#প্রহর_শেষে
#পর্ব_৩
সারাদিনের ঘুরাঘুরি শেষ করে সন্ধ্যার দিকে বাড়ি ফিরল ওরা। ফ্রেশ হয়ে আবার গল্পে ব্যস্ত হয়ে গেল। পূজার বন্ধ চলছে সবার। তাই পাহাড়ে গিয়ে কাল ছোট খাট পিকনিক করবে বাড়ির সবাই মিলে। সবাই অনেক ব্যস্ত হয়ে পড়ল।
সকাল সকাল তারা রওয়ানা দিল।বাড়ির সবাই যাচ্ছে। কাজের লোক গুলো ও বাদ যায় নি। রাকা পিচ্চি পার্টির সাথে বসেছে। তাদের গাড়িতে রওনক, রুবাইদ, রিদিয়া, রায়হান, রাকা। সবাই হুলুস্থুল গল্প করছে।
তারা পাহাড়ে উঠল। রায়হানের বাবা চাচারা ও এসেছে। অনেক আনন্দে আছে সবাই। একটু ঘুরাঘুরি করে সবাই রান্নার কাজে লেগে গেল। তারা কোন কিছু রেডিমেড আনেনি। সম্পূর্ণ বনভোজন করবে ঠিক করে এসেছিল।
কাঠ কুড়িয়ে, চুলা জালিয়ে সবাই মিলে রান্নার কাজে সাহায্য করল। রাকাকে ঘিরে আছে সবাই। রান্না করতে করতে সবাই চাইল রাকার গান শুনতে। রাকা আমতাআমতা করে রাজি হল। রাকা কেশে গান ধরল। অনেক বয়স্ক মানুষ আছে তাই রবীন্দ্র সংগীত বেছে নিল।
গান শেষে সবাই তালি দিয়ে উঠল। রায়হানের বাবা রিদওয়ান সাহেব বললেন, তোমার গানের গলা তো অনেক ভাল। আমাদের স্কুলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে, তুমি পার্টিসিপেট কর। আমাদের স্কুলে অনুষ্ঠানে গ্রামের সবাই অংশগ্রহণ করে। তুমি ও করতে পারবে। প্রতি বছর তো রায়হান প্রাইজ পায়। এইবার তুমি পাও কিনা দেখব। অনুষ্ঠানের আর চার দিন আছে। তুমি রেডি হয়ে যাও।
রাকা অবাক হয়ে গেল, এই গোমড়া মুখো ক্রাশ বয় গান গাইতে পারে। আর সে কিনা বলেছে, ভোকাল কর্ড ছিঁড়া। একটু লজ্জা পেল।
সবাই খাওয়া দাওয়া করে গল্প করতে বসে গেল। রাকা থেকে সবাই তার পরিবারের কথা জানতে চাইল।
আমার পরিবার বলতে শুধু বাবা। মা মারা গিয়েছিল আমার ৬ বছরের সময়। বাবা আর বিয়ে করেন নি।
-তুমি মন খারাপ করনা মা, এখন থেকে আমরা তোমার পরিবার। তোমার যখন ইচ্ছা হবে চলে আসবে। ( রায়হানের মা জয়নব বেগম)
-হুম রাকাপু, আমরা তোমার ভাই বোনের মত। (রাদিয়া)
-হয়েছে হয়েছে। পুরাই আমার পরিবার। (রাকা)
-মা তোমরা আমাকে ভুলে যাচ্ছ। নতুন কাউকে পেয়ে নিজের ছেলেকে ভুলে যাচ্ছ। (রায়হান)
-ড্রামা বাদ দাও এবার। ফিরে চল। (রিদওয়ান সাহেব)
সন্ধ্যার আগে বাড়ি পৌঁছে গেল। সবাই অনেক টায়ার্ড। রেস্ট নিতে চলে গেল। রাতে রাকা ছাদে এসে বসল। রাতে পাহাড় দেখতে অনেক ভালই লাগছে রাকার। একটু পর রায়হান ও ছাদে উঠল।
-কিরে তুমি এত রাতে ছাদে কি?
-এমনে ভাল লাগছে না তাই। আপনি কেন?
-আমি রাতে কিছুক্ষণ আকাশ দেখে তারপর ঘুমাই।
-ওমা এত রোমান্টিক। ( মনে মনে)
-কি ভাবছ ?
