#তোমাতেই আমি #পর্ব ০২

0
443

#তোমাতেই_আমি
#পর্ব_০২
#Tabassum_Kotha

অন্তি দৌড়ে এসে অর্ণবকে জরিয়ে ধরলো। মীরা তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। হয়তো যাওয়ার অনুমতির অপেক্ষা করছে। অর্ণব অন্তিকে ছেড়ে দিয়ে নিজের সামনে দাঁড় করালো।

অর্ণব: তুই এই অসময়ে এখানে?

অন্তি: ভাইয়া! তুমি নিজে তো আমাদের সাথে দেখা করতে আসোই না উল্টো আমি এসেছি তাতেও রাগ করছো!

অর্ণব: রাগ হই নি। হঠাত এলি যে!

অন্তি: এংগেজমেন্টের শপিং এ যেতে হবে। কখন ফ্রি হবা? দিয়া ভাবি কে সাথে নিয়ে যেতে হবে তোমার।

অর্ণব: একটু পর ফ্রি হলে যাবো। তুই চলে যা। আমি দিয়াকে ফোন করে দেবো।

অন্তি: এই মেয়ে টা কে?

অর্ণব: নতুন PA অঙ্কুর স্যারের শুপারিশে এসেছে।

অন্তি: তোমার নাম কি?

মীরা আপন দুনিয়ায় মগ্ন আছে। এতোক্ষণ ভাই বোনের মধ্যে কি কথা হয়েছে তার কোনো হুশই নেই।

অন্তি পুনরায় জিজ্ঞেস করলে মীরার খেয়াল হয়।

মীরা: জ্বি মীরা।

অন্তি মীরাকে অর্ণব আর দিয়ার সাথে শপিং এ যেতে বলে যায়। মীরার হ্যাঁ বা না শোনার অপেক্ষা না করে অন্তি সেখান থেকে চলে যায়। অন্তি চলে যাওয়ার পর অর্ণব কিছুক্ষণ মীরার দিকে তাকিয়ে দৃষ্টি ফিরিয়ে নেয়। মীরাকে দেখার পর থেকে অর্ণবের মনে এক আগুন লেগে আছে। পুরোনো ক্ষত গুলো আজকে নতুন করে মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে।

সারাদিনের কাজ শেষে অফিস আওয়ার শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ আগে অর্ণব তার রুম থেকে বের হয়ে যায়। মীরা এখনও মোনার সাথে বসে আছে। কয়েকটা ফাইলে মুখ গুজে দিয়েছে সে। মোনার ডেস্কের সামনে গিয়ে অর্ণব ঠায় দাড়িয়ে আছে। মীরা এখনও উপুর হয়ে আছে ফাইলে। অনেকটা বিরক্তি নিয়ে অর্ণব মীরাকে ডেকে নিজের সাথে শপিং এ নিয়ে গেলো।


সারাদিন কাজ করায় এমনিতেই মীরা ক্লান্ত তার উপর অর্ণব পুরো শপিং মলে চক্কর লাগাচ্ছে। শাড়ি সেকশনে গিয়ে অর্ণব বেশ কিছু শাড়ি হাতে নিয়ে মীরার উপর ট্রায় করতে থাকে। মীরা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে অর্ণবের দিকে, শাকচুন্নিদের জামাই টা করছে কি!

অর্ণব: ওভাবে কি দেখছো! আমার হবু বউয়ের জন্য নিচ্ছি এগুলো। দিয়ার কালার কমপ্লেকশন অনেকটা তোমার মতো। এজন্যই!

মীরা কিছু না বলে মূর্তির মতো তাকিয়ে আছে অর্ণবের দিকে। অর্ণবের মতো এমন কেয়ারিং হাসবেন্ড প্রতিটা মেয়ের স্বপ্ন থাকে। যেই মেয়েটা অর্ণবের জীবনে আসবে হয়তো সে অনেক ভাগ্যবতী।

অর্ণব সব কিছু প্যাক করাচ্ছিল তখন মীরার মোবাইলে একটা কল আসে। কল টা রিসিভ করতেই মীরার হাত থেকে মোবাইল টা পরে যায়। মীরা কোনো কিছু না বলে কান্না করতে করতে সেখান থেকে বেরিয়ে যায়। অর্ণব কিছু একটা ভেবে ছুট লাগালো মীরার পিছনে।




