কুয়াশা_মিলিয়ে_যায়_রোদ্দুরে #পর্ব_১৪

0
218

#কুয়াশা_মিলিয়ে_যায়_রোদ্দুরে
#পর্ব_১৪
#লেখায়_নামিরা_নূর_নিদ্রা

পার্সেল খুলতেই দু’জন এক চিৎকার দিয়ে সরে যায়। পার্সেলে এমন কিছু থাকবে সেটা দু’জনের একজনও কল্পনা করেনি। আদ্রিতা ভয়ে কুয়াশাকে জড়িয়ে ধরে বসে আছে। কম্পন সৃষ্টি হওয়া কণ্ঠে হঠাৎ সে বলে ওঠে,

“এই রায়াদ ভাইয়া কী পাগল? র ক্তে মোড়ানো খামে কী এমন পাঠিয়েছে এই ছেলে?”

কুয়াশা এখনো নিশ্চুপ হয়ে এক ধ্যানে পার্সেলের দিকে তাকিয়ে আছে। রায়াদ যে এত বেশি ভয়ংকর হতে পারে তা সে কখনো ভাবেইনি। কাঁপা কাঁপা হাতে র ক্তে ভেজা খামে স্পর্শ করে সে। মুহূর্তের মধ্যেই তার হাত র ক্তের ছোঁয়ায় লাল বর্ণ ধারণ করে। লাল রঙের উপর কালো কালিতে লেখা,

“ভালোবাসার চিহ্ন!”

আলতো হাতে খামের ভেতর থেকে একটা চিঠি বের করে পড়তে শুরু করে কুয়াশা।

“কুহু! এই নামে আর কখনো ডাকা হবে না তোমায়। তুমি বরাবরই বলে গেলে, আমার ভালোবাসা মিথ্যা। কখনো আমার ভালোবাসা উপলব্ধি করতে পারলে না তুমি। যদি পারতে তাহলে ছেড়ে যেতে না আমায়। তোমার র ক্ত খুব পছন্দ। সম্পর্কে থাকাকালীন সময়ে তোমার যখন প্রচন্ড অভিমান হতো আমার উপর তখন নিজের র ক্ত ঝরিয়ে নিজেকে কষ্ট দিয়ে এক প্রকার মানসিক শান্তি পেতে। এমনটাই বলেছিলে আমাকে। তোমার পছন্দ মস্তিষ্কে রেখে নিজের শরীরের কিছুটা র ক্ত তোমাকে পাঠালাম ভালোবাসার চিহ্ন হিসেবে। আমি আর কখনো তোমার নাম স্মরণ করব না। তোমাকে আমি আর চাই না কুহু। কারণ তুমি আমার নও। ভবিষ্যতে আমার হওয়ার সম্ভবনাও নেই। তবে একটা কথা কী জানো? আমি তোমাকে এখন প্রচন্ড পরিমাণে ঘৃণা করি। তুমি আমার ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য নও। বাহ্যিক রূপ আর টাকার লোভে পড়ে বিয়ে করলে বড়ো বোনের প্রাক্তনকে। এমন নারী কখনো ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্যতা রাখে না। মানছি আমি অনেক নারীতে আসক্ত ছিলাম একটা সময়। কিন্তু তোমার জন্য নিজেকে পরিবর্তন করতে চেয়েছিলাম তো। সেই সুযোগ দিলে কী আমাকে? উল্টো বোনের প্রাক্তনকে বিয়ে করে এখন দিব্যি সুখে আছ। আসলে তোমার মত মেয়েরা ভালোবাসা চায় না। চায় শুধু টাকা আর ঐশ্বর্য। আমি যাকে বিয়ে করে নিজের জীবনে নিয়ে আসতে চলেছি সে অপরূপ সুন্দরী। আমাকে অনেক সম্মান করে। আমাকে দেখলে লজ্জায় লাল রঙা হয়ে যায়। তোমার মত তাকে স্পর্শ করা বারণ নয় আমার। বিয়ের আগেই প্রেমের স্বাদ নিয়েছি। সে তোমার মত হাজার রকমের নিষেধাজ্ঞা জারি করেনি আমার উপর। আশা করছি, তোমার মত আজ থেকে আমিও আমার নতুন জীবনে ভালো থাকতে পারব। ভালো থেকো তুমিও।”

