তোমাতে করিবো বাস💗 #পর্ব_৬

0
292

তোমাতে করিবো বাস💗
#পর্ব_৬
লেখনীতে-আফনান লারা
.
তটিনি রাগের মাথায় বিয়েটা করতে চাইছে।এতে করে ফল যে খুব বেশি ভাল হবেনা তা বাপ্পি বুঝতে পারছে,কিন্তু এখন এইসব ভাবার সময় না।তটিনিকে সে এখন বিয়ে করতে না করলে ও হয়ত সত্যি একটা না একটা ছেলেকে ধরে বিয়ে করে নেবে।তটিনির ছোট বোন ঐশী একবার বাপ্পিকে এই কথা বলেছিল।বলছিল তটিনি অনেক আগ থেকেই যেটা বলে করবে সেটা শেষ অবধি করেই ছাড়ে।আজ ও যে তার নড়চড় হবেনা তা বাপ্পি জানে।এদিকে সে তো তটিনিকে চাইতোই।তবে সুযোগ এত সুন্দর করে হাতে আসায় সে কেন মানা করবে!সে নিশ্চয় বিয়েতে হ্যাঁ বলবে।বলবেই!
বাপ্পিকে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তটিনি নিজেই ওর মত করে থাই গ্লাসে মাথা ঠেকিয়ে নিচের রোডের দিকে চেয়ে থেকে বললো,’বিয়েটা করলে আসিফ ভাইয়ার মুখে ঝামা ঘঁষে দেবার মতন হবে!বেশ হবে!কত বড় সাহস!আমায় না জানিয়ে দশ বছর আগেই বিয়ে করে নিছে!যদি বিয়েই করে ছিলে তবে আমায় কষিয়ে থাপ্পড় দিয়ে বলতে পারলেনা”তটি এমন করে আমায় দেখিস না,আমার বউ আছে।তোর এই ভালবাসার প্রতিদান আমি দিতে পারবোনা,আমার হাত পা বাঁধা।তটি আমায় ভালবাসিস না,আমায় ভালবাসার একটা মানুষ আছে।সে আমার বিধানের বউ!কিছুই বলেনি লোকটা!আমি দিনের পর দিন তার প্রেমে মগ্ন হতে হতে আজ বিয়ের দিন এসে একেবারে পাগল হয়ে গেলাম।বাবার কথার খেলাপ করে সেই মানুষটাকে চাইলাম যে আমার অনুভূতিকে কখনও পাত্তা দেয়নি।তার যে আপন বলে একটা মানুষ আগে থেকেই আছে সে কথা সে আমায় জানায়নি।আমার কেয়ার এমন ভাবে করত যেন সেও আমায় ভালবাসে!!সব ছেলেরা খারাপ!!
বউ থেকেও আরেকজনের কেয়ার করতে তাদের দ্বিধাবোধ লাগেনা!’

বাপ্পি ভ্রু কুঁচকে বলে ‘আমার এমন স্বভাব নেই’

‘অবশ্যই আছে।আপনি জানেন আমি আসিফ ভাইয়াকে ভালবাসি তার পরেও”””তটিনি আমায় বিয়ে করো,তটিনি আমায় বিয়ে করো'”””স্লোগান লাগিয়ে রেখেছিলেন!’

‘এর সাথে আমি আসিফের মতন হয়ে গেলাম?আমার কি বউ আছে নাকি’

‘আচ্ছা হবো তো বউ।দেখবো আমাকে রেখে আরেক মেয়ের কেয়ার করেন কিনা!হাড্ডি ভেঙ্গে মাংসের ভেতরেই রেখে দিব’

এ কথা বলে তটিনি হাঁটা ধরলো করিডোরের দিকে,বাপ্পি ভাবছে হাড্ডি ভেঙ্গে ভেতরে রেখে দেয় কিভাবে।
দুজনেই বাপ্পির মায়ের সামনে এসে পৌঁছায়।তখন তিনি বললেন তিনি বাসায় ফিরে যাবেন।
কিন্তু তটিনি ওনার হাত ধরে থামায়।এরপর বলে তার কিছু কথা আছে।এই বলে সে বাবার কেবিনে ঢুকে যায়।এতক্ষণ সোফায় তারা দুজন বসেছিল এখন সেই সোফায় আসিফ আর রিনি বসে আছে।
তটিনি ওদের দেখেও না দেখার ভান ধরে বাবার কাছে এসে তার হাত শক্ত করে ধরে।এরপর জোর করে,খুব জোর করে মুখে হাসি ফেটায়।বাবার হাতটা চাপ দিয়ে বলে,”বাবা আমি বাপ্পিকে বিয়ে করবো এখন।বলো তুমি রাজি?’

