#আকাশেও_অল্প_নীল
#পর্বঃ৩২
#আর্শিয়া_ইসলাম_উর্মি
১০১,
দিগন্তের মুখে পুষ্পবতী ডাকটা শুনে রাইমা লজ্জায় মিইয়ে যায়। এই ছেলেটা দিনদিন চরম মাত্রার নির্লজ্জ হয়ে যাচ্ছে। দফায় দফায় তাকে লজ্জায় ফেলে দেয়। রাইমা কে চুপচাপ লাজুক রাঙা মুখে চাহনী নিচ দিকে করে তাকিয়ে থাকতে দেখে দিগন্ত ফের বললো,
“থাক লজ্জা পেতে হবে না। বেশি লজ্জা পেলে আবার আমার বাসর মাটি হবে পরে। বিয়ে জীবনে একবারই হবে ম্যাম। এক আপনাকেই বারবার বিয়ে করতে পারবোনা। অবশ্য আপনাকে বিয়ে করলেই আমার বিয়ের শখ ঘুচে যাবে।সো প্রতিটা সেকেন্ড ইনজয় করুন। আজ আর আপনাকে বিরক্ত করলাম না। যা বিরক্ত করার আগামীকাল ইনশা আল্লাহ ঘরে তুলে তবেই করবো।”
হামিদা বেগম পাশে বোসে বোসে নাতনী আর নাতনী জামাইয়ের কথাবার্তা দেখছিলেন। বয়স্ক মানুষ, ওতোশতো না বুঝলেও দিগন্তের কথার অংশবিশেষ উনার কানে গেলে উচ্চস্বরেই রাইমার গা ঘেষে বোসে বলেন,
” ও নাতজামাই! খালি জোয়ান বউডারে দেখলে হইবো! তারে পাইয়া বুড়ি বউরে ভুইলা গেলা নাকি?”
“আরে বড়ো বউ, ভুলবো কেন! অপেক্ষা করো নিতে আসতেছি। ছোটো বউ তো লজ্জাবতী লতা হয়ে যাচ্ছে। তার লজ্জা ছুটাতে তো তোমাকেই প্রয়োজন পরবে।”
দিগন্ত হামিদা বেগমের কথা শুনে বুঝে নিলো দাদী বা নানী সম্পর্কীয় কেউ হবে। তাই হেসে হেসে হামিদা বেগমের কথার জবাব দেয়। রাইমা মৃদু স্বরে ধমক দিয়ে দিগন্তকে বলে,
“চুপ করেন, কল কাটেন ফাজিল লোক। আশেপাশে এত্তো মানুষ, কলও ভিডিও কল এমনিও লাউড স্পিকারে। মানুষ শুনে হাসছে তো। রাখলাম আমি।”
রাইমা দিগন্তের মুখের উপর কল টা কেটে দেয়। দিগন্ত মাথার চুলে হাত চালিয়ে হেসে ফেলে। ইচ্ছে তো করছে ছুটে গিয়ে রাইমার পাশে বোসে পরতে। কিন্তু তার তো উপায় নেই। এতো দূরত্ব কেনো যে হতে হলো! ইচ্ছে করলে তো যাওয়া যেতো! কিন্তু তাকে ঘিরে এখানের মানুষের যে আনন্দ! তা মাটি হয়ে যেতো। দিগন্ত কল কাটার পরপরই তাকে হলুদ ছোয়ানো শুরু করে বড়োরা। সবাই একে একে আসছে আর হলুদ ছুইয়ে চলে যাচ্ছে। দিগন্ত বিরক্ত হয়ে গেছে এতো নিয়ম দেখে। টিস্যু দিয়ে বারবার গালে আর হাতে ছোয়ানো হলুদ মুছতে মুছতে দিগন্তের অবস্থা খারাপ। ইশা আর ঐশী স্টেজের সামনে সারি করে পাতানো চেয়ারে বোসে বোসে দিগন্তের এই অবস্থা দেখে খিলখিলিয়ে হেসে উঠছে। দিগন্তের নজরে পরতেই সে বোনদের উদ্দেশ্যে বার কয়েক চোখ রাঙায়। তাতে ইশা আর ঐশীর হাসি কমেনা, উল্টে হাসির পরিমাণ বেড়ে যায়। এরমাঝেই স্নেহা আর মাহাদ মিলে দিগন্তের দুপাশে বোসে পরে হলুদ মাখাতে। একে একে দুজনে হলুদ মাখিয়ে দিগন্তের মুখে মিষ্টি পুরে দিতেই দিগন্ত চিবুতে চিবুতে বলে,
“বিয়ে করতে যে এত্তো প্যারা! জানলে রাইমা খন্দকারকে নিয়ে পালিয়ে যেতাম। বিয়ে করে ফিরতাম। বাপরে আপু, তুই এসব প্যারা সহ্য কি করে করেছিলি?”
