আড়ালে_অন্তরালে #মাহমুদা_লিজা পর্বঃ১৭

0
360

#আড়ালে_অন্তরালে

#মাহমুদা_লিজা

পর্বঃ১৭

মায়ার মুখে অমন বি স্ফো রি ত কথা শুনে ফাহিমের বুকটায় ধ্বক করে উঠল। মায়ার দিকে তাকিয়ে তার মনের অবস্থা বুঝতে চাইল। কিন্তু মায়ার দৃষ্টি যতটা তীক্ষ্ণ, ততটা শান্ত তার মোখিক আদল। ফাহিম ভয় পেলেও প্রকাশ করল না। হাত বাড়িয়ে যেই মায়ার হাতটা ধরতে যাবে অমনি মায়া কিছুটা দূরে সরে বলল – কেন এমন করেছিলেন আমার সাথে। এসব করার জন্য বুঝি আমাকেই পেলেন। আমার জীবনটাতো এমনিতেই ন`র`ক হয়ে আছে আর আপনি তাতে ঘি ঢালতে এসেছেন?

ফাহিম অনুভব করল এতক্ষণে অন্য কেউ হলে রাগে ফেটে পড়তো সে। সূর্যের মত রাগে জ্বা লি য়ে দিত সব। সে অনুভব করছে তার বিন্দুমাত্র রাগ হচ্ছে না বরং এই পুতুলটাকে আঁকড়ে ধরে থাকতে ইচ্ছে হচ্ছে। সব বলে দিয়ে পুতুলটার কাছে স্বচ্ছ হতে চাইছে সে।

বন্ধ চোখজোড়া খুলতেই দেখলো ঐ মায়াবী চোখের কোল বেয়ে দরদরিয়ে অশ্রুরা নেমে আসছে যেমনটা ঝর্ণার পানি নদীতে মিশে যায় পাহাড়ের কোল গলিয়ে।
ফাহিম ভাবতেও পারেনি সে এভাবে ধরা পড়ে যাবে মায়ার কাছে। তার যে এখনো অনেক কাজ বাকি।
আচমকা মায়াকে বুকে টেনে এক হাত দিয়ে তাকে আঁকড়ে ধরে অন্য হাত দিয়ে তার মুখখানা উপরে তুলে বলল – এসব ফালতু কথা কে বলে তোমায়?

মায়া নিজেক ছাড়িয়ে নিতে চাইছে খুব। হঠাৎ তার চেহারায় পরিবর্তন দেখে ফাহিমের বুঝতে বাকি রইলো না কি ঘটতে চলেছে।
মায়ার দিকে অসহায়, করুণ চাহনি দিয়ে ফাহিম আবার বলল – বলো তোমায় এসব উল্টো পাল্টা কে বলেছে?
মায়া নিজেকে শান্ত রেখে বলল – মানুষ এত কনফিডেন্স নিয়ে মিথ্যা বলতে পারে?
মায়ার কথা শেষ হওয়ার আগেই তার ঠোঁটজোড়া দখল করে নিল ফাহিমের ঐ আদুরে ঠোঁটজোড়া। আচমকা অমন কাজে নিজের নিয়ন্ত্রণ হারাতে যেয়েও হারায়নি মায়া। মাদকতায় ভরা ফাহিমের ঐ চোখজোড়া দেখে মায়াও নিজের শক্তি হারাচ্ছে যেন। ফাহিম তাকে ছেড়ে দিল হঠাৎ। ভূমির পানে দৃষ্টি রেখে বলল – আমি তোমায় ভালবাসি এটা সত্যি, আমি ফাহিম এটাও সত্যি। তুমি ভুল জেনেছো। এখন তুমি বলো তোমায় এসব কে বলেছে?

