#আকাশেও_অল্প_নীল
#পর্বঃ১৩
#আর্শিয়া_ইসলাম_উর্মি
৩৬,
রাইমাদের বাসার ড্রইং রুমে বসে আছে স্নেহা, মাহাদ, দিগন্ত। সাথে আছে রাইমার বাবা আজাদ সাহেব। আরফান ড্রইং রুমের এক কোণায় টুল পেতে বসেছে। মাহাদের আনা চকলেটের বক্স থেকে চকলেট সাবার করতে ব্যস্ত সে। শাহনাজ বেগম ট্রে তে করে নাস্তা, ফলমূল সাজিয়ে এনে তাদের সামনে সেন্টার টেবিলো সাজিয়ে রাখলেন। এরপর স্বামীর পাশেই বসে পরলেন৷ এতোক্ষণ ওরা সব টুকটাক ভালোমন্দ খোজ খবর নিয়ে গল্প করছিলো। এছাড়াও স্নেহা আর দিগন্ত প্রথম বার আসায় আজাদ সাহেবের সাথে পরিচিত হলো ওরা। শাহনাজ বেগম রান্নাবান্না করতে উদ্দ্যত হতে আজাদ সাহেবকে বাজারে পাঠাতে চেয়েছিলো, কিন্তু স্নেহা বুঝতে পেরে তাদের থামিয়ে দেয়। জানান দেয়, জরুরী কথা আছে। সকালবেলায় ভাইয়ের মতামত পেয়ে সে মাহাদের সাথে কথা বলে বিকেলেই এসেছে বিয়ের কথাবার্তা আগাতে। রাইমাকে তো আগে থেকেই দেখে আসছে। নতুন করে দেখার আর কিছু বাকি নেই। তাই বিয়ের মূলকথা সারতেই তাদের আগমন। শাহনাজ বেগম সবার দিকে নাস্তা এগিয়ে দিয়ে বললেন,
“বসে আছো কেনো? একটু নাস্তা টেস্ট করো।”
স্নেহা উত্তরে বললো,
“জ্বি খাচ্ছি আন্টি।”
“আমায় দেখে আবার লজ্জা পেয়ো না মা৷ প্রথম বার দেখলে বলে যে আংকেলের সামনে লজ্জায় খাবেনা, এমনটা যেনো না হয়৷ বাবা না হলেও বাবার মতোই তো। লজ্জা না পেয়ে খেয়ে নাও। তোমার আন্টির হাতের রান্না বেশ ভালো।”
আজাদ সাহেব স্নেহার অসস্তি ভাব বুঝতে পেরে হেসে কথাটা বললেন। দিগন্ত উনার কথার উত্তরে মুচকি বললো,
“লজ্জা কেনো পাবো আংকেল! পর মানুষের বাসায় তো আসিনি। বাবা মায়ের কাছেই এসেছি।”
“এই তো বাবা বুঝেছে।”
দিগন্ত আজাদ সাহেবের এক পাশেই ছিলো। উনি দিগন্তের পিঠে চাপড় দিয়ে কথাটা বললেন। স্নেহা আর মাহাদ দুজন দুমাথার সিঙ্গেল সোফায় বসা। সবাই একটু নাস্তা মুখে দেয়। মাহাদ নাস্তা খেতে খেতে নিরবতা ভেঙে বললো,
“স্নেহা, এবার তো মূল ঘটনা বলো। আমায় জোড় করে এই অবেলায় এখানে আসলে। যেখানে বিয়ের শপিং করার কথা। সেখানে আন্টির কাছে টেনে আনলে৷”
“হ্যাঁ মা, কি বলবে বলো এবার। বাজারেও যেতে দিলে না কথাবার্তা বলাী জন্য।”
স্নেহা একটু অসস্তি নিয়ে ভয় নিয়ে আজাদ সাহেবের দিকে তাকায়। আজাদ সাহেব শাহনাজ বেগমের কাছে দিগন্ত আর রাইমার বিয়ে সম্পর্কে আভাস পেয়েছিলেন। তাই স্নেহার ভয় কা”টাতে কথাটা বললেন। স্নেহা কণ্ঠ খাদে নামিয়ে শ্রদ্ধা সহিত বললো,
“আমি আন্টির কাছে আগেও কথাটা একবার বলেছিলাম আংকেল। এবার আপনার কাছে আবদার করে আপনার রাজকন্যাকে আমার ভাইয়ের জন্য চাইতে এসেছি। আপনি যদি সম্মতি দিতেন, তবে কথাবার্তা আগাতে পারতাম।”
“তা না হয় বুঝলাম মামনি। কিন্তু আমার ছোট্ট রাজকন্যা রাজী কিনা! তার মতামত তো আমাদের জানা হয়নি মা! কি করে কি সিদ্ধান্ত নিবো! বুঝতে পারছিনা।”
আজাদ সাহেব উত্তর দিলেন। শাহনাজ বেগম বললেন,
“যদিও রাইমা আমাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই বিয়ে করতে চেয়েছে। কিন্তু তবুও পাত্র কে! পাত্রর পরিচয় জেনে কি মতামত হবে! এটা বলেনি।”
“তা তোমার ঢঙী কই আন্টি! ডাকো, আমাদের সামনেই যা বলার বলুক। আসার পর থেকে একবারও তার ছায়া দেখলাম না। বাসায় নেই নাকি!”