স্নেহা ভাইয়ের কথায় হেসে উত্তর দিলো,
“রাইকে বলিস বিয়ের মোমেন্ট ইনজয় করতে! আর তুই নিজে ডিস্টার্ব ফিল করছিস? এটা কেমন নিয়ম ভাই?”
“তুই শুনে নিয়েছিস?”
“হ্যাঁ শুনেছি, তোর স্টেজের পাশেই যে ছুটছি, তুই তো বউকে দেখায় ব্যস্ত থাকায় টেরও পাসনি।”
“তোমার ভাই জীবনের ২৮বছর একা কাটানোর পর বউ পাচ্ছে স্নেহা। দেখতে দাও। এভাবে লজ্জা দিয়ো না।”
মাহাদ পাশ থেকে স্নেহার কথার জবাবে বললো কথাটা। দিগন্ত মাহাদের পেটে নিজের হাতের কনুই দিতে গুঁতো দিয়ে বললো,
“আপনি তো ৩১বছরে পৌছে বউ পেয়েছেন মাহাদ ভাই। সে হিসেবে আমি জীবন যু”দ্ধে আপনার থেকে এগিয়ে আছি।”
“আসল জায়গায় অ”স্ত্র চালিয়ে দিলে ভাই! কি করবো বলো সবই উপরওয়ালা আর তোমার বোনের মর্জি।”
স্নেহা শাড়ি সামলে স্টেজ থেকে নামতে নামতে দুজনের কথার মাঝে ফোড়ন কেটে বললো,
“অনেক হয়েছে, চুপ করো দুজনেই। হলুদ শেষ করে এই যে বাচ্চাপার্টি নাচানাচি করবে, ওদের জন্য জায়গা ফাঁকা করে দাও। গ্রাম তো গ্রাম না দিনদিন শহরের মতো ইট পাথরের ঘরবাড়ি গেথে উঠোন নাই করে দিচ্ছে।”
১০২,
দিগন্তদের গ্রামের বাড়িটাও দুতলা বিল্ডিং। দুই ভাইয়ের জন্য দুতলা হিসেবেই বাড়ি বানিয়েছিলো দিগন্তের বাবা। বাড়ির সামনে ছোট্ট উঠোন। সেখানেই সব আয়োজন করা হয়েছে। ছাদে করলে পাড়ার মানুষ জন এসে আবার ছাদে উঠবে! বাড়ির ভিতর মানুষের ঠেলাঠেলি লেগে যাবে। এই ভেবে সব উঠোনেই আয়োজন করা হয়েছে। মাহাদ স্টেজ থেকে নেমে সাজানো চেয়ারগুলো জড়িয়ে অনেকটা জায়গা ফাঁকা করে দেয়। ইশা, ঐশী আশেপাশের বাড়ির বেশ কিছু মেয়ে মিলে ডান্স পারফর্ম করবে। বক্সে গান চালিয়ে তারা তাদের ডান্স শুরু করে। তাদের সাথে জয়েন করে দিগন্তের চাচাতো ভাই আয়মান ও ফুফাতো ভাই ইশফাক। পড়াশোনার খাতিরে দুজনই বাড়ি থেকে দূরে থাকায়, ছুটি পেতে পেতে দেরি হওয়ায় দিগন্তের বিয়ে উপলক্ষে তাদের আসতে আসতে হলুদের দিন সকালেই আসলো। দুজনই একই বয়সের হওয়ায় একই সাথে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্সে পড়াশোনা করে দুজনই। দুজন দুজনের থেকে ২মাসের ছোটো বড়ো। এসেই ক্লান্ত শরীর ঘুমের চোটে এতোক্ষণ তাদের খোজ ছিলো না। দুজনের মায়েদের চিৎকার চেচামেচিতে উঠে ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে উঠোনে এসে ডান্স পার্ট চোখে পরায় পারুক আর না পারুক ইশা ঐশীর সাথে শুরু করে দিয়েছে নাচানাচি। এটাকে নাচ করা না লাফালাফি করা কোনটা বলা চলে? ওদের অবস্থা দেখে বুঝতে পারলোনা স্নেহা। সে দিগন্তের পাশে বোসে পরেছে হাসতে হাসতে। দিগন্তও নিজের হাসি আটকাতে পারলো না। ইশা ঐশীর ডান্স পারফর্ম টাও নষ্ট করে ওরা ওদের মতো আনন্দে লাফাচ্ছে। এরমাঝে ওরা দুজনে এসে দিগন্তের হাত ধরে টেনে নিয়ে যায় ওদের সাথে নাচাতে। দিগন্ত থম মেরে সবার মাঝে দাড়িয়ে আছে। আয়মান একবার দিগন্তের এক হাত ধরে টেনে ঘুরিয়ে দেয় তো ইশফাক একবার ঘুরিয়ে দেয়। মাঝখানে বেচারা দিগন্তের টানাটানিতে অবস্থা কাহিল। স্নেহা দিগন্তের এই অবস্থা ভিডিও করে রাইমার কাছে হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়ে দেয়।
দিগন্তের বাড়িতে গায়ে হলুদ নিয়ে যতোটা মাতামাতি হচ্ছে, তার থেকেও বেশি হচ্ছে রাইমার এখানে। শার্লিন, শিখা, রেখা, সাইরা, সাইফা, তিশা, রাহান, মিহাল, নিহাল, ইফরাদ, মেসবাহ মিলে পুরো গায়ে হলুদ মাতিয়ে তুলেছে। মাহিশা আর সামিদও ওদের সাথে খানিকক্ষণ আনন্দ করে তাদের মেয়ে কান্না করে উঠায় আর ইফরাদের মা নাতনীকে সামলাতে পারছিলেন না বলে মাহিশা মেয়েকে নিয়ে চেয়ারে বোসে ওদের আনন্দ দেখছে। তার মেয়েটা এতোক্ষণে শান্ত হয়ে এসেছে। মাহিশা সবার মাঝ থেকে সরে আসায় সামিদও ওর পাশে এসে বোসে আছে। যদি মাহিশার কোনো হেল্প লাগে তো! এইকারণেই বোসে গেছে সে। আর অন্যদিকে শার্লিন রা সব মিলে একের পর এক ডান্স পারফর্ম করেই যাচ্ছে। সুন্দর হোক বা না হোক নিজেদের আনন্দের জন্য রাইমাকে হাসানোর জন্য ক্ষুদ্র চেষ্টা তারা করছে। শতো হোক এই সময়গুলো চলে গেলে আর ফেরত আসবেনা। রাইমাকে সকলেরই হলুদ ছোয়ানো শেষ। হলুদ ছোয়ানো শেষ হওয়ার পরপরই সে গোসল করে সাজগোজ তুলে নরমাল একটা সুতির শাড়ি পরে এসে স্টেজে বোসে বোসে সবার ডান্স দেখছে। সবাই এখন আনন্দ মজা করে ক্লান্ত হয়ে পরলে এসব থামিয়ে দিবেন আজাদ সাহেব। রাতের বাজে