#বৌপ্রিয়া
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
#পর্ব – ৩২
উচ্ছ্বাস শান্ত ভঙ্গিতে সব শুনে বলে, ‘পাঁচ মিনিট শান্ত হয়ে আমার কথা শুনো। তারপর অভিযোগ করবে, কুসুম। আমি বাঁধা দেব না। জাস্ট ফাইভ মিনিট’স! ‘
কুসুম থামে। চুপ করে কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থেকে উচ্ছ্বাসের থেকে কিছুটা দূরে বিছানায় বসে। তা দেখে উচ্ছ্বাস ছোট্ট করে নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল,
‘দূরে বসেছ কেন? কাছে এসো।’
কুসুম উপলব্ধি করল, উচ্ছ্বাসের গলায় কাতরতা। উচ্ছ্বাসের কণ্ঠে উচ্ছ্বাস নেই উপলব্ধিতে বুক কেপে উঠল কুসুমের। না চাইতেও, উদভ্রান্তের ন্যায় এগিয়ে গিয়ে উচ্ছ্বাসের পাশে এসে বসল। কিছুক্ষণ নিরবতা। অতঃপর হাত বাড়িয়ে উচ্ছ্বাস কুসুমের হাত নিজের হাতে আলতো করে চেপে ধরল।
কুসুমের চোখের দিকে চেয়ে কিছু বুঝার চেষ্টা করল। অভিমানে অভিমানিনি দিগ্বিদিকশূন্য। উচ্ছ্বাস দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলতে থাকে,
‘বিদেশ থেকে আসার পর, আমি চেম্বার খুলি। সেই সঙ্গে প্ল্যান করি, নিজের একটা হসপিটাল খোলার। হসপিটাল খোলা চাট্টিখানি কথা না জানোই তো। অনেক টাকার ব্যাপার। আমরা অনেকজন ডাক্তার ব্যাচমেট মিলে আমরা টাকা জমিয়ে শেয়ার কিনি। হসপিটালের জন্যে সবাই কিছু টাকা জমাই। বাকি টাকা ব্যাংক থেকে লোন নেই। হসপিটালের কাজ শুরু হয়েছে কদিন হয়েছে। কিন্তু জমি নিয়ে এখন ঝামেলা হচ্ছে। রাজনৈতিক নেতাদের খপ্পরে পরেছে জমি। ভালো এবং দামি জমি হওয়ায় তাদের নজরে জমির লোভ। আজকে এসেছিল সাইটে ওরা। আমি কয়েকটা কটু কথা বলে দিয়েছিলাম। আসলে রাগে নিজেকে সামলাতে পারছিলাম না। তখন সাইটে ওরা কিছু না বললেও, আজকে বাড়ি আসার পথে কজন মুখ বাঁধা লোক হঠাৎ করে আক্রমন করে উঠে। হঠাৎ সবকিছু হওয়ায় ঠাল সামলাতে পারিনি। নিভে গেছিলাম। তার ফল এসব আঘাত, এই চোট!’