চিঠিটা পড়ে কুয়াশার ঠোঁটে হাসির রেখা ফুটে ওঠে। পাশাপাশি চোখের কোণ থেকে পানি গড়িয়ে ওষ্ঠদ্বয় স্পর্শ করে। কুয়াশার এমন অবস্থা দেখে আদ্রিতা সম্পূর্ণ চিঠি পড়ে স্তব্ধ হয়ে যায়।

“এই ছেলে কি মানুষ? একটা অমানুষ কোথাকার। তোর পরিস্থিতি না জেনেই তোকে এতগুলো বাজে কথা বলে দিলো। তুই নাকি ওর ভালোবাসার যোগ্য না। আরে অসভ্য ছেলে, তুই আমার বান্ধবীর ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য না। মেয়েটাকে এত পরিমাণ কষ্ট দিয়েও শান্তি হয়নি। তাই এই চিঠি পাঠিয়েছে।”

আদ্রিতার কথায় কর্ণপাত না করে পার্সেলে থাকা আরো একটা খাম হাতে নেয় সে। খামের ভেতরে থাকা ছবিটা দেখে কুয়াশা নিজের অশ্রুসিক্ত দুই নয়ন বন্ধ করে ফেলে। আর কিছু দেখার ইচ্ছে তার নেই। ছবিটা রায়াদ আর তার নব্য বিবাহিতা স্ত্রীর। একে-অপরকে আলিঙ্গন করে গভীর চুম্বনে লিপ্ত তারা দু’জন। ছবির অপর পাশে লেখা,

“যা তুমি কখনো দিতে পারোনি আমায়, সেটা প্রমি দিয়েছে আমাকে। প্রেমিকারা কখনো প্রেমিকের থেকে দূরে থাকতে পারে না। যে দূরে থাকে সে ভালোবাসে কি আদৌও?”

লম্বা শ্বাস ছেড়ে কুয়াশা আপনমনে বলে,

“আমি আজও চুপ করে আছি রায়াদ। কেন জানো? কারণ আমি মুখ খুললে তোমার নতুন সংসার শুরু হওয়ার আগেই শেষ হয়ে যাবে। অনুতাপের অনলে জ্বলতে জ্বলতে নিঃশেষ হয়ে যাবে তুমি। তুমি আমাকে এখন ঘৃণা করো। আমি তোমাকে সেটাও করব না। কারণ ঘৃণা করতে হলেও মনে জায়গা দিতে হয়। তুমি আমার মনের এককোণে থাকার যোগ্যতা পর্যন্ত আজ হারিয়ে ফেললে। তোমার মত পুরুষ না তো প্রেমিক হওয়ার যোগ্য। আর না তো স্বামী হওয়ার যোগ্য। আমার মনের মধ্যে লুকিয়ে রাখা কথাগুলো আমি কখনো কাউকে জানতে দিব না। দুনিয়ার সামনে তোমাকে খারাপ প্রমাণ করতে চাই না যে। দিনশেষে কষ্টগুলো আমার মনেও ব্যাথার সৃষ্টি করে রায়াদ। কিন্তু তুমি সেটা আজও বুঝলে না! তোমাকে ছেড়ে আসার কারণ যদি তুমি কোনোদিন জানতে পারো তাহলে আর কখনো আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের মুখ দেখার সাহস হবে না তোমার। তাই অজানা কথাগুলো অজান্তেই থাকুক কারোর মনের গহীনে!”

কুয়াশা সবকিছু বিছানায় ফেলে দৌড়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। আদ্রিতা পিছু ডাকে না তাকে। এই সময় তার একা থাকা প্রয়োজন। নতুবা নিজেকে সামলাতে পারবে না মেয়েটা।