প্রায় ১০টা। বড়োরা আর পাড়াপ্রতিবেশি দাওয়াতের মানুষজন উঠোনে গোল হয়ে চেয়ার পেতে বসেছেন। আর মাঝখানের জায়গা টায় শার্লিন রা নিজেদের ডান্স পারফর্ম করছে। সবার মুখে হাসি যেনো লেপ্টে আছে। রাইমা এতো আনন্দের মাঝেও কোথাও একটা কষ্ট অনুভব করছে। আর তো মাত্র কিছুঘন্টা। এরপর সবাইকে ছেড়ে ভিন্ন এক পরিচয় সাথে ভিন্ন সব মানুষকে নিজের কাছের মানুষ, আপন মানুষ হিসেবে মেনে নিতে হবে৷ আর আপন মানুষ, চেনা মানুষ গুলোই হয়ে যাবে পর। কোথাও তো একটা হাহাকার থেকেই যায়। রাইমা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।
১০৩,
এগারোটা বাজতে বাজতেই আজাদ সাহেব সব গান বাজনা বন্ধ করে দেন। সবাইকে ফ্রেশ হয়ে ঘুমাতেও বলেন দিলেন। সকাল সকাল আবার বিয়ের আয়োজন। অনেক কাজ বাকি। রাইমা নিজের ঘরে এসে বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই যতো ক্লান্তি এসে তাকে ঘিরে ধরলো যেনো। বাকি সবাই ফ্রেশ হতে চলে গেছে। আসলেই সবাই জায়গা পেতে ঘুমিয়ে পরবে। এক খাটে তো আর সবাইকে আটবে না। রাইমা ওদের জন্য অপেক্ষা করতে করতে নিজের ফোন টা হাতে নিয়ে ডাটা ওন করতেই দেখে E ধরে আছে। কয়েকটা ছবি সে দিগন্তকে পাঠাবে। ম”রার নেটের জন্য বোধ হয় সেটাও হবেনা। সে রাগে গজরাতে গজরাতে ফোন টা নিয়ে ঘরের জানালা খুলে হাত বাড়িয়ে দেয় বাইরের দিকে। H+ আসতেই হোয়াটসঅ্যাপে একগাদা মেসেজের সাথে স্নেহার পাঠানো ভিডিও টাও আসে। রাইমা সেটা ডাউনলোড করে দেখতেই অট্টহাসিতে ফেটে পরে। কি একট অবস্থা দিগন্তের। রাগের কুমিরকে সবাই নাচাচ্ছে! এরথেকে ভয়ানক ব্যাপার স্যাপার হতে পারে কি! রাইমা হাসতে হাসতে নিজের মুখে হাত দিয়ে হাসি আটকানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে বিছানায় শুয়ে পরে। আজ বোধ হয় এটা দেখে হাসতে হাসতে তার পেট ব্যাথায় ধরে যাবে। বেচারা বিয়ে করতে এসে কি নাচ না নাচছে। শার্লিন, শিখা, রেখা সহ বাকি মেয়েরা ফ্রেশ হয়ে শাড়ি পাল্টে নরমাল ড্রেস পরে রুমে এসে রাইমাকে বিছানায় শুয়ে মুখে হাত দিয়ে চেপে হাসতে দেখে শিখা রাইমার পাশ বোসতে বোসতে জিগাসা করে,
“কি গো আপু! এতো হাসছো কেনো?”