মাহাদ বললো কথাটা। দিগন্ত মনে মনে ভাবছে, রাইমা যেনো প্রতিবারের ন্যায় ঝগড়া করে বিয়েটা ভেঙে দেয়। অন্য যেকোনো মেয়েকে বিয়ে করতে সে রাজী! তবে শান্ত হতে হবে। এই ধানী লঙ্কার ঝাঁজ প্রতিটা দিন সহ্য করা অসম্ভব।
৩৭,
মাহাদের কথার উত্তরে শাহনাজ বেগম বললেন,
“রাইমা আসলেই বাসায় নেই। নয়তো স্নেহা এসেছে জেনেও আড়ালে থাকতো কি?”
“কোথায় গেছেন উনি?”
দিগন্ত প্রশ্ন করে। শাহনাজ বেগম বললেন,
“শার্লিনের বাসায়। ওকেও বিয়ে দিতে উঠেপরে লেগেছে ওর বাবা মা। পাত্রপক্ষ আজ দেখতে আসবে। তাই ওখানে গিয়েছে শার্লিন ডাকায়।”
“যাক বাবা, এজন্য বাড়িটা নিরব। নয়তো দুই পাগ”ল এখানে থাকলে আমি আধপাগ”ল হয়ে যেতাম।”
দিগন্ত বিরবির করে বললো কথাটা। মাথা নিচু করে থাকায় বিষয়টা কারোরই নজরে পরলো না। আজাদ সাহেব বললেন,
“দেখো স্নেহা মা। তোমার ভাইকে অপছন্দ করার মতো কোনো কারণ দেখছিনা। শাহনাজের মুখে যা শুনেছি আমার মেয়ে সুখে থাকবে। আর প্রতিটা বাবাই চায় তার মেয়ে সুখে থাকুক। আর বিয়েটা যেহেতু আমার মেয়ে করবে, তাই ওর থেকে হ্যাঁ বা না মতামত নিয়েই তো কথা আগানো উচিত বলো! তাছাড়া ও যদি রাজীও হয়! একদিনে দুই বিয়ে! বুষয়টা সামলানো একটু কঠিন হবে মা। তাছাড়া আমার মেয়ে, আমাদের বংশের বড়ো মেয়ে। ওর বিয়ে ওর দাদা, দাদী, চাচা, ফুফুর স্বপ্ন আছে আনন্দ করার ইচ্ছে আছে। বিয়ে উপলক্ষে আমাদের তিন ভাইবোনের একত্রিত হওয়ারও একটু ইচ্ছে আছে। আমার একটা ভাই আর একটা বোনই, তাদের আদরের ভাতিজীকে তারা আনন্দ, হাসিতে শ্বশুর বাড়িতে বিদায় দিবে! এই আশায় আছে, তাদের আশাটা নষ্ট করি কি করে বলো মা? যদি রাইমা রাজী হয়, তোমাদের কাছে অনুরোধ ছোট্ট করে হলেও একটু অনুষ্ঠান করতেই হবে। আর বিয়েটা সম্পূর্ণ আমাদের গ্রামেই হতে হবে। তোমরা গ্রামে যাবে কিনা তোমাদের সিদ্ধান্ত। চাইলে তোমরা তোমাদের গ্রাম থেকে বরযাত্রী নিয়ে রওনা হয়ে বউ নিয়ে আসতে পারবে। তোমার আর মাহাদের বিয়েটা হওয়ার দেড় বা দুমাস পর দিগন্ত আর রাইমার বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক করা যায় তবে । যদি বিয়ে নিয়ে কথা আগাতে চাও, তবে আমার মতামত এটাই।”
উপস্থিত সকলে আজাদ সাহেবের কথা মনোযোগ সহকারে শুনলো। স্নেহা সব কথার উত্তরে বললো,
“আমার আপত্তি নেই আংকেল। তবে এবার রাইমাকে মানানোর বিষয়টা আপনাদের উপর ন্যস্ত করলাম আমি।”
“তবে আমার এই বিষয়ে একটু আপত্তি আছে আপা।”
দিগন্ত কথার মাঝখানে কথাটা বলে উঠে। মাহাদ বিস্মিত কণ্ঠে জিগাসা করে,
“কি আপত্তি দিগন্ত?”
