#আকাশেও_অল্প_নীল
#পর্বঃ৩৩
#আর্শিয়া_ইসলাম_উর্মি
১০৫,
বরের সাজে দিগন্ত কে সাজিয়ে দিয়ে কোমড়ে হাত দিয়ে হাপাচ্ছে মাহাদ সহো আয়মান আর ইশফাক। শেরওয়ানির এক দোপাট্টা সেট করে দিতে গিয়ে তিনজনের বেশ বেগ পোহাতে হলো। যেভাবেই সেট করে দেয়, দিগন্ত বারবার বলে, পাজামা পাঞ্জাবিই ঠিক ছিলো। মেয়েদের ওরনার মতো! এটা পড়ানোর কি দরকার! এই কথা বলে বারবার সে খুলে ফেলছিলো। স্নেহা বিছানায় বোসে বোসে দিগন্তর কান্ড দেখছিলো। সবশেষে নিজে এক ধমক দেওয়ায় সে থেমে গেছে। এরপর মাহাদ পুরো রেডি করে দিয়ে পাগড়ির দিকে তাকিয়ে বললো,
“স্নেহা, এটা তো বড়োদের পড়ানোর দায়িত্ব। কে পড়াবে?”
“চাচাকে ডাক দাও তো ইশা। উনি এসে পড়াবেন এটা। সাথে ফুফাকেও ডেকে আনো।”
বরপক্ষ আগেই বাস ভর্তি হয়ে চলে গেছে কনেপক্ষের উদ্দেশ্যে। বাসায় মানুষজনের বালাই তেমন নেই। শুধু দিগন্তের সাথে বরের গাড়িতে আর বরের সাথে যেতে ভাইবোন ক’জনই আছে। ইশা স্নেহার কথামতো চাচা আর ফুফাকে ডেকে আনার পর স্নেহা তাদের উদ্দেশ্যে বললো,
“চাচা, বাবা তো নেই। আপনারা-ই বাবার দায়িত্ব টা পালন করেন।”
দিগন্তের চাচা ভাইয়ের কথা মনে করতেই চোখের কোণে জল জমে। দিগন্তের নিজের বাবার কথা ভীষণ মনে পরছে। কিন্তু কিছু করার নেই। দিগন্তের হাত ধরে তার চাচা বিছানায় বসিয়ে দেয়। এরপর তার চাচা ফুফা মিলিয়ে মাথায় পাগড়ি টা পরিয়ে দিলেন। দিগন্তকে পুরোপুরো তৈরি করে নিয়ে বের হলো সবাই। উঠোনে এসে চাচী আর ফুফুকে বিদায় দিয়ে তারা গাড়িতে উঠে বসলো। উনারা বাড়িতে রয়ে গেলেন নতুন বউকে বরণ করার অপেক্ষায়। এক গাড়িতে ছেলেরা সব উঠলো। অন্য গাড়িতে মেয়েরা সব উঠে বসলো। সাথে চাচা আর ফুফা। গাড়িতে বসার পরপরই গাড়ি চলতে শুরু করে।
গেইট সাজানো শেষ প্রায়। ইফরাদ ফিনিশিং টাচ দিয়ে গেইটের পাশে পরে থাকা চেয়ারটায় গা এলিয়ে দিলো। শার্লিন সহো বাকি মেয়েরা ঘুরে ফিরে সব দেখছিলো। এরপর গালে হাত দিয়ে ভাবুক চিত্তে শার্লিন সবার উদ্দেশ্যে বললো,
“আচ্ছা দুলাভাইকে কি কি শরবত খাওয়ানো হবে? সেগুলো কে ডিসাইড করবে!”
“কেনো আপু! তুমি থাকতে আমাদের আআার চিন্তা কিসের?”
শিখার উত্তরে সবাই হেসে উঠলো। ইফরাদ কপাল চুলকে মৃদু স্বরে বললো,
“ও আছে এটাই মূল চিন্তা। না জানি বেচারা দিগন্ত ভাইকে বিয়ের দিন কোন ডোবার পানি খাইয়ে ছাড়ে!”
