#আকাশেও_অল্প_নীল
#পর্বঃ৩১
#আর্শিয়া_ইসলাম_উর্মি
৯৭,
রাইমার ঘরে বসে আছে রাইমা, শার্লিন, এবং মাহিশা। ঘরের দরজা লাগিয়ে দেওয়া। আর কাউকে রুমে ঢুকতে আপাতত বারণ করে দিয়েছে রাইমা। সময় টা দুপুর ৩টার কাছাকাছি। ১টা বাজতে বাজতে মাহিশা, তার বাবা মা স্বামী সহো এসেছে রাইমার বিয়ে উপলক্ষে। মাহিশাকে একা আসতে দিবে না বলেই তাদের আসতে এতোটা দেরি হলো। এরপর ফ্রেশ হওয়া, খাওয়া দাওয়ার পাট চুকাতে চুকাতে তিনটা বেজে গেলো। শাহনাজ বেগম তো মাহিশাকে এতোগুলো বছর পর দেখে ইমোশনাল হয়ে কান্নাকাটি জুড়ে দিয়েছিলেন। সব সামলে এতোক্ষণে কথা বলার সুযোগ হলো তাদের। রাইমা নিজের ব্যক্তিগত ভাবে মাহিশার সাথে কথা বলতে চেয়েছিলো। খাটের দুই মাথায় বসে আছে দুজন। শার্লিন দাড়িয়ে দাড়িয়ে নখ খুটছে আর দুজনকে দেখছে। বাইরে সাউন্ড বক্সে গান চলছে, সেই সাথে বাচ্চাদের নাচানাচি, হইচইয়ের শব্দ কানে এসে বারি খাচ্ছে তাদের। চারপাশের পরিবেশ মোটেও শান্ত নয়। কিন্তু তাদের তিনজনের মাঝেই অস্থিরতার শান্ত স্রোতের ধারা বয়ে চলেছে। সব নিরবতা ভেঙে শার্লিনই বললো,
“তোমরা দুজন এতো চুপচাপ বসে থাকতে কি ঘরের খিল এঁটে বসে আছো? আমি আর একদণ্ডও চুপচাপ থাকতে পারছিনা৷”
“শালু, একটু চুপ থাক, এখনকার মতো। নয়তো বেরিয়ে যা। তুই নিজেই আমরা কি বলি শুনতে থেকে গেছিস। এখন হয় চুপ করে থাক। নয়তো চলে যা।”
রাইমা কিছু টা ধমকের সুরেই কথাগুলো বললো। শার্লিন রাইমার কথা শুনে বুকে হাত বেঁধে গাল ফুলিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে রইলো। মাহিশা একপলক শার্লিনকে দেখলো। জোড় করে হাসার চেষ্টা করলো একটু। এরপর বললো,
“আমার কার্বন কপি পুরোই। তাইনা?”
“হুম, তোর থেকে একটা বিষয়ে শুধু অমিল। তুই না জানিয়েই সব করতি, এ আমায় ছাড়া এক কদমও তুলতে ১০০বার ভাবে।”
“তাহলে তো বেশ ভালোই। আমার শূণ্যতা তোকে পোড়া”য়নি।”
“শূণ্যতা একজনের, তার শূণ্যতা অন্যজন কি করে পূরণ করে? সবাই সবার চেষ্টায় নিজের জায়গা তৈরি করে নেয় অন্যের জীবনে। অন্য কারোর জায়গা দখল করতে আসেনা।”
৯৮,
মাহিশা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
“বাদ দে সেসব কথা। কেমন আছিস? আসার পর থেকে এই কথাও জানতে পারিনি, জানার সুযোগ টাই হয়নি।”
“আলহামদুলিল্লাহ যেমন রেখে গিয়েছিলি? তার থেকে অনেক বেশিই ভালো। তুই? ”
“আছি আলহামদুলিল্লাহ ভালোই।”
“অবশ্য ভালো থাকারই কথা। ভালো থাকতেই তো এতোগুলো মানুষকে বিপ”দে ফেলে রেখে গেছিলি। আচ্ছা তোর কি বিবেকে বাঁধেনি? একবারও আংকেল-আন্টি, ইফরাদ ভাইয়ের মুখটা চোখে ভাসেনি?”
