#বৌপ্রিয়া #আভা_ইসলাম_রাত্রি #পর্ব – |১২|

0
418

#বৌপ্রিয়া
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
#পর্ব – |১২|

কুসুমের সে রাতে এক ফোঁটাও ঘুম হল না। সম্পূর্ন রাত বিছানায় গড়াগড়ি খেতে খেতে বন্ধ ফোনের দিকে চেয়ে ছিল। ঘুম ধরা দিল একদম শেষ রাতে। সকালে সাহেদা মেয়েকে জেগে তোলার চেষ্টা করলেন। বাড়িঘর পরিষ্কার করছেন, ধোয়ামোছা করছেন, কত কাজ তার। অথচ কুসুম কি না বাড়ির মেয়ে হয়ে নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছে। সাহেদা শেষবারের মত কুসুমকে ডেকে গেলেন। জানালার পর্দা মেলে দিতে দিতে বললেন,

‘ উঠে পর কুসুম। ওরা এই আসলো বলে। এসে তোকে ঘুমাতে দেখল বিশ্রী লাগবে ব্যাপারটা। জলদি জলদি বিছানা ছাড়। ‘

সারারাত না ঘুমানোর কারণে কুসুমের চোখ লালচে হয়ে আছ। তীব্র মাথা ব্যথায় সে কাহিল। কুসুম গায়ের কাথা খামচে ধরে পাশ ফেরে। বিড়বিড় করে ঘুমন্ত কণ্ঠে আওড়ায়,

‘ এ-এ-এখন না। আ-আরেকটু ঘ-ঘুমাই না? ‘

সাহেদা শুনতে পান না কুসুমের কথা। দরজার পাশে থেকে উষা তাড়া দিচ্ছে, ওরা এসে গেছে। সাহেদা হাতে থাকা কুসুমের ওড়না ভাঁজ করে আলমারিতে তুলে দ্রুত মাথায় আঁচল তুলে বেরিয়ে যান বসার ঘরের দিকে এগিয়ে যান। কুসুম এখনো গভীর ঘুমে মগ্ন।

দরজার ওপাশে উচ্ছ্বাস ও তার পুরো পরিবার দাড়িয়ে আছে। উচ্ছ্বাস সাহেদাকে দেখেই এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরল তাকে। মৃদু হেসে বলল,

‘ খালামনি, কেমন আছো? ‘

সঙ্গেসঙ্গে উচ্ছ্বাসের মা পারুল ছেলের পিঠে থা/প্পড় বসান। চমকে উঠে উচ্ছ্বাস। সাহেদাকে জড়িয়ে ধরা অবস্থায় মায়ের দিকে প্রশ্নবোধক চোখে চায়। পারুল মুখ কুঁচকে বলেন,

‘ খালামনি কি? আম্মা বলবি। ‘

সাহেদা হেসে উঠেন। উচ্ছ্বাস অসহায় চোখে মায়ের দিকে চেয়ে বলে,

‘ সদ্য বিয়ে হয়েছে, আম্মা। কিছু সময় তো দাও। খালামনিকে আম্মা বলতে লজ্জা লাগছে আমার। ‘

পারুল ভ্রু কুচকান। সাহেদা পারুলের কাঁধে হাত রেখে বলেন,

‘ ধুর। তোমার এসব ঢং বন্ধ করো তো আপা। খালামণিই ঠিক আছে। ‘

তারপর উচ্ছ্বাসের ঘন চুলে হাত বুলিয়ে বলেন, ‘ কতদিন পর দেখলাম। বড় ছেলে হয়ে গেছিস। ‘

উচ্ছ্বাস মৃদু হাসে। মাথা চুলকে সরে আসে সাহেদার থেকে। সাহেদা ব্যস্ত ভঙ্গিতে বলেন, ‘ ভেতরে আয়। এই ভেতরে আসো সবাই। ‘