কুসুম হতভম্ব চোখে উচ্ছ্বাসের দিকে চেয়ে রইল। টালমাটাল জলে দু চোখ ভিজে। গড়িয়ে পরল জলের বিন্দু। এমন আঘাতে ক্ষতবিক্ষত উচ্ছ্বাসকে আগে দেখেনি কুসুম, এবং এখনও দেখার সাহস নেই। কুসুম কিছুক্ষণ হাত বাড়িয়ে উচ্ছ্বাসের কপালে থাকা ব্যান্ডেজ ছুঁয়ে দিল। উচ্ছ্বাস চোখ বন্ধ করে অনুভব করল কুসুমের হাতের ছোঁয়া। কি নরম করে ছুঁয়ে দিচ্ছে তাকে কুসুম। যেন সামান্য ছোঁয়ায় ব্যথায় মরণ হবে উচ্ছ্বাসের। উচ্ছ্বাস মৃদু হেসে কুসুমের চোখের পানি আঙুল দিয়ে মুছে দিল। বাচ্চাদের মত করে বোঝানোর ভঙ্গি করে বলল,
‘সামান্য চোট। ঠিক হয়ে যাবে। কেঁদো না।’
কুসুম কান্না আটকানোর চেষ্টা করল। নাক টেনে টেনে বলল,
‘আপনার জীবন কি এখন ঝুঁকিতে? কিছু কি করে ফেলবে ওরা আপনার? সত্যি করে বলেন।’
উচ্ছ্বাস কুসুমকে আশ্বস্ত করার ভঙ্গি করে বলল,
‘আমি আসার পথে মামলা করে এসেছি। অবশ্য মামলায় কাজ হবে বলে মনে হচ্ছে না। তাই আমি উপর মহলের কিছুজনকে ধরেছি। এসব পাতি নেতাদের তারাই দেখে নিবে। চিন্তা করো না।’
কুসুম আশ্বস্ত হল। আনমনে চেয়ে রইল উচ্ছ্বাসের বুকের দিকে। খানিক পর উচ্ছ্বাসের বুকে আলতো করে হাত রেখে ভেজা কণ্ঠে উচ্চারণ করল,
‘আমি যদি আপনার বুকে একটু মাথা রাখি, আপনি কি খুব বেশি ব্যথা পাবেন?’
কি নিদারুণ আবদার! যে কেউ শুনে গলে যেতে বাধ্য। আর এ তো স্বয়ং উচ্ছ্বাস। কুসুমের একটুখানি আবদারে সকল ব্যথা যার সুখ হয়ে যায়! উচ্ছ্বাস দুহাত বাড়িয়ে দিল। চোখের ইশারা করে বলল,
‘আসো, ঝাঁপিয়ে পরো এই বুকে।’
কুসুমের চোখ ঝলমল করে উঠল। যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছে সে। কুসুম ঝাঁপিয়ে পরল না। বরং আলতো করে মাথা রাখল তার বুকে। উচ্ছ্বাসের ঠোঁটের সর্বত্র হাসি ছড়িয়ে। মেয়েটা বুকে মাথা যতবার রাখে, সুখে কেমন কুকড়ে যায় উচ্ছ্বাস। কখনও ভাবেনি, এই ছোট্ট মেয়ের মধ্যেই তার জীবনের সব সুখ লুকিয়ে থাকবে! কখনও ভাবেনি, বিয়ে নামক বন্ধনে এতোটা মায়া, এতটা মহব্বত লুকিয়ে আছে! বিয়ে করেছে সে। এখন যদি একটা বাচ্চা থাকত তাদের? কেমন হত? কোমরে আঁচল গুঁজে রান্না করা বউকে দেখে যেমন নিজেকে পৃথিবীর সেরা সুখী মনে হয়, তেমন করে বাচ্চাকে শাসন করা মা হিসেবে কুসুমকে দেখতে কি অস্বাভাবিক সুন্দরই না লাগবে! উচ্ছ্বাস মনেমনে সেসব কল্পনা করে ক্ষণেক্ষণে রোমাঞ্চিত হতে থাকে। পরপরই নিজের ভাবনায় লাগাম টানে। বাচ্চা তার চাই, অপেক্ষা করতে ইচ্ছে করছে না তার। কিন্তু সে কথা দিয়েছে তার পরিবারকে। কুসুমের পড়াশোনা শেষ হলেই বেবি প্ল্যান করবে তারা। তবে এতোটা বছর ধৈর্য্য ধরা আদৌ সম্ভব হবে উচ্ছ্বাসের জন্যে? অপেক্ষায় ক্লান্ত উচ্ছ্বাস কি মরে যাবে না? তবে কিছুই করার নেই। বিয়ে করেছে অবেলায়। তাই বেলা হবার আগে নিজের ইচ্ছে আপাতত ধামাচাপা দিতে হবে।