ইফরাদের কথা শুনে শার্লিন গাল ফুলিয়ে তাকায়। রেখা কপাল চাপড়ে বলে,
“হয়ে গেলো। এখানে ৩য় বি”শ্বযু’দ্ধ শুরু হওয়ার আগেই এদের কেউ সরিয়ে নিয়ে যাও।”
মেসবাহ একপাশে নিশ্চুপ দাড়িয়ে ছিলো। আরফানের আঙুলে আঙুল পেচানো ছিলো তার। আরফান জানিনা কি বুঝলো রেখার কথার। সে এগিয়ে এসে ইফরাদের হাত ধরে বললো,
“ইফরাদ ভাই, এখান থেকে চলেন। আমি চকলেট খাবো।”
১০৬,
ইফরাদ ভীত সশস্ত্র চাহনীতে শার্লিনকে দেখে আরফানকে নিয়ে মানে মানে কে”টে পরলো। সে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়িয়ে কয়েক কদম যেতেই শার্লিন পিছন থেকে চেঁচিয়ে বললো,
“আসিয়েন শুধু আমায় বিয়ে করতে! সিরিয়াসলি সেদিন আমি যদি কচুর শরবত না খাইয়েছি! আমিও শার্লিন নই, নাম পাল্টে দিগন্ত ভাইয়ের শালী নাম রাখবো। আফটার অল আজকেই আমি শালী হিসেবে তাকে ডোবার পানি খাওয়াবো তাইনা!”
শার্লিনের কথা ইফরাদের কানে পরতেই সে পিছন ফিরে একবার তাকিয়ে কয়েকটা ফাঁকা ঢোল গিলে আরফানের হাত ধরে দ্রুত পদে চলে যায়। আর বাকিরা সবাই দাড়িয়ে তো হাসছে। শার্লিন সবাইকে তাড়া দিয়ে বললো,
“চলো চলো, অনেক কাজ বাকি। মিষ্টি সাজানো, শরবত বানানো। দিগন্ত ভাই আমাদের স্পেশাল দুলাভাই বলে কথা!”
“তোমায় মাথায় কি দুষ্টমি ঘুরছে শার্লিন?”
মাহিশার কণ্ঠ শুনে সেদিকে দৃষ্টি দেয় সকলে৷ মেয়েকে কোলে নিয়ে শার্লিনের থেকে একটু দূরেই দাড়িয়ে আছে। সবকিছু জানার পর মাহিশাকে একদমই পছন্দ না শার্লিনের। সে মাহিশাকে এড়িয়ে যাবে সবার মাঝে সেটারও উপায় নেই। সে একটু নিজেকে সামলে নিয়ে বিরক্তি চেপে উত্তর দেয়,
“না আপু, দুষ্টমি না। আমি গুড গার্ল। ভালো কিছুই মেইক করবো। ট্রাস্ট মি আমি উল্টাপাল্টা কিছু করবোনা।”
এরপর সবাইকে সাথে নিয়ে পা বাড়ায় শরবত বানানোর কাজে লাগতে। মিহাল নিহাল তো কথার ফাঁকে আগেই কেটে পরেছে। এই মেয়েরা কি শরবত বানিয়ে দিগন্তকে হাসায় না কাদায়! তার ঠিক নেই। দায়ভার টা নিজেদের ঘাড়ে আসার আগেই তারা সরে গেছে। ব্যস এটাই শান্তি।
মাহিশা সবার যাওয়ার পানে দাড়িয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। জানে সে নিজের কৃতকর্মের জন্যই আজ এই পরিস্থিতিতে পরেছে। তাই আফসোস করা ব্যতিত আর কোনো কাজ নেই তার। সেই সময় সামিদ এসে মাহিশার কাঁধে হাত রাখে। মাহিশা তার দিকে তাকাতেই সে বলে,
“মেয়েকে রেডি করতে হবে, তোমার নিজেরও রেডি হতে হবে। সময়ের ব্যাপার। এখানে দাড়িয়ে দাড়িয়ে কি করছো?”