২ দিন পর,

কালো পাতলা একটা শাড়ি পরে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে আছে মীরা। নিজেকে সাজাতে ব্যস্ত সে। লাল হয়ে ফুলে যাওয়া চোখ জোড়ায় কাজল লাগাচ্ছে সে। সামনে রাখা হালকা গোলাপী লিপষ্টিকটা ঠোঁটে মাখিয়ে চুল গুলো খুলে দিলো। বেশ সুন্দর লাগছে তাকে, শাড়িটাতে অনেকটা আবেদনময়ী লাগছে। আয়নায় নিজেকে দেখে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে সেখান থেকে সরে গেলো সে। আলিশান একটা কামরায় সম্পূর্ণ একা সে। সবধরনের দামী আসবাব পত্র আছে তার ঘরে। নেই শুধু মনে শান্তি আর জীবনে সুখ। বিছানায় গোলাপের পাপড়ি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। সময় টা এমন না হলে হয়তো মীরা একবার পাপড়ি গুলো হাতে নিয়ে খেলতো। একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে বিছানার কাছে গিয়ে দাড়ায়।

দরজা খোলার শব্দে বুকটা কেঁপে উঠে মীরার। অর্ণব ঘরে ঢুকেছে। হয়তো কিছুক্ষণের মধ্যেই তার সব শেষ হয়ে যাবে। তার অমূল্য সম্পদ তার সতীত্ব সে নিজ হাতে অর্ণবের কাছে সপে দেবে। ভাবতেই রুহ কেঁপে উঠছে মীরার। সে নিজেও বিশ্বাস করতে পারছে না এটা হতে চলছে।

অর্ণব ঘরের ভিতর ঢুকে ঠাসস্ করে দরজা টা বন্ধ করে দেয়। মীরার দিকে একনজর দেখে সে ওয়াশরুমে চলে যায়। মীরা এখনও সেভাবেই দাড়িয়ে আছে। কষ্টে তার ভিতরটা ফেঁটে যাচ্ছে। এতোটা অসহায় সে কখনও ছিল না। বাবার জীবন বাঁচাতে শেষমেষ তাকে নিজের ইজ্জত বিক্রি করতে হচ্ছে!!

২ দিন আগে শপিং মলে ছোট বোন মহুয়ার ফোন পেয়ে সে ছুটে গিয়েছিল বাবার কাছে। অর্ণব সাথে থাকায় তার গাড়িতেই বাবাকে হসপিটালে নিয়ে যায়। ডাক্তার জানায় জরুরি ভিত্তিতে হার্টের অপারেশন না করানো হলে বাঁচানো সম্ভব নয়। অপারেশন করানোর মতো টাকা না থাকায় অর্ণবের কাছে সাহায্যের হাত পেতেছিল মীরা। সাহায্য সে ঠিকই পেয়েছে। অবশ্য সেই সাহায্যের পিছনে দিতে হয়েছে তাকে চড়া মূল্য। নিজের অহংকার। তিন মাস অর্ণবের সাথে থাকার চুক্তিবদ্ধ হয়েছে সে। অর্ণবের সাথে থাকার বদলে তার বাবার জীবন সে বাঁচিয়েছে।

আচ্ছা তার বাবা যদি জানতে পারে তার জীবন কিসের বিনিময়ে সে ফিরে পেয়েছে? তখন মীরা কি উত্তর দেবে! না সে কোনো উত্তর দিতে পারবে না। তার কাছে এই জঘন্য প্রশ্নের কোনো উত্তর নেই। সারা জীবন অর্ণবের বাসায় কাজের লোকের কাজ করতেও তার অভিযোগ ছিল না। কিন্তু অর্ণব যে এতোবড় অমানুষ সেটা তার জানা ছিল না। চোখের পানিতে ইতোমধ্যে কাজল লেপ্টে গেছে মীরার। পানিটা মুছে কাজল টাও ঠিক করে নিলো সে। বিছানায় বসতেই অর্ণব বেরিয়ে এলো।

অর্ণব: এতো মেকআপ এর কি প্রয়োজন ছিল? আমরা স্বামী-স্ত্রী নই যে তোমার এতো সাজগুজ করতে হবে। রক্ষিতা হিসেবে এনেছি তোমাকে আমি। এর বেশি কিছু নয়।

অর্ণবের মুখে রক্ষিতা নাম টা শুনতেই বুকটা ছ্যাঁত করে উঠলো মীরার। সত্যি সে এখন কারো রক্ষিতা। যেই শব্দটা সমাজে একটা গালি হিসেবে ব্যবহার করা হয় সেটা তার নামের আগে যোগ হয়ে গেলো!! সে তো এটা চায় নি। খুব করে চেয়েছিল অন্যসব মেয়েদের মতো তার সুন্দর একটা জীবন হবে। কিন্তু হলো টা কি! তার সাথেই কেনো হচ্ছে এসব!