“ভেসেছে, কিন্তু তারাও তো আমার কষ্ট টা বোঝেনি। সেই মেনে ঠিকই নিলো শেষে। শুধু মাঝখানে এতো ঘটনা ঘটে গেলো।”
“আমি বোধ হয় তোর জীবনের সেই মানুষ টা হতে ব্যর্থ হয়েছিলাম, যার কাছে দ্বিধা ছাড়াই সব বলা যায়,তাইনা? অথচ তোর কাছে আমার কিছুই আড়াল থাকতো না।”
“বাদ দে না অতীতের কথা। বর্তমান টা বেশি সুন্দর নয়?”
“অবশ্যই সুন্দর। কিন্তু তুই আংকেল আন্টির কাছে ফিরতে পারলি, তোর শোকে যে আরও একটা মানুষ রাত দিন মনে পরলেই কাঁদতো! তার কথা কি তোর মনে পরতো না? দেখা করতে ইচ্ছে হয়নি? একবার যোগাযোগ করার ইচ্ছে হয়নি?”
“তোকে মনে পরতোনা বললে ভুল হবে। মনে তো অবশ্যই পরতো। দেখে যেতাম, দূর থেকেই দেখে যেতাম। আমার জন্য যেই কথার আ”ঘাত আর অসম্মান সহ্য করতে হয়েছে তোর? আমি পারিনি তোর মুখোমুখি হওয়ার সাহস যোগাতে। কিন্তু সবাই যখন তোর বিয়ে উপলক্ষে একত্রিত হলো! লোভ টা সামলাতে পারিনি৷”
“মাঝে মাঝে হুটহাট যে গাড়ি নিয়ে বাড়ির সামনে দাড়িয়ে থাকতি! বাসায় ঢোকার সাহস হতো না? নাকি বাসায় ঢুকলে তোকে মে”রে ফেলতাম?”
“টের পেতি তুই?”
“আমি তো অন্ধ নই? তারমাঝে আমি কোন সময় কোথায় দাড়িয়ে থাকি! তুই-ই জানতি। সেই সময় বুঝেই তো যেতি। আমায় নিচে নামতে দেখলেই এই যে চলে যাওয়ার বিষয়টা! কেনো করতি? আমায় টেনশনে ফেলে কি শান্তি পেতি? চারটা বছর মাহিশা! চার চারটা বছর। তোকে মনে পরলে এভরি সিঙ্গেল সেকেন্ড আমার যে কি যন্ত্র”ণায় পার হয়েছে। আই উইশ যদি টের পেতি! তাহলে হয়তো বুঝতি, সম্পর্কের গভীরতা কোথায় গিয়ে ঠেকেছিলো।”
রাইমা কথাগুলো বলতে গিয়ে কেঁদেই ফেলেছে প্রায়৷ মাহিশা ওকে আগলে ধরতে হাত বাড়িয়ে এগিয়ে আসার আগেই শার্লিন দৌড়ে এসে রাইমাকে নিজের বাহুডোরে আবদ্ধ করে নেয়। মাহিশা তা দেখে মৃদু হেসে চোখের কোণায় জমা জল মুছে নেয়। রাইমা কাঁদতে কাঁদতেই বলে,
“ভালোবাসার মানুষগুলো একবার ঘৃণা করতে শুরু করলে সেই ঘৃণার পাহাড় সরানো দায় মাহি। আমি তোকে কখনও ক্ষমা করবোনা কখনও না। অবশ্য তাতে তোর কিছু যায় আসেনা। চার টা বছর থাকতে পারলে বাকি জীবনটাও পারবি। কারণ আমি জানি, আমি যে গুরুত্ব তোকে দিয়েছি, সেই গুরুত্ব তুই আমায় দিসনি। যে কারণে আজ এই পরিস্থিতিতে দাড়িয়ে আছি দুজনেই।”
“ঠিকই বলছিস হয়তো, তোর কাছে ক্ষমা আমি চাইবোনা। কারণ এটার যোগ্য আমি না। তবে আমি যা পারিনি, এই যে মিষ্টি মেয়ে! সে পেরেছে। তোর মতো নরম মানুষ টাকে আগলে রাখতে সে একাই পারবে। দুলাভাইও এসে গেলো জীবনে। তোকে নিয়ে আমার আর ভয় নেই।”