“হ্যাঁ বাবা, কি আপত্তি বলো!”
শাহনাজ বেগম বললেন কথাটা। দিগন্ত ইতস্তত কণ্ঠে বললো,
“বিয়ের বিষয়ে রাইমা উনাকে কোনো প্রেশার দিবেন না। উনি স্ব-ইচ্ছেয় বিয়েতে রাজী হলে বিয়েটা হবে। নতুবা নয়। আপনারা কেউ জোড় করে রাজী করাবেন না। আর উনার মতামতটা আমার সামনে বললেই আমি একটু নিশ্চিত হতাম। আপনারা কোনো ভাবে উনাকে ডেকে পাঠাতে পারবেন?”
সবাই সস্তির নিশ্বাস ফেললো। দিগন্ত আবার না বেঁকে বসে! কি না কি ভেবে ফেলেছিলো স্নেহা। আজাদ সাহেব দূরে বসে চকলেট খাওয়ায় ব্যস্ত আরফানকে ডাকলেন। আরফান চকলেট খাওয়া বাদ দিয়ে বাবার কাছে এসে জিগাসা করলো,
“কি বাবা?”
“শার্লিনের বাসায় গিয়ে তোমার আপুকে ডেকে নিয়ে আসো তো। বলবে আব্বু ডাকছে, জরুরী দরকার। তাড়াতাড়ি যেনো আসে।”
“আচ্ছা বাবা।”
আরফান ছুট লাগায় শার্লিনদের বাসার উদ্দেশ্যে। সবাই রাইমার আসার অপেক্ষায় মশগুল হয়ে পরে অন্যান্য বিষয় নিয়ে গল্প করতে।
৩৮,
“আংকেল একটু আপনার রুমে আসবেন! একটু দরকার ছিলো।”
ড্রইং রুমে দাড়িয়ে পাত্রপক্ষ কতোদূর এই খোজ নিচ্ছলেন শার্লিনের বাবা শাহীন সাহেব। শার্লিনের মা শিরিনা বেগম অতিথি আসা উপলক্ষে রানৃনাবানৃনা করে ডাইনিং টেবিলে ভরিয়ে ফেলেছেন। আর শার্লিনের বড়ো ভাই মেসবাহ মায়ের হাতে হাতে সাহায্য করছে। মায়ের হাতে হাতে কাজ করে এগিয়ে দিতে মেসবাহ একটু বেশিই ভালোবাসে। ছেলেরা মায়ের হাতে হাতে বা বিয়ের পর বউয়ের হাতে হাতে কাজ করে এগিয়ে দিলে মানুষ দেখলে বলে ঘরকুনো মা ভক্ত বা বউভক্ত ছেলে। কিন্তু এই টুকটাক কাজ করে এগিয়ে দিতে পারলে যে কতোটা শান্তি লাগে তা একমাত্র সেই ছেলেরাই বুঝবে, যারা এরকম করে। রাইমা একঝলক মা আর ছেলের কাজ করা দেখে নেয়। মেসবাহর এই গুণটা তার কাছে বরাবরের মতো ভালোই লাগে। কিন্তু সামান্য পাত্রপক্ষ আসায় এতো আয়োজন কে করে? তাটা কি পরিচিত কেউ নাকি! নতুবা এতো আয়োজন কেনো? রািমা আনমনে দাড়িয়ে এটাই চিন্তা করছে। শাহীন সাহেবের কথা ফুরোতেই তিনি রাইমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলেন,
“কিছু বলছিলে মা? কথা বলছিলাম দেখলেই৷ খেয়াল করিনি সেভাবে।”
“আপনি একটু আমার সাথে আপনার রুমে যেতে পারবেন আংকেল?”
“কোনো বি’পদ হয়েছে মা? তোমায় এতো হাইপার লাগছে কেনো?”
