#আকাশেও_অল্প_নীল #পর্বঃ৩৫ #আর্শিয়া_ইসলাম_উর্মি

0
315

#আকাশেও_অল্প_নীল
#পর্বঃ৩৫
#আর্শিয়া_ইসলাম_উর্মি

১১৫,
রাইমার বিদায়ের পর নিজেকে অনেক কষ্টে সামলে নিয়েছে শার্লিন। রাইমা চলে যাওয়ার পর পুরো বাড়ি তার অভাবে খা খা করছে। শার্লিন নিরবে পুকুরপাড়ের শান বাধানো ঘাটে বোসে আছে ইফরাদের কাঁধে মাথা এলিয়ে। শিখা, রেখা, সাইরা, সাইফা, তিশা, রাহান, মিহাল-নিহাল, মেসবাহ সবাই মিলে উঠোনে চেয়ার পেতে গোল হয়ে মনমরা হয়ে বোসে আছে। মাহিশা বারান্দা থেকে নামার জন্য তিনটে সিড়ি বানানো।,সেই সিড়ির উপর সামিদের কাঁধে মাথা এলিয়ে দিয়ে শার্লিনের মতোই নিরবে অশ্রু বিসর্জন দিতে ব্যস্ত। এটা যে আসলে বিয়ে বাড়ি তার চিত্র পাল্টে একট মানুষের অভাবে শোক বাড়িতে পরিণত হয়েছে। বাড়িতে এতো এতো মানুষ। অথচ সবথেকেও যেনো নেই। এতো শূ্ণ্যতা মানা যায়! শাহনাজ বেগম সবার দিকে নজর বুলিয়ে হতাশ হলেন। বাচ্চাদের এতো মনমরা অবস্থায় মানা তো যায়না। মেয়েকে বিদায় দিয়ে যে উনি সস্তি পাচ্ছেন বিষয় টা এমন নয়। কিন্তু নারীদের জীবনই তো এমন। বাবার ঘর আলো করে এসে নির্দিষ্ট একটা সময়ে গিয়ে পরের ঘর আলো করতে হয়। এই তিক্ত সত্য যতো তাড়াতাড়ি মেনে নেওয়া যাবে। ততো তাড়াতাড়িই বিষয়টা সুন্দর মনে হবে। এতো ধুমধাম করে বিয়ে দিয়ে সবার মাঝে এতো নিস্তেজ অবস্থা মানা যাচ্ছে না। শাহনাজ বেগম মেসবাহকে ডাকলেন। ধীরস্থির ভাবে কিছু একটা বললেন। মেসবাহ উনার কথামতো মিহাল এবং নিহালকে নিয়ে বাড়ি ছাড়লো। উদ্দেশ্য শাহনাজ বেগমের কথামতো একটা কাজ সম্পূর্ণ করা। শাহনাজ বেগম বোনকে ডেকে সাথে নিয়ে ঢুকলেন বাড়ির ভিতর। এরপর গামলা ভর্তি চানাচুর দিয়ে মুড়ি মাখিয়ে, পেয়ারা স্লাইস করে কে”টে পেয়ারা দিয়ে খাওয়ার জন্য মশলা বানালেন। ছোটো জা-কে ডেকে তার সাহায্যে বিশাল কয়েকটি মাদুর নিয়ে বাহির উঠোনে আরও বেশ কয়েকটা লাইট জ্বা”লিয়ে দিলেন। মাদুর পেতে গামলা ভর্তি মুড়ি মাখা, কা”টা পেয়ারা আনলেন। সবাই তাকিয়ে তাকিয়ে শাহনাজ বেগমের কাণ্ড দেখছে। কি হচ্ছে তাদের মাথায় ঢুকছেনা। তিশা তো প্রশ্ন করেই বোসে,

“ফুফু এসব কি হচ্ছে!”

“অনেক শোক তাপালে সবাই। আসো সবাই গোল হয়ে বোসে পরো। মুড়ি মাখা খাও, পেয়ারা খাও। সাউন্ড বক্সে গান চালিয়ে দাও। আড্ডা দাও, মজা করো। এই বয়সে মজা করবেনা তো কি আমাদের মতো বুড়ো হলে মজা করবে?”

