“#হৃদয়ে_দহন ( সিজন ১) #লেখক_মাহমুদ #সুচনা_পর্ব

0
519

মিলি আজ মাহমুদের অফিসে এসেছিলো ওকে সারপ্রাইজ দেবে বলে।তবে দরজা নক না করে ভিতরে ঢুকায়,মিলি নিজেই বড় ধরনের একটা সারপ্রাইজ পেয়েছে।
মেয়েকে কোলে নিয়ে নিশব্দে আবার বাড়ি ফিরে এসেছে মিলি।আর পারছিলো না ঐ সব দেখতে।ওর মাহমুদ এখন আর ওর নেই সে অন্য নারীর মনে পেয়েছে ঠাই ।আজ কে মাহমুদের একমাএ মেয়ে( মাহি)মাহমুদের কলিজার টুকরা আজ প্রথম আব্বু বলে ডেকেছে। এই সারপ্রাইজ টা দিতেই মাহমুদের অফিসে এসেছিল মিলি।কিন্তু এসেই নিজেই বড় সারপ্রাইজ পেয়েছে।
কাঁদতে কাঁদতে মিলির চোখ দুটো ফুলে গেছে ।কাঁদবেই তো !নিজের স্বামীকে অন্য মেয়ের সাথে ঘনিষ্ট অবস্থায় দেখতে পেলে কোন স্ত্রীর ভালো লাগবে?

বাড়িতে বৃদ্ধশাশুড়ি চোখ ফুলার কারন জানতে চাইলে
বিভিন্ন বাহানা তৈরি করে এড়িয়ে গেলো।
মিলি পারেনি ঐ বৃদ্ধ মহিলার মনে কষ্ট দিতে।

“আজ কয়েক দিন ধরেই মাহমুদ পরকীয়ায় আসক্ত হয়েছে।
তা কয়েকদিন ধরে নাকি আরো আগে থেকে বুঝা দায়।

“মিলি আর মাহমুদ ভালোবেসে মা বাবার বিরুদ্ধে গিয়েই তারা বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হয়।মাহমুদ বেশ ধনী পরিবারের সন্তান।অর্থ সম্পদের কমতি নেই।মিলি এক মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে।

৪ বছরের বিবাহ জীবনে তাদের ৭ মাসের এক মেয়েও রয়েছে। মেয়ের নাম মাহি তা মাহমুদ নিজেই রেখেছে।
“মাহমুদ প্রথম বাচ্চা না নিতে চাইলেও মিলির জোরেই সে মানতে রাজী হয়। আর এখন তো মাহমুদের মা হয়ে উঠেছে ঐ মাহি।

প্রতিটা- দিন তো বেশ ভালোই গেছে।
তবে সামনে আসা দিনের কথা না কেও জানে না জানতে চায়।
” ৪ বছরের সংসারে মাহমুদ কোন অভাব হতে দেয়নি।মিলি কিছু মুখ ফুটে বলার আগে তার প্রয়োজনীয় সব তার পদ তলে রেখেছে.।

মাহমুদকে ভালোবেসে মিলি তার মা বাবা ভাই সব হারিয়েছে।এতে তার কোন দূঃখ নেই।তবে দূঃখ তো এটাই যার জন্য সব ছাড়লো এখন সেই তাকে ছেরে অন্যের খাঁচায় বাসা বেধেছে।

খাবার টেবিলে মিলি আর মাহমুদ বসে খাওয়ার নাটক করছে।কারন মিলির মন আজ সকালে মাহমুদের অফিসে তার কেবিনে যা দেখলো তা নিয়ে।
আর মাহমুদের মন ফোনে কারো সাথে মিষ্টি চ্যাটিং করায়।মিলি বেশ বুঝতে পারছে,মাহমুদের মুখ দেখেই বুঝা যায়। সারা দিন মিলি এক ফোটা পানি মুখে তুলেনি।এখনও তুলতে ইচ্ছা করছে না।

-মাহমুদ !
” হুম মিলি কিছু বলবে?(মোবাইলের নিকে তাকিয়ে)
মিলি এত সুন্দর করে ডাকলো তবুও মাহমুদ আজ ওর দিকে তাকালোও না।আগে ডাকার আগেই ওর পাশে আঠার মত লেগে থাকতো।
বেশ কয়েকদিন ধরেই মাহমুদ এমন করছে।প্রথম তো ভেবেছে কাজের টেনশনে হয়তো এমন দূরে থাকা।
তবে ব্যাপার টা একদম অন্য রকম।
কত ভালো বেসে মাহমুদ বলে ডাকে মিলি আর সেই মাহমুদই কিনা।

