#আকাশেও_অল্প_নীল
#পর্বঃ১০
#আর্শিয়া_ইসলাম_উর্মি
২৬,
স্নেহার কথার উত্তরে সাহিরা বেগম বললেন,
“আবদার টা অন্যায় না ন্যায় বিষয়টা তেমন নয় মা। রাইমা আর দিগন্ত বাবা রাজী হবে কিনা! এটাও ভাববার বিষয়।”
“হ্যাঁ স্নেহা, রাইমার তো অনেক স্বপ্ন আছে। সেগুলো পূরণ না করে ওতো বিয়ের কথা ভাববেও না বলে জেদ করে বসে আছে। এসময় বিয়ের কথা বললে, বাড়িতে তোলপা”ড় শুরু করে দিবে।”
শাহনাজ বেগম বোনের কথার সাথে তাল মিলিয়ে কথাটা বলেন। মাহাদ কিছু সময় চিন্তা ভাবনা করে তার মা আর খালামনির দিকে তাকিয়ে বললো,
“আমরা একবার রাইমাকে বলে দেখতে তো পারি? দিগন্ত রাজী থাকলে বিয়ের বিষয়ট ভাবা উচিত আমাদের। রাইমার এমনিতেও কোনো ছেলের সাথে সম্পর্ক নেই৷ আর এখন কার মনের মাঝে কি থাকে বোধা দায়! মানুষ নিজের মন নিজে বুঝতে পারেনা। সেখানে অপরিচিত একজন ছেলের সাথে বিয়ে দিয়ে ভালো থাকবে নাকি খারাপ থাকবে! সেই চিন্তায় দিন কাটানোর থেকে দিগন্তের সাথে বিয়ের ব্যাপারটা একবার রাইমাকে বুঝিয়ে বলা উচিত।”
শাহনাজ বেগমের মাহাদের কথাটা পছন্দ হলেও মেয়ের কথা ভেবে দোনামনা করতে লাগলেন। স্নেহা তাদের কথার মাঝে বললো,
“বিয়েটা এখনই হতে হবে! বিষয়টা এমন নয় আন্টি। আপনারা সময় নিন! দেখুন রাই কি বলে! যদি সম্ভব হয় দুই বিয়ে একসাথেই হয়ে যাবে। ঝামেলাও কম হবে।”
সাহিরা বেগম আর শাহনাজ বেগম মুচকি হাসলেন স্নেহার কথায়। মাহাদ একটু চিন্তিত স্বরে বললো,
“সব কথাই তো বুঝলাম, আমাদের রাই ম্যাম কিচেনে গিয়ে কি করছেন দিগন্তের সাথে, এটাই তো চিন্তার বিষয়৷ যে দস্যি মেয়ে, দিগন্তের অবস্থা না নাজেহাল করে দেয়।”
“ওদেরকে ওদের মতো ছেড়ে দাও৷ দুজনে কথাবার্তা বলে যদি ঝগড়াও করে, তবুও সই। ওদের ঝগড়া দিয়ে শুরু সম্পর্কটা যদি বিয়ে অব্দি গড়ায়! দারুণ হবে।”
স্নেহা হেসে কথাটা বললো। সাহিরা বেগম হেসে বললেন,
“ভাইয়ের বিয়ের জন্য একেবারে দেখছি তাড়াহুড়ো শুরু করে দিয়েছো! বলি নিজের বিয়েটা তো আগে শেষ হতে দাও।”
“ঠিক সময়টায় বিয়ে করলে আপনাদের ২-৪টা নাতি-নাতনী উপহার দিতে পারতাম আন্টি। ভাগ্যিস আপনারা মানুষগুলো অত্যন্ত উদার মনের। নয়তো তিরিশ উর্ধ্ব নারীকে কেউ পুত্রবধু করতে চায়! বয়স বেশি, এই কারণই তো যথেষ্ট ছিলো মেনে না নেওয়ার!”
স্নেহার কথায় সাহিরা বেগম প্রথমে হাসলেও পরে একটু রেগে যান। স্নেহার দিকে তাকিয়ে থমথমে গলায় বলেন,
“বয়স শব্দটা দিয়ে দুজন ভালোবাসার মানুষকে আলাদা করার মানে হয়? কি হয়ে এই বয়স নামক শব্দটার বেড়াজাল মেনে? যদি আমার ছেলেই ভালো না থাকে?”
