#আড়ালে_অন্তরালে
#মাহমুদা_লিজা
পর্ব:১০
কপালের উপর বাম হাতটা রেখে শুয়ে আছে ফাহিম। অফিস টাইমে এভাবে তার ঘরে শুয়ে থাকাটা মায়ার কাছে সুবিধার মনে হলো না। কপালের উপর ভাঁজ করা লোমশ পুরুষালী হাতটা এমন ভাবে রাখা হয়েছে যে সে কি জেগে আছে নাকি ঘুমিয়ে গেছে তা বোঝার উপায় শুন্য।
মায়া কিছুটা সাহস সঞ্চার করে ফাহিমকে বলল – ঘুমিয়েছেন?
কোন উত্তর এলোনা অপরপাশ থেকে। মায়া খানিকটা এগিয়ে এসে ফাহিমের হাতটা আলতো করে স্পর্শ করে আবার বলল – জেগে আছেন?
কপাল থেকে হাত সরিয়ে ফাহিম ভ্রু নাচিয়ে বলল – কেন? প্রেম পেয়েছে?
ফাহিমের আকস্মিক এমন কথায় লজ্জাবতীর মত কুঁকড়ে গিয়ে মায়া বলল – ছিহ! কি অসভ্য!
ফাহিম শরীর দুলিয়ে হাসতে শুরু করলো। মায়া খেয়াল করলো ফাহিমের গজদাঁতটা। কি সুন্দর লাগছে সেই হাসি! ফাহিমের হাসি থামছেই না। মায়ার লাজুক মুখটা তার হাসি বাড়িয়ে দিচ্ছে। ফাহিম খেয়াল করলো মায়া এই কথা শুনেও সরে যাচ্ছে না দূরে। আগের জায়গায় স্হির হয়ে আছে। হাসি থামিয়ে সে আবার জিজ্ঞেস করলো – কিছু বলবে?
এবার মায়ার দম ফিরলো মনে হয়। লোকটা তার কাছে খুব অদ্ভুত মনে হয়। কখনো গম্ভীর আবার কখনো খুব উচ্ছ্বল। জিহ্বা দিয়ে ঠোঁটটা ভিজিয়ে সে জিজ্ঞেস করলো – অফিস টাইম না এখন?
ফাহিম খেয়াল করলো মায়ার সূক্ষ্ম অধিকারবোধ। ইশারা দিয়ে মায়াকে তার পাশে বসতে বলল। মায়া কিছুটা ইতস্ততবোধ করলেও ফাহিমের ইশারাটা সে অগ্রাহ্য করতে পারলো না। গুটিশুটি মে রে বসলো সে। ফাহিম মোলায়েম কন্ঠে বলল – ছুটি নিয়েছি। আগামীকালও যাবোনা।
ফাহিমের কথা শুনে মায়া তার দিকে তাকাতেই দেখলো ঐ মায়াবী চোখজোড়া তার পানে নিবদ্ধ। খানিকক্ষণ বাদে ফাহিম আবার বলল – বাবাকে বলেছি আমাদের বিয়ের কথা। বাবা গ্রামে যেতে বলেছে।
মায়া চোখ তুলে তার দিকে তাকাতেই দেখলো ফাহিমের দৃষ্টি তার উত্তর জানতে চায়। প্রচন্ড রোদে মেঘ ডাকাটা যেমন আকস্মিক লাগে ঠিক তেমন ভাবেই ফাহিম বলল – তুমি আমায় কখনো ছেড়ে যেয়ো না মায়া। আমি তোমার মায়ায় ভালোমতো ফে সে গেছি।
ফাহিমের চোখজোড়ায় স্বচ্ছ জলের উপস্থিতি খেয়াল করলো মায়া। তার কপালের উপর এলোমেলো চুলগুলো সুবোধের মত পড়ে আছে।
প্রসঙ্গ বদলাতে মায়া বলল – কি রান্না করব? কিছুই দেখছিনা।
ফাহিম ধরতে পারলো মায়ার অপ্রস্তুততা। এক নজর তার দিকে তাকিয়ে মাথা নিচু করে বলল – খিচুড়ি আর ডিম ভাজা খেতে পারবে? এছাড়া আজ আর কিছু নেই। বিকেলে বাজার করব।
মায়া ঠোঁটজোড়া প্রশস্ত করে সুপ্রসন্ন এক হাসি দিয়ে বলল – না খেয়েও থাকতে পারব। শুধু একটু শান্তি দিয়েন।
ফাহিমকে কিছু বলতে না দিয়ে সে ছুটলো রান্নাঘরের দিকে। একদিনেই সে যেন পাকা গিন্নী হয়ে গেছে।
_____
শাফায়াতের লা শে র পাশে বসে আছে মুরাদ। সে যাওয়ার পরে কেউ একজন শাফায়াতকে খু ন করেছে। সে আদতে জানেওনা মুরাদ কৌশলে শাফায়াতের মুখ থেকে সব তথ্য আগেই জেনে নিয়েছে।
মুরাদের মনে পড়লো শাফায়াতের বলা কথাটা- আমি আমার মায়ের একমাত্র সন্তান।
ছিন্নভিন্ন শাফায়াতের ঠোঁট, আলগা হয়ে যাওয়া আঙ্গুলগুলি মুরাদের দৃষ্টি এড়ালো না। সে বুঝতে পারছে কেউ তাকে ফা সা তে চায়।
রিহানকে জিজ্ঞেস করলো – কোথায় ছিলে?