মাহিশা কথাগুলো বলেই শাড়ির আঁচল আকড়ে উঠে দাড়ালো। দরজা খুলে বেরিয়ে গেলো। যেতে যেতে চোখের জলের বয়ে চলা ধারা টা আটকানোর ব্যর্থ চেষ্টা করলো। আবেগের বয়স ছিলো, বাস্তবতা বুঝেনি, সম্পর্কের দায়ভার, দায়িত্ব, গুরুত্ব এসব কমই বুঝতো। ভালোবাসার মানুষ টাকে পেয়ে গেলে জীবন সুন্দর হবে, পরে তো সবাই মেনেই নিবে। এই ভেবে এতো মানুষকে যে কষ্ট দিয়ে ফেলেছিলো, এটা সব ঘটে যাওয়ার পর বুঝেছে সে। অপরাধ বোধে ভুগতে ভুগতে কোনো কিছু ফিরে পাওয়ার তাগিদ আর নেই তার। কারণ সে বুঝে গেছে সে এসবের যোগ্য না। সবাই যখন নিজেদের জীবন গুছিয়ে নিয়েছে, সেখানে ফেরত এসে আবার একটা ঝড় বইয়ে দেওয়ার মানে হয়নি। কিন্তু মাহিশা ভুলে গেছিলো, তার আরও একটা মা-বাবা, ভাইবোন ছিলো। সেটা আজ এখানে না আসলে বুঝতোই না। কিছু ভুল আছে শোধরানো যায় না। এই ভুলগুলো তো জমে জমে অপরাধের পাহাড় হয়ে দাড়িয়েছে। এই অপরাধের ক্ষমা হয় না, হয় শাস্তি। আর সবার থেকে এতো এতো দূরত্বই তার জন্য শাস্তি। সবার মনে যে জায়গা টায় সে ছিলো, চাইলেই সে আর সেই ভালোবাসা ফিরে পাবেনা। সবার আড়ালে পুকুরপাড়ে বড়ই গাছে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে এসবই ভাবছিলো সে। তখনই স্বামী সামিদ তাদের কন্যা সন্তান কোলে নিয়ে এসে কাঁধে হাত রাখে মাহিশার। মাহিশা চট জলদী চোখ মুছে নিয়ে পিছন ফিরে তাকায়।
৯৯,
“কাঁদছিলে কেনো? রাই আপুর সাথে সব ঠিক আছে তো?”
সামিদের প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যেতে চাইলো সামিদ। তাদের দুজনের জন্য এতো মানুষ আ”ঘাত পেয়েছে, এবং এখনও কষ্ট পায় জানলে সামিদ আর এখানে এক মুহুর্ত দাড়াবেনা। মাহিশাকে আসতেই দিতে রাজী ছিলো না সে। আসার পর যদি সকলে কথা শোনায়! মাহিশার রাইমার উপর ভরসা আছে যে, তেমন কিছু হবেনা। এজন্য সামিদকে বুঝিয়ে সাথে এনেছে৷ মাহিশাকে চুপ করে ভাবতে দেখে সামিদ মাহিশার গালে হাত দিয়ে নরম সুরে জিগাসা করলো,
“সব ঠিক আছে তো মাহিশা? চুপ করে আছো যে! এনিথিং রং?”
“না সব ঠিক আছে। এমনি অনেক দিন পর দেখা তো, ইমোশনাল হয়ে গেছিলাম। সবার মাঝে কাঁদলে অনেকের অনেক প্রশ্ন তৈরি হতো। এজন্য একা এখানে।”
“ওদিকে চলো রাই আপুকে হলুদ ছোয়ানো শুরু হয়ে যাবে। কিন্তু এখমও রেডি হতে পারোনি তুমি।”
“রাই আমার বয়সীই। তোমার বড়ো নয়। এতো আপু আপু করতে হবেনা।”
“তবুও বড়ো শালী তো।”
“চুপ করো, চলো এখন। মেয়েকে তো তোমার ভরসায় দিয়ে রেখেছিলাম । রেডি করাতে পারোনি। আমিও রেডি হইনি। আগে রেডি হই। এরপর তোমার বড়ো শালী না ছোটো শালী বোঝাবো। চলো।”
সামিদকে একটু ঝাড়ি দিয়েই কথাগুলো বললো মাহিশা। এরপর দুজনেই একত্রে হাঁটা ধরলো বাড়ির ভেতর দিকে।