স্নেহা সাহিরা বেগমের কথায় খুশিতে কেঁদে দেয়। চোখের কোণে তার জলেরা ভীর জমায়। আবেগে স্নেহা জড়িয়ে ধরে সাহিরা বেগমকে। সাহিরা বেগম মুচকি হেসে স্নেহাকে আরও কিছু টা শক্ত করে ধরে। শাহনাজ বেগম পাশে বসেই বললেন,
“শাশুড়ী বউমা মিলে গেলো, খালা শ্বাশুড়ি এখানে গড়াগড়ি খাচ্ছে।”
স্নেহা হেসে সাহিরা বেগম কে ছেড়ে বসে। মাহাদ মুগ্ধ হয়ে নিজের জীবনের দুই শ্রেষ্ঠ নারীকে দেখছে। এক নারী তার মা, অন্য নারী তার ভালোবাসার মানুষ।তাদের এই মুহূর্ত আজীবন অটুট থাকুক। সাহিরা বেগম স্নেহার হাত দুটো নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলেন,
“শোনো মা, আমি মানুষ, কোনো ফেরেশতা নয়। অতিরিক্ত ভালো মানুষও আমি নই। আমার ছেলের কোনো সমস্যা দেখলে হয়তো তোমা মেজাজ হারিয়ে রাগে দুঃখে দুই চারটা কড়া কথা শুনিয়ে দিবো। কারণ সংসার জীবন, কেউ বলতে পারবেনা যে তার সংসার জীবনে অশান্তি হয়নি! যতো ভালোই হোক। এটা কখনও সম্ভব না যে সংসার জীবনে ঠুকঠাক কিছু হবেনা। তাই কখনও কিছু বললে, নিজের মা বলেছে মনে করে রাগ ফেলে আমায় একটু এভাবেই জড়িয়ে ঠান্ডা করে দিও। বুঝলে!”
স্নেহা মাথা দুদিকে হেলিয়ে হ্যাঁ বোঝায়। এরপর সবাই টুকটাক গল্প করতে ব্যস্ত হয়ে পরে।
২৭
“একি আপনি? সবাইকে ছেড়ে আমি কিচেনে আসতে গেলেন কেনো এসব নিয়ে?”
দিগন্ত রাইমাকে দেখে প্রশ্নটা করে। রাইমা হাতের ট্রে-টা বেসিনের একপাশে রেখে দেয়। এরপর দিগন্তের দিকে ফিরে বলে,
“আমি তো অস’ভ্য মেয়ে। অস’ভ্য মেয়ের কাজই তো অস’ভ্যতামি করা। সেজন্য আসলাম একটু অসভ্যতামি করতে।”
দিগন্ত এক ভ্রু উঁচিয়ে রাইমার দিকে তাকায়। তবে উত্তর দেয় না। আপাতত ত্যাড়ামি করতে তার একটুও ভালো লাগছেনা। হাতের কাজগুলো চটপট সেরে নেয় সে। রাইমা বুকে হাত বেঁধে দাড়িয়ে দাড়িয়ে দিগন্তের কার্যকলাপ দেখছে। দিগন্ত রান্না করা সব খাবার, কাঁচের বাটি, গামলায় বেড়ে ডাইনিং টেবিলে সুন্দর করে সাজাচ্ছে। সবকিছু নেওয়া শেষ প্রায়। দুটো বাটি বাকি আছে আর টেবিলে নেওয়ার জন্য। দিগন্ত যখন নিতে আসে রাইমা তখন দু পা এগিয়ে দিগন্তের দিকে পা বাড়ায়। দিগন্ত একটু থেমে রাইমার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় প্রশ্ন করে,
“কোনো দরকার আছে এখানে থাকার? না থাকলে আপার কাছে গিয়ে বসে থাকতে পারেন।”
“দরকার তো অবশ্যই আছে মি: দিগন্ত আহসান।”
“তা কি দরকার আপনার মিস রাইমা খন্দকার?”
