে না।”
“ভাইয়া।”
বোনের ডাকে ঘুরে তাকাল শাহান। হেরা উঠে এসে বলল, “চার বছর পেরিয়ে গেছে। এবার তো স্বাভাবিক হও।”
“আমি ঠিক আছি।”
“যে তোমার যোগ্য না তার জন্য কেন কষ্ট পাচ্ছ?”
শাহান কিছু বলতে পারল না। ভাইয়ের চোখ মুখের অবস্থা দেখে আসলেই কষ্ট হলো হেরার। অস্ট্রেলিয়ায় আসার পর থেকে জীবনকে নতুন ভাবে দেখেছে সে।
এলিনার বিয়েতে নির্বাকে দেখে সব থেকে বেশি চমকাল হেরা। প্রিয় বান্ধবীর সাথে যোগাযোগ নেই চার বছরেরও বেশি। এক প্রকার ভুলেই বসেছিল। হঠাৎ দেখাতে আবেগ লুকাতে ব্যর্থ হলো। কাছে এগোতে গিয়ে মনে হলো মেয়েটা ওকে চিনবে তো?
সিদ্ধান্ত আর নির্বা এসেছে অস্ট্রেলিয়ায় এক গানের প্রোগ্রামে। সেখান থেকেই এলিনার বিয়েতে এসেছে। সিদ্ধান্ত তার জন্য খাবার বেড়ে দিচ্ছিল। নির্বা হাতের ইশারায় আর নিতে বারন করছে। সেই সময়টায় কণ্ঠটা শুনতে পেল।
“কেমন আছিস?”
আকাশে হঠাৎ বর্জপাত হলে যেমন শব্দ হয় নির্বার ক্ষেত্রেও বোধহয় তেমনি হলো। হেরাকে চিনতে অসুবিধা হলো না তার। বান্ধবীকে বুকে টেনে নিয়ে বলল, “তুই! কোথায় চলে গিয়েছিলি? জানিস কত বার খুঁজেছি তোদের। কেউ বলতে পারল না।”
হেরার দুটি চোখ নোনা জলে ডুবে এল। সিদ্ধান্ত নীরব দর্শক। নির্বা বলল,”আগে বোস। অনেক কথা আছে।”
দুই বান্ধবী নিরালায় এসে বসল। উত্তেজনা ধরে রাখতে পারছে না নির্বা।
“কেন চলে এসেছিলি তোরা?”
“সে অনেক কাহিনী।”
“তাই বলে একটি বার জানাবি না?”
“পরিস্থিতি ছিল না। জীবনে অনেক খারাপ সময় পার করে এসেছি।”
নির্বার মনে পড়ল শাহানের কথা। পাষান হৃদয়ের মানুষটি কেমন আছে?
“শাহান ভাইয়ার কি খবর?”
হেরা এভাবে কান্না করে দিবে তা ভাবেনি নির্বা। তার বুকের ভেতর কেমন করে উঠল। পুরনো অনুভূতি জাগতে চাইল। সে বাঁধা দিল তাতে। একটা সময় হেরা বলল,”ভাইয়া বেঁচে আছে এটাই অনেক রে।”
গলার কাছটা তিক্ত অনুভব হয় নির্বার। হেরা এমন বলছে কেন?
“জানিস ভাইয়ার জীবনটা আসলেই শেষ হয়ে গেল। আমি আর মা না থাকলে হয়ত বেঁচেই থাকত না। ওর সাথে এমন কেন হলো বল তো।”
অবাক হয়ে তাকিয়ে নির্বা। চোখ দুটি ভীষণ বিচলিত। হেরার পিঠে হাত বুলিয়ে দিল সে।
“কি হয়েছিল?”