-কিছু না। আচ্ছা কাল, ত্রিপুরাদের গ্রামে যাব।
-আচ্ছা, রেডি থেক। অনেক দুর যেতে হবে। সকাল সকাল বের হতে হবে। এখন ঘুমাও।
-হুম। আপনি ও যান।
সকালে তারা রওয়ানা দিল সব কিছু নিয়ে। পাহাড়ে চড়তে হবে ওদের তাই প্রয়োজনীয় জিনিসপাতি নিল।
সন্ধ্যার পরে তারা ফিরে এল। সারাদিন অনেক ধকল গিয়েছে শরীরের উপর। এসেই ঘুমিয়ে গেল। কাজ অনেক দুর এগিয়ে গিয়েছে।
দেখতে দেখতে অনুষ্ঠানের দিন চলে আসল। রাকাকে জোর করে ধরে নিয়ে গেল সবাই।
রাকা, রায়হান দুজনেই অংশগ্রহণ করল। রাকাকে দেখে চোখ ফিরাতে পারছে না। অনেক সুন্দর করে সেজেছে। কালো লাল পাড় দেয়া শাড়ি, লাল ফুল হাতা ব্লাউজ, লাল লিপস্টিক, চুল গুলো উঁচু করে বাধা, গলার সাথে লাগানো নেকলেস। এক কথায় অসাধারণ লাগছে। ওর শ্যামবর্ণ চেহারায় আলাদা চমক এনে দিয়েছে। হঠাৎ রাকার কাছে ধরা খেয়ে গেল এভাবে দেখতে গিয়ে। কিছু না বলে অন্যদিকে চলে গেল। তবে একটু পর পর ঘুরেফিরে রাকাকে দেখছে।
অবশেষে ক্রাশ বয়ের উপর ক্রাশ খেল রাকা। রায়হান কাল পাঞ্জাবী, নীল জিন্স। চোখে সানগ্লাস, হাতে ঘড়ি। সব মিলিয়ে এত ভাল লাগছে। রাকা আগে কখনো ক্রাশ বয়কে এভাবে খেয়াল করেনি। তবে আজ কেন জানি বারবার দেখতে ইচ্ছা করছে। একটু পর পর তাকাচ্ছে।বুঝতে দিচ্ছে না ব্যাপারটা। কয়েকবার ধরা পড়ে গিয়েছে। তবে মুখ ভেংচি মেরে অন্যদিকে ফিরে গিয়েছে। মনে মনে দেখার ইচ্ছা তখনো আছে।
একটু পর রায়হানের ডাক আসল। রায়হানের গান শুনে রাকা ভাবছে এত ভাল গলা ওর। আমিতো কিছুই না ওর সামনে। মান ইজ্জৎ যাবে আজকে সবার সামনে। একটু পর রাকার ডাক আসল। ভয়ে ভয়ে সে এগিয়ে গেল।
চোখ বন্ধ করে একমনে গান গেয়ে গেল রাকা। তুমুল তালির আওয়াজ শুনে চোখ খুলে দেখে গান শেষ সবাই উঠে দাড়িয়েছে। ভয় কেটে গেল রাকার। যাক ভালই ভালই শেষ হয়েছে।
কিছু সময় পর রেজাল্ট দিবে। ততক্ষণ রাকা একটু হাটতে গেল। খালের পাশে গিয়ে বসল। রায়হান ও এসে বসল তার পাশে । চারপাশ খালি। সবাই অনুষ্ঠানে ব্যস্ত।
রায়হানকে দেখে রাকা একটু অবাক হল। তবে কিছু বলল না। চুপচাপ বসে আছে দুজনে। প্রথমে রায়হান মুখ খুলল।
-তোমার সামনে প্রকৃতি হার মানছে।
-(চুপ)
-তুমি কি জানো, তুমি এই রাঙ্গামাটির থেকে ও সুন্দর।
-আচ্ছা, আপনি কি আর কোন কথা পাচ্ছেন না? রাঙ্গামাটির সাথে আমার তুলনে কেন?
-চোখের সামনে এত সুন্দর মানুষ দেখলে কথা কি ঠিক ভাবে বের হয়?
-আপনার মুখে খই ফুটেছে দেখছি। আচ্ছা আপনাকে জ্বীন ভুতে পায়নি তো? দিন দুপুরে এমন প্রলাপ বকছেন।
-আরে ধুর, জ্বীন ভুতে কেন পাবে? পরী পেয়েছে।
-কি বলে, আমি এখন দাদী কে বলে আসি।
হাত টেনে রাকাকে বসিয়ে দিল রায়হান।
– কাউকে বলতে হবে না। আমি পরীটাকে এট্টু দেখি। আচ্ছা তোমার ডানা থাকলে কেমন হত? না না। ডানা ছাড়াই ভাল লাগছে। আমার ডানা কাটা পরী তুমি।
-বাংলা সিনেমার ডায়লগ মারিয়েন না।
-আরে সত্যি বলছি। আমি তোমার প্রেমে পড়ে গিয়েছি।
-ডং করতে হবে না। চলেন সবাই অপেক্ষা করছে।
রেজাল্ট দিল একটু পর। রাকা ফাস্ট প্রাইজ পেয়েছে। সবাই অনেক খুশি। রায়হানের ও খারাপ লাগছে না। সে মেয়েটির প্রেমে পড়ে গিয়েছে। সবার এমন উল্লাস দেখে রাকা লজ্জা পাচ্ছে।
রাতে বাড়ি ফিরে সবাই রাকাকে ঘিরে ধরল। রাকা কাল ফিরে যাবে। ওর কাজ শেষ। সবার মন খারাপ।
সকালে রাকা বেরিয়ে পড়ল। রায়হান ও যাচ্ছে ওর সাথে। কেউ কোন কথা বলছে না। রায়হানের মনে হচ্ছে, ও কিছু হারিয়ে ফেলছে। এতদিন মেয়েটার সাথে থাকতে থাকতে অভ্যাস হয়ে গিয়েছে।
চলবে,