“নাথিং, চলো মেয়েকে তৈরি করা যাক।”
আড়াই বছরের ছোট্ট বাচ্চা মেয়েটা কিছু বুঝেনা। কিন্তু মায়ের মলিন মুখটার দিকে শুধু টল-টলে চাহনীতে তাকিয়ে থাকে। হয়তো সে-ও তার চঞ্চল মায়ের এই নিশ্চুপ রুপটার সাথে পরিচিত নয়। কিন্তু সে তো এই দুনিয়ার তিক্ততা বোঝে না। পরিচিত আপন মানুষ টাকে কাছে পেয়েও কাছে যাওয়ার অধিকার না পাওয়ার মতো যন্ত্র”ণা দুটো হয়না। অধিকার ছেড়ে দিয়ে অধিকার চাওয়ার মতো বিড়ম্বনা! আদৌও আর দুটোতে হয়? ভেবে পেলোনা মাহিশা। ধীর গতিতে তাদের জন্য ঠিক করে দেওয়া রুমটায় চলে গেলো।
এদিকে শার্লিন রা গেইট ধরার সব তৈরি করে সাজিয়ে ঢেকে রেখে সবাই চলে গেলো গোসল করে রেডি হতে। কলপাড়ে যে সিরিয়াল! তাতে গোসল দেওয়ার আশা ছেড়েই দিয়েছিলো সব। পরে আবার রাইমার প্রতিবেশী এক চাচাতো বোনের কথায় তাদের বাড়িতে নিরবিলি জায়গায় চলে গেছে সব নিজেদের ড্রেস আর সাজগোজের জিনিস নিয়ে। ওদের বাড়ির ভেতর উঠোন পেরিয়ে শান বাধানো ঘাটের পুকুরে নেমে পরেছে সব। শার্লিন তো ভীষণ খুশি। এতো আনন্দ এই জীবনে তার পাওয়া হয়নি। এতো এতো আনন্দের বিনিময়ে নিজের আত্মার বান্ধবী টাকে হারাতে হবে! এই কথা মনে আসলেই শার্লিনের চোখ জলে ভরে আসছে। তবুও সবার মাঝে কাদার বিষয়টা! ভীষণ অসস্তিকর। এজন্য পুকুরের পানিতে দাড়িয়ে মুখে বারংবার পানির ঝাপটা দেওয়ার বাহানায় কেঁদে নিচ্ছে। কি করবে! সবার সামনে কাঁদলে তো হাজার প্রশ্ন। এতো প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার মতো তার ধৈর্যশক্তি নেই।
১০৭,
বাইরে হইচই শোনা যাচ্ছে বর এসেছে আর এসেছে। রাইমার সাথে বোসে ছিলো সব মেয়েরা। ঘরে উপচে পরা ভীর ছিলো। মুহুর্তে ঘরটা ফাঁকা হয়ে গেলো। শার্লিন রা তো ছুট লাগিয়েছে গেইট ধরবে বলে। বিয়ের সবথেকে মজার পার্ট তো এটাই মনে হয় তার কাছে। রাইমা ঘরটা ফাঁকা পেয়ে হাফ ছেড়ে জোড়ে কয়েকটা নিঃশ্বাস নেয়। এতো ভীড়ভাট্টা তার পছন্দ নয়। অল্প মানুষের মাঝে কমফোর্ট ফিল করা মানুষের জন্য বিয়ে মনে হয় একটা আতঙ্ক। বাবারে এতো মানুষকে সহ্য করা! এরথেকে আজীবন মানুষের কথা শুনে সিঙ্গেল থাকা ভালো মনে হলো রাইমার। বয়স ২৩এর কোঠায় ঠেকেছে বলে এতোদিন যারা বলতো, ‘বিয়ে কবে দিবে বাবা মা! পছন্দের কেউ আছে কিনা!’ আজকের পর তো আর বলবেনা বিয়ে কবে দিবে? উল্টে বর সহো দেখলে বলবে, ওমাহ! বিয়ে হয়ে গেলো! জামাই কি করে? কতো টাকা বেতন! কি করে বিয়ে হলো? কবে হলো? মনে হয় তারা বিয়েতে ভাঙচি দিতে না পেরে এক আকাশ হতাশায় ভুগতে শুরু করবে। এই বিষয়গুলো জঘন্য লাগে তার কাছে। রাইমার এই আকাশ কুসুম চিন্তার মাঝে মাহিশা মেয়ের হাত ধরে রাইমার ঘরের দরজার কাছে দাড়িয়ে জিগাসা করে,
“ভেতরে আসতে পারি রাই?”