“ভার্সিটিতে যাওয়ার পর থেকেই ভাইয়া রাজনীতিতে চলে আসে। অনেকটা অনিচ্ছাকৃতভাবেই জড়িয়ে যায়। সেখানেই একটা মেয়ের সাথে পরিচয়। তারপর হয় রিলেশন। ভাইয়া মেয়েটাকে ভালোবাসত খুব। শুরুর দিকে সব কিছু ঠিকই যাচ্ছিল। কিন্তু একটা সময় পর মেয়েটা চিট করে। ভাইয়া হাতে নাতে ধরে। মেয়েটা মাফ চায়। ভাইয়া মাফ করে দেয়। খুব ভালোবাসত কিনা। এভাবে কয়েকবার হয়। একটা সময় পর এসব নিতে পারছিল না। ভাইয়া খুব রেগে যায়। আর ব্রেকআপ করে। কিন্তু মেয়েটা তখন ওকে আবার বুঝাতে শুরু করে। ভাইয়া এবার শক্ত থাকে। ওর কথায় ভুলে না আর। একদিন তো সু ই সা ইড ও করতে গিয়েছিল। ভাইয়া ভেবেছিল এবার হয়ত শুধরে যাবে। কিন্তু ভাইয়া ভুল ছিল। ও শুধরাল না। বরং এসব ছিল ওর প্ল্যান। ভাইয়াকে নেশা করিয়ে নিজে ভিক্টিম সেজে মামলা করল। নারী মামলা কতটা জঘণ্য সেটা ক্ষণে ক্ষণে ভাইয়া বুঝতে পারছিল। নিজেকে প্রমাণ করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠে। মেয়েটা ওকে ব্যবহার করতে থাকে। থ্রেট করে বাধ্য করে দলের সাথে চিট করতে। সব মিলিয়ে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়ে। এসব যখন আমরা জানতে পারি তখন বোঝাতে থাকি কিন্তু ততদিনে অনেক লেট হয়ে গেল। ভাইয়ার উপর তার দল থেকে প্রতারণার জন্য মামলা করা হলো। সব মিলিয়ে পাগলের মতো করতে লাগল। এত এত কষ্ট পাচ্ছিল যে এক পর্যায়ে ঘুমের ঔষধ ও খেয়ে নেয়। জীবনের মায়াটাই হারিয়ে বসেছিল।”
হেরা একটু থামতেই নির্বা পানি এগিয়ে দিল। সে এখন মনোযোগী শ্রোতা। শুধু তাই নয় সে একজন পাথর মানুষে পরিনত হয়েছে। হেরা পুনরায় বলতে লাগল,”আমরা খুব বেশি অশান্তিতে ভুগছিলাম। সেই সময়ে বাবার স্টোক হলো। চারদিন হসপিটালে থেকে মানুষটা আমাদের একা করে চলে গেল। চোখের সামনে আপনজনরা পর হতে শুরু করল। ভাইয়া বুঝতে পারছিল এভাবে থাকলে আমরা শেষ হয়ে যাব। তখন মামাদের সাহায্যে লুকিয়ে পড়ি। ভাইয়া একটা মাস কারো সাথে কথা অবধি বলে নি। তারপর হুট করেই একদিন অস্ট্রেলিয়া নিয়ে এল। এখান থেকেই কেইস গুলো দেখতে লাগল। দীর্ঘ চার বছরের লড়াই এর পর মুক্ত হলো আমার ভাইটা। সবথেকে অদ্ভুত কি জানিস যেই সুখের সন্ধানে ঐ মেয়েটা আমার ভাইকে ঠকাল,এত বাজে ভাবে ফাঁসাল সেই ব্যক্তির থেকেই চরম ভাবে ঠকে গেল মেয়েটা। সব মিলিয়ে ভাইয়ার ভালো থাকার কথা কিন্তু ভাইয়া ভালো নেই।”