দিগন্ত কাজ ফেলে বুকে হাত বেধে কড়া চাহনীতে রাইমার দিকে তাকিয়ে প্রশ্নটা করে৷ রাইমা দিগন্তের গম্ভীর চাহনী দেখে একটু ঘাবড়ে যায়। তবুও নিজেকে শক্ত রাখার চেষ্টা করে। দিগন্তকে পাশ কা’টিয়ে যেতে যেতে বলে,
“আপনার প্যান্টের চেইন খোলা।”
রাইমার কথাটা কর্ণগোচর হতেই দিগন্তের দৃষ্টি এক লোহমায় নিজের প্যান্টের দিকে যায়। না সব ঠিকঠাকই তো আছে। তবে এই মেয়ে এমনটা বললো কেনো? দিগন্ত চট করে পিছ ফিরে তাকায়। রাইমা যায়নি। কিচেনের দরজায় দাড়িয়ে মিটমিট করে হাসছে। দিগন্ত নিজের দিকে তাকিয়ে পা থেকে উপর অব্দি যতোটুকু দেখা যায় দেখে নেয়৷ সব ঠিকই তো আছে। তবে এই মেয়ে তাকে দেখেই হাসছে কেনো? আর কি বললো একটু আগে! কথাটা মনে পরতেই দিগন্ত রাইমাকে রাগী স্বরে তেজ নিয়ে জিগাসা করে,
“আপনি মিথ্যা কথা বললেন কেনো? আর আমায় এভাবে স্ক্যানিং করারই মানে কি?”
“আপনাকে ঘাবড়ানোর জন্য। একটু মজা করার জন্য। কেমন ফিলিংস হলো বলুন তো! আপনিও যখন আমায় সেদিন স্ক্যানিং করার মতো আপাদমস্তক চোখ ঘুরিয়েছেন আমার উপর! আমার অসস্তি লেগেছিলো, যেমনটা আপনার আজ লাগলো। আর বলেছিলেন না আমার সালোয়ার উল্টো! সেই কথার হিসেবে বললাম প্যান্টের চেইন খোলা। কারণ জানিই এই কথা বললে মানুষ নার্ভাস হয়ে পরে। আপনালে সবসময় তেজের সাথে দেখে বিরক্ত হয়ে উঠেছিলাম। তাই নার্ভাস হলে কেমন লাগে দেখে নিলাম।”
রাইমা একদমে কথাগুলো বলে জোড় কদমে কিচেন ছেড়ে বেরিয়ে যায়। দিগন্ত হতভম্ব হয়ে দাড়িয়ে ভাবে, এই মেয়ে পাগল নাকি! কার কপালে জুটবে রব জানেন! যার কপালে জুটবে, তার জীবন শে’ষ। দিগন্ত হাফ ছাড়ে। কেমন একটা বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দিয়েছিলো। আসলেই অস’ভ্য বলে ভুল করেনি সে। নামটা সুন্দর, মেয়েটা একদম অস”ভ্য। দিগন্ত বিরবির করে এসব বলে বাকি কাজগুলো দ্রুত শেষ করে। তার বোন পুরো রেস্টুরেন্ট বানিয়ে ফেলেছে কিচেন টাকে। কয়েকজন মানুষের জন্য এতো আইটেম কেউ রান্না করে! কম হয়েছে, আরও কিছু আইটেম রান্না করতে হতো। দিগন্ত বিরক্ত হয়ে সব কাজ সেরে সবাইকে ডেকে নেয়। এরপর হাসি ঠাট্টায় খাওয়া দাওয়া শেষ করে মাহাদরা স্নপহা আর দিগন্তকে বিদায় জানিয়ে বাসায় ফিরে যায়৷
২৮,
মাঝখানে কেটে গিয়েছে বেশ কয়েকদিন। আজ বৃহস্পতিবার। শার্লিন আর রাইমা ভার্সিটি শেষে ফ্রেশ হয়ে খেয়ে বাসার সামনের রাস্তাটা দিয়ে হাটতে হাটতে গল্প করছে। দুজনেরই উদ্দেশ্য মহল্লার এক পাশে বাচ্চাদের খেলার মাঠটায় সবুজ ঘাসের উপর খালি পায়ে হাটবে। শীত পেরিয়ে বসন্তের ছোয়ায় মাতবে প্রকৃতি। চারদিকে বসন্ত বসন্ত আমেজ। শার্লিন হাঁটতে হাঁটতেই বলে উঠে,
“দিগন্ত ভাইকে তোর কেমন লাগে?”