একে একে সবাই ঘরে প্রবেশ করে। সাহেদা দরজা বন্ধ করে এগিয়ে যান সবার দিকে। সবাই সোফায় বসে। উচ্ছ্বাস সোফায় বসে এদিক ওদিক চায়। তারপর গলা কেশে আবারও সাহেদার দিকে তাকায়। একটু পর উষা আসে সবার জন্যে শরবত নিয়ে। সবাইকে শরবত দিয়ে উচ্ছ্বাসের দিকে শরবত এগিয়ে দেয়। উচ্ছ্বাস শরবতের গ্লাস নিতে গেলে উষা ফিসফিস করে বলে,

‘ ঘরে ঢুকেই কাকে খুঁজছিলে? ‘

উচ্ছ্বাস হেসে বলে, ‘ কাউকে খুঁজছিলাম নাকি? ‘

‘ অভিনয় করছ? লাভ নেই। যাকে খুঁজছ সে ঘুম দিচ্ছে। নিজে গিয়ে ঘুম ভাঙিয়ে আসলে তবেই উঠবে বলে মনে হচ্ছে। ‘

উচ্ছ্বাস মৃদু হেসে গ্লাসে চুমুক দেয়। মুখ তুলে বলে, ‘ নাইস জুস। ‘

উষা প্রতিউত্তরে হেসে রান্নাঘরে চলে যায়। কুসুম ঘুমে শুনে উচ্ছ্বাসের মনে কোনো ভাবাবেগ হল বলে মনে হচ্ছে না উষার। উচ্ছ্বাস আগের মতোই সবার সঙ্গে কথা বলছে। উষা বিভ্রান্ত হল। কুসুম-উচ্ছ্বাসের সম্পর্ক কি এখনো স্বাভাবিক হয়নি? আশেপাশে পারুল কুসুমকে না দেখে সাহেদাকে প্রশ্ন করেন,

‘ হ্যা রে! কুসুম কই? ‘

সাহেদা অপ্রস্তুত হয়ে যান। বলেন, ‘ ঘুমাচ্ছে। দাঁড়াও, ডেকে আনছি।’

সাহেদা সোফা থেকে উঠে যেতে যান। তবে পেছন থেকে পারুল সাহেদার হাত টেনে ধরেন। বললেন,

‘ তুই যাচ্ছিস কেন? তুই আমার সঙ্গে গল্প কর। উচ্ছ্বাসের তো এখানে বসে কোনো কাজ নেই। ও গিয়ে ডেকে আনুক না? ‘

পারুল কথা বলে উচ্ছ্বাসের দিকে চান। উচ্ছ্বাসকে ইশারা করে বললেন,

‘ যা তো, কুসুমকে ডেকে নিয়ে আয়। ঘুমাচ্ছে ও। ‘

উচ্ছ্বাস অপ্রস্তুত হয়। গলা কেশে বলে, ‘ আমি যাব? ‘

পারুল চোখ রাঙান। বললেন,’ না, তোর বাপ যাবে। যা ডেকে নিয়ে আয় কুসুমকে। ‘

মায়ের রাগী কণ্ঠ শুনে উচ্ছ্বাস থতমত হয়ে যায়। গায়ে গতরে এবং বয়সে সে যতই বড় হয়ে যাক না কেন! মা’কে এখনো উচ্ছ্বাস অনেক ভয় পায়। মায়ের কথা সহজেই ফেলে দিতে পারে না। অতিরিক্ত সম্মান করে নিজের মাকে। তাই সে দ্রুত সোফা থেকে উঠে টিশার্ট টেনেটুনে ঠিক করে বলে, ‘ খালামনি, আমি যাচ্ছি। তুমি গল্প করো। ‘