রাইমা নিজের চিন্তাভাবনা ফেলে মাহিশার গলা শুনে দরজার দিকে তাকায়। মেয়েটার মুখে মলিনতার ছাপ স্পষ্ট। হয়তো তাকে দেখার পর কষ্ট টা আরও প্রগাড় হয়েছে। পরনে ছাই রঙা শাড়িটায় বেশ মানিয়েছে ওকে। আগে মাহিশা শাড়ি পরলেই রাইমা মুগ্ধতা নিয়ে দেখতো। মপয়েটা বেশ সুন্দরী। সে তার তুলনায় নগণ্য। তবুও সে তার নিজের সৌন্দর্যে অনন্য। যার যার জায়গায় সে সে সুন্দর। নির্ঘাত নিজের ভাইটা তার বড়ো হলে মাহিশাকে নিজের ভাইয়ের বউ করে ফেলতো রাইমা। সে আনমনে এসব চিন্তা করতে করতে বললো,
“আয়, আসতে আবার অনুমতি লাগে?”
“কিছুই তো আর আগের মতো নেই! তো কি করবো বল?”
ঘরে এসে বসতে বসতে মাহিশা জবাবে কথাটা বললো। রাইমা মাহিশার মেয়ের সামনে হাটুমুড়ে বোসে মাহিশার মেয়ের আঙুলে আঙুল ছুইয়ে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আলতো স্বরে বললো,
“মায়ের নামটা কি! এসে থেকে তোর সাথেই কথা হয়ে যাচ্ছে। আম্মগর নামটাই জানা হয়নি।”
“আদ্রিশা ওর নাম।”
রাইমা চকিতে মাহিশার দিকে তাকায়। নামটা তার বড্ড প্রিয়। মাহিশার সাথে আগে খুনশুটি করতে করতে সে নিজেই বলতো মাহিশার মেয়ে হলে নাম রাখবে আদ্রিশা। মাহিশা যে তার পছন্দের খেয়াল টা এতো বছর পরও রেখেছে এটাই বেশি। মাহিশাও রাইমার দিকেই তাকিয়ে ছিলল। সে মুচকি হাসি ফেরত দিলো রাইমার তাকানোর বদলে। রাইমা বললো,
“অনেক চঞ্চল ছিলি, এতো ভার কি করে হয়ে গেলি?”