উনার কথা শুনে সব ছেলেমেয়েরা হতবাক। শাহনাজ বেগমের কথা যেনো মাথায় ঢুকছেনা। শাহনাজ বেগম নিজেই আগ বাড়িয়ে অল্প সাউন্ডে সাউন্ড বক্সে গান চালিয়ে দিলেন। এরপর সব ক’টার হাত ধরে এনে বসিয়ে দিলেন মাদুরে। শার্লিনের কাছে গিয়ে গলা খাকাড়ি দিতেই ইফরাদ সরে যায় চট করে। এরপর শার্লিন আর ইফরাদ দুজনেরই হাত ধরে এনে মাদুরে বসিয়ে দেন। মাহিশা আর সামিদকেও টেনে এনে বসিয়ে দিয়ে সব বড়োদেরও ডাকলেন। মুহুর্তে মন খারাবি গায়েব হয়ে যেনো উৎসবের আমেজ লেগে গেলো। এরমাঝেই মেসবাহ, মিহাল, নিহাল এসে উপস্থিত হয়। হাতে কোঁকাকোলা, আইসক্রিম তো তেমন ভালো মানের পাওয়া যায়না গ্রামের দোকানে। তবুও সবার জন্য চকবার আইসক্রিম, চকলেট একগাদা নিয়ে হাজির তারা। এসব আনতেই শাহনজা বেগম তাদের পাঠিয়েছিলেন। সেগুলো এনে মাদুরের উপর ছড়িয়ে দিতেই সবাই আড্ডায় মেতে উঠে। সবার ঠোঁটের কোণে হাসি দেখে শাহনাজ বেগম শান্তি পেলেন। এক মেয়ে চলে যাওয়ার বদলে এতোগুলো ছেলেমেয়ের মাঝে শোকের আবহ উনার মনে মানছিলো না। এজন্য বাড়ির সবাইকে একটু হাসানোর চেষ্টা করতে এই ক্ষুদ্র প্রয়াস। আড্ডা দিতে ব্যস্তরত সবার উদ্দেশ্যে আজাদ সাহেব এসে বললেন,

“আগামীকাল তো ছেলের বাড়িতে যেতে হবে, বউভাত। সকাল ১১টার মাঝে সবাই রেডি থাকবে বুঝলে? সকাল সকাল গিয়ে ছেলেমেয়েকে নিয়ে আসতে হবে। এরপর সব নিয়ম শেষ করে আবার ঢাকায় ফিরতে হবে। রমজান আসছে দুদিন পর, প্রস্তুতি তো শেষ করতে হবে। সবারই জীবনের ব্যস্ততা আছে।”

সবাই উনার কথার জবাবে একসাথে মাথা নাড়িয়ে বুঝালো তারা রেডি থাকবে।

১১৬,
সব নিয়মের পার্ট শেষ করে সবে বাসর ঘরের দরজায় এসে দাড়ালো দিগন্ত। রাইমাকে আগেই বাসরঘরে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাসরঘর দরজার সামনে আসতেই তার ভীমড়ি খাবার যোগার। স্নেহা, মাহাদ থেকে শুরু করে ইশা, ঐশী, আয়মান, ইশফাক সবাই দরজা আঁটকে দাড়িয়ে আছে। দিগন্তের সবাইকে দেখে হেঁচকি উঠে গেছে প্রায়। সে নিজের নার্ভাসনেস সবার সামনে প্রকাশ করলো না। বোকার মতো হেসে হাত নাড়িয়ে বললো,

“হাই এভরিওয়ান!”

“হাই-টাই পরে হবে ভাই। আগে টাকা দাও। এরপর আমরা দরজা ছেড়ে চলে যাচ্ছি। নিজের শালা-শালীকে অনেক টাকা দিয়ে আসছো। আমাদের জন্য এবার মনখুলে টাকা ছাড়ো, আমরাও মন খুলে তোমার বাসর যেনো সুন্দর হয় দোয়া করবো।”

আয়মান কথাটা বললো। ওর কথায় সবাই তাল মিলিয়ে বললো,

“ঠিক ঠিক। দিয়ে দাও এখন টাকা। আমরা গেইট ছাড়ি।”

মাহাদ বললো,

“এমনি অনেক ক্লান্ত লাগছে। মাঝরাত তো হয়েই গেছে শালাবাবু। আমাদের সাথে তর্ক করলে উল্টে বাকি বাসর করার সময় টাও মাটি হবে ভাই।”