বাবা বুঝতে পারছিলেন না এমন একটা সময়ে তটিনির এরুপ প্রস্তাবের কারণ কি!তাও রোবটের মতন বলে দিলেন ‘হ্যাঁ,আমার কোনো আপত্তি নাই’

ওমনি তটিনি বাবার হাত ছেড়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে গেলো।বাপ্পি বাইরেই ছিল।তটিনি বাপ্পির মায়ের দিকে চেয়ে বলে, ‘আন্টি!চলেন বাড়িতে।বিয়েটা আজই হবে।চলেন’

এই বলে তটিনি বাপ্পির মায়ের হাত ধরে হাঁটা ধরে।তটিনির মা আর ঐশী,ফুফু সবাই হা করে তাকিয়ে ছিল।মেয়েটার হলো কি!!
তটিনি যে আসিফকে পাগলের মতন ভালবাসে এই কথা বাসার সকলেই জানে এখন আসিফের বিয়ের কথা শুনে তটিনি বাপ্পিকে বিয়ে করতে নাচতে নাচতে চলে গেছে এটা তাদের ভাবনার বাহিরে ছিল না।তারা এমনটাই আন্দাজ করেছিল।
বাপ্পি,ওর মা আর তটিনি একটা সিএনজিতে উঠেছে।মাখখানে বাপ্পির মা আর দুপাশে বাপ্পি,তটিনি বসে আছেৃ গাড়ী চলছে তটিনিদের বাসার দিকে।তটিনি চুপ বাপ্পিও চুপ।হঠাৎ করে বাপ্পির মা বলে উঠলেন,’আচ্ছা সকাল থেকে তো আমার ছেলেকে বিয়ে করতে চাইছিলেনা।তবে এখন এত রাতে আবার মত বদলানোর কারণ কি শুনি?’

তটিনি কিছু বললোনা।তার নিরবতা বাপ্পির মায়ের মনে বিরুপ চিন্তা এনে দিতে পারে ভেবে বাপ্পি নিজেই বলে ওঠে,”আসলে হয়েছে কি মা!তটিনি ছোটমানুষ তো।বিয়ের মতন এত বড় একটা সিদ্ধান্ত নিতে সে হিমশিম খাচ্ছিল।এরপর ওর বাবা ওকে বুঝালেন,অসুস্থ হলেন।তাই মেনে গেলো’

বাপ্পির মায়ের কাছে এই কথাটা কেমন যেন হজম হলোনা।তাও মেনে গেলেন।বাড়ি ফিরে প্রতিবেশী কারোর খোঁচা শুনতে হবেনা অন্তত। নতুন বউ নিয়ে গেলে আত্নীয় স্বজন সবার সামনে জবাবদিহি করতে হবেনা।তবে বড্ড দেরি হয়ে গেছে।এত ছোটাছুটিতে তিনি ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন।
সিএনজি থেকে নেমে তটিনি বাসার দিকে ছুটে গোলো।বাপ্পি সিএনজির ভাঁড়া দিয়ে তার মায়ের সাথে চলছে।তটিনি বাসায় ঢুকেই তার ফুফাতো ভাই জিহাদকে ডেকে বললো হুজুরকে নিয়ে আসতে।তারপর ফোন খুঁজে মাকে,ঐশীকেও জানিয়ে দিলো সে আজই বিয়ে করতেছে,বাবাও রাজি।বাবাকে রেখে তারা কেউই আসতে পারবেনা তাই খালা,খালুকে দায়িত্বটা সঁপে দিছেন তটিনির বাবা।
তটিনি মাথায় ঘোমটা দিয়ে বাপ্পির পাশে সোফায় বসে পড়েছে।জিহাদ হুজুরকে নিয়ে এসেছেন সময়মত।
হুজুর ভাল করে নিশ্চিত হয়ে নিলেন তটিনি আসলেই বাপ্পিকে বিয়ে করতে চায় কিনা।কারণ এর আগে তটিনি তাকে দিয়ে দুবার লিখিয়েছে দুবার কাটিয়েছে।

তটিনি খোলসা করে বলে দিছে এবার যাই কিছু হোক সে বাপ্পিকেই বিয়ে করবে।
মামা আর ফুফু চলে এসেছেন হাসপাতাল থেকে।ওখানে মা আর ঐশী বাবার কাছে আছেন। বিয়ের দিন বিয়ে নাহলে এটা পাড়াপড়শির সামনে কতটা লজ্জাজনক তা মাথায় রেখেই আজকে এতকিছুর মাঝেও সকলে মিলে বিয়েটা হতে দেয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগে আছে।