মাহিশা যাওয়ার পর রাইমাকে সামলে নিয়েছে শার্লিন। সবাই স্টেজে ডাকবে এখন। এজন্য সব বোনরা মিলে বসে গেছে সাজাতে। সাইরা, সাইফা, তিশা, শিখা, রেখা শার্লিনের হাতে হাতে সাজানোর জিনিসপত্র এগিয়ে দিচ্ছে। ওরা এতোক্ষণে রেডি হওয়া শেষ করে নিয়েছে। রাইমাকে কাচা হলুদ রঙের একটা সবুজ পারের শাড়ি করিয়ে তাজা সূর্যমূখী ও রজনীগন্ধা ফুলের ফোঁটা কলি দিয়ে তৈরি ফুলের গহনা পরিয়ে সাথে হালকা মেকআপের সাহায্যে সাজিয়ে দিলো শার্লিন। একহাতে ফুলের ব্রেসলেট অন্য হাতে হলুদ সবুজ মিশ্রণের শাড়ি। একদম সাধারণ একটা সাজে রাইমাকে সাজিয়ে তুললো শার্লিন। বাকি সব মেয়েরাও বাড়ির ছোটো থেকে বড়ো সব মেয়েরা ল্যাভেন্ডার রঙের শাড়ি সোনালী পারের শাড়ি পরবে এটাই বলে দিয়েছিলো রাইমা। তার কথামতোই সবাই একরকম শাড়ি পরেছে। সবকিছুই মেয়ের কথামতো ব্যবস্থা করে দিয়েছেন আজাদ সাহেব। সবাইকে সাজাতে শহর থেকে দুটো পার্লারের মেয়েকেও আনিয়ে নিয়েছে রাইমা। কিন্তু নিজের সাজলো শার্লিনের হাতে। মাহিশা নিজের সংকোচের জন্য কারোর সাথে সেভাবে মিশছেনা। নিজের মতো দূরেই আছে সে। মাহিশাকে না দেখে এটাই ভেবে নিলো রাইমা । অথচ রাইমার বিয়ে নিয়ে কত্তো প্ল্যান করতো মাহিশা। এতো মানুষের মাঝেও এই একটা মানুষের কথা ভেবে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে সে।সাজানো শেষ হতেই শাহনাজ, সাহিরা, ডালিয়া, সাফিয়া বেগম চার জা, ননদ, বোন একসাথেই মেয়েদের ঘরে ঢোকেন। শাহনাজ বেগম মেয়েকে দেখে এগিয়ে এসে চোখ থেকে কাজল নিয়ে নজর টিকা লাগানোর বাহানায় বললেন,
“আমার মিষ্টি মেয়ের উপর কারোর নজর না লাগুক।”
রাইমা লজ্জা পেয়ে মুচকি হেসে মাথা নিচু করে নেয়। ডালিয়া বেগম এগিয়ে এসে ড্রেসিং টেবিলের সামনে টুলে বসা রাইমার সামনে হাটুমুড়ে বসে হাত দুটো আকড়ে বললেন,
“আমার মেয়েকে তো আমি কাছেই পাইনি। কাছে পাওয়ার আগেই সে অন্যের ঘরে যাচ্ছে। কতো বড়ো হয়ে গেলো আমার মা।”
“আপা, এখন এমন ইমোশনাল কথাবার্তা বলে মেয়েটাকে কাদায়েন না। সাজগোজ নষ্ট হবে আবার।”
সাফিয়া বেগম এগিয়ে এসে বড়ো ননদকে কথাটা বললেন। শার্লিন কোমড়ে হাত দিয়ে হেসে বললো,
“না কাঁদে আন্টি, এখন সব মেকআপ ওয়াটার প্রুফ। সমুদ্রে ঝাপ দিলেও মেকআপ উঠবেনা।”
“পাজির শুধু পাকা পাকা কথা। দুঃখ আমার আর একজন ছেলে নেই। নয়তো তোকেই ছেলের বউ করতাম রে মেয়ে।”
১০০,
সাহিরা বেগম এগিয়ে এসে শার্লিনের পাশে এসে দাড়িয়ে কথাটা বললেন। তিশা বিছানায় বসে তার বড়ো ফুফুর কথা শুনে গালে হাত দিয়ে বললো,
“আমার ভাইটাও ছোটো ফুফু। নয়তো তাকে দিয়েই এই মজার মানুষ টিকে আমার ভাবী করতাম। কি ভুলটা করলো আমার ভাই। গডের কাছে রিকুয়েষ্ট করে এই পাজি মেয়েটার আগে দুনিয়া আসতে পারলো না?”
