#প্রহর_শেষে
#পর্ব_২
বাড়ির দরজা দিয়ে ডুকতে গিয়ে ভিষণ রকম এক ধাক্কা খেল রাকা। রাঙ্গামাটির মত জায়গায় এত আধুনিক মানুষ থাকবে বিশ্বাস করতে একটু কষ্ট হচ্ছে। বাড়ি টা আধুনিক সব ফার্নিচার দিয়ে সাজানো। ডুকতেই অনেক বড় হলরুম। দামী ফার্নিচার দিয়ে রুমটা ডেকোরেট করা। ডুপ্লেক্স বাড়ি,ডাইনিং টেবিলের পাশ দিয়ে কাঠের সিড়ি উঠে গিয়েছে। দেখে বুঝা যায় বাড়ির ডিজাইনার অনেক শখীন ছিলেন।
রাকাদের জন্যে ভিতরে অপেক্ষা করছিল সবাই। রাকা আসতেই ১২ বছরের মেয়ে একটা দৌড়ে এসে রায়হানকে জড়িয়ে ধরল।
-কিরে ভাইয়া কখন থেকে বসে আছি তোর বন্ধুকে দেখার জন্যে। দাদী তো মাত্রই রুমে গেল।
-থাম বুড়ি। মায়ের সাথে কথা বলতে দে।
-মা ও রাকা, স্যার একটা এসাইনমেন্ট দিয়েছে রাঙ্গামাটির উপরে। ওর এইখানে পরিচিত কেও নেই তাই আমাকে রিকুয়েস্ট করেছে ওর ফ্রেন্ড।
– ঠিক করেছিস বাবাই। মেয়েটা অনেক জার্নি করে এসেছে। মেয়েটাকে একটু বসতে দে।
-আস আপু। আমি রাদিয়া। ভাইয়ার বোন।
-অনেক কিউট তুমি।
-থ্যাংকু রাকাপু।
বাড়ির সবাই রাকাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেল। কি খেয়েছে, কি খাবে, এইটা খাও ওইটা খাও। শেষ পর্যন্ত রায়হান বিরক্ত হয়ে রাকাকে ধরে রুমে নিয়ে গেল।
-আমার বাড়ির মানুষ গুলো একটু বেশী চিন্তা করে, কিছু মনে কর না।
-না, ঠিক আছে। অনেকদিন পর এমন আদর পাচ্ছি। বাসায় তো শুধু বাবা আর আমি থাকি।
-আচ্ছা, তুমি ফ্রেশ হয়ে রেস্ট নাও। আমি পরে আসব।
রাকা শাওয়ার নিয়ে বের হয়ে দেখে রাদিয়া বসে আছে। মেয়েটার কথা শুনে মনে হয়না ছোট মেয়ে। পাকনা পাকনা কথা।
-রাকাপু তোমাকে যা লাগছে না, রাঙ্গামাটির মানুষ পাগল হয়ে যাবে তোমাকে ভাইয়ার সাথে বিয়ে দিতে।
-এঁ কেন?
-আরে তোমাকে আর ভাইয়াকে একসাথে অনেক ভাল দেখায়। আচ্ছা তুমি কি ভাইয়ার গার্লফ্রেন্ড?