“কিছু হয়নি আংকেল। আপনি শুধু একটু রুমে চলুন।”
শাহীন সাহেব কথা বাড়ালেন না। রুমের দিকে ইশারা করে বললেন,
“চলো মা।”
রাইমা উনার সাথে রুমে এসে হাত ধরে বসিয়ে দেয় বিছানায়। এরপর নিজেও মুখোমুখি বসে বলে,
“আমায় তো আপনার মেয়ের মতোই দেখেন তাইনা আংকেল?”
শাহীন সাহেব অবাক হোন আচমকা রাইমার এমন প্রশ্নে। তিনি মাথা হেলিয়ে জবাব দেন,
“আমি তোমায় আগেও বলেছি মা, তুমি আর শার্লিন দুজনের কাউকে আমি আলাদা চোখে দেখিনা।”
“দেখুন আংকেল, আপনি আপনার মেয়ের সুখের আশায় এমনি এক জায়গায় আপনার মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার পর আপনার মেয়ে যদি ভালোই না থাকে, সুখেই না থাকে! তবে এতো আয়োজন করে দুটো মানুষকে এক করে বিয়ে দিয়ে একটা সম্পর্কে জড়িয়ে দিয়ে লাভটা কি বলুন? আপনার মেয়ে তো তাকে ভালোই বাসতে পারবেনা। আর যেখানে ভালোবাসা থাকবপনা, সেখানপ আপনার মেয়ে কি করে ভালো থাকবে? একবার তো বোঝার চেষ্টা করুন। বিয়ে দিলেই যদি সবাই ভালো থাকতো! সুখে থাকতো! তবে চারদিকে এতো বিচ্ছেদের বিচরণ থাকতো না আংকেল। ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড, প্লিজ। আমায় তো আপনি আপনার আরেক মেয়ে বলে মানেন, তবে আপনার মেয়ের কথা আপনি রাখবেন না?”
৩৯,
সাহস করে শাহীন সাহেবকে কথাগুলো বললো রাইমা। শাহীন সাহেব মুখটা গম্ভীর করে ফেলেন। রাইমা ভীতু চাহনীতে তাকিয়ে আছে৷ উত্তর টা যে কি হবে কে জানে? তখনই শিরিনা বেগম রুমে এসে রাইমার দিকে তাকিয়ে বলেন,
“রাইমা মা, তোমায় আরফান ডাকতে এসেছে। ড্রইং রুমে বসে আছে। বলছে তোমার বাবা নাকি খুব জরুরী দরকারে তোমায় বাসায় যেতে বলেছে।”
“ওহ খোদা, এক কাজের মাঝে আবার আরেক প্যাঁচ।”
রাইমা বিরক্ত হয়ে মনে মনে ভাবে কথাটা। রাইমা নিজের বিরক্তি চেপে বলে,
“ওকে দুমিনিট বসতে বলেন আন্টি। আমি আসতেছি।”
“আচ্ছা, তবে তোমরা কি খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু আলোচনা করছো নাকি?”
শিরিনা বেগম শাহীন সাহেব আর রাইমাকে একত্রিত বসে থাকতে দেখে প্রশ্নটা করলেন। শাহীন সাহেব গম্ভীরমুখেই বললেন,
“আহ শিরিনা! তোমার সব বিষয়ে এতো প্রশ্ন। যাও তো নিজের কাজ করো।”
শিরিনা বেগম স্বামীর কথায় চলে যায়৷ তিনি চলে যেতেই রাইমা ব্যস্ত হয়ে ফের প্রশ্ন করে,
“বলেন না আংকেল! আপনার মতামত কি? শার্লিন তো ইফরাদ ভাইকে ভালোবাসে আপনাদের বলেও দিয়েছে মেয়েটা। তবুও জোড় করে অন্য জায়গায় বিয়ে দিচ্ছেন! কারণ কি আংকেল?”
“দেখো রাইমা মা, ইফরাদ ছেলেটাকে নিয়ে আমার সমস্যা নেই। সমস্যা এখানে, ওরা আমাদের থেকে একটু বেশিই উচ্চবিত্ত। আমি খোজ নিয়ে দেখেছিলাম। যখন শার্লিন বললো ছেলেটার কথা, আমি সব জেনে নিয়ে খোজ নিয়েছিলাম। সব জেনেশুনেই আমি পাত্রপক্ষকে আসতে বলেছি।আর পাত্রপক্ষ আমার অফিস কলিগ। আর আমি তাদের কথা দিয়ে ফেলেছি। কথার বরখেলাপ করি কি করে?”