“আসলে আমি বদলাইনি। কিন্তু সময়টা অনেকটা পেরিয়ে গিয়ে অনেক জড়তা এসে গেছে সব সম্পর্কে । তাই চাইলেও আগের মতো হতে পারছিনা। তুই পছন্দ করবি কিনা কে জানে! কি বলতো ঐ বয়সটায় না ফ্যান্টাসি কাজ করতো! মনে হয়েছিলো এই তো পালিয়ে আসলাম, বিয়ে হবে, বাচ্চা হবে। মা বাবার সামনে গিয়ে দাড়াবো। তারা মেনে নিবে। তোর সামনে এসে কোলে মেয়েকে তুলে দিলে তুইও খুশি হয়ে আমায় বুঝবি! কিন্তু হলো কি বলতো! বাবা মায়ের অসম্মান, তোরও অসম্মান সাথে এতো অপমান মানুষের। সবাই এতোটা কষ্ট পেলো, আ’ঘাত পেলো। সবটাই আমার জন্য। আমি পজেটিভ দিকটা ভেবেছিলাম, এটার নেগেটিভিটি বলেও যে একটা ইফেক্ট থাকবে আমি কল্পনাও করিনি। ফ্যান্টাসিতে ভেসে বেরিয়েছি। সবকিছুরই লিমিট থাকে। আমি সেই লিমিট ক্রস করে কঠিন বাস্তবতার সম্মুখীন হয়ে নিজের সত্ত্বা খুইয়ে বসেছি। কিন্তু এই যে পিচ্চি পরি। এনার সামনে আমি কখনও গম্ভীর হইনা। কারণ সে ছোটো থেকে যা দেখবে তা দেখেই বড়ো হবে। আমি চাইনা আমার মেয়ে গম্ভীর হউক, ছোটো কিছু হলেই ওভার থিংকিং এ ডুবে যাক। চাই সে চটপটে হোক। প্রতিটা পরিস্থিতি পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়ার ক্ষমতা রাখুক। এজন্য সত্যি বলতে নিজের চঞ্চল সত্ত্বা পুরো বিসর্জন দিতে পারিনি।’
মাহিশার দীর্ঘ কথা শুনে রাইমা একটু হাসলো। আদ্রিশার সাথে দুষ্টমিতে মেতে উঠলো। মাহিশা বুঝিয়ে দিলো রাইমা তার আরও একটা মায়ের মতো আন্টি। ডাকতে শিখিয়ে দিলো ছোটো মা বলে। আদো আদো বুলিতে তো সে সবই বলতে পারে। তাই রাইমাকে ডাকতে ডাকটাও চট করে রপ্ত করে ফেলে বাচ্চাটা।
১০৮,
মাহিশা আর রাইমার কথোপকথন একপাশে চলছে, অন্যপাশে চলছে গেইটে একপ্রকার তর্ক প্রতিযোগিতা। শার্লিন-রা দাবী করে তর্ক করে যাচ্ছে এক এমাউন্ট। দিগন্তের ভাইরা তার অর্ধেক দিবে বলে তর্ক করছে। এরমাঝে শার্লিন আর বাকি মেয়েদের বানানো স্পেশাল শরবত! যে মুখে দিয়েছে, সেই ছিটকে ফেলেছে। তা দেখে শার্লিনদের তো হাসি থামেনা। ছোটো ছোটো কাঁচা আম এনে তার শরবত সাথে একগাদা লবণ, মাল্টার শরবতের সাথে হলুদ মরিচের গুড়ো। সাদা পানির ভিতরও লবণ রাখতে ভুলেনি। মিষ্টি খাইয়ে দিগন্তের মুখে সাদা পানি দিতেও সে ছিটকে বের করে দিয়েছে। এরপর শার্লিনদের আর পায় কোথায়! উপস্থিত সকলে হেসেই খু'”ন। লটারিতে তিনটা এমাউন্ট লিখে টেবিলে ফেলে রেখেছিলো তারা। তারমাঝে মিডিয়াম এমাউন্ট টাই তুলেছে দিগন্ত। এতো তর্কাতর্কিতে দিগন্তের মাথা ধরে যাচ্ছিলো। ইফরাদ তো পাশে দাড়ানো মেসবাহকে বলেই বোসে,
“আপনার এটা বোন নাকি রেডিও এফএম ভাই! সারাক্ষণ বাজতেই থাকে! আমার যে কি অবস্থা হবে? আমি কল্পনা করতেও ভয় পাই রিতীমতো।”
“দেখেশুনে পঁচা শামুকে পা কেটেছো। সহ্য করো কি আর করবে!”