দিগন্ত আর কি করবে, বেচারা একা হয়ে তো এতো মানুষের সাথে তর্ক করা চলে না। সে পকেটে হাত ঢুকিয়ে যা টাকা ছিলো বের করে দিলো। এমনিতেও বেশি বড়ো এমাউন্টও ছিলো না। যা ছিলো তাতেই সবাই খুশিমনে দরজা ছেড়ে চলে গেলো। দিগন্ত হাফ ছেড়ে বুকের মাঝে ধুকপুকে অনুভূতি নিয়ে দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করে। ভেতর থেকে দরজা আঁটকিয়ে রাইমার দিকে দৃষ্টি ফেলে। মেয়েটা ক্লান্ত তা দেখেই বোঝা যাচ্ছে। বিছানার বোর্ডের সাথে অর্ধ ভাবে হেলান দিয়ে শুয়ে পরেছে ইতিমধ্যে। দিগন্ত প্রবেশ করার শব্দ পেতেই রাইমা চট করে চোখ মেলে। বিছানা থেকে নেমে দাড়ায়। দিগন্ত ধীর কদমে হেঁটে রাইমার সামনে দাড়াতেই রাইমা সালাম করতে উদ্দ্যত হয়। দিগন্ত হাত দিয়ে রাইমাকে আঁটকে দেয়। রাইমাকে দাড় করিয়ে দিয়ে দুগালে হাত ছোঁয়ায়। পূর্ণদৃষ্টি মেলে রাইমার চোখে চোখ মেলায়। দুজন দুজনকে এতোটা কাছ থেকে প্রথম দেখছে তো। সময়টা যেনো তাদের জন্য থমকে গেছে। দিগন্তের চোখে রাইমা নিজের জন্য অনুভূতি হাতরে বেড়ায়। চোখ দুটোয় কি যে মায়া! এই মায়ায় ডুবলে রাইমা কূল পাবে তো! ইশশ কি সুন্দর অনুভূতি। নিজের করে পাওয়া এই লোকটির প্রতি আচমকা কেমন একটা প্রেম প্রেম অনুভূতি হচ্ছে রাইমার। সে লাজলজ্জার মাখা খেয়ে দিগন্তকে বলেই বসে,

“আপনাকে দেখে আমার কেমন প্রেম প্রেম পাচ্ছে দিগন্ত সাহেব। খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে হচ্ছে।” (কোথাও একটা পড়েছিলাম বোধহয়। সেই উক্তি লেখার দরুণ আবার কপি বলে চালিয়ে দিয়েন না)

রাইমার কথা শুনে দিগন্ত নিজের হেঁচকি আর থামাতে পারলো না। সে রাইমাকে ছেড়ে দূরে দাড়িয়ে পরলো। রাইমা বেড সাইড টেবিল থেকে গ্লাসে পানি ঢেলে দিগন্তের দিকপ বাড়িয়ে দিয়ে বললো,

“কি হলো? ঠিক আছেন আপনি?”

১১৭,
দিগন্ত রাইমার হাত থেকে পানির গ্লাস টা নিয়ে পানি ঢকঢক করে খেয়ে বললো,

“আপনি নির্লজ্জ এটা জানি আমার অ”সভ্য বউ। কিন্তু সোজা খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে! এটা কেমন কথা!”

রাইমা দিগন্তের সামনে এসে কোমড়ে হাত দিয়ে চোখ দুটো ছোটো ছোটো করে বললো,

“আপনাকে খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করলে আমার কি দোষ! আপনি এতো কিউট কেনো হতে গেছেন?”

দিগন্ত হাতের গ্লাস টা রেখে রাইমার দুবাহু নিজ হাত দ্বয়ে আঁটকে বললো,

“পুষ্পবতী, অনেক মজা করলেন। এবার চলুন, ফ্রেশ হোন। নামাজটা আদায় করা যাক?”

রাইমা মাথা দুলিয়ে সম্মতি দিলো। প্রথমে রাইমা এরপর দিগন্ত বিয়ের ভারী সাজ ছেড়ে নরমাল।সুতির শাড়ি আর দিগন্ত পাজামা পাঞ্জাবি পরে নিলো। দুজনে একত্রে নামাজ পরে উঠলো। নামাজ শেষে রাইমা বিছানায় বসে নখ খুঁটতে শুরু করে দেয়। দিগন্তর সাথে একা এক রুমে ভাবতেই তো তার ঘুম উড়ে যাচ্ছে। দিগন্তও নার্ভাস হয়ে পরেছে। যতোই সে শক্ত মনের পুরুষ হোক! স্ত্রীর সামনে এসে তার সব গুলিয়ে যাচ্ছে। রজনীগন্ধা, তাজা গোলাপে সাজানোর ঘরটায় রজনীগন্ধার সুবাস মো মো করছে পুরো রুম জুড়ে। রাইমার প্রিয় ফুল সূর্যমুখীরও দেখা মিলছে কিছু কিছু জায়গায়। দিগন্তও রাইমার পাশে বসে রাইমার দেখাদেখি নখ খুঁটতে শুরু করে। রাইমা তা দেখে মুখ থেকে নখ সরিয়ে বলে,

“আমার মতো আপনারও নখ খুঁটার বদ অভ্যাস আছে?”