______
রাত যত বেড়েছে, উচ্ছ্বাসের জ্বর হুহু করে বেড়েই চলেছে। কুসুম শেষবারের মত থার্মোমিটার দিয়ে জ্বর মাপে,১০৩° জ্বর। কুসুমের কান্না পেয়ে যাচ্ছে। একা একা সব সামলাতে পারছে না, সবাইকে ডাকতে চাইছে সে। কিন্তু উচ্ছ্বাস মানা করছে। খামোকা সবাই ক্ষতবিক্ষত উচ্ছ্বাসকে দেখলে চিন্তায় সেখানেই মূর্ছা যাবে। কুসুম একহাতে চোখের জল মুছে মুছে উচ্ছ্বাসের শরীর মুছে দিল। উচ্ছ্বাসের সারা গা গরম হয়ে আছে। কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে। কুসুম স্যুপ খাওয়ানোর চেষ্টা করল তাকে। কিছুটা খেয়েই পুরোটাই বমি করে ফেলে দিল। কুসুম পরল মহা বিপাকে। ফল কেটে এনে খাওয়ানোর চেষ্টা করল। কিছুটা খেয়েই হাত দিয়ে মানা করল উচ্ছ্বাস। কুসুম জোর করল না। বাটি রেখে দিয়ে আরো একবার নরম হাত রাখল উচ্ছ্বাসের উত্তপ্ত কপালে। ইশ, পুড়ে যাচ্ছে যে হাত। কুসুম ভেজা ভেজা কণ্ঠে বলল,
‘এতোটা জ্বর। কি করব আমি? কমছে না কেন এই জ্বর। আপনার কথামত ঔষধ তো দিলাম। তাও কমছে না। আমি কি খালা.. আম্মাকে ডেকে আনব, প্লিজ!’
উচ্ছ্বাস হাত বাড়িয়ে মানা করল। গায়ের কম্বলটা নিজের সঙ্গে মিশিয়ে নেবার চেষ্টা করে বলল, ‘ খু–ব ঠা–ন্ডা লা-গ-ছে।’
কুসুম কি করব ভেবে পাচ্ছে না। হাত দিয়ে পায়ের পাতা মালিশ করে দিল, হাত মালিশ করে দিল। হিটার এনে পাশে রাখল। কুসুম যখন এত ব্যস্ত তখন হাত বাড়িয়ে উচ্ছ্বাস জ্বরের ঘোরে কুসুমকে নিজের দিকে টেনে নিল। কুসুমের গলায় মুখ রাখলে কুসুম উপলব্ধি করে তার গলায় কেউ আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। কুসুম ছোট্ট করে উচ্চারণ করল, ‘জ্বরে পুড়ে যাচ্ছেন। ঔষধ দেই আরেকটা?’
উচ্ছ্বাস শুনল না। বরং স্ত্রীকে নিজের সঙ্গে বেধে ফেলল আরেকবারের মত। কুসুমও হার মানল চরম উত্তাপের কাছে। আলতো হাতে জড়িয়ে ধরল উচ্ছ্বাসকে।
#চলবে
ভেবেছিলাম আজকে একটা সারপ্রাইজ দেব বড় পর্ব লিখে। বাট আব্বুর ছোটখাটো অপারেশন হয়েছে। বাসা ভর্তি মেহমান গিজগিজ করছে। তাই দেওয়া হল না। আগামী পর্বে দেব। সবাই রেসপন্স করবেন। কমেন্ট বিজয়ী আজকে দেওয়া হল না। রিচেক অব্দি দেই নাই। পরে এডিট করে ঠিক করে দেব।
গল্প কবে দেই, বা গল্প সম্পর্কিত সমস্ত আপডেট পেতে জয়েন হোন আমাদের গ্রুপে, গ্রুপ লিংক,
https://facebook.com/groups/929533097975216/