প্রহর শেষে #পর্ব ১

0
330

#প্রহর_শেষে
#পর্ব_১

রাকার রেজাল্ট বের হয়েছে। অনার্স পড়ুয়া রাকার এক সাবজেক্ট ফেল। ইতিহাস বরাবরি তার মাথার উপর দিয়ে যায়। স্যার তাকে ডেকে বলল, তোমাকে একটা এসাইনমেন্ট দিচ্ছি। এটা কম্পলিট করতে পারলে তোমাকে ফাইনাল দিতে দিব। নাহলে এইবার তুমি পরীক্ষা দিতে পারবে না। আমি তোমাকে দুই সপ্তাহ টাইম দিলাম। রাঙ্গামাটির মানুষ নিয়ে প্রামাণ্য চিত্র বানাতে হবে। আমার যদি পছন্দ হয় তবেই তুমি এলাও হবে।

স্যার কে কিছু বলতে পারল না। নিজের চুল নিজের ছিড়তে ইচ্ছা করছে। একটু ভাল করে পড়লে কি হত। এখন ঠেলা বুঝো। মাথায় কিছু ডুকছে না। বুদ্ধির জন্যে মিনুর কাছে গেল।

-কি করব মিনু? বুদ্ধি দে।
-আমি কি জানি।
-প্লিজ তুই আমার ফ্রেন্ড না।
-আচ্ছা। ভেবে দেখি।
-হুম। রাঙ্গামাটি কোন জায়গা হল। ইতিহাসের স্যার এইগুলা কি দেই।
-তুই এক কাজ করতে পারিস। ইকোনমিকস ডিপার্টমেন্ট এর একটা ছেলে আছে। রাঙ্গামাটি থেকে আসে রেগুলার। আমার ফ্রেন্ডের ফ্রেন্ড। আমি তোকে কয়দিন ওদের বাড়ি থাকার জন্যে ব্যবস্থা করে দিতে পারি।
-থ্যাংকু দোস্ত।
-থাক ডং কম মার। আমাকে কিছু দিতে হবে।
-যা চাইবি দিব। বল শুধু।
-আমাকে তোর খালাতো ভাইয়ের নাম্বার দিতে হবে।আর একটু কন্টাক্ট করাই দিতে হবে।
-আরে এইটা কোন ব্যাপার হইল। এখন দিচ্ছি।
-আচ্ছা তাইলে কাল আমি ওই ছেলেটার সাথে তোকে পরিচয় করাই দিব। আচ্ছা শুন, ছেলেটা কিন্তু ক্যাম্পাসের অনেক মেয়ের ক্রাশ। মেয়েরা ওর পিছে পড়ে থাকে। কাউকে পাত্তা দেয় না। মেয়েরা সহজে ওর সাথে কথা বলতে পারে না। আমি কিন্তু জানিনা তোর সাথে কেমন বিহেভ করবে। আমি শুধু তোর থাকার ব্যবস্থা করে দিতে পারি। শুনেছি ছেলেটা ওদের এলাকায় অনেক প্রভাবশালী। তবে ছেলেটার চরিত্র ভাল। কোন মেয়ের সাথে এখনো সম্পর্কে জড়ায়নি। আশা করি তোর অসুবিধা হবে না।
-এমন কি হয়েছে যে সবাই ওর জন্যে পাগল হইতে হবে। আনি এত কিছু জানি না। আমি এখন এসাইনমেন্ট কম্পলিট করতে পারলে হইল।
-আচ্ছা তুই তাইলে বাসা থেকে পারমিশন নিয়ে নে।
-ওইটা প্রবলেম হবে না। বাবা কে বলা আছে।
-আচ্ছা তাহলে আমি কথা বলে রাখি।
-ও ওক্কে।

পরদিন ভার্সিটি গিয়ে মিনুর সাথে দেখা করতে গেল রাকা।

-কিরে কই তোর ওই ক্রাশ বয়?
-আছে, আছে। আমার একটা ক্লাস আছে। তুই গিয়ে দেখা করে আয়। তোর কথা বলা আছে। কাউকে জিজ্ঞেস করলেই হবে ইকোনমিকসের রায়হান কই আছে। দেখাই দিবে।
-ওকে যা তুই তাহলে।

ইকোনমিকস ডিপার্টমেন্টে ডুকে একজনকে জিজ্ঞেস করল,
-ক্রাশ বয় রায়হান সাহেব কই আছে একটু বলবেন?
-আপনি ওই রুমে গিয়ে বসেন। আমি ডাকছি।

কিছুক্ষণ পর ছেলেটা রুমে আসল।এসে সামনে দাঁড়ালো।

-কই ডাকেন না? কতক্ষণ বসে থাকতে হবে।
-আমি রায়হান।
-এঁ। কি? আপনি?
-হুম।
-সরি আমি চিনি নাই। সরি।
-কাল সকাল ১০টায় রেডি থাকবেন বাসার সামনে। আমি পিক করব।
-এঁ, আচ্ছা।

রাতে ব্যাগ প্যাক করার সময় রাকা ভাবছে , গাধার মত কি যে করলাম। উনাকে উনার কথা এইভাবে বলা।কি যে করি না আমি।

সকাল ১০টায় বাসার সামনে এসে দাঁড়ালো। রাকার মা নেই। বাবা আর সে একা থাকে। বাবার ব্যবসা আছে। আর এই ৭ তলা বাড়ি টা তাদের। বাবা আর মেয়ে অনেক ভালই আছে।

একটু পর রায়হান এসে পিক করল। গাড়ি চলছে রাঙ্গামাটির পথে। রায়হান আর রাকা বসে আছে পাশাপাশি। বাইরের প্রকৃতি দেখতে অনেক ভাল লাগছে রাকার। কি সুন্দর দৃশ্য। শহরে ইট পাথরের ভিতর তো কিছুই দেখা যায় না। রাকা কয়েকবার চেষ্টা করেছিল রায়হানের সাথে কথা বলতে। কিন্তু রায়হান কোন সুযোগ না দিয়ে ঘুমিয়ে গিয়েছে। একটু পর রাকা ও ঘুমিয়ে গেল।

তাদের খবরই হল না কখন বাড়ি পৌঁছালো। ড্রাইভারের ডাকে ঘুম ভাঙল রায়হানের। দেখে, রাকা তার কোলের উপর মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে আছে। মেয়েটা অনেক মায়াবী। মুখে কোন সাজ নেই। দেখতে অনেক নিষ্পাপ লাগছে। হঠাৎ রাকাকে চোখ খুলতে দেখে নিজের চোখ ফিরিয়ে নিল। ঘুম থেকে উঠে রাকা অপ্রস্তুত হয়ে গেল একটু। নিজেকে রায়হানের কোলে মাথা দিয়ে ঘুমাতে দেখে তাড়াতাড়ি উঠে বসল।

গাড়ি থেকে নেমে দেখে কি সুন্দর জায়গায় গাড়ি দারিয়ে আছে। একপাশে পাহাড় অন্য পাশে একটা ৩ তলা সাদা বাড়ি দাড়িয়ে আছে। দেখে বুঝা যায় অনেক প্রভাবশালী কারো বাড়ি। সামনে অনেক বড় বাগান। দেখে মনে হচ্ছে রেগুলার যত্ন নেয়া হয় বাগানের। রাকা গেট দিয়ে ভিতরে ডুকল। রায়হান তার জিনিসপত্র নিয়ে আসছে। কোথা থেকে হঠাৎ ১৮ বছর হবে এমন বয়সী ছেলে একটা এসে রায়হানের হাত থেকে জোর করে সব নিয়ে নিল।

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here