মায়া খেয়াল করছে ফাহিমের কন্ঠস্বরের নিরুত্তাপ ভঙ্গির বদলে আস্তে আস্তে জায়গা করে নিচ্ছে গম্ভীর ভাবটা। ফোনটার কথা চেপে গিয়ে সেও মিথ্যে বলল – আমি কেউ একজনকে বলতে শুনেছি।
ফাহিমের চোখজোড়া চকচক করে উঠলো। সে মনে মনে বলল – তুমি জানোও না তুমি আমার কত উপকার করলে।
কন্ঠে কোমলতা এনে বলল – কে বলেছে? কি বলেছে?
মায়ার মনে পড়ল পরের মেসেজটার কথা, যেটা ও সিঁড়ি বেয়ে উঠার সময় এসেছিল। মেসেজটা পড়ে তার পা যেন থেমে গিয়েছিল। দুনিয়াটা যেন চরকির মত ঘুরপাক খাচ্ছিল তার। দু’বার পড়ল মেসেজটা, পড়েই বুঝতে পারল ফাহিম তার পরিচয় গোপন করেছে। মেসেজটা আবার মনে করল মায়া।
লেখা ছিল – আপনার ভাগ বুঝে নেয়ার আগে ওর বউ মায়াকে আমার চাই। ঐ মেয়ের জন্য এখনো প্রতিরাতে অপেক্ষা করি। মায়াকে ঐ মুরাদ বুকে নিয়ে ঘুমায় আর আমি তার বুক গুড়িয়ে দিমু। ওর সামনেই ওর বউয়ের সাথে কত আনন্দ করব। আর আপনি পাইবেন তাদের কাড়ি কাড়ি টাকা পয়সা।

মেসেজের প্রতিটা কথা না বলে মায়া সাজিয়ে বলল নিজের মত। সে বলল – আমি কোন এক ব্যক্তিকে বলতে শুনেছি এটা বলতে যে মুরাদের বউ মায়াকে সে কারো হাতে তুলে দিবে। আরো কি বলল তা শুনতে পাইনি।

ফাহিম চোখ বন্ধ করে বলল – তোমায় আমি বিশ্বাস করি মায়া। মনে রেখ স্বয়ং আল্লাহ তোমাকে আমার করে পাটিয়েছে। অন্য কেউ তোমার দিকে হাত বাড়ালে তা গুঁ’ড়ি’য়ে দেয়ার মত ক্ষমতা ঐ সৃষ্টিকর্তা আমায় দিয়েছেন। এখন এটা বলো কাকে বলতে শুনেছ?
মায়ার উত্তর যেন প্রস্তুত করা ছিল। চট করে সে বলল – আমি তার পিছনটা দেখতে পেয়েছি।

ফাহিম মনে মনে বলল – বেঈমানটা কি তাহলে এখানেই আছে? সে কি আমার কোন আপনজন?