“কেন ভালো নেই?” নির্বা পাথরের ন্যায় প্রশ্নটা করল। হেরা চোখের জল মুছতে মুছতে বলল, “জানি না। তুই তো জানিস কতটা চাপা স্বভাবের সে। হয়ত এর পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে। কারো সাথে শেয়ার করে না এসব।”
রাতে ফেরার পর থেকে নির্বা একটুও ঘুমাতে পারল না। হেরার থেকে সব শুনে একদমই ভেঙে পড়ল সে। সারারাত কান্না করল। কেন করল জানে না। তার ভেতরকার অবস্থা খুবই খারাপ। উত্তপ্ত হৃদয়। বাইশ বছর বয়সী সে যেন ফিরে গেল সেই পনেরতে। যেই নির্বার মন ঘুরত এদিক সেদিক। অনুভূতির পার্থক্য করতে পারত না। ঠিক তেমনি অনুভব হচ্ছে এখন। এত অসহ্য অনুভূতি হচ্ছিল যে সে বাধ্য হয়ে সিদ্ধান্তকে কল করল। পরদিনই চলে এল বাংলাদেশে। মাঝে একটা প্রশ্নও করে নি সিদ্ধান্ত। বরং আগলে রেখেছিল দু হাতে। গাড়ি চলছে এদিকে বৃষ্টিও নেমেছে। সিদ্ধান্ত স্ট্রিয়ারিং এ হাত রাখলেও নজর রেখেছে মেয়েটির উপরে। তার কাঁধে শুয়ে আছে নির্বা। চোখের দৃষ্টি মৃত। বৃষ্টির ছিটে এসে ভিজিয়ে দিচ্ছে বাহু। একটুখানি নড়চড় নেই তার। সিদ্ধান্ত গ্লাস অফ করে দিল। বাসায় পৌছে দিল। পরের একটা সপ্তাহ নিজেকে ঘর বন্দী করে রাখল নির্বা। এর মাঝে সিদ্ধান্ত তাকে একবারও কল করেনি। এতে অবাক নয় সে। কারণ সে নিজ থেকেই জানিয়েছিল কিছুদিন একা থাকতে চায়। এই ধকল পেরিয়েই সে এল মানালিতে। প্রকৃতির মাঝে নিজেকে ডুবিয়ে রাখল কিছুদিন। পুরো জগত বদলাতে শুরু করেছে। ঠিক তখনি একটা ম্যাসেজ পেল। মানালির ট্যুর শেষ হওয়ার পূর্বেই ফিরতে হলো তাকে। হসপিটালের করিডরে পাগলের মতো ছুটছে মেয়েটি। আরো কিছু দূর যাওয়ার পর দেখতে পেল সিদ্ধান্তকে। ছেলেটা কেবিনের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। দু চোখে ঘুম নেই। চুলগুলো ভীষণ অগোছালো। নির্বা এসেই চুলে হাত বুলিয়ে দিল।
বিষয়টা এত দ্রুত ঘটল যে নির্বা কথা বলতে পারল না। নির্বাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠল বর্তমান সময়ের হার্টথ্রব সিদ্ধান্ত হক। ত্রিশের ঘরে পা রাখা সিদ্ধান্ত যেন ছয় বছরের বাচ্চায় পরিনত হয়েছে। চারপাশ থেকে অনেক মানুষ দেখছে এতেও কোনো ধ্যান নেই তার। নির্বা আলগোছে পরম যত্নে পিঠে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। আগলে
নিয়েছে সবটা দিয়ে।
ডাক্তার চেকাপ করছেন। সিদ্ধান্তকে ভীষণ ব্যস্ত দেখাচ্ছে। নির্বা হাত চেপে রেখেছে শক্ত করে। ডাক্তার বের হতেই সিদ্ধান্ত বলল, “সী ইজ ওকে ডক্টর?”