তিশার কথায় উপস্থিত সকলেই হাসলো। শার্লিন মিটমিটিয়ে হাসতে হাসতে বললো,
“আমি যার জন্য রহমত, গড আমায় তার জন্য সৃস্টি করেই পাঠিয়েছে।।তোমরা নিজেদের মাঝে আফসোস করা ওফ করো। চলো রাইকে নিয়ে স্টেজের দিকে চলো।”
শার্লিনের কথায় তাল মিলিয়ে সবাই উঠে দাড়ালো। রাইমার চাশী আর ফুফু দুপাশে দাড়িয়ে দুহাত ধরে স্টেজের দিকে নিতে পা বাড়ালেন। শাহনাজ বেগম বোনের হাত ধরে পেছনেই থাকলেন। একমাত্র মেয়েকে একটু একটু করে পরের ঘরে পাঠাতে প্রস্তুত করছেন তিনি। মায়ের বুকের মাঝে যে কি হাহাকার চলছে! উপরওয়ালা আর শাহনাজ বেগম জানতে পারছেন। আর কেউ নয়। ননদ আর জা-কে ছেড়ে বোন আর তিনি হাত ধরে নিয়ে গেলে হয়তো কথা উঠতো যতো গুরুত্ব বোনেরই। সেজন্য উনি বোনকে ইশারায় পিছিয়ে নিলেন। শার্লিন মেসেজ করে মেসবাহ আর ইফরাদকে বক্সে হলুদের গান জোড়ে সাউন্ড দিয়ে চালিয়ে দিতে বলে, রাইমার ঘরের দিকে এগিয়ে আসতে বললো। ইফরাদ মেসেজ টা দেখতেই শার্লিনের কথামতো কাজ করে বারান্দার দিকে এগিয়ে আসে। সব মেয়েরা ঘর থেকে বেরুনোর পরপরই নাচানাচি শুরু করে দিয়েছে। গতো দুদিন ধরে তো শিখা আর রেখার সাথে ডান্স প্রাক্টিস এবং গতকাল রাত জেগে বাকি বাকিদের সাথে নিয়ে এই ডান্স প্রাক্টিসই করে গেছে। একদিনেই তো নাচের তাল তোলা যায়না। যে যার মতো পারছে আনন্দে নাচ করছে। যদিওবা এই ডান্স, মিউজিক কিছু নিয়েই কারোর আগ্রহ ছিলো না। কিন্তু একমাত্র বান্ধবী এবং বোনের বিয়ে বলে কথা! এজন্য সবাই শার্লিনের আগ্রহের জন্য আনন্দ করতে নাচতে মত দিয়েছে। রাইমা হাসিমুখে সবার আনন্দ দেখছে তাকে ঘিরে। অথচ এই মানুষগুলোই তার বিদায়ের পর কান্নায় ভেঙে পরবে। এতো আনন্দের মাঝেও কোথাও একটা দুঃখের হাতছানি। নাচানাচির মাঝেই রাইমাকে স্টেজে আনা হলে একপাশে হামিদা বেগমকে অন্যপাশে আরফানকে বসিয়ে দিলো সাহিরা বেগম। রাইমার নানী বেঁচে নেই। থাকলে হয়তো উনাকেই বসিয়ে দেওয়া হতো। এরমাঝেই শার্লিন হন্তদন্ত হয়ে রাইমার সামনে এসে বসে বললো,
“রাই এদিকে তাকা।”
রাইমা ভাইকে কাছে পেয়ে আরফানের গাল টানছিলো। শার্লিনের কথামতো ওর দিকে তাকাতেই শার্লিন তার হাতে ফোন ধরিয়ে দেয়, ইশারা করে ফোনের দিকে তাকাতে। রাইমা ফোন নিয়ে ফোনের স্কিনে তার নজর দিতেই দিগন্তকে হলুদের সাজে তার মতোই স্টেজে বসে থাকতে দেখে। দিগন্ত গালে হাতে দিয়ে বসে তার দিকে তাকিয়ে আছে। সে তাকাতেই দিগন্ত চোখ টিপ মা”রে। রাইমা লজ্জা পায়৷ চোখ নামিয়ে নেয়। দুই জেলার মাঝে এতো দূরত্ব, কারোর বাড়িতে কেউ হলুদ মাখাতে যাবেনা। নিজেদের মতোই একটু আনন্দ করা হবে। এজন্যই রাইমাকে দেখতে ভিডিও কল দিয়ে বসেছে দিগন্ত। রাইমাকে লজ্জা পেতে দেখে দিগন্ত রাইমার উদ্দেশ্যে বলে,
“পুষ্পবতী, তাজা ফুলের মতোই আপনাকে স্নিগ্ধ লাগছে।”
চলবে?
ভুলত্রুটি মার্জনীয়। রিচেইক তো কোনো জন্মেই দেইনা বলে লাভ নেই। এতো বড়ো বড়ো পর্ব দিচ্ছি। একটা বড়ো কমেন্ট তো আশা করাই যায়। নয়তো ১০০০+ওয়ার্ডের ছোটো ছোটো পর্ব দিবো বলে দিলাম!🥺 আসসালামু আলাইকুম।