হঠাৎ মায়া বলল – বন্ধুবেশে শত্রু সেজে পিছনে আঘাত করা বন্ধুকেও চেনা যায় কিন্তু মুখোশে ঢেকে নিজেকে আপনজনের রূপ দিলে তাকে চেনা বড় দায় মিস্টার বহুরূপী। এখন বলুন আপনার প্রকৃত নাম কি?
ফাহিম নির্লিপ্তভাবে তাকিয়ে বলল – আমি ফাহিম, তোমার বর। তোমার জীবনসঙ্গী। তোমায় একটা গল্প বলি মায়া।
ফাহিমের জোর প্রচেষ্টা এই মেয়েটার কাছে নিজেকে মেলে ধরা। এই এক রত্তি মেয়েটাকে ছাড়া সে এখন নিঃশ্বাসও নিতে পারেনা।
নিজের জীবনে ঘটে যাওয়া সমস্ত ঘটনা খুলে বলে এক এক করে। মায়াও মুগ্ধ শ্রোতার মত প্রতিটি হরফ শুনেছে।
ফাহিম এগিয়ে এসে মায়ার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে বলল – আমায় ছেড়ে কখনো যেওনা মায়া। আমায় অবিশ্বাস করো না। সারা পৃথিবীর বিনিময়ে হলেও আমাকে ছেড়ে যেওনা। একটুই আকুতি করছি মায়া। আমি কাউকে আঁকড়ে বাঁ চ তে চাই। আমার বোনটা একটু আদর পেতে চায় মায়া। আমার বাবা চায় কেউ একজন তাকে মায়ের মত করে আগলে রাখুক। মায়া, আমি প্রতিশোধপরায়ণ নয় আমি শুধু প্রতিবাদ করছি। ও মায়া, আমার ছোট্ট বোনটার দোষ ছিলো না। মায়া, তার খু নিকে আমি বুক ভরে নিশ্বাস নিতে দিবনা। এখন বলো আমি অপরাধ করছি? ঐ সাদমান, জামশেদ আর তামান্না রহমানকে আমি কি করে শান্তি দেই যখন তারা আমাদের শান্তি কেঁড়ে নিয়েছে, আমার বোনকে কেঁড়ে নিয়েছে?
সাদমানের নাম শুনে থমকে গিয়েছিল মায়া। নিজেকে সামলে সে বলল – আমার ভয় হচ্ছে, খুব ভয় হচ্ছে।
ফাহিম তাকে বুকে আগলে বলল – আমি আছিনা পাগলি। আগলে রাখব এভাবে।

____

সাদমানকে ছেড়ে দিয়েছিলো মুরাদ, বাকিদেরও ছেড়ে দিয়েছিল। কিন্তু সাদমানের প্রতিশোধ স্পৃহা গভীরতর হয়ে উঠলো। বিশ্রী এক পরিকল্পনা করে নিল জামশেদের সাথে।
হাসতে হাসতে বলল – লা শ নিয়ে তো বেশ দাঙ্গা করাই যায়, কি বলো?

খানিকক্ষণ বাদেই টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হচ্ছে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, সমাজসেবক, সমাজকর্মী এবং স্হানীয় নেতা সাদমান আশরাফকে নৃ শং সভাবে খুন করেছে মুরাদ নামে র হ স্য ময়ী এক যুবক। জানা যায় চাঁ দা দাবি করে সাদমানকে বারবার হু ম কি দিয়ে আসছে ঐ যুবক। সে শুধু খু ন করেই ক্ষান্ত হয়নি বরং লা শ টাকে গায়েব করে দিয়েছে। এই প্রতিবাদে দলের কর্মীরা রাস্তা অবরুদ্ধ করে রেখেছে। তাদের দাবি মুরাদ নামের ঐ যুবককে শীঘ্রই আইনের আওতায় আনা হোক। গোপন তথ্যমতে জানা যায় মুরাদ নামের ঐ যুবকের নিজস্ব গ্যাং রয়েছে যাদের দিয়ে সে স্হানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে চাঁদাবাজি চালায়। তথ্যমতে সে একজন সিরিয়াল কি লা রও। এই পর্যন্ত সে শাফায়াত, সেলিম নামের আরো দুই রা জ নৈ তিক কর্মীকে খু ন করে তাদের নদীতে ভাসিয়ে দেয়। এছাড়া সে আরো খু ন করেছে বলে জানা যায়। ছদ্মনামে ঘুরে বেড়ানো এই যুবকের প্রকৃত নাম তানভীর মির্জা বলে জানা গিয়েছে। মুখোশের আড়ালে থাকা যুবকের ছবি ইতোমধ্যে পুলিশের হাতে পৌঁছে গিয়েছে।

হো হো করে হেসে ওঠে সাদমান এবং জামশেদ। সাদমান বলে – আমার সাথে খেলার সুফল।
জামশেদও তাল মিলিয়ে বলে – আজ পার্টি হোক।

এদিকে খবরটা দেখে রীতিমতো ঘাবড়ে গেলো রিহান। তড়িঘড়ি করে কল লাগালো মুরাদের নাম্বারে।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here