“ইয়েস। এন্ড কনগ্রাচুলেশন সিদ্ধান্ত হক। আল্লাহর উপর আপনার ভরসাই তাকে বাঁচিয়ে দিল। দেখা করে আসুন।”
বেডে শুয়ে থাকা মেয়েটির বয়স যেন পঁচিশ থেকে পঞ্চাশে উন্নীত হয়েছে। রুগ্ন চেহারাটাও সিদ্ধান্ত’র নিকট ভীষণ দামি। তার দু চোখের নোনা জল বলে দিচ্ছে এই মুহূর্তে কতটা সুখী সে। নির্বা সিদ্ধান্ত’র চোখে চোখ রাখল। ইশারায় বোঝাল কাছে যেতে। তারপর বেরিয়ে এল কেবিন থেকে। দূরে দাঁড়িয়ে থাকা সিদ্ধান্তকে দেখে একটুখানি হাসল রুগ্ন দেহের মেয়েটি। সিদ্ধান্ত ইশারা বুঝতে পেরে কাছে এল। মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। কেনলা লাগানো হাতটা বুকে চেপে ধরে মাথা নিচু করে ফেলল সে। দু চোখ থেকে নেমে আসা গরম জলে ভিজে উঠল মেয়েটির হাত।
“সিদ্ধান্ত।”
“গার্ল আই এম সো সরি। প্রমিস করছি আর কখনো কষ্ট দিব না তোমায়। প্লিজ ছেড়ে যেও না। আমি সত্যিই ম রে যাব। আই লাভ ইউ লট। প্লিজ ডোন্ট লিভ।”
দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকাতে বিশেষ কোনো শব্দ বলতে পারল না তাহমিনা। সিদ্ধান্ত অজস্র চুমুতে ভরিয়ে দিল মেয়েটির মুখ। তাহমিনার দুটি চোখ ভিজে উঠল অশ্রুতে। কেউ এভাবেও ভালোবাসতে পারে?
পরিশিষ্ট : বিয়ের পর প্রথমবারের মতো ক্যামেরার সামনে এল সিদ্ধান্ত। তার হাতের মুঠোতে রয়েছে নরম তুলতুলে আরেকটি হাত। হাতটি আর কারো নয় বরং তাহমিনার। সাংবাদিক রা ওদের শুভেচ্ছা বার্তা দিয়েই প্রশ্ন করল, “ফাইনালি সিদ্ধান্ত হক বিয়েটা করলেন। দীর্ঘ আট বছর ধরে চলে আসা এত রকমারি গুঞ্জন তবে শেষ হলো।”
চমৎকার করে হাসল সিদ্ধান্ত। তাহমিনা কোমা থেকে ফিরে এসেছে মাত্র একমাস হলো। এর মধ্যেই সিদ্ধান্ত ব্যস্ত হয়ে পড়ল বিয়ে করবে বলে। তাই অনেকটা দ্রুতই শেষ হলো বিয়েটা। সাংবাদিকদের প্রশ্ন পর্ব শেষ করে বের হয়ে এল সিদ্ধান্ত। শুটিং এর কারণে নির্বা আসতে পারেনি তাদের বিয়েতে। সে এখন আছে সেন্টমার্টিনে। আগামীকাল আবার মেয়েটির তেইশতম জন্মদিন। এই দিনটা সিদ্ধান্ত দারুণভাবে কাটাতে চায়। সন্ধ্যার ফ্লাইটেই তাহমিনাকে নিয়ে চলে এল সে। তাহমিনার হাত ধরে হেটে চলেছে সমুদ্রের তীরে। মেয়েটি ওর জীবনের প্রথম ও একমাত্র ভালোবাসা। একটা ভুল বুঝাবুঝির কারণে দুজনের ঝগড়া হয়। আর তারপরই ছেড়ে যায় মেয়েটি। সেদিনই একটা দূর্ঘটনা পড়ে কোমায় চলে যায়। দীর্ঘ আটবছর পর নানান জটিলতা কাটিয়ে সে সুস্থ হলো। শুরুর দিকে সিদ্ধান্ত তো পাগল ই হয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু মেয়েটির জন্য নিজেকে শক্ত করে ধরে রাখে। কাজে ফিরে আসে। আর তারপরই দেখা হয় নির্বার সাথে। স্কুলের সেই প্রোগ্রামে নির্বাকে দেখে এক মুহূর্তের জন্য থমকে গিয়েছিল সে। নির্বার চেহারার সাথে তাহমিনার বেশ মিল রয়েছে। আচরণ গুলোও অনেকখানি মিলে যায়। সেই থেকেই মেয়েটার প্রতি স্নেহ জাগে। সিদ্ধান্ত সর্বদা নির্বার মাঝে তাহমিনাকে খুঁজেছে। নির্বা ওর কাছে থাকলে মনে হতো তাহমিনাই আছে। সবটা মনে করে দীর্ঘশ্বাস ফেলল সিদ্ধান্ত। তাহমিনা সুস্থ হলেও পুরোপুরি সুস্থ নয়। আগের মতো কথা বলতে পারে না। একটি শব্দ বলে থমকে থাকে। ঘটনা বুঝতে সময় লাগে। এসবে বিন্দুমাত্র চিন্তা করে না ছেলেটা। মেয়েটি যে বেঁচে আছে এটাই অনেক। তাহমিনাকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরল সিদ্ধান্ত। চুলের মধ্যে উষ্ণ ঠোঁটের স্পর্শ দিয়ে বলল, “আই লাভ ইউ গার্ল।”
সিদ্ধান্ত আর তাহমিনাকে দেখে চমকে উঠল নির্বা। ছুটে এসে তাহমিনাকে জড়িয়ে ধরল।
“তোমরা আসবে বললে না কেন?”