-মিলি সকালের ঘটনাটা বলেও বলতে পারছে না।লজ্জা আর ঘৃণা দুই তাকে গিলে খাচ্ছে।
তবুও তার প্রানের মাহমুদ কে ডেকে বললো -আজ তোমার অফিসে দিন কেমন গেলো?
ফোনটা সাইডে রেখে মাহমুদ, মিলির দিকে তাকিয়ে রইল।
-হঠাৎ অফিস নিয়ে পরলে যে?
নাহ এমনি।
–ওহহ।হ্যা ভালোই গেছে।নতুন একটা প্রোজেক্ট সাইন করেছি।বেশ মুনাফা হবে।আর পুরো টাকাটা মাহির নামে রাখবো মেয়েতো বড় হচ্ছে ৭ মাসের বুড়ি আমার।
“মিলি শুধু হুম বলে চুপ নিজের ভাতের দিকে তাকিয়ে আজ ভাতের দানা গুনার চেষ্টা করছে।
-মিলি শুনো কাল দুদিনের জন্যে শহরের বাহিরে যাবো, চট্রগ্রাম। সেখানেই নতুন প্রজেক্টটা দেখে আসতে হবে।তা তোমার ওই খান থেকে কিছু চাই?

” অবাক নয়নে মিলি মাহমুদের দিকে তাকিয়ে রয়েছে।কেও বলবে এই মানুষ টার ভালো মানুষি ছাড়া ও জঘন্য আরেকটা রূপ আছে?
ঘরে কি সুন্দর স্বামী /বাবা/ছেলের দায়িত্ব্য তিনই খুব ভালো ভাবে পালন করছে,আর ঘরের বাহিরে এক দুশ্চরিত্রা স্বামী।মিথ্যা বাদি ছেলে।
“মাহিকে কে খাইয়ে ঘুম পারিয়েছো তো।
হুম মায়ের সাথে আছে।বুকের দুধ খেতে চায় না তাই কেনা দুধ..
“কথা টা শেষও হয়নি. মাহমুদ রাগ দেখাচ্ছে। না না মিলি এক দম না।শুধু বুকের দুধ।
মাহিকে নিয়ে কোন হেলা নয়। বাড়তি অন্য কোন খাবার সাথে দিবা না ।বাহিরের কেনা দুধ মুটেই নয়।

“কি সুন্দর পিতা হওয়ার দায়িত্ব্য পালনে ব্যাস্ত।স্বামী হিসাবে কেন এত দায়িত্ব্যবান নও মাহমুদ !
কথাটা মিলি তার মনের ভিতরেই গেঁথে রেখেছে।
আজ ওর বাবার কথা বার বার মনে হচ্ছে।মাহমুদকে আপন করতে গিয়ে যে সবাইকে পর করে দিলাম।

মিলি কি করবে বুঝতেই পারছে না। দিন জেনো তার কাটে না। যখনই মাহমুদ বাহিরে বের হয় ওর শুধু মনে হয় মাহমুদ ঐ মেয়ের কাছেই গেছে।
আজ কাল মিলি কাছে ডেকেও মাহমুদকে পায় না।তার যে কত কাজ। না পারছে কাওকে কথাটা বলতে,না পারছে মাহমুদের এই নোংরামি সহ্য করতে।মিলি ভেবেছে মাহমুদের এই বদ অব্যাশ ঠিক হবে।তবে তা যে ধিরে ধিরে ভয়ানক রুপ নিবে তা কে জানত?

বাপের বাড়িতে যাওয়ার মুখ নেই।আর মাহিকে নিয়ে কোথায় যাবে? যাওয়ার কোন যায়গা তো নেই। কি করবে এই ছোট্ট শিশুটিকে নিয়ে কোন পথে যাবে।

মাহির এখন ১ বছর।

জন্মদিন টা বেশ ধুমধাম করেই হবে
বেশ লোকজন সাজসজ্জায় বাড়ি হৈরৈ।
মাহিকে আজ পরীর মতো লাগছে।

এই ৫ টা মাস মিলি যে কি মরন যন্ত্রনা ভোগ করেছে তা কেও জানেনা । মাহমুদের অবহেলা দিন দিন বেড়েই চলছে।বেলকনিতে মধ্যরাত অবদি তার কথোপকথন সব মিলির কানে আসত।ঘুমের ভান ধরে বিছানায় শুলেই মাহমুদের পাখা গজানো শুরু।
–টাকায় মুরিয়ে রেখেছে মিলিকে মাহমুদ। তবে এই টাকায় তো মিলির মনে সুখ আসবে না।মাঝে মাঝে ইচ্ছা করে ছেড়ে চলে যাই।তবে মাহমুদের জন্য যে ভালোবাসাটা ওটাকে এখনও খুন করতে পারছে না। নিষ্ঠুর দুনিয়ায় বের হলে তো কখন কোন হায়েনাদের শিকারই হয় তা ঠিক নেই ।এর চেয়ে এখানে সেফ তো আছি…