পারুল লুকিয়ে হাসেন। উচ্ছ্বাস এগিয়ে যায় কুসুমের ঘরের দিকে। ঘরের দরজা হালকা ভিড়িয়ে রাখা। উচ্ছ্বাসের মনে পরে যায় তিন বছর আগের কথা। ঘরের দরজা এমন করে সেদিনও ভিড়িয়ে রাখা ছিল। তারপর সেদিন দরজা খুলে ভীষন অপ্রস্তুত পরিস্থিতিতে পরে যায় উচ্ছ্বাস-কুসুম দুইজনেই। আজকে এই ভুল করবে না উচ্ছ্বাস। উচ্ছ্বাস দরজার টোকা দেয়। একবার দুইবার, তিনবার। ভেতর থেকে সাড়া আসে না। কুসুম কি ঘুমাচ্ছে এখনো? অগ্যতা উচ্ছ্বাস দরজা খুলে দেয়। ভেতরে প্রবেশ করে। সহসা চোখ যায় বিছানার উপর লম্বা করে শুয়ে থাকা কুসুমের দিকে। যার চোখ বন্ধ, দুই চোখের পাতায় রাজ্যের ঘুম ভর করে আছে, শরীরে ওড়না নেই, কামিজের অবস্থা খারাপ। উচ্ছ্বাস আবারও অপ্রস্তুত হয়। তারা কাগজের দিক থেকে স্বামি স্ত্রী হলেও মনের দিক থেকে এখনো দুজন একে ওপরের কাজে অজানা, অচেনা। দুজনের মধ্যে বিস্তর ফারাক এখনো রয়ে গেছে। তিন বছর অগণিত বার মোবাইলে কথা বলার পরও এই দূরত্ব ঘুচে যায়নি। কুসুমকে এমন ছন্নছাড়া ভাবে শুয়ে থাকতে দেখে উচ্ছ্বাসের বুকের ভেতরটা তোলপাড় হয়ে যায়। চোখের দৃষ্টি নরম হয়ে আসে। উচ্ছ্বাস অন্যদিকে মাথা নিয়ে ঢোক গিলে। তারপর নিজেকে স্বাভাবিক করে এগিয়ে আসে কুসুমের দিকে। কুসুমের পাশে চেয়ার টেনে বসে। আশেপাশে চোখ রেখে খুঁজে কিছু একটা। বিছানার এক কোণে পরে থাকা ওড়না পেয়েও যায়। উচ্ছ্বাস সেটা হাতে নিয়ে কুসুমের গায়ে জড়িয়ে দেয়। হাত বাড়িয়ে কামিজ ঠিক করে দেয়। এসব করেছে তার পেছনে একটা কারণও আছে। উচ্ছ্বাস এখন কুসুমকে ডেকে তুলবে। উচ্ছ্বাসকে দেখে প্রথমে কুসুম চমকাবে ভীষনভাবে। তারপর সহসা নিজের শরীরের দিকে তাকাবে। তখন যদি শরীরের জামা কাপড় ঠিক না দেখে, নিজেও যেমন অপ্রস্তুত হবে। সেই পরিস্থিতি উচ্ছ্বাসকেও বিভ্রান্ত করবে। তাই উচ্ছ্বাস আগেভাগেই সতর্ক করে রাখল সবকিছু।
উচ্ছ্বাস এগিয়ে আসে। কুসুমের মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে মৃদু স্বরে ডাকে, ‘ কুসুম, উঠো। এই কুসুম? কুসুম? ‘

পুরুষালি চেনা কণ্ঠ শুনে ঘুমের মধ্যেই ভ্রু কুঁচকে ফেলে। কে এসেছে? কুসুম যাকে ভাবছে সেই কি? কুসুমের তর সয় না। পিটপিট করে চোখ মেলে তাকায়। চোখের সামনে কাঙ্ক্ষিত পুরুষ ঝুঁকে আছে। যার পুরুষালি হাত কুসুমের চুলে হাত বুলিয়ে যাচ্ছে। দৃষ্টি কুসুমের চোখেমুখে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কুসুম চমকে উঠে।
‘ও আল্লাহ! ‘ বলে চেঁচিয়ে উঠে দ্রুত শোয়া থেকে বসে যায়। কুসুমের আচমকা চেঁচানোতে ঘাবড়ে যায় উচ্ছ্বাস। মুখ সরিয়ে এনে ভ্রু কুঁচকে তাকায় কুসুমের দিকে।

#চলবে
সবাই বড় বড় মন্তব্য করবেন প্লিজ।
গল্পের পরবর্তী সকল আপডেট পেতে যুক্ত হোন লেখিকার নিজস্ব গ্রুপে। গ্রুপ লিংক,
https://facebook.com/groups/929533097975216

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here