বাপ্পি তটিনির দিকে তাকিয়ে আছে শুধু।তটিনির চোখে একটা জেদ ভাসছে,আসিফকে দুঃখ দেয়ার জেদ,এর বাহিরে আর কিছুই নেই।বাপ্পি জানে তটিনি ওকে বিয়ে করার পরেও একজন সাধারণ স্ত্রীর মতন ব্যবহার করবেনা তাও সে মনে মনে ভীষণ খুশি নিয়ে কবুল বলেছে।তার খুশি আর ধরছেনা।যেটা সে চেয়েছিল সেটা দিনের শেষ ভাগে এসে পূূর্ণ হবে তা আসলেই সে ভাবতে পারেনি।শেষ হতে হতে সে ভেবেছিল আসলেই বোধহয় সব শেষ।আর উপায় নেই তটিনিকে নিজের করে পাবার।
তটিনি এবার আর অপেক্ষা করেনি কবুল বলতে।হুজুর বলতে বলার সাথে সাথেই সে কবুল বলে দিয়েছে।ততক্ষণে সেখানে আসিফ আর রিনিও এসে গেছে।তটিনির বাবা ওদেরকে বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছেন।

আসিফ রিনিকে নিয়ে এসে বাসায় দেখে হুজুর বিয়ে পড়িয়ে চলে যাচ্ছেন।বাপ্পির বিয়ের গাড়ীটা তখনও উঠানে ছিল।তটিনি আসিফকে দেখে হনহনিয়ে গাড়ীর ভেতর ঢুকে বসে পড়েছে।
বাপ্পি তার মাকে পানি খাওয়াতে গেছিলো,ওনার নাকি শরীর খারাপ করছে।আসিফ সেসময় রিনিকে রেখে গাড়ীর জানালার কাছে এসে তটিনিকে বললো,’জানি আমার উপর জেদ দেখিয়ে তুই বাপ্পিকে বিয়ে করেছিস।এটাও জানি বাপ্পিকে মেনে নিতে তোর অনেক সময় লাগবে।কিন্তু একটা কথা বলি শোন,তোর জন্য উপযুক্ত আমার চাইতে হাজারগুন ভাল যদি কোনো ছেলে হয়ে থাকে,তবে সেটা বাপ্পি।ওকে কষ্ট দিস না।সে তোকে প্রচণ্ড ভাবে চায়!কদর করিস ওর’

তটিনি গাল ফুলিয়ে জানালা কাঁচ উঠিয়ে দিয়েছে।ততক্ষণে বাপ্পিও চলে এসেছে।কান্নাকাটির রেশ কাটলোনা,উঠলোই না কাটবে বা কি করে।মামা কেঁদেছিলেন বৈকি!কিন্তু তটিনি এক ফোঁটাও কাঁদেনি,সবার উপরের এক প্রকার ক্ষোভ নিয়ে সে গাড়ীতে বসে আছে,যদি এক মাস ধরে বিয়েটা নিয়ে কেউ তাকে জোর না করত তবে আজ আসিফের বিয়ের কথা শুনেও তটিনিকে বাধ্য হয়ে বিয়ের পিড়িতে বসতে হতোনা,একা রুমে বসে নিজের মনকে শান্ত করে নিতে পারতো সে।।
আপাতত মনে মনে সময়ের প্রহর গুনছে অন্য বাড়িতে গিয়ে ওঠার।এখানে আর থাকা যাবেনা।দম বন্ধ লাগছে।

এবার আর মা মাঝখানে বসেননি।বাপ্পিকে মাঝে বসিয়েছেন।
তটিনি জানালার সাথে লেগে দূরে আসিফ আর রিনিকে দেখছিল।রিনি তটিনিদের বাসাটা মাথা ঘুরিয়ে দেখছে আর আসিফ এক দৃষ্টিতে গাড়ীটার দিকে চেয়ে ছিল।গাড়ীটা বেশি সময় আর দাঁড়ায়নি,চালু হয়ে গেছে।
তটিনি ও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে বাইরে থেকে।ফিরিয়ে নিতেই টের পেলো বাপ্পি তটিনির শাড়ীর কুচি গুনে গুনে গুছিয়ে দিচ্ছে চুপটি করে থেকে।কোনো শব্দ করেনি,মনযোগ দিয়ে সে তটিনির শাড়ীর কুচি গুছিয়ে দিচ্ছিলো।তটিনি ওমনি কুচি সরিয়ে নিয়ে বাপ্পিকে রাগ দেখালো।বাপ্পি ও আর ধরলোনা পাল্টা। এই এক মাসে তটিনিকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন সে বুনেছিল।মনে মনে ঠিক করে রেখেছিল এই মেয়েটিকে অনেক যত্নে রাখবে।আজ নাহয় এই কুচি ঠিক করে দেয়ার যত্ন থেকেই যাত্রা করা হলো।

চলবে♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here