-যাহ না। আমি তো তোমার ভাইয়াকে চিনতাম ওনা। এখন তো ঝামেলা তে পরে আসতে হয়েছে।
-ও। আচ্ছা। আমরা ভাবছি …
-আচ্ছা বাদ দাও। আমাকে এখন বাড়ি ঘুরিয়ে দেখাও।
-ওকে চল।
রায়হানরা যৌথ ফ্যামিলি। ওর আব্বুরা তিন ভাই সবাই একসাথে থাকে বাচ্চা কাচ্চা নিয়ে। সবার বড় রায়হান। তাই সবার কাছে ওর আদর একটু বেশী। মেজ চাচার দুই ছেলে। একটা এইটে, আরেকটা থ্রিতে।
ছোট চাচার মেয়ের বয়স চার বছর। অনেক কিউট একটা বাচ্চা। পুরা বাড়ি ঘুরাতে ঘুরাতে রাদিয়া সব ইনফরমেশন দিয়ে দিল। কে কি করে, কার স্বভাব কেমন, দাদী কি পছন্দ করে। চাচী কখন রেগে যায়। রাদিয়ার কথা শুনতে শুনতে বাড়ির প্রতিটা মানুষের সম্পর্কে জানা হয়ে গেল।
তবে রাদিয়া রায়হান সম্পর্কে কিছু বলল না। কেন কে জানে! রাকার জিজ্ঞাস করতে একটু লজ্জা লাগছে। তাই সে আর কিছু জিজ্ঞেস করল না।
দুপুরে খেতে বসে সবার সাথে দেখা হল। দাদীর সাথে আগে দেখা হয়েছিল। দাদী অনেক আধুনিক মহিলা। উনার থেকেই মনে হয় সবাই আধুনিক থাকার প্রেরণা পেয়েছে। বাড়ির সব মানুষ অনেক ভাল। রায়হানের মত গম্ভীর না।
একটু রেস্ট নিয়ে বিকেলে রাদিয়াকে নিয়ে ঘুরতে বের হল। রায়হানের সাথে আর কথা হয়নি। ছেলেটা তাকে কেমন এড়িয়ে চলে। রাদিয়া পুরা জায়গা টা ঘুরে দেখাল। ওদের বাড়ির কাছে আর কারো বাড়ি নেই। গ্রাম আরো দুরে। সন্ধ্যা হয়ে আসাতে বেশী দুরে গেল না। বাড়ি এসে সবার সাথে গল্প করতে বসল। বাড়িটা রায়হানের দাদার আমলের। ওর দাদার দাদারা এসেছিল এইখানে। আস্তে আস্তে ওদের ব্যবসা অনেক বিস্তার লাভ করে এখন ওরা প্রায়ই এইখানের স্থানীয়। সবাই ওদের কথা মানে। অনেক প্রভাব আছে ওদের পরিবারের।
রাতে বড় বারান্দায় দাড়িয়ে আকাশ দেখছিল রাকা। তখন রায়হান এসে ওর পাশে দাঁড়ালো। রাকার খেয়াল করেনি। দেখে একটু চমকে উঠল।
-আরে ক্রাশ বয় যে। কি খবর? আপনি তো দেখি সারাদিন পার্ট নিয়ে থাকেন।
-হুম।
-হুম টু।
-হুম।
-আচ্চা আপনার কি গলায় সমস্যা আছে? ভোকাল কর্ড কি ছিড়া?
-কি? কেন?
-আপনি কথা বলেন না যে তাই ভাবলাম।
-বেশী ভাবেন আপনি।
-আমাকে আপনি বলবেন না। এত বড় ছেলের থেকে আপনি শুনলে নিজেকে বয়স্কা মনে হয়। তুমি বলবেন।
-হুম। আপনি মানে তুমি কাল থেকে কি তোমার কাজ শুরু করবে?
-তাই ভাবছি। আচ্ছা আপনি আমাকে একটু আশ পাশ ঘুরাবেন? আধিবাসীদের গ্রামে যাব। কখন নিয়ে যাবেন?
-আগে এইখানের দর্শনীয় স্থান গুলো ঘুরে দেখ। তারপর ওদিকে যাব। তুমি ক্যামেরা নিয়েছ তো?
-হুম।
-আচ্ছা ঘুমিয়ে যাও। কাল সকালে বের হব।
-গুড নাইট।
-হুম।
-হুম টু
সকালে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে পড়ল রাকা আর রায়হান। রায়হানের বাবা তাদের সাথে গাড়ি দিয়েছে। প্রথমে তারা গ্রামের স্কুলে গেল। স্কুল টা রায়হানদের বানানো। রায়হানকে দেখে প্রিন্সিপাল বেরিয়ে নিজে ঘুরে ঘুরে সব দেখাল ওদের। রাকা প্রিন্সিপ্যালের ইন্টার্ভিউ ভিড়িও করে নিল। আশ পাশে পরেবেশ, বাচ্চাদের নিয়ে অনেক মজা করল। রায়হান ও সবার সাথে অনেক ফ্রি দেখে বুঝা গেল। অনেককিছু রেকর্ড করল রাকা। দুপুরে দিকে তারা স্কুল থেকে বিদায় নিল। সেখান থেকে তারা কাপ্তাই লেকের মাথায় গেল।
জায়গা গুলা দেখে রাকার এত ভাল লাগছে। সে কিছুক্ষণ লাফিয়ে নিল। রায়হান অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল। মেয়েটা পুরাই বাচ্চা এখনো ভাবছে রায়হান। রায়হান লুকিয়ে লুকিয়ে রাকাকে দেখতে লাগল। রাকার এত কিছুর দিকে খেয়াল নেই। সে প্রকৃতি দেখার কাজে ব্যস্ত।