রাইমা জবাব দেয়না। শুধু নিজের ফোনটা এগিয়ে দেয়। শিখা ফোন হাতে নিয়ে দেখে একটা ভিডিও পাস করে রাখা। সেটা প্লে করতেই দিগন্তের অবস্থা চোখে পরে। একে একে সবাই ফোনটা নিয়ে ভিডিও টা দেখে একে অপরের মুখের দিকে চাওয়াচাওয়ি করে রাইমার হাসির কারণ বুঝতে পেরে জোড়ে শব্দ করে হাসতে শুরু করে দেয়। সবাই দিগন্তকে না সামনাসামনি না দেখলেও ছবি দেখেছে। এজন্য চিনতে অসুবিধে হয়নি। এতগুলো মেয়ে একসাথে শব্দ করে হাসছে! বাড়ির কি অবস্থা তা কল্পনা করতেও কঠিন মনে হবেনা। পুরো বাড়ি মাথায় তুলে ফেলেছে তারা। আজ রাতে ঘুম হয়ে গেলো তাদের। সারারাত যে বকবক চলবে এটাই বোঝা যাচ্ছে আপাতত। বাড়ির উঠোনে বিয়ের রান্নাবান্নার জন্য আদা, রসুন, পেয়াজের খোসা ছাড়ানো আর মশলা বাটাবাটির পাল্লা চলছিলো। আচমকা সবাই রাইমার ঘর থেকে এতো হাসির শব্দ শুনে ঘাবড়ে গেলেও সব মেয়েরা আনন্দ করছে বুঝে কেউ আর মাথা ঘামালো না। সবাই ব্যস্ত হয়ে পরলো কাজে।ইফরাদ, মেসবাহ, রাহান তো মিহাল আর নিহালের সাথে চলে গেছে মিহালদের বাড়ি। পাশাপাশি গ্রাম হওয়ায় যাওয়া আসায় অসুবিধা হয়না। এতো মানুষের মাঝে তাদের ঘুম হবেনা। আর ইফরাদ তো না ঘুমালে মাথা ব্যথায় টিকতেও পারবেনা। রইলো তো বিয়েতে কোনো কাজে সাহায্য তো দূর বিছানা ছাড়তে পারে কিনা! এজন্য ডালিয়া বেগমের পরামর্শে ওদের সাথে নিয়ে বাড়িতে চলে গেছে মিহাল। ভোর হতে হতে উঠেই ওরা চলে আসবে। মাহিশা আর সামিদকে পাশের বাড়িতে নিরিবিলি ঘরে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন শাহনাজ বেগম। বাচ্চা মেয়েকে নিয়ে হইচইয়ের মাঝে না থাকাই ভালো। সবাই সবার অবস্থানে নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত। আর মাত্র একটা রাত, একটা দিনের অর্ধেক বোধহয়। এরপরই তো সব আয়োজন থেমে যাবে। যার জন্য এতো আয়োজন! সেই চলে যাবে পরের ঘরে৷ পিতা আজাদ সাহেব এবৈ মাতা শাহনাজ বেগমের মনে যে কি ঝড়টা বয়ে চলেছে এই আন্দাজ টা রাইমা করতে পারছে। সবার সাথে আড্ডা, এতো হাসির মাঝেও তার মন টিকছেনা। তার ইচ্ছে করছে মা’কে বাবাকে ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরে বলতে, ‘ বাবা মা আমায় তোমরা তোমাদের থেকে দূরে সরিয়ে দিয়ো না। আমি তোমাদের ছেড়ে কোথাও যাবোনা।’ আফসোস এমনটা হবেনা।
১০৪,
পরদিন সকালবেলায়, ১০টা বাজে প্রায়। বিয়ের আয়োজন শুরু হয়ে গেছে। একপাশে চলছে রান্নার ধুম। অন্য পাশে চলছে সামিয়ানা টাঙিয়ে টেবিল সাজানোর কাজ। সাথে রাইমা আর দিগন্তকে বসানোর জন্য সাজানো হচ্ছে স্টেজ৷ রাজশাহী এবং সিরাজগঞ্জে যাতায়াতের সময় লাগবে প্রায় সাড়ে চার ঘন্টা থেকে পাঁচ ঘন্টা (আন্দাজে লিখলাম, ভুল হলে ক্ষমা করে মানিয়ে নিবেন)। আসতে