“বললে সারপ্রাইজ থাকত? হ্যাপি বার্থডে প্রিয়।”
“উফ আমিই ভুলতে বসেছিলাম বাট সিদ্ধান্ত একদম ঠিক করলে না। তুমি কি বলেছিলে,আজ তোমাদের হানিমুন। আপু তুমি ওকে কিছু বললে না কেন? পুরো পাগল।”
জবাবে মৃদু হাসল তাহমিনা। গত এক মাস ধরে নির্বা সম্পর্কে অনেক কিছু জেনেছে সে। মেয়েটি নিজেকে সামলাতে না পারলেও অজান্তেই সামলেছে সিদ্ধান্ত হক নামক মানুষটিকে।
“সব বুঝলাম কিন্তু আমার উপহার কোথায়?”
উপহার চাওয়ার ন্যায় হাত বাড়িয়ে দিল নির্বা। সিদ্ধান্ত নিচু স্বরে বলল, “তোমার উপহার তোমার জন্য অপেক্ষা করছে। এবার সময় এসেছে সব কিছুর অবসান ঘটানোর।”
কিছুই বুঝল না নির্বা। সিদ্ধান্ত মৃদু হেসে সামনে যেতে বলল। হুট করেই ওর হৃদয়ের ভেতর ধীম ধীম আওয়াজ হতে শুরু করেছে। লাব ডাব শব্দ গুলো দ্বিগুণ গতিতে শব্দ করছে। নির্বার পা যত এগোচ্ছে অবয়বটা তত স্পষ্ট হচ্ছে। তেইশে পা দেওয়া নির্বা আজ আবার ফিরে গেল তার কিশোরী জীবনে। যেই জীবনে একটা শাহান ছিল। অবয়বটা তার থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। নির্বা চেচিয়ে উঠল, “যাবেন না। দাঁড়ান একটু।”
ছুটে এসে অবয়বটির গতি ধরল নির্বা। সে উত্তেজনায় কাঁপছে। সামনে বয়ে চলেছে সমুদ্রের ঢেউ। রাতের আঁধারে চাঁদ খানা বড়ো সুন্দর হয়ে আলো দিচ্ছে। ঢেউ গুলো মৃদু শব্দ তুলে নতুন কিছুর আভাস দিল যেন। নির্বা এখন একটা ঘোরের মাঝে চলে এসেছে। সেই সিগারেট পোড়া ঠোঁট আজ অবাধ্য হাসিতে মেতে উঠেছে। আচানাক স্বীয় পায়ে স্পর্শ পেল সে। ঠান্ডা শীতল হাতটা পরম যত্নে কিছু একটা করে চলেছে। নির্বার পুরো শরীর শীতল হয়ে এল। শাহানের উষ্ণ ঠোঁট যুগল পায়ে লাগতেই চোখ বন্ধ করে ফেলল সে। পাঁচ বছর পূর্বে নির্বার ক্যারিয়ারের কথা ভেবে কলঙ্গ নিয়ে সরে গিয়েছিল শাহান। আজ ঠিক চার বছর পর সে এসেছে, এসেছে কলঙ্ক মুছে নিজের ভালোবাসার সবটুকু উজার করে দিতে। তাই তো প্রিয়তমার পদ যুগল পূর্ণ করে দিল এক জোড়া নুপুর দিয়ে।
~সমাপ্ত~
কলমে~ফাতেমা তুজ নৌশি|