“ছিলো না, আপনাকে দেখে বোধ হয় হয়েই যাবে এই অভ্যাস।”

দিগন্তের উত্তরে দিগন্তের বাহুতে কি”ল মে”রে বসে রাইমা। কিল মে”রে বলে,

“ধুর কি বলেন এসব!”

দিগন্ত রাইমার কি”ল খেয়ে বিরবির করে বলে,

“আদরের বদলে মা”ইর দিয়ে বউয়ের সাথে আলাপ শুরু। বোঝা গেলো, ইনশা আল্লাহ কি”ল খেয়েই আমার জীবন পার হয়ে যাবে।”

রাইমা দিগন্তকে বিরবির করতে দেখে বললো,

“কিছু বললেন?”

“না, কিছু বলিনি। আপনার খিদে পেয়েছে? খাবারের ব্যবস্থা করবো? সারাদিন অনেক ধকল গেছে। কিছু খেয়ে ঘুমিয়ে পরি চলুন!”

“আপনি কি কা”না?”

আচমকা রাইমার এমন প্রশ্নে ঘাবড়ে গেলো দিগন্ত। থতমত খেয়ে বললো,

“কানা হবো কেন?”

“আপনার চাচী, ফুফ যে আসার পরপরই ঘরে তুলে আমায় খাইয়ে দিয়েছে! চোখে দেখেননি?”

“দেখবো কি করে? আরফান ঘুমিয়ে কাঁদা হয়েছিলো। দাদী সহো তার শোয়ার ব্যবস্থা করতে গেছিলাম তো।”

“আচ্ছা বাদ দিন, আজ তো বাসর রাত। এই রাতে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে যা সম্পর্ক হয়, আপনি চাইলে জড়াতে পারেন। আমার দিক থেকে সমস্যা নেই। জীবনের আঠাশ বছর সিঙ্গেল থেকে বউ পেয়ে তো আর তাকে না আদর করে থাকা যায় না বলেন!”

রাইমার এরকম সরাসরি কথাবার্তা বলার ধরণ দেখে দিগন্ত রিতীমতো ঘামতে শুরু করেছে। এই মেয়ে এতো নির্লজ্জ কেন বাপু! দিগন্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে থমথমে গলায় রাইমার বাহু ধরে নিজের কাঁধের সাথে জড়িয়ে নিয়ে বললো,

“আঠাশ বছর ধৈর্য ধরে থাকতে পারলে আরও আঠাশ মাসও আমি ধৈর্য ধরে থাকতে পারবো আমার অস”ভ্য বউ। কিন্তু তার আগে আমাদের মাঝে নিজেদের বোঝাপরার বিষয়টা শুরু হোক! নারীর শরীর ছুইলেই যে তাকে পাওয়া হয়ে যায় এমনটা নয়! যদি আপনার মনেই আমার স্থান দৃঢ় না হয়, শরীর ছুয়ে আমি কি করবো? শরীর তো সব পুরুষই ছোয়! মন ছুতে পারে ক’জন পুরুষ! আপনি আমায় ভালোবাসতে শেখালে, অনুভূতি গুলো যত্ন সহকারে কুড়িয়ে মনের মনি কুঠোয় তুলে রাখতে সাহায্য করলে আমি আগে আপনার মন টাই পেতে ইচ্ছুক অস”ভ্য বউ।”

দিগন্তের কথাগুলো মন ছুয়ে গেলো রাইমার। শ্রদ্ধার সহিত দিগন্তের দিকে তাকিয়ে রইলো। দিগন্ত পলক ফেলে রাইমাকে দেখে শুধালো,

“কি সাহায্য করবেন?”