মেসবাহ ইফরাদের কথার জবাবে কথাটা বললো। ইফরাদ আলতো হেসে তর্ক রত শার্লিনের দিকে তাকিয়ে বললো,
“ও পঁচা শামুক নয় ভাইয়া। ও রত্ন। ওকে যে বুঝবে, সে ওকে সব মানুষের মাঝেই খুজে বেড়াবে।”
মেসবাহ হাসলো ইফরাদের জবাবে। সে তো ইফরাদের শার্লিন সম্পর্কে ধারণা জানতে বোন সম্পর্কে ওভাবে বলেছিলো। যাক এদের ভালোবাসা ভুল নয়। মেসবাহ সস্তির নিশ্বাস ছাড়লো। এদিকে দিগন্ত তর্কাতর্কির মাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়া দেখে সবাইকে থামানোর উদ্দেশ্যে পকেট থেকে শার্লিনদের কাঙ্খিত এমাউন্ট টা বের করে টেবিলে রেখে বললো,
“থেমে যাও শালীকা-রা আমার। এতো ছোট্ট একটা আবদার করেছো! দুলাভাই হয়ে অস্বীকার কি করে করি!, এবার ঝটপট গেইট ছাড়ো। বউকে নিয়ে বাড়ি ফিরতে হবে। দীর্ঘপথ, মাথা ধরে গেছে আমার।।এতো টাকা দিলাম, বিনিময়ে এবার বসিয়ে একটু খাতিরদারি করো। নয়তো আমার বাড়ি নিয়ে একেকটাকে এই কাঁচা অপরিপক্ব আমের শরবতে চুবিয়ে রাখবো।”
শার্লিনরা টাকা পেয়ে খুশিতে লাফিয়ে উঠেছে। গেইট ছাড়িয়ে দিয়ে সরে যায় সবাই। মাহাদ দিগন্তের পাশে হাটতে হাটতে বলে,
“বিয়ের আগেই শালীদের কাছে হাড়লে! এবার তৈরি থাকো সারাজীবন হেরে হেরে হেরো ভূত হয়ে বোসে থাকবে।”
“টাকা দিয়ে উপরে থেকে গেলাম দুলাভাই। বলতে পারবেনা ওরা রাইকে যে, রাইয়ের স্বামী কিপ্টে।”
“বাপরে ভাই আমার, বউয়ের জন্য কতো চিন্তা!”
আয়মান পাশ থেকে দিগন্তের কথা শুনে কথাটা বলে। ওরা হাসতে হাসতেই স্টেজে গিয়ে বোসে। আজাদ সাহেব নিজে এসে দিগন্তকে নিয়ম মাফিক বসিয়ে দিয়ে যান। এদিকে বরপক্ষ সব আগেই চলে এসেছিলো যারা, সবাইকে খাওয়ানোর ধুম চলছে। স্নেহা সহো সব মেয়েরা লাগেজ নিয়ে সোজা চলে যায় রাইমার কাছে। হামিদা বেগম এসে ওদের নিয়ে যায়। এখন বউকে সাজিয়ে নিয়ে বিয়ে পরিয়ে সব নিয়ম শেষ করে বাড়িতে নিয়ে যেতে বাঁচে সব। এতো দূরের জার্নি করে সবার অবস্থা কাহিল।
চলবে?
ভুলত্রুটি মার্জনীয়, রিচেইক দেইনি।ইনশা আল্লাহ আগামীকাল এই বিয়ের ল্যাটা চুকিয়ে ফেলবো। এক টপিক এতো পর্বে টানার জন্য দুঃখিত। কিন্তু এতো লিখেও একটা বিষয় কাভার করা যাচ্ছে না। আর হ্যাঁ মেইন করা, আমার গল্পটা কাল্পনিক হলেও গল্পের প্রতিটা চরিত্র গুরুত্বপূর্ণ। শুধু যে দিগন্ত আর রাইমা কেন্দ্রীয় চরিত্র, তাদের ঘিরে গল্প টানছি! বিষয়টা এমন নয়। প্রতিটা চরিত্র তার নিজস্ব ক্ষেত্র থেকে মূল চরিত্র। আশা করি আপনাদের ইন্ডিং টাও মনমতো হবে। আর হ্যা এই বিয়ের এতো বর্ণনা আমি আমার কাজিনের বিয়েতে যা হয়েছে, সেই অনুযায়ী দিচ্ছি। এখন ঠিকভুল ধরিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব আপনাদের আসসালামু আলাইকুম।