“আংকেল আপনার কথা দেওয়ার থেকেও জরুরী আপনার মেয়ের জীবন৷ কোনো কথার মূল্য শার্লিনের জীবনের থেকে জরুরী নয়। আর ইফরাদ ভাই উচ্চবিত্ত এটায় সমস্যা কি আংকেল! সব বাবা তো চায় তার মেয়ে ভালো সংসারে ভালো অবস্থা সম্পন্ন জায়গায় বিয়ে হোক। আপনি উল্টোটা চাচ্ছেন। আমার মাথায় ঢুকছেনা আংকেল।”
“দেখো মা, মেয়ের শ্বশুর বাড়ি যদি তার বাবার বাড়ি থেকে একটু উচ্চবিত্ত হয়, সেখানে গেলে এমন আচরণ করা হয়, যেনো মেয়েকে ফাঁকি দিয়ে পাঠিয়েছি। মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার বদলে মনে হয় বিক্রি করে দিয়েছি। কিছু দিতে চাইলে আমার মেয়েকে বা মেয়ে জামাইকে, তাদের সাধ্যের মাঝে দিতে পারবোনা। এটা নিয়েও সমস্যা হবে। আমি চাইনা আমার মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে আমাদের সম্মান টা এরকম নিচু অবস্থানে থাকুক।”
“সবাই এক হয়না আংকেল। আমি চিনি ইফরাদ ভাইকে, তার পরিবারকে। আমি কথা দিচ্ছি আংকেল, আপনাদের সাথে এমন কিছু কখনও হবেনা। এটার দায় দায়িত্ব আমি নিলাম।”
“সে না হয় বুঝলাম মা, কিন্তু ইফরাদ ছেলেটার পরিবার! তারা কি মানবে? আমাদের অবস্থা দেখে মেনে নিতে পারবে?”
“সেটাও আমি দেখবো আংকেল। শুধু আমায় ভরসা করে আপনি বিয়েটা ভেঙে দেন। উপরওয়ালা সহায় থাকলে আপনার মেয়ে ইফরাদ ভাইয়ের সাথে ভালো থাকবে আংকেল। আই প্রমিজ।”
“আচ্ছা আজ অন্তত দেখে যাক। এরপর না হয় কোনো এক বাহানায় আমি বিয়ে ভেঙে দিবো মা। তোমার বান্ধবীকে কোনো রকম দুষ্টমি বা বিয়ে ভাঙতে উল্টাপাল্টা কাজ করতে বারণ করে যাও। তোমার বাবা ডাকছেন তোমায়।”
“জ্বি আংকেল, আমি এখুনি বলে যাচ্ছি।”
রাইমা হাসিমুখে শেষের কথাটুকু বলে। অবশেষে শার্লিনের বাবাকে মানাতে পেরেছে সে। সে খুশিমনে চলে যেতে উঠে দাড়ায়। দু পা বাড়াতেই শাহীন সাহেব কিছু একটা ভেবে রাইমাকে ডাক দেন। রাইমা পিছন ফিরে ঠোটে হাসি ফুটিয়েই জিগাসা করে,
“কিছু বলবেন আংকেল?”
“আমি ধুমধাম করে, হাসিমুখে ইফরাদের সাথে শার্লিনের বিয়ে দিবো মা৷ আমার একটা শর্ত আছে এখানে। নতুবা আমি বিয়েটা ভাঙবোনা৷”
রাইমার মুখের হাসি মুহুর্তে মিলিয়ে যায়। চিন্তিত স্বরে জিগাসা করে,
“কি শর্ত আংকেল?”
“মেয়েকে বিয়ে দিয়ে আমার ঘরটা ফাঁকা ফাঁকা হয়ে যাবে মা। কথা ছিলো কলিগের ছেলের সাথে মেয়েকে দিয়ে, তার মেয়েকে আমার ছেলের জন্য বউ করে আনবো। বেশি মানুষের সাথে আত্মীয়তা করবোনা। কোন পরিবার কেমন হয়! শেষে দেখা যাবে ছেলেমেয়ে সুখের বদলে অ-সুখে আছে। এই চিন্তায় এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। মেয়েকে যখন ওখানে দিবোই না, তখন তোমাকেই আমার ছেলের বউ হয়ে আমার ঘরে আসতে হবে৷ বলো রাজী এই শর্তে?”
রাইমা হতভম্ব হয়ে শাহীন সাহেবের দিকে তাকিয়ে আছে। সে কাঁপা স্বরে বলে,
“এটা কেমন শর্ত আংকেল?”
চলবে?
ভুলত্রুটি মার্জনীয়, রিচেইক করিনি। আসসালামু আলাইকুম