যেহেতু এতো সময় লাগবে, এজন্য পাত্রপক্ষ সকাল সকাল হতে হতেই বেরিয়ে পরবে বলে খবর এসেছে আজাদ সাহেবের কাছে। এজন্য তিনি হাসান সাহেব ও ভাই মজিদ সাহেব এবং মিহালের বাবাকে সাথে নিয়ে ছুটোছুটি করে সব আয়োজন করছেন। ইফরাদ, মেসবাহ, মিহাল এবং নিহালও বড়োদের হাতে হাতে সাহায্য করতে যথেষ্ট ছোটাছুটি করছে। সাথে তো ডেকোরেটরের লোকজন আছেই। সকাল সকাল রাইমাকে কাঁচা হলুদ বাটায় গোসল করিয়ে এনে তার ঘরে মাদুর পেতে বসিয়ে দিয়েছে তার প্রতিবেশী ভাইয়ের বউরা মিলে। যেহেতু তার নিজের ভাবী সম্পর্কীয় কেউ হয়নি এখনও। তাই উনারাই এসব করে দিয়ে গেছেন। বিয়েটা গ্রামে হচ্ছে যেহেতু, সেহেতু নিয়মকানুন অনেকটা গ্রামের মানুষদের কথামতোই মানা হচ্ছে। বিয়োর সাজগোজ, শাড়ি, গহনা তো দিগন্ত রা আনবে। আনার পর রাইমাকে সাজিয়ে দেওয়া হবে। আপাতত তাকে বাবার বাড়ির দেওয়া ভিজানো শাড়ি(গ্রাম্য ভাষায় যা বলে তাই লিখেছি) পরিয়ে বসিয়ে রাখা হয়েছে। তার চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বোসে আছে শার্লিন সহো বাকি মেয়েরা। সবাই রাইমাকে নিয়ে দিগন্তের নাম নিয়ে হাসি ঠাট্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এরমাঝেই মিহাল আর ইফরাদ ঘরের দরজায় এসে দাড়ায়। তাদের দেখে শার্লিন ভ্রু উঁচিয়ে জিগাসা করে,
“কিছু বলবে তোমরা? মেয়েদের ঘরের সামনে তোমাদের কি কাজ?”
ইফরাদ বললো,
“দিগন্ত ভাই আসলে গেইট আটকাবে না তোমরা? গেইট আটকানো নিয়ে দেখছি কারোর আগ্রহই নেই।”
তার কথা শুনে সবার টনক নড়লো। সবাই আড্ডায় এতোটাই মশগুল ছিলো। এই বিষয়টা বেমালুম ভুলে বোসেছে। সাইফা সবাইকে উঠার তাড়া দিয়ে হাসতে হাসতে বললো,
“সবাই উঠো উঠো, এখন ভাইয়ারা নিজেরা যেহেতু বলতে এসেছে। তারাই গেইট আটানোর আয়োজন করতে সাহায্য করবে। আমরা দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখবো চলো।”
মিহাল সাইফার কথা শুনে বললো,
“তাহলো গেইট আটকে যে টাকা পাবেন আপনারা, টাকাগুলোও আমরা নিয়ে নেবো। আপনারা দাড়িয়ে দাড়িয়ে তখন দেখবেন। অলসের দল কোথাকার।”
মিহালের জবাবে সবার মুখ চুপসে যায়। রাইমা ঠোঁট টিপে হাসে। সবার মুখ একেবারে বন্ধ করে দিয়েছে মিহাল। সাইফা মিহালের কথা শুনে নিজেদের কথার মান বজায় রাখতে বললো,
“দাড়িয়ে দেখি না দৌড় দেয় পরে দেখা যাবে। আপাতত চলেন, আমরা এতোটাও অলস না যে কিছু করবোনা। এই চলোতো সবাই। আমরাও দেখিয়ে দিবো, আমরাও কাজ পারি। অলস নই।”
চলবে?
ভুলত্রুটি মার্জনীয়। বিয়ে করিনি, তাই বিয়ে কি করে হয় এতো নিয়ম জানিনা। 😐 কাজিনের বিয়ের গল্প যেমন শুনেছি, তেমনই লিখেছি। ভুল হলে ধরিয়ে দিয়ে ক্ষমা করবেন। 🤧 সবাইকে বিয়ের দাওয়াত রইলো। আসসালামু আলাইকুম।