রাইমা মাথা হেলিয়ে বুঝালো, করবে সাহায্য। দিগন্ত মুচকি এসে আলতো ছোয়ায় রাইমাকে বুকে জড়িয়ে পরম তৃপ্তিতে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিলো। দিগন্তের বুকে মাথা রেখে রাইমা-ও ঘুমানোর চেষ্টায় মত্ত হলো। জার্নি করে দুজনেই ভীষণ টায়ার্ড।

১১৮,
পরদিন সকালবেলায়, সকালের খাবার দাবার সেড়ে বউভাতের প্রস্তুতি নিতে ব্যস্ত সবাই। রাইমাকেও তার রুমপ সাজানোর পর্ব চলছে। আরফান রাইমার বিছানায় বসে গভীর মনোযোগ দিয়ে চকলেট খাচ্ছে আর বোনকে দেখছে। রাইমা সাজের ফাঁকে ফাঁকে ভাইয়ের দিকেও তাকাচ্ছে। পার্লার থেকে মানুষ আনা হয়েছে, তারাই আপাতত সাজাচ্ছে রাইমাকে। আরফানকে এতোটা গম্ভীর হয়ে বসে থাকতে দেখে রাইমা ভাইকে জিগাসা করে,

“মায়ের জন্য মন খারাপ? ”

“না আমি কয়েকদিন হলো তোর সাথে মন খুলে ঝগড়া করতে পারছিনা আপা। আমার সেজন্য মন খারাপ।”

রাইমা হেসে ফেললো ভাইয়ের উত্তরে। দুটো দিন পর থেকে যে ঝগড়া তো দূর তাক, বোনকেই কাছে পাবে না! তখন কি করবে তার ভাইটা? এটা ভেবেই রাইমা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। ইশা ঐশী রুমেই বসা ছিলো। তারা দুজনে সোফা ছেড়ে আরফানের দুপাশে বসে আরফানের গাল টেনে বললো,

“ওরে কি কিউট রে আমাদের বেয়াই মশাই।”

আরফান বিরক্ত হলো, বললো,

“আমার গাল টানবেনা তোমরা। আমার পছন্দ নয়।”

ইশা বললো,

“দুলাভাইয়ের পারফেক্ট শালাবাবু। সবকিছুতেই দেখছি গম্ভীর।”

রাইমা ওদের খুনশুটি দেখে মৃদু হাসলো। পার্লারের মেয়ে দুটোর সাজানোয় সমস্যা হবে বুঝে চুপটি করে বসলো। তার দাদী যে কোথায় কি করছে! তার ঠিক নেই। খোজই পাওয়া যাচ্ছে না উনার। এরমাঝেই দিগন্তের বেশ কয়েকবার কাজের উছিলায় চক্কর দিয়ে রাইমাকে দেখে যাওয়া শেষ। আবার যখন দেখতে আসলে, ঐশীর চোখে তা পরতেই দৌড় দিয়ে দিগন্তের হাত ধরে রুমে আনে। হাসির ছলে বলে,

“বউকে চোখে হারাচ্ছো ভাইয়া! এই নিয়ে ৭বার আসলে দেখতে। ব্যাপার কি হুম?”

চুরি করার পর চোর ধরা পরলে চোরের যে অবস্থা হয়! দিগন্তের অবস্থাও ঠিক সেরকম। স্নেহা এসেছিলো রাইমার জন্য গহনা দিতে। সে আসতেই ঐশীর কথা তার কানে যেতেই বললো,

“কি আর করবে! ভাইটা এতোদিন পর বউ পেলো! বউকেই তো দেখছে, পরনারীকে তো নয়। থাক আর লজ্জা দিস না।”

দিগন্তের অবস্থা এখন এখান থেকে পালাতে পারলে বাঁচে সে। সবাই ঠোঁট টিপে হাসছে দিগন্তের অবস্থা দেখে। দিগন্ত কথা কা”টাতে পকেট থেকে কয়েকটা চকলেট বের করে আরফানের হাতে দিতে দিতে বললো,

“আরে আমি তো আরফানকে চকলেট দিতে আসছিলাম। আম্মাকে ছেড়ে আসছে! বাচ্চাটা কাদবে হয়তো। এজন্য খেয়াল রাখছিলাম। পকেটে চকলেটও রেখেছিলাম যেনো কাঁদলেই দিতে পারি। তোমরা এমনি এমনি আমায় লজ্জা দিচ্ছো। ”

দিগন্তের উত্তর যে পুরোটাই বানোয়াট বুঝতে পারলো সকলেই। রাইমা পারছেনা সবার মাঝে হেসে দিতে। তার যে ভীষণ হাসি পাচ্ছে। আরফান তো হেল গরম কিছু বুঝেনা। আরও চকলেট পেয়ে খুশিমনে সে খেতে ব্যস্ত হয়ে পরলো। দিগন্ত লজ্জা কমাতে হনহনিয়ে হেঁটে চলে গেলো। সে চলে যেতেই সবাই হাসিতে ব্যস্ত হয়ে পরলো।

চলবে?

ভুলত্রুটি মার্জনীয়, রিচেইক দেইনি, আমি অসুস্থ, দুয়া করবেন। আসসালামু আলাইকুম।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here