এত মানুষের ভিড়ে মাহমুদকে কোথাও দেখতে পারছে না মিলি।
কোথায় ও?
কিছুটা দুরে মিলির চোখ পরতেই মলিন শুকিয়ে থাকা মুখ টা আরো শুকিয়ে এসেছে।

“এটা তো সেই মেয়েটা যার সাথে মাহমুদের অবৈধ সম্পর্ক চলছে।আজ মাহমুদ ওকে বাড়ি পর্যন্ত নিয়ে এলো…
এত দিন তো যাই করেছে সকলের আড়ালে আজ কি তা আর রাখবে না। মাহমুদ তোমার কি একটুও আমায় হারানোর ভয় নেই।ভয় করেনা আমি সব জানলে তোমায় ছেরে চলে জাবো কিনা?
কেন মাহমুদ কেন? বার বার আমার জখমে তুমি ধারালো ছুরি দিয়ে আঘাত দাও। বাহিরে মন ভরেনি তাই ঘরে এনে তুললে? আল্লাহ হয় আমায় কোন পথ দেখাও নয়তো শক্তি দাও এত শক্তি দাও যে মাহমুদের সব কুকীর্তি আমি সহ্য করতে পারি।
ভাবনার ডুবে ছিল মিলি, মাহমুদ মেয়েটাকে নিয়ে মিলির সামনে হাজির।
–মিলি!
মাহমুদে হাসি মাখা চেহারা নিয়ে মিলিকে ডাকছে.মিলি এই মূহুর্তে কারো ডাক কানে শুনছে না।

মিলি!এই মিলি !
দুইতিনটে ডাক পরতেই মিলির মন ভাবনার জগৎ থেকে ফিরেছে।
“কি ভাবছো? কখন থেকে ডাকছি।

মিলির এবার হুস হল এত ক্ষন অন্যমনস্ক ছিল।

মাহমুদের ডাকে সারা দিতে না দিতেই সত্যি সত্যি সেই মেয়েটা হাজির।একেবারে মাহমুদের পাশে এসে ঘেসে দাড়িয়েছে।
তবে মাহমুদ একটু ভদ্রতার সাথে ওর কাছ থেকে সরে এলো জেনো অচেনা কেও হবে।
-হ্যালো ম্যাম।
মিলি অপলক ঐ মেয়েটার দিকে তাকিয়ে ভাবছে কি মায়াবতী মেয়েরে তুই।তর কত রুপ!তর মধ্যে এমন কি আছে যার জন্যে আমার স্বামী আমার রইলো না।
এক মনে ভাবছে আর দেখছে।

পরিচয় করিয়ে দিই।
ও তৃপ্তি আমার পি এ। মাস ছয় হলো কাজে জয়েন্ড হয়েছে।
“মিলি কিছুটা মন কে শক্ত করেছে।
পরিচয় করাচ্ছে পি এ আর বাস্তবে তার রহ্মিতা।তবে যাই বলুক সম্পর্ক টা তো নোংরামুরই।
“মাহমুদ কখনো তো কোন স্টাফকে বাড়িতে আনতে দেখিনি।আজ হঠাৎ সামান্য কর্মচারিকে বাড়িতে এনে তুললে?
“মিলি কাটা বিধানো কথা বলেছে।এতে ঐ তৃপ্তি নামক অতৃপ্ত আত্বা ডায়নি ভূত টা বেশ অপমান বুধ করছে।মাহমুদের মুখের দিকে তাকিয়ে রয়েছে এক পলকে।ভেবেছে মাহমুদ কিছু বলবে।
বেচারা মাহমুদ চুরের মত এদিক ওদিক তাকিয়ে মরছে।

–মাহমুদ! এই মাহমুদ ।
“হ্যা শুনছি বলো।
-কি বলবো বললো না তো একটা অফিসের সামান্য কর্মচারিকে বাড়িতে এনে এভাবে বৌ এর সাথে ঘটা করে পরিচয় দেয়ার কি আছে?

