#মউফুল(৯)
—–মার্জিয়া হক।
কয়েকবার আদালতে যেতে হয়েছে মউফুলকে, সেখানে যেসব প্রশ্ন করেছে তার জবাব দিতে গিয়ে এত অপ্রস্তুত হতে হয়েছে আর মানসিক কষ্ট পেয়েছে সে, যা সেদিনের ভয়ংকর ঘটনার চেয়ে কম ভয়ংকর নয়। প্রতিদিন জহির, আপা, গেছে তার সাথে, প্রতিদিন জেরার পর বিধ্বস্ত মউফুলকে নিয়ে ফিরেছে। আসামী পক্ষের উকিল প্রমাণ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে যে, মউফুল নিজের ইচ্ছায় বসিরের সাথে শারিরীক সম্পর্ক তৈরি করেছে এখন দোষারোপ করছে। তবে মউফুলের পক্ষের ” অসহায় নারীদের আইনগত সাহায্য দান কারী সংস্থার ” উকিলের কাছে তাকে পরাস্ত হতে হয়েছে। আসামীদের মধ্যে তিনজন জানিয়েছে তারা আগে থেকে কিছুই জানতো না বসির মেয়েটাকে নিয়ে এলে মুফতে তারাও সুযোগ নিয়েছে। মেয়েটা যে পোয়াতি তাও তারা জানতো না। প্রমানিত হয়েছে প্রধান আসামী বসির।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০২০ এর ধারা ৯, অনুচ্ছেদ ৩ অনুযায়ী, যদি একাধিক ব্যক্তি দলবদ্ধভাবে কোন নারী বা শিশুকে ধর্ষন করেন এবং উক্ত ধর্ষনের ফলে উক্ত নারী বা শিশুর মৃত্যু ঘটে বা তিনি আহত হন,তাহলে ওই দলের প্রত্যেক ব্যাক্তি মৃত্যুদন্ডে বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দন্ডনীয় হবেন এবং এর অতিরিক্ত অন্যুন একলক্ষ টাকা অর্থদন্ডেও দন্ডিত হবেন।
মউফুল শারিরীক ভাবে আহত ও গর্ভের সন্তান নষ্ট হওয়ায় বসিরের মৃত্যুদণ্ড ও তিন সহযোগীর যাবজ্জীবন কারাদন্ড হয়। দেশবাসী খুব সন্তুষ্ট হয় রায়ে। বস্তিতে খুশীর নহর বয়ে যায়। অনেকদিন পর মউফুলের মনের কষ্টের পাহাড় গলে গলে চোখ দিয়ে নদী হয়ে বয়ে যায়।
তিন বছর পর…….
জহির বস্তির বাইরে একটা ঘর ভাড়া নিয়েছে। নিজস্ব টয়লেট আর রান্নাঘর আছে সেখানে। জহির নিউমার্কেটের একটা দোকানে সেলসম্যান হিসাবে কাজ নিয়েছে। মউফুল আপার এন জি ও তে আয়ার চাকরী পেয়েছে। আপা বলে মউফুল নিজের যোগ্যতায় চাকরিটা পেয়েছে। ছোট্ট গোছানো ছবির মত একটা সংসার। ওদের সংসারে জুঁইফুল এসেছে একবছর হলো। জহির খুব যত্ন করেছে মউফুলের যখন তার পেটে জুঁইফুল ছিল। জহিরের মা মউফুলের ওই ঘটনার পর জহিরকে চাপ দিয়েছিল মউফুলকে ছেড়ে দিতে,গ্রামে নাকি তারা মুখ দেখাতে পারবে না কিন্ত জহির তার সিদ্ধান্তে অটল ছিল। মউফুল খুব ভালোবাসত জহিরকে বরাবরই কিন্তু এখন তাতে মিশে থাকে অনেক শ্রদ্ধা,ভক্তি। আল্লাহ বোধহয় সব কিছু কেড়ে নেয় না মানুষের জীবন থেকে বহুগুন ফিরিয়েও দেন।
আজ জুঁইফুলের জন্মদিন।আপা জুঁইফুলের জন্য সাদা পরীর মত জামা, রুপালী মুকুট,আর রুপালী জুতা কিনে দিয়েছে। জহির বড় একটা কেকের অর্ডার করেছে।বস্তির সব বাচ্চাদের আজ মউফুলের বাসায় দাওয়াত। মউফুলের শাশুড়ি, ননদেরা,ফারুক এসেছে গ্রাম থেকে। নানী বয়সের কারণে গ্রামের বাইরে যায় না। ওর মামাতো ভাইবোনেরা এসেছে। বিরিয়ানী রান্না হচ্ছে ঘরের পাশে ফাঁকা জায়গায়। সুগন্ধে চারিদিক মৌ মৌ করছে। আনন্দ যেন উপচে পড়ছে মউফুল জহিরের সংসারে। মউফুল মনে মনে চায় জুঁইফুল যেন বাবার মত ভালো মানুষ হয় আর আপার মত মানুষের সেবায় নিজেকে উজাড় করে দিতে পারে।
(সমাপ্ত)
আগের পর্বে গল্পটা শেষ করতে চেয়েছিলাম, পরে ভেবে দেখলাম মউফুলের সুখের সংসারটা দেখার অধিকার পাঠকদের ও আছে তাই এই ছোট্ট পর্বটার জন্ম।