রাতের আঁধার ফুরিয়ে ভোরের আলো চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে কুয়াশা চোখে মেলে তাকায়। সারারাত ঘুম না হলেও শেষ রাতের দিকে চোখ দু’টো বন্ধ হয়ে এসেছিল তার। ঘড়ির কাঁটায় এখন সাতটা বেজে নয় মিনিট। কুয়াশা বিছানা থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নেয় চটজলদি। আজ তার প্র্যাকটিসের শেষ দিন। সেই সাথে পরিপূর্ণ উকিল হওয়ার দিন। এবং সবশেষে জীবনের প্রথম কেস হাতে নেওয়ার দিন। সবকিছু মিলিয়ে কুয়াশা আজ ভীষণ খুশি। গতরাতের ঘটনা ভোলার জন্য এটুকু যথেষ্ট নয়। তবুও কুয়াশা নিজেকে যথাসম্ভব শান্ত রেখে তৈরি হয়ে নেয় রাজিব স্যারের কাছে যাওয়ার উদ্দেশ্যে। তৈরি হওয়ার পর হালকা নাস্তা করে আদ্রিতাকে বিদায় জানিয়ে বের হয়ে যায় কুয়াশা। পথিমধ্যে সাফওয়ানকে কল করে দ্রুত আসার জন্য বলে সে।

“স্যার আসতে পারি?”

কুয়াশা এবং সাফওয়ানকে দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মিস্টার রাজিব হাসান দু’জনকে ভেতরে আসতে বলে।

“আরে এসো। আমি তো তোমাদের জন্যই অপেক্ষা করছি। বসো তোমরা।”

দু’জন চেয়ারে বসতেই রাজিব স্যার বলতে আরম্ভ করেন,

“আজ তোমাদের প্র্যাকটিসের শেষ দিন। এতদিন তোমরা আমার সাথে থেকে কি কি শিখলে সেটা পরিক্ষা করার দিন আজ। ইতিমধ্যেই তোমাদের উকিল হওয়ার সমস্ত কাগজ চলে এসেছে। তোমরা দ্বিতীয় ইন্টিমিশন ফর্ম জমা দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে সম্মানের সহিত উত্তীর্ণ হয়েছ। আমি নিজে তোমাদের এসবকিছুতে সাথে ছিলাম। তাই তোমাদের প্রথম কেস লড়ার পথচলায় আমি তোমাদের সাথে থাকতে চাই। তোমরা এখন থেকে ঢাকা শহরে থাকবে। এবং এখানেই উকিল হিসেবে নিজেদের পরিচয় তৈরি করবে। তোমরা প্রস্তুত?”

“জি স্যার আমরা প্রস্তুত।”

“আচ্ছা প্রথমেই কুয়াশার কাছে আসি। তোমাকে আমি যে কেসের দায়িত্ব দিব এটা বেশ জটিল একটা কেস। তোমাকে আসামীর হয়ে লড়তে হবে।”

“আসামীর হয়ে?”

“হ্যা। কারণ যার নামে কেস করা হয়েছে তার ভাস্যমতে তাকে ফাঁসানো হচ্ছে। মেয়েটা টাকার জন্য তাকে ফাঁসাচ্ছে। এবং তার কাছে এই বিষয়ে প্রমাণ আছে। তোমাকে এটার তদন্ত করতে হবে। এবং যে আসল দোষী তাকে খুঁজে বের করতে হবে। পারবে তো?”

“ইনশাআল্লাহ স্যার নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করব আমি।”

“স্যার আমি কী করব?”

“তোমাকে অন্য একটা কেস দিব আমি। আগে কুয়াশার কেসের ব্যাপারটা নিয়ে কথা বলি। এরপর তোমার কাছে আসছি সাফওয়ান।”

“ঠিক আছে স্যার।”

“কুয়াশা, তুমি যার হয়ে কেস লড়বে তার সাথে তোমার কথা বলা দরকার।”

“জি স্যার। তাকে ডাকুন এখানে।”

“সে বাইরে বসে আছে। আমি তাকে ডেকে আনার ব্যবস্থা করছি।”

এরপর একজনকে ডেকে বাইরে বসে থাকা ছেলেকে ভেতরে নিয়ে আসতে বলেন তিনি। ছেলেটা ভেতরে এসে সালাম দিতেই আৎকে ওঠে কুয়াশা। দু’জন একে-অপরের চেহারা দেখার সাথে সাথে কুয়াশা চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। অস্পষ্ট স্বরে সে যে নাম উচ্চারণ করে তা শুনে সাফওয়ানও চকিত দৃষ্টিতে তাকায় সেই ছেলের দিকে।

চলবে??

বিঃদ্রঃ কী মনে হয়? কে সেই ছেলে? যাকে দেখে কুয়াশা আর সাফওয়ান এত বেশি চমকে গিয়েছে। কমেন্টে জানাতে পারেন। 💙

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here