মীরা এক ধ্যানে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে।

অর্ণব মীরার সামনে এসে দাড়ালো। ভয়ে কুঁকড়ে আছে মীরা। বারবার চাইছে যাতে অর্ণব তার কাছে না আসে। কিন্তু আমরা যা চাই তা তো আর সবসময় হয় না!

অর্ণব মীরার কাছে বসে তার গলায় মুখ গুঁজে দিলো। অর্ণবের স্পর্শে মীরা মনে হলো কেঁপে উঠলো। অর্ণব মীরার গলায় চুমু খাচ্ছে আর চুলের গভীরে হাত বুলাচ্ছে। মীরার দুচোখ বেয়ে অঝোর ধারায় পানি পরছে। টাকার জন্য তখন অর্ণবের সব শর্তে রাজী হলেও এখন সে এসব মেনে নিতে পারছে না। ভীষণ কষ্ট হচ্ছে মীরার। কষ্ট সহ্য করতে না পেরে মীরা অর্ণবকে বলে,

মীরা: আমি আপনার সব টাকা পরিশোধ করে দেবো, আমাকে একটু সময় দিন। বিশ্বাস করুন সব টাকা দেবো। আমাকে যেতে দিন দয়া করে।

মীরার কথায় অর্ণব মীরাকে ছেড়ে উঠে দাড়ালো। মুহূর্তেই অর্ণবের চেহারা অগ্নিমূর্তি ধারণ করে। অর্ণবের এই রূপে ভীষণ ভয় করছে মীরার। ভয়ে তাকাতে পারছে না সে অর্ণবের দিকে।

মীরাকে টেনে দাঁড় করিয়ে অর্ণব মীরার কাঁধ ধরে ঝাকিয়ে বলে,

অর্ণব: এই কথাটা টাকা নেওয়ার আগে মনে ছিল না! টাকা নেওয়ার সময় তো বলেছিলে সব মানতে রাজী। তাহলে এখন কেনো মানা করছো? তোমার মতো হাজারটা মেয়ে অর্ণব চৌধুরীর সাথে একটা রাত কাটানোর জন্য পাগল। তোমার তো সাত পুরুষের ভাগ্য যে আমি তোমাকে সেই সুযোগ টা দিয়েছি।

মীরা: বিশ্বাস করুন আমি সেই ধরনের মেয়ে না। আমার এসব চাই না। বাবার অপারেশনে যেই টাকা গেছে সব আস্তে আস্তে আমি দিয়ে দেবো।

অর্ণব: আমার এতো টাকা আছে যে তোমায় টাকায় মুরিয়ে রাখতে পারবো। সো আমার সেই টাকা চাই না। চুক্তি মোতাবেক আমি তোমাকেই চাই, আমার রক্ষিতা হিসেবে।

মীরা: প্লিজ এমনটা করবেন না। আমার জীবন টা নষ্ট হয়ে যাবে। কাউকে মুখ দেখাতে পারবো না আমি।

অর্ণব: সেটা অবশ্যই আমার মাথা ব্যথা না। অবশ্য আজ আমি ভীষণ টায়ার্ড। তাই আজকে কিছু করবো না। আর নেক্সট্ টাইম থেকে এই কাজল লাগাবা না। একদম চিপ দেখা যায়।

মীরার উত্তরের অপেক্ষা না করে অর্ণব মীরাকে জরিয়ে ধরে ঘুমিয়ে পরলো। মীরা এখনও চোখের পানি ফেলছে। দুইদিন আগেও তার তার জীবন সুখে ভরপুর ছিল। আর আজ! নিজের ভাগ্যের উপর নিজের হাসি পাচ্ছে। অনেকক্ষণ কান্না করে মীরা ঘুমিয়ে পরে।




সকালে ঘুম ভাঙতেই মীরা নিজেকে অর্ণবের বাহুডোরে আবিষ্কার করে। অর্ণবের মুখের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মীরা। ঘুমন্ত অবস্থায় অনেক নিষ্পাপ মনে হচ্ছে তাকে। কিন্তু কেউ কি বলতে পারে তার ভিতর টা এতো নোংরা!

একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নিজেকে অর্ণবের থেকে সরিয়ে উঠে পরে সে। ফ্রেশ হয়ে নিচে নামতেই সার্ভেন্ট গুলোর সাথে দেখা হয়। বাড়িতে সার্ভেন্টগুলো বাদে আর কেউ নেই। সার্ভেন্টদের মধ্যে অনেকের চোখেই নিজের জন্য ঘৃণা দেখতে পাচ্ছে মীরা। হয়তো তারা সবাই অর্ণব আর তার একসাথে থাকার বিষয় টা জানে। নিজেকে নিকৃষ্ট মনে হচ্ছে মীরার। মন ভালো করতে ছাদে যেতে নিলে অর্ণব তাকে ডেকে পাঠায়।

অর্ণব: কোথায় গিয়েছিলে?

মীরা: একটু বাইরে,,

অর্ণব: তোমাকে কি আমি বাইরে যাওয়ার জন্য এ বাড়িতে এনেছি? তুমি আমার রক্ষিতা হয়ে এ বাড়িতে এসেছো। সো আমার সব কাজ তোমাকেই করতে হবে। যাও আমার জন্য নাস্তা বানিয়ে আনো।

মীরা চোখ মুছতে মুছতে উত্তর দিলো

মীরা: আমি রান্না করতে পারি না।

অর্ণব: পারো না শিখে নেও। ২০ মিনিট সময় আছে তোমার কাছে। এরপর সব কাজ শেষ করে আবার অফিসে যেতে হবে।

মীরা: অফিসে?

অর্ণব: তোমাকে কি আমি বসিয়ে বসিয়ে খাওয়াবো নাকি? নিজের খাবার নিজে উপার্জন করে খাবে। আর হ্যাঁ রান্না একা করবা কারো হেল্প নিতে পারবে না।

মীরা কিছু না বলে রান্না ঘরে চলে যায়। সে কখনও রান্না ঘরের মুখ দেখেছে কি না সন্দেহ। তবুও ইউ টিউব দেখে চেষ্টা শুরু করে দেয়। প্রথম বার হলেও খুব সাবধানে কাজ করতে থাকে মীরা। তখন সেখানে অর্ণব এসে মীরাকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরে। মীরা ঘাবড়ে গিয়ে পিছনে তাকাতেই দেখে অর্ণব তাকে ধরে রেখেছে।

অর্ণবের এভাবে জরিয়ে ধরায় মীরার বেশ অস্বস্তি হচ্ছে। কিন্তু চাইলেও সে কিছু করতে পারবে না। মীরার দুচোখের কার্নিশে পানি জমা হয়ে আছে। তবুও মীরা নিজেকে স্থির রেখে নিজের কাজ করছে। মাছ ভাজার জন্য তেল গরম করছিল সে।

অর্ণব মীরার ঘারের চুল সরিয়ে আলতো করে একটা চুমু দিয়ে দিলো। অর্ণবের ঠোঁটের স্পর্শে খানিকটা কেঁপে উঠে চোখ বন্ধ করে নিলো মীরা। কিন্তু পরক্ষণেই এক গগনবিদারী চিত্কার দিয়ে নিচে ছিটকে পরলো মীরা।

বাম হাতের প্রায় অর্ধেকটা পুড়ে গেছে মীরার। মাগো বাবাগো বলে চিত্কার করছে মীরা। আর অর্ণব মুখে বাঁকা হাসি নিয়ে দাড়িয়ে আছে। মীরার হাতটা ফুটন্ত তেলে অর্ণবই দিয়ে দিয়েছিল।

জ্বালা সহ্য করতে না পেরে মীরা দুতলায় তার ঘরে গিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে শাওয়ারের নিচে দাড়িয়ে পরে। পানির নিচে হাতটা রেখে কান্না করছে সে। প্রচন্ড জ্বালা পোড়া করছে তার হাত। ইচ্ছা হচ্ছে হাত টা শরীর থেকে আলাদা করে ফেলতে।

এদিকে অর্ণব সিগারেট হাতে ছাদে দাড়িয়ে আছে। চোখে মুখে প্রশান্তির হাসি। যেনো হাজার বছরের প্রতীক্ষার পরিসমাপ্তি হচ্ছে। সিগারেটে টান দিচ্ছে আর স্ট্রেস বলটা চাপছে। এক পর্যায়ে স্ট্রেস বলটা হাতে নিয়ে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে নিচে ফেলে দিলো সে। সিগারেটে শেষ টান দিয়ে অবশিষ্ট অংশটুকু নিচে ফেলে আকাশের পানে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here