আচমকা এমন প্রশ্ন করায় হকচকিয়ে যায় রাইমা। শার্লিনের দিকে তাকিয়ে চোখ দুটো ছোটো-ছোটো করে বলে,
“কেমন লাগে বলতে? কি বোঝাতে চাচ্ছিস?”
“তুই যা ভেবেছিস, তাই বুঝিয়েছি।”
“আমি কি ভাবলাম আজব?”
“তুই কি ভেবেছিস, আমি কি করে জানবো?”
“তাহলে বললি কেনো! আমি যা ভেবেছি, তুই তা বুঝিয়েছিস?”
“ওটা তো কথার কথা।”
“রাখ তোর কথার কথা, ব্যাঙের মাথা। ঐ আজাইরা লোকের কথা আমার সামনেও উচ্চারণ করবিনা। মাহাদ ভাইয়ের বিয়ের সময় বনবাসে যাবো আমি। ঐ লোককে কি করে যে সহ্য করবো, চিন্তায় পরে আছি আমি।”
রাইমা রেগে হনহনিয়ে আগে আগে যেতে যেতে কথাটা বলে। শার্লিন খানিকটা দৌড়ে রাইমাকেমধরে হাঁপাতে হাঁপাতে বলে,
“দিগন্ত ভাই তো ভালোই আছে। তোর এতো কেনো বিরক্তি মানুষটার প্রতি!”
“কচু ভালো তোর দিগন্ত ভাই। কচুর মতোই চুল*কানি আছে লোকটার। রাগী, এটিটিউড খড়ের গাদার মতো মাথা উচু করে দাড়িয়ে আছে উনার ভেতর। গম্ভীর হয়ে থাকা যেনো তার বউ লাগে। বউ ছাড়া যেমন বেডা মানুষ বিয়ের পর থাকতে পারেনা, এই লোকটারও সেইম অবস্থা। গম্ভীর না হয়ে কখনও থাকতেই পারেনা। কিছু মানুষ থাকে অকারণেই তাদের বিরক্ত লাগে। দিগন্ত লোকটাও তেমন। কারণ ছাড়াই উনাকে আমার ভালো লাগেনা।”
শার্লিন রাইমার উত্তরে কপাল চাপড়ে বলে,
“হায় কপাল! এই লোক তোর কপালে জুটলে দেখছি দিন দুপুরে চাঁদ তারা দেখিয়ে দিবি তুই?”
“ঐ লোক আমার কপালে জুটতে যাবে কেনো? হুঁশ থাকতে উনাকে আমি বিয়ে করবো নাকি?”
“আর আমার হুঁশ থাকতে আমি খুব আপনাকে বিয়ে করবো তাইনা?”
শার্লিন আর রাইমা তাদের দুজনের কথার মাঝে গম্ভীর গলায় পুরুষালী কণ্ঠে কথাটা শুনে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায়। তাকিয়ে দেখতে পায় দিগম্ত পকেটে হাত গুঁজে গাম্ভীর্যের সহিত দাড়িয়ে এক ভ্রু উচিয়ে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। রাইমা আর শার্লিনের আখিদ্বয় যেনো এখনই বেরিয়ে আসবে, এমন বড়ো বড়ো চোখে তাকিয়ে দিগন্তকে দেখছ। রাইমা বিরবির করে শার্লিনকে জিগাসা করে,
“আমাদের কথার মাঝে এই লোক কোত্থেকে আসলো শালু?”
“তুই যেখানে দাড়িয়ে, আমিও সেখানেই। কিভাবে বলবো বল?”
রাইমার মতোই ফিসফিস করে উত্তর দেয় শার্লিন। দিগন্ত ওদের বিরবির করতে দেখে বলে,
“আপনারা দুজনে কি বিরবির করছেন?”
রাইমা নিজেকে ধাতস্থ করে বললো,
“কিছু না, যাই বলি আপনাকে কেনো বলবো? আর আপনি আমাদের দুজনের কথার মাঝে কোত্থেকে ভুতের মতো উদয় হলেন?”
চলবে?
ভুলত্রুটি মার্জনীয়। রিচেইক করিনি। হাতটা একটু ঠিক হয়ে এসেছে। পুরো ঠিক না হওয়া অব্দি হয়তো এমনই একটু অনিয়ম হবে গল্প দিতে। দুয়া করবেন আমার জন্য । আসসালামু আলাইকুম।