রিহান মাথা নিচু করে অপরাধ মোড়ানো কন্ঠে জবাব দিল – বস, আপনিই আমাকে দুদিন পরে আসতে বলেছিলেন।
মুরাদ মুষ্টিবদ্ধ হাতটাকে সজোরে দেয়ালে মে রে বলল – কাপুরুষ! যতই চালাক হোক মুক্তি মিলবে না আমার হাত থেকে। আমাকে সে আগের ফর্মে ফিরতে আবার বাধ্য করেছে।
রিহান অপরাধীর মত সব শুনলো। তার বসের দৃষ্টিতে আজ সে দৃষ্টি মিলাতে পারছে না। মুরাদ শান্তস্বরে বলল – ওকে আপাতত সরিয়ে দিতে হবে। আর সতর্ক নজর রাখতে হবে। ভিতরের কেউ করেছে এই কাজ।
মুরাদ নিজেকে সংযত করল। ভেবে নিল নতুন পরিকল্পনা। আনমনে হেসে বলল – আজ ভেতরের সবার ছুটি। জানিয়ে দাও।
_____
অনবরত নিরুপমাকে কল দিয়ে যাচ্ছে সাদমান। কোন সাড়া নেই। সাদমানের মনে হচ্ছে নিরুপমা কোন গেম খেলছে।
খানিক বাদে তার ফোনে মেসেজ এলো – done.
ক্রুর হাসলো সাদমান। সব যখন নতুন করে শুরু করছে সেখানে একমাত্র নিরুপমাই পিছুটান। হঠাৎ তার উধাও হয়ে যাওয়া খুব একটা নিরাপদ নয়। নয়ছয় ভাবতে ভাবতে জামশেদকে কল করলো সাদমান।
ওপাশ থেকে দু’টা রিং হওয়ার পরই কারো গলার আওয়াজ পেল সে। ঘটা করে জিজ্ঞেস করলো – কেমন আছেন জামশেদ সাহেব?
ওপাশ থেকে বলা কথাটা শুনে তেতে উঠে সাদমান বলল – অত কথা শুনব না, কম টাকা দেইনি। আমার ঐ মেয়েটাকে চাই। নইলে তোর সব কীর্তি কুকীর্তি করে দিব।
বিপাকে জামশেদ রহমান আর এদিকে রাগে গজগজ করছে সাদমান। আগুনের মত সুন্দরীটার নাকি বিয়ে হয়ে গেছে!
______
দরজায় কারো শব্দ পেয়ে দৌড়ে এলো মায়া। দরজা খুলে ফাহিমকে দেখতে প্রশ্ন ছুড়লো – এতক্ষণ কই ছিলেন? বাজার করতে এতক্ষণ লাগলো?
ফাহিম কিছু না বলে ভেতরে এসে ধীরে সুস্থে বাজারের ব্যাগটা রেখে বলল – মায়া! কেউ বাহির থেকে আসলে তাকে এত প্রশ্ন করতে হয়না। সে কিছুক্ষণ জিরিয়ে নিলে তখন প্রশ্ন করবে।
ফাহিমের আদুরে কন্ঠটা মায়াকে মোহাবিষ্ট করলো। তার উৎসুক আদলটা মুহূর্তেই বদলে গেল লালচে আভায়। কি মায়া সে আদলে। ফাহিম তার দিকে তাকাতেই থমকে গেল। তিরতির করে কাঁপা ঠোঁটজোড়া বুঝিয়ে দিচ্ছে তার ভিতরে অনুশোচনারা চলে এসেছে।
এক পা দু পা করে এগিয়ে এসে মায়ার সামনে দাঁড়িয়ে এক ঝটকায় তাকে টেনে বুকে চেপে ধরলো ফাহিম। নিজের অশান্ত, উত্তাল হৃদয়টা যেন মুহূর্তেই ঠান্ডা হলো। অন্যদিকে ঘটনার আকস্মিকতায় মায়া বেকায়দায় পড়ে গেল। চুপটি করে মুখটা ফাহিমের বুকের ভেতর গুঁজে দিল সেও।
হঠাৎ তাকে সরিয়ে দিয়ে দ্রুত পায়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল ফাহিম। মায়া অবাক হলেও ফাহিম বুঝতে পারছে তার ভিতরের অবস্থা।
চলবে……
টাইপোগ্রাফি : তানহা