“আসলে হল কি ঐ আমার একটা ফাইল অফিসে রয়ে গেছিলো, আর ওটা বেশ জরুরি ছিলো তাই ও ওটা নিয়ে এসেছে আর কি।
ওহহ আচ্ছা ফাইল দেয়া হয়ে গেছে?
-হ্যা!হ্যা হ্যা হয়েছে।মাহমুদ ভয়ে কুকরিয়ে আছে।এর মানে মিলিকে হারানোর ভয় মনে বহু।ভয়টা ভিতরে থাক সামনে এনে লাভ হবে না।বেশি টাইট করতে গিয়ে রশিটাই না ছিরে যায়।
“হুম। মিস.এসেছো যখন খেয়ে দেয়ে যেও কেমন।

দুকথা শুনিয়ে মিলি চোখের কোনে জমা লোকানো পানিটা নিয়ে মাহমুদের আর তৃপ্তির কাছ থেকে সরে এসেছে।

পার্টি শেষ।আজ তৃপ্তি কি জাবেনা নাকি?
“মাহমুদ !
-হ্যা মিলি ?
সবাইতো চলে গেছে তোমার পি এ রয়ে গেলো যে?

আসলে মাহমুদেই তো তৃপ্তিকে আটকিয়েছে।তবে এখন ঝামেলা মিলিটা । কত পশ্ন করে।আগে তো এত পশ্ন করত না।
আসলে ওর বাড়ি অনেকটা দূরে।আর রাত ও বহু হয়েছে।তাই আমিই বলেছি রাত টা এখানে থাকতে।অবশ্য তুমি যদি চাও আর কি।
হা হা করে মিলি হেসে উঠেছে।হাসালে মাহমুদ বড্ড হাসালে।থাকতে বলেছোই যখন এখন আর আমার মতামত কিসের?
মাহমুদ কিছুটা বিভ্রস্ত। ফেসে গেলো নাকি?
“বাদ দাও তোমার যা ভালো লাগে তাই করো।
একটা ভারি পাথর মনে রেখে কথাটা বলে মিলি তার রুমে চলে গেছে।
মাহি আজ বড্ড হাপিয়ে গেছে.কত মানুষ যে ওকে নিয়ে টানা টানি করেছে। মেয়েটা ভয়ও পেয়েছে।৷ তাই এত কিছুর দিকে নজর না দিয়ে মেয়েটাকে আকরে ধরে থাকতে চাই।
আর দেখতে চাই মাহমুদ কত টা নিচে নামতে পারে।

-মধ্য রাত প্রায় মাহি কে ঘুম পারিয়ে মিলি মাহমুদের পাশ ঘেসে শুয়েছে।
“মাহমুদ এখনো ঘুমায় নি ও তো মিলির ঘুমানোর অপেক্ষায় আছে।
” তবে মিলি কে জাগতে দেখে মাহমুদ বহু হতাস।

-ঘুমাও নি তুমি?
“নাহ তুমি জেগে যে?
” না ঐ অফিসের ঐ ফাইল টা দেখার বাকি রয়েছে। সকাল সকাল তো ওটা নিয়ে বের হতে হবে।
–ওহহ তাহলে শুয়ে না থেকে দেখে নাও।
“হ্যা তবে তৃপ্তির কাছে সব ডিটেল্স, ও কে সাথে না নিয়ে কি করে বুঝবো?
-এতে এত ভাবনার কি মাহমুদ তুমি যেমন চিন্তায় ঘুমাতে পারছ না।তেমন তৃপ্তিও হয়তো সেই চিন্তায় মগ্ন।
মাহমুদ একরাশি পশ্ন সূচক হয়ে মিলির দিকে তাকিয়ে রয়েছে।
–মানে ফাইলের চিন্তায়। বলতে চাইছি।তা যাও তৃপ্তির রুমেই কাজ টা করে এসো।এখানে করতে পারবে না কারন আমি আবার তোমাদের ডিস্টার্ব করতে পারি।
” কথাট কি ভাবে মিলি বলেছে।কেন বলেছে তা আর মাহমুদের কানে ঢুকলো না, এখন তো ওর অন্য রকম চিন্তা মনে চলছে আর তাই এত সব ভেবে মোড টা নস্ট করে লাভ কি।

চলবে…….

গল্পটার মাঝে চেষ্টা করবো আপনাদের ভিন্ন কিছু উপহার দেওয়ার।

ভুল গুলো আল্লাহর দেওয়া মহান গুনে হ্মমার চোখে দেখবেন শুকরিয়া।

#হৃদয়ে_দহন ( সিজন ১)
#লেখক_মাহমুদ
#সুচনা_পর্ব

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here